দিনাজপুর এর কান্তজিউ মন্দির এর নাম শুনেন নাই এমন মানুষ বোধহয় কমই আছেন। কিন্তু দিনাজপুর শহরে যে কান্তিজিউ মন্দির এর চাইতে আরও পুরানো এক রাজবাড়ি আছে তা বোধহয় অনেকেই জানেন না। কারন এই রাজবাড়ির কোন যত্ন বা সংরক্ষন নাই। সংস্কার এর নামে আছে বিকৃত করার প্রচেষ্টা। নানাবাড়ি হওয়ায় দিনাজপুর এ যাওয়া হয় বছরে এক দুবার ।এবার ভাবলাম রাজবাড়ির কিছু ছবি তুলবো। সিলেট থেকে রাতের কোচে যাত্রা করে ঢাকা ,তারপর কোন বিশ্রাম না নিয়েই সকাল ৮ টার কোচে দিনাজপুর যাত্রা শুরু করেও দুশ্চিন্তায় পরে গেলাম দিনাজপুর পৌছে সময় আর আলো পাবো তো।কারন পরদিন সকালে গ্রামের বাড়ি ঠাঁকুরগাও যেতে হবে বাবার কবর জিয়ারত করতে। তারপর সরাসরি ফিরতি পথে সিলেট (পেশায় দন্ত চিকিৎসক হওয়ায় সময় বের করাটা একটু কঠিন ব্যাপার)। যমুনা সেতু দিয়ে পার হয়েও ঢাকা থেকে দিনাজপুর পৌছাতে পৌছাতে বিকেল ৪;৩০ বেজে গেল। বড়মামার বাসায় ব্যাগ রেখেই ক্যামরা নিয়ে ছুটলাম রাজবাড়ির দিকে ... আমাকে অবাক করে সঙ্গি হল আমার ছোট ভাই (পরে শুনেছি ফেসবুকে এ প্রোফাইল পিকচার করার জন্য কিছু ভাল পোরট্রেইট তোলা তার আসল উদ্দেশ্য ছিল)। দিনাজপুর শহরে এবার দেখলাম ব্যাটারী চালিত অটো রিস্কাতে ভরে গেছে। এমনই এক অটো রিস্কাতে পৌছে গেলাম দিনাজপুর রাজবাড়ি।
দিনাজপুর রাজবাড়ির মূল ফটক দেখেই একটা ধাক্কা খেলাম... সৎস্কার এর নামে যা করা হয়েছে তা হল "চুনকাম" তবে ভিতরে ঢোকার পর দেখলাম মূল রাজবাড়িতে এমন কিছু করে নাই।
রাজবাড়ির ভিতর ঢোকে ডান দিকে গেলে কৃঞ্চ মন্দির।
১৭০০ শতকে তৈরি করা কৃঞ্চ মন্দির এর গঠনশৈলী সত্যি মুগ্ধ করার মতন... শেষ বিকেলের আলোতে তাড়াতাড়ি কিছু ছবি তুলে নিলাম।
মন্দির এর পাশেই দেখতে পেলাম এক ছোট দেবীর মূত্তি।। পরে শুনেছি এটাকে গাড়ুদা বলে।থাইল্যান্ড এয়ারলাইনস এর নাম কেন গাড়ুদা তা এবার বুঝলাম।
কৃঞ্চ মন্দির এর উল্টা পাশেই রয়েছে নাত মন্দির। এখানে দূরগা পুজার সময় অনেক আয়োজন করে পূজার অনুষ্ঠান হয় শুনলাম।
মূল রাজবাড়ি ভবন্ এর সত্যিই জরাজীন্ অবস্থা। প্লাস্তারের আস্তর খুলে পরা দেয়ালগুলা যেন নিজেদের আস্তিত্ত কোনমতে ধরে রেখেছে কঙ্কাল এর মতো। বুনো লতা আর গাছ এ অনেক জায়গা ঢেকে আছে। দালান এর ছাঁদ এবং মেঝে জায়গায় জায়গায় ভেঙ্গে পরেছে। পরে শুনেছি ১৮৯৭ সালে নাকি এক বড়মাপের ভূমিকম্প হয়ে এমন হয়েছে।
যাই হউক ছবি তোলার জন্য দোতলায় উঠার পথ খুঁজে হয়রান হয়ে শেষ পযন্ত টারজান স্টাইল এ গাছ ধরে ভাঙ্গা ইটে পা রেখে উঠে পরলাম ২য় তলায়... কোন প্রকার সংরক্ষন নাই এখানে... মানুষ জন খুব একটা আসে না। তাই মনে হয় অসামাজিক কাজ এর আস্তানা হতে চলেছে জায়গাটা... ইতস্থত পরে থাকা কিছু ফেন্সিডিল আর সিগারেট এর টুকরো দেখে তাই মনে হল। একটু যেন ভয় ভয় লাগা শুরু হলো... সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো। তাড়াতাড়ি কিছু ছবি তুলে দেখি ছায়ার মত কিছু একটা যেন আসছে... কে বলতে যাব এই সময় দেখি সজিব ... আমার ভই পাওয়া না বুঝলেও খুব হাসতে হাসতে বলল... "এই দিকে এত ভালো একটা সিড়ি ছিলো আর তুমি কিনা এত কসরৎ করে উঠলা"!!! আধার নামে আসার আগেই নেমে এলাম উপর থেকে... রাজবারির সামনে অপরিকল্পিত ভাবে অনেক বড়বড় গাছ... সামনের ছবি আসেনা... গাছের জন্য... একটা বড় দিঘি আছে দেখলাম। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় ভাল ছবি আসলোনা।
দিনাজপুর রাজবাড়ি থেকে অনেক কিছুই জাতীয় জাদুঘর এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু গৌরবময় এই রাজবাড়ি ধংসব হতে চলেছে। অথচ ঠিকমত সংরক্ষন করলে এই রাজপ্রসাদেই গড়ে তোলা যেত অনেক সমৃদ্ধ এক জাদুঘর।
মন্তব্য
বিষয়টা তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ।
ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ
উদ্ধৃতি
থাইল্যান্ড এয়ারলাইনস এর নাম কেন গাড়ুদা তা এবার বুঝলাম।
গাড়ুদা ইন্দোনেশিয়ান এয়ারলাইনস্ এর নাম। ছবি ভাল হয়েছে।
ধন্যবাদ। এইটা কান্তজির মন্দির না ... রাজবাড়ির ভেতর কৃঞ্চ মন্দির
মন্দিরটি কান্তজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির নামেও পরিচিত।
আপনার ছবি তোলার হাত বেশ ভাল। ভ্রমণকাহিনি লেখা চালিয়ে যান।
ফাহিম হাসান
গারুদা নয়, গারুড়া, সোজা কথায় গরুড়, আর ইনি তো দেবতা বলেই জানতাম, দেবী নয়। ( 'D' = ড়, যেমন Godzilla আসলে গড়যিলা)
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
দিনাজপুর রাজবাড়ি আর কান্তজীর মন্দির সমসাময়িক। দিনাজপুরের রাজারাই (মহারাজা প্রাণনাথ আর তার পালক ছেলে রাম নাথ) এটা স্থাপন করেছেন। রাজবাড়ির ভেতরে যে মন্দির সেখান থেকে বিগ্রহ কান্তজির মন্দিরে বেড়াতে যায় শুনেছিলাম। আপনার বাড়ি যেহেতু দিনাজপুরে তাই সেখানকার ইতিহাস আপনার ভালো জানার কথা। দিনাজপুরের ইতিহাস নিয়ে সেখানকার ইতিহাসবিদ মেহরাব আলীর বেশ কয়েকটা বই আছে, পড়ে দেখবেন, খুবই তথ্য বহুল। দিনাজপুরের ভ্রমণ বিষয়ক লেখা লেখতে তখন খুব সহজ হবে এবং আমরাও আরো আগ্রহ নিয়ে পড়তে পারবো।
আমি দিনাজপুর গিয়েছিলাম অনেক আগে। আবছা আবছা রাজবাড়ির কথা মনে আছে, আবছা বললাম এজন্যই যে আমার ধারণা রাজবাড়ির ভেতরের মন্দিরটি লায়ন গেট দিয়ে ঢোকার পর বাম দিকে দেখেছিলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
Tales of history relate that Dinajpur derived its name from Raja Dinaj or Dinaraj, founder of the Dinajpur Rajbari. But others say that after usurping the Ilyas Shahi rule, the famous Raja Ganesh of the early 15th century was the real founder of this house for a brief period. At the end of the 17th century Srimanta Dutta Chaudhury became the zamindar of Dinajpur and after him, his sister's son Sukhdeva Ghosh inherited the property as Srimanta's son had a premature death. Sukhdeva's son Prannath Ray became famous and powerful and began the construction of the famous Kantanagar Nava-Ratna Temple, now known as the Kantajir Mandir, one of the most precious heritage structure
লেখা-ছবির জন্য ধন্যবাদ। যাওয়া ইচ্ছা হইল।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আমি এখনো কান্তজীর মন্দির পর্যন্তই যেতে পারলাম না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ছবিগুলোর জন্য ধন্যবাদ। আমি এখানে গিয়েছিলাম। কেউ তেমন যায় না দেখে অবাক হয়েছি। সন্ধ্যা হলে জায়গাটায় কেমন গা ছমছম করে।
দিনাজপুর রাজবাড়ী'র আরও কিছু ছবি...
http://dinajpur.weebly.com/24702495247224942460247424972480-2480249424602476249425242496.html
নতুন মন্তব্য করুন