আমি যখন ক্লাস ওয়ান-টু'তে পড়ি, সময়টা নব্বুইয়ের শুরুর দিকে, তখন একবার নানা বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম বেশ কিছু দিনের জন্য, রাজশাহীতে। গিয়ে দেখি আমার মামা কি সব ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে আছে, তার হাতে একটা সোল্ডারিং করার আয়রন। আমাকে দেখে বলল, "তুই সার্কিটটার এখানে ধরতো, কাউকে হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। একটু ভালো করে যে সোল্ডার করব তার কোন সুযোগ পাচ্ছি না।"
আমি বললাম, "মামা আমার ছ্যাকা লাগবে না তো? তোমার ওই জিনিস থেকে তো ধুয়া উঠছে, লাগলে তো মনে হচ্ছে পুরা ফোস্কা পড়ে যাবে।"
- "তুই এত ভীতুর ডিম কেন রে? চুপচাপ এই কোনা ধরে বসে থাক, আমাকে কাজটা সুন্দর করে করতে দে। বেশী ভয় লাগলে যা ভাগ গিয়া।"
তো নিজেকে কিছুটা সাহসী প্রমান করার জন্য পিসিবি বোর্ডটার এককোনা ধরে বসে পড়লাম। মামাকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম যে তিনি একটা গান শুনার এমপ্লিফায়ার বানাচ্ছেন। পাড়ায় শৌখিন ইলেকট্রনিক্স চর্চাকারীদের মধ্যে একটা প্রতিযোগীতা হচ্ছে যে কে কত শক্তিশালী এমপ্লিফায়ার বানাতে পারে। ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখতে পেলাম, ঘরের কোনায় দুইটা বড় সাউন্ড বক্স- স্পীকার লাগানো, সে গুলা যে কত শব্দ উৎপাদন করবে তার কোনই অভিজ্ঞতা আমার ছিলনা।
কয়েকদিন পর মামার কাজ শেষ হলে প্রাথমিক সাউন্ড টেস্টিং এ আমি থাকার অনুমুতি পেলাম। তখনকার সময়ে মামা খুব মাইকেল জ্যাকসনের ভক্ত ছিল, আসলে বলতে গেলে ওই সময়টায় মাইকেল জ্যাকসন খ্যাতির চুড়ায় ছিলেন। তো যাই হোক সাউন্ড টেস্টিং মাইকেল জ্যাকসনের কোন একটা গান দিয়েই শুরু হল। কিছুক্ষন পর দেখি মামা কিভাবে কিভাবে শরীর দুলিয়ে নাচছে, তো আমি তো তখন অনেক ছোট ছিলাম, আমিও মামাকে দেখে নাচা নাচি শুরু করে দিলাম, কিছুই বুঝিনা যে ক্যামনে কি, হাত পা ছুড়ছি আর লাফা লাফি করছি! তো এত শব্দ শুনে নানা একটা ঝাটা নিয়ে তেড়ে এলেন এবং আপাততঃ তখন কার মত আমারা নাচা নাচি বন্ধ করলাম।
মামার সাউন্ড সিস্টেম পাড়ায় কি রকম সাফল্য অর্জন করেছিল তা আমার এখন মনে নেই, তবে আমাদের নানাবাড়ির ঠিক পাশেই একটা মসজিদ ছিল, তো মোয়াজ্জেন সাহেব এসে বাসায় নালিশ করলেন বেশ কয়েক বার সেই সপ্তাহে, যে আপনাদের বাসা থেকে অনেক জোরে গান বাজনা চেচামেচির শব্দ আসে সেইটা নাকি আজানের চেয়েও জোরে হয়।
নানা নানী মামাকে অনেক বুঝালেন যে এইটা ঠিক না, পাড়ায় যদি কোথাও সবচেয়ে জোরে শব্দ হয় সেটা আজানের আর খুতবারই হওয়া উচিৎ, গানবাজনার না, ইত্যাদি ইত্যাদি, তো মামা শুনেন তাদের কথা আবার মাঝে মাঝে শুনেন না। প্রায়ই আমরা আস্তে আস্তে গান শুনতাম, আর মামা দুঃখ করতো যে এই এমপ্লিফায়ার মোটেও আস্তে শুনার জন্য তৈরি করা হয় নি...।
এর কয়েক সপ্তাহ পরে আমরা ঢাকায় চলে এসেছি, আর তার কয়েক মাস পরে মামা ঢাকায় মা'র সাথে দেখা করতে এসেছে। তো এক ফাকে সুযোগ পেয়ে বললাম,
- "মামা তোমার সেই সাউন্ড বক্সের খবর কি?"
- " মানে সেই এমপ্লিফায়ার আর ওই গুলা..?"
- " হ্যা!"
- " মসজিদে.."
-" মসজিদে কেন? ওরা কি মসজিদে আজকাল গান বাজায়?"
-" উফ তুই এত গবেট কেন? মুয়াজ্জেন সাহেব একদিন বাসায় আসলেন, তোর নানার কাছে আব্দার করলেন যে মসজিদের সাউন্ড সিস্টেমে কি একটা ঘাপলা হইছে, সেদিন নাকি জুমমা ... কিছু একটা ব্যবস্থা না করলেই নয়। শেষ মেশ আমারেই মসজিদের ছাদে সাউন্ড বক্স উঠায়ে, নিচে এমপ্লিফায়ার সেট করে, সব ঠিক-ঠাক করে দিয়ে আসতে হয়েছে। .. এরপর যখনই মুয়াজ্জেন সাহেবরে বলি যে, হুজুর অনেকতো হল, এই বার আমার যন্ত্রপাতিগুলা দিয়া দেন, হুজুরে একখান হাসি হাইস্যা কয় যে আল্লায় তোমারে জান্নাতে এর চাইতেও অনেক পাওয়ার ফুল সাউন্ড বক্স দিবে নে... ওই খানে মিখাইল জাকশনের গান শুইন্যা নাইচ্যো নি.. কেউ কিছ্যু মনে করব না। ... এখন তুই বল এরপর বারবার একথা শুনতে কার ভাল লাগে?"
বানান ভুলের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।
মন্তব্য
হুজুরদের সাউন্ড বক্সের জ্বালায় অস্থির আছি বহুদিন ধরে। বাসা থেকে একটু দূরে নতুন মসজিদ হচ্ছে। তার জন্য চাঁদা তোলা হচ্ছে। দিন নেই রাত নেই যা তা গলায় তারস্বরে গেয়েই চলেছে। একদিন সইতে না পেরে গেলাম খোঁজ নিতে। দেখি একটা টেবিল পেতে দুই পিচ্চিকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুজনে পালা করে চেঁচাচ্ছে। বড় কেউ আছে কি না জানতে চাইলাম। কেউ এগিয়ে এলো না। আমি বলে এলাম পরে আবার আসব, বড় কাউকে যেন বলে রাখে। তারা বেশ মাথা দুলিয়ে চেঁচানো বন্ধ করল। আমি কয়েক কদম চলে আসতেই যেই লাউ সেই কদু। এখনো রোজ দিনরাত এই সংগীত মাহফিল চলে। এদিকে আমার বাবা-মা ভয় পেয়ে গেল আমার উপর মুসল্লীরা ক্ষেপে না যায় ইসলামের বিরোধিতা করার দায়ে। ধর্মের নামে সাত খুন মাফ আর কত চলবে?
বানান: চন্দ্রবিন্দু দিতে SHIFT+^(6) চাপুন।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
চান্দা তোলা ধর্ম হইলো কেমনে?
...........................
Every Picture Tells a Story
- চান্দা তোলা নাতো মুস্তাফিজ ভাই, হাউকাউ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মসজিদগুলোর জন্য সরকারীভবে শব্দসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। আজান, ওয়াজ মাহফিল, খুতবা ইত্যাদি ইত্যাদি পর্বের জন্য একেবারে ডেসিবল মেপে শব্দসীমা মেপে দেওয়া দরকার। ..... কবে যে সচেতনতা এই পর্যায়ে যাবে..। দেশে শব্দ-দুষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে... কেউ কিচ্ছু বলে না...।
ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com
মজারু।
হা হা বেশ মজাতো!!
তবে আমার দেখা মসজিদের হুজুরেরা সবার থেকে সব কিছু গ্রহন করত না। কোন পরিবারে নামাজের প্রচলন আছে কিনা, কোন পরিবারে পর্দা মানা হয় কিনা, এমনকি কোন কোন পরিবারে রাজনৈতিক ইতিহাসও মসজিদের দান নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনা করা হতো।
আসলে এটা স্রেফ একটা গল্প, পুরোটা সত্যিও না। এটা ঠিক, কিছু হুজুর আছেন তারা এই সব ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com
খুব মজা পেলাম..।।
ভালো হইসে ...
__________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
মজারু
__________
ত্রিমাত্রিক কবি
পরকালে বেহেশতে অনেক রকম আনন্দ আয়েশের কথা শুনলেও গানের কথা কখনও শুনিনি। তা থাকলে তো ভালোই হবে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন