মুক্ত বিহঙ্গ
- কী ব্যাপার? তুমি এই সময়! শরীর খারাপ?
- না, শরীর ঠিক আছে। তোমার সাথে লাঞ্চ করবো বলে চলে এলাম।
- তারপর আবার অফিস যাবে?
- না, আজ আর যাবোনা।
শুনে খুব খুশি হয় স্বর্ণা। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে কানাডায় স্বামীর কাছে এসেছে সে। উইক-এন্ড ছাড়া হাসানের সাথে লাঞ্চ করা হয়না তার। বাসায় সারাদিন একা সময় যেন কাটতেই চায়না।
সাধারণতঃ খাবার টেবিলে বসে অনেক কথা বলে হাসান, কিন্তু আজ সে কেন যেন খুব চুপচাপ। স্বর্ণার কথাগুলোর উত্তরে শুধু হুঁ-হাঁ করে চলে। খাবার শেষ করে স্বর্ণাকে প্রশ্ন করে,
- রিভার ভ্যালি তে বেড়াতে যাবে?
- এখন?
- হুমম, রেডি হয়ে নাও ঝট্-পট্।
গত দুই সপ্তাহে এডমন্টন শহরের যে জায়গা গুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছে, তার মধ্যে নর্থ সাসকাচোয়ান রিভার ভ্যালি টাই সবচাইতে পছন্দ হয়েছে স্বর্ণার। জুন মাসের এই সময়টায় সুন্দর বসন্তের আবহাওয়া এডমন্টন শহরে।
গাড়ি চালাবার সময় স্বর্ণার প্রিয় গানগুলো সিডি প্লেয়ারে বাজায় হাসান। কিন্তু স্বর্ণা লক্ষ্য করলো, হাসান আজ কোন গান চালায়নি। হাসান একসময় বললো,
- স্বর্ণা, তুমি তোমার ছোটবেলার মজার কোন ঘটনা বলো।
- সেগুলো তো সব তোমাকে বলেছি।
- আবার বলো, শুনি।
কথা বলতে বলতে নদীর কাছে পৌঁছে যায় ওরা। গাড়ি পার্ক করে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে ভ্যালি তে। একটা গাছের ছায়ায় সবুজ ঘাসের উপর বসে দুইজন পাশাপাশি। লেজিসলেচার বিল্ডিং এর পাশের এই জায়গাটা থেকে নদীটা খুব সুন্দর দেখা যায়। কে বলবে মাত্র কয়েক মাস আগেই এই নদীর পানি সম্পূর্ণ বরফ হয়ে ছিলো!
সুন্দর বাতাস বইছে। খুব ভালো লাগে স্বর্ণার। কিন্তু আজ হাসান কেন যে এতো চুপচাপ! কত্তো কথা বলে সে অন্য সময়! স্বর্ণা আরো ঘণিষ্ট হয়ে বসে হাসানের ডান কাঁধে মাথা রাখে। অনেকক্ষণ নীরব থাকার পর হঠাৎ হাসান বলে,
- স্বর্ণা, তোমাকে আমি এখন একটা খুব খারাপ সংবাদ দেবো। এমন খারাপ সংবাদ হয়তো তুমি তোমার সারাজীবনে কোনদিন শোননি। মনটাকে একটু শক্ত করো।
কাধেঁ মাথা রেখেই স্বর্ণা অবাক হয়ে হাসানের মুখের দিকে তাকায়। হাসান স্বর্ণাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
- কয়েক ঘন্টা আগে বাংলাদেশে তোমার মা মারা গেছেন!
মুহুর্তের মধ্যে হাসানের আলিঙ্গনে স্বর্ণার শরীরটা কেঁপে-কেঁপে ওঠে। হাসান অনুভব করে, তার বুকের কাছের শার্ট ক্রমশঃ ভিজে যাচ্ছে।
মন্তব্য
এমন খবর দেওয়া যে কী কঠিন কাজ
স্বান্ত্বনা দেওয়ার কিছু নেই, অসহায় হয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার থাকেনা
পড়তে ভালই লেগেছে তবে শেষে এসে মনে হল এমনটা কি আসলে সম্ভব? এমন সময়ে এমন ধীরস্থির থাকা মনে হয় অসম্ভব।
যাহোক, অনেকদিন পর মুক্ত বিহঙ্গকে লিখতে দেখে ভাল লাগল।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মর্ম,
এমন খবর দেওয়া যতটা কঠিন, তার চাইতেও বেশি কঠিন সেই খবর টা যাকে দেওয়া হয়, তার জন্য সেই খবর গ্রহণ করা! যার/যাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে, তার/তাদের পক্ষে কিছুটা হলেও ঘটনাটা অনুভব করা সম্ভব।
" এমনটা কি আসলে সম্ভব? এমন সময়ে এমন ধীরস্থির থাকা মনে হয় অসম্ভব। " - এমন সময় সংবাদ দাতাকে আসলেই এমন ধীরস্থির থাকতে হয়! অন্ততঃ সংবাদ গ্রাহকের জন্য হলেও!
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্যের জন্য আরো বেশি ধন্যবাদ
- মুক্ত বিহঙ্গ
আচ্ছা, মেনে নিচ্ছি।
আমার অভিজ্ঞতা অন্যরকম ছিলোতো, সেজন্যই বলা।
ধীরস্থির থাকা বলতে আমি আসলে বুঝিয়েছিলাম বাসা থেকে বেরিয়ে কিছুটা পথ ড্রাইভ করে নদীতীরে বসে খবর দেয়াটাকে, এটাকে একটু অবাস্তব লাগল। আর নয়ত খবরদাতা নিজেকে সামলে রেখে যতটুকু সম্ভব সহনীয় করে নির্মম সংবাদটুকু দেবেন, এটাই স্বাভাবিক।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
গল্পটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সাথেই সংশ্লিষ্ট,
চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য অভিনন্দন,
আরো আরো লিখুন...
___________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
বর্ণ অনুচ্ছেদ,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
- মুক্ত বিহঙ্গ
মৃত্যু সব সময়ই ব্যদনা দায়ক। তবে কৃষি ভিত্তিক সমাজের মানুষ আমরা ফল পাকলে বোটা নরম হয় এটা দেখে অভ্যস্ত, এছাড়া আলবার্ট কামুর কঠিন অস্তিত্ত্ববাদী 'দ্যা আইটসাইডার' পড়লেও কেমনে জানি মনের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
মিথলজি একটু নাড়াচাড়া করে দেখলাম অনেক ট্রাইব মৃত্যকে আনন্দ উৎসব মনে করে।
ফকির লালনের দৃষ্টিতে তো কাল গিয়ে মহাকালে মেলায়।
আপনার লেখাটি গতিশীল।
মোমেন
মোমেন,
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
- মুক্ত বিহঙ্গ
মৃত্যু-সংবাদ সবসময়ই খারাপ লাগে, তা সে গল্পেই হোক বা বাস্তবে। তবে গল্পের ক্ষেত্রে এমন হলে বলতে হয়, তা লেখনীর জন্যই সম্ভব। আপনার গল্পটা পড়ে খারাপ লাগলো। ভালো লিখসেন। তবে কিছু কিছু সংলাপ এবং আনুষঙ্গিক বর্ণনা আরেকটু মনোযোগ দাবি করে। নিতান্তই ব্যক্তিগত মত।
অতন্দ্র প্রহরী,
লেখাটা পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
আর সমালোচনার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা
- মুক্ত বিহঙ্গ
হুম, পড়লাম। মা বাবা বা প্রিয়জনের চলে যাওয়া খুব কষ্টকর ব্যাপার,এ বিষয়ে সান্তনা দেবার কিছু থাকেনা।মা বাবা থেকে অনেক দূরে থাকি ,মনটা সব সময় ভয়ে থাকে।
মিতু
রিফাত জাহান মিতু
মিতু,
পড়বার জন্য ধন্যবাদ। আপনার মা-বাবার জন্য শুভকামনা রইলো।
- মুক্ত বিহঙ্গ
নতুন মন্তব্য করুন