জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ২৮ এপ্রিল,২০১০, বুধবার; ডেইলি স্টার পত্রিকায় ব্যাক পেইজে এক দীর্ঘ বিজ্ঞাপন ছাপাইসে। বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ‘ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়/ বিজ্ঞপ্তি/ সম্প্রতি সংঘটিত ৩টি ঘটনা সম্পর্কে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের জবাব’- এইখানে কর্তৃপক্ষ হিসাবে নাম ছাপা আছে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার আবুবকর সিদ্দিকের নাম।
টাকা দিয়া ছাপানো এই বিজ্ঞপ্তির প্রথম প্যারাই সবচে দীর্ঘ আর এ প্যারাতেই বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহ হেল কাফীর বিরুদ্ধে একই বিভাগের নারী শিক্ষক যৌন নিপীড়নের যে অভিযোগ তুলসেন, তা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা।
আমার বক্তব্য এই খানে।
বিজ্ঞপ্তির বিজ্ঞাপনে, শুরুতে যৌন নিপীড়ক হিসেবে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ হেল কাফীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে যে নারী শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, তা উল্লেখ করা হয়েছে, নারী শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে। ছাপিত শব্দে যে বাক্য লেখা হইসে, তা হুবহু এরকম: ’ জাহাঙ্গীরনগরের আর্ন্তজাতিক বিভাগের প্রভাষক ....(এখানে তার নাম) বিভাগীয় সভাপতি এবং সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফীর বিরুদ্ধে তাকে উত্যক্ত করার অভিযোগ উত্থাপন করেন।...’ হাইকোর্টের যৌননিপীড়ন বিরোধী যে নীতিমালা নির্দেশনা আকারে দেয়া আছে, তার ৮ এর এ ধারা অনুযায়ি এটা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই ধারায় বলা আছে, কোনভাবেই অভিযোগকারীর নাম প্রকাশ করা যাবে না। এখন বলুন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নামধারী ব্যক্তিবর্গ কি এটা জানেন না?
তারপরের লাইনেই বলা আছে: ‘ গত ১৫-০৪-২০১০ তারিখে অভিযোগকারী শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মাননীয় উপাচার্য তা সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক গঠিত অভিযোগ কমিটির (Complaint Committee) নিকট প্রেরণ করেন এবং নির্দষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।‘
খুব ভালো কথা। হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক যখন অভিযোগ কমিটি গঠনের কথা বললেন মি. রেজিস্টার, তখন কি ওই নির্দেশনায় ৮ এর এ ধারায় কি লিখা আছে, সেটা কি পাঠ করেন নি? ধরে নিচ্ছি আপনার মতো দায়িত্বশীলের সেটা চোখ এড়ায় যাবার কথা না, তাইলে ওই নারী শিক্ষকের নাম যে বিধি ভঙ্গ করে প্রকাশ করলেন-প্রকাশের ধরনে তো এটা স্পষ্ট এখানে আপনার/আপনাদের-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইনটেনশন বলে ইংরেজিতে যে শব্দটা আছে, তাই-ই তো কাজ করসে। এইটারে কোন মতেই পজেটিভ ইনটেনশন বলা যায় না।
যে প্রশাসন নিয়মনীতি ঠিকমতো পাঠ করেও (ধরে নিচ্ছি) এভাবে অভিযোগকারীর নাম প্রকাশ করে, সেই প্রশাসনের আসল উদ্দেশ্য কি? যৌননিপীড়ক হিসেবে একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত, প্রতারক হিসেবে সাভার থানায় মামলা থাকা আব্দুল্লাহ হেল কাফীকে সেইফ গার্ড দেয়া? তারপর বিজ্ঞাপনেও বলা আছে, তাকে এক মাসের অর্জিত ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তাহলে তদন্ত চলবে কি করে? ছুটির ফাঁদ। আরেক যৌন নিপীড়ক নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক সানীর ক্ষেত্রেও একই কান্ড আপনারা করেসিলেন, আন্দোলন যখন তুঙ্গে-তখন তাকে ছুটিতে পাঠান তাকে।
উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীর, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর আন্দোলনের শক্তি আপনার দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে টের পাওয়ার কথা। টাকা খরচ করে যে বিজ্ঞাপন ছাপাইসেন, সেই বিজ্ঞাপনে তো ইঙ্গিত দিয়েই দিলেন আপনাদের মন-মানসিকতার। ছুটির ফাঁদ পেতে কাফীকে বাঁচানোর চেষ্টা। কেন যৌন নিপীড়ক পুরুষ শিক্ষকদের টিকিয়ে রাখবার জন্য আপনাদের এত ডেডিকেশন? ক্ষমতার লোভে শিক্ষক হিসেবে আরেক শিক্ষকের মর্যাদা, অধিকারের জায়গা আপনার ভুলে গেলে খুব ভুল করবেন। আর এটা নিয়ে আইন সালিস কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে আপনাদের হাইকোর্টের নির্দেশিত বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগ আনার ব্যাপারে কথা বলা হবে। দ্বার বন্ধ করে রেখে সত্যটাকে লুকাবার চেষ্টা করলেও সে চেষ্টা সফল হবে না। কাফীকে যখন এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়, তখনও সে যৌন নিপীড়ক, প্রতারক( সাভার থানায় মামলা আছে) হিসেবে অভিযুক্ত ছিল। শিক্ষা জীবনে একটা প্রথম বিভাগ ছাড়া সব দ্বিতীয় বিভাগ সম্পন্ন এই শিক্ষক এখন আপনাদের পরম আদরনীয় বস্তু। আদর করতে থাকুন সমস্যা নাই।
নিপীড়নের অভিযোগকারী নারী শিক্ষকের বাবার সঙ্গে কথা বলে সেই শিক্ষককেও আপনি ছুটিতে যেতে বলেছেন। এটা কোথায় মিটিং করে বলেছেন-সেই তথ্যও জানা আছে, ফার্স্ট পার্সনের বয়ান থেকেই। বিজ্ঞপ্তিতে তা অস্বীকার করে গেছেন। এই মিথ্যাচার মোটেও শেষ লাইনে যে বয়ান দিসেন রেজিস্টার সাহেব: ‘ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় অত্যন্ত আন্তরিক ও যত্নশীল এবং নারী শিক্ষা সম্প্রসারণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ’- তার প্রতি প্রতারণাই তো বটেই। এটাকে বলা যায় সিম্পলি হিপোক্রেসি।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ডেইলি স্টারকে নিয়ে। বিজ্ঞাপন ছাপানোর জন্য ডেইলি স্টারের এত টাকার দরকার হয়ে পড়লো যে, এই বিজ্ঞাপন অভিযোগকারী নারীর নাম সংবাদপত্রের নীতিমালা অনুযায়ি যে প্রকাশ করা যায় না, সেইটা টোটালি ইগনোরড। তাহলে নীতিমালা নিয়ে পত্রিকাটির সম্পাদকসহ ওই পত্রিকার পলিসি লেবেলে যারা কাজ করেন, তারা বড় বড় ভরাট বুলি কেন আওড়ান? গণমাধ্যমের একজন কর্মী হিসেবে বিজ্ঞপ্তি পড়ে আমার মনে হইসে: এইটা অসতর্কতাও যদি হয়, তবুও গুরুতর অপরাধ।
অপরাধ। অপরাধ।
মন্তব্য
নাম প্রকাশ করে আইন অমান্য করা হয়েছে ।
biloybindu@gmail.com
ক্ষমতা আর টাকা মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দেয়। জাহাঙ্গীরনগর নিয়ে এমন ঘটনা নতুন নয়। আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি এধরনের কার্যকলাপকে। কিন্তু ইদানীং সবকিছু দেখে যা মনে হচ্ছে যে অন্যায়করীদের কাছে এসব দুধভাত হয়ে গেছে। যত জ্বালা যাদের প্রতি অবিচার হয় তাদের।" না পারি সহিতে না পারি বলিতে।"
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
রাগে হাত পা কাঁপছে।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
দুনিয়ার তাবদ অসৎ লোকগুলো সব জায়গাতেই কেমন করে যেন একটা মাখামাখির সম্পর্ক মেইনটেইন করে!
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাচ্ছে।
চলে যাচ্ছে না, চলে গেছে... এখন গন্ধ বেরুচ্ছে কেবল...
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
ধিক্কার জানাইলাম
...........................
Every Picture Tells a Story
গুন্ডারা অসৎরা চোরেরা ডাকাতেরা মন্দরা ঘুরে বেড়ায় কলার তুলে আর সৎ ও ভালো লোকেরা লুকিয়েচুরিয়ে বেঁচে থাকে! এ কোথায় যাচ্ছি আমরা ????
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে গেলাম, আর তো কিছুই করার নেই...
কৌস্তুভ
একবার এই নিয়ে আন্দোলন করতে হয়েছিলো। তখন সবাইরে চেনা হয়ে গেছে...ধিক্কার এইসব ভন্ড, অপবিত্র অসৎ মানুষদের!
-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
বর্তমানে এই সমস্যার আশু সমাধান কি জানিনা ! তবে আমার ধিক্কার জানালাম।
নতুন মন্তব্য করুন