আজ মা’র কথা খুব মনে পড়ছে। ছোটবেলায় একবার আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে হাত ভেংগে ফেলেছিলাম। মা আমাকে সেদিন চেলাকাঠ দিয়ে পিটিয়েছিল। সে এক দেখার মত দৃশ্য ছিল, মা কাঁদছে আর আমাকে পেটাচ্ছে কেন আমগাছে উঠলাম। অবশ্য কিছুক্ষন পরেই তার রাগ পড়ে গিয়ে সেখানে শুধুই ছেলের প্রতি ভালবাসা। আরেকবার, স্কুল ছুটির পরে এক বন্ধুর বাড়িতে গেছি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে, বাসায় বলে যাইনি। ফিরতে ফিরতে একটু রাত হয়ে গেল। আমিতো ভয়ে ভয়ে বাসায় ফিরছি যে বাসায় গেলেই তো মা পেটাবে। কিন্তু বাসায় ফিরতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে গাল ভরিয়ে ফেলল, জানলাম আমার খোঁজে বিকাল থেকেই বাবা বাইরে, আর মা কাঁদতে কাঁদতে অস্থির। যেদিন মা মারা যায় সেদিনও আমাকে অনেকক্ষন আদর করেছিল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আর বলেছিল, “আমি না থাকলে তুই যে কিভাবে থাকবি সেটা চিন্তা করেই আমার যেতে ইচ্ছা করছে না। তুই ভালোভাবে থাকিস, ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করবি। আমি কিন্তু উপর থেকে সব-ই দেখবো”। আমি সেদিন কিছুই বলতে পারিনি, শুধুই কেঁদেছিলাম। সেদিন আমি বলতে পারিনি মা, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা। এই পৃথিবীতে তুমি ছাড়া আমাকে যে আর কেউই বুঝে না।
আরও একজনের কথা আজ খুউব মনে পড়ছে, শিখা। ওর সাথে যেদিন প্রথম পরিচয় হয় সেদিন ও কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি পড়েছিল, কপালে সবুজ টিপ, পায়ের স্যান্ডেলটাও শাড়ির সাথে ম্যাচ করা। ওকে দেখেই মনে হয়েছিল, এ মেয়ে কাউকে দুঃখ দিতে জানে না, এ জানে শুধু ভালবাসতে। ওর চোখদুটো ছিল সবচেয়ে সুন্দর, মায়াকাড়া, টানাটানা দুটো চোখ। আমি যতবারই ওর চোখের দিকে তাকিয়েছি মনে হতো আমি যেন এক অজানা রহস্যে ডুবে যাচ্ছি। প্রথমদিন আমাদের মধ্যে শুধু নিজের নাম বলা ছাড়া আর কোন কথা হয়নি, যদিও আমার মনে হয়েছিল ওকে আমার অনেক কিছু বলার আছে। সপ্তাহে একদিন আমাদের দেখা হতো। সারা সপ্তাহে জুড়ে আমি শুধু সেদিনটির অপেক্ষায় থাকতাম। প্রতিবারই মনে হতো আজ ওকে আমার বলতেই হবে আমার না বলা কথা, যে কথা ওকে ছাড়া আর কাউকে বলা যায় না কিন্তু কোনবারই আর সেটা বলা হয় না। বাসায় ফিরে নিজের উপরে প্রচন্ড রাগ হতো প্রতিবারে, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হতো, “শিখা, আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না”। একদিন দেখি, ও দেরি করে আসলো। আমিতো ওর দেরি দেখে ভাবলাম, আজ মনে হয় আসবে না। ও এসেই বলল, স্যরি দেরিতে আসার জন্য। আজ সবার আমার বাসায় দাওয়াত। কারণ জিজ্ঞেস করতেই, ও লজ্জামাখা মুখে বলল, আজ আমার আকত। আমার পৃথিবী টলে উঠেছিল সেদিন। তারপরেও আমি ওর বাসায় গিয়েছিলাম, ওর আকতের খাওয়া খেয়েছি, ওর হবু বরকে অভিনন্দন জানিয়েছি। নিজের মনকে বুঝিয়েছি, ওরতো কোন দোষ নেই, দোষতো আমার, আমিই না জেনেশুনে ওকে পছন্দ করে বসে আছি আবার সেটা ওকে জানাইওনি। ওকে আমি ভুলে যাব। ভুলতে আমাকে হবেই।
বিশ্বাস কর শিখা, আমি তোমাকে ভুলে যাবার অনেক চেষ্টা করেছি,কিন্তু আমি আর তোমাকে ভুলে থাকার অভিনয় করতে পারছি না। বিদায় শিখা, ভাল থেকো।
চিরকুটটা পড়ে শিখা চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, একবার আমাকে যদি বলতে তাহলেই তোমার আর ভুলে থাকার চেষ্টা করতে হতোনা।
মন্তব্য
নাম লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম।
পাগল মন
- খুব খোলামেলা ভাবেই বলি, প্রথম অংশে যে মনকাড়া ভাবটা জাগিয়ে তুলেছিলেন সেটাই পানসে হয়ে গেলো পরবর্তী অংশের দীর্ঘ আর বর্ণনার দীনতায়।
দ্বিতীয় অংশটা আরেকটু ছোট হলে অণুগল্পটা আসলেই ভালো হতো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনার খোলামেলা মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কিন্তু আরেকটু ডিটেইল এ বললে ভালো হতো, আমি আসলে শেখার চেষ্টা করছি।
পাগল মন
নতুন মন্তব্য করুন