প্রমোদ দ্বীপ-১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৮/০৫/২০১০ - ১:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জাতি হিসেবে আমরা কতটা অসভ্য আর অসহিষ্ণু,তা প্রমাণ করার তীব্র প্রতিযোগীতা চলে প্রতি দিন। তবে এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশান পুলিশের কাছে এতটা আশা করি নি। বালি দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছি। তাই মনে আনন্দ ছিল বেশ। তাছাড়া নামকরা কোম্পানীর কর্মকর্তা, অফিসিয়াল ট্রেনিং পোগ্রামে যোগ দিতে যাচ্ছি। পাসপোর্টে দু'একটা দেশের সিল টিল আছে। শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল না। কিন্তু সব হিসেব নিকেশ উলট পালট করে দিয়ে , কর্তব্যরত পুলিশ আমার উপর সন্দেহ প্রকাশ করল।
" ইন্দোনেশিয়া কেন যাচ্ছেন?"
বললাম যা বলার। বেশ ভদ্রভাবে। পরিচয় দিলাম। কোম্পানীর নাম বললাম। যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলাম।
"এই রকম সবাই বলে। বালি থেকে ট্রলারে করে অষ্ট্রেলিয়া যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?" এই রকম একটা কথা বলে। পাসপোর্ট ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে।
আমি হাসব না কানব, ঠাহর করতে পারলাম না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম। গবেটটাকে কেমন করে বুঝাই, বালি থেকে বিমানে করে সিডনি যেতে ছয় ঘন্টা লাগে।
কিছুক্ষণ যুক্তি বিনিময় হলো। আমার কথা বিনয়পূর্ণ কারণ আমি ছাড়লেই বাঁচি। আর মহামান্য পুলিশের আচরণ একেবারে পুলিশের মত! এভাবে ডিউটি বদলের সময় হয়ে গেলো । নতুন কর্মকর্তা দায়িত্বে এসে চেয়ারে বসল। এই ব্যক্তি এতটা অভদ্র নয়। গোবেচার টাইপের । এর সমস্যা অন্য রকম। পূর্বের কর্মকর্তা ছাড়পত্র দেয় নি। ইনি সিল দিয়ে বিপদে পড়বেন না তো।

অবশেষে বিমান ছাড়ার খানিক আগে ছাড়পত্র পেলাম। নতুন বিয়ে ঠিক হয়েছে, হবু বধুকে আর মাকে ফোন দিয়ে বিমানে উঠলাম। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনের বিমান । সময় মত ছেড়ে দিল। হট টাওয়েলের পর্ব শেষ হতেই খানাপিনা শুরু হল। খানাতে কোন সমস্যা ছিল না কিন্তু পিনাতেই বিপত্তি বাধল। আমার পানে অভ্যাস নেই। রেড ওয়াইনের রঙ দেখে মুগ্ধ ছিলাম আগে থেকেই। তার উপর ফ্রি । তাই এক পেয়ালা নিলাম। কি মনে করে হুয়াইট ওয়াইন এক পেয়ালা। জানি না এসিডিটির জন্য কিনা, না ককটেলের জন্য, বমি আর বুক জ্বলা। চার ঘন্টায় অন্তত: চারবার । একেবারে সিষ্টেম হ্যাং করে গেল।

সিঙ্গাপুরে নয় ঘন্টা যাত্রা বিরতি। হোটেল দেয়া হবে না । ফ্রি খাদ্যের লাউঞ্জে নয় ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। গতরাত্রের অভিজ্ঞতার পর আর তেমন কিছুই খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছিল না। একটা নির্ঘুম বমনময় রাতের পর নয় ঘন্টা সোফায় বসে ঝিঁমানু ! মানুষ যে বৈচিত্রের খোঁজে কত কিছুই করে। প্রায় ঝিঁমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাত্ করেই টের পেলাম আমার মাথার চুল ধরে কে যেন নাড়ছে। মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি, ধবধবে ফর্সা একটা বাচ্চা মেয়ে আমর চুল ধরে টানছে। বাচ্চার নরম আঙ্গুলে স্পর্শ করে বললাম। "লাইক মাই হেয়ার?"
আমার কণ্ঠ শুনে লোকটা ফিরে তাকিয়ে দু:খ প্রকাশ করল। ভদ্রলোক অষ্ট্রেলিয়ান। ফিলিপিনো এক নার্স বিয়ে করেছে। বালিতে ট্রেনিং নিতে যাচ্ছি শুনে হেসেই খুন।
স্ত্রীকে জানাল," হি ইজ গোয়িং টু বালি ফর ওয়ার্ক!"
ভদ্রলোকের কথা থেকে যা বুঝলাম তা হচ্ছে বালিতে কাজের চেয়ের কামের গুরুত্ব অনেক বেশী। পরবর্তী তিন-চারদিনে এর প্রমাণ যথেষ্ট পেয়েছিলাম।

বিমানে সিঙ্গাপুর থেকে ডেনপাসার (বালির প্রধান শহর) দু'ঘন্টার ভ্রমন। ডেনপাসার এয়ারপোর্ট একেবারে সমুদ্র সৈকতে, প্রবাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ডেনপাসারে ল্যাণ্ডিং- এর সময় মনে হল , বিমান যেন সমুদ্রে ঝাঁপ দেবে। প্রায় সমুদ্রের জল ছুঁয়েই বিমানের চাকা রানওয়ে স্পর্শ করল। ল্যাণ্ডিং ভিসার ব্যবস্থা থাকায় বিমান বন্দরে ব্যাপক ভীড়। আমাদের দলটিকে আলাদা একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। লাউঞ্জের প্রায় সর্বত্র মাদকের বিরুদ্ধে শ্লোগান। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড। একটু ভয়ই পেলাম।
আবার কখন কিভাবে বেঘোরে প্রাণটা হারাই। আমর কাছে মনে হল বালি দ্বীপে মাদক বড় একটা সমস্যা। পরে মনে হয়েছে , মাদকের বিরুদ্ধে এইসব স্লোগান আসলে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেঁরো। বালি দ্বীপের মাঠে ঘাটে সর্বত্র বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরণের মাদক। পুলিশের একেবারে নাকের ডগায়। পরোক্ষে এরা বরং মাদককে পেট্রোনাইজ করে।
ইমিগ্রেশান আর লাগেজ সংগ্রহ শেষ হলে, এয়ারপোর্টের কার পার্কিং-এর কাছে আমাদের অভ্যর্থনা জানালো মাদি আরি। আমাদের আগামী সাড়ে তিন দিনের গাইড।
একটা তের চৌদ্দ বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে বেশ কিছু কাঠালী চাঁপা জাতীয় ফুলের মালা। গেট দিয়ে এক জন করে বেরুচ্ছি আর মেয়েটি একটা করে মালা পরিয়ে দিচ্ছে আমাদের গলায়। আমার গলায় মালা পরাবার সময় মেয়েটির মুখের দিকে তাকালাম। সলাজ হাসি। আমার কাছে হঠাৎমনে হলো,পাশ্চাত্যের অর্থের প্রলোভন পুরো দ্বীপটাকেই যেন পণ্য করে তুলেছে।

কৃষ্ণ কানহাইয়া


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার গদ্যের হাতও তো দেখি কবিতার মতোই চমৎকার!

প্রতিযোগীতা > প্রতিযোগিতা
পোগ্রাম > প্রোগ্রাম
অষ্ট্রেলিয়া > অস্ট্রেলিয়া
ঝিঁমানু > ঝিমানো
ফসকা গেঁরো > গেরো
কাঠালী চাঁপা > কাঁঠালী চাঁপা

কৃষ্ণ কানহাইয়া এর ছবি

পাঠক ভাই
অনেক ধন্যবাদ।
যাঁরা মূলত: পাঠক, তাদের খানিকটা ভয় হয়।
কারণ এরা ভীষণ খুঁতখুঁতে । তাদের কাছ থেকে চমৎকার শব্দটা বিশেষ কিছু।

রানা মেহের এর ছবি

বাহ!
মূলত পাঠকের কথাটা আমারো মনে এসেছিল লেখার শেষে আপনার নাম দেখে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

কৃষ্ণ কানহাইয়া এর ছবি

ধন্যবাদ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দারুণ লাগলো। লেখা চমৎকার। অপেক্ষায় রইলাম।

কৃষ্ণ কানহাইয়া এর ছবি

ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

এ দিনদুনিয়ায় আর কি বা আছে। চলেন বরং পানসি করে অস্ট্রেলিয়াই চলে যাই... বালি'র বালিকা সঙ্গে নিয়ে...

কৌস্তুভ

কৃষ্ণ কানহাইয়া এর ছবি

ভাই কৌস্তভ
বিপদে ফেললেন। এমনিতেই আমার বউ ক্ষাপ্পা হয়ে আছে, বালির কিশোরী গলায় ফুলের মালা দিয়েছে বলে। তার আগে অন্য কোন মেয়ে কেন আমাকে মালা পড়াবে , এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তার উপর আপনার এই প্রস্তাব পড়ে দেখলে তো আমার সচলায়তনে লেখাই বন্ধ করে দেবে।
ভালো থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

তার আগে অন্য কোন মেয়ে কেন আমাকে মালা পড়াবে , এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না।

বেচারী মন খারাপ
কিন্তু এই পুলিশ জাতিটার সমস্যা টা কোথায়...ডান্ডাবাজি ছাড়া ও আচার ব্যবহারের উপর ও তো এদের কিছু ট্রেনিং দেয়া হয় বলেই আমি জানি

খুব সুন্দর । পরের পর্বের অপেক্ষায় ...

বাবুই,

দ্রোহী এর ছবি

লেখা ভাল্লাগছে।

বালি থেকে দুয়েকটা বালিকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় দিকে পাড়ি দিলে খুব একটা খারাপ হয় না।

কৃষ্ণ কানহাইয়া এর ছবি

দ্রোহী ভাই
ভাবনাটা রোমান্টিক ।
তবে এনসিয়েন্ট মেরিনারের কথা মনে রাইখেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

কপিরাইটের মামলা করুম... বালি থেকে বালিকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে পাড়ি দেওয়ার আইডিয়াটা আগে আমি লিখেছি...

কৌস্তুভ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বালিতে গেলেন, বালিকাদের একটা দুটো ছবি দিবেন না? মাইনাস চোখ টিপি

লেখা ভাল্লাগছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কৃষ্ণ কানহাইয়া এর ছবি

বিকিনি পরিহিত নগ্ন মেয়েদের আমরা কোড লেঙ্গুয়েজে কুমির বলে ডাকতাম। কয়েকটা কুমিরের ছবি দিলে মন্দ হতো না । আমার কাছে নাই । দেখি সহকর্মীদের কাছে পেলে , পরের পর্বে দিয়ে দেব।

অতিথি লেখক এর ছবি

সোনার পাথরবাটির মত শোনাল... বিকিনি পরিহিত নগ্ন হয় কি করে?

কৌস্তুভ

গৌতম এর ছবি

আপনার লেখা বেশ সাবলীল। একটানে পড়ে ফেললাম। পরের পর্বগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।