এ কবিতাগুলো হারিয়ে যাওয়া কবিতা। লেখা হয়েছিল বরিশালে। বরিশাল হল কবিতার গ্রাম। এখানে আকাশে বাতাসে কবিতা উড়ে বেড়ায়। অকবিকেও কবিতার পরীতে ধরে। তার প্রমাণ এই কবিতাগুলো। --কুলদা রায়
জলজ্যোৎস্না
আমি যক্ষ, জলচর পক্ষী নহি, আমি তোমার
মহাতেজাঃ ভ্রাতৃগণকে নিহত করিয়াছি।-বনপর্ব/মহাভারত
জলের ভিতর আমি কেন হাত রেখে পুনরায়
পুড়ে যাই পিপাসিত বুকে, কামনা ভাসছে জলে
শিলীভূত উল্টো দেহ ভাসতে ভাসতে দ্যাখো
যক্ষের শরীর থেকে প্রতিভাত হয় সঞ্জীবন বক
সনাথ বৃক্ষের কাছে যতটা পড়েছে ভেঙে
পাপড়িতে আর্ত স্বর সন্ত মেঘের পরে নিমফুল
তীরে এসে গুটিশুটি বসেছে নিরবে
স্তন খোঁজে শিশুটিও হার্দ কাতর
নদীতীরে কাঁটা মাথা ধানগানে করেছে গমন
চাঁদের ক্ষমতা দ্যাখো হা হা রবে উঠে আসে মাছ
ঢেউ যায়-- তার আগে ঢেউ খুলে ছুটে যায় বাড়ি
রাত শেষে ক্লান্ত বক, চোখে ভাসে তরল আগুন
শুচিভোজ
বাবা গেছে বনে বৃষ্টি কথা শোনা যায় পথে
বাতাস প্রবল হলে মর্মে গাঁথি রোদ
কামনা ফুটেছে ঘাসে-- চোখ ভাসে জলে
প্ররোচনা মেনে গাইদুটি মাটিমুখী
মা তোমার মাটির হাড়ি কলস পড়ে যায় ভেঙে
কপালে সূর্য ডোবে শাখা সমাহিত
জ্ঞাতসারে নিশ্চুপ সরিষার ক্ষেত
আমরা কজন মাধুকর ফিরি গ্রামে গ্রামে
কুশপুত্র মেনে করপুটে পিতা করো শান্ত স্নান
তুলসিগাছের নিচে জলপড়ে মিছে রাখি খেদ
একাহারী-- বন কেটে রান্নার করি আয়োজন
স্তব্ধ বালককাল
১.
দয়া কর, দয়াগাছে ফুটে আছে দয়াফুল
মাটির উপরে একা ছায়াঘন শুয়ে আছে দয়াবান
কুয়াশা এসেছে ফিরে বিস্মরণে নিহত সবুজ
আয়ুজলে ভেসে গেলে পাতার মরণ
করপুটে রোদ পড়ে দ্রবীভূত রোদের পিপাসা
দয়া কর, দয়াগাছে ফলে আছে হিমায়িত দয়া
২.
সুতার উপরে দেহ ভাসে নিচে জল খলখল
দক্ষিণায়ন বেয়ে ঐ দ্যাখো চলে যায় নৌকা প্রবল
তীরে পলি ছোপ ছোপ পদরেখা অস্তমিত দূরের প্রহর
খেজুর কাঁটার ঘায়ে করতল বেয়ে নামে নমিত লোহিত
কে যায় কে যায় দূরে অতিদূরে স্তব্ধ বালকের দল
হেটমুণ্ডু দীর্ঘ কাঁধ রক্ত চক্ষু হা হা হেঁটে যায় একা
৩.
যেভাবে সবুজ ফুঁসে ওঠে রৌদ্র ভোরে
হাওয়ায় হাওয়ায় দোলে
থেমে থেমে জলে প্রকাশিত
মৎস কুমারী জানে প্রকৃত বঞ্চনা
ঘাট থেকে ফিরে এলে মা তোমার নিরূপিত
মাটির থালায় এক প্রাচীন বিড়াল
নির্বিকারে দুধ খায় ভাত খায় চুকচুক
ঘুম ভেঙে দেহ ভেঙে আমি একা
বিছানাবালিশ জুড়ে পুনরপি হামাকাল
মাথার ভিতরে শুধু তারস্বরে খিদে খিদে বলে
সায়াহ্ণের নির্বাপিত মেঘে উড়ে যায় ফলিত সবুজ
নৌকা বিলাস
(সুলেখা, অনেক সময় কেটেছে দূর্বাঘাসে--বনবাসে)
১.
যখন এসেছে মেঘ, তোকে বলি,
বালিকার প্রকৃত গণিত ফুটে আছে গাছে
শিশির জমেছে পায়ে শ্যাওলায় ভরে আছে পথ
এই ক্ষণে চুপিচুপি এসেছি পালিয়ে
পুরনো স্বভাব মেনে মা তোমারÑ
নিরাপদ ছায়া থেকে ঝরে পড়ে নিভৃত খোলস
আমি এক গোপন সর্প দ্যাখো শ্রীমতি বিহনে কাঁদি
আয়ুজলে বুনে রাখি সমূহ বিনাশ
২.
এসেছি পাতার কাছে হাত মেলে রাখি অন্ধকার
পায়ে পায়ে গ্রাম ভেঙে পড়ে
চোখে জমে জল
হাড়ের বেদনা জাগে দরোজার বিভূতিছায়ায়
দূরে যেতে যেতে, তোকে বলি, নদী ও জলের কাছে
শুয়ে আছে ফুলচোর, অপরাহ্ণে নিহত বকুল
৩.
সুপারির গল্প শুনে রোজ রাতে শুতে চলে যাই
কতিপয় বালক আছে, তোকে বলি,
পথে যেতে যেতে তারা সব গোপাটের ছায়া পরিসর
তৃষ্ণা জমেছে দ্যাখো থেমে থেমে কষ্টে প্রবীণ
নাও বেয়ে যেজন গিয়েছে চলে
তার নামে গাই নাই বিলাসের গান
কুলদা রায়
মন্তব্য
এখানে চারটি কবিতার নাম---
জলজ্যোৎস্না,
শুচিভোজ,
স্তব্ধ বালককাল,
নৌকা বিলাস।
এই শিরোণামগুলি বোল্ড দিয়েছিলাম। স্পেস দিয়েছিলাম। কিন্ত কোনো প্রকাশের পর দেখা গেল--ওগুলো কোনো কাজ করে নি। পরবর্তীতে সম্পাদনাও করা গেল না।
এগুলো বিরক্তিকর। বন্ধু মডারেটর কি এগুলো ঠিক করে দিতে পারেন? পারলে কৃতজ্ঞ হব।
"দয়াগাছে ফলে আছে হিমায়িত দয়া" , চমৎকার।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নতুন মন্তব্য করুন