রোজ নামচা।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৪/০৭/২০১০ - ৭:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকালে মোবাইল ফোনের প্রথম এ্যালার্মের শব্দে সাইড পরিবর্তন। দ্বিতীয় এ্যালার্মের শব্দে উঠে বসা। দু'হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে চোখ ঘষতে ঘষতে বাথরুমে প্রবেশ। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া। শেভ করে গোসল সেরে নাস্তার টেবিলে বসে দু'একটা বাটার মাখানো পাউরুটির স্লাইস মুখে ভরে পানি পান। ল্যাপটপের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে অফিসের গাড়ি ধরার জন্য দৌড়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা, সেই সুযোগে দাঁড়িয়ে ঘোড়ার মত হালকা ঝিমানো।

গাড়িতে উঠে সীটে হেলান দিয়ে ঘুম। রাতের অসম্পূর্ণ ঘুমটার পুর্ণতা দেয়া। সহকর্মীর গুতায় ঘুম থেকে উঠা। অফিসের লিফটের জন্য সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো।

ল্যাপটপটা ডেস্কে রেখে ওয়াস রুমের দিকে দৌড়। হালকা হয়ে মুখ ধৌত কর। ল্যাপটপটা অন করে সচলায়তনে লগইন করা। (লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড যাথারীতি guest_writer/ guest। তারপর এক কাপ চা অথবা কফি নিয়ে পত্রিকায় চোখ বুলানো। কিছু দুঃসংবাদ পড়া, কলিগদের সাথে সেই টপিক নিয়ে কিছুক্ষণ বাকচিত। তারপর কাজ মনোনিবেশ। বসের সাথে মিটিং, পার্টিদের সাথে ফোনালাপ। মাঝে মাঝে সচলায়তনের মজার মজার লেখা পড়ে মন্তব্য প্রদান। কিছু লেখার অহেতুক চেষ্টা।

দুপুরে যথরীতি অফিস ক্যান্টিনে বসে ভুরিভোজন। সুন্দরী কলিগদের অশুভ দৃষ্টিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিকালের ক্লান্তি দূর করার জন্য নীচে নেমে আট টাকা দিয়ে এক কাপ চা খেয়ে কিছুক্ষণ গুলতানি মারা।

পাঁচটায় ব্যাগ গুছানো, ডেস্ক পরিষ্কার করে যাওয়ার জন্য উসখুস। ছয়টায় অফিসের গাড়ি ধরার জন্য আবার দৌড়। পছন্দসই জায়গাটা বেছে নিয়ে আবার আরামের ঘুম। ট্রাফিক জ্যামের যন্ত্রণা উপেক্ষা করার জন্য ঘুমটাই উপযুক্ত। যথারীতি সহকর্মীর কুনইয়ের গুতায় জেগে উঠা। ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে লাল লাল চোখে রিকশায় উঠে বসা। বাসার সামনে এসে ১০টাকা ভাড়া দিয়ে হেলেদুলে তিন তলায় এসে দরজায় ঠকঠক। আদরের ভাতিজা দরজা খুলে দাঁড়িয়েই আবদার- "চাচু শাকিরার ওয়াকা ওয়াকা দেখবো।" তাকে শান্ত করে ফ্রেস হওয়া।

ক্লান্ত শরীর সোফায় ঠেকিয়ে দিয়ে মোবাইলে " IM" অপশনে লগইন করে টাইম পাস করার অহেতুক পায়তারি। বিদ্যুৎ এর লোড শেডিংয়ের অভিশাপে হাসফাস করা।

ঘন্টা দুয়েক পর বিদ্যুৎ আসলে রাতের খাবারের ডাক পড়ে। খেয়ে নিরিবিলি হয়ে ফেসবুক, ইয়াহু, গুগলটক, আমার ব্লগ, নাগরিকব্লগ, সচলায়তনে লগইন করা। ফেসবুকে স্বপ্নকন্যাকে পেয়ে চ্যাটে সারা দিনের ফিরিস্ত প্রদান। মান-অভিমান, রাগ-অনুরাগের ক্যাচাল সামলিয়ে বন্ধুদের ওয়ালে মন্তব্য। দুয়েকটা অযাচিত ফোনের বিড়ম্বনা। বিভিন্ন ব্লগে কিছু লেখা পোস্ট করার আনন্দে সুখ খোঁজা।

বালিশের পাশে চালু ল্যাপটপ পরে থাকে। রাত গভীরে ফিসফাস করে কথা চলে হবু বউয়ের সাথে। স্বপ্নের জাল বুনাবুনি চলে। রাতের আকাশে দু'জনে স্বপ্নের ঘুড়ি কাটাকাটি খেলি। মিল-অমিল নিয়ে ঝগড়া হয়। খুনসুঁটি চলে পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে। আস্তে আস্তে চোখে ঘুম আসে, মিষ্টি কথা তিতা হয়ে আসে। বাগ্বিতন্ডা চলে, এক পর্যায়ে এসে ঝগড়া হয়, বিনা নোটিশে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। মান ভাঙ্গানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে শর্ট মেসেজ পাঠিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা। আবার একি রুটিনের পুনারাবৃত্তি।
///////টমটম।
১৪/০৭/২০১০
সন্ধ্যাকালীন উদাসীনতা।
<><><><><><><><><>


মন্তব্য

শিশিরকণা [অতিথি] এর ছবি

ভাল লাগলো!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

টমটম।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এ ভাই, আপনের দিনপঞ্জি তো দেখি মারাত্মক "বো-রি-ই-ই-ই-ঙ"...
একটা ঝাকিঝুকি দ্যানরে ভাই। একটু ডাইনে সরেন, বামে কাইত হোন। দেখবেন দুনিয়াটা মহা ফাটাফাটি। রাত বিরোতে মান ভাঙানির চেষ্টা হইলো একটা সিস্টেম লস।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অমিত এর ছবি

ডান আর বাম, যেই লাউ সেই কদু

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ধুসর গোধূলি ভাই। ডাইনে বামে কাইত হোওয়ার চেষ্টা করতাছি। তবে আপনার টিপস্ লাগবে মনে হয়। প্লিজ কিছু ভালো টিপস্ দেন না। লাইফটাকে এনজয় করি।

টমটম।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

টমটম মানে কী? কামরুজ্জামান স্বাধীন ভাই নাকি? আপনার মারাত্মক ধৈর্য্য দেখে আমি মুগ্ধ!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

মাহবুব মুর্শেদ ভাই আমি টমটম, কামরুজ্জামান স্বাধীন ভাইয়ের সাথে প্লিজ এক করবেন না। আপনিতো প্রোফাইল দেখলেই বুঝতে পারেন আমি কে? এতে তো লুকোচুরির কিছু নাই।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

টমটম।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনি তো মনে হয় ধরা খেয়ে গেলেন রে ভাই। আপনি বলতে পারতেন স্বাধীন ভাই কে? বা না চেনার ভান করতেন, তাহলে ধরা কঠিন হতো দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রকৃতি প্রেমিক ভাই, আপনার মন্তব্যের উত্তর নাই। তবে যারা সচলায়তনে ক্ষণিক সময়ের জন্যও ঢুমারে তারা স্বাধীন ভাইকে চিনে না তা কি করে হয়? মান সম্মানে লেগেছে, তাই আত্মপক্ষ সমর্থন করলাম না। তবে কাউকে হেয় করা উচিত না।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

টমটম।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

স্বাধীন ভাইয়ের সাথে তুলনা করলেই হেয় হবে কেন? এরকম মনে করার কারণ কী? আপনি স্বাধীন ভাইয়ের নাম জানলে এটাও হয়তো দেখেছেন যে আমি স্বাধীন ভাইয়ের লেখা অপছন্দ করি না হাসি

তবে আপনার সাথে ওনার তুলনা করাতে যদি আপনি কিংবা স্বাধীন ভাই কিছু মনে করেন তাহলে আমি দু:খিত। এটা কিন্তু স্বাধীন ভাইয়কেও প্রকারান্তরে হেয় করা।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভাই একটা কথা বলি মাইন্ড করেন না। কথাগুলো অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে, এমনকি আপনারও। তবু এটা আপনার ভালর জন্যই বলি। অনুগ্রহ করে ব্যক্তিগত ভাবে নিবেন না। আর একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে বলছি কথাগুলো, মডারেটর হিসেবে নয়।

কমিউনিটি ব্লগে 'সোশ্যাল একসেপটেন্সের' একটা ব্যাপার আছে। শুরু থেকেই আপনার সাব-স্ট্যান্ডার্ড লেখা, প্রচুর বানান ভুল, অকেশনাল লোকাল উচ্চারনে করা ইংরেজী শব্দের ব্যবহার আপনার গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিয়েছে। তদুপরি মডারেশন আপনাকে সুযোগ দিচ্ছিল।

কিন্তু শুরুতে পাঠকেরা ভুল ধরে দেয়ার পরও আপনি প্রচুর ডিনায়াল দেখিয়েছেন, নাম বদল করে পোস্ট দিয়েছেন, সিগনেচারের প্যার্টান বদলেছেন। এতে করে কেউ কেউ বিরক্ত হয়েছেন আবার কেউ কেউ আমোদ পেয়েছেন। আপনার লেখা এবং এই স্ট্যাবর্ননেস দেখে কেউ কেউ হাসাহাসি করেছে আবার সেই হাসাহাসি দেখে সচলায়তনে একচোট ঝগড়া ঝাটিও হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে সচলায়তনে আপনার অবস্থান একটু অস্বস্তির জন্ম দেয়।

ইদানীংকালে আপনার লেখার বানান ভুল অনেক কমেছে। কিছু কিছু লেখা গড় মানকে অতিক্রমও করে (বেয়ারলি যদিও)। কিন্তু ওইযে শুরুর অস্বস্তিকর ফ্যাক্টরগুলো...। ওটা অতিক্রম করাটা খুব শক্ত হবে।

এমন নয় যে আগে কেউ এরকম অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে পরে ঠিক হয়ে যাননি। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে আমার "ব্যক্তিগত ধারণা" যে আপনার প্রতি সচলদের প্রাথমিক অস্বস্তি দূর করা খুব শক্ত হবে। সুতরাং আমার অনুরোধ আপনি আপনার এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগে লাগিয়ে নতুন ব্লগে লিখুন। আমার বিশ্বাস, লেখা সর্ম্পকিত আপনার যে গুনাগুনগুলো আছে সেটা আরো দ্রুত কাজে লাগাতে পারবেন সেখানে।

আমি খুবই দুঃখিত যে মুখ ফুটে এই কথাটা আমাকে বলতে হল। মন থেকে আপনার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

মাহবুব ভাই, আপনার লেখা পড়ে আমি হতবাক। এই কথা গুলো আমার পোস্টে না লিখে স্বাধীন ভাইয়ের পোস্টে লিখলে কি ভালো হত না। ওনার জন্য অনেক উপকারে আসত।

তবে একটা কথা কি আপনার এই পরামর্শটা আমার জীবনে কাজে লাগবে।
ভালো থাকবেন।

ধন্যবাদ।

টমটম।

স্পর্শ এর ছবি

লেখাটা ভালো লেগেছে।
মনে হচ্ছিলো এই কাজগুলো লেখক এত বেশি বার বার করে, করে চলেছে একদম যান্ত্রিক দক্ষতায়। এই পৌনঃপনিকতার ভাবটা ফুটেছে ভালো।
লিখতে থাকুন হাত খুলে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সাহোশি এর ছবি

আপনার জীবনটা তো মনে হচ্ছে প্রচন্ড একঘেঁয়ে। আমি দেশে যখন নতুন চাকরি শুরু করি তখন আমার জীবনটাও একঘেঁয়ে হওয়া শুরু করে দিল। প্রতিদিন ৮টা ৫টা অফিস, সে-ই একই প্যানপ্যানানি। এইরকম একঘেঁয়ে জীবনে বৈচিত্র আনতে বিদেশে পাড়ি জমালাম। বিদেশে সেটলড হতে হতে প্রায় একযুগ পার হয়ে গেল। প্রবাসে সেটলড হয়ে দেখি একযুগ আগে দেশে যে একঘেঁয়ে জীবন পার করতাম সে-ই একঘেয়েমি প্রবাসেও হাজির। প্রবাসেও সে-ই ৮টা ৫টা অফিস, তারপর প্যানপ্যানানি। তাই ভাবছি আবার দেশে ফিরে যাব। দেশেও নতুন কর সেটেলড হতে হতে নিশ্চয়ই আরো একযুগ কেটে যাবে। ব্যাস, unbored একটা জীবন পার করে দিলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।