কানাডায় আছি প্রায় দুই বছর ধরে। প্রথমদিন আসার যে অভিজ্ঞতা, সেটা আগেই একদিন বলে ফেলেছি। আসার একমাসের মধ্যেই আমার মনে হয়েছে এই দেশে আর যাই হোক বেশিদিন থাকা যাবে না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে ভাগতে হবে। কিন্তু পালানো যদি এতই সহজ হতো তাহলেতো আর মানুষ সারাক্ষন ভাগতে চাইতো না। যাইহোক একবারে ভাগতে না পারি কিছু সময়ের জন্যেতো সেটা করাই যায় কিন্তু সেটাও কারণে, অকারণে হচ্ছিল না। অবশেষে দেশে যাওয়ার প্ল্যান করেই ফেললাম একমাসের জন্যে। সামনের দিনগুলা সেই খুশিতেই কাটবে বলে মনে হচ্ছে।
এই দুই বছরে মনে মনে বহু প্ল্যান করেছি যে দেশে গিয়ে কি কি খেতে হবে।একেক সময় একেক ধরনের খাবারের কথা মনে পরেছে আর মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। আজকে মনে হলো তার একটা লিস্ট না করে রাখলে হয়তো দু’একটা বাদ পড়ে যেতে পারে।
১.’সোহাগ’এর কালাভুনাঃ
বুয়েটে হলে থাকতে প্রায়ই চানখারপুলে ‘সোহাগে’ যাইতাম এই কালাভুনে খেতে। অনেক জায়গায়ই গরুর মাংস খাইছি কিন্তু কালাভুনার সাথে আর কিছুর তুলনা চলে না। আমি এমনকি অনেকগুলা রোজার সেহরীও করছি কালাভুনা আর পরোটা দিয়ে। এইবার দেশে গিয়ে অন্তত একবারতো কালাভুনা খাইতেই হবে।
২. ‘মুস্তাকিম’এর চাপঃ
এইটাও হলে থেকে মাঝে মাঝে খাইতে যাইতাম। চাপের সাথে মচমচে লুচিভাজা। উফস, মনে হচ্ছে এখনো মুখে লেগে আছে। এইটাও অবশ্যই খাইতে হইবো। চাপের সাথে সাথে গরুর মগজও আমার বেশ পছন্দের।
৩. ‘নান্না’র বিরিয়ানীঃ
প্রেম শুরু করার পরে বেচারাম দেউরীতে পুরান ঢাকার চিপা গলি পার হয়ে শুধুমাত্র নান্নার বিরিয়ানী খাওয়ার জন্যেই যাইতাম। মাঝে মাঝে ভ্যারাইটির জন্যে মোরগপোলাউও খাইতাম। সেখানকার বোরহানীটাও আমার বেশ প্রিয়। আমি অবশ্য নিশ্চিত না আমার বউ কোনটা পছন্দ করে, মোরগ পোলাউ না বিরিয়ানী। এইবার খাওয়ার সময় সেটা নিশ্চিত হতে হবে।একদিন সেখানে যাওয়ার পরে নামলো ঝুম বৃষ্টি। আমরা যখন জেলখানা রোডে উঠি, দেখি বৃষ্টির পানি জমে গেছে। আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত সীটের উপরে পা উঠিয়ে জায়গাটা পার হয়েছিলাম।
৪. ‘মামা’ হালিমঃ
যদিও আমি হালিমের খুব বেশি ভক্ত না কিন্তু রোজার ইফতারী আসলে হালিম ছাড়া হয় না আর হালিমের মধ্যে মামা হালিম আসলেই বেস্ট।
৫. ‘হাজী’র বিরিয়ানীঃ
দেশে থাকতে এটা আমার একবারও খাওয়া হয়নি। একবার সব বন্ধুরা মিলে গিয়ে জায়গার অভাবে খাইতে পারিনি। এইবার আশা করি অবশ্যই পারবো।
৬.পুরীঃ
এই দেশে এসে পিয়াজু, বেগুনী এইসব ভাজাপোড়া সবই খাইছি কিন্তু পুরীটা খাওয়া হয়নি। বিকালে আমরা বন্ধুরা মিলে পাড়ার দোকানে পুরী আর চা এই ছিল আমাদের বিকালের নাস্তা। পুরী এবার সাধ মিটায়ে খাইয়া আসতে হবে।
৭. ফুচকা আর চটপটিঃ
এই জিনিসটা যদিও কানাডায় এসেও খাইছি কিন্তু দেশে খাওয়ার যে মজা সেটা পাইনি। প্রায়ই আমরা বন্ধুরা মিলে ধূপখোলা মাঠের সামনে গিয়ে ফুচকা খাইতাম। অনেকের কাছে জাদুঘরের সামনের ফুচকা চটপটি ভালো লাগে, আমার অবশ্য আমাদের এলাকারটাই ভাল্লাগে।
৮. মোগলাই পরোটাঃ
এই আরেকটা তেলেভাজা জিনিস আমি এখানে মিস করি। আমি এখনো নিশ্চিত না, কোথায় সবচেয়ে ভালো মোগলাই পাওয়া যায়।
৯. চাইনীজ খাবারঃ
কানাডায় প্রথমদিন এসেই চাইনীজ( আসলে ভিয়েতনামীজ) খাবারে যে অভিজ্ঞতা হইছিল তার পরে ভাবছিলাম কানাডায় আর চাইনীজের ধারেকাছেও যাবো না। তারপরেও গেছিলাম একদিন বউএর কথায় কিন্তু গিয়া সেই একই জিনিস। এরপরে কানে ধরছি, আর না। এইবার দেশে গিয়াই চাইনীজ (খাবার) যা খাওয়ার খাইয়া আসতে হইবো।
১০. স্টারের ফালুদাঃ
স্টারে এতবার গেছি হলে থাকতে, শেষের দিকে আর ভাল্লাগতো না। তবে স্টারের ফালুদার মত ফালুদা আমি আর কোথাও খাইনি। কাচ্চিটাও অবশ্য জোসস।
আরো কিছু খাবার আছে যেমনঃ ফখরুদ্দীনের বিরিয়ানী, এটা কখনো খাইনি কিন্তু অনেক নাম শুনছি। কি জিনিস একবার টেস্ট কইরা দেখতে হইবো।
আর দই, হরেক রকমের মিষ্টি আর রসমালাই তো আছেই। এগুলার কথা আর বললাম না (মাফ কইরা দিলাম)।
পাগল মন
মন্তব্য
পিকনিক হয়েছে এবার? কেমন খেলেন?
পিকনিকে তো জটিল খাওয়াই দিসি...
পাগল মন
সোহাগের কালাভূণা ভালো না। ঢাকার আসল কালাভূনা খাইতে হইলে যাইতে হবে এফডিসির গেটে। গেটের পাশে দেখবেন কিছু ছাপড়া হোটেল। পরিবেশ দেখলে আর খেতে ইচ্ছা করবে না। কিন্তু সেখানে একবার কালাভূণা খেলে মঙ্গল গ্রহে গিয়েও মনে রাখবেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পরিবেশ ভালো না বলে নীলক্ষেতের তেহারী বেশি খাওয়া হয় না।
তবে যাওয়ার চেষ্টা অবশ্যি করবো। টেস্ট ভালো না হইলে কিন্তু খবর আছে।
পাগল মন
গতকাল আমি আর বউ মিলে তালিকা করলাম এবার দেশে গিয়ে কী কী খাবো। আপনার সাথে বেশি মিললো না।
১. দেশি চাইনিজ। থাই স্যুপ মেলা দিন খাই না।
২. আল-রাজ্জাকের বিরিয়ানি, ফালুদা। স্টারের ফালুদা ভালু পাই না।
৩. কারওয়ান বাজারের স্টার হোটেলের বিরিয়ানি, বোরহানি।
৪. ধানমন্ডি স্টার কাবাবের শিক কাবাব, পরোটা, আরো নানা কাবাব।
৫. হেলভেশিয়ার চিকেন ব্রোস্ট।
৬. মিষ্টি।
৭. ঘরোয়ার খিচুড়ি
৮. গাউসিয়া মার্কেটের নিচে ইয়া বড় জিলাপি
৯. নিউমার্কেটের ফুচকা
১০। একটা বিয়া খামু। কেউ দাওয়াত না দিলে ঠিক করসি এমনিই ঢুইকা পড়ুম
কয়েকটাতো মিলে গেছে।
আল রাজ্জাকে আমি কখনো খাইনি। সাহস দিলে যাবো।
আপনিতো মনে হয় স্টারের একনিস্ঠ ভক্ত। আপনারে স্টারের তরফ থিকা একবেলা ফ্রি খাওয়ানো উচিত।
হেলভেশিয়ারের চিকেন ব্রোস্ট ভালা পাই না।
ঘরোয়ার খিচুড়ি খাইনি কখনো। আর খিচুড়ি খাবো না। এখানে কিছু না থাকলেই এটা খাই। অভক্তি ধরে গেছে।
জিলাপিও আমার তেমন একটা পছন্দ না।
বিয়া খাইতে আমারো মন চায় কিন্তু সেটা মনে হয় সম্ভব না। তয় কানাডায় একটা খামু সামনের মাসে।
পাগল মন
২. ঢাকার সেরা ফালুদা বার্বিকিউ টুইনাইটের কাশ্মিরি ফালুদা! না খাইলে পস্তাইবেন!!
---------------------
আমার ফ্লিকার
---------------------
আমার ফ্লিকার
হুম। মিসেস নজু নাকি এটার খুবই ভক্ত। ট্রাই করে দেখুম।
এইটা কৈ তাতো জানি না।
পাগল মন
দেশি ষ্টাইলের চাইনিজ খাবারে শখ মনে হয় আপনি কানাডায়ও মেটাতে পারেন নেট সার্চ দিয়ে দেখেন ঘরের আশেপাশে ইন্ডিয়ান চাইনিজ কুজিন পাওয়া যায় এমন কোন রেস্টুরেন্ট আছে কিনা পাইলে চলে যান,যদিও আমি কানাডা থাকি না তারপরেও মনে হয় একটা দুইটা থাকবার কথা
নাহ, কানাডায় আর চাইনীজ খামু না (নিজের পয়সায় )। একবারে দেশে গিয়াই খামু ঠিক করছি।
পাগল মন
আপনার সাথে একমত হতে আপত্তি ছিল না, কিন্তু একটা অনুরোধ আছে তার আগে। চায়না টাউনের চিনে ঢাবা, বা বড় শহরে "ভারতীয়-চৈনিক" রেস্তোঁরা ট্রাই করে দেখুন না একবার। তারপর নাহয় মনস্থির করবেন, আমার হংকং স্টাইলের চিনে খাবার-ও বেশ লাগে, আপনি এমন দোকান ট্রাই করে দেখুন, যেখানে চিনে জনতা খেতে যায়।
-------------------------------------------------------------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
উহ্... লুল আর চোখের জলে কিবোর্ড ভিজে গেল গিয়া... আমি বেচারা তিনদিনের পুরোনো খাবার গরম করে খাচ্ছি বসে বসে...
কি আর করবেন?!
পাগল মন
আপনে তো দেশে থাকার সময় অনেক কিছুই খান নাই দেখি যাই হোক, ফখরুদ্দিন প্রথমবার খাইলে অনেক ভাল লাগার কথা। এলিফ্যান্ট রোডের ছায়ানীড়ের চিকেন ব্রোস্ট আর শর্মা খাইতে ভুইলেন না। [বুয়েটের ছোট ভাই হিসেবে ফ্রি আইডিয়া বিলাইলাম]
হুমম।
শর্মা অবশ্য শর্মা হাউসেরটা আমার ভাল্লাগে।
আইডিয়ার জন্য থ্যাংকস
পাগল মন
নতুন মন্তব্য করুন