জ্যৈষ্ঠের শেষের দিক। সকালের রোদ তখনও পুরোপুরি অগ্নিশর্মা হয়ে উঠেনি। চারদিকের বাতাসে ¯িœগ্ধ শীতলতা। যে দিক দিয়ে যাচ্ছি সে দিকে রাস্তার দু’পাশে গাড়িগুলো ঠায় থেমে আছে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পথচারীরা। সবাই যেন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতির চলার পথে যেমন কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে না তেমনি বাধাহীন গতিতে চলছি আমরা। কোথাও মাঠ, কোথাও নদী কিংবা সবুজ গ্রাম। কখনও রোদ, কখনও নীল আকাশে কালো মেঘ, কখনও বা ঝুম বৃষ্টি। এরই মধ্যে ছুটে চলা। ইঞ্জিনের ধাক্কায় মৃদু দোলানী আর ছবির মতো বাংলার পথ প্রান্তর দেখা। এ রকম আনন্দ ভ্রমণ কি ট্রেন ছাড়া সম্ভব!
নীলফামারীতে এক বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত। আমরা তো মহাখুশি। নীলফামারী জেলার প্রাচীন এক দীঘির নাম নীলসাগর। এ নামেই আন্ত:নগর একটি ট্রেনের নামকরণ।
স্টেশনে কাঠাল পাকা গরমে বার কয়েক ঘাম গোসল দেয়া যাত্রীদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সবাই ট্রেনের অপেক্ষায়। মাঝে মধ্যেই মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে নানা নামের ট্রেনগুলোর আগমনের খবর।
সকাল ৮.২০ দিকে নীলসাগর যাত্রা শুরু করে নীলফামারীর উদ্দেশ্যে। বিমানবন্দর হয়ে টঙ্গী স্টেশন পেরিয়ে অল্প সময়ে ট্রেনটি জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনে এসে থামে।
শহর পেরোতেই রেল লাইনের দুপাশে আকাশচুম্মী বাড়িগুলোর ছাদে উড়ছে শত শত ভিন দেশী পতাকা। ব্রাজিল,আর্জেনটিনার ভিড়ে মাঝে মধ্যেই উকি দিচ্ছে ইটালী কিংবা ফ্রান্সের পতাকা।
আমাদের পাশে বসা ছোট্ট শিশুটি ট্রেনের জানালা দিয়ে নানা দৃশ্য দেখে আনন্দে চিৎকার করে উঠছে । তার আনন্দ দেখে আমাদের মনেও দোলা লাগে।
মৌচাক স্টেশন পার হতেই নীলসাগর নির্জন প্রকৃতির দিকে ছুটে চলে। যেখানে পথ নেই সেখানে আছে রেলপথ। দু’দিকে ঘন সবুজ শালবন। মাঝে মধ্যেই লাল মাটির ছোট ছোট ডোবা। প্রচন্ড গরমে নাক অবধি ডোবার পানিতে ডুবে আছে কয়েকটি মহিষ। দূরে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে শত শত খেজুর গাছ। খোলা মাঠের ওপরে নীল আকাশ। সেখানে সাদা তুলোর মতো মেঘের আচর। যেন কোন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক ছবি। ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইস্কোপের মতো করে দেখছিলাম মনপাগল করা এসব দৃশ্য।
ছোট্ট ছোট্ট ব্রিজগুলো নীলসাগর পার হচ্ছে বিকট শব্দে। কোথাও খোলা মাঠে গরু চড়ে বেড়াচ্ছে, কোথাও সবুজ গ্রাম, কোথাও প্রাণহীন নদী । দেখতে দেখতেই আমরা পার হয়ে যাই মির্জাপুর স্টেশন।
টাঙ্গাইলের মহড়া স্টেশনে এসে নীলসাগর হঠ্যাৎ থেমে যায়। একজন জানালো ‘লাইন ক্লিয়ার নাই’। মিনিট দশেকের মধ্যেই নীলসাগর আবার ছুটতে থাকে সামনের দিকে।
টাঙ্গাইল হয়ে ট্রেনটি যমুনা সেতুর পূর্বপাড়ের স্টেশনে সামান্য বিরতী দিয়ে আবারও এগোতে থাকে। সেতুর ওপর আসতেই যাত্রীসকল হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সেতু আর যমুনা নদী দেখায়।
লাহেড়ী মোহন স্টেশন পাড় হতেই চারপাশের দৃশ্য পাল্টে যায়। রেল লাইনের পাশে বড় বড় পাকুর গাছ। গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে আছে ক্লান্তজনেরা। দূরে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠে শত শত গরু চরাচ্ছে একদল রাখাল। ছোট্ট একটি খালের ব্রিজ পেরোতেই হঠ্যাৎ বক আর পানকৌড়িদের দেখা। ট্রেনের শব্দে এরা দলবেধে উড়ে যায় নিরাপদ আকাশে।
একটি স্টেশনের দিকে আমাদের নজর পড়ে নাম শরৎ নগর। এই লাইনের স্টেশনের নামগুলো বেশ অন্যরকম। গুয়েখড়া, চাটমোহর, মুড়াকুলি, আব্দুলপুর হয়ে আমরা চলে আসি নাটোর স্টেশনে। একদল যাত্রী হৈ হুল্লর করে নামছে। তাদের জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করছে আপনজনেরা। সবার চোখেমুখে আনন্দের রেখা। এ স্টেশন থেকে উঠছে এক দম্পতি। অশ্রুসজল চোখে হাত নাড়িয়ে তাদের বিদায় জানাচ্ছে প্রিয়জনেরা। হাঁসি কান্নার মানুষদের নিয়ে নীলসাগর চলতে থাকে আপনগতিতে।
মাধনগর, আত্রাই হয়ে সান্তাহার থেকে লাইন পরিবর্তন করে নীলসাগর ছুটতে থাকে তিলকপুর,জাফরপুর,আক্কেলপুর দিয়ে জয়পুরহাট স্টেশনের দিকে।
এ দিকটা তাল আর কাঠাল গাছে পূর্ণ। মাঝে মাঝে ছোট আকারের পুকুর। ট্রেনের জানালা দিয়ে দূরে নির্জন তালপুকুর দেখা যায়। মনে মনে ভাবি ইস! একবার যদি যেতে পারতাম ওখানটায়। ভাবনার মধ্যেই ভাবনা চাপা পড়ে। দৃশ্যের পরে দৃশ্য। এভাবেই চলতে থাকি।
হিলি স্থল বন্দরের ঠিক সামনে দিয়ে বিরামপুর হয়ে পার্বতীপুর এবং সৈয়দপুর হয়ে আপন গতিতে সন্ধ্যা ৬.৩০ এ নীলসাগর পৌছে যায় নীলফামারী। এ রকম ভ্রমণ কি ভোলা যায় কখনও!
- সালেক খোকন
মন্তব্য
বর্ণনা ভালো লাগলো। কিন্তু তারপর কী?
আর ছবি ছাড়া ভ্রমণকাহিনী পড়ে আরাম পাই না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আহা! ট্রেনভ্রমণ! পুরনো অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিরোনাম বেশ আকর্ষণীয়, পড়লাম, কিন্তু ওই যে নজরুল ভাই যে কথাটা বললেন, ছবি থাকলে আরো একটু বেশি ভাল্লাগতো...
_________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
ভাল লেগেছে লেখাটা । ছবি না থাকলেও প্রাকৃতিক পরিবেশটা কল্পনা করে নিতে অসুবিধা হয়না !
ওলি
oli
ভালো বর্ণনাই ছবির অভাব পূরণ করতে পারে। আপনার লেখাটা শেষদিকে যেন খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল মনে হল। তা হোক, ভ্রমণকাহিনী কড়তে ভালই লাগে।
বেশ ভালো লাগলো। কয়েকটা ছবি থাকলে অবশ্য আরেকটু জমতো, এই আরকি।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
নতুন মন্তব্য করুন