জীবনে আঁতেল কম দেখিনি; কিন্তু আজ যা দেখলাম সেটাকে বোধ করি আঁতলামির চেয়ে বোকামী বলাটাই শ্রেয় হবে। ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য একটু পেছন থেকে আসি। দেশের বাইরে পড়তে আসার পর অনেক অদ্ভুদ অদ্ভুদ সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি- ওপেন বুক এক্সাম, টেক হোম এক্সাম, অনলাইন এক্সাম ইত্যাদি। পরীক্ষা ছাড়াও হাবিজাবি অনেক কিছুর কম্বিনেশানের পর পরিসমাপ্তি ঘটে এক একটি কোর্সের। যেমন গত সেমিস্টারে আমার একটা কোর্সে ছিল দশটা হোমওয়ার্ক, চারটা পেপার রিভিউ, একটা প্রজেক্ট, একটা সফটওয়্যার, দুইটা ওপেন বুক এক্সাম, একটা টেক হোম এক্সাম এবং একটা ফাইনাল এক্সাম! সবশেষে একটা প্রেজেন্টেশান জুড়ে দিলেও অবাক হতাম না। আর ওপেন বুক হলেও বইটির পুরুত্ব ছিল পাক্কা তিন ইঞ্চি, পৃষ্ঠা সংখ্যা আঠারশো। বুঝতেই পারছেন এই বই ওপেন আর ক্লোজড্ একই কথা! কাজের সময় কিছুই খঁজে পাওয়া যায়না। তো এবার এমনই এক স্ট্যাটিসটিক্স কোর্সে টেক হোম এক্সামের জন্য দেয়া হল দুই সপ্তাহ। পরীক্ষা অনলাইনে, এক এক করে তেইশটা প্রশ্ন আসবে। শেষ করলে মার্কস দেখা যাবে সাথে সাথেই। স্বভাবতই ডেডলাইনের দুইদিন আগে আমি বসলাম পরীক্ষা দিতে। কিছু পূর্বজ্ঞান, কিছু বই পড়ে আর কিছু বিশেষ উপায় অবলম্বন করে আমি দিনশেষে এক্সাম সাবমিট করলাম। পেলাম একশতে সত্তুর। বলা যখন শুরু করে দিয়েছি বিশেষ উপায়টাও বলে ফেলি তাহলে। যেকোন কিছুই গুগলে সার্চ করে দেখা একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই পরীক্ষা থেকে বের হয়ে হয়ে আমিও প্রশ্ন হুবুহু কপি-পেস্ট করে তুলে দিচ্ছিলাম গুগলে। ফলাফল অবিশ্বাস্য- একটা ফোরামে এই প্রশ্নগুলোই (চার-পাঁচটা) সমাধান করে দেয়া। স্ট্যাটিসটিক্স প্রায় সব ডিসিপ্লিনের স্টুডেন্টদেরই করতে হয়, তাই ইন্টারনেটে এর ব্যপ্তিও অনেক। পরে শুনলাম অনেক ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে সূত্রটির জনক স্বয়ং কোন এক ফোরামে বসে সবার সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছেন। তো ঐ ফোরামে পোস্টের তারিখ মিলিয়ে বুঝলাম আমার ক্লাসেরই কেউ একজন পরীক্ষার প্রশ্নগুলো পোস্ট করে উত্তর বের করে এনেছে। ট্যালেন্ট! কী সুন্দর দুই সপ্তাহ কাজে লাগিয়ে ফেলল। তবে না, আমার ব্লগ তাকে উদ্দেশ্য করে শুরু হয়নি। প্রফেসর আমাদের বলে দিয়েছেন যে আমরা যতবার ইচ্ছে পরীক্ষাটা দিতে পারবো। তার তো আর কষ্ট নেই, খাতা কাটছে কম্পিউটার। কিন্তু কাউন্ট হবে ডেডলাইনের আগে সর্বশেষ নম্বরটি। পরদিন আমি আবার পরীক্ষা দিতে বসলাম। কিছু ডাটা আর সূত্র কেবল এদিক সেদিক। এবার পেলাম আশি। নাহ্ আর দেয়ার ইচ্ছে নেই, বিশ্বকাপ-মুভি কত কাজ…
আজ সকালে ক্লাসে গিয়ে দেখি বৃদ্ধ প্রফেসর প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছেন। বললেন তোমাদের আনলিমিটেড চান্স দিলাম বলে এই কাহিনী করলা? আমরা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছি- ঘটনা কী! জানালেন কেউ দশবার, কেউ বিশবার পরীক্ষাটা দিয়েছে তাও মেনে নেয়া যায় যেহেতু সময় ছিল চৌদ্দ দিন। তাই বলে একজন চৌষট্টিবার দিবে? আমি ভাবলাম কানে ভুল শুনছি। নাহ্ আবারও বললেন- চৌষট্টিবার! এ কোন দেশে এলাম! সেই স্টুডেন্টই বা কোন দেশের? ক্লাস থেকে বের হয়ে আমরা কয়েকজন ব্যাপারটা আলোচনা করছিলাম। অনেকেই আমার মত দুইবার দিয়েছে। নব্বইয়ের উপরেও পেয়েছে কেউ কেউ। আমাদের কৌতুহলকে দমানোর জন্যই বোধহয় এক মহিলা নিজে থেকেই এগিয়ে এলেন আমাদের সামনে। বয়স পয়ত্রিশ তো হবেই। জানালেন ক্লাসে যার কথা আলোচনা হয়েছে তিনিই সেই স্টুডেন্ট! আমি প্রথমেই তার ধৈর্য্যের ভূয়সী প্রশংসা করে পরে জানতে চাইলাম যে এতবার ট্রাই করার পেছনে প্রেরণা (কারণ) কী ছিল। উনি যা বললেন সেটা বোধহয় পাঠকরা এতক্ষণে আন্দাজ করে ফেলেছেন। মাল্টিপল চয়েজে একবার ‘এ’ একবার ‘বি’ একবার ‘সি’ ইত্যাদি দিয়ে উনি সাবমিট করে যাচ্ছিলেন আর মার্কস দেখছিলেন যে কোন কম্বিনেশানে সবচেয়ে ভাল নম্বর আসে। নির্ঘাত প্রশ্নটাই পড়ে দেখেননি। যাই হোক বেচারী শেষ করলো পচাঁশি দিয়ে। শুরু করেছিলেন কত দিয়ে ওটা জিজ্ঞেস করতে মনে নেই। চৌষট্টি পর্যন্ত যেতে যেতে নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছিলেন নিজেও!
রিজভী
-------------------------------------
কেউ যাহা জানে নাই- কোনো এক বাণী-
আমি বহে আনি;
মন্তব্য
আমাদের ওপেন বুক পরীক্ষায় যার যতো খুশি যা খুশি (শুধু কম্পুটার ছাড়া) সব নিয়ে আসতে পারো। তবে ওপেন বুক এক্সামের মতো কঠিন জিনিস আমার জার্মান জীবনে কখনো দেখিনি। বিগত ২৫ বছরের প্রশ্ন এক করে কোথাও কোন রকমের সিমিলারিটি খুজে পাওয়া যায় না। প্রফেসরগুলো জিনিস এক একটা
শুনছি জার্মানীর পড়াশুনার পুরো সিস্টেমটাই নাকি অনেক কঠিন...
হা হা হা! মজার ঘটনা। কবে যে আমাদের দেশেও এমন পরীক্ষা চালু হবে। একটা স্ক্রিপ্ট মেরে ছেড়ে দেওয়া যেত তাহলে
আচ্ছা প্রথম প্যারা লাল রঙে হওয়ায় পড়তে বেশ কষ্ট হলো। নোটপ্যাডে কপি করে নিয়ে পড়েছি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমি পোস্ট করার সময় পুরোটাই ছিল একই ফন্ট আর ডীপ খয়েরী রঙ...সচলের সিস্টেম মনে হয় html code নিয়ে প্যাঁচ লাগায়ে ফেলসে...নেক্সট্ টাইম আর রঙ নিয়ে খেলা করব না
হা হা হা হা... দুনিয়ায় অনেক আজব চীজ আছে... এঁদের দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়...
এরকম একটা পরীক্ষা দেওয়ার চান্স পেলে মন্দ হয় না
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আসলেই মজা আছে...
হা হা
আমার তো মনে হয় বিন্যাস-সমাবেশের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে গিয়েই এই কাম ঘটছে।।
টোটাল প্রশ্ন কয়টা ছিলো? কয়টা করে অপশন? এই পাব্লিকই বা কোন দেশের?
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
এক্সাক্টলি এটাই ঘটছে...
তেইশটা প্রশ্ন- কিছু শুণ্যস্থান, কিছু মাল্টিপল চয়েজ (পাঁচটা করে)।
একটু আগে জানতে পারলাম এই পাবলিক খোদ আমেরিকার
হা হা, আম্রিকার পাবলিকরা আসলেই সেইরকম!
--শফকত মোর্শেদ
আগে শুধু শুনে আসছি, এখন নিজের চোখে দেখলাম...
হা হা হা...
আমি দুটো "ওপেন বুক এক্সাম" দেবার সুযোগ পেয়েছি। বেশিরভাগই ছিল "টেইক হোম কেইস স্টাডি"। যে দুটো ওপেন বুক এক্সাম দিয়েছিলাম তাদের কোনটিতেই বই খোলার সময় ও সুযোগ পাইনি। বইয়ের সাথে প্রশ্নের কোনরূপ সম্পর্ক আছে কি না সেটাই বুঝে উঠতে পারিনি।
কি মাঝি, ডরাইলা?
এখন আমার কাছে ক্লোজড্ বুকই ভাল মনে হয়...প্রশ্ন একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে থাকে...
আহা! কবে যে এসব সিস্টেম দেশে আসবে?!
~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
এখানেতো গ্রুপ স্টাডির রেওয়াজ নাই...দেশে টেক হোম দিলে কী অবস্থা হবে সেটা আমি আমাদের হলগুলার কথা মনে করলেই বুঝতে পারি। সব ছাত্র কোন একটা রুমে জড়ো হয়ে হুবুহু কপি পেস্ট মেরে দিবে...
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলছে আমেরিকায় গ্রুপ স্টাডির রেওয়াজ বেশ ভালো করেই আছে, তবে গ্রুপ এক্সামের বা চোথাবাজির রেওয়াজ তেমন নেই ।
একজন মানুষকে দেখে "আমেরিকানরা এমন" এই টাইপ তকমা দিয়ে দেওয়া বোধহয় ঠিক না
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
হমম্ আপনি ব্যাপরটা সুন্দরভাবে বললেন- এক্সাম-চোথাবাজির ক্ষেত্রে গ্রুপ হয়না...তবে হ্যাঁ একসাথে প্রায়ই লাইব্রেরীতে পড়তে বা হোমওয়ার্ক করতে দেখি...
টেক হোম বা ওপেন বুক এক্সাম পার করেছি। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ এক্সাম হল প্রফেসরের সাথে ডিসকাশন। এক্সামের নামে প্রফেসর খুব ক্যাজুয়ালি বলে " একদিন আমার রুমে চলে এস, আমরা কিছু সমস্যা নিয়ে আলাপ করব।" তারপর তার রুমে গেলে একটা প্রবলেম দিয়ে বলে তোমার এটা নিয়ে কি মত? এইবার তার শুরু হ্য় প্রশ্নবান । যদিও প্রশ্ন ঠিক ইন্টারভিউ এর মত না আলোচনা টাইপের, তবে প্রফেসরের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতার সাথে তাল মেলাতে গেলে খবর হয়ে যায়। ৩ঘন্টা আলোচনা করার প্রফেসর যখন বলে যে আলোচনায় ইফেক্টিভ কিছু বেরিয়ে আসেনি , আমাদের আবার বসতে হবে, তখন মনে হয় এর চেয়ে পানিতে ডুবে মরাও ভাল।
খাইসে!!! এইরকম কিসিমের পরীক্ষাও হওয়া সম্ভব? এইটাতো পুরা গুহায় গিয়ে ঢুকার মত...
কঙ্কী!!
হা হা হা...পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি!
তার উপর ওই কোর্সটা আমাকে নিতে হইছে আমেরিকায় আসার পর প্রথম সেমিস্টারেই...অনেক পেইন দিছে...
একবার না পারিলে দেখ শতবার এ ই মন্ত্র পড়ে বোধহয় মহিলা বড় হয়ে ছেন নিশ্চিত ।
ওলি
মহিলা আসলেই এক চিড়িয়া...আবার কী মনে করে নিজে থেকেই এসে বলছে যে আমিই সেই স্টুডেন্ট!
পড়তে পারছি না। খালি লাল লাল বাক্স দেখছি।
খুবই দুঃখিত...MS Word এ পেস্ট করে পড়তে পারেন...
=))
যাক্ মজা পাইছে অনেকেই দেখা যাচ্ছে...লেখার সময় সবসময় সংশয়ে থাকি যে আদৌ এটা নিয়ে লেখার কিছু আছে কীনা...
মজা পেলাম। কিন্তু রক্ত দিয়ে লিখলেন কেন বুঝলাম না
[বানান: অদ্ভুদ > অদ্ভুত, হল > হলো, ব্যপ্তি > ব্যাপ্তি, কৌতুহল > কৌতূহল, বেচারী > বেচারি ]
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অনেক ধন্যবাদ বানান ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য...আর html নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে এই অবস্থা...ভবিষ্যতে আর হবে না
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
______________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
এইটাই ত ভালো সিস্টেম। এক বৈঠকে সবার কি আর পারফরমেন্স ভালো হয়?
ওমের্তা
lol
নতুন মন্তব্য করুন