বাঁশি শুনে আর কাজ নেই

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৩/০৪/২০১০ - ৩:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লিখতে পারে না বলে লিখে না বা বলতে পারে না বলে কিছু বলে না এমন কিছু নয়। ওর ইচ্ছার কাছে সব কিছু নতজানু হয় যখন চৈত্র সংক্রান্তির মেলা থেকে একটা বাঁশের বাঁশি কিনে রাত্রি দ্বিপ্রহরে গায়ের বুড়ো কৃষ্ণচুড়া গাছের তলে বসে বাঁশিতে সুর তুলে "ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা"। সে সুর শুনে দেশের জন্য যে মায়ের সন্তানটি জীবন দিয়েছে সেই মায়ের চোখের কোনে ঝরে অশ্রুধারা আবার কেউবা দেশ প্রেমের শপথ নিয়ে দেশের মাটিতে নিজেকে সমর্পণ করে নিদ্রা দেবীর কাছে। তারপর একসময় অজান্তেই ছেলেটি বাঁশিতে শেষ মূর্ছণার রেশ টেনে নিদ্রাদেবীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। ক্লান্ত দেহ মন কখনো নিজের কাছে প্রশ্ন করে না কি লাভ বাঁশের বাঁশিকে কাঁদিয়ে অন্যকে সুখ দিয়ে বা দুঃখ দিয়ে।

একদিন ঠিকই বিথি প্রশ্ন করে বিধানকে, তুমি কি সুখ পাও বিধান‌দা অপরকে কাঁদিয়ে? থমকে দাড়ায় বিধান, অপ্রত্যাশিত প্রশ্নটি বিধানকে হাজারো প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়। তাহলে বাঁশির সুরে কেউ কাঁদে? ভাবতেই বিধানের চোখ ঝাপসা হয়ে উঠে। বিষয়টি কেন সে আগে জানতে পারে নি? কে আছে এমন সুর পাগলিনী যে বিধানের বাঁশির সুরে কাঁদবে? আর বিথি যখন আজ বলতে পারলো আগে কেন বলেনি? এমন সব প্রশ্ন যখন নিজের কাছে নিজেই করছিল তখন বিথি হাক ছাড়ে বিধানদা কি হলো? বিধানের ধ্যান ভাংগে। অগত্যা আমতা আমতা করে বিথিকে জিজ্ঞাসে আমি আবার কাকে কাঁদালাম? লজ্জায় বিথির মূখে প্রজাপতির সোনালী ডানার রং আঁকে। গায়ের ষোড়শী যুবতীর মুখে প্রজাপতির ডানার রং আগে কখনো দেখেনি বিধান। চোখ ফেরাতে পারে না বিধান বিথির মুখ থেকে। যৌবনে প্রেমের ছোয়া লেগেছে বুঝতে না পারলেও অন্তত এতটুক বুঝতে অসুবিধা হয়নি বিধানের মনের বনে রং ধরেছে, প্রজাপতির ডানার রং।

প্রেম একসময় পূর্ণতা পাওয়ার স্বপ্ন জাগায় ঘর বাঁধার আশায়। বিধান বিথির স্বপ্নের ঘোরে তখনো আল্পনা আঁকতে পারেনি দুঃখ নামের কালো মেঘ। সুরে সুরে ছন্দময় তাদের জীবনে উজ্জল আকাশের তারার আলো হয়ে জ্বলবে এমনটাই তাদের ভাবনার স্বপ্ন। মৃত্যুসজ্জায় বাবার বন্ধুর ছেলে কৌশিকের হাতে বিথির হাত তুলে দিয়ে যখন "এ হাত কখনো ছাড়বিনা" বলে বাবা স্বর্গে চলে গেলেন বিথির চোখে ঘোর আমাবস্যার অন্ধকার। একদিকে প্রিয়তম বিধান অপরদিকে বাবার দেওয়া শেষ আদেশ, কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে চোখের জ্বলে সাগর তৈরী করে বিথি। ভাবনার আকাশে শকুনের ডানার রং তখন বিথির চোখের সামনে আল্পনা আঁকে। তখনো বিধান জানে না বিথি বাবার সাথে কেন স্বর্গে চলে গেলো। চিরকুটটি যখন বিথির বান্ধবী বীনার কাছ থেকে পেল তখন আর কি করার আছে বিধানের। "তোমার জন্য স্বর্গে অপেক্ষা করবো বলে ছুটি নিলাম" শব্দ গুলো বিধানের কানে সুর তুললো করুন সুরে। তারপর আর বিধানের বাঁশিতে কখনো সুর ওঠেনি। শুধু গায়ের মানুষগুলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের পানে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় "স্বর্গে গিয়েও কি বিধান তার বাঁশিতে সেই সুর তুলে বাঁশি বাজায়, ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা"। নাকি বিথি তার সুরেলা কন্ঠে গাইছে বাঁশি শুনে আর কাজ নেই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি।

হাফিজ
২৩/৪/২০১০


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কাহিনীর শেষটা কী হলো? কেয়ামত সে কেয়ামত তক? চিন্তিত

দুষ্টামি করলাম বস। ভালো লেগেছে গল্পটা। আরও লিখুন। চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রেশনুভা এর ছবি

সুন্দর তো।
"ভালোবাসা পূর্ণতা পেল" এরকম গল্প পড়তে চাই।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

ফারুক হাসান এর ছবি

গল্প আরো টানেন ভাই, আরো বেশি ভালো লাগবে তাহলে।

মূলত পাঠক এর ছবি

সচলে আগে একবার এই জাতীয় কথা আলোচনা হয়েছিলো যে পৃষ্ঠপোষণ একটু কম হোক আর সমালোচনা বাড়ুক। কালের প্রবাহে সে কথাও হারিয়ে গেছে দেখছি।

স্পর্শ এর ছবি

কী বললেন বুঝিনি ইয়ে, মানে...
একটু বুঝিয়ে বলেন। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

স্পর্শ এর ছবি

আপনার লেখার ভঙ্গিটি সুন্দর। বেশ টেনে নিতে পারে। এটা কিন্তু বড় গুণ। চলুক
এই গল্পে যেটা হয়েছে সেটা হল, গল্পে 'গল্প' কম হয়ে গেছে।
শেষ প্যারাটা ওরকম না করে বিধান আর বিথির কথাই লিখতেন। তারপর লিখতে লিখতে থামিয়ে দিলেই হতো।

সচলায়তনে স্বাগতম। লিখতে থাকুন প্রাণভরে...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

কেন যেন অণুগল্পটা খুব বেশি ভালো লাগলো না চিন্তিত

কিন্তু তাই বলে মন্তব্য শুনে থেমে যাবেন না। সচলায়তনে স্বাগতম। লিখতে থাকুন হাসি

- মুক্ত বিহঙ্গ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।