বইয়ের অমন তালিকাটা দেখলে যে কারোরই হিংসা হবে। আর যদি জানতে পারে যে চার বছর তিন মাসের এক পিচ্চি মেয়ের পড়া বইয়ের তালিকা এটা তাহলে এক্কেবারে নির্বিকার মানুষটিরও চোখ কপালে উঠবেই! মিস ফেল্পস একাই এই আশ্চর্য ব্যাপারটার চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন আর তার আনন্দ আর বিস্ময়েরও কোন সীমা-পরিসীমাই ছিলো না। কিন্তু একদিক দিয়ে ভালো যে তিনি খুশির চোটে দিশেহারা হয়ে যাননি। যে কোন মানুষই নিজের চোখের সামনে এইরকম একটা অসাধারণ ঘটনা ঘটতে দেখলে এ নিয়ে বড় রকমের হৈচৈ বাধিয়ে দিতো। এই খবর পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে শুনিয়ে সারা শহরেই হয়তো চাউর করে দিতো ব্যাপারটা। কিন্তু মিস ফেল্পস এসবের কিছুই করলেন না। তার বিচারবুদ্ধি আর অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছিলো যে নিজের চরকার তেলটা নিয়ে ব্যস্ত থাকাই সবচেয়ে মংগলজনক। আর বিশেষত অন্য কারো বাচ্চাকাচ্চার ব্যাপারে নাক গলানোর অভ্যাস থাকলে বেশিরভাগ সময়ে পৈত্রিক নাকটা নিয়েই টানাটানি পড়ে যায়। তাই তিনি কোন ঝামেলাতে না গিয়ে বরং মাটিল্ডার বই পড়ার দিকটাতেই খেয়াল রাখতে লাগলেন।
মাটিল্ডা একদিন বই সম্পর্কে আলোচনা করতে এলো তার সংগে, “হেমিংওয়ে সাহেবের অনেক কথাই আমি তেমন বুঝতে পারি না। বিশেষ করে মহিলা আর পুরুষ সম্পর্কে তিনি যেসব কথা বলেন। কিন্তু ওইসব বাদ দিয়েও তার বই পড়তে খুব ভাল্লাগলো। তিনি এমনভাবে গল্পটা বলেন যেন সবকিছু ঠিক আমার চোখের সামনেই ঘটছে।“
“একজন ভালো লেখকের লেখা পড়লে সবসময় তোমার এইরকম অনুভূতিই হবে। আর এটা ওটা বুঝতে না পারলেও ওসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামানোর দরকার নেই। বই পড়া হচ্ছে অনেকটা গান শোনার মতোই। আরাম করে বসে তুমি নিজেকে শব্দের জগতটাতে হারিয়ে যেতে দেবে।“
মাটিল্ডা কিছু বুঝলো কি বুঝলো না সে বোঝা গেলো না, কিন্তু সে খুব আগ্রহে মাথা নেড়ে বললো, “আচ্ছা, ঠিক আছে।“
মিস ফেল্পস এবার জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, তুমি কি জানো যে আমাদের পাঠাগারে বসে বসেই যে তুমি শুধু বই পড়তে পারো, তা না! তুমি ইচ্ছে করলে একটা বই পছন্দ করে সেটা ধার করে বাসায়ও নিয়ে যেতে পারো।“
“সে তো আমি জানতাম না। কিন্তু আমি কি বই ধার নিতে পারবো?”
“অবশ্যই! তুমি যে কোন বই পছন্দ করে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তখন আমার রেজিস্টারে বইয়ের নামটা টুকে নেবো আর তারপর সেই বইটা দুই সপ্তাহের জন্য তোমার হয়ে যাবে। তুমি চাইলে একটার বেশি বইও নিতে পারো।“ মিস ফেল্পস বুঝিয়ে বললেন। যদিও মাটিল্ডার লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ার ব্যাপারটা দেখতে তার ভালোই লাগতো তারপরেও বাচ্চা মেয়েটার একা একা এতোদূর আসার ব্যাপারটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। আর নাক না গলিয়েও যে একটা সমস্যার সমাধান করা যায় এটা তার চেয়ে ভালো আর কে জানতো!
তারপর থেকে মাটিল্ডা সপ্তাহে শুধু এক বা দুইবার লাইব্রেরীতে আসতো পুরানো বই জমা দিয়ে নতুন বই নেয়ার জন্য। তার ছোট্ট শোবার ঘরটাই এখন হলো তার পড়ার ঘর। অলস দুপুরগুলো সেখানেই বসে বই পড়তে পড়তে কাটিয়ে দিতে লাগলো মাটিল্ডা। মাঝে মধ্যে তাদের সংগী হতো এক মগ গরম চকোলেট দুধ। রান্নাঘরের এটা ওটা নামানোর মতো অতো লম্বা হয়নি সে এখনো। কিন্তু এইসব জরুরী সময়গুলোর কথা ভেবেই উঠোনের ঘরটাতে সে একটা ছোট বাক্স রেখে দিয়েছিলো। সেই বাক্সটা রান্নাঘরে এনে তার ওপর উঠে দাঁড়ালেই হাতের নাগালে চলে আসতো সবকিছু। বেশিরভাগ সময়ে মাটিল্ডা চকোলেট দুধই বানানো হতো। দুধটাকে একটা হাঁড়িতে গরম করতে হতো চকোলেট মিশানোর আগে। কখনো হয়তো চকোলেট না দিয়ে বভ্রিল কিংবা ওভালটিনও মেশানো হতো। খালি বাড়ীর শান্ত দুপুরে দোতলায় নিজের ঘরটাতে চুপটি করে বসে গরম এক মগে চুমুক দিতে দিতে মজার কোন বই পড়ার মজাটাই ছিলো অন্যরকম।
বইগুলো ওকে ওর চারপাশের জগতটা থেকে নিয়ে যেতো অন্য এক নতুন পৃথিবীতে। সেখানে ওর পরিচয় হতো বিভিন্নরকম মানুষের সাথে, তাদের রোমাঞ্চকর জীবনগুলোতে ব্যস্ত। জোসেফ কনরাডের সাথে মাটিল্ডা ঘুরে বেড়াতে পারতো সেই আদ্যিকালের পালতোলা জাহাজে করে সমুদ্র থেকে সমুদ্রে। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ওকে নিয়ে যেতেন আফ্রিকাতে। আর রুডিয়ার্ড কিপলিং পরিচয় করাতেন ভারত উপমহাদেশের সংগে। কোন এক ইংলিশ শহরে নিজের ছোট্ট ঘরটাতে বসেই মাটিল্ডা ঘুরে বেড়াতো সারা পৃথিবীজুড়ে।
চলবে ...
- নৃ
মন্তব্য
মিস ফেল্পসর মতো দিদিমনি যদি সব সব মাটিল্ডারা পেতো!
অনুবাদ ভালোই এগুচ্ছে।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
গল্পের বই পড়তে দেখলে আমাদের দিদিমণিরা যা করতেন সেটাই মনে পড়লো আপনার কমেন্টে ..
সংগে আছেন বলে অনেক ধন্যবাদ
বেশ মজা করে পড়ছি
চলুক
______________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
অনেক ধন্যবাদ
এই পর্বটি পড়ানো দরকার ছিল আমাদের স্কুলের ফেরদৌসী ম্যাডামকে। যিনি বিশ্বসাহিত্যের 'আজেবাজে' বই পড়ানোর দায়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গাড়ী স্কুলের সামনে আসতে দিতেন না।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
হাহা.. আহারে, আফসোস!
আমাদের স্কুলে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের লোকজন নিয়মিত আসতো.. মেম্বার ছিলো অনেক। মাঝে মধ্যে স্কুলের মাঠে মেলা দিতো। হেব্বি মজার
নতুন মন্তব্য করুন