দুটো মানুষের যৌথ একটা বছর মানে দুইটি সমান্তরাল বছর। মানে ধরো তুমি ঘন্টায় পৌনে দুই কিলোমিটার বেগে পশ্চিমে হাঁটছো আর আমি একই বেগে পূর্বে; ঘন্টায় আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে সাড়ে তিন কিলো। ধরো, একটা নবজাতক অশ্রুকে কেঁদে নিচ্ছে দুটি চোখ অথবা নদীর মত একটি অনিয়মিত রেখার চির ভাঙ্গছে ছাতিম গাছের নিচের দেয়ালটার দুইটি পিঠ। আমাদের মধ্যে এমন একটা “এক” আছে যা দুইয়ের মত; আবার কখনো অগুন্তি। যেমন অগুন্তি নক্ষত্র, একটা বিড়াল-কালো টি পটের ঢাকনির নিচে বোনা থাকে, আর আমরা সেই টি পটের মধ্যে বসে আলোর ফোটাগুলো গুনতে গুনতে ভুলে যাই হিসাব-নিকাস।
কালোর চেয়েও কুচকুচে কালো যে অন্ধকার লুকিয়ে থাকে পুরানো ট্রাঙ্কের ভেতর তেমন অন্ধকার একটা অঞ্চল আছে মানুষের খুব নিভৃতে, সংগোপনে। সেটা একা একা পায়চারীর ডুবি-ডুবি বারান্দা। সেখানে হেঁটে বহু রাত ভেবেছি; অথবা ভাবতে চেয়েছি যেভাবে ভাবিনি কখনো। এভাবে ভাবনার চোরা গলিতে হাঁটতে হাঁটতে জেনে গেছি আসলে যত যত শব্দ, ভাষা বা বাক্য নির্মানের কৌশল সবই ফাঁপা, তথ্য বিনিমের রূগ্ন প্রথা। তোমার মনে আছে? সেই কবে এক রেস্তোরায় দুপুরে যখন এক কাঠের টেবিল দুরত্বে মুখোমুখি তুমি আমি বসে ছিলাম। খুব সতর্কে শব্দগুলো বাছাই করে যেইনা বাক্যটা গুছিয়ে তোমাকে বলতে গেছি, বুঝেছি আসলে আমার অন্য কিছু বলার ছিল। আমার শব্দজ্ঞানে ঐ শব্দগুলো ছিল না। তবুও অদক্ষ অনুবাদে যা বললাম, তুমি তার কিছুই বুঝনি। অথবা ব্যাপারটা এমন হতে পারে আমাদের মধ্যে কোন ভাষাগত মিল ছিল না। অন্তত ঐ দুপুরের জন্য। আমরা বসে ছিলাম এক টেবিল দূরত্বে দুইটা ভিন্ন ডাইমেনশনে। তোমার কাছে পৌছানোর মত আমার কাছে কিছুই ছিল না। তোমাকে যা বলতে চেয়েছিলাম, তার কোন নিকট অর্থপূর্ণ শব্দ খুঁজে পাইনি আজো। সমুদ্রের আদ্র ঝড়ের মত তীব্র কিছু বলার ছিল তোমাকে। প্রেম নয়, ভালোবাসা নয়, বোধ নয়, দহন নয়, নেশা নয়, কী যেনো একটা কাজ করে…
মাঝে মাঝে ভাবি দাগী জোছনার রাতে একা ডিঙ্গি নৌকায় শুয়ে সুন্দরবনের ভেতর ভেসে যেতে কেমন লাগবে! আহা (পরি)পূর্ণ জোছনা!!! বার্থডে কেকের মত এক ফুঁতে সেই ভাবনার সব চাঁদ আর নক্ষত্র নিভিয়ে দেয় মৃদু একটা দমকা হাওয়া। অসহ্য এই শহর ছেড়ে এক দৌড়ে চলে যেতে ইচ্ছে হয় বনের ভেতর, পাহাড়ের পেট চেরা ঝর্ণার কাছে, পানির শব্দই সেই বনের ম্যাপ, আর তোমার খোঁজে আমার ট্রেজার হান্ট। মনের ভেতর একটা ঝাপসা বাস স্ট্যান্ড, ঝুম বৃষ্টি, তুমি আমি দুইটা গোল্ড ফিস খামোখাই ছাতা ধরা, গোল্ড ফিস কী জল ছাড়া বাঁচে? তবুও আঙ্গুলদানিতে ছাতা ধরে থাকি অকারণ!
এই অক্ষরমৃত বধিত্বের ডাকে ফিরে আসো তুমুল কোন রাতে; ফিরে আসো গহীনে, জুয়ারী জোছনার ঢলে স্বাগত প্লাবন হয়ে আসো জানালা ভেঙ্গে; ফিরে এসো কমিনিস্ট বিপ্লবের মিছিলে তীব্র আকাঙ্খার প্ররোচনায়; ফিরে এসো হে প্রজাপতি, বোধের এই দীর্ঘ বধিত্ব ভেঙ্গে গাই আবার বৃষ্টিগান…
মন্তব্য
অপূর্ব!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এরকম লেখা অনেকদিন পড়া হয়নি।
দারুণ উপমা।
অসাধারণ!
কবিতার মত করে..... দারুন লাগলো।
অনন্ত
দারুণ লাগল লেখাটা
লেখকের নামটা?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
লেখকের নাম কাজী আফসিন শিরাজী।
আপনার তো একটি সক্রিয় অতিথি অ্যাকাউন্ট আছে। আপনি সেটা ব্যবহার করছেন না কেন?
নিজের একাউন্ট ব্যবহার করতে ভাল্লাগে না। আর আমি চাই আমার লেখা যেন ওয়ান-টাইম-রিড টাইপ লেখা হয়। একবার পড়ার পর যেইটা হারায় যাবে। এতসব পার্সনাল ব্লগ, পার্সোনাল পাব্লিকেশন ভালো লাগে না।
বাহ্!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
নুহিন, তুমি আমার হৃদয়ের কথাগুলো লিখে ফেললে কিভাবে? জানো, আমারো এমনি কিছু অনুভূতি আছে, ঠিক এমনি... বলতে চেয়েও ভাষা হারিয়ে ফেলা। আমার জীবনের অদ্ভুততম স্মৃতি।
তোমার এই নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করাটাও খুব ভালো লাগছে। বিজ্ঞানপণের ভীড়ে মানুষ হারিয়ে যেতে বসেছে। আরেকবার তুমি আমায় জানিয়ে দিলে, তুমি হারিয়ে যাওয়ার মানুষ না। .
--------------------------------------------------------
নির্জন স্বাক্ষর
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
নতুন মন্তব্য করুন