আশা

পাগল মন এর ছবি
লিখেছেন পাগল মন [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০৬/০৬/২০১০ - ৯:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছোটবেলাতে সবার মনেই বড় হয়ে কি হবে সে স্বপ্ন থাকে হয়তো।আমারও ছিল। যখন “Aim in life” অথবা “আমার জীবনের লক্ষ্য” টাইপ রচনা লিখতাম তখন অনেক কিছুই চিন্তা করতাম- বড় হয়ে কি হবো? স্কুলে যখন স্যার ম্যাডামরা জিজ্ঞাসা করতো, বড় হয়ে কি হব? আমি সবসময় উত্তর দিতাম, “ইঞ্জিনিয়ার”। আমার মাথার মধ্যে এটা একেবারে গেঁথে গিয়েছিল। কলেজে যখন ভর্তি হলাম “নেচার স্টাডি ক্লাব” এর মেম্বার হলাম। সেখানে এক বড় ভাই ছিল যিনি ছিলেন জাহাজের নাবিক, কিছুদিন পরেই ক্যাপ্টেন হবেন। উনি প্রায়ই জাহাজ জীবনের বিভিন্ন ঘটনা বলতেন। তখন ঠিক করলাম নাহ, জাহাজের নাবিক হবো। ছোটবেলা থেকে সেনাবাহিনীর লোকদেরকে ভালো লাগতো কিন্তু ওই ভাইয়ার প্রভাব বা কি কারণে জানি না আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো নৌবাহিনীর লোকদের, তাদের পোশাক, জাহাজে করে ঘুরে বেড়ানো, সমুদ্রে টহল দেয়া সবই ভালো লাগতো আমার। ঠিক করেছিলাম হয় জাহাজের নাবিক হবো অথবা নৌবাহিনীতে যোগ দিব। তবে প্রকৌশলী হবার ইচ্ছাটাও ছিল সমানতালে। এজন্যে আরেকটা যোগ করলাম, “মেরিন ইঞ্জিনিয়ার”। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার পরে আমি জানতেও পারিনি কিভাবে, কোথায়, কখন নৌবাহিনী/মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি শেষ হয়ে গেছে। আমি প্রকৌশলী অবশ্য ঠিকই হয়েছি। জানি না পানির প্রতি টানেই কিনা আমি হয়েছি পানিসম্পদ প্রকৌশলী।

এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের কিছুদিন আগেই আমার বাবা দেশের বাইরে থেকে একবারের জন্যে দেশে ফিরে। রেজাল্টের পরে শুরু হয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং নামক যুদ্ধ। আমার বাবা-মা দুজনেরই ইচ্ছা ছিল ছেলে ডাক্তার হবে, কিন্তু ততদিনে আমার মনের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার হবার ইচ্ছা খুঁটি গেড়ে বসে পড়েছে। তাই আমি বাবা-মা’র ইচ্ছাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের সংকল্পে স্থির থাকলাম।

বুয়েটের প্রথম টার্মটা খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেটেছে, যার প্রধান কারণ ছিল যেটাতে পড়তে চেয়েছিলাম সেটাতে ভর্তি হতে না পারা। আরেকটা কারণ ছিল, মানুষের ধারণা যে পুরকৌশলীরা সবাই খারাপ, তাদের কারণেই আজ দেশের এ অবস্থা আর তেমন চাকরীও নেই দেশে। আমাদের সাবজেক্টটা যেহেতু পুরকৌশল বিভাগেরই একটা অংশ তাই এ ভয়টা আমার অনেকদিন ছিল। এমনকি আমাদের স্যাররাও মনে হয় বিশ্বাস করতো যে আমাদের তেমন চাকরী নেই। এজন্যই আমাদের “নবীন বরণ” এর দিনে আমাদের বিভাগীয় প্রধাণ বলেছিলেন, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি করতে যাতে আমাদের চাকরী পেতে সুবিধা হয়। আরেক স্যারতো বলেছিলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং জব করতে হবে এমন কোন কথা নেই, ব্যাংকে চাকরী করতে পারি কিংবা পুলিশে। যাহোক চাকরী নিয়ে আমার ভয় অবশ্য পরে কেটে গিয়েছিল। কিন্তু আমার অনেক বন্ধুরই সে ভয়টা কাটেনি এজন্যই হয়তো তারা “পানিসম্পদ প্রকৌশলী” হতে “পুরকৌশলী” তে রূপান্তরিত হয়েছে পরে।

বুয়েটে থাকতেই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আর যাই হোক সরকারী চাকরী করবো না কেননা সরকারী চাকরী করলে হয়তো এত খারাপের ভীড়ে নিজেকে ভালো রাখতে পারবো না। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ছিল সরকারী প্রকৌশলীদের সম্পর্কে বিভিন্ন খারাপ খবর। আমার এ সিদ্ধান্ত এখনো পরিবর্তন হয়নি। তবে এখানে একমাত্র ব্যাতিক্রম হচ্ছে বুয়েটের চাকরী। ফাইনাল ইয়ারে যখন পড়ি তখন আবার বাবা-মা বললো যে সরকারী চাকরীর জন্য চেষ্টা করতে কিন্তু আমি তখনও তাদের কথাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম।
আমার হলে রুমমেট যে আবার আমার ক্লাসফ্রেন্ডও ছিল ওর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছিল সরকারী চাকরী। আমি ওকে প্রায়ই বুঝাতাম সরকারী চাকরী করে কি হবে, ঘুষ না খেলেও লোকে বলবে “ঘুষখোর”, আর তাছাড়া ঘুষ না খেয়ে থাকাও যাবে না। এক ঝুড়ি পঁচা আমের মধ্যে একটা ভালো আম ভালো থাকতে পারে না কিন্তু ওর এক কথা, সরকারী চাকরীই করবে। আমি না পেরে বলতাম, কর তুই তোর সরকারী চাকরী।

কয়েকদিন আগে ২৮তম বিসিএসের রেজাল্ট দিয়েছে। ২১৯০ জন ফার্স্ট ক্লাস ক্যাডারের মধ্যে আমার বন্ধু/বড়ভাই তিনজন আছে যারা অত্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়ালেখা করে বিসিএসের মতো একটা পরীক্ষা পাশ করেছে। তাদেরকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। আমার আরো কিছু বন্ধু আছে যারা নন-ক্যাডার সরকারী চাকুরেজীবি। অন্য সব সরকারী চাকুরেজীবিদের সম্পর্কে জানি না তবে এদের সম্পর্কে এটুকু বলতে পারি তারা এখন পর্যন্ত সৎ। তাদের প্রতি আমার শুধু এটুকুই আর্জি যে তাদেরকে যেন কেউ গালি দিতে না পারে অসৎ বলে। আমি যেন সবসময় বলতে পারি, আমি ওদেরকে চিনি এবং তারা সৎ সরকারী প্রকৌশলী। এটুকু 'আশা' তো আমি আমার বন্ধুদের কাছে করতেই পারি, তাই না?

পাগল মন

শনিবার, জুন ৬,২০১০
দুপুর ১.২৫ (প্যাসিফিক সময়)


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

এই শুভবোধের জন্য আপনাকে অভিনন্দন

______________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকেও অভিনন্দন।

পাগল মন

অতিথি লেখক এর ছবি

সরকারী বা বেসরকারী আজকাল চাইলেই ঘুষ সব জায়গা থেকে খাওয়া সম্ভবপর; বেসরকারীতে আরো অর্গানাইজড্‌ ওয়েতে ঘুষ খায় অনেকে যেটা দেখে রীতিমত টাস্‌কি খাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
--শফকত মোর্শেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

বেসরকারীতেও যে ঘুষ খাওয়া যায় এটা অবশ্য জানি তারপরেও সরকারীটা মার্কা মারা...

পাগল মন

guest writer এর ছবি

আমি ছেলেবেলায় অনেক কিছু হতে চেয়েছিলাম...সাংবাদিক, চারুকলার ছাত্র, এয়ার হোস্টেস,স্কুল টিচার। সবাই বলত, তুমি ডাক্তার হও। আমি আমার সংকল্পে অটুট। কখখনো ডাক্তার হব না। মরা মানুষ কাটতে হবে। না বাবা, আমি পারবো না। একটু বড় হবার পর খুব বুয়েটে পড়তে ইচ্ছে করত। বুয়েটের কাউকে দেখলে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতাম (এখনো থাকি)যেন, টিভির কোন জনপ্রিয় তারকা। যাই হোক, এইচএসসি পরীক্ষার পরে চান্স পেলাম মেডিক্যাল-এ। বাবা-মা, আত্নীযম্বজনের কথা কানে নিলাম না।কখখনো ডাক্তার হব না, this is final...

ভর্তি হলাম ঢা.বি.তে, ফলিত রসায়নে। বুয়েটে পরীক্ষা না দিতে পারার কষ্টটা কমল।তবে কষ্ট রয়ে গেল, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলাম না। আমার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া হলো না। হয়ে গেলাম ছাপোষা স্কুল টিচার।তবে এটা তো আমার স্বপ্ন ছিল একসময়ের। সবাই এবার বলতে লাগলো বি সি এস দাও। আবার আমার সংকল্প। বি সি এস দেব না, যেটা ভালো লাগে না, সেটা কখখনো করবো না। ৩০ তম সহ সামনে আরো ৩টা বিসি এস পাবার চান্স আছে। কিনতু আমি হবো স্কুল টিচার। বি সি এস দেবো না। জানি না আমি বোকা কিনা...

-----------------------------------------------------------------------------
রাজকন্যা

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয় না আপনি বোকা। আসলে যেটা করতে মন থেকে সায় দেয় না সেটা না করাই ভালো আর নাহলে পরে আফসোস হয়। আর স্কুলটীচারতো মহান পেশা... ভালো একজন টীচার হতে পারা বিশাল অর্জন। শুভকামনা আপনাকে...

পাগল মন

আলমগীর এর ছবি

ভাল লিখেছেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

পাগল মন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বুয়েটের "পানিসম্পদকৌশলী"দের "পুরকৌশলী" বানানোর ব্যাপারটা অদ্ভূত লাগে। এর প্রয়োজনীয়তাটা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

এটার পেছনে বিশাল ইতিহাস আছে।।

পাগল মন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটু কষ্ট করে ইতিহাসটা লিখে পোস্ট করে ফেলেন। তাহলে এমন ব্যবস্থার পিছনে যুক্তিটা কী তা বোঝার চেষ্টা করতে পারি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

চড়ুঈ এর ছবি

আপনার সাথে আমাদেরও অনুরোধ রইলো তাদের সবার প্রতি যেন কেউ তাদের অসৎ বলতে না পারে। মাথা উচু করে কাজ করে।

অতিথি লেখক এর ছবি

শুভবুদ্ধির জয় হোক । ঘুষ, দূর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত সংঘঠিত হলে তবেই দূর্নীতি কমবে ।
ওলি
oli

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।