বিষন্ন এক গোধূলী বেলায় ফেইসবুক চ্যাটরুমে ওয়াফি’র সাথে প্রথম পরিচয় । আকাশের’ও মন খারাপ । কিন্তু ওর মজার কথাগুলো শুনতে শুনতে কখন যে মনটা ভালো হয়ে গেলো! এমনি সময়ে আচমকা ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামলো। ওয়াফি বললো, ”চলো একটু বৃষ্টি ছুঁয়ে আসি, তুমি তোমার জানালার কাছে যাও-আমিও যাই।” আমি পেছন ফিরে জানালার দিকে তাকালাম । রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ শুনতে এতো চমৎকার লাগে, সেই বৃষ্টিকে ছুয়ে দেখার অনুভূতি না জানি কত আনন্দের !
আমারো ইচ্ছে করে বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখি....ঝুম বৃষ্টি ভিজতে ভিজতে শরীর বেয়ে ঝরে পড়া বৃষ্টির স্রোতধারা আস্বাদন করি......
ছুটির দিন। জানালা দিয়ে রোদেলা আকাশ দেখা যায় । কি চমৎকার আবহাওয়া! হঠাৎ ইচ্ছে হলো আজ সবাই মিলে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমীতে যাই । সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন শুনতে শুনতে আচ্ছামতো সেখানকার বিখ্যাত ফুঁচকা -পিয়াঁজু খাই......
যখন শুনি চাঁদের আলোয় অপরূপ হয়ে আছে আকাশটা, ইচ্ছে নামক অচিন পাখি ছটফটিয়ে বলে উঠে - চলো, এক ছুটে ছাঁদে যাই আর দু’চোখ বুজে আধাঁর রাতে জোৎস্নার প্লাবনে হারিয়ে যাই দূর অজানায়......
সেদিন শুনলাম, এ ক’বছরে ফয়েসলেকের চেহারা আমূলে বদলে রূপ নিয়েছে কনকর্ড পার্কে ! ছোট ছোট রিসোর্ট আছে। আছে রেসটুরেণ্ট ও । দারুণ এক পিকনিক স্পট হয়েছে নাকি ! ইচ্ছে নামক সোনার হরিণ আবারো মনের কোনায় উঁকি মেরে গেলো । একটু ঘুরে আসার - দেখে আসার....ফয়েসলেক’র বদলে যাওয়া রূপ.....
সদ্য বিবাহিত দেবর কক্সবাজার থেকে মধুঁচন্দ্রিমা সেরে এসে সেণ্টমার্টিনের সৌন্দর্য বর্ণনা করছিলো । আমারো ভীষণ ইচ্ছে হলো, শুধু --আমরা দু’জনে ---- শহরের কোলাহল মুখর পরিবেশ ছেড়ে দূর নির্জনে । দু’জনে দু’জনায় হারিয়ে যাই । ভীষণ -ভীষণ --ভীষ্ষ্ষণ ইচ্ছে হলো.........
Singapore Muscular Dystrophy Association ’র ম্যানেজার পদে কর্মরত সেরিনা রো ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারে বসে সংসার ও কর্মস্থল দুটোই সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন । স্বামী অফিস যাওয়ার পথে সেরিনাকে তার কর্মস্থলে নামিয়ে দেন । ঘরে ফেরার পথে তুলে নেন । একা একাই পাশের সুপারমার্কেট থেকে বাজার সদাই করা বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া তার জন্য আর দশজন মানুষের মতোই স্বাভাবিক ব্যাপার । স্টিফেন হকিন্স - যিনি হুইলচেয়ারে বসে গোটা বিশ্ব জয় করে নিয়েছেন!
আমারো ইচ্ছে করে তাদের মতো হতে । হুইলচেয়ারে বসে গোটা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পুরে নিতে । আমারো ইচ্ছে করে খোলা আকাশের নিচে গিয়ে পৃথিবীর রূপ উপভোগ করতে । ভীষণ ইচ্ছে করে । হোক না হুইলচেয়ারের চাকায় গড়িয়ে । তবুও ছুটে বেরাবো বনে-বাদাড়ে দুষ্টু এক প্রজাপতির পেছনে । আর আমায় দেখে নাম না জানা এক পাখি মধুর স্বরে গেঁয়ে উঠবে । দু'হাতে লাল শাদা কাঁচের চুরি । কপালে ছোট্ট সিঁদুর টিপ । খোপায় একগুচ্ছ বেলী ফুলের মালা জড়িয়ে লাল পাড়ের সেই শাদা শাড়িটা আর সিঁথিতে সিঁদুর । ভীষণ ইচ্ছে হয় তাকে পাশে নিয়ে রিকশায় ঘুরে বেড়াই । সব বাধা পেড়িয়ে হারিয়ে যাই দূর অজানায়.... অচিন সেই গাঁয়ে যেখানে পাহাড়ের গা বেয়ে কাশ বন পেড়িয়ে চূড়ায় উঠে দেখি নীল আকাশ । মন আমার হলুদিয়া পাখি হয়ে ছটফটিয়ে উড়ে যেতে চায় অজানা সেই সুদূরে শুধু তাকে নিয়ে .........
জানি না কেনো যে মন মাতাল করা ইচ্ছেরা এমন করে মনের আঙিনায় হানা দেয়! তারা বুঝি জানে না তাদের সীমাবদ্ধতার কথা !!!
ঘুম থেকে উঠে বিছানা, বিছানা থেকে চেয়ার - সারাদিনের পর রাতে আবার বিছানা -- দিনের পর দিন একি নিয়মে --চারদেয়ালের আবদ্ধ এ জীবন যাপন করতে আর ইচ্ছে হয় না । দম বন্ধ হয়ে আসে ..........
সাবরিনা সুলতানা
মন্তব্য
আপনার রঙিন ইচ্ছাগুলো দ্রুত সত্যি হোক।
কৌস্তুভ
আমার ইচ্ছে পূরণ আদৌ কখনো হবে কিনা জানি না .....কিন্তু স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী মানুষেরা যেন তাদের নাগরিক অধিকার ফিরে পায় । আমার মত কাউকে যেন ঘরের কোনায় বন্দী হয়ে থাকতে না হয় !
ধন্যবাদ আপনাকে ঃ)
সাবরিনা সুলতানা
সুন্দর!
আমার শহরেই আছেন দেখছি।
---মহাস্থবির---
ধন্যবাদ
আপনি ও কি চাটগাঁয় থাকেন? বাহ! দারুন তো ।
সাবরিনা সুলতানা
আশা গুলো আছে দেখেই মানুষ শত ঝড়ের পর ও বাঁচতে পারে, নাহলে মানুষ হয়ত এত দিনে পুতুল হয়ে যেত। আশা করি আপনার সপ্ন গুলো পূরণ হোক।
ধুসর সপ্নগুলো
ধন্যবাদ আপনাকে
সাবরিনা সুলতানা
তবু স্বপ্ন দেখতে হয়
-----------------------------------------
ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর ...
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
ধন্যবাদ আপনাকে
সাবরিনা সুলতানা
খুব মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আপনি মন খারাপ করবেন না। আল্লাহ যদি কারো কাছ থেকে কিছু কেড়ে নেন, তাহলে তাকে আরেক দিক দিয়ে সেটা পুষিয়ে দেন। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আপনার তেমন কিছু একটা প্রতিভা আছে। কক্ষনো হাল ছেড়ে দেবেন না। আমার অনেক শুভ কামন তথাকল আপনার জন্যে।
-রিম সাবরিনা
ধন্যবাদ মিতা
মন খারাপের কিছু নাই আপু । ওই যে সেদিন আমার নাম দেখে আপনি বললেন না, আমাকে অনেক ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হবে
আপনার মন্তব্য খানা পড়ে আনন্দ পেলাম ।
আপনার জন্যে ও অনেক শুভ কামনা রইলো ।
ভালো থাকুন অনেকককক ভালো ।
সাবরিনা সুলতানা
খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু, মাফ করবেন, লেখার 'আমি'টা কে? উপরের মন্তব্য তো লেখিকাকেই ইঙ্গিত করছে। যেই হোক না কেন, অনেক শুভকামনা রইল তার জন্য।
লেখার 'আমি'টা আমি নিজেই । ধন্যবাদ আপনাকে ।
সাবরিনা সুলতানা
হুম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হুমমম ......ধন্যবাদ আপনাকে
সাবরিনা সুলতানা
গল্পের এই অংশটুকু অন্যভাবে, গল্পের মত করে লেখা যেত।
বাকিটুকু ঠিক আছে
----------------------------------
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
এটি আসলে গল্প নয় । মনের গহিনে জমে থাকা কিছু কষ্ট -আমার ছোট ছোট ভাবনাগুলো তুলে আনার চেষ্টা করেছি মাত্র ।
ধন্যবাদ আপনাকে
সাবরিনা সুলতানা
নতুন মন্তব্য করুন