হঠাত্ বালিশ নিয়ে এতো গবেষণা কেন ? এর পিছনে একটা গল্প আছে ।
মাস দেড়েক আগে আমার ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল বিধায় সাত দিন যাবত্ আমাদের সিসিমপুর গোষ্ঠীর দেখা সাক্ষাত্ হয় না । ইকড়ি, শিকু, হালুমকে খুব মিস করছি । অসম্ভব খারাপ লাগছে ইকড়ির জন্য (ইকড়ি আমার একমাত্র বন্ধু, সবচাইতে কাছের জন । আমাদের বন্ধুত্বের কাছে গিলগামেশ আর এনকিদুর বন্ধুত্ব পাত্তাই পাবে না !) যেখানে এই পাগলটাকে একদিন না দেখলে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে, সেখানে সাত সাতদিন ওরে দেখি না ! গণিত পরীক্ষার দুদিন আগে কিছু অংক দেখিয়ে দেয়ার জন্য ইকড়িকে ফোন করলাম। মুখ্য কারণ যে ছিলো গণিতচর্চা করা না, তা সহজেই নির্ণয়যোগ্য। তো কথামতো চেরাগীতে বসে আধঘন্টা গণিতচর্চা হলো। পরের সাড়ে তিনঘণ্টা নগর পরিভ্রমণ এবং সাত দিনের জমানো কথা উদ্গীরণ করাতেই কেটে গেলো।
এক পর্যায়ে আমি অভিমান করে বললাম, "এই সাতদিন যে আমার কত কষ্টে গেছে আমি কাউকে বলতে পারবো না। তুই তো শান্তিতেই ছিলি। আমার যন্ত্রণা থেকে মুক্ত ছিলি।"
আমার কথার জবাবে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইকড়ি চর্তুগুণ বেশি অভিমানী কণ্ঠে বললো, "আমি কতটা শান্তিতে ছিলাম তা একমাত্র ঈশ্বর জানেন আর আমার কোলবালিশ জানে।"
আমি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, "মানে কী ?"
ও জবাব দিলো, "মানে হলো তোর সাথে কথা বলতে পারি না, তাই কোলবালিশটাকে তুই বানিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত কথা বলি আমি। বিশ্বাস হয় ?"
যতই ছেলেমানুষি হোক, এই কথাটা শুনে আমার মন কতটা যে ভরে গিয়েছিলো, তা একমাত্র আমার বিধাতা জানেন।
কাল রাতে হিমুব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমরা হাঁটছি। কথায় কথায় বললাম আমার ছোট মামার কোলবালিশপ্রীতির কথা । ও বিস্মিত হয়ে বললো, "উনি না বিবাহিত?"
"পিচ্চিকাল থেকেই মামা কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারে না। বিবাহিত হলে কি কোলবালিশ নিয়ে ঘুমানো যায় না নাকি ?" আমি ততোধিক বিস্মিত।
"কোলবালিশ প্রাণপ্রিয় হোক আর যাই হোক না কেন, বিয়ের পর কি কেউ কোলবালিশ নিয়ে ঘুমায় ?" আমাকে প্রশ্ন করলো ইকড়ি।
"তার মানে তুইও বিয়ের পর কোলবালিশ নিয়ে ঘুমাবি না?" আমার উল্টো প্রশ্ন ।
"অবশ্যই না। আমি কি পাগল ? বউয়ের চেয়ে কি কোলবালিশ বেশি প্রিয় নাকি ?" ইকড়ির নিরুত্তাপ জবাব।
"হুম...।" বলেই আমি চুপচাপ।
কিছুক্ষণ পর ইকড়ি বললো, "তুই হঠাত্ করে ফিউজ হয়ে গেলি যে!"
আমি বললাম, "ফিউজ না হয়ে কী করবো আর! তুই তো নিজেই বললি যে বিয়ের পর আর তুই তোর সবচাইতে কাছের বন্ধু এই আমাকে ভুলে যাবি। এরপর আর কি বলার থাকে আমার!"
"আমি আবার কই একথা বললাম !" বিস্মিত চিত্কার ইকড়ির।
"এতোদিন না কোলবালিশ ইকুয়েল টু আমি ছিলাম...রাতে নিশা রূপ কোলবালিশের সাথে তুই কথা বলতি...মানেটা কী দাঁড়ালো তাইলে?"
"ওফ ! তুই এতো প্যাঁচাইতে পারস ! আমার বউ হলো সিম্পল পেন্ডুলামের মতো, কার্নোর আদর্শ ইঞ্জিনের মতো। বাস্তব অস্তিত্ত্ববিহীন।"
"এগুলান বাইক্যা কথা। আট দশ বছর পর ঠিকই বিয়ে করবি তুই। অর্থাত্ আমাদের বন্ধুত্ব মাইনাস, তোর সংসার প্লাস।"
"তোর কি বিশ্বাস হয় যে আমি কখনো বিয়ে করবো ? এসব চিন্তা বাদ দে। নিতান্তই যদি পরিস্থিতি বাধ্য করে বিয়ে করতে, তবে..."
"তবে কী?"
"তবে বিয়ের এক বছরের মাথায় ট্রাকের তলে পড়বো । আর যদি তাতেও তুই বাধা দেস, তবে..."
"তবে কী?"
"তবে আর কী ! কোলবালিশটাকে বুকে নিয়ে বনবাসী হবো!"
"তোর বউ?"
"বউ তো এক নম্বর রুটের বাস টেম্পু রাইডার। একটা গেলে একটা আসবে। আর তুই তো বন্ধু, হাজার জন্মের সাধনায় একটা পাওয়া যাবে। বুঝতেই পারছিস!"
"ভালোই মিথ্যা বলতে পারস। ব্রেভো, বয়!"
"আমি মিথ্যুক?"
"দুইশ পার্সেন্ট!"
এবার ইকড়ি চুপ।
"কিরে, কী হলো তোর ?" কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলাম।
"যে তুই আমার এতো কাছে থেকেও আমাকে চিনতে পারিস নি, তুই আমার কাছে কতটা বেশি তা বুঝতে পারিস নি, সেই তোকে কী হয়েছে তা বললে কীভাবে বুঝবি? আমার ভেতরটা দেখতে পারলে বুঝতি। তোকে যতই বলি তুই বিশ্বাস করবি না। তুই অতিরিক্ত হৃদয়হীন।"
ওরে ওরে ওরে! গাধাটার চোখে পানি কেন!!
আমি আমি গরুই বা কাঁদি কেন!!!
আচ্ছা, স্ক্রু-টা কি আমার বেশি ঢিলা নাকি আমার বন্ধুর?
মন্তব্য
বালিশ কাহিনী পড়লুম...
অনে চিটাইঙ্গে ফাল্লার।
_________________________________________
সেরিওজা
লেখকের নাম কী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভাল লাগলো ।
ওলি
oli
এমন লেখা প্রতিদিন করে লিখতে হয়ে । নইলে ভাসা ভাসা ভাবের এই প্রকাশ পরবর্তি লেখা আসতে আসতে কেটে যায় । তবে প্রখম পর্ব বেশি উপোভোগ করেছি এই পর্ব করিনি তা নয় কিন্তু .........
পরে লিখতে থাকুন ।
সুহান বদ্দা, আঁই চাটগাঁইয়াই বটে ! ঐতিহাসিক চেরাগী চাটগাঁ ছাড়া আর খনডে আছে ? আঁন্নেও কি ?
নজরুল ইসলাম ভাইজান, এই অধমের নাম নিইইইইইইশাআআআআ ।
ওলি, ভালো লাগলো পড়ে ভালো লাগলো । লজ্জালজ্জাও লাগতাছে...বুঝেনই তো... হেঃ হেঃ ।
প্রখর-রোদ্দুর, আপনার নামটা সুন্দর । জটায়ুর রহস্য রোমাঞ্চকর সিরিজের সুপারম্যান প্রখর রুদ্রের কথা মনে করিয়ে দিলো । লেখাটার আকার একটু বড় বড় লাগলো বিধায় দুই পর্বে পাঠানো । বড় লেখা পড়তে যদি বিরক্ত লাগে, তাই । ভালো লাগলো শুনিয়া আনন্দে ডিগবাজি খাইতে ইচ্ছা করিতাছে !
সবশেষে আমার গুরুদেবকে কহিতাছি, যে হারে মোর হার্টবিট মিস হইতাছে, কখন যে হার্টটা ফেল করে ! ফেল করিলে মিষ্টির বদলে পাওনা এক্সপ্রেসো কফিটা লইয়া হাসপাতালে দেখিতে আইসসেন মোরে । আর ফেলের পর যদি improvment দেয়ার সুযোগ না থাকে, তবে কফির সাথে সাথে ন ও লাগিবে । তবে তা আপনাকে কিনিয়া দিতে হইবে না । কেবল...বুঝতেই পারছেন !
নতুন মন্তব্য করুন