কষ্টগুলো

বন্দনা এর ছবি
লিখেছেন বন্দনা [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৪/০৫/২০১০ - ৮:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যাপারটা কেমন যেনো দুঃস্বপ্নের মতো, বারেবারে ফিরে আসে।কতদিন হয়ে গেল তবু ভোলা যায়না একটি বারের জন্য ও।কবছর হলো বাবার সাথে কথা বলেনা মিতিন, মনে করতে পারছেনা।আশেপাশের মানুষ বাবার জন্মদিন পালন করে, বাবাদিবসে আনন্দ উল্লাস করে, এসব ওর কাছে যেন অর্থহীন লাগে,যন্ত্রনার মত মনে হয়।মায়ের লজ্জায় কুঁকড়ে যাওয়া সেই মুখ মিতিন কেমন করে ভুলে যাবে।মনে মনে ভেবেছিল বাবার উপর প্রতিশোধ নেবে।কিন্তু কেমন করে,উনি তখন পঞ্চাশোর্ধ।মাকে বলেছিল এই লোককে ডিভোর্স করতে।মা পারেননি তার প্রাচীন ধ্যান ধারনা থেকে বের হয়ে বাবাকে ছেড়ে আসতে।তাই প্রতিবাদ হিসেবে বাবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল ভাইবোনেরা মিলে।
মিতিনের ভিতরে কোথায় যেন আজ আবার সেই পুরানো হাহাকারটা টের পাচ্ছে।তার সব অভিযোগ বাবার মত এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে। নিজের মনের কাঠগড়ায় বাবাকে তাই প্রায়ই দাড়াঁতে হয়।মনেমনেই বাবাকে অনেকবার নির্বাসনে পাঠিয়েছে সে।আজ ও পাঠাবে, তাই তার কথার ছুরিগুলোকে আরো ও একটু শানিয়ে নিচ্ছিলো।
বাবা তুমিতো ঐসব লোকদের মত যারা স্কুলে যাওয়া আসার পথে আমার দিকে লোলপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো,কিংবা বাসে ভিড়ের মাঝে বাবার বয়সি সেসব লোক যারা বুড়ো হবার সুবাদে সুযোগ মিললেই গায়ে হাত দিতে কখনো দ্বিধা করেনি।তুমি ও সুযোগসন্ধানী তাই সেদিন তোমার বাসনা চরিতার্থ করার সুযোগটি কাজে লাগাতে ভোলনি।বাসার কাজে সাহায্যকারি চৌদ্দ বছরের ছোট মেয়েটির দিকে হাত বাড়াবার আগে তোমার আমার কথা মনে হয়নি বাবা, মনে হয়নি তোমার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে আমি ও মানুষের বাসায় কাজে যেতে পারতাম, আমাকেও কেউ এভাবে ব্যবহার করতে পারত।আমার সীমাহীন শ্রদ্ধা ওই চৌদ্দ বছরের কিশোরির প্রতি,যে বটি হাতে নিতে পেরেছিল তোমাকে ঠেকাতে,যে কন্ঠ উচুঁ করে বলতে পেরেছিল তুমি তার শ্লীলতাহানি করতে চেয়েছিলে।

[অপ্রিয় হলেও এটি একটি সত্য ঘটনা। বউ এর অনুপস্হিতিতে পাশের বাসার লম্পট ভদ্রলোকের এই কীর্তিটুকু জানালা দিয়ে কিশোরী কাজের মেয়েটি আমার মাকে বলেছিল,বাকি্টুকু আমার কল্পনা। ওর জন্য কিছুই করতে পারিনি আমরা।ভদ্রলোকের বউ আমার মায়ের মুখের কথা বিশ্বাস না করেই(কিংবা বিশ্বাস করে ও লজ্জায় বলতে পারেনি) কাজের মেয়েটিকে তাড়িঁয়ে দিয়েছিল।আমরা মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে আসতে পারিনি আইনি মারপ্যচের জন্য।সেই ভদ্রলোক এখনও দিব্যি সুখেই সংসার করছে জানি।প্রচন্ড ঘৃনা এই নরপশুদের জন্য।]
(বন্দনা)


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লেখাটা আরও পরিনত, এবং সুপাঠ্য হতে পারত। বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

দিনপঞ্জিকা লিখার বাইরে বলা চলে এটাই আমার প্রথম লিখা, তাড়াহুড়া করেছি কিছুটা, সন্ধায় লিখেই আপলোড করে দিলাম বাসায় ফেরার আগে।সর্বোপরি আমি এখনো লেখায় কাঁচা নিঃসন্দেহে,ভুলগোলো ধরিয়ে দিলে এবং মার্জনার চোখে দেখলে ভালো লাগবে।পরবর্তী লিখায় আপনার উপদেশগুলো মেনে চলার চেষ্টা থাকবে আশা করছি।
বন্দনা

নাশতারান এর ছবি

দুঃখজনক সত্য ঘটনা। আমাদের আশপাশেই ঘটছে। দারিদ্র্য আর পুরুষতন্ত্রের যুগপৎ ফসল এ ঘটনাগুলো।

লেখা ভালো লেগেছে। তবে পরিসমাপ্তিটুকু ভালো লাগেনি। মেয়েটা গরিব বলেই অন্যায়ের বিচার পেলো না। স্ত্রীটি নারী বলেই লম্পট স্বামীকে ছাড়তে পারলেন না। এরপর ওই বাড়িতে নতুন যে মেয়েটি কাজ করতে যাবে তার দিকে সেই লোক আবারো হাত বাড়াবে না কেনো? সেই মেয়েটি হাতে বটি তুলতে সাহস না পেলে তো আরো ভালো। এমনই তো হয়, হচ্ছে। আমরা হতে দিলে সামনেও হবে।

[ জন্য ও > জন্যেও, ধারনা > ধারণা, দাড়াঁতে > দাঁড়াতে, লোলপ > লোলুপ, ভোলনি > ভুলোনি,
সাহায্যকারি > সাহায্যকারী, আমি ও > আমিও, কিশোরি > কিশোরী, উচুঁ > উঁচু, পেরেছিল > পেরেছিলো, তাড়িঁয়ে > তাড়িয়ে, প্যচে > প্যাঁচ, ঘৃনা > ঘৃণা ]

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লেখার মূলভাবের সাথে ছবিটা মেলাতে পারছিনা। মেলাতে পারছিনা মানে এমন লেখা পড়তে চাই কিন্তু এমন ছবি দেখতে চাইনা। ছবিটাকে সরিয়ে দেবার কথাটা কি বিবেচনা করবেন?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ঘটনা গুলো অহরহই আমাদের চারপাশে ঘটছে।শুধু কি গরীব কাজের মেয়েগুলোই এর শিকার!শিক্ষিত মেয়েরাও কি এমন লালসার শিকার হয়না? আমার মনে হয় মেয়েমানুষ কে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরুষ গুলো শুধু ভোগের সামগ্রী মনে করে।এর বাহিরে আর কিছু চিন্তা করতে পারে না।পরিবার থেকে ছোট বাচ্চা গুলো যদি দেখে তার পরিবারে মা ঠিক সম্মানটুকু পাচ্ছে,তা হলেও মনে হয় পরিবতন হবে।মানবিক মূল্যবোধ, মন মানসিকতার পরিবতন অত্যবশ্যক।

মিতু
রিফাত জাহান মিতু

অতিথি লেখক এর ছবি

শত ধিক সেইসব বাবাদের প্রতি...যারা নিজের মেয়ের বয়ষী কারো সম্পর্কে এরকম চিন্তাও করতে পারে...

অগ্নিবীণা এর ছবি

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত অনাকাংখিত কিন্তু অহরহ ঘটে যাওয়া একটি চরম নিন্দনীয় কাজ! লেখিকাকে এ ব্যাপারটিকে তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ! এর প্রতিকার কী ভাবে করা যেতে পারে? লক্ষ্য করবেন, শুধু গৃহপরিচালিকা বালিকাটিই নয়, গৃহবঁধূটিও কিন্তু একই সাথে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সন্তান, সংসারের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা থেকে সহজ সমাধান হিসাবে গৃহপরিচালিকাটিকে তাড়িয়ে দিয়ে হয়ত তিনি "তাসের ঘরে" বাস করাটিকে বেছে নেন!
এজন্যই প্রতিটি মহিলাকে সচেতন এবং অর্থনৈতিক ভাবে স্টেবল হওয়া প্রয়োজন। এতে করে সেই পুরুষটির মনে যেন অন্তত এই "ভয়" থাকে যে অন্যয় করে সে ঘরের মানুষটির কাছ থেকে রক্ষা পাবে না! আর ছোট থেকেই প্রতিটি শিশুকে ন্যায় অন্যায়ের ব্যাপা্রে প্রখর সচেতন করে তোলা উচিত, যেন বড় হয়ে সে অন্যায়কারী কিংবা অন্যায় হজমকারী না হতে পারে!

অনুপম মল্লিক এর ছবি

সবার মত আমিও বিষটির জন্য আমাদের সমাজের কিছু মানুষের বিকৃত মানসিকতা কে দায়ী করব।
জরুরী বিষয় তুলে আনার জন্য লেখিকাকে ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

বুনোপাকে ধন্যবাদ বানানের ভুলগুলো ধরিয়ে দেবার জন্যে।শেষটুকুর ব্যপারে বলতে পারি, এটাই বাস্তব এবং কঠিন সত্য, কল্পনা দিয়ে বাস্তবতাকে অতিক্রম করা হয়নি ইচ্ছে করেই, আমরা মেয়েরা সবসময়ই এ ধরনের ঘটনার ভুক্তভোগী প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে।
পান্ডবদা, আমার গল্পের কিশোরীর মানসিক অবস্থার সাথে ছবিটাকে সঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়েছিল বলেই দেয়া,সবার কাছে আপত্তিজনক মনে হলে সরিয়ে ফেলার জন্যে অনুরোধ করব।
অগ্নিবীণা, মিতুপা, বুনোপা আপনাদের ভাবনাগুলোর সাথে সহমত জানাচ্ছি।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্যে এবং আপনাদের ভাবনাগুলো শেয়ার করার জন্যে।
বন্দনা

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার নিকট ভালই লেগেছে। মনের কষ্ট ফুটেছে স্পষ্ট।

আইডি-শাফি উদ্দীন
অতিথি লেখক
guest_writer
guest
Email:

শরতশিশির এর ছবি

মন্তব্যের পরে আপনার ''নিক''-টি দিলেই শুধু চলবে, আর কিছু দিতে হবে না। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

দ্রোহী এর ছবি

মন খারাপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।