দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসীদের হাতে নিহত ষাট লক্ষ পোলিশের উদ্দেশ্যে (ডিসেম্বর ২২,২০০৯)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১০/০৫/২০১০ - ৩:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যাবার মুহূর্তে আমার প্রেমিকা জিজ্ঞেস করছিল বার বার, আমি ফিরবো কি-না যুদ্ধ শেষে
ওই মুহূর্তে ওর চোখে ছিল কেবল ভয় আর অনিশ্চয়তা
লাইলাকের মতোন ওর হাতে রেখে আমার হাত, আমি হেসেছিলাম একটুখানি
সাহস কিংবা নিশ্চয়তা দেয়ার মত তেমন কিছুই পারিনি বলতে ।

আমরা তখন ডানজিনের পথে, হঠাৎ খবর পেলাম
নাযীরা ঢুকে পড়েছে ওয়ারশ-এ,
ওরা প্রতিটি বাড়ি, দোকান, ইমারত, স্কুল, সরাইখানা ডিনামাইটে উড়িয়ে দিয়েছে
আমার পরিবারের সবাইকে, আমার প্রেমিকাকে ধরে নিয়ে গেছ আউসভিৎসে,
নাযীদের ট্যাংকগুলো যখন পশ্চিম সীমান্ত বিদীর্ণ করছিল
আমাদের পোমোরস্কা ভাইয়েরা তখন ঢাল আর তলোয়ার নিয়ে
কামানের সামনে দাঁড়িয়েছিল নিশ্চিত মৃত্যুকে মেনে, বুক পেতে;
ডানজিন বন্দরে আমরা একশো উননব্বইজন সহযোদ্ধা
নাযীদের শ্লেসুইটগ হরস্টিনকে আটকে রেখেছিলাম টানা সাত দিন,
তবু হয়নি শেষ রক্ষা -

এক মাসের মধ্যে, শুধু ওয়ারশ-এই শহীদ হল আমাদের আড়াই লক্ষ সহযোদ্ধা...
তিন মাসের ভেতর আমাদের মাতৃভূমিকে ওরা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করলো...
আমাদের পিতা, মাতা, ভাইকে গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারা হল..
বিষাক্ত গ্যাসের ভেতর একটু নিঃশ্বাসের জন্য আঁচড়ে কামড়ে পাহাড় হ'য়ে থাকা
লাশের স্তুপের উপর আমার প্রেমিকার মুখটা হয়তোবা ফুটে ছিলো কোনো নীল পদ্মের মত...

আমাদের ষাট লক্ষ প্রাণের দামে যে অভ্যুত্থান এলো, তা ব্যর্থ হলো...
সোভিয়েতরা এগিয়ে এলোনা আমরা কমিউনিস্ট নই বলে,
এই বর্বরতাকে ওরা মুছে দিতে চাইলো ইতিহাসের পাতা থেকে,
আমাদের এই ত্যাগ তবু যাবে না মুছে কোনদিন-
মাতলোয়া আর ভিসতুলার শপথ,
ভবিষ্যতের পোলিশদের মনে গাঁথা থাকবে, তারা মনে রাখবে...
নাযীরা হন্তারক আর সোভিয়েতরা বিশ্বাসঘাতক
আমরা ষাট লক্ষ শহীদ, মিশে থাকবো
ওয়ারশ, সাপুত, গিদানস্কের জলে-স্থলে-বাতাসে
বেঁচে থাকবো আমাদের উত্তরসূরীদের অন্তরে...
বয়ে যাবো তাদের ধমনীতে-শিরায়-উপশিরায়...
অনন্তকাল ।।

টীকাঃ-
ডানজিন - জার্মানীর একটি নৌবন্দর
নাযী - নাৎসী (হিটলারের সৈন্যবাহিনী)
ওয়ারশ - পোল্যান্ডের রাজধানী
আউসভিৎস - নাৎসীদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প
পোমোরস্কা - অশ্বারোহী সৈন্যদল (ব্রিগেড)
শ্লেসুইটগ হরস্টিন - জার্মান রণতরী
মাতলোয়া ও ভিসতুলা - পোল্যান্ডের দুটি প্রধান নদী
সাপুত ও গিদানস্ক - পোল্যান্ডের দুটি প্রধান শহর


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার নাম জানালেন না তো?

কবিতা ভাল লাগল। বিশেষ করে বিষয়টা।

কৌস্তুভ

বইখাতা এর ছবি

জানিনা কেন, কবিতা পড়তে পড়তেই মনে হলো 'অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট'-এর কথা। কিশোরবেলায় বইটা পড়ে এত কষ্ট পেয়েছিলাম যে আর কখনো ওই বই আমি খুলে দেখিনি।
কবিতা ভালো লেগেছে। আপনার নামটা জানালেন না তো।

মামুন হক এর ছবি

বেশ ভালো লাগলো। এতকিছুর পরেও হন্তারকেরাই বুক ফুলিয়ে বিশ্ব সংসারে সর্দারী করে বেড়ায়...

ফারাবী [অতিথি] এর ছবি

কবিতায় কাব্যের অংশ কিছু কম বলে অনুভূত হয়েছে, শেষাংশ আরো ভাল হতে পারত। উপসংহারটা এত অনিবার্যভাবে না টানলেও হত। বিষয়টা কিন্তু অভিনব। লিখতে থাকুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।