[বেশ কিছুদিন আগে প্রথম কিস্তি দিয়েছিলাম। দ্রুতই শেষ হলো বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেছিলেন। এবার তাই বাকি অংশ দেয়া গেল। যার প্রথম অংশ পড়েননি তার পড়ুন এখানে।]
জহিরুল ইসলাম নাদিম
পাশ্চাত্যে বাদুড় অন্ধদের জন্য আর্শীবাদ হিসেবে এসেছে বলা যায়। বাদুড়ের অনুপ্রেরণায় বিজ্ঞানীরা ইকোলোকেশন নামক একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেছেন। একটি বিশেষ চশমা আর কিছু ইলেকট্রনিক্স এর সমন্বয়ে তৈরী এই যন্ত্রের শক্তি যোগায় একটি ছোট্ট শক্তিশালী ব্যাটারী। এতে নাকের গোড়ায় থাকা চশমা থেকে আল্ট্রাসনিক শব্দকে ৬০ ডিগ্রী বিস্তৃতিতে ছুঁড়ে দেয়া হয়। প্রতিধ্বণিগুলো ইয়ারপিসে শ্রবণযোগ্য শব্দে পরিণত হয়। যখন যন্ত্র থেকে বস্তুর আপেক্ষিক দূরত্ব কমে বাড়ে তখন ওই যন্ত্রে শব্দের তীব্রতার হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। ফলে চারপাশ ঠিক ঠাক দেখতে না পেলেও অবস্থার একটি মোটামুটি মানসিক চিত্র ব্যবহারকারী তৈরী করে নিতে পারেন।
বাদুড় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হলেও তাদের অনেক বিষয়ই এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যের বিষয় হয়ে আছে। তাদের রয়েছে চূড়ান্ত গতিময়তা থেকে তাৎক্ষণিক ভাবে মৃত্যুসম অসাড়তায় যাবার অদ্ভুত ক্ষমতা। উড়ন্ত অবস্থায় একটি বাদুড়ের দৈহিক তাপমাত্রা ১০৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে যেখানে মানুষের গড় তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রীর কিছু বেশি। কিন্তু মাটিতে বা অন্য কোথাও নেমে আসার পর তাদের তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে পাল্লা দিয়ে নামতে নামতে এই তাপমাত্রা কখনো কখনো ফ্রিজিং পয়েন্টকেও ছাড়িয়ে যায়। তখন শ্বাস প্রশ্বাসের গতি সেকেন্ডে আট বারের বদলে দাঁড়ায় মিনিটে আট বারে! সম্পূর্ণ কর্মক্ষম অবস্থায় যে পরিমাণ অক্সিজেন এরা ব্যবহার করে তার মাত্র একশ ভাগের এক ভাগ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ব্যবহৃত হয়।
বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করা ছাড়াও বাদুড় বিভিন্ন লোক গাঁথা এবং সংস্কারের সাথে নিজেদেরকে দারুণ ভাবেই সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। চীনাদের কাছে বাদুড় সৌভাগ্য, সুখ আর দীর্ঘায়ুর প্রতীক। মালয়েশিয়ার পিনেং দ্বীপে বাদুড়ের সম্মানে তৈরী করা হয়েছে এক বিশেষ মন্দির। থাইল্যান্ডে এই ধারণা প্রচলিত যে বাদুড়ের মাংস অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ সারায়! বাংলাদেশেও অনেক হাঁপানি রোগীকে শেষ ভরসা হিসেবে বাদুড়ের মাংসের তরকারী খেতে শুনেছি।
এতো কিছুর পরও, সম্ভবত অন্ধকারের প্রাণি বলে পশ্চিমারা বাদুড়কে বেশ ভয়-ই পায়। তারা বাদুড়ের সাথে অতিপ্রাকৃত ব্যাপারগুলোর একটা যোগসূত্র আছে বলে বিশ্বাস করে। "বাদুড়ের ডান চোখ কোটের পকেটের মধ্যে রাখা মানেই নিজেকে অদৃশ্য করে ফেলা.." এমন একটি মজার বিশ্বাস অনেকের মনেই গভীরভাবে প্রোথিত। বিশেষ করে ব্রাম স্টকারের 'ড্রাকুলা' প্রকাশিত হবার পর লক্ষ মানুষ এখনো রাতের বেলা আলো নেভাবার আগে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে।
আদতে পৃথিবীতে মাত্র তিন প্রজাতির বাদুড় আছে যাদেরকে ভ্যাম্পায়ার বা রক্তচোষা বলা যায়। তাদের বিচরণ আবার আমেরিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় সীমাবদ্ধ। সবচেয়ে আশার কথা তারা মানুষকে আক্রমণ করে কদাচিৎ।
বাদুড়েরা বুদ্বিমান, সামাজিক আর পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে খুঁতখুঁতে প্রাণি। তারা নিবেদিত প্রাণ 'মা'। প্রত্যেক বাদুড়ের সাধারণত একটি মাত্র সন্তান থাকে। বাচ্চা জন্মাবার সময় 'ন্যাংটো', অন্ধ আর কখনো মার্বেলের চেয়েও ছোট হয়। মা বাদুড় সন্তানকে দিনে রাতে দুধ পান করায়। নিজের পাখা দিয়ে একান্তভাবে ঢেকে রাখে নবজাতককে। সাধারণত তারা সন্তানকে পাটাতনের নিচে ঝুলিয়ে রেখে তারপর খাবারের সন্ধানে বেরোয়। অবশ্য নিরাপত্তার অভাব বুঝতে পারলে সন্তান সহ-ই বাইরে বেরিয়ে পড়ে। বাচ্চা তখন মায়ের সাথে আঠার মতো লেগে থাকে। জন্মাবার পর বাদুড় বাড়ে খুব দ্রুত। কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের চোখ ফুটে যায়। তিন সপ্তাহ পর এরা মোটামুটি উড়তে পারে। তিন মাস নাগাদ মা বাদুড় আঁতুড় 'ঘর' ত্যাগ করে এবং বাচ্চা বাদুড় তখন সম্পূর্ণ স্বাধীন জীবন যাপন করে।
এতো চমৎকার সব গুণাবলীর অধিকারী হয়ে বাদুড় তাই সত্যিই "তারকা"। রাতের সুপারস্টার!
মন্তব্য
ভাল লাগলো। বাদুড় নিয়ে এত কথা বললেন কিন্তু বাংলাদেশের বাদুড় নিয়ে কিছু লিখলেন না ?
বাংলাদেশে প্রায় ৩০ প্রজাতির বাদুড় পাওয়া যায়। এর মাঝে Greater False Vampire (Megaderma lyra) ও আছে। উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি প্রজাতি হলঃ
Horse shoe Bat: বাংলা নাম জানি না । সিলেট, শ্রীমলের দিকে দেখা যায়। মুখ সত্যি horse-shoe এর মত।
Indian Flying Fox: (চম্পা বাদুড়): বোটানিকাল গার্ডেনে দেখা যায় সহজে।
Fulvous Fruit Bat (কলা বাদুড়): টেকনাফ , কক্স বাজার এলাকায় বড় বড় কলোনি দেখা যায়।
ফাহিম হাসান
ফাহিম,
আপনার ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির অভিজ্ঞতা নিয়ে সচলায়তনের জন্য একটা পোস্ট তৈরী করেন। লেখাটির মাধ্যমে এধরনের ফটোগ্রাফিতে দেশের অনেকেরই আগ্রহ সৃষ্টি হবে। দেশে এখন অনেক ফটোগ্রাফার আছেন, তাদের কেউ কেউ যদি ডেডিকেটেড হয়ে বন্যপ্রাণিদের নিয়ে কাজ করে তাহলে দারুণ হবে ব্যাপারটা।
...............................
নিসর্গ
ধন্যবাদ প্রকৃতিপ্রেমিকদা। বাংলাদেশে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার আছেন কয়েকজন, কিন্তু সংখ্যায় নগণ্য। আমি একদমই অ্যামেচার। তবু চেষ্টা করব আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে। একটা প্রশ্ন - অতিথিরা কি ছবি পোস্ট দিতে পারেন?
উৎসাহ দেওয়ার আবারো জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
ফাহিম হাসান
ফ্লিকারে আপলোড করে এমবেড করে দিতে পারেন। এটা সবচেয়ে ছিমছাম উপায়।
ধন্যবাদ হিমু ভাই। তাই করব।
ফাহিম হাসান
ধন্যবাদ ফাহিম হাসান আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য।
বাদুড় বিষয়ক লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো। ফাহিম হাসানও যোগ করলেন আরো কিছু। বাদুড় বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম, যা জানা ছিলো না। এজন্য অনেক ধন্যবাদ। পাশ্চাত্যে বাদুড় অন্ধদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। আমাদের দেশে অন্ধরা অনেক বেশি অসহায়। অন্ধদের প্রতি সমাজকে আরো বেশি মনযোগি হওয়া দরকার। সুযোগ পেলে তারা অনেক কিছু করতে পারে। শঙ্খ ঘোষ তাঁর এক স্মারক বক্তৃতায় একজন অন্ধ বাউলের সঙ্গে নাটকের একটি সংলাপ উল্লেখ করেছেন এভাবে -
কী হে ভাই, ঠিক নিয়ে যেতে পারবে তো?
ঠিক নিয়ে যাবো।
কেমন ক'রে।
আমি-যে পায়ের শব্দ শুনতে পাই।
কান তো আমাদেরও আছে, কিন্তু-
আমি যে সব-দিয়ে শুনি- শুধু কান দিয়ে না।
ধন্যবাদ ইসলাম আপনার চিন্তশীল মন্তব্যের জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন