(টাইপোগ্রাফী বিষয়টা যতটা না মজার তার চেয়ে অনেক বেশি শ্রমসাধ্য। বিষয়টাকে একটু সহজ করার জন্যে আমরা সরাসরি আমাদের অভিজ্ঞতার কথা বলব। তাতে হয়ত উপস্থাপনা খুব গোছানো থাকবে না। কিন্তু আশা করি বিষয়টা একটু সহজবোধ্য হবে। এই পর্ব থেকে আমরা দুজন আমাদের অভিজ্ঞতার কথা সরাসরি তুলে ধরব। সেই সূত্রেই আমার উপস্থিতি।)
বর্ণমালার সাথে পরিচয় তো সেই ছোটবেলায় যখন ভাঙ্গা ভাঙ্গা লাইন-এ প্রথম লিখতে শিখি। কিন্তু এর গঠনশৈলীর যে সৌন্দর্য তার প্রথম ধারণা পাই চারুকলার দ্বিতীয় বর্ষে। প্রথম ক্লাসেই খুব পরিচিত একটা রূপ কে নতুন রূপে দেখতে শিখলাম। সেই সাথে জানতে পারলাম একেকটি অক্ষরের গঠনশৈলীর বিভিন্ন দিক... আকৃতির যুক্তি, অন্যান্য ভাষার সাথে গঠনগত ও উচ্চারণগত মিল। এই চর্চার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আমাদেরকে দিলেন একটা কাগজ যাতে ছিল ছোট আকারে মূল বিদ্যাসাগর রূপের স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের একটি সেট। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেক্ষ্য যে বাংলা বর্ণমালার আধুনিক রূপের রূপকার ধরা হয় বিদ্যাসাগর কে। বাশের কলম দিয়ে তিনি বাংলা বর্ণমালাগুলো লিখেছিলেন যা আদর্শলিপি হিসেবে আমাদের অনেকের জীবনের প্রথম পাঠ ছিল। আদর্শলিপির সেই মূল রূপটি এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পরবর্তিতে যারা এটা নিয়ে কাজ করেছেন তারা এর পরিবর্তন, পরিবর্ধন এমনকি বিকৃতি-ও করেছেন।
প্রথম ক্লাস-এ আমাদের বলা হয়েছিল আদর্শলিপির সেই বর্ণমালাকে হুবহুব নকল করতে। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। কারণ যেকোনো অক্ষরের নান্দনিক ও ব্যবহারিক সৌন্দর্য নির্ভর করে এর মধ্যে ব্যবহৃত রং ও স্পেস-এর পরিমিত এবং ভারসাম্যপূর্ণ প্রয়োগের উপর। আদর্শলিপির অক্ষরগুলোতে মোটা-চিকন রেখার ব্যবহার দেখা যায়। অনুমান করা যায় যে বাশের সেই মাথা চ্যাপ্টা কলম ব্যবহারের কারণেই এরকম রেখার সৃস্টি হয়েছে। এতে যেমন বর্ণের মাঝে এক ধরনের অলংকারিক সৌন্দর্যের সৃস্টি হয়েছে, এক-ই সাথে যথেষ্ট স্পেস তৈরী হওয়াতে এর পাঠযোগ্যতা অনেকগুনে বেড়ে গেছে। আমাদের কাজ ছিল গ্রাফ পেপারের ১ বাই ১ ইঞ্চি ঘরে আদর্শলিপির সেই অক্ষরগুলো কপি করা। এই কাজের জন্যে আমাদের হাতে ছিল স্কেল (সোজা লাইন টানার জন্যে), কাটা কম্পাস (অক্ষরের মাঝের স্পেস নির্ণয় করার জন্যে), পেন্সিল, রাবার।
আমি চেয়েছিলাম আমার শিক্ষকের দেয়া আদর্শলিপির বর্ণমালার সেই কাগজটার একটা ছবি সচলায়তনের পাঠকদের জন্যে এখানে তুলে দিতে। কিন্তু গত কয়েকদিনের খোজাখুজিতেও ওটা পেলাম না। এখানে যে ছবিটি দেয়া হলো তা আমার সতীর্থ লেখক মিলন-এর ওই একই বিষয়ে করা একটি কাজ। আশা করি এটা কাজে লাগতে পারে। ভালো থাকুন।
tirana khan
freelance typographer
www.lifearoundme.com
মন্তব্য
নতুন কিছু জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ। সিরিজ চলুক।
কৌস্তুভ
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আপনার সিরিজটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। চালিয়ে যান।
নতুন মন্তব্য করুন