‘অনুভব করো তোমার যৌবনকে,’ লর্ড হেনরি যেন আদেশ করছেন। ‘একদিন সময়ের হাতে কয়েদ হবে তুমি। বার্ধক্য তোমাকে জেঁকে ধরবে। যৌবন খুব অল্প সময় টিকে থাকে। সাধারণ পাহাড়ি ফুল শুকিয়ে যায়, তবে আবার সেখানে ফুল ফোটে। কিন্তু আমরা হচ্ছি মানব জাতি, কখনোই যৌবন ফিরে পাই না। আমাদের অঙ্গ বিকল হয়, ইন্দ্রিয় লোপ পায়,’ তিনি বললেন, ডোরিয়ানের মনে বৃদ্ধ বয়সের ভয়ংকর চিত্র আঁকছেন। ‘আমরা অধঃপতিত হই একটি কুৎসিত বয়সের দিকে। তারপর স্মৃতি আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায় যা আমাদের ভয় পাইয়ে দেয় এবং বলে- কখনও আত্মসমর্পণ করো না। তোমার সোনালি দিনগুলো অপব্যয় করো না। বাঁচো! সন্ধান করো নতুন অনুভূতির! কোনো কিছুর তোয়াক্কা করো না।’
ডোরিয়ান মগ্ন হয়ে শুনছিল। তার চোখ বড় বড় হয়ে ওঠে। বাসিলও এই বিপজ্জনক বক্তৃতাটি শুনছিলেন। তাঁর তরুণ, অনভিজ্ঞ বন্ধুটির ওপর এটি কী প্রভাব ফেলবে ভেবে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কিন্তু তিনি তখন ছবিটায় তুলির শেষ আঁচড় দিতে ব্যস্ত, ডোরিয়ানকে উষ্ণ করা বা স্যার হেনরিকে থামানো হয়ে ওঠে না।
তিনি ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেন দীর্ঘ সময়। হাতের বড় রংতুলি দিয়ে পোঁচ দিচ্ছেন তাতে, চোখে কঠোর দৃষ্টি।
‘সমাপ্ত।’ অবশেষে গর্বের সাথে বললেন তিনি। উবু হয়ে বসে ছবির বাম কোনে বড় বড় লাল অক্ষরে নিজের সই করলেন।
‘আমার অভিনন্দন গ্রহণ করো, বাসিল।’ লর্ড হেনরি বললেন। ‘বর্তমান সময়ে যে কটি পোর্ট্রেট তৈরি হয়েছে তার মধ্যে এটা সুন্দরতম। ডোরিয়ান নিজেকে দেখবে এসো।’ ছবির দিকে তাকিয়ে ডোরিয়ান লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। নিজের সৌন্দর্য-জ্ঞান যেন বজ্রের মতো আঘাত করেছে তাকে। কিছুক্ষণের জন্য সে থমকে গেল, তবে তারপরই আকস্মিক আনন্দের জোয়ারে তার সারা মুখ ঝলমল করে উঠল। চোখে একটা আনন্দের দীপ্তি, যেন সে নিজেকে এই প্রথম দেখছে।
যদিও, হঠাৎ একটা ঠাণ্ডা স্রোত তার শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গেল। একদিন তার বয়স বেড়ে যাবে। চামড়ায় ভাঁজ পড়বে। ছিপছিপে শরীরটায় আর বল থাকবে না তখন। চুল ঝরে পড়বে।
‘কী ভয়ানক এটি!’ ডোরিয়ান আনমনা কণ্ঠে বলল, ‘আমার বয়স বেড়ে যাবে, অথচ এই ছবিটি থাকবে চিরযৌবনা। যদি অন্য কোনো পথ থাকত! শুধু যদি আমি তরুণ থেকে যেতাম আর বয়স বাড়ত কেবল ছবিটির! তার জন্যে আমি সব ছাড়তে রাজি! এমনকি যদি আমার আত্মা দিয়ে দিতে হয়, তাও!’
বাসিল বিসম্য়-ভরা চোখে তাকালেন। এটা খুবই অসঙ্গত যে ডোরিয়ান এভাবে ভাবছে ও কথা বলছে। কী হয়েছে তার? তাহলে কি লর্ড হেনরির অশুভ প্রভাব ইতিমধ্যেই কাজ করতে শুরু করেছে?
‘সৌন্দর্য অক্ষয় থাকে এমন সবকিছুর ওপর আমার হিংসে হচ্ছে।’ ডোরিয়ান বলল তিক্ততার সাথে। ‘আমি এখন জানি যে যখন কেউ তার সুন্দর চেহারা হারায়, তখন তার সবকিছু হারিয়ে যায়। তোমার ছবিটা আমাকে সেই শিক্ষাই দিয়েছে। লর্ড হেনরি-ই ঠিক। যৌবন ছাড়া আর কোনো কিছুর মূল্য নেই। যখন দেখব বুড়ো হয়ে যাচ্ছি,’ সে চেঁচিয়ে উঠল, ‘নিজেকে খুন করে ফেলব আমি!’
নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছে না বাসিলের। কিন্তু কিছু বলার আগেই ডোরিয়ান আবার চিৎকার করল, ‘আমার ছবিকেই আমার হিংসে হচ্ছে। এটা বিদ্রুপ করছে আমাকে, বাসিল! আমি এটাকে ঘৃণা করি। তুমি কেন এটা এঁকেছ?’ সেই সাথে, নিজেকে সে ছুড়ে মারল সোফার ওপর। কান্নার দমকে ভেঙে পড়ছে তার শরীর।
‘এসব কিছু তোমার কারণে, হ্যারি।’ বাসিল রাগের সাথে বললেন।
লর্ড হেনরি শ্রাগ করলেন, ‘এই হচ্ছে আসল ডোরিয়ান গ্রে। ব্যস, এতটুকুই।’
এই অভিযোগ সামান্যই কানে গেল ডোরিয়ানের। সে শুধু দেখতে পেল ছবিটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করার জন্য বাসিল ছুরি হাতে নিয়েছেন।
‘না, বাসিল!’ ডোরিয়ান চেঁচাল। ‘এটা হবে খুন করার নানান্তর।’
‘আমি খুশি যে তুমি শেষ পর্যন্ত আমার কাজের প্রশংসা করেছ।’ বাসিল শীতল গলায় বললেন।
‘শুধু প্রশংসা? আমি এটার প্রেমে পড়ে গেছি, বাসিল। আমার একটি অংশ এটা। আমি অনুভব করি তা,’ ডোরিয়ান ব্যাখ্যা করল। ‘এ তো সত্যি যে আমি চেয়েছি তুমি এটা আঁকো।’
‘শুকাতে যেটুকু সময়, তার মধ্যে এটা বাঁধাই হয়ে পৌঁছে যাবে তোমার ঠিকানায়।’ বাসিল ছুরিটা নামিয়ে রাখলেন, তাঁর কণ্ঠে আবার সৌজন্যের ছাপ ফিরে এসেছে।
ডোরিয়ান এরপর শান্ত হয়ে এল। সে লর্ড হেনরির সাথে ডিনার করার পরিকল্পনা করল। বাসিল অবশ্য বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর মনে ভয় বয়স্ক লোকটির কু-প্রভাব তাঁর বন্ধুটিকে বিপথে নিয়ে যেতে পারে।
কিন্তু ডোরিয়ানের মনোযোগ তাঁর সাবধানবাণীতে নেই। এবং তার জীবনটাও আর একই রকম থাকবে না!
চলবে...
কুটুমবাড়ি
মন্তব্য
বেশ টাইট ফিট লাগল, লেখকের ভাষায় অনুবাদ করছেন মনে হয়। পড়ে আরাম পাইনি, তবে এটা পাঠক হিসাবেও আমার ব্যর্থতা হতে পারে। অনুবাদ হিসাবে শুভাশীষদা বা মামুন ভাইয়ের অনুবাদের সাবলীলতা লক্ষ করা যায় তা যেন কিছুটা অনুপস্থিত। আমি নিজে অনুবাদ পারি না, আর তার উপরে চোরের মায়ের বড় গলার মত কঠোর সমালোচনা করে ফেললাম। আশাকরি আপনার অনুভূতিতে আঘাত করিনি, এগিয়ে যেতে থাকেন, আস্তে আস্তে আপনার অনুবাদের ভাষা আরো সাবলীল হবে এই প্রত্যাশা রাখি। আপনার পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ধন্যবাদ সাইফ ভাই
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। গঠনমূলক সমালোচনা ক্ষতিকর কিছু নয়, আঘাত পাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। আপনার পরের মন্তব্য পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম আমিও।
কুটুমবাড়ি
___________________________________________
তোমার থালায় খাবার নিয়ো না
সব ফুটন্ত হাঁড়ি থেকেই।
সব কৌতুকই রম্য নয়, তাই খুঁজো না
এমন কিছু যা আসলে নেই।
ভালোই চলছে। একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, আপনি টু-দা পয়েন্টে অনুবাদ করে যাচ্ছেন, মাঝে মাঝে খাপছাড়া লাগে, এটা হয়তো এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় সরাসরি রুপান্তরের জন্য। আপনার লেখার হাত ভালো, নিজের মত করে লিখে না, আরো ভালো লাগবে।
আমি ভালো লিখতে পারি না, তবে পাঠক হিসেবে মনোযোগী, সমালোচনা করতে পারি না, কারণ অনেক সময় কঠিন কথা বুঝি না। সব মাথার উপড়ে দিয়া যায়।
পড়ের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
==========
কামরুজ্জামান স্বাধীন
ধন্যবাদ স্বাধীন ভাই, আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
_______________________
কুটুমবাড়ি
নতুন মন্তব্য করুন