প্রাণের প্রাণ জাগিছে............মন্যুষ্য সৃজনে!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২২/০৫/২০১০ - ৪:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পথিক রহমান

আজকেও একটা সুখবর নিয়ে হাজির হলাম।আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পর আমরা হয়তো সবাই খুব গর্ব বোধ করব যে ২০ মে ২০১০ তারিখটায় আমরা সশরীরে পৃথিবীতে উপ্সথিত ছিলাম। কারণ এই দিনেই পৃথিবীতে বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা আবিষ্কারটির খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রাণ সৃজনের খেলায় মানুষের সাফল্যের খবরটা মানবসভ্যতার ইতিহাসেরই এক মাইলফলক। সোজা কথায় বলতে গেলে কৃত্রিম প্রাণ তৈরি করে দেখিয়েছে মানুষ-আরেকটু নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ক্রেইগ ভেন্টর ও তাঁর সহকর্মীগণ। জিন গবেষণার জগতে ক্রেগ ভেন্টর অতি সুপরিচিত নাম। কৃত্রিম প্রাণ তৈরির জন্য দীর্ঘ পনের বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে এসেছেন তিনি।ছিলেন ইন্সটিটিউট ফর জেনেটিক রিসার্চ এর প্রধান। ব্যাক্টেরিয়ার জিনোম ডিকোড করার কৃতিত্বটা প্রথম তাঁরই। কৃত্রিম প্রাণ তৈরির সাফল্য পেতে আসলে অনেকগুলো ধাপ পাড়ি দিয়ে আসতে হয়েছে ক্রেগ ভেন্টর ও তার দলকে।‘সিন্থেটিক বায়োলজি’(সংশ্লষণী জীববিজ্ঞান) নামের বিজ্ঞানের ততুন একটি শাখার জন্য ও বিকাশ লাভ সম্ভব হয়েছে তার হাত ধরে।

কৃত্রিম প্রাণ বিষয়টা কি?
প্রতিটী জীবকোষে কোষের বংশগতি নির্ধারক ডি এন এ(কিছু ক্ষেত্রে আর এন এ) থাকে। এর মাধ্যমে ই কোষের সকল কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ডি এন এ মোট চার ধরণের বেস পেয়ার (ক্ষারক জোড়) দিয়ে তৈরি । ডি এন এর এর বেস পেয়ারগুলো কোনটার পরে কোনটা সাজানো আছে সেটাকে বের করাকেই বলা হয় জিন সিকোয়েন্সিং বা ডিএন এ এর বেস পেয়ারগুলোর অনুক্রম বের করা। এভাবে মানুষ,গাছ-পালা, জীবজন্তুদের জিন সিকোয়েন্স বের করা হয়েছে এবং এদের মধ্যকার উৎপত্তিগত দিক থেকে বিবর্তনীয় সম্পর্ক বের করা হয়েছে।

ডিএনএঃ স্বপ্নলোকের চাবি

ডিএনএ কে বলা হয় কোড অফ লাইফ। আর এতদিন প্রাণের জিনোমের তথ্যকে ডিজিটালাইড করা হচ্ছিল। অর্থাৎ কোনো প্রাণের জেনেটিক তথ্যকে কম্পিউটারের ভাষায় রূপান্তরিত করা হচ্ছিল। কিন্তু একধাপ এগিয়ে ক্রেগ ভেন্টর চেষ্টা করলেন কম্পিউটারের নির্দেশে ক্রোমোজম তৈরি করার চেষ্টা। এজন্য দীর্ঘপথ পাড়ী দিতে হয় তাকে। ছোট-খাট সাফল্যের খবর ও আসছিল। যেমন ২০০৩ সালে তিনি প্রথম কৃত্রিম ভাইরাস তৈরি করেন। এর পর তিনি কৃত্রিমভাবে ক্রোমোজম সংশ্লেষণ করতে সক্ষম হন। এছাড়া এক ব্যাক্টেরিয়াকে অন্য ব্যক্টেরিয়ায় পরিণত করতেও সক্ষম হয়েছেন তারা।তবে এবার এসেছে মহাসাফল্য। কৃত্রিমভাবে তৈরি ক্রোমোজোমকে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছিল একটা আদি কোষ(প্রোক্যারিওটিক কোষ)এর ভেতর। এর আগেই ঐ কোষটির নিজস্ব ক্রোমোজম সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর কৃত্রিম জিনোমকে আদি কোষটির ভেতর এক্টিভেট করা সম্ভব হয়। দেখা গেল যে ব্যাক্টেরিয়াটি শুধু প্রাণ লাভ করেনি, একইসাথে স্বাভাবিকভাবে বংশ বিস্তার করতেও সক্ষম হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া আর ভবিষ্যত্বের স্বপ্ন

এই আবিষ্কারের খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর পর ই হৈচৈ পড়ে গেছে সারা বিশ্ব জুড়ে।এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে এই আবিষ্কারের প্রভাব যথাযথভাবে অনুধাবন করা বেশ কষ্টকর। আমাদের ইচ্ছেমত দরকারি ব্যাক্টেরিয়া তৈরি করতে পারলে মানব জীবনের অনেক মৌলিক সমস্যা(পরিবেশ দূষণ,জ্বালানী সমস্যা,কৃত্রিম খাদ্য উতপাদনে ব্যর্থতা) সমাধানের একটা পথ খুলে যাবে। আর সবচেয়ে বড় অবদান সৃষ্টি তাত্ত্বিকদের বহু ব্যবহৃত ডিজাইন আর্গুমেন্টের পরাজয়। প্রাণ সৃজনে অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তির হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই, তুচ্ছ মানুষ ই পারে প্রাণসঞ্চারের খেলায় মেতে উঠতে। কোপারনিকাসের সৌরকেন্দ্রিক মডেল, ডারুইনের বিবর্তনবাদের মত ক্রেগ ভেন্টরের এই আবিষ্কার কোন প্যারাডাইম শিফট হিসেবে মানব সভ্যতার ইতিহাসে জায়গা করে নিলে আমি আশ্চর্য হব না। আর ভবিষ্যতে কি চমকপ্রদ ফলাফল আসবে তা কল্পনা করাও কঠিন। কারণ মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।

পরিশিষ্টঃ

যারা লেখাটা পড়ে বিরক্ত হয়ে গেছেন তাদের জন্য এই ভিডিওটা দারুণ কাজ দেবে। খুব সহজে আর অল্প কথায় মূল নির্যাস ,সেই সাথে ক্রেগ ভেন্টরের সাক্ষাতকার ফাও।

আরো জানতেঃ
এটা নিয়ে আরো ঘাটাঘাটি করতে চাইলে নিচের লিঙ্কগুলো দেখতে পারেনঃ
ক্রেগ ভেন্টর ইন্সটিটিউট এর নিজস্ব ওয়েবসাইট

সায়েন্টিফিক আরেরিকানের প্রকাশিত খবর

সায়েন্সম্যাগে প্রকাশিত খবর

পথিক রহমান


মন্তব্য

স্বাধীন এর ছবি

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পর আমরা হয়তো সবাই খুব গর্ব বোধ করব যে ২০ মে ২০১০ তারিখটায় আমরা সশরীরে পৃথিবীতে উপস্থিত ছিলাম। কারণ এই দিনেই পৃথিবীতে বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা আবিষ্কারটির খবর প্রকাশিত হয়েছে।

আনন্দটুকু ভাগ করে নিলাম। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

কৃত্রিম প্রাণের আবিষ্কার নিয়ে এই ভিডিওটা সচেয়ে ভাল মনে হল। ক্রেগ ভেন্টরের ল্যাব ঘুরে এসে, সম্পূর্ণ প্রকৃয়াটা দেখানো হয়েছে। ক্রেগ ভেন্টর সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সাক্ষাতকার ও আছে এতে। এটা দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

কৃত্রিম প্রাণ তৈরির ধাপসমূহের ছবি(সায়েন্স থেকে)
auto
কৃত্রিম প্রাণের ছবি(সায়েন্স থেকে)
auto

আচ্ছা ছবি ও ভিডিওগুলো কি মূল লেখায় জুড়ে দেয়া যায়?দিলে খুব উপকৃত হব।
পথিক রহমান (pothik_1859@yahoo.com)

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ঘটনাটার রাজনৈতিক অভিঘাতটা কল্পনা করতে পারছি। যদিও এখনো অনেকটা সময় বাকি হয়তো। আরো লিখুন। সচলে স্বাগতম।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ লিখেছেন। আর খবরটাও দারুণ।
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

গৌতম এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগল। বেশ সহজ করে লিখেছেন। ধন্যবাদ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।