জহিরুল ইসলাম নাদিম
সন্ধ্যা হবু হবু করছে। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে আপনি হেঁটে যাচ্ছেন কোথাও। ভাবছেন কিছু। এমন সময় ইতস্ততঃ একটা শব্দ আপনার চিন্তাসূত্র ছিন্ন করে দিল। আপনি সামান্য বিচলিত হয়ে ওপরে তাকালেন। এবং সঙ্গেই সঙ্গেই ডুবে গেলেন আগের চিন্তায়। অর্থাৎ বিচলিত হবার মতো কিছু দেখেননি আপনি। আবার চমৎকৃত হবার মতোও যে কিছু দেখেননি তাও হলফ করতে বলতে পারি। কারণ তাহলে বেশ কিছুটা সময় আপনি জিনিসটাকে নিরীক্ষণ করতেন। যদি দুটো ব্যাপারই মিলে যায় তাহলে আপনি যে জিনিসটা দেখলেন তা বলে দিতে কারো দুসেকেন্ডের বেশি লাগার কথা নয়। জিনিসটা বাদুড়!
বাদুড় দেখে আমরা কেউ প্রীত হইনা। গড়পড়তা প্রতিক্রিয়া হলো ভাবলেশহীন থাকা। একটা ছোট অংশ বাদুড় নাম শুনলে নাক সিঁটকোন। আসলে বাদুড় প্রকৃতির এক অনন্য এবং অনুপম সৃষ্টি। পৃথিবীতে নিজেদের অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখা একমাত্র উড়ন্ত স্তন্যপায়ী। উল্লেখযোগ্য আর নিদারুণ ‘ভুল বুঝিত’ এক প্রাণী। বিলাত কী ব্রাজিল, চিলি কী চীন সবখানেই রয়েছে বাদুড়ের আনাগোনা। মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর অন্য প্রায় সকল স্থানে এদের দেখা মেলে। নয়শ পঞ্চাশ প্রজাতির বাদুড় সমস্ত স্তন্যপায়ীর এক চতুর্থাংশ বলে ধরা হয়। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আর ছোট বাদুড়ের দেখা মেলে আমাদের এশিয়ায়। ইন্দোনেশিয়া আর মালয়েশিয়ায় দেখা যায় কেলং প্রজাতির বিশালাকায় সব বাদুড়। এদের পাখার বিস্তৃতি পাঁচ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের কিটিস হগ নোজড বাদুড়ের পাখার বিস্তার মাত্র ছ ইঞ্চির মতো।
বাদুড়ের সৌন্দর্য নিয়ে গল্প ফাঁদার কোনো সুযোগ নেই। কবিরা কদাচিৎ বাদুড়কে তাদের কবিতায় ‘লিফ্ট’ দেন। তবু বাদুড়ের কাছে আমাদের ঋণের অন্ত নেই। তারা চমৎকার পতঙ্গভোজী। ফসলের মারাত্মক সব পোকা মাকড় সাবাড় করে দিয়ে তারা প্রতি বছর শত কোটি টাকার সম্পদ বাঁচিয়ে দিচ্ছে। সেকেন্ডে আঠারো বার পাখা দুলিয়ে বাদুড় খেয়ে নিচ্ছে উড়ন্ত ডাঁশ, মাছি এবং নানা রকমের বিটল। আটত্রিশটি সূঁচালো দাঁত এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য যোগায়। বাদুড় একদিনে তিন হাজার পাঁচশোর বেশি কীট-পতঙ্গ অনায়াসে খেয়ে নিতে পারে।
বাদুড় নিশাচর। অন্ধকারে সমস্ত বাঁধা বিপত্তিকে ডিঙিয়ে তারা কীভাবে নিশ্চিন্তে উড়ে চলে তা ১৯৩০ সালের আগপর্যন্ত মানুষের কাছে ছিল অজানা। আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ডোনাল্ড গ্রিফিন এই আবিষ্কারের পথিকৃত। তিনি আল্ট্রাসনিক শব্দ মানুষের কানে শ্রবণীয় করে তোলে এমন যন্ত্রপাতির সাহায্যে পরীক্ষা চালান। গ্রিফিন লক্ষ্য করেন যে সম্পূর্ণ নিরব পরিবেশে মুখখোলা অবস্থায় বাদুড় সেকেন্ডে দশহাজার কম্পাংক বিশিষ্ট এক ধরনের শব্দের সৃষ্টি করে। তখন তিনি আরেকটি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি বাদুড়ের চোখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন। সাময়িক দৃষ্টিশক্তি হারানো বাদুড় আশ্চর্যজনকভাবে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে। কিন্তু যখন তাদের কানকেও বন্ধ করে দেয়া হয় তারা তারের তৈরী প্রতিবন্ধকের সাথে বারে বারে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। রাডার স্টেশন যেমন ছুঁড়ে দেয়া ধ্বণি বস্ত্ততে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এলে তাকে বিশ্লেষণ করে উপাত্ত সংগ্রহ করে বাদুড়ও তেমনি প্রতিফলিত ধ্বণিকে অপূর্ব দক্ষতায় বিশ্লেষণ করে অন্ধকারে দিক নির্ণয়ের দুরূহ কাজটি অত্যন্ত সার্থকতার সাথে সুসম্পন্ন করে। অন্য এক পরীক্ষায় বাদুড় প্রমাণ করেছে এমনকি অত্যন্ত ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের অধিকারী হয়েও তারা নানা বস্ত্তর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। জীবন্ত পোক মাকড় আর প্লাস্টিক চিপ একই সাথে বাতাসে ছুঁড়ে দেখা গেছে বাদুড় উৎসাহের সাথে পোকামাকড়গুলো খেয়ে নিচ্ছে কিন্তু প্লাস্টিক চিপ তারা ছুঁয়েও দেখছে না। ইন্টারেস্টিং না?
মন্তব্য
অসাধারন!!!!
বাদুড় নিয়ে অনেক তথ্য জানলাম...আল্ট্রাসনিক সাউন্ড এর ব্যাপারে আগেই জানতাম, কিন্তু...বাদুড় যে খাদ্য এবং অখাদ্য আলাদা করতে পারে এটা জানতাম না।
ইন্টারেস্টিং!!!
ভালো চলছিলো কিন্তু... জানানোর কি আর আর কিছু নেই বাদুড় নিয়ে?
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
কেন থাকবে না মর্ম। ঢাউশ সব বই লেখা যায় বাদুড় নিয়ে এবং লেখাও হয়েছে।
আসলে বেশি ক্ষণ ধরে বাংলা টাইপ করতে অভ্যস্থ নই। সেজন্য চেষ্টা করি ছোট করতে---তবে যদি ভালো লাগে আপনাদের তাহলে এর দ্বিতীয় পর্ব লেখার চেষ্টা করতে পারি!
- চামচিকা, মনেহয় বাদুড়ের মিনিয়েচার ভার্সন! এই জিনিসকে আবার চিনি অনেক ছোটবেলার একটা ঘটনার কারণে। দাদার বাড়িতে একবার কে যেনো দুইটা "ছোট্ট বাদুড়" ধরে এনে দিলো। আমি মনে করলাম, এগুলো বোধহয় বাদুড়ের বাচ্চা, উড়তে পারে না। দুধের ফিডার মুখ থেকে সরিয়ে ভাইয়াকে বললাম, দুইটাকেই এখানে রাখো। দুইটা খেলা করবে। আমার কথায় ভাইয়াও সুন্দর করে দুইটাকে আলগা করে রাখলো মেঝেতে। রাখার কয়েক সেকেন্ড পরেই খানিক পেছনে ঝুঁকে দম নিয়ে দুইটাই একসাথে 'ফুরুৎ'। ভাইয়া তারপর আমাকে চরম বকাঝকা করছিলো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমার নিজেরও একটা ঘটনা আছে। তবে সেটা একদম ছোটবেলার নয়। সম্ভবত ২০০১ সালের ঘটনা। পেশাগত কারণে এক পান্ডববিবর্জিত স্থানে থাকি। পুরো ফ্ল্যাটে একাই। তো সন্ধ্যার দিকে ঐ চামচিকা ঘরে ঢুকে গেল।ফ্যান ঘুরছে আর ব্যাটাও তার সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে। আমি দরজা জানালা সব খুলে দিলাম। যেন বেরিয়ে যায়। কিন্তু অতো বুদ্ধি তো আর নেই। যায় না। শেষ মেষ ফ্যানের সাথে বাড়ি খেয়ে ধপাস। আমি ভয়ে ভয়ে হাতে নিলাম। অবাক হয়ে দেখি প্রায় মানুষের মতো চোখের অভিব্যক্তি! স্তন্যপায়ী তো। সেটাকে যতটা সম্ভব শুশ্রূষা করলাম। টেবিলের এক প্রান্তে বসে রইল। আমি তো জানিনা কী খায়- তাই খাবার দেয়া হয়নি। এক সময় দেখি সেটা উড়ে গেল।
নতুন মন্তব্য করুন