কবিতার সাথে দেখা হইছিল ভোরে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ৩০/০৫/২০১০ - ৫:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সচলে এই আমার প্রথম পোস্ট। নির্দিষ্ট কোন প্ল্যানিং ছিল না; সকালে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম...রাত্রি জাগরণের মুসাফির-মুসাফির ভাব আর চায়ের তৃষ্ণা,- দুটোই ছিল চোখেমুখে। মুজগুন্নী মহাসড়কে অনেক শান্তিপ্রিয় মানুষ,- প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, বোরখা-আটকা মহিলা এমনকি কিশোরীরা- ঘোরলাগা একটা শান্তিতে হেঁটে বেড়াচ্ছে এইসব দেখতে দেখতে আমারো একটা পরিব্রাজক-পরিব্রাজক অনুভূতি হচ্ছিল। মুজগুন্নী পার্কের উত্তরপাশের দেয়ালে উৎকৃষ্ট মানের গ্র্যাফিটি দেখার অভিজ্ঞতা হল,- বিস্তৃত সাদা দেয়ালে আমের আঁটি দিয়ে ঘষে ঘষে লেখা হয়েছে "বখাটে মেয়েরা ছেলেদের পথে উত্যক্ত করছে", "মনে রেখো গোলকিপার একজন আর খেলোয়াড় ১০ জন" এইধরণের মহান সব শিল্পগুণসমৃদ্ধ বাণী...বখাটে ছেলেদের আর একটা হিত-বচন ভাল লাগল: "ভালবেসো না, বাসাও"!

নানার দোকানে চা খেতে খেতে ছোট ছোট ছেলেরা কীভাবে জুতার আঠা পলিথিনের ভেতরে পুড়িয়ে তাই গিলে "এখন আমি কে এখন আমি কে"- এই ফিলিং নেয় তা নিয়ে একচোট তালিম হল...শ্রবণ-প্রতিক্রিয়ায় "সবই পরিবেশের দোষ, নানা, আপনি আমি বলে কী হবে" এইধরণের একটা উদার হতাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে নানার রোষানলে পড়া গেল...বুড়ো গলা ফুলিয়ে প্রায় ৩ মিনিট একটানা বক্তৃতা করে গেল যার উপসংহারে পাওয়া গেল আরো এক অমূল্য বচন: "ঘরের জ্বালায় পুরুষের শরীল হয় কালা/ কষা জুতার চাইতে লেঙ্গড়া পাও ভালা" অর্থাৎ সবই বাপমায়ের তরফ থেকে সন্তান মানুষ করার দোষ, (ক্যানো, ভাল ঘরের ছেলেরা নষ্ট হয় না?) এবংএইরকম সন্তান থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল। তা বেশ, এক রাত্রিজাগা ভোরে আর অধিক বচনসন্নিধান নিরাপদ মনে করলাম না, চুপচাপ ব'সে সাত-পাঁচ ভাবতে লাগলাম।

যাহোক, একটা কবিতার কথা বলতে বসেছিলাম। বেশ কিছুদিন পরে কিছু লিখলাম, আর লিখলামও স্ববিরুদ্ধ ধারায়, এই ভঙ্গিতে আগে আর 'লেখি নাই'। অতঃপর সচলের প্রিয় গেরস্থ ও অতিত ভাইলোগ কে পেশ করা যাচ্ছে আমার সাম্প্রতিক কবিতাটি।

বয়সের গাছপাথর
বিজন কুয়াশা

কারো কারো বিয়ে হয়ে গেছে
আর বিয়ে হয়ে গেছে মানে
তারা আর এই দলে নাই, বড় হয়ে গেছে।

ফজলু কাকা আর আব্বা ভালবেসে বাড়ি করছিল পাশাপাশি।
আমরা ঐ বাড়ি অনেক গেছি, ফজলু কাকারা কোনদিন আসে নাই।
আমাদের ভাড়া বাড়ি তাই।

অনেক অসামান্য বৃষ্টির দুপুরে আটকানো গরমে ফজলু ফুফুর পাশে বসে
কড়াই থেকে খুটে ভাজা চিংড়ি খাইছি। তারপর বিছানায় হাবুডুবু দিয়ে
আপা আর নীতু আর আমি, বিটিভিতে বাঙলা সিনেমা দেখছি।
নীতু তখন ফজলু কাকা আর ফজলু ফুফুর অণুকন্যা, আমিও নয়-দশের বেশি না।

নীতুর গেল বছর বিয়ে হয়ে গেছে।
তার মানে আমিও বড় হয়ে গেছি।
৩০.০৫.২০১০ (০৮.১৭)


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

চমৎকার বর্ণনা (শব্দটি পুরোপুরি ঝামেলামুক্ত নয়, তবু)। ভালো লাগল।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ঝামেলার কিছু আমি দেখিনাই, বা দেখিনা, ভালো লাগাতে সুখ পাইছি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম।

লেখাটা বেশ ভালো লাগলো। কবিতাটাও। তবে একটু তাড়াহুড়োতে শেষ হয়ে গেছে মনে হলো। পুরো ছবিটা বুঝে উঠতে না উঠতেই...

নিয়মিত লিখুন আরও।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই তাড়াহুড়োটা ইচ্ছে করেই...একটু অন্য ধারায় লিখতে চেষ্টা করেছিলাম (কী ধারায় লেখি এই প্রশ্ন অনুচ্চারিত-ই রাখবেন আশাবাদ...), লিখে তৃপ্তি পেয়েছি, এইটা কম না...
ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলে স্বাগতম। লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। আশা করি নিয়মত লিখবেন।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ...আমিও তাই আশা করি, কিন্তু আলস্য বরাবরই আশাবাদীদের বিমুখ করে হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনিও একটা বিয়ে করে ফেলেন, বড় হইছেন প্রমাণ করতে হবে না? লেখা ভালো হইছে। নিয়মিত হাঁটতে যাবেন, তাইলে লেখার আরো অনেক উপকরণ পাইতে পারেন। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

কামরুজ্জামান স্বাধীন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইরে, বড় আমি ঠিকই হইছি, মারজুক রাসেলের এ্যাক্টা নাটক দেখছিলাম "বাবা-বাবা লাগে"...ঐরকমই...এদিক আর সেদিক...আমারো বিয়া হইছে, আমি করিনাই, তয় আমার হইছে এইটাও হক কথা।
হাঁটাহাঁটিতে ছেদ পড়ছে...যে কারণেই কননা ক্যান, ঘটনা আসলেই এইরকম...আগেও কিছু না কিছু লিখছি প্রাতঃভ্রমণরে পুঁজি কইরা...
ভালো থাইকেন আপনিও, অনেক অনেক শুভকামনা...

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন সরস একটা লেখা।বর্ণনাটা স্বকীয় এবং চমৎকার।
শুভেচ্ছা রইলো!

-বাঁশি।

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যি নাকি? ("আরেকবার শুনিতে মন চাহে" এইরকম না, নিখাঁদ বিস্ময় আর উচ্ছ্বাস নিয়েই এই জিজ্ঞাসা হো হো হো
সুন্দর সুন্দর...আমোদ পাইলাম...শুভেচ্ছা নিলাম, জানাচ্ছি আপনাকেও

প্রভা প্রহেলিকা [অতিথি] এর ছবি

আমি এখন কোন পোস্ট দেই নি।কাল ভেবেছিলাম দেব একটা।সাহস হয়নি।আমার পোস্টা ঠিক এমনই ছিল।পড়ে ভাল লাগল।

ভাবছি মিলে গেল কিভাবে...?চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

আচ্ছা আচ্ছা এই অবস্থা? জনৈক 'বিজন কুজঝটিকা' আর জনৈকা 'প্রভা প্রহেলিকা'র ভাবনাজগতের এই মিল বড়ই আশ্চর্যের...চমৎকৃত হইলাম
সাহস করে দিয়েই ফেলুন না, আমাকেও ভাবনার মিল নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হওয়ার একটু সুযোগ করে দেন না হয়...
আর একটা কথা, জানেন নাকি, "great men think alike...?"
ধন্যবাদ হাসি

তিথীডোর এর ছবি

আরো একজন চেনা মুখকে চোখ টিপি নীড়পাতায় খুঁজে পেয়ে ভাল্লাগলো!
সচলে স্বাগতম কবি।।
লিখুন নিয়মিত...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ ভাল লাগল, শুভকামনা

______________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।