আমি 'মার-দিও-না' বলচি। আমি এখুনো ভামোস ভামোস আর-জিতি-না ফুটবল দলের বল ম্যানেজার আচি। আমার দল বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে অসময়ে বিদায় নিয়েচে। শুনেচি অনেকেই আনন্দে বিজয় মিচিল করচেন। আমি নিজেও বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায়ে অনেকেরই কোলে গিয়ে উঠেচিলুম। আর এতে দোষেরই বা কী আচে!
কিন্তু যারা আমাকে নিন্দোচ্চেন তাদেরকে একটু পেচনে তাকাতে বলি। ঈশ্বরের হাত এবং আমার পা দিয়ে আগেও আমি বিশ্বকাপ ফুটবলে অনেক অঘটন ঘটিয়েচি। ইস্তক বিশ্বকাপও নিয়েচি। এইবার হয়তো পারি নাইক্কা। হেরে গেচি। হেরে গেলেও আমি অনেক জায়গায় শান্তির বাতাস বইয়ে দিতে পেরেচি। প্রকৃত পক্ষে, আমিই এবারের 'নোবল শান্তি পদক'-এর আসল হকদার। যাক, সে কথায় একটু পরে আসচি।
কুনো কুনো মুখফোঁড় বলে, আমার দুইটা কঠিন ব্যামো আছে—খোঁড়ামো আর ত্যাড়ামো। কিন্তু তারা জানে না এগুলা আমার জন্মগত ব্যামো। এবং এই ব্যামোগুলারে আমি বিয়াফক ভালু পাই। একটা খোঁড়া টিম নিয়াও আমি ছিয়াশিতে কাপ নিচি। নব্বুইয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আবারও নিয়েই ফেলেচিলুম প্রায়! হায়! কোডেসালীয় কূটচালে ঈশ্বরের হাত সেইবার গুটিয়ে নিতে হয়েচে। এইবার আমি নিজে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটেচি। কিন্তু বিশ্বকাপের টিকিট ঠিকই নিয়ে ছেড়েচি।
ইস্তক আমার দল এবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠে গিয়েচিল! কেনু, এইটা কি কম কথা? আমার মতো একজন কোচিং অ-বিশেষজ্ঞ ম্যানেজার নিয়েও 'আর-জিতি-না' টুর্নামেন্টের এতদূর পর্যন্ত গিয়েচে। এ তো শুধুই ঈশ্বরের কৃপামাত্র নয়। আমার খোঁড়ামোর ভূমিকা তাতে অনেকখানি—এ আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।
আর ত্যাড়ামো? তার গুণগান আর কত গাইব! এইবার তো আমার ত্যাড়ামোর কারণেই শান্তি আইচে কুনো কুনো জায়গায়। শুনেচি জার্মানির সেই বল বয়টারে ‘নোবল শান্তি পদক’ দেয়ার কথা-বার্তা চইলচে। আরে, ‘নোবল শান্তি পদক’ তো সবার আগে আমার পাওয়া উচিত। আমি ত্যাড়ামো করে তারে বল বয় বলেচিলুম। আর সে কিনা খেলতে নেমেই গোল দেয়া শুরু করল, তাজ্জব! এইসব বল বয়গুলা আর বলই দিল না আমগোরে। ইয়ার পেচনে নাকি সেই অপমানই দায়ী। সেই অপমানের উচিত জবাব তারা দিচে। ভালু কথা। কিন্তু আমি তাগোরে বল বয় না বইললে কী অইত? পারত তারা আমাগোরে গোল বন্যায় ভাসায়া দিতে? তারা চেতচে, জিতচেও। আমরা হারচি, তাই শান্তির মায় বাইচা গেচে। সেই কথা তো কেউ বলে না?
যাউক গা। আশা চিল জার্মানির বল বয়গুলারে এইবার অন্তত হোতায়া ফালামু। একটু গরম করার জন্য 'আর-জিতি-না'র বল ম্যানগুলারে কত করি (ইয়াক! আমি গে না কিন্তু) চুমালাম। কিন্তু হায়, কিচুতেই কিচু হলো না! হেরে গেলুম। কথায় আচে না ঈশ্বরের মাইর, দুনিয়ার বাইর। বলেচিলুম কাপ নিতে পারলে নেংটু অয়ে দৌড় দিব। কিন্তু এখন আমি বোধ হয় ঈশ্বরের ইচ্চে বুঝতে পেরেচি। তিনি চান না তাঁর নামধারী কেউ দুনিয়ায় নেংটু অয়ে দৌড়ুক।
আমার ইচ্চে চিল জুলাইয়ের এগারো তারিখে বিশ্বকাপটা ঈশ্বরের হাতে (অ, বলিনি বুঝি? ঈশ্বর আমার আরেকটা নিক-নেম!) দিব। দিয়ে, কাপটাকে চুমু খাব। ভুভুজেলার মোহন বাঁশি বাজবে। তার সুরে সুরে আমি নেংটু হয়ে দৌড়ুতে শুরু করব। কিন্তু কী থেকে কী অয়ে গেল! অখন আর আমি ভুভুজেলার বাঁশি ভালু পাই না। শুনলেই কান্দন আয়ে।
আমি কি তখন ভেবেচিলাম জার্মানির ওই বল বয়গুলা এভাবে গোল দিতে শুরু করবে! একটি নয়, দুটি নয়, গুনে গুনে চারটি গোল! এই চারটি গোল না আমার ক্যারিয়ারকেই চাট্টিগোল করে দেয়, কে জানে! কাপ তো পেলুমই না, অহেতুকভাবে খেলা শুরু হতে না হতেই নেংটু হয়ে গেলুম!
তাই, আমি অখন শান্তির সাদা পতাকা ওড়াতে চাই। ওরে আমার ভক্ত-আশেকান, কে কোথায় আচিস তোরা! তাড়াতাড়ি শান্তির সাদা পতাকা তোল। ওটাই না হয় পেঁচিয়ে দে আমার গায়ে! আমার জাতটা তো আগেই গিয়েচে। এবার অন্তত আব্রুটা তো বেঁচে থাকুক!
অফ-টপিক : 'মার-দিও-না'র এই শান্তি-স্পিচটি স্বপ্নে প্রাপ্ত। জীবিত, মৃত বা বিবাহিত (মানে অর্ধন্মৃত) কারও সাথে মিল পাওয়া গেলে কাকতালীয় বলে বিবেচিত হবে।
কুটুমবাড়ি
মন্তব্য
কার্টুনের সোর্স উল্ল্যেখ না করে কার্টুনটি সচলায়তনে প্রকাশ করা ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে লাল-মডুর এই মন্তব্যটি লক্ষ্য করুন।
প্রিয় লাল-মডু, আমি সত্যিই দুঃখিত। ছবিটি সচলায়তনেরই একটি পোস্টের মন্তব্য থেকে নিয়েছিলাম, সে কারণেই হয়তো অতটা গুরুত্ব দেইনি ব্যাপারটাকে। ভবিষ্যতে সচেতন হবো আশা করছি।
পোস্টটিকে নীড় পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হলো কেন জানতে ইচ্ছা করছে। যা হোক, পোস্টটির বিষয়বস্তু যদি কাউকে আঘাত দিয়ে থাকে তাহলে পোস্টটি মুঝে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। পোস্টের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে আমার মতামত নিচে আলাদা মন্তব্যাকারে দিয়েছি।
ধন্যবাদ।
কুটুমবাড়ি
ফুটবল নিয়া মাতামাতি ভালো কিন্তু খোঁচাখুঁচি ভালোনা।
এ ধরণের পোস্ট ভবিষ্যতে না দেওয়াই ভালো।
প্রদর্শিত কার্টুনটা আমার এক মন্তব্যে ছিলো, ম্যারাডোনার সাপোর্টার দের কষ্ট না দিতে আমি সেই মন্তব্য থেকে আগেই সরিয়ে নিয়েছিলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু হাসি পেল না। এই ব্যাপারগুলো এখন আর ফানের পর্যায়ে নেই। তেতো লেবু হয়ে গেছে। দুঃখিত।
ম্যারাডোনার অনেক দোষ। লোকটা নেশা করত। দুর্বিনীত। হাত দিয়ে গোল দিয়েছে।
আরো দোষ, সে মাঝারি মানের দল নিয়ে বিশ্বকাপ জিতে গেছে। আরেকবার জিততে জিততে শেষ পর্যন্ত পারেনি।
সবচেয়ে বড় দোষ সে আবেগ দিয়ে খেলাটা খেলত, খেলা ছাড়ার পর ও সেই আবেগ নিয়েই আছে।
তবু খেলাটা হয় ভরা স্টেডিয়ামে, যেখানে শুধু বোদ্ধাদেরই প্রবেশাধিকার থাকেনা। সাধারণ মানুষ খেলাটাকে হৃদয় দিয়ে উপভোগ করে, তাকেই তারা নিজের করে নেয়, যে তাদের আবেগকে নাড়া দিয়ে যায়। তাই ওই ফালতু লোকটাকে কেন জানি তাদের খুব আপন মনে হয়। হাজার যুক্তি সাজিয়ে, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেও তারা বুঝতে চায়না।
আমিও ঠিক বুঝিনা, ওই লোকটাকে এত পাত্তা দেয়ার কী আছে!
সজল
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মাতামাতি এমনেই ভাল্লাগেনা। তার উপর এই খুঁচাখুঁচি পোস্ট আরো খারাপ লাগল।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
কুটুমবাড়ি ভাই, জিনিসটা ঠিক জমল না। ব্যক্তিকে খোঁচানোর পর্যায়ে চলে গেল যে।
কোনো ব্যাপার না, শিগগিরই একটা সুন্দর পোস্ট ছাড়েন।
এটা একটা নিতান্তই ফান পোস্ট। সবাই এত সিরিয়াসলি কেন নিলেন বুঝতে পারলাম না। ব্যক্তি ম্যারাডোনাকে সবাই পছন্দ করেন, আমি নিজেও তার ব্যতিক্রম নই। যে ম্যারাডোনার জন্য নব্বুইয়ে কেঁদেছি পর্যন্ত, তিনি তাঁর ভক্তদের বিষয়ে কতখানি সচেতন? তাঁর অনেক আচরণে বা কথাবার্তায় লজ্জিত না হয়ে উপায় থাকে না, অথচ তিনি নির্বিকার। ক্রমাগত অঘটন ঘটিয়েই যাচ্ছেন, তাঁর পর্বতসম অর্জনও ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যাচ্ছে নিজের তৈরি করা ধুম্রজালের আস্তরণে।
আর্জেন্টিনা এখন আর একটি খোঁড়া টিম মাত্র নয়। দুই বার বিশ্বকাপজয়ী একটি টিমের পক্ষে তা হওয়াটা শোভনও নয়। ম্যারাডোনা আদর-সোহাগ দিয়ে হয়তো এই টিমটিকে একতাবদ্ধ করতে পেরেছিলেন, কিন্তু বিশ্বকাপ জেতার জন্য এইটুকুই যথেষ্ট ছিল না। ম্যারাডোনাকে কোচ হিসেবে যোগ্যতা প্রমাণের দায়িত্ব বা সুযোগ কোনোটাই আগে দেয়া হয়নি। ঠিক বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কতটুকু প্রয়োজন ছিল? যারা ম্যারাডোনার প্রকৃত ভক্ত (আমার মতো) তারা এ কথাগুলো ভেবে দেখবেন আশা করি।
কুটুমবাড়ি
আসলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ড্রাবিং ডিফিটের পরে ব্রাজিল-ভক্তরা অতি সংবেদনশীলতা দেখাতে গিয়ে হয়তো ফান-টা মিস করেছেন। আমার কাছে ততটা খারাপ লাগেনি।
তবে এটা ঠিক যে বিষয়গুলো অনেক পুরনো। তবে পুরনো জিনিস নিয়েও ফান হয়।
পোস্টটা প্রথম পাতা থেকে কেন সরে গেল সেটা মনে হয় একটু ব্যাখ্যা করার দরকার ছিল, কমপক্ষে একটা মন্তব্যে বললে হতো যে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হলো (মডুদের সেই অধিকার/সুযোগ আছে)। নাহলে ভুল-বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে।
প্রথম পাতা থেকে এই পোস্টটি সরিয়ে নেয়াটা আমার কাছে বিভ্রান্তিকর লাগছে। যদি পোস্টের বিষয়বস্তু/কার্টুন আপত্তিজনক হয় তাহলে তা মুছে ফেলাই ভালো ছিল (আমার একটুও আপত্তি নেই তাতে)। আর যদি তা না হয় তাহলে জানতে পারলে হতো পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হলো কেন।
কুটুমবাড়ি
আপনি একটু অপেক্ষা করুন অথবা contact এ্যাট সচলায়তন.কম এ একটা মেইল দিতে পারেন।
হয়তো কোনো কারণে ব্যাখ্যা আসতে দেরি হচ্ছে... একটু অপেক্ষা করে দেখি আগে।
কুটুমবাড়ি
নতুন মন্তব্য করুন