আমার দিবারাত্রি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৭/০৭/২০১০ - ৭:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

=== অনন্ত ===

ঘরের তাপমাত্রা সবসময়ই সত্তরে এ ফিক্সড করে রাখি। সত্তর মানে আবার আমাদের দেশের সত্তর ডিগ্রি সেলসিয়াস না, আম্রিকার ফারেনহাইট। বাংলাদেশেরটা হলে খবরই ছিল। আমি যে বাসায় থাকি এখানে বিদ্যুতের বিল নিয়ে আমাকে ভাবতে হয় না। এটা আম্রিকাতে চরম বিরল। তাই আমি আমার মত করে তাপমাত্রাকে টানা হেঁচড়া করি। এতে যা হয়েছে, এখন একটু গরম পড়লেই অস্বস্তি লাগে। ওরে বাউরে, হেতেনে ওঁনি আমেরিকান হই গেছন। আসলে দোষ আমার না, দোষ এই বিদ্যুতের বিল না দেয়ার দুর্বার সুযোগ। এ নিয়ে অন্য কোনো দিন আরেক গপ্প না হয় ফাঁদা যাবে।

এই সামারে আমার এখানে তাপমাত্রা বাংলাদেশের মত হলেও আদ্রতা নাই, তাই তেমন অস্বস্তি লাগে না। তবে এই তাপও সরাসরি গায়ে লাগলে মনে হয় যেন গা পুড়ে যায়। অথচ এই আম্রিকানরা গায়ে তেমন কিছু গায়ে না দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমি মনে মনে বলি এখানে দেখানোর কিছু নাইরে। পারলে বাংলাদেশে গিয়ে দেখা। তবে যে লাভ হয় তা হল স্বল্প বসনা বালিকাদের খুব কাছ দেখে দেখা যায়। মনা বলে এদের দিকে একবারের বেশি তাকাসনে। আমি বলি আমার ভিতরে একটু বেশি জোরে হাওয়া বয়। এরে একটু ঠান্ডা করা লাগবে। আমি বালিকাদের দেখি। এদের হৈ হুল্লোর দেখি। এদের রং বেরং এর পোশাক দেখি। এদের উচ্ছ্বাস দেখি। এমনিতেই ভিতরটা ভাল হয়ে যায়। মনা আর কথা কয় না।

সেদিন বিকেলের দিকে হাঁটতে গিয়ে দেখি তিন জন বালিকা সাইকেল চালাচ্ছে। তার মধ্যে কাল রঙ এর টপ্স পরা মেয়েটিকে মনে হয় দলপতি। সে একদিকে যেতে যেতে হঠাৎ করে অন্যদিকে যাচ্ছে। বাকি দুই জন তাকে ফলো করছে। আমি হাঁটা থামিয়ে কিছুক্ষণ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকি। না আমি মুগ্ধ হয়ে মেয়েটিকে দেখছি না, আমি তার সাইকেল চালানোর অবাধ স্বাধীনতাকে দেখছি। সে তার ইচ্ছামত যেদিক খুশি সেদিকে যাচ্ছে। এই রাস্তার মাঝ দিয়ে যাচ্ছে, আবার ডানে গেল, কিছুদূর গিয়ে বামে, আবার রাস্তার মাঝে। মজার ব্যাপার হল কিছু গাড়ী এসে থেমে আছে। যেতে পারছে না, নাকি তারাও আমার মত দর্শক? আমার মনে পড়ে যায়, আমি যখন সাইকেল চালাতে শিখি, সে জায়গায় তখন কোন বসতি ছিল না। আমি আমার মনের মত করে সাইকেল চালাতাম। হঠাৎ খুব জোরে চালাতাম, আবার হঠাৎ থেমে যেতাম। মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে চালাতাম। আবার হঠাৎই বাঁয়ে চলে যেতেম। চলতে চলতে গাছে খুব সুন্দর নাম না জানা পাখি দেখতাম, কিন্তু থামতাম না। হয়ত সেই পাখি আমাকে অবাক হয়ে দেখত কিন্তু আমিই হারিয়ে যেতাম। একেই হয়ত বলে স্বাধীনতা। মেয়েটিকে দেখে আমার সেই কথা মনে পড়ে গেল। আবার খুব সাইকেল চালাতে ইচ্ছা করছে।

আমার ফিরতে প্রায় রাত হয়ে যায়। এমন না যে আমি সারাক্ষণ পড়াশোনা করে ক্লান্ত পায়ে ফিরছি। আমি রাতের পাখি। রাত আমার খুব প্রিয় মুহূর্ত। গভীর রাতে রাস্তায় গিয়ে রাতকে যে না দেখেছে সে বুঝবে না, কী গভীর ধ্যানমগ্ণ হয়ে কে যেন নিশ্চুপ হয়ে সারা আকাশ জুড়ে বসে আছে। এখানে আমি প্রায় গভীর রাতে মাঝ রাস্তা দিয়ে হাঁটি। ঢাকার রাস্তাতেও আমার রাতে হাঁটতে ইচ্ছা করত কিন্তু উদোম হয়ে কে বাসায় ফিরতে চায় বলেন? তবে জানালা খুলে দিলে কী অসাধারণ এক ঘ্রাণ বাতাসের সাথে আসত! আমি এই ঘ্রাণকে পাওয়ার জন্যই রাতের রাতের পর জ়েগে থাকতাম। কিন্তু আম্রিকায় এটা পাইনি। তারপরও আমি মাঝ রাতে হেঁটে হেঁটে আকাশের তারা দেখি। এখানে তারা গুলো পরিস্কার দেখা যায়, যদিও আমি কোনো তারাই চিনিনা এক কালপুরুষ ছাড়া। এখানে এখনো কালপুরুষ খুজে পাই নি; হয়তবা সবগুলোই কালপুরুষ।

অতপর সকল আয়োজন শেষ করে ঘুমাবার যখন হয় প্রবল প্রয়োজন, আমাকে ফিরতে হয় বাসায়। আমার ঘুমের প্রতি একটা বিশেষ দুর্বলতা আছে। একবার একঘুমে বারো ঘন্টা কাটিয়ে, উঠে কিছু খেয়ে আবার ছয় ঘন্টা। দেঁতো হাসি তবে এখন সুপারভাইজার মহাশয়ের জন্য ঠিকমত ঘুমাতে পারছি না। ইদানিং সকালে উঠে ল্যাবে গিয়ে তার সুরুত মোবারক দেখতে হচ্ছে। তবে যেতে যেতে বালিকাদের দেখা যাবে এটা একটা স্বান্তনা। শেষ মেষ ঘুমানোর একদম আগে তাপমাত্রাকে সত্তরে নিয়ে আসি। এই গরমে আমি কম্বল গায়ে দিয়ে শীতঘুম দিই।

=== === ===
aunontoঅ্যাট ইয়াহু ডট কম


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনি রাস্তার আলোতে তারা দেখলের কিভাবে? ওখানে নিশ্চয়ই অনেক অন্ধকার তাহলে, তাই? আমার মনে পড়ে এখানে এ্যস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশনের তারা-দেখার একটা প্রোগ্রাম হয়েছিল। শহর থেকে ৫০কিলো দূরে একটা ন্যাচারাল পার্কের ভিতরে লেকের ধারে-- যাতে তারাগুলো দেখা যায়। শহরের আলোর কারণে তো তারা দেখা সহজ নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ পিপিদা,

আমি যেখানে থাকি সেটাকে তারা তাদের ভাষায় বলে "মোর রুরাল দ্যান সাব আর্ব।" হাসি এখানেও রাস্তায় আলো আছে। এই আলোর জন্য ঠিক মত তারা দেখা যায় না। তবে মাঝ রাতের দিকে দেখেছি রাস্তায় কিছু দূর পর পর আলো জ্বালিয়ে বাকি গুলো বন্ধ করে দেয়। হয়ত এনার্জি সেইভ করে। এ এলাকায় ক্রাইম বছরে একটা কি দুইটা হয়। তাই মাঝ রাতে, যে পাশে আলো নাই সেদিক থেকে তাকালে, প্রায় পরিস্কার তারা দেখা যায়।

অনন্ত

কেমন সুর [অতিথি] এর ছবি

লেখার স্টাইলটা ভাল লাগলো ... আপনার প্রবাস জীবন নিয়ে একটা সিরিজ শুরু করে দেন না ...

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, কেমন সুর!

সিরিজ লেখার ইচ্ছে আছে, তবে হয়ত নিয়মিত না। হাসি
ভাল থাকবেন।

অনন্ত

সায়মা এর ছবি

লিখাটা আমার পছণদ হয়েেছ

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, সায়মা।
ভাল থাকবেন।

অনন্ত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।