মন্ত্রীপরিষদ সম্প্রতি শিক্ষানীতি অনুমোদন দিয়েছে , এটা এখন সংসদে পাশ হবার অপেক্ষায় আছে । নানা রকম খারাপ খবরের মাঝে, ফেইসবুক বন্ধের ডামাডোলের মাঝে নতুন শিক্ষানীতি গ্রহনের খবরটা একটা সুখবরই বটে। বেশ পরিবর্তন আসবে শিক্ষা ব্যবস্থায় আশা করি। আগেই বলে রাখি, শিক্ষানীতির বিস্তারিত জানা হয়নাই, যতটুকু জেনেছি পত্রিকা পড়েই, সেই আলোকেই মূল্যায়ন করছি।
প্রথমতঃ প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত করা হয়েছে, অবৈতনিক, সার্বজনীন (যেটা আগে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত ছিল), প্রথম ভালো সংবাদ এটা।
তবে প্রাথমিক শিক্ষার বই গুলো দেখলে এখন খারাপই লাগে, আমার মতে প্রাথমিক বিভাগ থেকেই ইংরেজী তে আরেকটু জোর দেয়া উচিত, ইংরেজী গ্রামার এর দিকে বিশেষ করে। ইংরেজী সিলেবাস আরো বাড়ানো দরকার। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত বইয়ের সিলেবাসে ইংরেজী , অংক , সমাজ , বিজ্ঞানের সিলেবাসে আরো কিছু বিষয় যোগ করা উচিত - যেন পরের দিকে এসে শিক্ষার্থীদের হাবুডুবু খেতে না হয়।
দ্বীতিয়তঃ মাধ্যমিক শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত উন্নতিকরণ - খুবই ভালো ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত । সারা বিশ্বে যেখানে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত স্কুল শিক্ষা সেখানে আমরা দশম শ্রেনী পর্যন্ত স্কুল শিক্ষা রেখে ভুল করেছিলাম ।
জানিনা এখন মাধ্যমিকের সিলেবাস কেমন তবে - সেটা আমাদের সময়ের "এসো নিজে করি" টাইপের জিনিস থেকে উন্নত , এটা বুঝতে পারি।
তৃতীয়তঃ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কে বিকেন্দ্রীকরণ - অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জট কমানোর ব্যবস্থাটা নেয়া দরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা শিক্ষাবোর্ডের মত সীমাবদ্ধ না রেখে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত করলে আরো সুফল বয়ে আনতো বলে মনে করি। পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বুঝাতে চেয়েছি, যেখানে ক্যম্পাস থাকবে , শিক্ষক থাকবে, ছাত্ররা ক্লাস করবে সাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলজগুলাতে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স গুলো পড়ানো হবে। এতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা বা গবেষণা করতে না পারা ছাত্ররা, যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স - মাস্টার্স করে চাইলে তাদের গবেষণা কর্ম চালিয়ে নিতে পারবে কিংবা বিশেষ কোন বিষয়ে পড়তে ইচ্ছুক ছাত্ররা সেখানে ভর্তি হতে পারবে যেহেতু কলেজ গুলোতে সাধারন কয়েকটি বিষয়ই পড়ানো হয় ।
সরকার, ডিগ্রী লেভেলে পাস কোর্স বন্ধ করে শুধুমাত্র অনার্স কোস চালু রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন শিক্ষানীতি তে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার।
চতুর্থতঃ দৈনিক পত্রিকার ভাষ্য অনূযায়ী , শিক্ষানীতি অসাম্প্রদায়িক হবে, আদিবাসিদের তাদের ভাষায় পড়ার ব্যবস্থা থাকবে - বিষয় গুলো সত্যিই আশা জাগানিয়া সিদ্ধান্ত।
পত্রিকার মারফত আরেকটা যে বিষয় জানতে পেরেছি - স্কুল লেভেলে নৈতিক শিক্ষার উপর জোর দেয়া হয়েছে - যেখানে বলা হয়েছে - ধর্ম হলো নৈতিকতার মৌলিক উৎস। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানতে পারছিনা যে ধর্ম নৈতিকতার মৌলিক উৎস। নৈতিক শিক্ষার মৌলিক উৎস অবশ্যই নৈতিকতা , মানবিক বোধ ও মানব ধর্ম, স্বর্গ থেকে আসা কোন ধর্ম থেকে তা অনেক উপরে। কেননা যেটা আমার ধর্মে নৈতিক বলে বিবেচ্য, অন্য ধর্মে সেটা নৈতিক নাও হতে পারে।
পঞ্চমতঃ মাদ্রাসা শিক্ষায় কওমি মাদ্রাসা কে অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার। মাদ্রাসা শিক্ষা বা মাদ্রাসা বোর্ডের পক্ষপাতি নই আমি। বরং মাদ্রাসার বিষয় গুলিকে নিয়ে বিজ্ঞান, বাণিজ্য বা কলা শাখার মত করে আলদা শাখা করা যেতে পারে, যে ধর্ম , ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে গবেষনা করতে চায় সে ঐ শাখা বেছে নিবে। এতে করে অন্তত কিছু হলেও সুশিক্ষিত মওলানা পেতে পারি আমরা, যারা ধর্মের অপব্যখ্যা দিবে না। আর যারা এবতেদায়ী মাদ্রাসায় পড়ে কোরান খতম আর মিলাদ পড়িয়ে জীবন কাটাতে চায়, তাদের কে তাদের মত করেই চলতে দেয়া হোক।
এটাই ছিল নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে আমার নিজস্ব মতামত।
সবশেষে সরকার কে আবারো ধন্যবাদ , কিছুটা হলেও যুগোপযোগী শিক্ষানীতি গ্রহন করায়।
সাঈদ
মন্তব্য
কেউ কোন মন্তব্য না করে চলে গেল কেন বুঝলাম না । যেখানে ফেসবুক নিয়ে এত আলাপন-আলোচন সেখানে এই বিষয়টা ঢেকে গেল । সবাই বুঝি এখন বিনোদন , সামাজিকীকরণ নিয়ে বেশি ব্যস্ত !
অনেক ধন্যবাদ সাঈদ এই জরুরী ব্যপারটা নিয়ে বলার জন্য । আমিও অনেক আশাবাদী এবং আনন্দিত নতুন শিক্ষানীতি পেয়ে
বাবুই
ধন্যবাদ ভাই।
সাঈদ
১. আপনার লেখাটা দুর্দান্ত রকমের সুন্দর, সাবলীল। তবে পুরো শিক্ষানীতি পড়ে আলোচনা করলে আরো বেশ কিছু উপলব্ধি পেতাম আপনার কাছ থেকে, ধারণা করি। খসড়া শিক্ষানীতিটা দরকার হলে একটা ইমেইল ঠুকে দিতে পারেন।
২. ইংরেজির ব্যাপারে আপনার সাথে একমত নই। কেন নই, সেটা নিয়ে একটা লেখা তৈরি করছি। যে কারণে এখন আর এখানে আলাপ করলাম না। আমার মনে হয়, ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ধরন নিয়ে আমাদের দ্বিতীয় চিন্তা শুরু করা উচিত।
৩. 'এসো নিজে করি' বিষয়টা নিয়ে দেখি সবাই মহাখ্যাপা! কারণও আছে অবশ্য। কিন্তু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করে দেখুন, ঠিকমতো প্রয়োগ করা গেলে এটা আমাদের অনেক কাজে আসতো কিনা? মূল সমস্যা হয়েছে যেখানে- এসো নিজে করিতে এমন কিছু বিষয়বস্তু লেখকরা ঢুকিয়েছেন যেগুলো আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে উপযোগী নয়। এদেশের গরীব ঘরের শিক্ষার্থীরা করতে পারবে এমন কিছু অনুশীলন থাকলে এটা দিয়েই অনেক কিছু শেখানো যেত।
৪. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রচুর হোমওয়ার্ক করা দরকার। দিনে দিনে এটা গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটা ভেবেই হোমওয়ার্কগুলো করা প্রয়োজন। নৈতিক শিক্ষা নিয়ে আপনার সাথে একমত।
৫. মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ বা এ ধরনের কথাবার্তা বলে লাভ নেই। আপনি যা পরামর্শ দিয়েছেন, সেই পরামর্শ দিয়েও লাভ নেই। এগুলো আর কেউ শুনে না।
৬. শিক্ষানীতি পাশ হলে এ বিষয়ে আপনার আরেকটি লেখা চাই।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ ভাই ।
আসলে এসো নিজে করি - এই জিনিসটা ব্যবহারিক করতে পারলেও খুব লাভ হতো না, এইগুলা আসলে ক্লাস - সেভেন বা এইটের বিষয়। মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপযুক্ত না।
আর ব্যবহারিক প্রয়োগ করা সম্ভব না আমাদের দেশে জেনেও তাঁরা কেন এরকম একটা জিনিস ঢুকিয়েছিলেন, আল্লাহ মালুম।
আমিও আপনার সাথে একমত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আরো হোম ওয়ার্ক করা দরকার। যেভাবে এটা চলছে , তা বদলানো দরকার।
সেভেন-এইট কি মাধ্যমিক না?
ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে 'এসো নিজে করি' যে খুবই উপকারী ও লাভবান তা হাতেনাতে পরীক্ষাদ্বারা প্রমাণিত।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন শিক্ষানীতি অনূযায়ী সেভেন-এইট এখন প্রাথমিক বিভাগে
সেটা তো এখনও হয় নি! আর হলেও সমস্যা হওয়ার কথা না, কারণ বয়সগ্রুপ ও অন্যান্য ফ্যাক্টর একই থাকবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন মন্তব্য করুন