১.
রাত্রি তখন মনে হয় ২টা বেজে ৩০ মিনিট। ঘুম ভেঙ্গে গেছে। গেটে কেউ মনে হয় ধাক্কাচ্ছে। আবার মনে হল এতে রাত্রে কে আসবে? আমি নিজেকে সাহসী লোক হিসেবেই জানি। সহজে ভয় পাবার পাত্র আমি নেই । কিন্তু, শব্দ ক্রমশ বাড়ায় পাত্তা না দিয়ে উপায় নেই। হালকা আচরের শব্দ গেইটে । একটু যেন ভয় ও পাচ্ছি । গলায় জোর এনে চিংকার করলাম কে ? কিন্তু, কেউ জবাব দিচ্ছেনা ? লোহার গেটে শব্দটা বেড়েই চলছে। বিছানা ছেড়ে উঠে দেখতে হবে। ফেস করতে হবে সামনাসামনি ।
২.
অফিসে হঠাং ফোন পেলাম ছোটভাইয়ের । কি সমাচার জানতে চাইলাম ? খরগোশ কিনতে চায়। মেজাজটা গরম হয়ে গেল। আমার ভাইয়ের আবার অদ্ভুদ জিনিস কেনার বাতিক আছে । তখন সে আবার বেকার, কিন্তু আগের খরুচে হাত টেনে ধরতে পারছে না । তা নিয়ে বাসায় আব্বার চেচামিচি লেগেই আছে । আমার তীর্যক মন্তব্য সম্বলিত প্রশ্নের জবাবে জানাল তার ছেলে রাস্তায় খরগোস দেথে তা না নিয়ে বাসায় ফিরবে না । আমার প্রিয় ভাতিজার বায়না শোনে সাথে সাথে মেজাজ কুল হয়ে গেল । সে আসলে আমাকে ফোন করেছে আমার এনডোর্সমেন্ট নেয়ার জন্য । আব্বা চিল্লাচিল্লি শুরূ করলে যাতে আমার কথা বলে ডিফেন্স নিতে পারে । আগেই ইঙ্গিত দিয়েছি ভাতিজার বেলায় সাত খুন মাপ । আর এতো সামান্য খরগোস। আমি বললাম ঘাবড়াও মাত! খরগোশ কেনার টাকা আমি সংসার খরচের বাদে আলাদা করে দেব। যথারীতি সে ২টা খরগোস নিয়ে বাড়ি ফিরল ।
৩.
গেট থেকে আসা শব্দের উংস খুজতে বিছানা ছেড়ে ঘরের দরজায় দাড়িয়ে দেথি গেটে কয়েকটি কুকুরের জটলা ।বাসার গেটের ভিতরে একটি কুকুর ঢ়ুকে পড়েছে । আর বাকি কুকুরগুলো বাইরে দাড়িয়ে তাকে অভিযানে সাহস দিচ্ছে। সাথে সাথে আমি ঘটনাটা বুঝে ফেললাম ।
৪.
তক্ষনাৎ আমি গেলাম আব্বাকে জাগাতে । আব্বাকে জাগালে আব্বা সব শোনে বলে অসম্ভব। খরগোশ তো টিনের ঘরে বন্ধ করে রাখা। কুকুর কিভাবে খরগোসকে পাবে ? এছাড়া আমাদের বড় লোহার গেটতো তালাবদ্ধ থাকে রাতে। তাহলে কুকুর ঢ়ুকবে কিভাবে ? কিন্তু, আমি যখন আমি বললাম আমি নিজে একটি কুকুরকে বাসার ভিতর দৌড়াতে দেখেছি, তখন তার টনক নড়ল। তিনিও বিছানা ছাড়লেন ।
৫.
অমার ভাতিজা মাসউড নিজ হাতে খরগোসকে খাওয়াতে চাইত । এরকম করতে গিয়ে তার হাত খেকে খাবার নিয়ে খাওয়া খরগোস দুটোর নিয়মিত অভ্যাস হয়ে দাড়ায় । একদিন যখন মাসউড তার নিজ মুখে খাবার তুলতে যাবে, একটি খরগোস নিজের খাবার ভেবে তার উপর হামলে পড়ে । মাসউঠের ঠোটে ও মুখে রক্ত দেখে তার মা চিংকার করে উঠে। আমার নিজের ও হুশ খাকে। আমার ভাই সকালেই ব্যাংকে তার কাজে চলে গেছে। তার অনুপস্থিতিতেই তার সব অদ্ভুদ খেয়ালের জন্য গাল-মন্দ করি। ভূলে যাই যে খরগোস আনার অনুমতি সে আমার কাছ থেকেই নিয়েছে। ভাতিজা আহত হওয়ায় খরগোসগুলো তাড়ানোর সংকল্প করি। কিন্তু, ভাতিজা আমার খরগোসে আগ্রহ হারায় না। তাই বাসা খরগোসমুক্ত করা আর হয়ে উঠেনা। তারপরই ঘটে সেই ঘটনা ।
৬.
আমরা সবাই স্কুলে খরগোস ও কচ্ছপের রেসের ঘটনা পড়েছি । খরগোস কুড়েমির জন্য কচ্ছপের সাথে প্রতিযোগীতায় হারে। কিন্তু, আমাদের বাসার খরগোস কুড়েমির জন্য দৌড় প্রতিযোগীতায় হারেনি । সারমেয় তার শক্তি ও ক্ষিপ্রতা দিয়ে খরগোসগুলোকে হারিয়ে দেয় । যে খর্বাকৃতির কুকুরগুলো লোহার গেটের বাহিরে দাড়িয়ে কমান্ডো হামলাকারি সারমেয়টিকে উংসাহ যোগাচ্চ্ছিল, তাদেরকে নাকি কিছুদিন আগে আমাদের বাসার আশেপাশে কয়েকদিন লাগাতার ঘুরতে দেখা গেছে । তারা রেকি করে চুড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করে । অবশেষে, গভীর রাতে চরম মুহুতে আঘাত হানে তাদের কমাণ্ডারের নেতৃত্বে ।
৭.
আমি যখন হাতে বড় লাঠি নিয়ে বেরিয়েছি আব্বার সাথে, ততক্ষণে সব শেষ। কুকুরগুলো কমাণ্ডো অভিযান শেষ করে পালিয়েছে। সারমেয় দলের দলনেতা আমাদের সামনেই লাফ দিয়ে ওয়াল পেরিয়ে গায়েব । একটি খরগোশ মরে পড়ে রয়েছে উঠানে । অপরটির মৃতদেহ পরে আবিষ্কৃত হয় ম্যানহোলের তলায়। বাসায় খরগোস পালন এখানেই ইতি ।
ওলি
মন্তব্য
একি, শুরু না হতেই শেষ? এত্ত ছুট্টো ক্যা? মাসুদ* আহত হয়েও দমে যায়নি দেখে ভাল্লাগলো। আর কুকুরের কাজ কুকুর করিয়াছে......শোভা না পেলেও দুঃখিত হলাম খরগোসের অকাল মৃত্যুতে। আরও লিখুন।
শাফি।
______________________
*মাসুদ= মাসউড, মাসউঠ
ধন্যবাদ ।
প্রবাদ আছে "Small is beautiful".
উৎসাহ দেবার জন্য পুনরায় ধন্যবাদ ।
ওলি
চমৎকার লেখা। সত্য ঘটনা গল্পের মতো করে। ভালো লাগলো পড়ে। তবে খরগোশের মৃত্যু মন খারাপ করার মতো ব্যাপার। ভাতিজাকে আরো একজোড়া খরগোশ কিনে দেয়া দরকার।
ওলিকে ধন্যবাদ
এনায়েৎ
ধন্যবাদ; এনায়েত ভাই ।
সচলায়তনে আপনার পোস্টের অপক্ষোয় রইলাম ।
ওলি
নতুন মন্তব্য করুন