দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দুটি নদী—গঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্র যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে সেখানেই কালের পরিক্রমায় গড়ে ওঠা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ। এই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র মোহনা অঞ্চলে প্রায় ৩০০০ বছর বা তারও পূর্ব থেকে যে জনগোষ্ঠীর বসবাস, তা-ই ইতিহাসের নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে বর্তমানের স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশরূপে। ভৌগোলিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে। এর ভূখন্ড ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, অর্থাৎ প্রায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের (আয়তন প্রায় ১ লক্ষ ৫১ হাজার ১৭০ বর্গ কিলোমিটার) সমান। [তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া]
পরিবেশ
ভূমি
বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিক ঘিরে আছে ভারত, অর্থাৎ অবশিষ্ট দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত মিয়ানমারের সাথে, যা প্রায় ২৮৩ কি.মি. লম্বা। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
রূপসী বাংলা |
যদিও কিছু ভূতত্ত্ববিদ বাংলাদেশকে ৫৪টি স্বতন্ত্র ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করে থাকেন, তবু দেশটি প্রকৃত অর্থেই সমতল এবং নদীগুলো অনুরূপভাবে বিশাল। অবশ্যই দুটি ব্যতিক্রম বাদে, একটি সিলেটের পাললিক পাহাড় শ্রেণী যা ভারতের আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত, অন্যটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সমান্তরাল শৈলশ্রেণী যা চলে গেছে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত।
প্রাকৃতিক পরিবেশ পাললিক সমভূমির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, মূলত এটি হিমালয়ের সাবমন্টান রিজিয়নের অংশ যা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। পিডমন্ট এরিয়া যা উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব প্রান্তে আসাম, ত্রিপুরা এবং মিয়ানমারের সন্নিকটবর্তী, তা বিভক্ত হয়েছে ময়মনসিংহ, সিলেট এবং চট্টগ্রামের পার্বত্য বনভূমিতে। হিমালয় থেকে উদ্ভূত মহান নদী গঙ্গা (বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পদ্মা) এবং ব্রহ্মপুত্র নদ দেশটিকে বিভক্ত করেছে ছয়টি প্রধান অংশে, যা গঠন করেছে দেশের ছয়টি বিভাগ—উত্তর-পশ্চিম (রাজশাহী), দক্ষিণ-পশ্চিম (খুলনা), দক্ষিণ-মধ্য (বরিশাল), মধ্য (ঢাকা), উত্তর-পূর্ব (সিলেট) এবং দক্ষিণ-পূর্ব (চট্টগ্রাম)। [সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগ থেকে আটটি জেলা নিয়ে চালু হয়েছে দেশের সপ্তম বিভাগ—রংপুর বিভাগ]
দেশের শতকরা ৯০ শতাংশ অঞ্চল নদীবিধৌত ও পলিজ; সম্পূর্ণ সমতল এই ভূ-অংশের উচ্চতা কোথাও সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুটের বেশি নয়। এই নিরেট সমভূমি থেকে রেহাই পাওয়া যায় কেবলমাত্র দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব কোণে আশ্রয় নিলে, এখানে গড়পড়তা পাহাড়গুলো ২৪০ মিটার থেকে ৬০০ মিটার পর্যন্ত উঁচু। বাংলাদেশের উচ্চতম পাহাড়চূড়া কোনটি তা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। উইকিপিডিয়ার মতে বাংলাদেশের উচ্চতম স্থান দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এর মোডক পর্বত, যার উচ্চতা ১,০৫২ মিটার (৩,৪৫১ ফুট), তবে সম্প্রতি আরও উচ্চতম পাহাড়চূড়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। দুটি পর্বত আরোহণকারী দলের জিপিএস রিডিং অনুযায়ী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়ের নাম ত্লাংময় স্বপ্নচূড়া (৩৪৬১ ফুট)।
বাংলাদেশের নদী |
বাংলাদেশের তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা চাঁদপুরের কাছে এসে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে, যা গঙ্গার শেষ গন্তব্যস্থলও বটে। গঙ্গার এই মুখগুলো বাংলাদেশের প্রায় সমগ্র তটরেখাজুড়ে সৃষ্টি করেছে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। পশ্চিম সীমান্ত থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এক চিলতে তটভূমি চমৎকারভাবে সমন্বয় সাধন করছে ক্রমাগত দিক পরিবর্তনকারী নদী এবং ছোট দ্বীপসমূহের ভেতর।
একমাত্র সিলেট বিভাগ থেকে পাথর আহরিত হয়। এ কারণেই এদেশের প্রায় সর্বত্র কংক্রিট তৈরিতে পাথরের পরিবর্তে ইটের গুড়া মেশানো হয়।
বন্যজীবন
প্রাণী
বাংলাদেশের কয়েকটি প্রাণী |
বাংলাদেশ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল, এ ছাড়া বিড়াল গোত্রের অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে লেপার্ড এবং বনবিড়ালও রয়েছে। অন্যান্য বড় প্রাণীর মধ্যে রয়েছে এশীয় হাতি (প্রধানত বিহার থেকে অভিবাসিত), চট্টগ্রাম বিভাগে কয়েকটি ভাল্লুক, বন্য শূকর এবং হরিণ। বানর, লেঙ্গুর, উল্লুক (উপমহাদেশের একমাত্র লেজবিহীন বানর), ভোঁদর এবং বেজি রয়েছে ছোট প্রাণীদের মধ্যে।
সরীসৃপের মধ্যে রয়েছে সমুদ্র, নদী এবং কাদামাটির কাছিম, পাইথন, কুমির এবং বহু রকম বিষধর সাপ। এ ছাড়া আছে স্বচ্ছন্দবাক একটি ছোট্ট সরীসৃপ, প্রাণীটির উচ্চারণকৃত শব্দের জন্য আমরা তাকে ডাকি টিকটিকি নামে।
বিপন্ন প্রাণী
রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিপন্ন এবং সরকার সম্প্রতি সুন্দরবনের তিনটি পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলকে ঘোষণা করেছে বাঘের অভয়ারণ্য হিসেবে।
অন্যান্য প্রাণী যা বিরল অথবা হুমকির সম্মুখীন তার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় হাতি, উল্লুক, কালো ভাল্লুক এবং শুশুক। বিপন্নপ্রায় সরীসৃপের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় পাইথন, কুমির এবং বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম।
পাখির অনেক প্রজাতি অতিপ্রজ, কিন্তু কিছু অরক্ষিত আছে, যেমন মাছশিকারি ঈগল।
পাখি-দেখা
আমাদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে বাংলাদেশে আছে ৬৫০টিরও বেশি প্রজাতির পাখি—সমগ্র উপমহাদেশের প্রায় অর্ধেক!
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি : দোয়েল (ম্যাগপাই রবিন) |
ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মালয় উপদ্বীপের মাঝখানে অবস্থিত বাংলাদেশ আকর্ষণ করে উভয় দেশের পক্ষীকূলকে। তাই একদিকে যেমন দেশের পশ্চিম ও উত্তর অংশে ভারতীয় পাখিদের আনাগোনা, অন্যদিকে তেমনি দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশে চলে মালয় পাখিদের উৎসব। দক্ষিণ গোলার্ধের মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া অভিমুখে যাত্রাকারী অভিবাসী পাখিদের জন্য এটি সুবিধাজনক স্থান, এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত এবং শ্রীলংকার দিকে যাত্রাকারী পাখিদের জন্যও বটে। সেই সাথে, অসংখ্য হিমালয়ান এবং বার্মিজ পাহাড়ি প্রজাতির পাখি শীতের সময় অবস্থান নেয় নিন্নভূমিতে, অর্থাৎ বাংলাদেশে।
মধুপুর বন একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসভূমি বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচার জন্য, তন্মধ্যে বিরল বাদামি কাঠ পেঁচাও রয়েছে, এ ছাড়া আছে সরালি এবং কয়েক রকম র্যাপ্টর। যমুনা নদীতে প্রতিবারই বন্যা দেখা দেয় এবং ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা জলচর পরিযায়ী পাখিদের বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সিলেট বিভাগের নিম্নভূমিতে রয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক হাওর, এবং শীতের সময় এগুলো বিভিন্ন বন্যপাখির আবাসস্থল হয়ে দাঁড়ায়।
উদ্ভিদ
বাংলাদেশের ৯% অংশ এখনও বনভূমি। এই বনের অর্ধাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং এক-চতুর্থাংশ সুন্দরবনে অবস্থিত, বাকিটুকু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
তিন ধরনের স্বতন্ত্র এলাকাভিত্তিক বন লক্ষ করা যায়—তটরেখাজুড়ে জোয়ারপ্রবণ এলাকা, যেখানে মূলত ম্যানগ্রোভ বনের সাথে সাথে শক্ত গাছও রয়েছে (প্রধানত সুন্দরবন); শালবন, যা দেখা যায় ঢাকা, টাঙ্গাইল এবং ময়মনসিংহে; এবং উচ্চ এলাকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় চিরসবুজ বন, যা দেখা যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেটের একটি অংশে।
সিলেটের চা-বাগান |
বন-বাদাড় ছাড়াও বাংলাদেশ বৃক্ষের দেশ। প্রতিটি গ্রাম যেন এক একটি বৃক্ষ উদ্যান, প্রায়শ অতিকায় বট বা অশ্বত্থ গাছ সে উদ্যানের শোভা বাড়িয়ে চলেছে। পশ্চিমের ওল্ড ট্রাংক রোড ধরে আছে অসংখ্য রেইন ট্রি। ১৯ শতকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেগুন চাষের সূত্রপাত, এই সেগুন গাছের গুণাগুণ মিয়ানমারের মতো; ভারতীয় সেগুনের তুলনায় এর মান অনেক উঁচু।
ফুলের গাছ বাংলাদেশের সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফুল ফোটানোর ক্ষেত্রেও প্রতিটি ঋতুর রয়েছে নিজস্ব বৈচিত্র্য।
জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলসমূহ
বাংলাদেশে জাতীয় উদ্যান এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অপ্রতুলতা সত্যিই পীড়াদায়ক। যতটুকু আছে তাও দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে। যাদের রক্ষক হওয়ার কথা তারাই ভক্ষক হয়ে যান বলে এসব উদ্যান আর কত দিন তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে তা নিয়ে রয়েছে গভীর সন্দেহ!
ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্কটি অনেকের কাছে রাজেন্দ্রপুর ন্যাশনাল পার্ক নামেও পরিচিত। শালবন এবং পিকনিক স্পটের জন্য বিশেষ সুখ্যাতি আছে এর। এখানে হাঁটার জন্য রয়েছে কয়েকটি বিশেষ ট্রেইল।
লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক একটি পার্বত্য শালবন। এটা আকারে মধুপুর বনের মতোই, যদিও প্রাণীবৈচিত্র্যের দিক থেকে কিছুটা ভিন্ন।
মধুপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চল একটি অপসৃয়মাণ শাল এবং মিশ্র বন, যেখানে কিছু পুরোনো গাছও অবশিষ্ট আছে। গত দুই দশকে বনটি আকারে অর্ধেক হয়ে গেছে সত্যি, তবে এখনও সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণী নিয়ে আকর্ষণ ধরে রেখেছে।
সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্ক বাংলাদেশের সবচেয়ে মোহনীয় প্রাকৃতিক অঞ্চল, প্রধানত গহীন বন এবং গোলকধাঁধার মতো নদীর জালের কারণে। খুলনা বিভাগের দক্ষিণ-অর্ধে অবস্থিত এই অঞ্চলটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের অংশ এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল।
তেলেপাড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল একটি মিশ্র চিরসবুজ/সেগুন বন যার বালুকাময় জলাধারটি পাখি-প্রেমিকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
পরিবেশ ইস্যু
বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে একেবারে উদাসীন একথা বলা যাবে না, তবে ততটা মরিয়া নয় যতটা কিনা 'মানবিক বিপর্যয়' ইস্যুর ক্ষেত্রে। জনসংখ্যার বিপুল চাপ এবং ক্রমবর্ধমান জমির আকাল উদ্বাস্তুদের ঠেলে দিচ্ছে অপসৃয়মাণ বনজ ভূমি অথবা নদীর চরের দিকে। অতি চাষাবাদের ফলে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, কীটনাশক ও কলকারখানার বর্জ্য বাড়িয়ে তুলেছে নদী-দূষণের মাত্রা। যত্রতত্র গভীর নলকূপ স্থাপনের ফলে আশঙ্কাজনকভাবে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রা, কিছু এলাকায় নলকূপের পানিতে পাওয়া যাচ্ছে আর্সেনিক বিষও।
আর্সেনিক দূষণ
মনে হয় যুদ্ধ, ঘূর্ণিঝড় এবং দুর্ভিক্ষ যথেষ্ট ছিল না বাংলাদেশের জন্মলগ্নটির জন্য, ১৯৭০ সালে আর্সেনিক দূষণের বিষয়টিও প্রথম নজরে এল।
১৯৭০-এর আগে জনগণ পানীয় জলের জন্য নির্ভর করত পুকুর এবং নদীর পানির ওপর। এই উৎসগুলোয় স্যানিটেশনের অভাবে ফি বছর মারা যাচ্ছিল প্রায় ২,৫০,০০০ শিশু। এনজিওগুলো এই বিষয়টি উল্লেখ করে প্ররোচিত করে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের জন্য, ফলে বড় পরিসরে নলকূপ স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, কিন্তু তা করতে গিয়ে, পানির আর্সেনিক লেভেল পরীক্ষা করা হয়নি। পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, সম্ভবত যা গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তিস্থল হিমালয়ে সৃষ্ট। উচ্চ আর্সেনিক-শোষণক্ষমতার কাদামাটির উপস্থিতিই বাংলাদেশে মারাত্মক পর্যায়ের আর্সেনিক দূষণের কারণ।
এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কে তা বিচার করার সময় পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে, অগণিত লোক মারা যাচ্ছে প্রতি বছর। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য অপেক্ষা করে ভয়াবহ সামাজিক প্রতিক্রিয়া—বাচ্চাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় স্কুল থেকে, এবং নারীরা স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়। শারীরিক লক্ষণ (যা শুধুমাত্র দূষিত পানি পান অথবা ব্যবহারের এক দশকেরও বেশি সময় পরে প্রকাশ পায়) সাধারণত হাত ও পায়ের তালুতে ফুস্কুড়ি ওঠার মাধ্যমে শুরু হয়, যা পরবর্তীতে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।
প্রতি বছর বর্ষা ঋতুতে বন্যা হওয়াটা যেন আমাদের জীবনেরই অংশ হয়ে উঠেছে। কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। ভারত এবং নেপালে নির্বিচার বৃক্ষনিধনের ফলে নদীগুলো আরও দুর্বার হয়ে ওঠাই এর কারণ। পলি জমে নদীগর্ভ ভরাট হয়ে যাওয়াকেও দায়ী করেন অনেকে। স্থায়ী সমাধানের আশায় কিছু একটা করার তাগিদও তাই বেড়ে চলেছে। নদীর কূলে সাধারণ বাঁধ নির্মাণ এই সমস্যার সমাধান নয়, কারণ জমির উর্বরতার জন্য এই বন্যার ওপর নির্ভরও করে বাংলাদেশ! অনিয়ন্ত্রিত বাঁধ নির্মাণ তাই দেশের কৃষি উৎপাদনে ধ্বংসাত্মক ভূমিকাই ডেকে আনবে।
ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধি বিশ্বের যে দশটি দেশকে চরম হুমকির মুখে রেখেছে তার একটি বাংলাদেশ। বর্তমান ধারণা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সমুদ্রজলসীমার উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ৮ সে.মি. থেকে ৩০ সে.মি.পর্যন্ত, আর ২১০০ সালের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে ৩০ সে.মি. থেকে ১১০ সে.মি. (১.১ মিটার) পর্যন্ত। বঙ্গোপসাগরের পানি ১ মিটার উঁচু হওয়া মানে বাংলাদেশের ১২% থেকে ১৮% ভূমি তলিয়ে যাওয়া।
ভূমি হারানোর ভয় শুধুই একটি পরিণতি—উপর্যুপরি বন্যা এবং কৃষি সম্ভাবনার অবক্ষয়ই আসল বিপদ। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে নদীর পানি ঠিকমত নিস্কাশিত হতে পারবে না, ফলে মৌসুমী বন্যা আরও বিস্তৃত, গভীরতর এবং প্রলম্বিত হয়ে উঠবে। নদী-নালার পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস আরও ভয়াবহ আকার নিয়ে আঘাত হানবে উপকূলে।
সত্যি নির্মম এই ভাগ্যের পরিহাস, কৃষি নির্ভর সমাজ এবং গরিব দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অল্পই অবদান আছে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে, তবু এদেশকেই সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হবে এর জন্য! নেদারল্যান্ডের অধিবাসীরা সমুদ্র-পৃষ্ঠের চেয়ে নিচে বসবাস করছে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ কি যথাযথ প্রযুক্তি প্রয়োগ করার মতো উন্নত হয়ে উঠবে?
******
তথ্যসূত্র : লোনলি প্ল্যানেট
ছবি-কৃতজ্ঞতা : ১. www.static.howstuffworks.com
২. Photographer: Shameem Ferdous
৬. Photographer: Samia Choudhury
*যেকোনো পরামর্শ/সংশোধনী/মতামত সাদরে গৃহীত হবে। ধন্যবাদ সবাইকে কষ্ট করে পড়ার জন্য।
পূর্ববর্তী পর্ব : বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ১ | সংস্কৃতি ও স্থাপত্যরীতি |
বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড- ২ | বাংলাদেশ এল কোথা থেকে |
******
কুটুমবাড়ি
মন্তব্য
তথ্যের ভুল বা বানান ভুল হয়ত আছে বা নেই, কিন্তু শস্যশ্যামলা বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে লেখা পড়তে ভাল লাগে বৈ কি।
পড়তে ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগল খুব।
কুটুমবাড়ি
আর্সেনিক নিয়ে না বলা কথাগুলোর ওপর জোর দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। দায়ী অবশ্যই দাতাসংস্থা ও মুনাফাখোর বেসরকারী সংস্থাগুলো। সেইসাথে সরকারের ক্ষমার অযোগ্য ঔদাসীন্য ও পারসেন্টেজ দুর্নীতি।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
একমত। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কুটুমবাড়ি
ছবি গুলো ভালো হয়েছে। দোয়েলের ছবি দেখে অরূপের কথা মনে পড়ে গেলো।
--------------------------------------------------------------------------------
ধন্যবাদ, আপু। কে এই অরূপ?
কুটুমবাড়ি
কুটুম্বাড়ি ভাই, আশা করি ভাল আছেন। এই পোস্ট আগের দুইটা থেকে ভাল হয়েছে। কিন্তু কিছু তথ্যে ভুল / অসম্পূর্ণতা আছে।
আমি একটা একটা করে মন্তব্য করছিঃ
প্রাণীঃ
এই লেপার্ড-ই আছে তিন প্রকার
লাম চিতাঃ Clouded leopard
লেপার্ডঃ Leopard
চিতা বিড়ালঃ Leopard cat
আরো আছে মেছো বাঘ। (Fishing cat: Felis viverrina)
কিছু করিডোর আছে ঠিক, কিন্তু বিহার থেকে অভিবাসিত নয়। Asiatic Elephant বহু আগে থেকেই দেশে আছে।
ভাল্লুক সিলেটের সাতছড়িতেও আছে। বন্য শূকর পাওয়া যায় সুন্দরবনে, শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া সহ আরো বেশ কিছু জায়গায়।
উল্লুক আসলে বানর নয়। এটি লেজবিহীন কারণ এটি একটি Lesser Ape. (বাংলা প্রতিশব্দ জানা নেই)
আর
না ভাই, একে টিক্টিকি বলি না। একে বলা হয় তক্ষক।
ফাহিম হাসান
আমি কখন বললাম যে এশিয়াটিক হাতি বহু আগে থেকেই বাংলাদেশে নেই। আপনি যে করিডোরটির কথা বলছেন সেটি ব্যবহার করে বিহার থেকে হয়তো এদেশে কিছু হাতি অভিবাসিত হয়ে থাকবে। এবং এদের সংখ্যাটা নিশ্চয়ই অনেক, নয়তো লোনলি প্ল্যানেটে এ কথাটা লিখবে কেন?
আমি তো সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেলাম, ফাহিম ভাই। টিকটিকি না তক্ষক? নাকি দুটোই? দুটো প্রাণীই সরীসৃপ, এবং তাদের উচ্চারণকৃত শব্দের সাথে নামের মিল রয়েছে। সত্যিই আশ্চর্য!
কুটুমবাড়ি
দুঃখিত, আগের মন্তব্যে টিক্টিকি > টিকটিকি।
যাই হোক, পাখি-দেখা অংশটি আরো ভাল ভাবে দেওয়া যেত। আপনি তো একটি ভ্রমণ গাইড লিখছেন, না ?
পাখি দেখার জন্য ঢাকায় আছে রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন। ঢাকার কাছে আছে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পোস্টে উল্লেখিত বন ছাড়াও আছে নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া , উপকূলীয় দ্বীপগুলো।
র্যাপ্টর- এর বাংলা করতে পারেন শিকারি পাখি হিসেবে।
কয়েকটা নাম দিয়ে দিতেন - বাইক্ক্যার বিল, টাঙ্গুয়ার হাওড় ইত্যাদি। কিন্তু শীতের সময় এগুলো কেবল বিভিন্ন বন্যপাখিরই নয় বরং পরিযায়ী পাখিদেরও আবাসস্থল।
উদ্ভিদ -অংশে বাংলাদেশের গাছপালার কথা বলুন।
দুই একতা উদাহরণ দিন না, আরো ভাল দেখাবে। অন্তত জাতীয় ফুলের কথা বলুন।
এবার আসি "জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলসমূহ" অংশে।
লাইনটা কেমন হল ! শুনতে ভাল লাগছে না।
ভুল, লাউয়াছড়া হল মিশ্র চিরসবুজ বন (mixed evergreen forest)।
ভুল। লাউয়াছড়ার আয়তন ১,২৫০ হেঃ - যা মধুপুরের প্রায় সাত ভাগের এক ভাগ। এটা অবশ্য সরকারি হিসাব - তাও আয়তনে লাউয়াছড়া ছোট।
এরকম আরো কিছু ভুল রয়ে গিয়েছে। আশা করি পরের পোস্টে রেফারেন্স ক্রস চেক করে দিবেন। আর ভ্রমণ গাইড আরেকটু ব্যবহার উপযোগী করে লিখেন। আপনার লেখা পড়ে মনে হল তাড়াহুড়ো করে একটা অনুবাদ প্রবন্ধ লিখলেন। ঘুরতে যে যাব, পরিবেশ যে দেখব - সেটা কোথায় ? যাব-ই বা কিভাবে ?
অনুবাদের পাশাপাশি নিজেও কিছু যোগ করুন। পড়তে ভাল লাগবে।
ভাল থাকুন।
ফাহিম হাসান
ফাহিম ভাই, আমার কম্পু বাবাজীরে ভাইরাসে ধরসে। আপনি যেসব ভুল (?) ধরসেন সেগুলার উত্তর দিতেসি অচিরেই, আশা করি কালকের মধ্যে আমার কম্পুজী হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসবে।
আর এই লেখাটা তো ভূমিকা মাত্র। এট্টু সবুর করেন। বাংলাদেশে যে কয়টা বন/পার্ক/উদ্যান আছে সবগুলার ওপর লেখার আশা করতাসি। সেইসব জায়গায় কেমনে যাইবেন, কী খাইবেন, ঘুরবেন কেমনে, কোথায় ঘুমাইবেন, বনে কী কী গাছ বা পশু-পক্ষী আছে--সবই আলোচনায় উঠে আসবে একে একে।
কুটুমবাড়ি
আসলেই তাই। পুরো বাংলাদেশটাই পাখি-দেখার জন্য আদর্শ। বিল, হাওর, বন-বাদাড়, উদ্যানসমূহ নিয়ে লেখার সময় পাখির আরও বর্ণনা দেয়ার আশা করছি। একইভাবে, অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ ইত্যাদি বিষয়েও উল্লেখ থাকবে। আর লাউয়াছড়া নিয়ে আলাদা একটি পর্ব থাকবে, সেখানে ভুল-ভ্রান্তিগুলো দূর হলো কি না জানাবেন আশা করি।
কুটুমবাড়ি
ডুপ্লি ঘ্যাচাং
কুটুমবাড়ি
লেঙ্গুর প্রজাতির আমাদের হনুমানের কথা বললেননা? সেই যে সোনালী রং্যের হনুমান যার মুখ আর লেজটুকু মাত্র কালো। পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে থাকা এই Capped langur এখনও মধুপুরে প্রচুর দেখা যায়।
...........................
Every Picture Tells a Story
সোনালি টোপর-অলা লেঙ্গুরের কথা বলছেন? মধুপুর জাতীয় উদ্যান নিয়ে একটি আলাদা পর্ব থাকবে, সেখানে অবশ্যই উল্লেখ থাকবে বিপন্নপ্রায় এই প্রাণীটির কথা। আশা করি পড়বেন সময় পেলে।
কুটুমবাড়ি
ভালো কাজ হচ্ছে। চালিয়ে যান।
অনেক ধন্যবাদ, পিপিদা। আপ্নে সত্যই প্রকৃতিপ্রেমিক।
কুটুমবাড়ি
নতুন মন্তব্য করুন