পাহাড় ঘেরা ক্যাম্পাস। সতেজ সকাল। ঝিকঝিক সুরে ছুটে আসে শাটল ট্রেন। এক নিমিষে মুখর হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ক্লাস। একঘেয়ে লেকচার। সেমিনার। লাইব্রেরি। টিওটোরিয়াল। মনোযোগ নেই কোথাও। দেখানো হাসি। দেখানো সুখ। দেখানো উচ্ছাস। একটু একটু করে বদলে যাওয়া। আমি কিংবা অন্যের। অথবা দুপক্ষেরই।
দুপুরের শেষে বাড়ি ফেরা। আবার বাইরে। এ কাজ, সে কাজ। টিউশন। পত্রিকা অফিস। বেগার খাটা। অহেতুক আড্ডা। লাভের হিসাব অপূর্ণ। ক্ষতির ভাগও শূণ্য। পাওয়া-না পাওয়ার দোলাচল। কখনো হঠাৎ দ্যুতি! হাতের কাছে সব পাওয়া! তবু হাত বাড়ানো যায় না। ছুঁয়ে দেখা হয় না।
সন্ধ্যায় নীড়বন্দী। রাজ্যের ক্লান্তি ডানা ঝাপটায়। এটাই বোধহয় চিরকালের সঙ্গী। কাগজ কলম বন্ধু আমার। জরুরি এসাইনমেন্ট। সম্পাদকের তাগাদা। মন লাগে না কাজে। তবু মন লাগাতে হয়। পড়ায় না বসে মন, না বসুক। লেখায় যে মন তোকে বসতেই হবে। আমি আর আমার মন, দুটো দুদিকে। মাঝখানে এ্যাসাইনমেন্ট। হঠাৎ মন বসে যায় লেখায়।
মনোযোগ ভাঙে তারযন্ত্রটির তারস্বরে। বন্ধুর টেলিফোন।পরিচয় গোপন। হেঁয়ালি কিছুক্ষণ। আমার লেখা গল্পের এক চরিত্র সেজে বসে বন্ধু। বলে,হতে পারি না আমি?
না, আমার জীবন গল্প নয়। গল্পের কোনো কিছু আমার জীবনের অংশ নয়। মৃদু রাগ বন্ধুর কন্ঠে। রাগারাগি। ভালোবাসি। বন্ধু পরস্পর বন্ধুই আছি। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্কের নাম বন্ধুত্ব। তবু বন্ধু প্রেমিক হতে চায়! আমার কাছে অসহনীয় লাগে প্রেমের সীমাবদ্ধতা। বন্ধু কষ্ট পায়। আমি নিরুপায়।
রাত গড়ায়। ভাবনার ডালপালা বেড়ে ওঠে। গেল মাসে শুরু করা গল্পটা এখনো শেষ করা হলো না। নিঝুম রাত্রির বয়স বাড়ে। বাড়ন্ত এই রাত্রির বয়স কত হতে পারে,ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ঘরের দেয়াল কিংবা টেবিলে কোনো ঘড়ি নেই। একমাত্র হাত ঘড়িটি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছে কদিন হলো। নতুন একটা ঘড়ি কিনতে হবে। কিন্তু হাতে কোনো টাকা নেই।
পত্রিকায় কয়েকটা ফিচার লেখার বিল জমা আছে। কিন্তু টাকার কথা বললেই অফিসের হিসাবরক্ষক সাহেব এমনভাবে তাকান, মনে হয় যেন পূর্বের ধারের টাকা ফেরত না দিয়ে পাওনাদারের কাছে পুনরায় ধার চাইতে এসেছি!
অসমাপ্ত গল্পটা আর এগোয় না। গল্পটা থাক তোলা। গল্পের তাড়া নেই। তাড়া আছে ড্রয়ারে জমা চিঠিগুলোর। উত্তরের অপেক্ষায় পত্রপ্রেরক। ড্রয়ার থকে দু’আঙুলের চাপে চাপে বেরিয়ে আসে কিছু চিঠি। ভেসে ওঠে পুরনো একটি চিঠি। ধবধবে সাদা কাগজ হলদে বর্ণ ধারণ করেছে। শেষ লাইনটি চোখে পড়তেই হঠাৎ চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে....
‘আমার অনিশ্চিত জীবনের নিশ্চিত নিশ্চিন্ত আশ্রয় তুমি’
ভুল স্বপ্নের মাসুল দিতে দিতে একটা জীবন ক্ষয়ে যায়। জীবনের বসবাস অনিশ্চয়তায়। প্রাণের বসবাস অপূর্ণতায়। আমি আমার অপূর্ণতাগুলো নিয়ে ছুটছি স্বার্থপরের মত। পেছনে পড়ে রয় সাধের পুস্পরেণু। প্রজাপতির দেখা পায় না তারা। উড়ে যায়। হারিয়ে যায়। হারায় সব সাধ। সব আহ্লাদ!
হৃদ্যতায় ভরা চিঠিগুলো পড়ে থাকে। আমার আর জবাব লেখা হয় না। হবে না কখনো্! ‘হয় না’ এই বাক্যটি জীবনে এতবার আসে,আর কোনো কিছুই বুঝি এতো বেশিবার আসে না জীবনে!
মন্তব্য
ভালো লেগেছে। নিয়মিত লেখা পড়তে চাই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ধন্যবাদ। নিয়মিত লেখার ইচ্ছে রইলো।
সুমিমা ইয়াসমিন
- বিষণ্ণতায় ভরা!
ঝরঝরে, ঝলমলে, উজ্জ্বল লেখা পড়ার প্রত্যাশা রাখলাম।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঝরঝরে, ঝলমলে, উজ্জ্বল কোনো লেখা কীভাবে লেখা যায়,তাই ভাবছি...।
সুমিমা
আপনার সাথে কোথায় যেন আমার মিল পেলাম
ভালো থাকবেন...আরো অনেক অনেক অনেক লিখবেন
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।
বেশ লাগলো, যদিও বিষন্নতায় ভরপুর ... চালিয়া যান ...
===============================================
ভাষা হোক উন্মুক্ত
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
ধন্যবাদ। বিষন্নতা! কী যে করি...
সুমিমা ইয়াসমিন
ভালো লাগল। চালিয়ে যান।
___________
ত্রিমাত্রিক কবি
ধন্যবাদ।:-)
বিষন্ন ভালবাসা। ভাল লেগেছে।
অনন্ত
মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো।:)
palash ranjan sanyal
ভাল লাগল। 'হয় না' সুন্দর শিরোনাম।
স্বপ্নদ্রোহ
আনন্দিত হলাম! ধন্যবাদ।
দিলেন তো ভোরের কাগজের সেই হিসাবরক্ষকের (এখন নাম মনে করতে পারছি না) কথা মনে করিয়ে। তার কাছে প্রদায়কগিরির পাওনা টাকা চাইতে গেলে এমনভাবে তাকাতেন, যেন টাকা ধার নিতে গিয়েছি।
আচ্ছা, আপনার নামটা চেনা চেনা লাগছে। আপনি কি পাঠক ফোরাম অথবা বন্ধুসভায় লিখতেন?
পান্থ,আমার নামটা মনে রেখেছেন বলে কী যে ভালো লাগছে!
সুমিমা ইয়াসমিন
'পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্কের নাম বন্ধুত্ব। তবু বন্ধু প্রেমিক হতে চায়!' - এই সহজ সত্যিটা কেন যে বোঝে না অনেকেই...
'আমার অনিশ্চিত জীবনের নিশ্চিত নিশ্চিন্ত আশ্রয় তুমি' - এরকম করে বলতে পারে যারা, তাদেরকে আমার হিংসে হয়।
বহুদিন পর কোনো লেখার পুরোটাই এতো ভীষণভাবে ছুয়ে গেলো...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শিমুল,বহুদিন পর ভীষণ অনুপ্রাণিত হলাম! ধন্যবাদ এবং ধন্যবাদ।
সুমিমা ইয়াসমিন
ভাল লেখা ।
ধন্যবাদ।
সুমিমা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ
গল্পটা ভালো লেগেছে।
ও তাই!
সুমিমা
......................................................
ভালো লাগছে সুমী তোমাকে এখানে দেখে । সচলায়তনে স্বাগতম ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
সুপান্থ,আবার পুরনো মানুষগুলোর সাথে......
ভালো লাগছে আমারও।
আপনার লেখাটাকে 'ভালো' বলতে গিয়ে নিজেরই বলা কিছু কথা সবার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেয়ার দায় চেপে বসল। 'দায়' টা আমি নিলাম।
এহসান,এত ঘুরিয়ে বললেন! ধন্যবাদ।
সুমিমা
দু পাশে ইষৎ চ্যাপ্টা হলে ও দুনিয়াটা আদতে গোল- তাইনা সুমী?
এই লেখা সেই প্রস্তর যুগের
আমাদের চকমকি পাথরের দিন...
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হাসান,আপনিই প্রথম আমাকে সচলায়তনের লিংক পাঠিয়েছিলেন,সেই কবে!
আমাদের সেই প্রস্তর যুগ....চকমকি পাথরের দিন.....! কে পারে এভাবে মনে রাখতে!! কী যে ভালো লাগছে,আমি বোঝাতে পারবো না!
চমৎকার!!
বন্ধুসভায় আমিও আপনার লেখা পড়েছি..
সচলায়তনে স্বাগতম আপু।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথীডোর,আপনি আমার লেখা আগে পড়েছেন জেনে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন