বৈশাখী টেলিভিশনে এই মাত্র দেখলাম খবরটা। বাংলাদেশ গ্যাস আমদানী করতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার থেকে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানালেন তাদের সিগ্ধান্তের কথা। তারা কাতার থেকে তরলিকৃত গ্যাস আমদানী করবেন। সেই তরলকে বায়বিয় আকারে রূপান্তর করে ছাড়া হবে পাইপলাইনে, যেখান থেকে সবার চুলায় পৌঁছে যাবে সেই গ্যাস। বলতেই হয় সময়োপযোগী সিগ্ধান্ত।
আমাদের গ্যাস নাকি শেষ হয়ে যাচ্ছে ২০১২ সালে। নতুন গ্যাস অনুসন্ধানে নানান জটিলতা। তার উপর সাগরে থাকা গ্যাস নিয়ে মায়ানমার এবং ভারতের সাথে আমাদের যে ঝগড়া চলছে, তা সমাধান হতে কম করে হলেও অন্তত ৪ বছর সময় লাগবে। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে ৬০০ মেগাওয়াট। তার উপর সরবরাহ করতে না পারার কারনে বন্ধ রাখতে হচ্ছে কারখানা। আমাদের গিন্নীরা সময় মত রান্না করতে পারছেন না গ্যাস না থাকার কারনে, সেটা না হয় বাদই দেয়া গেলো। তাই নাকি সরকারকে বাধ্য হতে হলো গ্যাস আমদানী করার সিগ্ধান্ত নিতে।
দেশের খবর খুব একটা রাখা হয় না কিছুটা ব্যস্ততার কারনে, কিছুটা সব-কিছু-গোল্লায়-যাবে-সেটাই-স্বাভাবিক-ভেবে-কি-হবে ধরনের মনোভাবের কারনে। তার পরেও যতদূর মনে পরে, কিছু দিন আগেও খুব লাফালাফি হচ্ছিল গ্যাস রপ্তানী হবে বলে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের যদি এত পরিমান গ্যাসই মজুদ থাকে যা দিয়ে আমরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করতে পারি, তাহলে এত তারাতারি সেই গ্যাস গেলো কোথায়? তাহলে কি আমাদের আদৌ সেই পরিমান গ্যাস মজুদ ছিলো না? যদি তা নাই থাকে, তাহলে কোন সাহসে এই দেশের সরকার নিজেদের আভ্যন্তরিন প্রয়োজনের কথা বাদ দিয়ে বিদেশে গ্যাস রপ্তানী করার কথা ভাবতে পারে? কি ছিলো সেই চিন্তার পেছনে তাদের স্বার্থ? শুধুই ব্যক্তিগত পকেট ভারী করা? এদেশের ষোল কোটি মানুষের চিন্তাও তাদের পকেটের চিন্তার কাছে কোন বিষয় নয়?
আর আমাদের বিপুল পরিমান যে গ্যাসের মজুদ ছিল, সেই গ্যাস এত জলদি শেষ হয়ে যাওয়ার পেছনে কারন কি?
আমার মনে হয়, আমরা নিজেরাই এর সবচেয়ে বড় কারন। সামান্য একটা ম্যাচের কাঠি বাঁচানোর জন্য আমরা সারারাত জ্বালিয়ে রাখি আমাদের রান্নার চুলা। আর কাজটা করি প্রায় বিনামূল্যে এই গ্যাস পাই বলেই। অথচ যেই কাতার থেকে গ্যাস আমদানী করার সিগ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেই দেশে থাকার বদৌলতে জানি, সেখানকার গ্যাস কোন পাইপলাইনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে সরবরাহ করা হয় না। সবাইকে গ্যাসের সিলিণ্ডার কিনে নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। শুধু কাতার কেনো, পৃথিবীর কোন দেশেই পাইপলাইন বসিয়ে আনলিমিটেড গ্যাস সরবরাহ করার মত অপচয়ি পদ্ধতি আছে বলে আমার মনে হয় না।
সরকার যদি গ্যাস আমদানী করার সিগ্ধান্তই নিয়ে থাকে, আমার মনে হয় সবার আগে তাদের উচিত পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে সবাইকে সিলিণ্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা। কাজটা হয়ত এখনই করা যাবে না, তার জন্য জনগনকে প্রস্তুতি নেয়ার সময় দিতে হবে। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব তাদের উচিত এই পাইপলাইন সিস্টেম বাদ দেয়া। আমার মনে হয় সময় এসেছে জনগনকে বুঝতে দেয়ার, তাদের অফুরন্ত গ্যাসের ভাণ্ডার শেষ হয়েছে তাদেরই অবিবেচক অপচয়ের কারনে। তা না হলে এক দিকে উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনে এনে পাইপলাইনে ঢালবে, আর মানুষ ৩৫০ টাকা মাসে বিল দিয়ে অকারনে ২৪ ঘণ্টা জ্বালিয়ে রাখবে তাদের চুলা। ভর্তুকি দিয়ে কয়দিন চালাবে সরকার?
আর দ্বিতীয় যে কাজটি করা উচিত, সেটা হলো বড়লোকের দামী গাড়িগুলোতে বিনামূল্যের সিএনজি ঢালা বন্ধ করা। পাবলিক পরিবহনগুলোতে সিএনজি দেয়া যেতে পারে, জনগনের উপকার হচ্ছে। কিন্তু বড়লোকের এই লেটেস্ট মডেলের দামী গাড়িগুলোতে বিনামূল্যে সিএনজি দেয়ার কি অর্থ হতে পারে? এত টাকা দিয়ে যারা গাড়ি কিনতে পারে, তারা সেই গাড়ি চালানোর জন্য পকেটের টাকা খরচ করে পেট্রোল কিনতে পারবে না? যদি নাই পারে, গাড়িগুলো গ্যারেজে রেখে দিয়ে পাবলিক বাসে টিকেট কেটে যাতায়াত করুক। রাস্তার উপর গাড়ির চাপ কমবে। জানজট করবে। সাধারন মানুষ রাস্তায় বের হলে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলতে পারবে।
নিতান্তই আবেগের বশে লেখা অর্থহীন এই লেখাটি কোন কিছুই পরিবর্তন করতে পারবে না জানি। তারপরেও লিখলাম দেশের প্রতি মমত্ববোধের কারনে। এত দূরে বসে নিজ দেশের শুধুই পেছনে যাওয়া দেখতে আর ভালো লাগে না।
মন্তব্য
গ্যাস শেষ হয়ে গেলে খড়ির চুলার ব্যবহার শুরু হবে। তারপর শুরু হবে বন উধাওকরণ। আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যেই মহাবিপর্যয় দেখতে হবে মনে হচ্ছে।
যখন গ্যাস রপ্তানীর পায়তারা চলছিল তখন শুনতাম গ্যাসের উপরে ভাসছে বাংলাদেশ! গ্যাস মনে হয় খনি থেকে উঠে সবার পেটে চলে গেছে।
আপনার নিতান্তই আবেগের বশে লেখা অর্থহীন এই লেখাটি আমার বেশ লাগলো।
meghladin@gmail.com
ধন্যবাদ নিদ্রালু।
সচলায়তনে এটাই আমার প্রথম লেখা। প্রকাশিত হয়েছে দেখে দারুন আনন্দ লাগছে।
র হাসান
পোস্টটা আবেগের বশে করেছেন, বুঝতে পারছি আপনার অবস্থা। আপনি হয়তো গ্যাস অপচয়ের কথা ভেবে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। কিন্তু আপনার ভালো লাগবে জেনে যে গৃহিনীদের চুলায় যে গ্যাস যায় তার পরিমাণ শতকরা পনেরো ভাগের বেশি হবে না। উত্তোলিত গ্যাসের সিংহভাগ (সম্ভবত আশি শতাংশই) যায় বিদ্যুৎ ও সারকারখানায়। সুতরাং শুধু গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে দেশের গ্যাস ২০১২ সালের মধ্যে ফুরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। আর সিএনজি গাড়ি নিয়েও আপনার রাগটা বোঝা গেল না। আবারো বলছি, ১৭-১৮ টিসিএফ গ্যাস পোড়ানোর মত রান্নাবান্না এবং ভ্রমণ আমরা করি না।
তবে যে কোনো ধরণের অপচয় রোধ করা জরুরী। আর যাই হোক, কাতারের মত গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ তো আর বাংলাদেশ নয়!
তাহলে গ্যাস গেল কোথায়? মোক্ষম প্রশ্ন। লেখক ২০১২এর মধ্যে গ্যাস শেষ হয়ে যাবার যে কথা বলেছেন তাতে আমার ঘোর সন্দেহ আছে। গ্যাস কোথায়ো যায় নি। যেখানে থাকার সেখানেই আছে। তবে যেটুকু থাকার সেটুকুই, তার বেশি নয়। আসলে বাংলাদেশের সঠিক গ্যাসের মজুদ নিয়েই সঠিক ধারণা অনেকের নেই। আর সঠিক ধারণা না থাকার কারণেই আমাদের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা তাদের সুবিধামত জাতির সাথে গেম খেলতে পারে।
কাতার থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি প্রসঙ্গে বলি। মুখে বললেই এলএনজি আমদানি করা যায় না। না জানলে আমার অক্ষমতা, তবে আমি এখনও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এলএনজি রিসিভিং টারমিনাল তৈরির কথা শুনি নি। আর সেটা রাতারাতি তৈরি করাও সম্ভব নয়। বাংলাদেশ যদি এলএনজি আমদানি করার সিদ্ধান্তও নেয়, সেটা বাস্তবায়ন করা একটা সময়সাপেক্ষ এবং খরুচে ব্যাপার। কয়েক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
লেখক কি আমাদের জানাতে পারবেন, কী মূল্যে এলএনজি কিনতা যাচ্ছে বাংলাদেশ? জানাটা জরুরী।
এলএনজি আমদানি করবো - এটা ঘোষণা দিলেই আমদানি করা যায় না, এটা বোধহয় ঘোষকেরা জানেন না। এক একটা এলএনজি জাহাজ কিনতে কয়েকশো মিলিয়ন ডলার লাগে, সেই জাহাজ কারা দেবে? কাতার? জাপান? কোরিয়া? বানাতে কিংবা ভাড়া নিতে লাইনে দাড়াতে গেলে জাহাজ পেতে পেতে তিন বছর। একটা এলএনজি রিসিভিং টারমিনাল বানাতেও ওরকম সময় লাগবে। সুতরাং এলএনজি চাখতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
সবচয়ে বড় কথা, এলএনজি আদৌ আমাদের জন্য কস্ট এফিক্টিভ কিনা সেটা একটা বড় ব্যাপার এবং প্রচুর পর্যালোচনার দরকার আছে। কাতার এলএনজি বেচতে একপায়ে খাঁড়া, কারণ সেটা তাদের মূল ব্যবসা। কিন্তু একটা গরিব রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের টাকা খরচ করার আগে শতবার ভাবতে হবে, এলএনজির মত এমন ব্যয়বহুল জ্বালানি আদৌ আমাদের জন্য সুবিধাজনক হবে কিনা সেই হিসাব করতে হবে।
আমিও আবেগের বশে কমেন্ট করে ফেললাম অতিথির নাম জানা হলো না!
আশ্বস্ত হওয়ার মত মন্তব্য।
গৃহিনীদের রান্নার কাজে যে পরিমান গ্যাসই ব্যবহার করা হোক না কেনো, আমাদের দেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে যেভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হয় এবং সেই গ্যাসের যে বিপুল পরিমান অপচয় করা হয়, সেটি কি সত্যিই বেদনাদায়ক একটি বিষয় নয়? এই গ্যাস যদি প্রথম থেকেই সিলিণ্ডারে করে সরবরাহ করা হতো এবং মানুষ সিলিণ্ডার প্রতি পয়সা দিয়ে গ্যাস পেতো, তাহলে অন্তত একটি দেয়াশলাই কাঠি বাঁচানোর জন্য সারারাত চুলা জ্বালিয়ে রেখে দেদারছে প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় করত না।
২০১২ সালের মধ্যে গ্যাসের বর্তমান সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ার কথাটা আমার না, বলছিলেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। (সালটা অবশ্য আমি ভুলও শুনতে পারি!) তবে তাদের গ্যাস আমদানি করার পরিকল্পনাটা কার্যকর করাটা খুব শীঘ্রই হওয়ার কথাই বলছিলেন। এই জন্য প্রয়োজনীয় টার্মিনাল বানানোর কাজও খুব শীঘ্রই শুরু হওয়ার কথা। আর দাম বলছিলেন ২.৫ ডলার (কি পরিমান জানি না। খবরটা আবার দেখানোর কথা বৈশাখী টেলিভিশনে )
র হাসান
দেশেকে এমন অধপাতে যেতে দেখে খুব কষ্ট হয়।কিছুই করতে পারিনা ভেবে আরো কষ্ট হয়।
মিতু
রিফাত জাহান মিতু
গ্যাস যদি শেষ হয়ও, ব্যবসায়ীরা সরকারের গলায় পাড়া দিয়ে গ্যাসের ব্যবস্থা করিয়ে ছাড়বে। তখন হয়তো মায়ানমার বা ভারত থেকে গ্যাস আমদানি করা হবে চড়া দামে।
এর কারণ হচ্ছে, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে গ্যাসভিত্তিক অবকাঠামোতে প্রচুর বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেগুলোর আয়ু না ফুরানো পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা গ্যাসের জন্যে সরকারকে প্রচণ্ড রকম চাপে রাখবে।
বাসায় গ্যাসের অপচয় অবশ্যই রোধ করা উচিত, কিন্তু তারও আগে যা করা উচিত, তা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাস চুরি রোধ করা। আপনি হয়তো জানেন না, শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে গ্যাসের এক রকম দাম, আর শিল্পে ব্যবহারের জন্যে আরেক রকম। যেটা ঘটে থাকে, শিল্প কারখানার মালিকরা একটু ওভাররেটেড জেনারেটর বসান, সেই অনুযায়ী গ্যাসের সংযোগ বরাদ্দ হয়, এবং জেনারেটরে পুরো ব্যবহৃত না হয়ে সেই গ্যাস ব্যবহৃত হয় শিল্পে। আর বিল পরিশোধ করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে স্থিরকৃত হারে। গ্যাস কোম্পানির মাঠকর্মীরা দুই হাতে টাকা কামায় সেখান থেকে। বাড়িতে বাড়িতে গ্যাসচোর না খুঁজে ইন্ডাস্ট্রিতে একটু নাড়া লাগান, সুফল পাবেন ।
সম্পূর্ণ একমত। বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিপর্যয় থেকে উদ্ধার পেতে সরকারের উচিৎ সবার আগে এইখাতে চুরি বন্ধ করা। নয়ত কোন কিছু করেই কিছু হবে না।
আর গ্যাস যে চড়াদামে আমদানী করছে সেটা নিশ্চিত। সরকারের পরিকল্পনা এই মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এলএনজি গ্যাস রপ্তানীকারক দেশে কাতার থেকে আমদানী করার। তবে এরপর যে দেশ থেকে সুবিধামত মূল্যে পাবে সেখান থেকেই আমদানী করবে।
র হাসান
- সবাই গরুবাছুরছাগলভেড়া পালা ধরেন। আর বেশি বেশি করে মনুষ্য বর্জ্য জমা করতে থাকেন, কোনো কিছু ফেলাইয়েন না। আল্লায় দিলে, প্রাকৃতিক গ্যাস শ্যাষ হৈয়া গেলেও বায়োগ্যাসের সম্ভাবনা আমাদের দেশে শ্যাষ হবার না। আজকে কাতার আমাদের কাছে এলএনজি বেচতে চাইতাছে? খাড়ান, কুড়ি বছর পরে আমরাই অগো কাছে এলবিজি বেচুম, তাও চড়া দামে। যাবা কই?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গ্যাসও আমদানীর চিন্তাটা আমার কাছে বেশ ভাল মনে হয়েছে। তবে ফারুক হাসান যা বলেছে, ব্যাপারটা এত সহজ না। রিসিভিং টারমিনাল এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরীর জন্য প্রাথমিক হিসাবে এক বিলিয়ন ডলার লাগবে। গ্যাসের শুধু আমদানি মূল্যই ৮ ডলারের মত হবে(প্রতি হাজার ঘনফুট)। যেখানে আইওসিদের কাছ থেকে সরকার প্রতি হাজার ঘনফুট কিনে সর্বোচ্চ তিন ডলারের কিছু কম টাকায়। (সরকারের ফ্রি পোরশন যোগ করলে হয়ত অ্যাভারেজ ২ ডলারের কম হবে।) তারপরেও আমি মনে করি অনেক ইন্ডাস্ট্রি নিতে আগ্রহী হবে। (আমার কাছে কোন তথ্য নেই, তবে বিদ্যুৎ সংকটে ক্যাপটিভ পাওয়ারের জন্য কিছু ইন্ডাস্ট্রির অনেক বেশি খরচ করতে হয়)।
আপনি হাউজহোল্ড অপব্যবহারের কথা বলেছেন, যেটা আসলেই দুঃখজনক। তবে সবকিছু মিলিয়ে হাউজহোল্ড ব্যাবহার মাত্র ১০%। দ্বিতীয়ত সিলিন্ডার সমাধান নয়। বাংলাদেশের মত জনবহুল জায়গায় এটা ভাল হবে না। সরকার গ্যাস লাইনে ‘মিটার’ বসানোর চিন্তা করছে অনেক আগে থেকে (বিদেশী দাতা সংস্থার চাপ)। এটা ভাল সমাধান বলে মনে হয়েছে আমার।
আর দ্বিতীয় যে কাজটি করা উচিত, সেটা হলো বড়লোকের দামী গাড়িগুলোতে বিনামূল্যের সিএনজি ঢালা বন্ধ করা... এই ডিফারেন্সিয়েশন করা হয়ত সম্ভব নয়। এত বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাব না। দ্বিতীয়ত জ্বালানি তেলও কিন্তু হাইলি সাবসিডাইজড।
১০১২ এ শেষ হয়ে যাবে এবং রপ্তানির ব্যাপারটা পরে আলোচনা করব।
মিটার বসালে সেটা হবে একটা লসি সিস্টেম। ডিপিডিসির বিল আদায়ের ডেটা থেকে যা বুঝি, বিল আদায় করতে গিয়ে সিস্টেম লস ২০% এর কাছাকাছি থাকে। তিতাসে যারা কাজ করে তারাও ডিপিডিসির মিটাররিডারদেরই ভায়রাভাই।
সরকার যদি আমার ভোনহাইমের লন্ড্রিরুমের মতো মিটার বসাতে পারতো, তাহলে একটা কথা ছিলো। ব্যবস্থাটা কীরকম হবে বলি। একটা অ্যাপার্টমেন্টের নিচে, যেখানে গ্যাস সংযোগ আসে, সেখানে এই মিটার বসাতে হবে। মিটারে থাকবে কয়েন ঢোকানোর স্লট, কয়েন রেকগনিশন ইউনিট, আর গেট ভালভ কন্ট্রোলার। প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটের গ্যাস সংযোগের জন্য একটা করে বাটন থাকবে। স্লটে কয়েন ফেলার পর নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটের বাটনে চাপ দিলে একটা কাউন্টার রিসেট হয়ে যাবে, সে কয়েনের সমমূল্যের গ্যাস ফ্লো হবার পর ঐ ফ্ল্যাটের ভালভটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেবে। যেহেতু মিটারটা বেশ বড়সড়, মাস তিনেক বা মাস ছয়েক পর গ্যাস কোম্পানির লোক এসে কয়েন কালেক্ট করে নিয়ে চলে যাবে। জিনিসটা ব্যাটারিতে চলবে, খুব বেশি পাওয়ারও কনজিউম করবে না, মাঝে মাঝে চার্জ করে রাখতে হবে।
এই ব্যবস্থায় গোণাগুণতির কাজটাও মিটার নিজেই করে রাখবে, একটা ছোটো রিসিট প্রিন্টের ব্যবস্থাও তার ভেতরেই রাখা যাবে। টোটাল কালেকশনের পরিমাণ মিলিয়ে দেখা তাই কোনো সমস্যা হবে না।
একই ব্যবস্থা বিদ্যুতের জন্যেও করা যায়। তবে এসব সিস্টেম চালু করলে সরকারকে হয়তো পঞ্চাশ টাকার কয়েন ছাড়তে হবে বাজারে।
ইন্টারেস্টিং কনসেপ্ট। ব্যাপারটা জানা ছিল না।
সেন্ট্রাল প্রিপেইড মিটার আর কি। ঘরে ঘরে মিটার না বসিয়ে একেবারে একটা গোটা কমপ্লেক্সে বসানো। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সব আগাম কেনার ব্যবস্থা। কালেকশনটা কোনো সিকিউরিটি ফোর্সের মাধ্যমে করানো যেতে পারে। পাইলট বেসিসে শুরু করে দেখা যেতে পারে এর উপযোগিতা কেমন। তবে বিদ্যুৎ আর গ্যাসবিভাগে যেসব শুয়োরের বাচ্চারা চুরিচামারির সাথে জড়িত, তারা এসব পাইলট প্রোজেক্টকে কাঠি দেয়ার জন্যে তৎপর থাকবে, কোনো সন্দেহ নাই।
ভেন্ডর মেশিন যদি নোট রিকগনাইজ করতে পারে, তাহলে এই মিটারেও সেই রকমের কিছু করতে পারার কথা। তবে কথা হচ্ছে, সরকার এই ধরনের কিছু কোনদিনও করতে উৎসাহিত হবে না। তাহলে যে দেদারসে লুটপাটের রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাবে।
হ্যাঁ । কিছু শুয়োরের বাচ্চার চুরির রাস্তা খোলা রাখার জন্য কোটি কোটি মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বাংলাদেশে একটা এল এন জি টার্মিনাল দেখতে পারলে ভালই হয়। প্রশ্ন হল দেশে যখন একটা বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল এর কথা উঠলেই এদিক সেদিক লাশ পড়তে থাকে, তখন এল এন জি টার্মিনাল (বন্দর) নিয়ে কি কারবার হয় সেটা দেখার মতই কিছু একটা হবে।
আরকিছু না হোক, আমাদের আনু স্যারের মাথায় আরেকটা ডান্ডা-বাড়ি পড়ার ব্যাবস্থা হল, আর কি। নাকি এ দফা তিনি পথে নামবেন না?
---
গ্যাস আমদানীর সিদ্ধান্তে আসার আগের প্রক্রিয়াটা জানতে ইচ্ছা করে। কতটুকু? কি দামে? টার্মিনালটা কোথায় হবে? এল এন জি এনে জাতীয় গ্যাসে গ্রীডে ছেড়ে দিলেই হবে, পাইপলাইনে কোন পরিবর্তন করতে হবে না? কে টাকা দেবে?
---
রাজকোষে ১ বিলিয়ন (নৈষাদ যেমন বললেন) পড়ে গড়াগড়ি যেতে থাকলে সেটা দিয়ে দেশী কয়লাকে গ্যাস বানিয়ে পাইপে ছাড়া হচ্ছে না কেন?
- রাজকোষে না থাকলেও টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে নিশ্চিত। গৌরী সেন আছে না! ঊনত্রিশ কোটি বিশ লাখ তো পাওয়া গেলো বিদ্যুৎ খাতে। এবার আরও শ'খানেক কোটি তাতে যোগ হলেই তো হলো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
যতদুর জানি, জ্বালানী হিসেবে গ্যাস সবচেয়ে দামী, এরপরে তেল এবং কয়লা। দূষণের দিক দিয়ে উল্টা: সবচেয়ে বেশি দূষণ করে কয়লা, তারপর তেল আর গ্যাসে দূষণ অন্যগুলোর তুলনায় নাই বললেই চলে।
কাজেই কয়লা ফেলে রেখে গ্যাস ব্যবহার করাটা কি অতিরিক্ত পরিবেশ সচেতনতা নাকি গরীবের ঘোড়া রোগ সেটা বলা মুশকিল।
বেশ কিছুদিন আগে ইকোনোমিক হিটম্যান নিয়ে একটা লেখা এসেছিলো। অরূপের পোস্ট; রিয়াজ উদ্দিনের পোস্ট
এই পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাস (খনিজ সম্পদ) নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হিসাব ও নসিহতের অর্থ বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না। দেশ গ্যাসের উপর ভাসছে বললে সস্তায় গ্যাস নিয়ে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হয় বিভিন্ন চোষা কোম্পানির। অপরপক্ষে দেশে গ্যাস নাই বললে বেশি দামে গ্যাস বিক্রয়ের সুবিধা হয়।
দেশের মধ্যেই পাইপলাইন নাই, এমন জায়গার কিছু ইন্ডাস্ট্রিতে এল.এন.জি ব্যবহৃত হয়। ট্রাকে সিলিন্ডার ভর্তি করে এল.এন.জি. আনা হয়। তারপর সেটাকে ডিকম্প্রেস করে গ্যাস বানানো হয়, এতে আবার তাপ উৎপন্ন হয়, তাই চিলিং ইউনিটও লাগে। তারপর সেই গ্যাস সরবরাহ করা হয় জেনারেটরে।
তবে এই কাজ করতে গেলে ৩টা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়। ১. প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, ২. সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ৩.পরিবেশ অধিদপ্তর। এই ধরণের কাজ করে দেয়ার জন্য কনসালটেন্সি ফার্মও রয়েছে।
পোস্টে, কোনো দেশে পাইপ লাইনে সরবরাহ দেয়া হয় না -- এরকম একটা কথা দেখেছিলাম। জাপানে পাইপলাইনে গ্যাস পেতাম তবে সেটা এল.পি.জি. গ্যাস ছিলো বলে মনে হয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
পদার্থবিদ্যা উল্টোটাই বলে না? একটা গ্যাসকে ডিকম্প্রেস করলে তার তাপমাত্রা কমে যায়, কম্প্রেস করতে গেলে বেড়ে যায়। চিলিং ইউনিট লাগে কম্প্রেসর ইউনিটের পর।
এলএনজি কে গ্যাসে রূপান্তর করতে ডিকম্প্রেস বা প্রসারণ করা হয় না। কারণ, এলএনজি তৈরি ও পরিবহন করা হয় সাধারণ বায়ুমন্ডলীয় চাপেই। যেহেতু এলএনজির তাপমাত্রা মাইনাস একশো ষাটের নীচে থাকে সেহেতু যেকোনো হট কনটাক্টে আনলেই সেটা গ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। সাধারণ তাপমাত্রার পানি (সামুদ্রিক বা সাধারণ) কিংবা বাতাসের সাথে তাপের আদানপ্রদান করেই এলএনজিকে গ্যাস বানিয়ে ফেলা যায়।
ইদানিং এই প্রক্রিয়ায় ঠান্ডা হয়ে যাওয়া সামুদ্রিক পানিকে ডিস্যালিনেশন করার গবেষণা পুরো দমে চলছে।
রিগ্যাসিফিকেশানেও তাপের দরকার হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা মোট প্রক্রিয়াজাত গ্যাসের ১,৫-২% ও খেয়ে নিতে পারে, তবে গরম দেশে সাগরের পানি ব্যাবহার করে এই খরচা কমানো যায়। এখানে বিশদ জানা যাবে।
হুম্ তাইতো ....
বাস্তবে কী ঘটছে সেই ব্যাপারে আরেকটু খোঁজ খবর নিতে হবে মনে হচ্ছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
একরাত ঘুম দেয়ার পর যা মনে হল:
সিলিন্ডারগুলো পরিবহনের সময়ে সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবহন করা হয়। তাই ডিকম্প্রেস করার আগে -১৬২ ডিগ্রী তাপমাত্রায় নিয়ে তরল অবস্থা নিশ্চিত করার জন্য চিলিং ইউনিট দরকার হয়। নাহলে সাধারণ তাপমাত্রায় সিলিন্ডার খুলতে গেলে প্রচন্ড চাপে বিষ্ফোরণ ঘটতে পারে।
কাজেই তাপ উৎপন্ন হওয়ার ব্যাপারটা ভুল লিখেছিলাম। তবে চিলিং এর ব্যাপারটা বাস্তব।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আমার জানা মতে জ্বালানি হিসাবে সবচেয়ে দামী তেল এবং এটা সহজেই পরিবহনযোগ্য।
আপনার ট্রাকের উদাহরণের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে স্কেলে এলএনজির আমদানীর কথা হচ্ছে, সেটার টারমিনাল এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অনেক ব্যাপক এবং অনেক ব্যয় বহুল (সরকারের প্রাথমিক হিসাবে ১ বিলিয়ন ডলার)।
আমি মনে করি এলএনজি হিসাবে গ্যাস আমদানী করেও কমার্শিয়্যাল অর্গেনাইজেশন গুলিতে সাপ্লাই দেয়াটা যদি ভায়াবল হয় তবে গ্যাস আমদানী নয় কেন? (আমার অবশ্য এলএনজির রিসিভিং টার্মিন্যালের ভৌতিক কাঠামো কত বড় হয় সেই ব্যাপারে ধারণা নেই।) আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ তো তাহলে ভবিষ্যতের জন্য থাকবে।
ইদানিং আমার আরেকটা কথা মনে হচ্ছে। একটা সময় সরকারের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের ওয়েব সাইটে www.hcu.org.bd তে দেশের মোট গ্যাস রিজার্ভের হিসাব পাওয়া যেত (এবং ইন্টারেস্টিংলি মোট গ্যাসের রিজার্ভের ব্যাপার যে যার মত ব্যাখ্যা দিত, কেউ এই প্রামাণিক দলিলের রেফারেন্স দিত না)। অনেকদিন ধরে দেখি এই ওয়েব সাইটে যাওয়া যায় না। ইদানিং আমার ধারণা হচ্ছে সরকার ইচ্ছা করেই এই সাইটটা ঠিক করছে না। একজন হার্ড-লাইনার আমাকে বলেছিল তত্ত্বা-সরকারের আমলে প্রথমবারের মত পিএসসি ওয়েবে দিয়ে সরকার ‘গ্যাঞ্জাম’ সৃষ্টি করেছে। একই পিএসসি আগে স্বাক্ষর করতে কোন ‘গ্যাঞ্জাম’ হয়নি। তাহলে কি সরকার ভবিষ্যতর ‘গ্যাঞ্জাম’ অ্যাভইয়েড করতে চেষ্টা করছে...?
প্রথমে লেখককে ধন্যবাদ জানিয়ে এ বিষয়ে আমার কিছু মতামত রাখছি:
১) গ্যাসের মজুদ:
ক) দেশে এ যাবৎ মোট ২৩ টি গ্যাস ফিল্ডের উত্তোলনযোগ্য প্রমানিত মজুদেও পরিমাণ ২০৮১৮.৫ বিলিয়ন ঘনফুট । এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ৮০৪৫.৯৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলোন করা হয়েছে । অর্থাৎ ২০০৯ এর শুরুতে ১২৭৭২.৫১ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ থাকার কথা।
খ) ১৯৯০-২০০৮ পর্যন্ত গড়ে ৭.৭৩% হারে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি হয় এবং ২০০৯-২০২৫ পর্যন্ত গড়ে চাহিদা ধরা হয়েছে ৮.৭৩ % এখানে চাহিদা বৃদ্ধির কারন সি.এন.জি খাতে ও শিল্পখাতে চাহিদা বৃদ্ধি।
গ) এ হিসেবে ২০০৮-০৯ সালে ৪০৭ বিলিয়ন ঘনফুট এবং ২০০৯-১০ সালে ৮০২.৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যাবহ্রত হওয়ার কথা । ফলে ২০১০ সাল শেষে হাতে থাকবে ১১৫৬২.৭ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
ঘ) ২০১৮ এর শুরুতে গ্যাসের মজুদ হবে ১৫৬১.৭৫ কিন্তু ঐ সময় চাহিদা থাকবে ১৬৯৫.৭৫ বিলিয়ন ঘনফুট। ফলে ২০১৯ এর শুরু হওয়ার আগেই গ্যাস শূন্য হয়ে যাবে বাংলাদেশ যদি এর মধ্যে স্থল ভাগে গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কার না হয় কিংবা সমুদ্রের গ্যাস ব্লক থেকে গ্যাস উত্তোলন করা না হয়। এরপর গ্যাস আমদানী করতে হবে।
২) অপচয়: জ্বালানি ব্যবহারকারী ১০ খাতে বছরে প্রায় ১০৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অপচয় হয়। দৈনিক এর পরিমাণ ২৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট। অপচয়কারী খাতগুলোর মধ্যে গ্যাসচালিত নানা ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সার-কারখানা, শিল্প-কারখানার বয়লার, গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত গ্যাস বার্নার, সেচ, চিনি শিল্প এবং গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য।
২০০৭-৮ অর্থ বছরে মোট ৬০০.৮৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উতপাদিত হয়েছিল যার ব্যবহার বিদ্যুত খাতে ৩৮.৯৯%, ক্যাপটিভ খাতে ১৩.৩৫%, সার উতপাদনে ১৩.০৯%, শিল্পে ১৫.৩৪%, চা বাগানে ০.১১৮%, ব্যাবসা ক্ষেত্রে ১.০৯৮%, আবাসিক খাতে ১১.৫১%, সিএনজি খাতে ৩.৭১% এবং সিস্টেম লসে ২.৬৯%।
ফলে ১০ খাতের মধ্যে আবাসিক খাতের অবদান ১১.৫১%। আবাসিক খাতে অপচয় রোধ করার জন্য মিটার লাগানোই য়থেষ্ট। সিলিন্ডার পদ্ধতির প্রয়োজন নেই। আর প্রাইভেট কারের জন্য সিএনজি বিক্রি বন্ধ করে দেয়া উচিত কারণ সিএনজি খাতের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে দ্রুত গতিতে, আগামী ২০০৯-২০২৫ অর্থবছরে সিএনজি খাতের গড় গ্যাস চাহিদা হবে মোট উতপাদনের ১৪.১৩%। পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্যুত কেন্দ্রের পুরনো যন্ত্রপাতির বদলে এনার্জি ইফিশিয়ান্ট যন্ত্রপাতি লাগানোও জরুরী।
৩) এলএনজি আমদানী: জীবাশ্ম জ্বালানীর স্থানীয় উতস শেষ হয়ে গেলে তা বিদেশ থেকে আমদানী করা ছাড়া কোন গতি নাই(যদি না নবায়ণ যোগ্য জ্বালানী খাতের মাধ্যমে তা মেটানোর ব্যাবস্থা করা যায়)। এতে সাধারণ ভাবে কারও আপত্তি থাকার কথা না। কিন্ত বাংলাদেশের স্থলভাগের গ্যাসের প্রমাণিত মজুদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালে কিন্ত ২০১২ সালের মধ্যেই মজুদ ফুরিয়ে যাবে বলে আতংক তৈরী করে তাড়াহুড়া করে কোন সমন্বিত জ্বালানী নীতির চিন্তা ভাবনা না করেই এলএনজি আমদানীর ধান্দাটি সন্দেহ জনক।
এলএনজি আমদানীর ততপরতাটি প্রথম চোখে পড়ে কালের কন্ঠের ২৮ ফেব্রুয়ারী,২০১০ এ “কাতারের কাছে দেড় শ কোটি ডলার চাইবে বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি খবর থেকে। খবরে বলা হয়:
প্রশ্ন হলো কাতারকে দেড়শ কোটি ডলার বিনিয়োগের জন্য কাতারকে হাতে পায়ে ধরে আমাদেরকে এখনই কেন এলএনজি আমদানী করতে হবে? যদি বুঝতাম সরকার একটি সমন্বিত জ্বালানী নীতির আওতায় স্থানীয় গ্যাস কয়লার সর্বোচ্চ ব্যাবহার করার ব্যাবস্থা করছে, নবায়ণযোগ্য জ্বালানী নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে এবং তারপরও যদি সংকট হয় সেই আশংকায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এলএনজি আমদানী করছে তা হলে না হয় একটা কথা ছিল। কিন্ত এসব কোন পরিকল্পনা ও ব্যাবস্থা না করেই সরকার গ্যাস আমদানীতে ব্যাস্ত হযে পড়লো কেন? গত ৮ ফেব্রুয়ারি কালেরকন্ঠ একটি রিপোর্টে বলা হয়:
স্থলভাগের গ্যাস ছাড়াও দেশে বিপুল কয়লা মুজুদ রয়েছে। পরিবেশ সম্মত ভাবে (যেমন কোল গ্যাসিফিকেশান এরকম একটি প্রকৃয়া হতে পারে, যদিও এ পদ্ধতিরও নানান সীমাবদ্ধতা রয়েছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার) সেগুলো উত্তোলনের কোন পরিকল্পনা করা হচ্ছে না কেন? স্থলভাগ ছাড়াও ২০১৯ সালৈর আগেই সমুদ্রভাগের বিপুল গ্যাস উত্তোলনের জন্য জাতীয় সক্ষমতা তৈরীর কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না কেন?
ক্ষমতাবান শ্রেণীর আমদানী কিংবা রপ্তানিতে যত উতসাহ নিজস্ব উতপাদনে তার সামান্যও যদি দেখা যেত তাহলে আজকে দেশের শিল্প-কৃষি-জ্বালানী কোন খাতেই এত দুরবস্থা দেখা যেত না। এরা শর্ট টার্ম ব্যাক্তিগত মুনাফার পেছনে ছোটে, কোন দীর্ঘমেয়াদী জনকল্যাণকর পরিকল্পনা করার দিকে মনোযোগ নেই। যে কোন সংকট এদের জন্য দুদিক থেকে লাভজনক। সংকট তৈরী করার সময় লাভ (লাভের আকাঙ্খায় সংকট তৈরী হয়) আবার সংকট একবার বেধে গেলে দ্রুত সংকট থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়ার নামে আরেকবার ব্যাপক লাভের ধান্দা করা যায়।
তথ্য উপাত্ত সহ চমৎকার আলোচনা।
কিছু ব্যাপারে সহমত পোষণ করছি। কিন্তু আমার কিছু দ্বিমতও আছে।
তীব্র দ্বিমত। ২০১২ সালে মজুদ ফুরিয়ে যাবে বলে কোন আতংক তৈরী করা হচ্ছে না, ২০১২ সাল থেকে (অথবা তার আগে থেকেই, এই মুহূর্তে আমার কাছে রিপোর্ট গুলি নেই) চাহিদা এবং যোগানের ব্যবধান বাড়া শুরু হবে ব্যাপকভাবে। এটার প্রাথমিক সূত্র হল উড ম্যাকেঞ্জীর (Wood Mackenzie) ২০০৬ সালে তৈরী করা 'পেট্রোবাংলা - বাংলাদেশ গ্যাস সেক্টার মাষ্টার প্ল্যান' এর চুড়ান্ত রিপোর্ট। এর পরে আমার জানা মতে আর এত ব্যাপক-ভিত্তিতে সমীক্ষা হয়নি। কিন্তু অভ্যন্তরিণ অনেক রিপোর্ট তৈরী হয়েছে।সবগুলোতেই এই অবস্থা (আমার দেখা সেরা রিপোর্টাতে ২০১১ থেকেই গ্যাপ বাড়া শুরু হবে ব্যাপকভাবে)।
তাহলে প্রশ্ন থাকে আপনার দেয়া রিজার্ভ এবং ঐকিক নিয়মের অংকের ব্যাপারে। আপানার দেয়া রিজার্ভের ব্যাপারটা ঠিকই আছে, কিন্তু এটা তো 2P হিসাব (এখানে প্রুভড গ্যাস হয়ত সর্বোচ্চ ৫-৬ টিসিএফ)। কিন্তু ব্যাপারটা তো চৌবাচ্চার পানি এবং ঐকিক নিয়মের অংকের মতন না। আপনি ইচ্ছা করলেই ব্যবহার করতে পারবে না। ঐকিক নিয়মে চললে তো এখন গ্যাস ক্রাইসিসের কথা না।
বাংলাদেশে জ্বালানির ব্যাপারে একটা কুইক ফিক্সের দরকার – খুব দ্রুত। তা না হলে দুই/তিন বছরের মধ্যে একটা খারাপ অবস্থার মধ্যে পরতে হবে আমাদের।
আপনাকে ধন্যবাদ।
নৈষাদ, আপনার কাছে কী সাম্প্রতিক কোন রিপোর্টের সফট কপি আছে? থাকলে অনুগ্রহ করে আমাকে faruque.hasan এ্যাট gmail ডট com এ পাঠালে কৃতার্থ হবো।
কুইক ফিক্সের যে কথা বললেন, এলএনজি কিন্তু সেটা করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশি দেশ থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনাই সমাধান। আর বিদ্যুৎ সমস্যার কুইক ফিক্সের জন্য সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নেয়াই মনে হয় দরকার।
এলএনজি কিন্তু সেটা করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশি দেশ থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনাই সমাধান। আর বিদ্যুৎ সমস্যার কুইক ফিক্সের জন্য সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নেয়াই মনে হয় দরকার।
প্রতিবেশী কোন দেশে উদ্বৃত্ত গ্যাস আছে? বার্মা ও ভারতের রিজার্ভের হিসাব নিকাশ যে বাংলাদেশের চাইতে উন্নত, এটা ভাববার কোন কারন আছে কি?
সরাসরি বিদ্যুত আমদানী করার আগে সেই বিদ্যুত উতপন্ন করতে হবে, সেখানেও সেই উদ্বৃত্ত ক্যাপাসিটির প্রশ্ন। হাজার মেগাওয়াট উদ্বৃত্ত ক্যাপাসিটি নিয়ে বসে আছে কোন প্রতিবেশী দেশ?
বাইরে থেকে কুইকফিক্স আসবে না। দেশের ভিতরেই কুইকফিক্স বের করতে হবে।
- আরো জোরেশোরে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান করতে হবে। পরিত্যাক্ত ঘোষনা করার আগে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে তিতাস, সাঙ্গু, বিবিয়ানা থেকে আরো কিছু গ্যাস চিপে বার করা যায় কিনা সেগুলোও দেখতে হবে।
- আমাদের শস্তা শ্রমের মত আমাদের জ্বলানীখরচও দুনিয়ায় সবচাইতে শস্তা। আর দেশের জ্বালানীর সিংহভাগই যেহেতু রপ্তানী খাতে যায়, তাই বলা যায়, আমরা দেশের অমূল্য জ্বালানী পানির দরে রপ্তানী করছি। কিভাবে? হিমু ওপরে বলে দিয়েছে। এটা বন্ধ করলে আগামীতে জ্বালানীর কাটতি-সরবরাহের যে বিশাল ফাঁকটি আসছে, সেটা কিছুটা হলেও রহিত হবে। ওয়ালমার্ট-ক্যারেফুর যদি চীন-ভিয়েতনামের গার্মেন্টস কারখানাকে বিশ্ববাজারদরে জ্বলানির খরচা দিতে পারে, তাহলে আমাদের দেবে না কেন? আমরা তো তাদের শস্তায় শ্রম দিচ্ছিই।
- এমনিতেই আমরা দরকারের চাইতে বেশী গ্যাস নির্ভর। নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে ফার্নেস-অয়েল আর গ্যাস ভিত্তিক করে আমাদের এই গ্যাস-নির্ভরতা আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাজারে ফার্নেস-অয়েল পাওয়া না গেলে, বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো কোলে নিয়ে বসে থাকতে হবে। আমাদের কয়লার দিকে ঝুঁকতেই হবে। পরিবেশ নিয়ে যারা ভাবতে চায় তারা ভাবুক। ইউরোপ আমেরিকার গরমে আমাদের দেশ এমনিতেই ডুববে, আমরা আমাদের পুরো ৮ গিগাওয়াটও কয়লা থেকে বের করলে পরিবেশে যা প্রতিকুল প্রভাব পড়বে সেটা হবে সাগরে দু ফোঁটা পানির মত।
অসংখ্য ধন্যবাদ বাংলাদেশের বর্তমান গ্যাস পরিস্থিতি সম্পর্কে চমৎকার তথ্য-উপাত্ত দেয়ার জন্য।
সম্পূর্ণ একমত। যখনই যারা ক্ষমতায় আসে সবারই চিন্তা হলো পকেট ভারী করার। নিজস্ব উৎপাদনের দিকে কারোই কোন উৎসাহ নেই। অথচ আমাদের দেশের ছোট ছোট খাতগুলোকে যদি সরকার উৎসাহ দিয়ে রপ্তানীমুখী করার চেষ্টা করত, কি বিপুল পরিমান রাজস্ব আমাদের আয় হতো, কর্মসংস্থান হতো কত হাজার হাজার মানুষের। এই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হওয়া বোধ হয় এই দেশে কোনদিন সম্ভব নয়।
পৃথিবীর কোন দেশেই পাইপলাইন বসিয়ে আনলিমিটেড গ্যাস সরবরাহ করার মত অপচয়ি পদ্ধতি আছে বলে আমার মনে হয় না।
খুবই দুঃখজনক। আমাদের এই আনলিমিটেড গ্যাস ব্যবহারের অভ্যাস পরিবর্তন করা বোধ হয় সম্ভব না।
সিদ্ধান্ত বানানগুলো ভুলে সিগ্ধান্ত লেখা হয়েছে ।
দুঃখিত। আসলে বানানটাই জানতাম না। ঠিক করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
(অতিথিদের জন্য এডিট করার অপশন নেই, তাই ঠিক করে দিতে পারলাম না।)
নতুন মন্তব্য করুন