অনুবাদ : দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে | ৩য় পর্ব |

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৫/০৬/২০১০ - ১১:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটি রোমান্টিক পটভূমি

পরদিন দুপুর। লর্ড হেনরি কার্জন স্ট্রীট থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছেন আলবেনি ক্লাবের দিকে। তিনি তাঁর চাচা জর্জের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। কঠোর মনের এই প্রৌঢ় ব্যাচেলরটি ডিপ্লোমেটিক সার্ভিসে ছিলেন, এখন অবসর নিয়েছেন। এই জ্যেষ্ঠ ভদ্রলোক তাঁর বাটলারের কাছে হিরো হলেও অধিকাংশ আত্মীয়ের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কস্বরূপ। লর্ড হেনরি অবশ্য তাঁর সঙ্গ উপভোগ করেন।

আলবেনি ক্লাবে ঢুকে লর্ড হেনরি তাঁর চাচাকে পেলেন একটি বাদামি রঙের শিকারি জ্যাকেট পরা অবস্থায়, সিগার খেতে খেতে অসন্তোষ নিয়ে খবরের কাগজ পড়ছেন।

'বেশ, হ্যারি,' বৃদ্ধ বললেন, 'কী তোমাকে নিয়ে এল?'

'পরিবার-আসক্তি, চাচা। সেই সাথে, কিছু জানতে চাই তোমার কাছে। আমার কিছু তথ্য প্রয়োজন মি. ডোরিয়ান গ্রে সম্পর্কে।' লর্ড হেনরি উত্তর দিলেন।

'মি. ডোরিয়ান গ্রে? কে সে?' সাদা ঘন ভ্রু কুঁচকে জর্জ জিজ্ঞেস করলেন।

'এটা জানতেই আমি এসেছি। বরং আমি তার পরিচয়টা দিই। সে মৃত লর্ড কেলসোর নাতি। তার মায়ের নাম লেডি মার্গারেট ডেভেরুক্স। আমি চাই তুমি ডোরিয়ানের মা সম্পর্কে কিছু বল। সে দেখতে কেমন ছিল? সে কাকে বিয়ে করেছিল?'

'কেলসোর নাতি!' বৃদ্ধ ভদ্রলোক প্রতিধ্বনি করলেন। 'অবশ্যই, তার মাকে আমি জানতাম। সে ছিল অসাধারণ রূপসী এক মেয়ে। বহু পুরুষের হৃদয় ভেঙে দিয়ে সে ভেগে গিয়েছিল এক কপর্দকশূন্য, তরুণ কর্পোরালের সাথে।'

'সেই গরিব ছোকরাটি বিয়ের কয়েক মাস পর ডুয়েল লড়তে গিয়ে মারা পড়ে। এর পেছনে একটা কদর্য গল্প আছে। বলা হয় কেলসো কিছু বর্বর বেলজিয়ানকে ভাড়া করেন তাঁর মেয়েজামাইকে প্রকাশ্যে অপমান করার জন্য। সম্মান বাঁচাতে দ্বন্দ্বযুদ্ধে নামতে বাধ্য হয় সে। তার প্রতিদ্বন্দ্বীর নিশানা ছিল অব্যর্থ। ছোকরা কোনো সুযোগই পায়নি।'

'তার স্ত্রী, মানে ডোরিয়ানের মায়ের কী হলো?' লর্ড হেনরি জানতে চাইলেন।

'কেলসো তাঁর কন্যাকে ফিরিয়ে নেন নিজের কাছে। শুনেছি মেয়েটি আর কখনও বাবার সাথে কথা বলেনি। একই বছর মারা যায় সে। একটি পুত্র সন্তান রেখে গেছে।' তারপর তিনি ব্যাখ্যা করলেন যে ডোরিয়ানের নানা লর্ড কেলসো এবং মা ডেভেরুক্স অনেক অর্থকড়ির মালিক ছিলেন। এবং আইনত ডোরিয়ান পারিবারিক সম্পত্তি সেলবি-র উত্তরাধিকারি। 'ডোরিয়ান গ্রে,' তিনি বললেন, 'একদিন অনেক ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবে।'

'তথ্যের জন্যে ধন্যবাদ। নতুন বন্ধুদের সম্পর্কে জানাটা আমার চিরকালের পছন্দ।' লর্ড হেনরি হাসলেন।

পালটা হেসে জর্জ তাঁর ভাতিজাকে জিজ্ঞেস করলেন দুপুরে সে কোথায় খাবে। 'আগাথা আন্টির সাথে, মি. গ্রে-ও থাকবে সেখানে। সে মহিলাটির সর্ব সাম্প্রতিক আশ্রয়।'

জর্জ অনুমোদনসূচক গোঁ গোঁ আওয়াজ করলেন, একই সাথে বেল বাজালেন ওয়েটারকে ডাকার জন্য। তারপর শুভকামনা জানিয়ে বিদায় দিলেন ভাতিজাকে। লর্ড হেনরি হেঁটে বার্লিংটন স্ট্রীটে ঢুকলেন এবং বাঁক নিয়ে পা বাড়ালেন বার্কলি স্কোয়ারের দিকে।

তো, এটাই তাহলে ডোরিয়ান গ্রের বাবা-মার কাহিনি! রোমান্স আর ট্রাজেডির এই যুগলবন্দি লর্ড হেনরিকে আলোড়িত করছিল। একটি সুন্দরী নারী সব হারানোর ঝুঁকি নিয়েছে শুধু ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে! দুরন্ত আনন্দময় কয়েকটি সপ্তাহের অবসান ঘটে শুধু একটি প্রতারণার জন্য! দিনের পর দিন অসহায় মেয়েটি দুঃসহ মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে ছিল। তারপর তার শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়।

মৃত্যু তাকে ছিনিয়ে নিয়েছে, ছেলেটিকে একা আর একটি হৃদয়হীন বৃদ্ধের নিষ্ঠুর শাসনে ফেলে রেখে। 'হ্যাঁ,' ভাবলেন লর্ড হেনরি, 'এটা একটা আকর্ষণীয় পটভূমি। ডোরিয়ান গ্রে প্রেম আর মৃত্যুর সন্তান।'

চলবে...

১ম পর্ব : http://www.sachalayatan.com/guest_writer/32648
২য় পর্ব : http://www.sachalayatan.com/guest_writer/32694

কুটুমবাড়ি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার এই পর্বটা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো হইছে...
চালিয়ে যান।। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

পাগল মন

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।

----------------------------------------------------------

কুটুমবাড়ি

নৃ [অতিথি] এর ছবি

সিনেমাটা দেখলেও বইটা কখনো পড়া হয়নি। এখানে পড়ার সুযোগ পাওয়া গেলো। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কিন্তু সিনেমাটা এখনও দেখিনি! শুভেচ্ছা রইল।

-------------------------------------
কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

তিনটি পর্বের মধ্যে এটাই ভালো লগালো বেশি। চালিয়ে যান হয়তো আমাদের জন্য আরো চমক থাকবে!

==========
কামরুজ্জামান স্বাধীন।


================

অতিথি লেখক এর ছবি

অপেক্ষা করেন, সত্যিই আরও চমক আছে অনেক।

----------------------------------------------------------

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়তে বেশ ভালো লাগছে, তবে সংলাপগুলো আরো সাবলীল এবং সহজ শব্দসমৃদ্ধ হতে পারত ।

______________________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি এভাবেই লিখি, দুঃখিত। সহজ শব্দ দিয়ে তো অনেকেই লেখেন, আমি পারি না। আমার ঠিক আসে না। তবুও শুভকামনা রইল আপনার জন্য। ভালো থাকবেন।

---------------------------------------------------------

কুটুমবাড়ি

স্পর্শ এর ছবি

অস্কার ওয়াইল্ডের গদ্যে একটা কাব্যিক ব্যাপার আছে। সেটা কেন যেন আসছে না আপনার অনুবাদে।

যেমন-


""Well, Harry," said the old gentleman, "what brings you out so early? I thought you dandies never got up till two, and were not visible till five."

এটার অনুবাদ আপনি করেছেন,

'বেশ, হ্যারি,' বৃদ্ধ বললেন, 'কী তোমাকে নিয়ে এল?'

বাংলা এভাবে বলা হয় না। আর লাইনের পরের বাক্যটা আপনি পুরোপুরি বাদ দিয়েছেন! তার মানে আপনি 'আক্ষরিক অনুবাদ'ও করছেন না। ওদিকে 'ভাবানুবাদ'ও হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বলা যায় 'ওস্কার ওয়াইল্ড ডিজার্ভস বেটার'।

যেমন ঐ অংশটার অনুবাদ করা যেত এভাবে,

বৃদ্ধ বললেন "কী ব্যাপার হারি, সাত সকালে এদিকে যে? আমিতো জানতাম তোমরা এই আজকালকার বাচ্চারা দু'টার আগে ঘুম থেকেই ওঠো না! আর পাঁচটার আগে তো তোমাদের দেখা পাওয়াই ভার।"

চেষ্টা করলে এর চেয়েও ভালো করা সম্ভব।

আপনি আগে কোনো বই অনুবাদ করেছেন? সহজ কোনো বই বা ভালো কিছু ছোটো গল্প দিয়ে শুরু করলে ভালো হয়।পরের দিকে হেনরির অসাধারণ সব ডায়লগ আছে! সেগুলো মনে হয় এভাবে অনুবাদ করলে মারা পড়বে।

এই অনুবাদ যারা পড়ছেন, এই বইটার সৌন্দর্য সম্পর্কে ভুল একটা ধারণা পাচ্ছেন তারা।

আচ্ছা, আমার কমেন্টটা মনে হয় একটু হার্স হয়ে গেল। আপনি সক্রিয় ভাবে চেষ্টা করছেন দেখেই আমি আমার মতটা সরাসরি জানালাম। আশাকরি কথাগুলো বিবেচনা করবেন। এবং আপনার কাছ থেকে দারুণ কিছু অনুবাদ পাবো আমরা।

শুভেচ্ছা!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সুরঞ্জনা এর ছবি

মন্তব্যের সাথে সহমত।

আসলে, একটু ছোটখাটো কাজ দিয়ে শুরু করলে অনুবাদের ভাষা টা সরগর হয়ে যায়, আবার আনন্দও তো আছে, একটানে ছোট কোনো লেখা শেষ করে ফেলার। হাসি
বড় কোন কাজে হাত দেবার আগে চিত্রশিল্পীরা যেমন আগে স্কেচ করে নেন কাজটার।
অনুবাদে মূল লেখার ভাবটা হারিয়ে গেলে খুব দুঃখের ব্যাপার হবে। মন খারাপ
............................................................................................
জগতে সকলই মিথ্যা, সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয় ।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

@ স্পর্শদা, শুভেচ্ছা।

আপনি লিখেছেন-

বাংলা এভাবে বলা হয় না। আর লাইনের পরের বাক্যটা আপনি পুরোপুরি বাদ দিয়েছেন! তার মানে আপনি 'আক্ষরিক অনুবাদ'ও করছেন না। ওদিকে 'ভাবানুবাদ'ও হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বলা যায় 'ওস্কার ওয়াইল্ড ডিজার্ভস বেটার'।

আপনার সাথে আমিও একমত। তবে আপনি কি সত্যিই বুঝতে পারেননি যে এটি উপন্যাসটির সংক্ষিপ্ত অনুবাদ? আমি রীতিমতো হতাশ হয়েছি। আপনি যেহেতু মূল উপন্যাসটি পড়েছেন/দেখেছেন, তাই আপনার বুঝতে পারাটাই স্বাভাবিক ছিল।

আরও কিছু বলার আগে একটি দায়স্বীকার করে নেয়াই ভালো। এখানে কোথাও আমি বলিনি/বলার সুযোগ পাইনি যে এটি পরিপূর্ণ অনুবাদ নয়, সংক্ষিপ্ত অনুবাদ।

মূলত বেশ কিছুদিন আগে উপন্যাসটির একটি কিশোর সংস্করণ (ইংরেজি) আমার হাতে আসে। আমি তখন সেটির খসড়া অনুবাদ করে রেখেছিলাম (আমার হাতে সেই কপিটি এখন নেই, তাই রূপান্তরকারী এবং প্রকাশনীর নাম উল্লেখ করতে পারছি না)। এখন সচলায়তনে দেয়ার আগে আমি আবারও সেটি ঘষামাজা করে কিস্তি কিস্তি করে জমা দিচ্ছিলাম।

আপনার মন্তব্য পড়ার পর আমি মূল উপন্যাসটি নেট থেকে নামিয়েছি এবং ৩য় পর্বটি পড়ে দেখেছি। সত্যিই বেশ কিছু অংশ বাদ পড়ে গেছে, যদিও তাতে কাহিনির মূল ধারার কোনো ক্ষতি হয়নি।

আসলে অস্কার ওয়াইল্ড এত বড় মাপের লেখক এবং আমি এত আনাড়ি অনুবাদক যে উপন্যাসটির মূলভাব আমার পক্ষে হয়তো পুরোপুরি তুলে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

সব দিক বিবেচনায়, উপন্যাসটির বাকি পর্বগুলো আমার পক্ষে চালিয়ে যাওয়া সমীচীন হবে কি না চিন্তা করছি। পাঠকরা না চাইলে সিরিজটি বন্ধ করে দেয়া হবে।

@ সুরঞ্জনা হক, শুভেচ্ছা। আপনি লিখেছেন-

অনুবাদে মূল লেখার ভাবটা হারিয়ে গেলে খুব দুঃখের ব্যাপার হবে।

আশা করি, আপনিও এখন একটু স্বস্তি বোধ করবেন।

---------------------------------------------------------
কুটুমবাড়ি

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

খারাপ লাগছিলো না, তবে, ইংরেজির কাঁচা গন্ধ ছাড়ছিলো অনেক জায়গা থেকেই।

আশা করি, নজর দেবেন এদিকটায়।

চলুক।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।