বাংলাদেশের অতীত অধ্যায় মানেই নাটকীয় পালাবদলের ইতিবৃত্ত; হাঙ্গামা ও শান্তি, প্রাচুর্য ও দারিদ্র্যের এমন পিঠাপিঠি অবস্থান বিশ্ব-ইতিহাসেরই বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ কখনও সাংস্কৃতিক মহিমায় সমুজ্জ্বল, কখনও যুদ্ধক্লান্ত ও ধ্বংসোন্মুখ। এই দেশের হুড়হাঙ্গামাপূর্ণ ইতিহাস অন্তর্দন্ধ, একের পর এক বহিরাক্রমণ এবং মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের সাক্ষী।
যেভাবে জন্ম বাংলাদেশের
শুরুর বৃত্তান্ত
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে। প্রায় ৩০০০ বছর আগের এই হিন্দু পুরাণে বলা হয়েছে রাজপুত্র ভীম-এর বরেন্দ্রসহ পূর্ব ভারত বিজয়ের কথা, প্রাচীন এই রাজ্যটিই বর্তমানের বাংলাদেশ।
আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে। ক্রমান্বয়ে এটি পাকিস্তানের ইন্দুশ নদী উপত্যকা থেকে বাংলাদেশসহ সমগ্র উত্তর ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৫ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ভারতে পা রাখেন। এই বিপুল হুমকি মোকাবেলায় গাঙ্গেয় নিম্নভূমি থেকে নন্দ রাজবংশের এক দেশীয় রাজার অধীনে বিশাল সৈন্যবাহিনী একত্রিত করা হয়। আলেকজান্ডারের বাহিনী এতে অভিভূত হয়ে যুদ্ধ শুরু না করেই ফিরে যায়।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ‘মগধান’ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। তাঁর পৌত্র সম্রাট অশোক উত্তর ভারতজুড়ে এই রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান, অন্যদিকে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬২ সালে তাঁর বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের প্রভাব ছিল সদূরপ্রসারী।
খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতকে উত্তর ভারত গুপ্তদের অধীনে আসে। এদের শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্ম সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে। হোয়াইট হানদের ক্রমাগত আক্রমণে একসময় গুপ্তরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। ৬ষ্ঠ শতকে শশাংক বাংলায় গৌড় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। অবশেষে যুদ্ধবাজ রাজা শ্রী হর্ষের হাতে এই সাম্রাজ্য উৎখাত হয়। শ্রী হর্ষ ৮ম শতক পর্যন্ত বঙ্গ শাসন করেন।
গোপাল, বরেন্দ্রর একজন ক্ষত্রিয় সর্দার, পাল সাম্রাজ্যের (৮ম-১১তম শতক) সূচনা করেন। তাঁর পুত্র ধর্মপাল বরেন্দ্রয় বিশাল সোমপুর বিহার গড়ে তোলেন। এটি বর্তমানে পাহাড়পুর নামে পরিচিত।
১২ শতকে বাংলায় হিন্দু সেন রাজত্ব কায়েম হয় এবং এ ঘটনায় বিপর্যয় নেমে আসে বৌদ্ধদের ওপর। প্রাণে বেঁচে যাওয়া বৌদ্ধরা চট্টগ্রাম অঞ্চলে পালিয়ে যায়। এখনও সে এলাকায় একটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাঁদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। এক শতকেরও কম সময়ের মধ্যে সেন রাজত্ব ডুবে যায় ইসলামের জোয়ারে।
মুসলিম রাজত্ব
মাত্র ২০ জন অশ্বারোহী নিয়ে এক তরুণ তুর্কি, ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি, ১১৯৯ সালে বঙ্গ অধিকার করেন। এর ফলে এই এলাকাটি ভারতীয় মুসলিম রাজত্বের কেন্দ্র দিল্লী সালতানাতের অধীনে চলে আসে।
অল্প সময়ের জন্য বাংলায় মামেলুক সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ১৩২০ সালে তুঘলক রাজবংশ কর্তৃক উৎখাত হয়। ১৩৯৮ সালে আরেকটি মুসলিম আক্রমণে তুঘলক সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
মুসলিম রাজত্বের সময় বাংলা এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। শহরগুলো বড় হয়ে ওঠে, গড়ে ওঠে প্রাসাদ, দুর্গ, মসজিদ, বাগান, সমাধি, তৈরি হয় নতুন রাস্তা, সেতু এবং নতুন বাণিজ্যপথ উন্মুক্ত হয় যা নতুন সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধির ধারা সৃষ্টি করে। বঙ্গের রাজধানী গৌড়, যা বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ওপর অবস্থিত, পরিণত হয় এক উদারনৈতিক মহানগরীতে। ১৬০৮ সালে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
১৫৭৬ সালে বাংলা পরিগণিত হয় মুঘল সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে। এর পরিণতিতে ভারত প্রবেশ করে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে, সূচনা হয় ব্রিটিশ রাজত্বের।
ব্রিটিশ রাজত্ব
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রভাব বিস্তার করার জন্য পর্তুগিজ, ডাচ, বৃটিশ এবং ফ্রেঞ্চরা দশকের পর দশক ধরে হানাহানি করেছে, কিন্তু বাণিজ্যের ছুতোয় এসে ক্ষমতা হাতে নিতে সমর্থ হলো বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি!
১৭৪০ সালে বাংলা, বিহার ও ওড়িশ্যা এই তিনটি প্রদেশের সুবেদার সরফরাজ খান উৎখাত হন নওয়াব আলী বর্দি খানের হাতে। এর ফলে সূত্রপাত হলো বাংলার স্বাধীন মুসলিম রাজবংশের। ১৭৫৬ সালে সিরাজউদ্দৌলা, ২১ বছর বয়সী বাংলার নবাব, আক্রমণ করলেন কলকাতার বৃটিশ বসতি।
এক বছর পর মীরজাফরসহ কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রে স্বাধীন বাংলার সূর্য অস্তমিত হলো, রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বঙ্গ বিজয়ের মাধ্যমে উপমহাদেশে সূচনা হলো বৃটিশ রাজত্বের।
বলা হয় বৃটিশ রাজত্বে বাংলা এক সমৃদ্ধির যুগে প্রবেশ করে, কিন্তু ঐতিহাসিকরা এটি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। বৃটিশ প্রবর্তিত কৃষিনীতি এবং জমিদার প্রথাকে দায়ী করা হয় বাংলার সম্পদ পাচার হয়ে যাওয়ার জন্য। ফলে সমাজ-কাঠামো ভেঙে পড়ে, এমনকি আজকের বাংলাদেশের মরিয়া পরিস্থিতি সৃষ্টিতে এর রয়েছে সরাসরি অবদান।
হিন্দুরা হাত মেলাল বৃটিশদের সাথে, ইংরেজি ভাষা শিক্ষার সাথে সাথে ভর্তি হতে শুরু করল বৃটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। মুসলমানরা জাত্যাভিমানে মুখ ফিরিয়ে রইল, জোতদার ও কৃষক হয়ে থাকাই তাদের কাছে শ্রেয়তর মনে হলো। এই ধর্মভিত্তিক বিভাজনের ফলে বৃটিশদের ভারত শাসন সহজতর হলো, তবে তা একই সাথে ভিত্তি গড়ে দিল পরবর্তী দ্বন্দ্ব-সংঘাতের।
প্রথমে হিন্দু এবং মুসলিম উভয়ের সমর্থনে ১৮৮৫ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস গঠিত হয়। কিন্তু লর্ড কার্জন কর্তৃক ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর (পূর্ববঙ্গ ও আসাম একটি প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশ্যা নিয়ে আরেকটি প্রদেশ) ধর্মীয় বিভক্তির রেখা স্পষ্ট হতে শুরু করল। এটি অনুপ্রেরণা জোগাল মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ গঠনে, অন্যদিকে কংগ্রেসের পতাকাতলে সমবেত হতে শুরু করল প্রভাবশালী হিন্দু গোষ্ঠীগুলো।
১৯১২ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে মুসলিমরা হিন্দু আধিপত্যে ফিরে যেতে ভয় পেল এবং নিজেদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনে উন্মুখ হয়ে উঠল।
১৯৪৩ সালের মন্বন্তরে বাংলায় মারা গেল ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ, শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। খরায় শস্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বৃটিশ রাজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত মিত্রবাহিনীর জন্য বাজারের সব খাদ্যদ্রব্য কিনে নিতে শুরু করায় নেমে এল ভয়ংকর এই মানবিক বিপর্যয়। শহর-নগরগুলো ভরে ওঠল উদ্বাস্তুতে, সেই সাথে বৃটিশ রাজের প্রতি শেষ শ্রদ্ধাটুকুও মুছে গেল মানুষের মন থেকে।
ভারত বিভাগ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটি পরিষ্কার হয়ে গেল যে ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিক যুগের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। ভারতবাসীর ক্রমাগত চাপের মুখে বৃটিশরা পাততাড়ি গুটিয়ে নেয়ার ছক কাটতে শুরু করল।
মহাত্মা গান্ধীর অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি সত্ত্বেও মুসলিমরা এ বিষয়ে সচেতন ছিল যে স্বাধীন ভারত হবে হিন্দু প্রধান। দেশটিকে বিভক্ত করা হলো ধর্মের নামে, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম সমর্থনপুষ্ট 'মুসলিম লীগ' এবং জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে হিন্দু সমর্থনপুষ্ট 'ইন্ডিয়ান কংগ্রেস পার্টি'র দাবি অনুযায়ী ভারত বিভাগের আয়োজন সম্পন্ন হলো। সমঝোতা অসম্ভব বুঝতে পেরে ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত ভেঙে পাকিস্তান সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিলেন।
পূর্ব পাকিস্তান
স্বাধীন মুসলিম আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিল মুসলিম লীগ তা বাস্তবায়িত হলো ১৯৪৭ সালে, পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে। কিন্তু এ কেমন পাকিস্তান! পূর্ব বাংলা পরিণত হলো পূর্ব পাকিস্তানে, আর ১২০০ কিলোমিটার দূরে উপমহাদেশের অন্য প্রান্তে পাঞ্জাব অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হলো পশ্চিম পাকিস্তান। শুরু হলো ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, আর সেই সাথে স্রোতের মতো মানুষ ভেসে চলল এক দেশ থেকে আর এক দেশে। হিন্দুরা দলে দলে আশ্রয় নিল ভারতে আর মুসলিমরা পশ্চিম অথবা পূর্ব পাকিস্তানে।
দুই পাকিস্তানের মানুষ ধীরে ধীরে উপলদ্ধি করতে শুরু করল তাদের ভেতর ধর্ম ছাড়া আর কোনো বিষয়েই মিল নেই! শুধু তা-ই নয়, সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলো পশ্চিম পাকিস্তানে, রাজস্ব বন্টনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভয়ংকর বঞ্চনার শিকার হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বুঝতে শিখল তাদের স্বাধীনতা এখনও সুদূরপরাহত রয়ে গেছে।
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা বাংলাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে আরও ক্ষেপিয়ে তুলল, ইতিহাসের প্রথম (এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র) জাতি হিসেবে তারা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ দিল; ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি (বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত) সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকের আত্মাহুতির বিনিময়ে উর্দুর সাথে বাংলাও পেল রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা।
১৯৭০ সালে এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় পূর্ব পাকিস্তানের দশ লক্ষাধিক লোকের প্রাণ কেড়ে নিল, কিন্তু এই ভয়াবহ বিপর্যয় সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার হাত গুটিয়ে বসে রইল। ইতিমধ্যে ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীকে। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া গেল ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে, পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি আসনে (একটি বাদে, এ আসনটি লাভ করেন ত্রিদিব রায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা রাজা) জয় লাভের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সংসদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হলো। সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা পরিচালনার ভার আওয়ামী লীগের (পড়ুন পূর্ব পাকিস্তানিদের) হাতে চলে যাচ্ছে দেখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করলেন।
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালের ৭-ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অল্পই বাকী রাখেন। প্রকৃত অর্থে সেদিনই বাংলাদেশের জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হলো, বিদ্রোহের ধিকিধিকি আগুন তখন দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে পূর্ব পাকিস্তানে।
২৫-এ মার্চের কালো রাতে নিরস্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পাকবাহিনী। ‘বেলুচিস্তানের কশাই’ জেনারেল টিক্কা খানের নেতৃত্বে শুরু হলো নির্মম হত্যাযজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ট্যাংক ঢুকে গোলাবর্ষণ করতে লাগল, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, ব্যবসায়ী এবং সন্দেহজনক ‘নাশকতাকারী’দের ধরে ধরে শহরের বাইরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতে লাগল। সবচেয়ে বিপাকে পড়ল হিন্দুরা, তাদের ওপর পাকবাহিনীর আক্রোশটা একটু বেশিই মনে হলো।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র দখল করে নিল মুক্তিবাহিনী, তাদের নেতা মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানালেন।
জুনে শুরু হলো গেরিলা যুদ্ধ। পাকবাহিনীর অত্যাচার বাড়ার সাথে সাথে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাঙালির সংখ্যাও বেড়ে চলল। নাপাম বোমা ব্যবহৃত হলো সাধারণ গ্রামবাসীর ওপর। গণ ধর্ষণের মাত্রা দেখে মনে হতে লাগল বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। এই দারুণ অরাজকতায় মার্চ থেকে নভেম্বর এই ন-মাসে ১ কোটিরও বেশি লোক আশ্রয় নিল ভারতের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে ছোটখাটো লড়াই চলছিল, এই অবস্থায় ১৯৭১ সালের ৩-রা ডিসেম্বর পাক বিমানবাহিনী নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে ভারতীয় ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ করে বসল। এরপর লড়াই দ্রুত শেষ হয়ে গেল। ভারতীয় বাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করল, যশোর মুক্ত হলো ৭-ই ডিসেম্বর, ঢাকা মুক্ত হওয়ার জন্য তখন শুধুই অপেক্ষা। ঘৃণ্য হানাদার বাহিনী এবার আক্রমণের শিকার হলো চতুর্দিক থেকে; পশ্চিম দিক থেকে এগিয়ে এল ভারতীয় বাহিনী, উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে মুক্তিবাহিনী, আর চারপাশের বৈরী জনগণ তো রয়েছেই!
১৪-ই ডিসেম্বরের মধ্যে বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে গেল। পাক হানাদার বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করলেন ১৬-ই ডিসেম্বর।
জন্ম হলো বাংলাদেশের।
তথ্যসূত্র : লোনলি প্লানেট বাংলাদেশ
ছবি-কৃতজ্ঞতা : find-our-community
******
পূর্ববর্তী পর্ব : বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ১ | সংস্কৃতি ও স্থাপত্যরীতি |
পরবর্তী পর্ব : বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ৩ | পরিবেশ এবং আবহাওয়া |
কুটুমবাড়ি
মন্তব্য
লেখাটা খুব মানসম্মত মনে হলো না । তথ্যগত ত্রুটি একটি বিষয় । আরো একটি বিষয় হলো আজকে যে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডটিকে আমরা চিনি সেই ভূখন্ডের সাথে প্রাচীন বাংলার ভূখন্ডের সাথে পার্থক্য নির্দিষ্ট করা হয়নি এখানে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, হাসিব ভাই।
আমি অবশ্য সরাসরি 'লোনলি প্ল্যানেট বাংলাদেশ' অনুসরণ করে লিখেছি। তথ্যগত ত্রুটি ধরিয়ে দিলে সংশোধন করে নেয়া যাবে।
লেখাটি 'বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড' সিরিজের জন্য রচিত। বাংলাদেশে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেসব নিদর্শনগুলোর গুরুত্ব ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসটি পর্যটকদের জানা প্রয়োজন বলে মনে করেছি। সেজন্যই এই প্রচেষ্টাটি। ধন্যবাদ আপনাকে।
কুটুমবাড়ি
কুটুমবাড়ি ভাই,
তথ্যসূত্র হিসেবে Lonely Planet খুব একটা নির্ভরযোগ্য না। আপনি সরাসরি অনুবাদ না করে নিজের ভাষায় লিখুন। তাতে লেখাটা আরো প্রাণ পাবে। লেখার পিছনে বেশ মেহনত করছেন। বিষয়ভিত্তিক আরো কিছু বই ঘেটে দেখুন নতুন কিছু যোগ করা যায় কিনা।
আশা রাখি পরবর্তী পর্ব আরো ভাল হবে। পরিবেশ নিয়ে প্রচুর লেখা নেটেই পাওয়া যায়। নতুন অভয়ারণ্যগুলো সম্পর্কে Lonely Planet এ কিছু নেই কিন্তু ।
ফাহিম হাসান
Lonely Planet যদি নির্ভরযোগ্য না হয় তাহলে তো বিপদই দেখছি! নির্ভর করতে পারি এমন দু-একটি রেফারেন্স যদি দিতে পারেন তাহলে ভালো হয়।
অভয়ারণ্যগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে লিখব পরে, বিভাগ অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে আসবে। 'পরিবেশ' পর্বে এগুলোর শুধু সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেব বলে ভাবছি।
কুটুমবাড়ি
আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে। ক্রমান্বয়ে এটি পাকিস্তানের ইন্দুশ নদী উপত্যকা থেকে বাংলাদেশসহ সমগ্র উত্তর ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতে আর্যরা আসে আরো অনেক আগে।
ইন্দুশ নদী বলে কিছু নেই। ইন্ডাস রিভার বাংলায় সিন্ধু নদ হিসেবে পরিচিত।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ‘মগধান’ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। তাঁর পৌত্র সম্রাট অশোক উত্তর ভারতজুড়ে এই রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান
'মগধান' সিংহাসন কী? মগধের সিংহাসন বলতে চেয়েছেন মনে হয়। পুন্ড্রবর্ধন রাজ্য আরো আগে থেকেই ছিলো। চন্দ্রগুপ্ত এর প্রতিষ্ঠাতা নন। তিনি দখলদার। পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্ড্রনগর বর্তমানে মহাস্থানগড় হিসেবে পরিচিত। অশোক মগধ রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান, পুন্ড্রবর্ধনের নয়।
খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতকে উত্তর ভারত গুপ্তদের অধীনে আসে। এদের শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্ম সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে।
গুপ্তরা হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিলো। তাদের শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্ম কীভাবে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছালো বোধগম্য নয়।
বঙ্গের রাজধানী গৌড়, যা বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ওপর অবস্থিত, পরিণত হয় এক উদারনৈতিক মহানগরীতে।
গৌড় একটি রাজ্যের নাম, তা বঙ্গের রাজধানী কীভাবে হলো বুঝতে পারলাম না।
১৫৭৬ সালে বাংলা পরিগণিত হয় মুঘল সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে। এর পরিণতিতে ভারত প্রবেশ করে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে, সূচনা হয় ব্রিটিশ রাজত্বের।
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রদেশে পরিগণিত হওয়ার সাথে ব্রিটিশ রাজত্বের সূচনার কী সম্পর্ক রয়েছে সেটাও বুঝতে ব্যর্থ হলাম।
শুরতে যেগুলো চোখে পড়েছে এখানে শুধু তা উল্লেখ করলাম। আরো অনেক তথ্যগত ভুল রয়েছে। কষ্ট করে অনুবাদ করেছেন সন্দেহ নেই। তবে লেখাটি বাংলাদেশ বিষয়ক কোন বই বা ভ্রমণ গাইডে স্থান পেলে হতাশ হবো। উপরে ফাহিম হাসান যেমন বলেছেন লোনলি প্ল্যানেট বাদ দিয়ে আপনি নিজের মতো করেই লিখুন।
ধন্যবাদ তানভীর এই পোস্টটার কিছু তথ্যগত ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য। বস্তুতঃ এই পোস্টে মোট যে পরিমাণ তথ্যগত ভুল আছে তার সব ধরলে কম্বল উজাড় হয়ে যাবে।
পোস্ট লেখক কুটুমবাড়ির প্রতি অনুরোধ, দেশের ইতিহাস নিয়ে যখন লিখবেন তখন একটু খাটাখাটনি করে দু-দশটা রেফারেন্স ঘেঁটে লিখবেন। দেশের ইতিহাস নিয়ে বই যে কোন লাইব্রেরী বা বইয়ের দোকানে মেলে। লোনলি প্ল্যানেটে সাহেবরা কিছু লিখলেই সেটা "তথ্য" হয়ে যায়না। ইতিহাসের বিকৃতি অসহ্য লাগে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পান্ডুদা, মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভুলগুলো একটু উল্লেখ করবেন কি? ইতিহাসের বিকৃতি আমারও অসহ্য লাগে। সংশোধন করে নিতাম।
কুটুমবাড়ি
ধন্যবাদ, তানভীর ভাই। প্রথমে ভেবেছিলাম আপনার সংশোধনীগুলো কাজে লাগবে। তবে উইকিপিডিয়ায় ঘাঁটাঘাটিঁ করে আপনার দেয়া বেশির ভাগ তথ্যের কোনো রেফারেন্স খুঁজে পেলাম না। লোনলি প্ল্যানেট ভুল করলে ঠিকাছে, কিন্তু উইকিপিডিয়ায় ভুল থাকলে আমরা কোথায় যাব?
বিস্তারিত দেখুন নিচের মন্তব্যে।
কুটুমবাড়ি
উইকিপিডিয়ায় অনেক তথ্যের রেফারেন্স পাওয়া যায় না। আপনি আরেকটা কাজ করতে পারেন। বাংলাপিডিয়াতে ক্রস চেক করে দেখুন। একটু সময় নিন। তাড়াহুড়ো করেন না।
জরুরিঃ আপনি lonely Planet কে মূল text ধরেন না। কারন এর উদ্দেশ্য কোন বিদেশি ভ্রমণকারীকে নতুন একটা দেশ সম্পর্কে জানানো। আর আপনি চান মূলতঃ বাংলাদেশের মানুষের (অথবা বাংলাভাষীদের) জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণ নির্দেশিকা। তাই লেখার ধরণ / ঢং ভিন্ন হওয়া প্রয়োজন।
ফাহিম হাসান
অ, আপনি ভুল বুঝেছেন তাহলে।
আমি আসলে বলতে চেয়েছি উইকিপিডিয়ায় এমন কোনো তথ্য পেলাম না যা তানভীর ভাইয়ের কথাকে সঠিক প্রমাণ করতে পারে। বাংলা উইকি এখনও আঁতুড় ঘরে থাকলেও ইংরেজি ভার্সন কিন্তু যথেষ্টই সমৃদ্ধ, প্রায় সব তথ্যই পাওয়া যায় সেখানে।
অট : ইন্টারনেট থেকে বাংলাপিডিয়ায় এক্সেস করা যায় কীভাবে বলতে পারেন? বাংলা ভার্সনে কীসব ফন্ট দেখায় পড়তে পারি না।
কুটুমবাড়ি
তানভীর ভাই, প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে নেই এত সুন্দর করে এবং খুঁটিনাটিসহ এত বিস্তারিত আকারে মন্তব্য দেয়ার জন্য। আপনার সংশোধনীগুলো কাজে আসবে। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে একটু সংশয় রয়ে যাওয়ায় আপনার মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছি।
একমত। 'কিন্তু আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে।'--এই লাইনটির মধ্যে ভুল কোথায় পেলেন?
আসুন দেখি wikipedia কী বলছে এ ব্যাপারে--
The Indo-Aryans in these areas established several powerful kingdoms and principalities in the region, from eastern Afghanistan to the doorstep of Bengal. The most powerful of these kingdoms were the post-Rigvedic Kuru (in Kurukshetra and the Delhi area) and their allies the Pañcālas further east, as well as Gandhara and later on, about the time of the Buddha, the kingdom of Kosala and the quickly expanding realm of Magadha. The latter lasted until the 4th century BC, when it was conquered by Chandragupta Maurya and formed the center of the Mauryan empire.
আপনি বলেছেন--
বাংলা উইকিপিডিয়া অনুযায়ী---
তাহলে দেখতে পাচ্ছি পুন্ড্রবর্ধনকে সবাই এলাকা বা স্থান হিসেবে বর্ণনা করছেন। কেউই কিন্তু রাজ্য বলছেন না। এর একটা কারণ হতে পারে যে চন্দ্রগুপ্ত-এর আগে কোনো রাজা ছিলেন না সেখানে। দখলদার হলেও চন্দ্রগুপ্তই ছিলেন পুন্ড্রবর্ধনের প্রথম রাজা। আপনি যদি এ ব্যাপারে আরেকটু আলোকপাত করেন তাহলে ভালো হয়।
আপনি বলেছেন--
আমিও এ কথাটিই বোঝাতে চেয়েছি আসলে। আরও নিখুঁতভাবে বললে তিনি নিজের সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেছেন, মগধ রাজ্যের নয়। বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে আরও কিছু তথ্য দিয়ে দিলাম এখানে--
আপনি বলেছেন--
আসুন দেখি wikipedia কী বলছে এ ব্যাপারে--
Kings of the Gupta dynasty were devout adherents of a Hindu faith, sometimes called as Parama Bhagavatas, and they patronized and revived Hinduism, but they also possessed a tolerant outlook which allowed Buddhism to flourish. In the meantime, rise of the two powerful Hindu cults of Saivism and Vaisnavism, brought Buddhism closer to Hinduism. In its spiritual nihilism, Buddhism was approximated to the Bhakti movements so much so that, by the middle of the 6th century, the Buddha was accepted as an avatar of Vishnu.
According to Chinese sources, Maharaja Gupta, also known as Shri Gupta, the first ruler of the Gupta dynasty, built a Buddhist temple and offered it to Buddhist monks from China along with a gift of twenty four villages. This temple is believed to have remained a sacred place till the 7th century. Samudra Gupta, although a devout worshipper of Vishnu, also proved to be a great patron of Buddhism. It was during his reign that cultural relations between India and Ceylon were established. His teacher and guide, the celebrated Buddhist scholar Vasubandhu, was appointed minister, and, with the permission of the Ceylonese King Meghavanna, a monastery was built at Bodh Gaya for the monks and pilgrims of Ceylon. Chandra Gupta II who, like his father Samudra Gupta, was a devout Vaisnava by faith, gave full freedom to the practice of other faiths in his empire.
আপনি বলেছেন--
বাংলা উইকিপিডিয়া অনুযায়ী--
বাংলা, যা ছিল মুঘল সাম্রাজ্যেরই একটি প্রদেশ, তার নবাবকে পরাজিত করার মাধ্যমে উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্বের সূচনা হয়। যা পরবর্তীতে মুঘলদের সাম্রাজ্য করায়ত্ব করায় সহায়তা করেছে ব্রিটিশদের। আমি যতদূর তথ্য পেলাম সে আলোকে আমার মতামত ব্যক্ত করলাম। আশা করি ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।
কুটুমবাড়ি
১.
‘আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে’ –এ বাক্যটিতে যে কোনো পাঠকেরই মনে হবে আপনি বলছেন ভারতে আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ঘটেছে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে যা সত্য নয়।
উইকি থেকে কী বোঝালেন বুঝলাম না। সেখানে তো বলেছেই “The most powerful of these kingdoms were the post-Rigvedic Kuru...... The latter lasted until the 4th century BC, when it was conquered by Chandragupta Maurya” এখানে দেখুন- “The earliest history of the Aryans in India is called the Rigvedic Period (1700-1000 BC)..... In the early centuries of Later Vedic Period or Brahmanic Period (1000-500 BC), the Aryans migrated across the Doab...”- এমনকী প্রাচীন বাংলা ভূ-খণ্ডেও আর্য সভ্যতার বিকাশ ঘটে প্রায় তিন হাজার বছর আগে। কাজেই ‘আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে’ এ বাক্যটি শুদ্ধ না ভুল আপনিই বলুন। মহাভারত রচনার সময়কালটাও দয়া করে শুদ্ধ করে নেবেন। তিন হাজার বছর আগের কাহিনী বর্ণনা এটি লেখা হয়েছে আরো অনেক পরে। আদি অংশের রচনাকাল আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে এবং পূর্ণাঙ্গ আকার পায় গুপ্ত শাসনামলে।
আর আর্য দিয়ে বাংলার ইতিহাস শুরু করেছেন। অনার্যরা কী দোষ করল? যে পুন্ড্রবর্ধনের কথা বলছেন তার অধিবাসীরাই তো অনার্য ছিল।
২.
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য রাজা নন, সম্রাট। তিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও বিস্তার করেছেন যার কেন্দ্র হলো মগধ। ‘মগধের সিংহাসন’ বলতে তো তাই বুঝিয়েছেন, নাকি? আপনার বাক্যটি দেখুন- “চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ‘মগধান’ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। তাঁর পৌত্র সম্রাট অশোক উত্তর ভারতজুড়ে এই রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান” - খুবই খাপছাড়া এবং হাস্যকর একটি বাক্য। উইকি অনুযায়ী পুন্ড্রবর্ধন রাজ্য নয় বরং এলাকা বা জনপদ, ঠিকই আছে। সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পুন্ড্রবর্ধন দখলের পরও এটি কোন রাজ্য হয়ে যায় নি, তাই না? আমি বলেছি পুন্ড্রবর্ধন রাজ্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য আসার আগেও ছিল। কারণ প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোতে কোন প্রভাবশালী রাজা না থাকলেও বিচ্ছিন্নভাবে আদিকাল থেকে এগুলো রাজ্য হিসেবেই পরিচিত ছিল। মহাভারতে ভারতের পূর্বাংশে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুন্ড্র বা পৌন্ড্র এবং সূক্ষ্ণ- এ পাঁচটি রাজ্যের নাম পাওয়া যায়। মহাভারতের পুন্ড্র রাজ্য আর পুন্ড্রবর্ধন এলাকা যে একই বুঝে নিতে তেমন কষ্ট হয় না। আপনি লেখার শুরুতে বরেন্দ্রর কথা বলেছেন ‘রাজপুত্র ভীম-এর বরেন্দ্রসহ পূর্ব ভারত বিজয়ের কথা, প্রাচীন এই রাজ্যটিই বর্তমানের বাংলাদেশ’- বরেন্দ্র কোন রাজ্য নয়; অঞ্চল যার মধ্যে এই পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্র রাজ্য অন্তগর্ত। উইকি থেকেই দেখে নিন।
৩.
গুপ্ত শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্ম সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছিল- এ বাক্যটা একটা প্যারাডক্স। ভাই, প্যারাডক্স বোঝেন তো? উইকি কী বললো এখানে তাতে আমার কোন মাথাব্যথা নাই। আমি যদি রেফারেন্স সহকারে এখন বলি মোগল বা মুঘল আমলের বাদশাহরা পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণু ছিলো, তাই তাদের শাসনামলে হিন্দু ধর্ম সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছিলো- মানবেন সেই কথা? আপনি তো মুসলিম শাসনামল নিয়ে খুব বড় বড় কথা লিখেছেন- “মুসলিম রাজত্বের সময় বাংলা এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। শহরগুলো বড় হয়ে ওঠে, গড়ে ওঠে প্রাসাদ, দুর্গ, মসজিদ, বাগান, সমাধি, তৈরি হয় নতুন রাস্তা, সেতু এবং নতুন বাণিজ্যপথ উন্মুক্ত হয় যা নতুন সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধির ধারা সৃষ্টি করে” এটা তো হলো বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের পারসপেক্টিভে ইতিহাস। ভারতের কোনো ইতিহাস বইয়ে দেখেন তো মুসলিম রাজত্ব নিয়ে কী কথা লেখা আছে। আমি ছোটবেলায় ভারত থেকে ছাপা একটা ইতিহাস বই পড়েছিলাম। তাতে সেন রাজত্বের পরে মুসলিম রাজত্ব শুরুর বর্ণনা শুরু হয়েছে এভাবে- ‘তারপর শুরু হলো অন্ধকার যুগ’। এই অন্ধকার যুগে আপনি এতো সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধি কোথায় পেলেন! যাই হোক যেটা বলতে চাচ্ছিলাম- ইতিহাস লিখতে হয় নির্মোহভাবে, সেখানে গায়ের জোরে কোনো বক্তব্য চাপিয়ে দেয়া যায় না। হিন্দু শাসনামলে হিন্দু ধর্ম সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছাবে এটাই স্বাভাবিক। আপনি একটু ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলেই দেখবেন বেশিরভাগ ইতিহাস গ্রন্থে গুপ্ত শাসনামলকে বলা হয় ‘স্বর্ণযুগ’। কেনো বলা হয় সেটা বুঝে নিতে হয়তো কষ্ট হবে না।
৪.
আপনি লিখেছেন-
৬ষ্ঠ শতকে শশাংক বাংলায় গৌড় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।
বঙ্গের রাজধানী গৌড়, যা বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ওপর অবস্থিত, পরিণত হয় এক উদারনৈতিক মহানগরীতে।
আপনি গৌড়কে একবার সাম্রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবার পরে বলছেন বঙ্গের রাজধানী গৌড়। আমার ধারণা এতে আমার মতো আমপাঠকরা সহজেই বিভ্রান্ত হবেন। আপনার দেয়া উইকির লিংক দেখলাম। উইকিতে কেন গৌড় অঞ্চল (Gauda) এবং Gaur শহরের উচ্চারণ একই লেখা হয়েছে তা জানি না। যারা লিখেছে তারাই ভালো বলতে পারবে। কতো কিছুই জানি না তার উদাহরণ হলো এ শহরের নামও আমি আজ প্রথম জানলাম। সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার লেখায় তথ্যগত ভুল একটি বড় সমস্যা। কিন্তু সেগুলো শুদ্ধ করার পরও এটি মানসম্মত কিছু হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, খাপছাড়াভাবে একখান থেকে শুধু অন্যখানে লাফ দিয়ে চলে গেছেন। ভালো থাকুন।
"আর আর্য দিয়ে বাংলার ইতিহাস শুরু করেছেন। অনার্যরা কী দোষ করল? যে পুন্ড্রবর্ধনের কথা বলছেন তার অধিবাসীরাই তো অনার্য ছিল।"
- কথা সত্য। লোনলি প্ল্যানেট অনার্য নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাবে না
মন্তব্যের জন্য ঝা ঝা ।
ফাহিম হাসান
তানভীর ভাই, দেখুন তো লোনলি, উইকি, আর আমি--এই তিনজনই কি একই ভুল করছি? নাকি আপনারই ভুল হচ্ছে কোথাও?
১.
কাজেই ‘আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে’ এ বাক্যটি শুদ্ধ না ভুল আপনিই বলুন।
এই লাইনে ভুল বোঝাবুঝিটা কোথায় হয়েছে এখন ধরতে পেরেছি বলে মনে হয়। আমি বলেছি 'আর্য সভ্যতার উৎপত্তি' (উৎপত্তি অর্থ জন্ম, অভ্যুদয়) আর আপনি সেটাকেই ভেবে বসে আছেন 'আর্য সভ্যতার বিকাশ' (বিকাশ অর্থ উন্মেষ, প্রকাশ) হিসেবে। কোনো সভ্যতার অভ্যুদয় যে রাতারাতি সম্ভব নয় তা অনুমান করা যায়। কাজেই আরও আগে থেকেই যে আর্যরা ভারতে আসতে শুরু করেছিল তাতে আর সন্দেহ কী। "The earliest history of the Aryans in India is called the Rigvedic Period (1700-1000 BC."--এই লাইনটি তাই ঠিকই আছে। কিন্তু ভারতে আর্য সভ্যতার উৎপত্তিটা ঠিক কোন সময়ে হলো? উইকিপিডিয়া যে বলছে--"The Indo-Aryans in these areas established several powerful kingdoms and principalities in the region, from eastern Afghanistan to the doorstep of Bengal."--এই ঘটনাটি ঠিক কখন ঘটল? বোঝার সুবিধার্থে আপনারই দেয়া লিংক থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি--"In the early centuries of Later Vedic Period or Brahmanic Period (1000-500 BC), the Aryans migrated across the Doab, which is a large plain which separates the Yamuna River from the Ganges. It was a difficult project, for the Doab was thickly forested; the Aryans slowly burned and settled the Doab until they reached the Ganges."
এখন আপনিই বলুন ‘আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে'-লোনলি প্ল্যানেটের এ লাইনটি ভুল না ঠিক? উইকিপিডিয়া, এমনকি আপনার দেয়া লিংকটিতেও একই কথা পাওয়া গেল। সবারই কি তাহলে ভুল হচ্ছে, নাকি আমার বোঝানোর বা আপনার বোঝার ভুল?
মহাভারত রচনার সময়কালটাও দয়া করে শুদ্ধ করে নেবেন।
আপনার দেয়া লিংক থেকেই উদ্ধৃতি দিচ্ছি--"There have been many attempts to unravel its historical growth and compositional layers. The earliest parts of the text are not appreciably older than around 400 BCE." আপনারই দেয়া এই লিংকটিও বলছে--"the Mahabharata and the Ramayana, though they were composed between 500 and 200 BC, were probably originally formulated and told in the Later Vedic Period (1000-500 BC)."
এখন আপনিই বলুন মহাভারত কবে রচিত (লিখিত নয়) হয়েছে? রচিত হওয়া আর লিখিত হওয়ায় যে একটা পার্থক্য আছে সেটা জানেন তো? তাহলে এখন বলুন মহাভারতকে "প্রায় ৩০০০ বছর আগের হিন্দু পুরাণ" বলাটা লোনলি প্ল্যানেটর (এবং কোট করায় আমারও) অন্যায় হয়েছে কি না? এবং মহাভারত রচনার (লিপিবদ্ধ হয়েছে পরে, ধাপে ধাপে--The text probably reached its final form by the early Gupta period (ca. 4th c. CE). সময়কালটা শুদ্ধ করতে হবে কি না?
২.
মহাভারতের পুন্ড্র রাজ্য আর পুন্ড্রবর্ধন এলাকা যে একই বুঝে নিতে তেমন কষ্ট হয় না।
পুন্ড্রবর্ধন এলাকাটি ঠিক কখন পুন্ড্র রাজ্য হয়ে উঠল? সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য 'পুন্ড্র দখল' করার আগে না পরে? আগে হলে পুন্ড্রের রাজা কে ছিলেন? আগে থেকেই সেটি একটি 'রাজ্য' হয়ে থাকলে চন্দ্রগুপ্ত স্রেফ একজন দখলদার। নচেৎ "চন্দ্রগুপ্ত পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন" মর্মে লোনলি প্ল্যানেট যে কথা প্রচার করছে তাকে ভুল যাবে না। আমি অবশ্য চাইব এই কথাটি কেউ ভুল প্রমাণিত করুক (আমি নিজেকে অনার্য ভাবতেই পছন্দ করি কিনা, তাই আমি পুন্ড্রদের দলে)। আছেন কেউ?
আপনি লেখার শুরুতে বরেন্দ্রর কথা বলেছেন ‘রাজপুত্র ভীম-এর বরেন্দ্রসহ পূর্ব ভারত বিজয়ের কথা, প্রাচীন এই রাজ্যটিই বর্তমানের বাংলাদেশ’- বরেন্দ্র কোন রাজ্য নয়; অঞ্চল যার মধ্যে এই পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্র রাজ্য অন্তগর্ত।
আমি 'বরেন্দ্র'কে কখন আবার রাজ্য বললাম?
৩.
গুপ্ত শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্ম সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছিল- এ বাক্যটা একটা প্যারাডক্স। উইকি কী বললো এখানে তাতে আমার কোন মাথাব্যথা নাই।
এই প্রজন্মের তরুণরা কিন্তু রেফারেন্স ছাড়া কোনো কথা মেনে নিতে রাজি নয়। লোনলি প্ল্যানেট বা উইকি যে ভুল বলছে তা প্রমাণ করার জন্য চাই রেফারেন্স, আমি এইটুকুই বুঝি।
ইতিহাস লিখতে হয় নির্মোহভাবে, সেখানে গায়ের জোরে কোনো বক্তব্য চাপিয়ে দেয়া যায় না।
একমত। এ কারণেই মুঘল সাম্রাজ্য সম্বন্ধে বাংলাদেশ, ভারত, বা পাকিস্তান কারও পারসপেক্টিভেই ইতিহাস নির্মোহ হবে না বলে ধারণা করেছি। অন্তত 'লোনলি প্ল্যানেটের সাহেবদের' (কপিরাইট পান্ডুদা) মুঘলদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানোর কোনো কারণ নাই বলে মনে হয়েছে।
৪.
আপনি গৌড়কে একবার সাম্রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবার পরে বলছেন বঙ্গের রাজধানী গৌড়। আমার ধারণা এতে আমার মতো আমপাঠকরা সহজেই বিভ্রান্ত হবেন।
আপনার দেয়া লিংক দুটি থেকে এখানে পাশাপাশি কোট করে দিলাম
Gauda (Bengali: গৌড়), was a territory located in Bengal in ancient and mediaeval times.
Gour, or Gaur (Bengali: গৌড়), as it is spelt mostly in modern times, or Lakhnauti is a ruined city
'গৌড়' নামে একটি সাম্রাজ্যও ছিল, শহরও ছিল। দোষটা উইকি, লোনলি বা আমাকে দিয়ে লাভ নেই। কী বলেন? দোষ দিতে চাইলে ওই 'গৌড়' নামটিকে বা বাংলা ভাষার বানানকে দিতে পারেন।
খাপছাড়াভাবে একখান থেকে শুধু অন্যখানে লাফ দিয়ে চলে গেছেন।
আপনার এই লাইনটিকে আমি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। তবে একটু অসুবিধাও আছে কিন্তু। পর্যটন গাইডে ইতিহাসের কচকচি যতটুকু সম্ভব কম থাকাটাই মনে হয় বাঞ্ছনীয়। বড়জোর কিছু চুম্বক কথা থাকতে পারে। অবশ্য ইতিহাস নিয়ে যে রকম প্যারাডক্স দেখছি তাতে বই থেকে এই চ্যাপ্টারটা বাদই দেব নাকি ভাবছি। ভালো থাকবেন।
কুটুমবাড়ি
এসব ত্রুটি নিয়ে লেখাটি লক্ষাধিক বছর ইন্টারনেটে থেকে যেতে পারে। ইতিহাস নিয়ে ভুল লেখা গুরুতর ব্যাপার।
অতিথি লেখকের লেখা সম্পাদনার সুযোগ যেহেতু নেই, লেখাটি উঠিয়ে নেয়ার কথা চিন্তা করা যেতে পারে।
সহমত। তবে তার আগে দরকার সত্যিই ইতিহাস নিয়ে ভুল লেখা হয়েছে কি না তা যাচাই করা।
কুটুমবাড়ি
টাইম নেন। ভ্যারিফাই করেন। তারপর লিখেন। আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন নাই। কিন্তু মেথডে ঘাপলা আছে। এই বিষয়টাই এমন, যে ভুলভাল লেখার স্কোপ নাই।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। এর পর থেকে যতটা সম্ভব লেখার আগে ভ্যারিফাই করব, যা একটা শিক্ষা হলো! এবার না হয় লেখার পরেই ভ্যারিফাই করলাম। তা ভ্যারিফাই করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত পোস্টে 'সিন্ধু' নদীরে 'ইন্দুশ' বলা ছাড়া আর কোনো ভুল পাওয়া যায় নাই। অথচ ইতিহাস বিকৃতি থেকে শুরু করে কত কথাই না শুনতে হলো। আগেও লক্ষ করেছি প্রথমে কেউ একজন বিরূপ মন্তব্য করলে বাকি সবাই তাকে অনুসরণ করে মন্তব্য দিতে শুরু করেন, যাচাই-বাছাই না করেই। বিশেষ করে অতিথি লেখকদের পোস্টে এ ঘটনাটি বেশি ঘটে বলে আমার ধারণা।
লাইনটি ঠিক বুঝতে পারলাম না। আপনি কি বলতে চেয়েছেন যে লেখাটি ঠিক নির্মোহ হয় নাই, বা এ ধরনের কিছু? অথবা আরও তথ্য যুক্ত করার প্রয়োজন ছিল?
মেথডের ঘাপলাটা কোথায় দেখিয়ে দিন, কথা দিচ্ছি শোধরানোর চেষ্টা করব।
কুটুমবাড়ি
অন্যের 'দেখাদেখি' মন্তব্য করসি মনে করলে কিসু করার নাই। আর অতিথি বইলা মারমুখি হইলাম, এইটাও একটা দুঃখজনক ভুল ধারণা। তারপরও মন্তব্যের জবাব দেই।
ইতিহাস তো খালি কতগুলা তথ্যের সমষ্টি না। ভাষার মধ্যে রাজনীতি থাকে। সতর্ক থাকতে হয়। সেইগুলা নিয়া সময় পাইলে লিখব। পইড়েন তখন ইচ্ছা হইলে।
আর মেথড বলতে ক্রসচেক করার কথা বুঝাইসি। ক্রসচেক এবং প্রয়োজনে ক্রসরেফারেন্স। যেমন একটু ক্রসচেক করলেই বুঝতেন ইন্ডিয়ান কংগ্রেস পার্টির অফিশিয়াল নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস। এবং এই নামটাই ব্যবহার করা সঙ্গত।
ইতিহাস জিনিসটাই বিপজ্জনক। নিজের ঘাড়ে ইতিহাস বর্ণনের দায়িত্ব তুইলা নেয়া যেমন যায় না, তেমনি লোনলি প্ল্যানেটের একার উপরও তুলা যায় না। আশা করি বুঝলেন ...
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
হুম, বুঝলাম।
আমি কিন্তু সরাসরি কথাটা আপনাকে বলি নাই। আপনার মন্তব্য আমার কাছে ইতিবাচক এবং গঠনমূলকই মনে হয়েছে।
অপেক্ষায় থাকলাম পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
উপরের মন্তব্যকারীদের সাথে আমি একটু দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই, এই অর্থে যে, আমার মনে হয় এই লেখাটার মধ্যে ভুলভালগুলির ব্যাপারে পাঠক/মন্তব্যকারী হিসেবে আমরা বোধহয় আরো একটু সহনশীল, সহানুভুতিশীল ও ক্ষমাশীল হতে পারি।
মনে রাখতে হবে যে এটা একটা ভ্রমন-গাইডবইই মাত্র - কোন ইতিহাসগ্রন্থ, একাডেমিক/গবেষনাধর্মী প্রবন্ধ, এমনকি সাধারন বিশ্বকোষও নয়। এর মূল বা প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্টিমেটলি একটি অর্থনৈতিক/অর্থকরী কর্মকান্ডের/পণ্যের প্রচার-প্রসার, এবং এটা নিজেও স্বঘোষিত ভাবেই ঐরকমই একটা পণ্যই শেষমেশ। সুতরাং এর কাছে অত রিগোরাস একাডেমিক পদ্ধতি-প্রকরন প্রত্যাশিত নয়। বরং এর ওরিয়েন্টেশনটা যে একটু প্রচারধর্মী ও 'মোহসৃষ্টিকারী' ('নির্মোহ' হওয়ার বদলে) হবে সেটাই বরং প্রত্যাশিত এবং স্বাভাবিক। সেজন্যেই এর নাম 'বাংলাদেশ ভ্রমন গাইড', বাংলাদেশের ইতিহাস-বাংলাদেশের অর্থনীতি- এমনকি বাংলাপিডিয়া বা ঐ রকম কিছু নয়।
ইতিহাস এর মূল ফোকাসও নয়। একাডেমিক লেখার মতো এখানে পদে পদে রেফারেন্স টানার বা তথ্য সূত্র উল্লেখ করে এটাকে পিএইচডি সন্দর্ভ বানানোর কোন প্রয়োজন দেখি না। তাছাড়া ইতিহাস বিষয়টাই বহুলাংশে বিতর্কিত ও পার্স্পেক্টিভের ব্যাপার - রেফারেন্স দিয়েও সবাইকে খুশী করা যাবে না। যেমন মন্তব্যকারিদের মধ্যেই একজন স্পষ্টত তা হননি উইকির ব্যাপারে। তার হয়তো যুক্তি আছে। আরেকজন হয়তো আরেকটা রেফারেন্স নিয়ে অসন্তুষ্ট হবেন -- তারো কিন্তু একটা যুক্তি থাকবে যেটা কোন অংশেই কম ভ্যালিড হবে না তার নিজের চোখে অন্তত। পার্স্পেক্টিভের বেলাতেও তাই। কারো চোখে দ্বাদশ শতাব্দী হচ্ছে স্বর্নযুগের শেষ আর অন্ধকার যুগের শুরু। আবার কারো চোখে ঠিক এর উল্টোটা। কে ঠিক ? এই বিতর্কের আসলে কোন শেষ নেই। আসলে একসাথে সবাইকে খুশি করা কখনই সম্ভব নয়।
সুতরাং, এটুকু অন্তত আমাদের মেনে নেয়া উচিত যে একটা 'ভ্রমন-গাইড' ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি/রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি অতি উচ্চস্তরের জ্ঞানচর্চার একাডেমিক বা বিশেষায়িত পদ্ধতি-প্রকরন-মেথডলজি-এপ্রোচ-পার্সপেকটিভ ইত্যাদি নিয়ে বিপুল তর্কযুদ্ধের উপযুক্ত অঙ্গন নয়।
আর হ্যাঁ, এক-আধটু তথ্য-বিভ্রাট বা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেই কি একটা লেখা ব্যান করে ("উঠিয়ে নেয়ার") দিতে হবে ? (৪ নং পোস্ট দ্রষ্টিব্য)। সচলায়তনের, বাংলাদেশের, পৃথিবীর, বা বিশ্বব্রহ্মান্ডের কয়জন লেখক সবসময় ১০০% নির্ভুল লিখেন ? আসলে এমন বক্তব্য ও দৃষ্টিভংগির মধ্যে কোথায় যেন একটা সর্বাত্নকবাদী গন্ধ আছে। কিছু পছন্দ না হলেই এই রকম ব্যান...ব্যান...ব্যান বা সেন্সর...সেন্সর...সেন্সর... জাতীয় তেড়ে আসা বাকরুদ্ধকারী সর্বাত্নকবাদী মনোভঙ্গির আমি চরম বিরোধী। এ ব্যাপারে সচলায়তনের পলিসি কি ?
আসলে আমার মনে হয়, ভুল হলে সেগুলি ধরিয়ে দিয়ে লেখককে সেগুলি সংশোধন করে লেখাটাকে আরো উন্নত করার ব্যাপারে উৎসাহিত করাটাই এই ক্ষেত্রে অন্তত সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হবে। বাংলাদেশে আমাদের তেমন ভালো কোন ভ্রমন-গাইড নেই, তাই সেই স্পিরিটে শুরু করা একটা উদ্যোগকে আমাদের সাপোর্ট করাই উচিত। নির্মোহ সমালোচনা, পরামর্শ, সংশোধনী ইত্যাদি দিয়ে। তবে অঙ্কুরেই লেখককে নিরুৎসাহিত [বা তার কোন লেখা নিষিদ্ধ] করে ফেলাটা হবে অত্যন্ত অন্যায়, অসংবেদনশীল, ক্ষতিকর এবং সামগ্রিক বিচারে অপরিনামদর্শী।
লেখকের কাছে শুধু দুইটা অনুরোধ --
১. নিজের দেশের ব্যাপারে লিখছেন যেহেতু, সেহেতু শুধুমাত্র লোনলি প্ল্যানেট আর উইকিপিডিয়ার উপরে ভরসা না করে আরেকটু কষ্ট করে নিজ দেশের বইপত্র ঘেটে লেখার চেষ্টা করুন। লোনলি বা উইকিতো থাকলোই হাতের পাঁচ। অবশ্য বিদেশে থাকলে এটা একটু কঠিনই হবে বোধহয়, তবে অসম্ভবও নয় সম্ভবত। আমি দেশে থাকি তাই এব্যাপারে নিশ্চিত বলতে পারবো না। কিন্তু আপনিও দেশেই থাকলে এব্যাপারে কোন অজুহাতই খাটবে না অবশ্য। যাই হোক, এতে করে লেখাটাও আরো ভালো হবে আবার পাঠকের সমালোচনা বা অভিযোগের তীর থেকেও বাঁচতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা, লেখক হিসেবে পাঠকের কাছে আপনার একটা অনিবার্য নৈতিক দায়বদ্ধতা আছে -- ভুলত্রুটির সম্ভাবনা মেনে নিয়েও সবার আগে এই কথাটা স্বীকার ও হজম করে নিতে হবে। ভুলভাল সংশোধন করা যায়, কিন্তু দায়িত্ববোধের অভাব বা অসচেতনতার সংশোধন খুবই কঠিন। এটা না থাকলে আপনার রিসার্চে ঘাটতি থেকেই যাবে এবং ভুল হতেই থাকবে অন্যের শত সংশোধনী সত্বেও। এক পর্যায়ে নির্দোষ ও উৎসাহব্যাঞ্জক সমালোচনা এবং সংশোধনী আর ততটা নির্দোষ বা উৎসাহব্যাঞ্জক থাকবে না। আমি বলছি না যে আপনার এক্ষেত্রে সিরিয়াস ঘাটতি আছে, এটা আপনাকে নিজেই বুঝে নিতে হবে। বিশেষ করে, যার লেখা বা তথ্যের উপর ভিত্তি করে মানুষ দুরদুরান্তে বা অচেনা স্থানে যাবে, তার লেখায় তথ্যবিভ্রাটের কারনে তাদের যদি কোন গুরুতর বিভ্রান্তি, ভোগান্তি বা বিপদে পড়তে হয় - তখন কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছেন ? আপনাকে তাদের কেউ যদি হাতের নাগালে নাও পায় ( ), তারপরও এর কিউমিলিটিভ ইফেক্ট আপনার জন্য সুখকর নাও হতে পারে। এজন্যে তথ্যের নির্ভুলতার ব্যাপারে অনেক সচেতন হতে হবে, বিশেষ করে যে কোন দৃশ্যমান, বর্তমান, ট্যাঞ্জিবল বা এ্যকশনেবল তথ্যের ব্যাপারে। তবে এব্যাপারে, আমার মতে তাত্ত্বিক বিষয়ে সাব্জেক্টিভ বা নন-ট্যাঞ্জিবল পার্স্পেক্টিভ, মোহ-ননমোহ, ইত্যাদি বিতর্কের ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব না দিলেও চলবে। এই বিশেষ ক্ষেত্রে একটু সরল 'সমোহ' প্যাট্রিয়টিক ও সফট-ন্যাশনালিস্টিক দৃশটিভঙ্গি গ্রহন করলে কোনই অসুবিধা নাই। বরং ভালো হবে। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মত।
২. অন্যের সমালোচনা আর সংশোধনীর ব্যাপারে আরো একটু কম ডিফেন্সিভ হলে ভালো হয়। এব্যাপারে একই সাথে নন-ডিফেন্সিভ, থিক-স্কিনড, বিনয়ী ও সিলভার-টাংগড (বা হানি-পেনড?!) এবং শার্প-রিসার্চার হতে পারলে ভালো হয়। বিশেষ করে আপনার অরিজিনাল তথ্য যদি খুব সীমাবদ্ধ রিসোর্স বা সুত্র ভিত্তিক হয়, এবং যেহেতু ভ্রমন-গাইড বিধায় আপনার দেয়া তথ্যের মধ্যে অধিকাংশই ট্যানজিবল ও এ্যকশনেবল হতে বাধ্য এবং তার মধ্যে ভুল থাকলে সেগুলি অন্যের জন্য পোটেনশিয়ালি বিপজ্জনক বা ক্ষতির কারন হতে পারে, সেহেতু এছাড়া গত্যন্তর নেই।
.
দু-একটা ছোটখাটো বিচ্যুতি বাদ দিলে বাঁধিয়ে রাখার মতো একটা মন্তব্য। আপনার মন্তব্যটি যেন যাত্রাপালার বিবেকের মতো মনে হলো। অবশ্য কারও কারও কাছে হয়তো আপনার কথাগুলা ভালো লাগবে না। আমি অন্তত বিয়াপক অনুপ্রেরণা পাইলাম আপনার কথায়, আশা করি হতাশ করব না। ধন্যবাদ জানিয়ে আর খাটো করলাম না আপনাকে। ভালো থাকবেন।
কুটুমবাড়ি
নতুন মন্তব্য করুন