- অনন্ত আত্মা
আমার কাছে রিকসাওয়ালাদের সঙ্গে গল্প করার ব্যপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে। এই গল্প করার ব্যপারটা অনেকটা ক্ষেত্রেই এক-তরফা। সাধারনতঃ কেউ গল্প করলে শ্রোতার কিছু না কিছু বলত হয়। তো দেখা যায়, রিকসাওয়ালা গল্প করছে (স্বভবতই সামনের দিকে ফিরে), রাস্তার নানারকম শব্দে আমি কিছুই শুনতে পারছি না, শুধু গল্পের আবেগটা বুঝতে পারছি। আমি ওই আবেগ আনুযায়ী বিভিন্ন Response করি। যেমন – ‘কি আর করবেন?’ কিংবা ‘আল্লাহর বিচার’ অথবা ‘হ ঠিকই কইছেন’। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে রিকসাওয়ালাদের গল্পগুলো একই রকম; কিছু গল্প রাজনৈতিক, কিছু গল্প ব্যক্তিগত।
রাজনৈতিক গল্পের একটা নমুনা দেয়া যাক – এই গল্পটা আমার না, আমার এক বড় ভাই এর কলিগের। সময়টা আমার ঠিক মনে নেই, মবিন ভাই (আন্দাইজ্যা নাম দিলাম একটা, অরজিনাল নাম জানি না।) অফিসে আসার জন্য রিকসা খুঁজছিলেন, ওই দিন আবার ছিল হরতাল তাই রিকসা ছাড়া গতি নাই। যাই হোক, রিকসা পেয়ে ফার্মগেট থেকে উনি রওনা দিলেন। এরপর মবিন ভাই একটা ভুল করলেন, ভুলটা হচ্ছে রিকসাওয়ালার সাথে গল্প শুরু করলেন।
- কি মিয়া হরতালের ক্যামন বুঝতাছ?
- এইত স্যার, ভাল। স্যার আগারগাঁও’র কোন জাগায় নামবেন?
- ওইত, ওয়াল্ড ব্যাংকের সামনে?
রিকসাওয়ালা এবার পিছন ফিরে বলছে,
- আপনে কি ওয়াল্ ব্যাংকে চাকরি করেন?
- হ্যাঁ, কেন?
মবিন ভায়ের একথা শুধু বলতে বাকি, রিকসাওয়ালা রিকসা থামিয়ে বলল – ‘এই ওয়াল ব্যাংক, ঢাকার থন সব রিকসা তুইলা দিবার চাইতাছে, আমি যামু না, আপনেরে যট্টুক আনছি, ভাড়া লাগব না, যান।’
(সেই সময়, ওয়াল্ড ব্যাংকের কি একটা প্রেশারে সরকার ঢাকার ভি.আই.পি. রোড থেকে রিকসা তুলে দেয়ার উদ্যেগ নিচ্ছিল।) হতভম্ব মবিন ভাইকে বাকিটা রাস্তা ঐ দিন হেঁটেই যেতে হয়েছিল।
এতো গেলো রাজনৈতিক গল্পের নমুনা, ব্যক্তিগত গল্পগুলোও কম রিস্কি হয় না। আমার Observation, যেসব রিকসাওয়ালা ভাড়া করার সময়, ‘ইনসাফ কইরা দিয়েন’ টাইপের কথা বলে, রিকসা চালানোর সময় আস্তে চালায় এবং রিকসা চালাতে চালাতে মাঝে মাঝেই পিছন ফিরে ব্যক্তিগত গল্প শুরু করে, তারা ভাড়া মিটানোর সময় ‘সামনের মাসে ছোড মেয়েডার বিয়া’ বলে সাহায্য চায়, এ ধরনের সাহায্যপ্রার্থীকে ফিরানো মুসকিল।
একটা সময় ছিল, যখন ঢাকায় রিকসা চুরি চা-সিগারেটের মত ব্যপার ছিল, মানে অহরহই ঘটত। তো এই চুরির ঘটনাগুলোতে চোরদের বুদ্ধিমত্তার বিষয়গুলো ছিল যথেষ্ঠ প্রশংসনীয়।
এক বস্তা চাল বাজার থেকে কিনেছে – এই রকম এক ভদ্রলোককে নিয়ে রিকসাওয়ালা কোন একটা বাসার সামনে এসে থামল, এরপর ভদ্রলোক রিকসাওয়ালাকে বলল –
‘যা বস্তাটা তিনতলার ডান সাইডে উঠায় দিয়ায়।
কথামত রিকসাওয়ালা তিনতলার দরজার সামনে চালের বস্তা রেখে নিচে যখন আসল, গেটের সামনের রাস্তায় প্যাসেঞ্জার আর রিকসা কোনটাই তখন আর নাই।
এসব ঘটনা যখন হর-হামেশা ঘটা শুরু করল, মালিকদের নির্দেশ অনুযায়ী রিকসাওয়ালারা রিকশা রেখে কোথাও যেত না, এমনকি ছোট বাথরুম করার সময়ও একহাতে রিকশা ধরে রাখত। দেখা যেত এক হাতে রিকশা ধরে রিকশাওয়ালা রাস্তার পাশে দেয়াল ফুটো করছে।
আমার পরিচিত এক রিকসাওয়ালা, হেলাল। হেলাল নিজেকে মোটামুটি চালু রিকসাওয়ালা বলে দাবি করত। কোন এক সন্ধ্যায় তথাকথিত এই চালু রিকশাওয়ালার রিকসা যখন চুরি হল, স্বভবতই আমাদের প্রশ্ন ছিল – ‘কাহিনী কি?’ তো হেলাল বলছে –
‘মায়া মানুষ (মহিলা) নিয়া তো যাত্রা করছি, জাগা মত পৌছায় হুনি, হেয় বাসা চিনে না, হের বাদে মোবাইল দিছে, হেই বেডী তাও বুঝে না। হের বাদে আমারে কয় – ঠিকানাডা এট্টু হুনেন। পরে আমি মোবাইল কানে দিসি, হের বাদে কি দিয়া কি হইছে আমি জানি না, হুশ আইলে দেহি রিকসা নাই।’
আমি শুনে মনে করেছিলাম ফোনে মনে হয় হিপনোটাইজ টাইপ কিছু করেছে, কিন্তু বিষয়টা বোধহয় এতটা জটিল ছিল না, মেয়েটার হাতে কোন ধরনের হেলুসিনেটিং ড্রাগ ছিল, মোবাইল দেবার সময় সেটা হেলালের নাকে ধরেছিল। আমাদের আড্ডা প্লেসের সেলিম ভাই-এর অবশ্য ভিন্নমত ছিল –
‘আরে কয়েন না, ঐ হালা গাঞ্জা খায়া রিকশা কই না কই দিয়া আইছে, এইডা লয়া দুইডা রিকসা খাইল।’
মন্তব্য
ভাল হইছে। বানান ভুল আর ইংরেজী শব্দের ব্যবহার কমাতে হবে।
আমার কাছে বাংলা কোন অভিধান নাই, সুনির্দিষ্টভাবে কোন বানানগুলো ভুল হয়েছে বলে দিলে উপকৃত হতাম। একটা ভুল মনে হয় 'যথেষ্ট' যেটা 'যথেষ্ঠ' লিখেছিলাম। হ্যাঁ, ইংরেজির ব্যবহার আসলেই কমাতে হবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ; ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল।
অনন্ত আত্মা
হে হে হে.. ভুল ধরতে গিয়েও ভুল হতে পারে, তবুও কয়েকটা দিচ্ছি:
সাধারনতঃ --> সাধারণত
স্বভবতই --> স্বভাবতই
ওয়াল্ড --> ওয়ার্ল্ড
উদ্যেগ--> উদ্যোগ
এতো গেলো --> এ তো গেলো
মুসকিল --> মুশকিল (মনে হয়)
ব্যপার --> ব্যাপার
যথেষ্ঠ --> যথেষ্ট (উল্লিখিত)
কথামত --> কথা মতো (হওয়ার কথা)
তিনতলার --. তিন তলার
একহাতে--> এক হাতে কিংবা এক-হাতে
অনলাইনে সংসদ আছে, এখানে।
আর বাংলা একাডেমির-টা সাথে রাখা ভালো।
হুম! ব্যাপক ভুল, আশার কথা বেশীরভাগই মুদ্রণ প্রমাদ অথবা জানা ভুল । 'ওয়াল্ড', 'মুসকিল' ঠিক আছে, এগুলো বিদেশী শব্দ, যেভাবে উচ্চারন সেভাবে লিখলে ভুল হয় না। অনলাইন সংসদের জন্য ব্যাপক ধন্যবাদ।
অনন্ত আত্মা
লেখার হাত খুব ভালো। সবাই মজা করে লিখতে পারে না। মজা পেলাম। আমারো রিকশা নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করে। বিশেষত রিকশার পেছনে যে লেখা/ছবিগুলি থাকে সেসব নিয়ে। আরো লিখবেন আপনি।
আমি আসলে লেখার চেষ্টা করছি মাত্র, ডান হাতটাকেও শিখাচ্ছি কি করে লিখতে হয়, যেন ভবিষ্যতে লেখার কোন প্লট মাথায় না আসলেও অভ্যাসের বশে হাত (ডান) নিজেই লিখতে পারে। স্যরি আবার মনে হয় মজা করে ফেল্লাম।
ভাল লেগেছে যেনে ভাল লাগল। আপনাদের ভাল লাগলে আরো লেখার চেষ্টা করব।
অনন্ত আত্মা
দেখা যেত এক হাতে রিকশা ধরে রিকশাওয়ালা রাস্তার পাশে দেয়াল ফুটো করছে।.................ভালো!
জহিরুল ইসলাম নাদিম
আমরা যখন ফুটবল খেলতাম তখন বলতাম 'খাড়া বোতল ভাইঙ্গা আসি।' আসলে অনেক ধরনের সাংকেতিক নামই আছে। ভবিষ্যতে আরো দেবার চেষ্টা থাকবে।
ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ।
অনন্ত আত্মা
রিকশা নিয়ে আরো লিখেবেনা আশা করি। প্রথম পর্ব থেকেই একটা আগ্রহ তৈরি হয়ে গেছে
রিকসা নিয়ে বেশী লিখলে পরে না আবার 'রিকসা রাইটার' খেতাব হয়ে যায়, তাই www.ভয়েআছি.বেশীবেশী। আমার লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার নামটা জানা হল না ভাই, এই সাইটে কয়েক সহস্র 'অতিথি পাখি' থুক্কু 'অতিথি লেখক' এর মধ্যে আপনি কোন জন জানার আগ্রহ রইল।
অনন্ত আত্মা
- এই পর্বেও বেশ মজা পেলাম।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনার লেখা তেমন একটা না পড়লেও বিভিন্ন লেখায় আপনার মন্তব্যগুলো আগ্রহ নিয়েই পড়ি এবং বেশ মজা পাই। আমার লেখায় মজা পাচ্ছেন জেনে ভাল লাগল। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
অনন্ত আত্মা
রিকশা ভ্রমণ জারি থাকুক।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
কর্তার ইচ্ছায় কর্ম - থাকুক জারি।
ধন্যবাদ।
অনন্ত আত্মা
এইটাও ভালো লাগলো।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
অনেক ধন্যবাদ।
অনন্ত আত্মা
কোনো এক অজানা কারণে রিকশাতে উঠলেই রিকশাওয়ালা গল্প জুড়ে দিতেন(বন্ধুদের ধারণা ছিলো আমিই যেচে গল্পে মাততাম, কিছুতেই ওদের ভুলটা ভাঙতে পারিনি....দীর্ঘশ্বাসের ইমু হপে)।
আমার চেহারাতে এমন কিছু আছে কিনা জানিনা। বেশিরভাগ রিকশাওয়ালাই আমার কাছে দোয়া প্রার্থনা করতেন।'আপামণি, ছোটমেয়ের পরীক্ষা দোয়া করবেন। মুখে হাসি ধরে বলতাম জ্বী ইনশাল্লাহ।' আপা গো আমার এখনো বিয়ে হয়নি দোয়া রাইখেন।' মুখে যদিও বলতাম, নিশ্চয।' কিন্তু মন বলতো, ফকিরপাড়ায় ভিক্ষে করতে এসেছো বাপু!' অনেককককক স্মৃতি রিকশা নিয়ে...আপনার লেখা পড়ে সব হুড়মুড় করে সামনে এসে যাচ্ছে। খুব ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার লেখা। শুভেচ্ছা জানবেন।
চেহারা অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর। আল্লাহ্ চাহেত - ভবিষ্যতে এই ফ্যাক্টর নিয়ে লিখব। প্লট ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ শুভেচ্ছার জন্যও। ভাল থাকবেন।
অনন্ত আত্মা
মজা পাচ্ছি আপনার এই সিরিজটায়। পরের পর্বের অপেক্ষায়...
অনন্ত
সুবহানাল্লাহ্ আমার এই জিনিস আবার সিরিজের মর্যাদাও পায়া গেল। ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ আমাকে, স্যরি ধন্যবাদ আপনাকে - আসলে আপনি আর আমি তো একই তাই না, মানে আপনি ও 'অনন্ত' আমিও 'অনন্ত', পার্থক্য শুধু আত্মা'য়। আত্মাই আপনার আর আমার মাঝে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ভাল থাকবেন।
অনন্ত আত্মা
আগেরমতই মজারু।
হাত-পা-মুখ-চোখ খুলে লিখতে থাকুন
আলহামদুলিল্লাহ্ জামা-কাপড় খুলতে বলেন নাই।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
অনন্ত আত্মা
খাসা হইছে আপনের গপ্পোডা আর মনতোইব্য গুলান (না না মইনতোব্য গুলান নাগত না), সহস্র "অতিথি পাখি"......খিক খিক.....এত্তোদিন পরিনাই ক্যান বুছতাছি না....
শাফি।
ধন্যবাদ শাফি ভাই।
অনন্ত আত্মা
নতুন মন্তব্য করুন