আমার দিনলিপি...০৪.০৭.১০

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১১/০৭/২০১০ - ৬:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেতন পেয়ে সোজা পলাশী।
গত মাসখানেক ধরে এই হোটেলে আমার নিত্য রাত-ভোগ, আহারের পরিমাণ একই-মূল্যমান ১৪ টাকা।
মোর্শেদ (ডাকি মুর্শেদ) আর এক পিছ ছেঁকা নান দিয়ে গেল।
রুটিটাকে দেখতে ঠিক চাঁদের মত লাগছে, মূলত ফুটোগুলোর কারণে। একদিক একটু পোড়া। মাগনা তো আর সুকান্ত বলে নাই, " পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।"
পকেট ভারী, তবুও আমি ১৪ টাকাই খাব। তিন নান এক ভাজি। ভাজি আবার এক সেটিং-এ তিনবার দিবে।
পাশে নীলক্ষেত থেকে আমায় নিয়ে আসা মহিউদ্দি চাচা। ভাজিতে তার চলে না, ডালই তাই সই।
সারাদিন সার্ভে করে এমনিতেই ক্লান্ত, তারপর দুপুরে আজ বাসায় যাইনি। পরিবার কর্ম পালন করেছি।
এই মুহূর্তে একগাদা লেখা'র চিন্তা মাথায় ঘুরছে। মাথায় খালি ঘোরে লেখা আর হয় না। কবে যে লিখবো!
আসলে মনে মনে যখন ভাবি, ভাবনা শেষই হতে চায় না।
আর লিখতে গেলে??? এ যেন...মা গঙ্গা কেবল গেল শুকিয়ে।
সার্ভে করতে গিয়ে আজ মজার মজার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। দুদিন ধরে মিরপুর রোডে জরিপ করছি যানবাহনের। প্রথমদিন তেমন একটা ঘটনাবহুল ছিলনা, কারণটাও সহজ। গতকাল ট্রাফিক কস্টিউম বা জ্যাকেট পড়ি নাই, তাই লোকজন বোঝেও নাই কি করতেছিলাম। যেকারণে হুদাই হুদাই আইসা ভোদাই-এর মত কোন প্রশ্ন করে নাই। মাঝখান দিয়ে জ্যাকেট না পরায় যে ক্ষতিটা হইছে তা হল স্যাররা এসে আমাদের খুঁজে পায় নায়। ধরে নিছে আমরা ফাঁকি দিছি।
সে যাই হোক। সকালে উঠেই দৌড়। তিনদফা দাঁড়াতে হবে। ৮-১০;১-২;৪:৩০-৬:৩০, জায়গা ধানমন্ডি আটের মাঠের মাথায়।
তো কালকের মত আজকেও গেলাম টাইমমত। জুবায়েদ যথারীতি আগে এসে হাজির, ব্যটা আসে উত্তরা থেকে। বাসা থেকে বের হয় সাড়ে ছয়টায়, আটাটার জায়গায় সাড়ে সাতটায় পৌঁছে যায়।
ধানমন্ডি মাঠের বাউন্ডারী ভাঙ্গায় একদিক থেকে আমাদের দুজনের লাভই হইছে, আমরা গিয়ে বসে বসে সার্ভে করি।
বসে থাকলেও মাথা আর চোখ ঠিকই দৌড়াচ্ছে। কারণ গাড়ির কোন সীমা পরিসীমা নাই অন্তত আমার দিকের গুলার। দুজন দুদিকের গাড়ি গুনছি। একবার তো ৫ মিনিটের মধ্যে ৬৮ টা রিক্সা ,২৬ টা গাড়ী আর অন্যান্য আরও ২০ যান গেল ঐটুকু চিপা রোড দিয়ে।
বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে গেলে উঠে দাঁড়ালাম। বডির রক্ত সঞ্চালন দরকার। তো যেখানে সার্ভে করছিলাম সেখানে একখান খাম্বা আছে, খাম্বার আশেপাশে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখি খাম্বায় "নো রিক্সা" সাইন। রিক্সা গুনতে গুনতে আমি শেষ, এরপর যদি এই জিনিস দেখি তাইলে কেমন লাগে। একেবারে গাছের চিপায় পড়ছে বিধায় খাম্বাটা দেখা যায় না।
এখন এক ট্রাফিক পুলিশ ছিল যারে কইলাম, যে এই রোডে তো রিক্সা নিষেধ।ব্যটা কয় কে বলছে। বললাম সাইন বোর্ডটা দেখেন। ব্যটা দেইখ্যা আইসা তো বেকুব, কয় যে সেও জানতো না এখানে এই রকম কোন সাইনবোর্ড আছে।
ব্যটা আর আমাদের কাছ থেকে নড়ে না। কি করি, কই পড়ি, বাড়ি কই দুনিয়ার তাবত জিনিস জিগায়।
কইলাম, কইতে কইতে ক্লান্ত হইলাম। ব্যটা তাও থামে না।
শেষে যখন সাড়াশব্দ দেয়া বাদ দিয়া দিছি তখন ব্যটা মহাউদ্যমে আশেপাশের রিক্সাগুলান তাড়ানো শুরু করে। আমি আর জুবায়েদ চাইয়া চাইয়া দেখি।
খাওয়া শেষ। হাত ধুঁয়ে বের হয়ে আসি হোটেল থেকে। এসে মহিউদ্দি চাচার রিক্সায় বসি।
আশেপাশে একগাদা রিক্সা। সবাই খেতে আসছে, রাতের খাবার। এদের কেউ উত্তরবঙ্গের, কেউ দক্ষিণের, কেউবা এখানকারই। যে যেখানকারই হোক ক্ষুধা সবার লাগে, খাবার সবাইকেই খাইতে হয়। ধর্ম, গন্ধ, বর্ণ নির্বিশেষে।
মহিউদ্দি চাচা বাইরে আইসা বিঁড়ি ধরায়, লগে পানির বোতল। নিজে খাইয়া আমারে বোতলটা দেয়। মনে পড়ে সারাদিনে পানি পান করি নাই।
মহিউদ্দি চাচা উত্তরবঙ্গের, বাড়ি শিবতলা নওগাঁ। আইছে রিক্সা চালাইয়া কিছু কামাই করতে। থাকে কারওয়ান বাজারের সামনে বিশাল রোড ডিভাইডারটার উপরে।
প্রায়ই উত্তরা থেকে আসার পথে এদের দেখি। একসাথে অনেকগুলো বিশালাকার ঝুড়ি। ঝুড়ির মাঝে ঘুমিয়ে আছে এক একটা মানুষ। পাশ দিয়ে শয়ে শয়ে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। দেখতে কেমন জানি লাগে। এদেরকে জিজ্ঞেস করলে কি জানা যাবে, কোন বাঙ্গালি নোবেল পেয়েছে, কোন বাঙ্গালি হিমালয় জয় করেছে?
চাচা আবার ক্ষ্যাপ মারতে বের হবে। আমি নেমে পড়ি রিক্সা থেকে।
পকেটে হাত দিয়ে উঁচু ভাবটাকে অনুভব করি। কত কি যে হবে এই টাকা দিয়ে, এই করবো ঐ করবো।
আচ্ছা যদি টাকাটা হারিয়ে যায়?কি হবে?
ভাবতে ভাবতে দেব’র বসার নিচে এসে পড়ি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
দেব’রা আজ আড্ডা দিবে না। জানিয়ে দেয় ইন্টারকমে।
আমি হাঁটা ধরি বাসার দিকে।
বাসায় গেলেই রাজ্যের সাংসারিক চিন্তা আকড়ে ধরে। আর ভালো লাগে না।
আর কত এমন কষ্ট করবো?শারীরিক+মানসিক।
সেই স্কুল জীবন থেকে শুরু শেষের কোন নাম গন্ধ নেই।
সেদিন সচলে কোন এক লেখায় পড়লাম এক বড় ভাইয়ের দেশত্যাগের খবর। কারণ নতুন কিছু না, তার ‘ধর্ম’।
লেখাটা পড়ে স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেল।
#
ক্লাস এইটে থাকতে প্রথম “মালোয়ান” কথাটা শুনি। তাও আমাকে কেউ দেয়নি, দিয়েছিল অভিজিৎকে। আমার সহপাঠী।
অভিজিৎ মাথা নিচু করে এসেছিল ধর্ম ক্লাসে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করায় উত্তর দিল,
"আমাকে মালোয়ান বলেছে।"
আমি জানতাম না মালোয়ান কি, কাদের বলা হয়। জানার কথাও নয়। আমার মা-বাবা কোনদিন আমাকে কোন গালি শিখাননি, আজ পর্যন্ত না। ইদানীং যা দেই তাও নিজের গুণে।
অভিজিৎ বললো ,"হিন্দুদের গালি দিয়ে মালোয়ান ডাকা হয়।"
আমি বুঝিনি কেন ডাকা হয়, কি কারণে ডাকা হয়। রেগে গিয়েছিলাম সাথে সাথে। গিয়ে কলার চেপে ধরেছিলাম ছেলেটার। শুধু বলেছিলাম,"আর কোনদিন শুনলে হয়।"
সেদিন থেকে শুরু। আমি এককোণে বাকী সবাই আর এক। হয়তো এই কারণে অভিজিৎ, প্রদীপদের দেশ আজ ভারত।
হয়তো এই কারণে খেলার মাঠে আমি একা খেলেছি, যদিও অভিজিৎ ভালো গোলকীপার ছিল আর প্রদীপ? ও ডিফেন্সে দাঁড়ালে গোলকীপারের কাছে বলই যেত না।
কেন যে যাইনি??গেলে হয়তো খেলার মাঠে হারার দোষ একা আমার ঘাড়ে আসতো না, সবাই এসে আমাকে গালি দিত না। আর আমি খেলার মাঠে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তাম না।
কেঁদেছি, অনেক কেঁদেছি, স্কুল থেকে এসে, কোচিং থেকে ফিরে, সহপাঠীদের সাথে খেতে যেতে না পেরে অনেক কেঁদেছি। কেউ জানতো না তা, কেউ না।
একবার ফারহানা ম্যাডাম কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তুমি এখানে আছো কিভাবে?"
আমি সামান্য হেঁসে বলেছিলাম "থাকতে যে হবেই ম্যাডাম।"ম্যাডাম এখন ইস্ট ওয়েস্টে। মাঝে মাঝে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করেন কেমন আছি।

কতদিন ভেবেছি আমি আসলে কি, মানুষ, বাঙ্গালি, হিন্দু না মাইনোরিটি??
পরে জেনেছি আমি আসলে হিন্দু।
কেননা সহপাঠীকে বাঁচাতে যখন ১৪০ জন ছাত্রের মধ্যে একজন যায়, ১২ বছরের চেনা পরিচিত মুখগুলো গায়ে একটা একটা করে আঁচড় কাটে, যখন আশপাশের অভিভাবকরা তামাশা দেখেন, যখন সেই সহপাঠীটিও ভুলে যায তাকে বাঁচাতে যাবার কথা, যখন ক্লাসে শিক্ষক এই নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে তখন বুঝি আমি আসলে 'হিন্দু'।
ভাগ্যিস সেটা মেট্রিক পরীক্ষার মাত্র মাস খানেক আগের ঘটনা, নাহলে কিভাবে প্রমাণ করতাম যে আমি আসলেই হিন্দু "আরে, হিন্দুরা এমনিতেই মাংস কম খায়, তার উপর নিরামিষ, মাথা ঠাণ্ডা তো হবেই।"
পরীক্ষা দিয়ে পরের ছয়মাস খালি ঘুম, সাঁতার আর ঘুম। মা জানতো না তেমন কিছু, বাবা তো অসুস্থ হয়েই ছিল। আমি খালি সকালে উঠেছি, মাঠে গিয়ে একটু ফুটবল খেলেছি আর ঘন্টার পর ঘন্টা সাঁতার কেটেছি। আর ভুলবার চেষ্টা করেছি সব। যাইনি কোন সহপাঠীদের আড্ডায়, যাইনি কোন অনুষ্ঠানে, এমনকি রেজাল্টের পর সংবর্ধনাতেও। চাই নে ওসব, কি হবে ও দিয়ে?
তবে একটা জিনিস হয়েছিল কিছু না করে। আমার যে একটু মানসিক সমস্যা আছে এটা সবাই ধরতে পেরেছিল। সমস্যাটা হল আমি গালি খেয়েও ওদের সাথে মিশতে পারলাম না, মার খেয়েও ওদের বন্ধু বলতে পারলাম না, বাকী সবাই পেরেছে!!!
এরপর থেকে আমি একা...
তারপর কলেজ জীবন......
ভাগ্যিস এই রকম একটা কলেজে ছিলাম। ভাগ্যিস সোহাগ ছিল ওখানে।
কলেজ জীবন পুরোটা যে আমায় ভাইয়ের মত আগলে রেখেছিল সে হল সোহাগ। ও না থাকলে হয়তো মানুষের ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে যেত। কারো বন্ধু হতে হয়তো হাজারবার ভাবতে হত।
সোহাগ এখন চায়নায়, অনেক দূরে। কাছের মানুষগুলো কেন যে এত দূরে দূরে থাকে?ছেলেটাও কম কষ্ট করেনি।
কলেজেও যে কিছু ছিল না যে তা নয়। কলেজে ছিল গ্রাম্য আর শহুরে এক বিবাদ। প্রায়ই দেখলাম গ্রাম থেকে আসা নিরীহ ছেলেদের নিয়ে তথাকথিত শহুরে ছেলেরা হাসি-ঠাট্টা করছে। যদিও তা পরিমাণে সামান্য।
স্কুল জীবনের ভূত তবুও পিছু ছাড়েনি, কোচিংগুলোতে দেখা হতো। আর হতাম হাসির পাত্র। হবই না বা কেন? পরনে যদি মলিন বস্ত্র থাকে তবু একটু কথা তো শুনতেই হবে। শুনতে হয় কিভাবে তারা ১২-১৪ জন মিলে আমার সাথে বীরত্ব দেখিয়েছিল।
#অদ্ভূত না অভিজ্ঞতাগুলো???অদ্ভূত হলেও ফিলিংস সবার একই, যন্ত্রণা সব এক। কান্নাও ইদানীং আর আসে না, রাগ তো নয়ই।
এসব না হলে কি হতো জানেন??অনেক কিছু হত। অনেক কিছু, এদেশ আর এদেশ থাকতো না। অন্য কিছু হয়ে যেত।
বাসার সামনে এসে গেছি, গা পুরো ভিজা। সারা শরীর ক্লান্ত, বল নেই একফোঁটা। তবু যে থামা যাব না। অনেক কিছু প্রমাণের আছে অনেক কিছু। কারণ...
আমি যে......

পলাশ রঞ্জন সান্যাল


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এমনিতে আপনার লেখা খুবই আগোছালো। ফরম্যাটিং ঠিক নেই, আলোচনা কোথায় শুরু কোথায় এসে থামছে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। কিন্তু ধর্ম সংক্রান্ত কথাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল।

চট্টগ্রামে থাকা কালীন আমাদের এক গৃহশিক্ষক ছিলেন। আমার আব্বা হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ করেন না দেখে হিন্দু শিক্ষকই রাখলেন। হয়ত চাইছিলেন এই ধর্মীয় ভেদাভেদের ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে থেকে যেন সরে যায়।

এই শিক্ষক একবার আমাদের পড়াতে আসার সময় শিবির-লীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়েন। ধাওয়া থেকে বাঁচতে গিয়ে উনার পা ছিলে যায় কিভাবে যেন। আমি তখন ক্লাস এইট বা নাইনে। পড়তে বসে দেখি উনার ব্লিডিং হচ্ছে। আমি উঠে গিয়ে স্যাভলন নিয়ে লাগিয়ে দিলাম উনার পায়ে। কিন্তু খুব অবাক হলাম উনার প্রতিক্রিয়া দেখে। উনি একেবারে কেঁদে ফেললেন।

যে মুসলমান ছেলেরা সকালে বিকালে তাকে পিছন থেকে কুৎসিত শব্দটা বলে, সেই মুসলমান ঘরেরই একটা ছেলে তার পায়ে স্যাভলন দিয়ে দিচ্ছে এই ব্যাপারটা তাকে খুব নাড়া দেয়। ঠিক তখনই আমি বুঝতে পারলাম বাঙ্গালী জাতি কিভাবে মাইনরিটিকে অপ্রেস করে রাখে।

আজ যে দেশে থাকি সেখানে আমিও মাইনরিটি। আশুতোষ চক্রবর্তীর বারো বছরের পুরোনো কষ্ট তাই আজ আমাকেও তাড়া করে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

মুর্শেদ ভাই, নিজে অগোছালো, লেখা কেমনে গোছালো হবে? তবু চেষ্টা করি।
লিখতে কেন জানি ভাল লাগে, ভাল হোক খারাপ হোক লিখি। বেশি খারাপ লাগানো উদ্দেশ্য ছিল না, অনেকদিনপর কথাগুলো মনে পড়ল তাই লিখলাম।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

বাউলিয়ানা এর ছবি

লেখা ভাল লাগছে হাসি

বিশেষ করে প্রথম অংশটা সত্যিকারের দিনপঞ্জির মত লেগেছে।

লিখতে থাকুন।

স্পর্শ এর ছবি

মন খারাপ হলো খুব। এত দেখেছি, এত সয়েছি... মন খারাপ


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

গৌতম এর ছবি

আপনি কি প্রতিদিনই এমন দিনলিপি লিখেন?

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

যেদিন সময় হয়।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কিন্তু আমাদের এলাকার সুমন, সঞ্জয়, বিজয়, তাপস-এরা চলে গেলো কেনো? এরা তো অনেক প্রতাপশালী ছিলো। স্কুলে, রাস্তায়, এলাকায় কেউ কখনোই তাদেরকে কিছুই বলে নাই। আমরা তো সবাই একই সঙ্গে ঈদ করছি, পূজা করছি, স্কুল করছি। তারপরেও কেনো তারা ভারতে গিয়ে বাড়ি করলো? বাংলাদেশ কি তাদের দেশ না? তারা কেনো ভারতকে গিয়ে নিজের দেশ বানানোর চেষ্টা করলো?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশ ছেড়েও কি ওরা ভালো আছে? বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যায় তারাও ওখানে মাইনোরিটির মত ব্যবহার পায়। তাছাড়া এটা এক কমন মিসকনসেপশন। "ধর্ম এক হলে মানুষ ভাল হবে।"
আর নামের তো একটা গন্ধ আছেই, হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে। ইমিগ্রেশনে যেমনটা হয়, নাম দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
আর একটা জিনিস চিন্তা করুন, আপনি যখন আশেপাশে দেখবেন একজন মানুষ তার ধর্মের কারণে সাফার করছে তো আপনার মেন্টালিটি তো একটু হলেও চেঞ্জ হবে, যতই আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করা হোক। মাথায় আসবে আপনার সাথেও এমন একদিন হতে পারে। এসব রিজন থেকেই ভারত প্রীতি তৈরি হয়।
আসলে মনে হয় কোথায় গিয়েও শান্তি নেই।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ঠিকই বলেছেন, আমি অন্তত দুইটা কেস জানি যারা ওখানে গিয়ে চরম অশান্তিতে পড়েছে। অবস্থা হয়েছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।
পাড়ার গোটা দশেক ক্লাবকে চাঁদা দিতে হয় নিয়ম মাফিক। রেশন কার্ড পাবে, এই আশায় হাজারে হাজারে রুপী ঘুষ দিয়েছে, দিচ্ছে। কিন্তু প্রত্যাশিত রেশন কার্ড সোনার হরিণ হয়েই রয়ে গেছে। আরও আছে মেয়েদের প্রতি বখাটেদের 'সেরকম' চাহনী।

এই কথাগুলো যখন কেউ হতাশার সাথে বলে, আমি কী বলবো বুঝতে পারি না। কেবল একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়। করুণা হয় তার জন্য।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

গৌতম এর ছবি

এই প্রশ্নটার উত্তর আপনি কখনোই অনুভব করতে পারবেন না। এটা বলা খুবই সহজ যে, 'তাদেরকে কিছুই বলে নাই'; কিন্তু অনুচ্চারিত অনেক ইঙ্গিতও উচ্চারণের চেয়ে ভয়াবহ হয়। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েও এগুলো জাস্টিফায়েড করা যায়, কিন্তু সেগুলো বাহুল্য বলেই ভাবি। শুধু নামের কারণে নানা হিডেন প্রেসার সহ্য করতে হয়। ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যদের সেগুলো উপলব্ধি করা কঠিন। নির্বাচনের আগে ও পরের আঘাতগুলো সহ্য করতে করতে দেশ 'কিছু মানুষকে' জানিয়ে দেয় আইনগতভাবে সুমন, সঞ্জয়, বিজয়, তাপসরা এদেশের মানুষ হলেও তাদেরকে নিয়তি ভিন্নভাবে ট্রিট হওয়া। রাষ্ট্র যখন আইনগতভাবে একটি ধর্মকে ভিত্তি করে এগোয়, তখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেউ যদি এখনও অন্য কোথায় বসবাসের জায়গা খুঁজে নেয়, সেটাকে দোষ দেয়া যায় না। আগে সুযোগটা ছিল শুধু ভারতে যাওয়া, এখন সেটার বদলে মানুষ ডিভি খোঁজে, অন্য দেশে গিয়ে শ্রমিক হয়ে থাকার চেষ্টা করে। 'ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা' শুধু আয় করতে বা চাকরি করতে অন্য দেশে যায় না, নিজেদের নিরাপত্তাও তাদের একটি কনসার্নের বিষয়- এটা আমরা অনেকে ভাবি না।

তাই তারা কেন ভারতকে নিজের দেশ বানানোর চেষ্টা করলো সে প্রশ্নের উত্তর শুধু তাঁদের দিক থেকে না খুঁজে বিপরীত দিক থেকে খোঁজাটাও জরুরি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত গৌতম ভাই।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ওরে, বাদ্দে... অঈসব আজাইরা পোলাপানের কথায় মন খ্রাপ করিস না...

... দুনিয়ায় ভালো মানুষের সংখ্যাই এখনো বেশি...

_________________________________________

সেরিওজা

অতিথি লেখক এর ছবি

... দুনিয়ায় ভালো মানুষের সংখ্যাই এখনো বেশি...

মনে প্রাণে বিশ্বাস করিতে চাই।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

লেখার শুরুর অংশটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল। শেষটা আবার একেবারেই ভিন্ন। বন্ধুত্বের কথায় খালি বলতে পারি সবাই একরকম নয়, ভাল খারাপ দুইয়ে মেশানোই দেখেছি। নিজের কথা অন্তত বলতে পারি কোন দিন পার্থক্য করবার ব্যাপারটা খেয়ালই হয় নাই সেভাবে। আবার কোন স্থানে সংখ্যালঘু হবার নির্মম চাপটাও ঐ ছেলেবেলাতেই হজম করে ঠেকে শিখবার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আরো অবাক হয়ে শিখেছি যে সবাই একরকম নয়, সবাই আমার মত করে চিন্তা করে না!
আমার ব্যাক্তিগত অভিমত হল পরিবর্তন তখনই আসবে যখন আমরা নিজেরা পরিবর্তিত হব, প্রত্যেকে, একে একে। আমার আচার-ব্যাবহার, কাজ দেখে শিখুক না শিখুক অন্তত ভাবতে শুরু করবে আমার কাছের জনেরা, আমার ছোট-বড়রা, আর তা থেকেই পরিবর্তন হবে একজন দু'জন করে। ভাল থাকুন, বিশ্বাস রাখুন, আর আরো বড় কথা নিজের বিবেকের কাছে যতক্ষণ পরিষ্কার আছেন, কখনোই নিজের অবস্থান থেকে সরে না দাঁড়ানোর সাহস হারিয়েন না, সেই ছোটবেলার মতই। দুনিয়াতে আসলেই এখনো ভাল মানুষের সংখ্যাই বেশি। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই তাই। ঠিক বলেছেন ভাইয়া।

ভাল থাকুন, বিশ্বাস রাখুন, আর আরো বড় কথা নিজের বিবেকের কাছে যতক্ষণ পরিষ্কার আছেন, কখনোই নিজের অবস্থান থেকে সরে না দাঁড়ানোর সাহস হারিয়েন না, সেই ছোটবেলার মতই।

আছি, থাকবো।
আর সত্যি বলতে কি সোহাগ, সুহানদের মত মানুষদের সাথে পরিচয় না হলে হয়তো আমার মন মানসিকতা অন্যরকম হত।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।