ছোট্ট চায়ের টং-টায় ঢুকেই এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে গিয়ে আরো উস্কুখুশ্কু করে দিলো ইভান।
ভয়ংকর গরম পড়েছে আজ, বাসায় ফিরেই লম্বা একটা গোসল দিতে হবে।
টানা তিনটা টিউসন পড়িয়ে আর কিছুই ভালো লাগছেনা। তাও একটা ভালো খবর হলো আজ মাসের ৭ তারিখে এসে পকেটটা একটু ভারী হয়েছে। এই কটা টাকার জন্য বলতে গেলে গায়ের রক্ত পানি করে খাটা হচ্ছে। গত মাস থেকে নাইট সিফটে একটা কল সেন্টারেও ঢুকেছে। রিটায়ার্ড বাবার পেনসন আর এই কটা টাকায় মা যে কিভাবে সংসার চালায় আল্লাহই জানেন।
ইভান ছাত্র খুব একটা খারাপ ছিলোনা। ঢাকা ভার্সিটি থেকে এম বি এ করেও যে ভালো একটা চাকরি পাওয়া যাবেনা সেটা কে-ই বা জানতো? দেশটার যে কী হচ্ছে, আজকাল 'লাইনঘাট' ভালো না থাকলে কিছুতেই কিছু হয়না। অবশ্য, বাসায় ফিরে তার অপেক্ষায় বসে থাকা মা আর ক্লাস নাইনে পড়ুয়া পড়ুয়া ছোটবোন যুথীর দিকে চাইলেই মন ভালো হয়ে যায় ইভানের।
যুথীর জন্য এক জোড়া রূপার কানের দুল কিনতে হবে। অদ্ভূত লক্ষ্মী একটা বোন, ইভান ভাবে, এত্ত দিনের শখ কিন্তু কখনোই মুখ ফুটে চায়নি। ঐদিন কথায় কথায় মা-কে বলে ফেলেছে, মনের ভুলে। এত পিচ্চি বয়সেই এতটুকু 'বুঝ', ক'জনারই বা থাকে। এখন মনে পড়লে হাসিই পায় ইভানের, ছোট থাকতে বই কিনে দেওয়ার জন্য কী জ্বালানোটাই জ্বালাতো মা আর বাবাকে। কাল পরশু একবার টাইম করে আড়ংয়ে ঢু দিয়ে দেখা যেতে পারে, ভালো একটা কিছু পাওয়া যায় কিনা!
চায়ের কাপে দুইটা চুমুক দিয়ে সিগ্রটটা ধরালো ইভান। সুন্দর কারুকাজ করা লাইটারটার দিকে তাকিয়ে মৃণ্ময়ীর কথা মনে হয়ে গেলো, গত মাসে বেতন পেয়ে ও-ই কিনে দিয়েছিলো। পাগলি একটা মেয়ে। ইভানের এক ক্লাস নীচে পড়তো, কলেজ থেকেই চেনা ও জানা। অনার্স শেষ করে এখন একটা এনজিও-তে আছে। সুযোগ পেলেই ওকে দেখতে অফিস ফাঁকি দিয়ে বসে থাকে, কী আজব! ওর মত বাউন্ডুলেকে এত ভালোবাসার কী আছে, ইভান নিজেই বোঝেনা। ওকে একটা নীল থ্রি পিস গিফট করা যেতে পারে, ও একবার বলেছিলো নীল রং ওর খুব পছন্দ। ফোন করে দেখতে হবে ও শুক্রবারেও ফ্রি আছে কিনা, বলে কয়ে তিনটা টিউসন থেকেই আগাম ছুটি নিয়ে রেখেছে ইভান। মনে মনে একটু হাসলো ও, মেয়েটা ওর সাথে দেখা হলেই এতো মিষ্টি করে হাসে।
আরো দুইটা জিনিস, মায়ের জন্য একটা জায়নামাজ আর বাবার জন্য একটা সাদা পাঞ্জাবি। মা যে কী না, বেশি খুশি হলে কথা বলতে পারেনা আর চোখের কোণ দিয়ে এক দু ফোটা পানি। কেমন যে লাগে তখন!
চায়ের বিল মিটিয়ে ওঠলো ইভান, বাসায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি। আকাশের ঈশান কোণটা মেঘে কালো হয়ে আছে, ঝড় আসতে পারে আজ।
বাসে ওঠার জন্য রাস্তা পার হতে যেতেই হঠাত্ ধুলিঝড় শুরু হয়ে গেলো। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দৌড় দিতেই কী একটা ভারী জিনিস যেন ইভানের ওপর আছড়ে পড়লো। একটা অচেনা কন্ঠের চিল চিত্কার।
জীবনের হাসি কান্নার কত্ত শত টুকরো স্মৃতি মনের পর্দায় ভেসে আসছে কেন জানি। এক চিলতে হাসি চকিতে ইভানের ঠোঁটের কোণে আসতে আসতেই চলে গেলো।
ইভান শেষবারের মতো চোখ খুলে দেখলো, প্রিয় পৃথিবী কেমন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, মিলিয়ে যাচ্ছে, দূর থেকে বহুদূরে।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
মন্তব্য
আপনার লেখার হাত ভালো, কিন্তু শেষটায় এমন একটা ধাক্কা না দিলে কি ক্লাসিক হইতো না?
সবই নিয়তি..!
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
বেকার তরুণ যার একমাত্র সম্বল টিউশনি আর প্রতি মাসের শেষে অবধারিত টানাটানি-- খুব চেনা গল্প... ভাল্লাগলো তবু!
সচলে স্বাগতম
______________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
ধূলিঝড় টা সুন্দর লাগলো খুব। দেশে থেকে আসার ৪/৫ দিন আগে একদিন রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে এক পশলা বৃষ্টি তে একেবারে ভিজে গিয়েছিলাম। বিরক্ত হতে গিয়েও মনে হয়েছিল আবার কবে এমন বৃষ্টিতে ভিজব!
সেরকম পাগল করা বৃষ্টি হয়না এখানে..
সেরকম পাগল করা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম ফেব্রুয়ারীর এক বিকেলে।বইমেলায় যেতে গিয়ে পুরাই ভিজা বিড়াল!
দিনটার স্মৃতি লিখে রাখছিলাম কিন্তূ এখানে দেয়া হয়ে উঠেনি।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
গল্পটা পড়া শুরু করতেই মনে হল ছেলেটা মরবে। নানানরকম স্বপ্নপূরণের কথা শুরুর পরে নিশ্চিত হলাম।
এইসব বিয়োগান্তক গল্প সযত্নে এড়িয়ে চলি, কারণ পড়লে মন খারাপ হয়ে যায়। তারপরেও আপনার পড়ে শেষ না করে পারলাম না ভালো লিখেছেন।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
আসলে ভাগ্যটাই খারাপ ইভানের।
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
ভালো লাগলো।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ধন্যবাদ।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
মন খারাপ করা হলেও লেখা ভালো লেগেছে। আসলেই নাকি এখন 'লাইনঘাট' ভালো না থাকলে কিছুতেই কিছু হয়না। লাইনঘাট-ওয়ালা লোকজনের সাথে ভাব জমাবো ভাবছি। নাহলে ধূলিঝড়ই ভরসা।
|| শব্দালাপ ||
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
গল্পটা ভালো লেগেছে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমারো!!
হি হি..ধন্যবাদ।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
ভালো লাগলো
সচলে স্বাগতম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
ভালো লাগলো গল্প । আরো লিখুন।
ধন্যবাদ,দোয়া করবেন।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
সবাইকে ধন্যবাদ।
কিন্তূ এতোদিনে 'স্বাগতম'..?!
আমি তো আগেও লিখছি এখানে..!
সময় পেলে দেখে নি্যেন।
দিনযাপন , অসুখ , ভোরের পংক্তিমালা , মধ্যরাতের আয়নায়
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
"ইভান" বড় প্রিয় ছিল, রুশ উপকথার...
না মেরে ফেললেও পারতেন। আরও লিখুন।
নাম টা বোধহয় ওখান থেকেই এসেছে!
ছোটবেলায় নামটা কোথাও দেখেছিলাম,তখন থেকেই পছন্দ।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
েশষটা ভীষন রহসৎ হেয় েগলনা?
বুঝলাম না..!
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
চিরপরিচিত দৃশ্যপটের অসাধারণ চিত্রায়ন । আমার কেন যেন বিয়োগান্তকই ভালো লাগে ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল । এখানেই লেখক সার্থক ।
বাবুই ,
অনেক ধন্যবাদ।
[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]
শেষটা খারাপ লাগলো। ভালো লাগলো গল্পটা।
শেষটা কেন খারাপ লাগলো একটু বলবেন?
বিয়োগাত্মক হওয়ায় নাকি লেখার ধরনের জন্য?
গল্পটা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ।
[বিষন্ন বাউন্ডুলে]
নতুন মন্তব্য করুন