বেশ কয়েকদিন ধরেই আমরা পত্র-পত্রিকায়/টিভিতে দেখতে পাচ্ছি গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নিয়ে কি তুলকালাম কান্ডই না ঘটে গেল, যার রেশ এখনও পর্যন্ত কাটেনি। নূন্যতম মজুরি যে মাত্র ৩০০০ টাকা করা হয়েছে তা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষও খানিকটা অসন্তুষ্ট। ধারণাটা এমন যে, শালা গার্মেন্টস মালিক এত টাকা লাভ করছিস তা থেকে শ্রমিকদের দুটো টাকা বেশি দিলে ক্ষতিটা কোথায় ? আমার নিজের ধারণাটাও এমন ছিল । কিন্তু ব্যাপারটা কী এতই সহজ ?
আজ যখন আশিক স্যার ম্যাক্রোইকোনমিক্সের ক্লাসের প্রায় পুরোটা জুড়েই এ নিয়ে আলোচনা করলেন তখন বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা যতটা সহজ ঠেকছে ততটা সহজ নয়।
অর্থনীতির কারবার যেই বেসিক ডিমান্ড-সাপ্লাই ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে তা থেকেই পুরো ব্যাপারটা সাধারণ ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যে দামে(ই্কুইলিব্রিয়াম প্রাইস) আমরা কোনও পণ্য কিনে থাকি তা তখনই সেট হয় যখন ব্যাবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কোয়ান্টিটি ডিমান্ডেড = কোয়ান্টিটি সাপ্লাইড (Qd=Qs) হয়। সোজা কথায় কোন জিনিসের ই্কুইলিব্রিয়াম প্রাইস হল The market price at which the supply of an item equals the quantity demanded.
গ্রাফ ১ এ আমরা ব্যাপারটা দেখতে পারি এভাবে
এখন এই একই ব্যাপারটা আমরা আমাদের শ্রমিক মজুরির ক্ষেত্রে বিবেচনা করব। ক্লাসিক্যাল ইকোনমিক্সের মোটা লেন্সের চশমাঅলা আদমিরা বলেন যে, চাহিদা-যোগানের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যেভাবে ইকুইলিব্রিয়াম প্রাইস সেট হয় ঠিক সে ভাবেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইকুইলিব্রিয়াম মজুরিও সেট হয়। এবং কোনও কিছুই তার ব্যত্যয় ঘটাতে পারে না। ব্যাপার টা অনেকটা এরকম
গ্রাফ ২ থেকে বলতে পারি, X অক্ষের দিকে আমরা প্রথমে শ্রম/শ্রমিক (labour) L ধরি আর Y অক্ষের দিকে মজুরি(wage) W ধরি। লেবার ডিমান্ড Ld এবং লেবার সাপ্লাই Ls রেখা যে বিন্দুতে ছেদ করে সে বিন্দুতেই ইকুইলিব্রিয়াম মজুরি (ধরা যাক, তা ১৫০০ টাকা) এবং ইকুইলিব্রিয়াম শ্রমিক সংখ্যা (ধরা যাক, তা ৫০০ জন) সেট হয় ।
কিন্তু যদি অন্য কোনও কারণে ইকুইলিব্রিয়াম মজুরি হতে বেশি মজুরি দিতে হয় তখন ? সরকারের ইম্পোজ করা নূন্যতম মজুরি আইন বা শ্রমিক আন্দোলন বা অন্য কোনও কারণে; সে ক্ষেত্রে কী হবে ?
এই বিষয়েই আলোকপাত করেছেন কেইনিসিয়ান(Keynesian) অর্থনীতিবিদেরা। তারা ক্লাসি্ক্যালদের কোনও কিছুই তার ব্যত্যয় ঘটাতে পারে না কথাটিই ভুল প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, নূন্যতম মজুরি আইন বা শ্রমিক আন্দোলন ইকুইলিব্রিয়াম মজুরি হতে বেশি মজুরি দিতে উৎপাদককে বাধ্য করতে পারে(আরও বিভিন্ন কারণে উৎপাদককে বেশি মজুরি দিতে হতে পারে; লেখাটাকে সরল রাখতে সেগুলোর অবতারণা করা হল না)।
কিন্তু এই বেশি মজুরি কী অর্থনীতির জন্য ভালো ? না খারাপ ? এই ব্যাপারটাই আমরা এখন দেখব। ধরা যাক ইকুইলিব্রিয়াম মজুরি ১৫০০ টাকা হলেও সরকার আইন করে নূন্যতম মজুরি ঠিক করলেন ৩০০০ টাকা। তখন যা ঘটবে তা নিচের গ্রাফে দেখান হল।
আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি গ্রাফ ৩ এ যে শ্রমিক সংখ্যা আগের ৫০০ হতে কমে দাড়িয়েছে ৩০০ তে( Ls অপরিবর্তিত ধরে; যেহেতু কাজ করতে আগ্রহী শ্রমিকদের সংখ্যা একই আছে)। আয় ১৫০০ হতে বেড়ে ৩০০০ হলেও বেকারের সংখ্যা গেছে বেড়ে। ড্যাশ লাইনের মধ্যে আছেন তারা যারা চাকরী চেয়েও চাকরী পাচ্ছে না। এভাবে মজুরি সেট করার নেগেটিভ ইফেক্টও অনেক। প্রধান প্রধান ইফেক্টগুলো হল
১) যেই ব্যবসায়ী ভেবেছিলেন প্রতিযোগিতামূলক মজুরি (ইকুইলিব্রিয়াম মজুরি) ১৫০০ টাকা দিয়ে তিনি ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা তথা নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করবেন তিনি যখন দেখছেন তাকে আগের চেয়ে দ্বিগুণ মজুরি দিতে হচ্ছে তখন তিনি ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করতে নিরুৎসাহিত হবেন এবং তার অর্থ অন্য কোথাও বিনিয়োগ করবেন।
২)দেশের শ্রমিকদের একটি বড় অংশ যারা ১৫০০ টাকাতেই চাকরী করে দুটো ডাল-ভাত খেয়ে বেচে থাকতে রাজি ছিলেন তারা চাকরী হতে বঞ্চিত হচ্ছেন।
৩)দেশের বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতির উপর চাপ বাড়বে।
এর ভালো দিকও আছে যেমন যেসব শ্রমিকরা কাজে আছে তারা ভালো বেতন এবং আগের চাইতে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারবেন। এখন প্রশ্ন হল আমরা কী বেশি বেতন+কম শ্রমিক= বেকারত্ব বৃদ্ধি দেখতে চাই নাকী কম বেতন+বেশি শ্রমিক= বেকারত্ব হ্রাস= অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখতে চাই ? পলিসি মেকার হিসেবে এটি খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত । কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দিয়ে যেমন আমরা আমাদের শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করতে পারি না আবার অন্যদিকে বেকার এবং গরীব মানুষের সংখ্যাও বাড়তে দিতে পারি না।
(ইঙ্কস্কেপে এই প্রথম গ্রাফ আঁকলাম;খুব একটা ভালো হয়নি। আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে ব্যাপারটা দেখবেন সবাই )
অর্ক
Souvik.arko AT econdu.ac.bd
মন্তব্য
এখানে একটা জিনিস স্বতসিদ্ধ বলে ধরে নেয়া হচ্ছে, সেটা হচ্ছে, শ্রমিকের মার্জিনাল আউটপুট স্থিতিস্থাপক। মালিক কি ৫০০ শ্রমিকের কাজ ৩০০ শ্রমিক দিয়ে করাবেন? গার্মেন্টস শিল্প সম্পর্কে আমার ভাসাভাসা জ্ঞান থেকে বলতে পারি, ঘণ্টার বিচারে সেটা করা সম্ভব নয়। তাহলে কি মালিক তার বিজনেস ভলিউম ৪০% কমিয়ে আনবেন? সেটাও ঘটবে বলে মনে করি না।
শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে অনেক কথাবার্তা শুনি আমরা, কিন্তু পত্রিকার সাংবাদিকরা আজকাল মারপিট দাঙ্গাহাঙ্গামা আর সেমিনারে বড় বড় লোকদের বড় বড় কথাবার্তার বাইরে কোনো কিছু রিপোর্ট করতে শিখছেন বলে মনে হয় না। এই সেক্টরে কোন স্তরে কত শ্রমিক কাজ করছে, আমরা আজও জানতে পারলাম না। মালিকরা আণ্ডার ইনভয়েসিং আর ওভার ইনভয়েসিঙের যুগলবন্দী করে দেশের বাইরের ব্যাঙ্কে এ যাবত কয় বিলিয়ন ডলার সরালেন, আমরা কি আদৌ কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানতে পারবো? এই সেক্টরে খরচের খাতগুলো আমরা এখনও পাই ডায়াগ্রামে দেখি না। একটা সমস্যা কাউকে বোঝাতে গেলে এই বিষয়গুলো উপস্থাপন যে জরুরি, সেটা রিপোর্টার ভাইয়ারা অ্যাপ্রিশিয়েট করতে চান না বোধহয়। কারণ ওনারা জানেন অডিয়েন্স চরম বলদ, তাদেরকে মুসা ইব্রাহীম থেকে শুরু করে জ্বালানিবিহীন এনজিন, সবই খাওয়ানো যায়।
কিছুদিন আগে কে যেন হিসাব দিলেন, গার্মেন্টস সেক্টরে নাকি খরচের ৫০% যায় শ্রমিক মজুরিতে। আর লাভ হয় গড়ে ২০%। তার মানে, ১০০ টাকা খরচ করলে ৫০ টাকা যায় মজুরিতে, ১২০ টাকায় মাল বিক্রি হয়। এদিকে শুনি ভারতে শ্রমিক মজুরি বাংলাদেশের ৩গুণ। অর্থাৎ ১৫০ টাকা। ধরলাম তাদের আরো কোনো খরচ করতে হয় না, তারপরও তো বাংলাদেশের সাথে পাল্লা দিতে গেলে তাদের ৩০ টাকা লস হবে প্রতি ডিলে। বাস্তবে কি সেটাই হয়?
বাংলাদেশে গার্মেন্টস সেক্টরের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজে একটা বেশ বড় অংশ আসে দেশের বাইরে থেকে। ভ্যালু অ্যাডিশনটা শেষমেশ হয় শ্রমিকের হাত ধরেই। কাজেই লাভ যা হয়, মালিকেরা এই শ্রমিককে নিংড়েই করেন। তারা শ্রমিকের মজুরি জীবনধারণোপযোগী করে তারপর সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করেন না কেন? দেশের সরকারকে ধমকধামক তো ঠিকই দিতে পারেন।
যারা গলা শুকাচ্ছেন, বিনিয়োগ অন্য খাতে করবেন, তারা কি সেই খাতেও এইভাবেই মজুরি দেবেন? বিশ্বাস হয় না। গার্মেন্টস সেক্টরে তারা বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে শোষণের যে নিরাপদ গলিটি খুঁজে পেয়েছেন, সেরকম দেশের অন্য কোনো সেক্টরেই পাবেন না। এই খাতে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট সরিয়ে এনে অন্য কিছুতে বিনিয়োগ করার সাহস তাদের আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
শ্রমিক আমরা যা ব্যবহার করি, ভারত তা করে না। কারন সেখানে শ্রমিকের সংখ্যা কমানোর জন অটোমেশিন লাভজনক, আমাদের এখানে লাভ জনক নয়। এখানে শ্রমিক সস্তা, তাই সস্তা শ্রমিক ব্যবহারই লাভজনক।
আরিফ ভাই, আসেন অঙ্ক করে দেখি, ঠিক কত বেতন পর্যন্ত অটোমেশনের পরিবর্তে শ্রমিক দিয়ে কাজ চালানো লাভজনক। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা কতজন শ্রমিককে প্রতিস্থাপন করে, দুই খাতে খরচ কতো, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা আমদানিতে মোট খরচ কতো, আয়ু কত, অপারেটিং ওভারহেড কতো, এগুলো হিসেব করেই তো টের পাওয়া যাবে, একজন সস্তা শ্রমিক সস্তা থেকে গিয়ে মালিকের কতো টাকা বাঁচিয়ে দিচ্ছেন।
এটা কিন্তু খুব একটা আনরিয়েলেস্টিক না।
যদি ৩০০ দক্ষ আর ৫০০ স্বল্পদক্ষ শ্রমিক হয় সম্ভব!!
চাকরি আগে কাদের হয়? যারা দক্ষ তাদের আগে আর যারা কম দক্ষ তাদের পরে। নাকি? এভাবেই প্রান্তিক স্থিতিস্থাপকতার ব্যপারটা এসে যায়...তর্কের সুবিধা বাদ দিলে ব্যতিক্রমকে উদাহরন বানানোর কি দরকার?
ভারী অন্যায়!! তবে ধমকটা আসলে কাকে দেয়া উচিত সেটা কিন্তু বুঝলামনা! ব্যবসায়িদের নাকি? এই জন্যেই ব্যবসয়ীদের রাজনীতিতে আসা উচিত। তাইলে ধমকের হাত থেইকা কেউ না কেউ আইসা বুক পাইতা বাচাইতে পারে।
এটাতো তাদের কাজ নয়! তাদের কাজ মুনাফা করা তারা সেটাই করছেন! সরকারের কাজ তারা কেন করবেন? তাহলে আইন-কানুন সরকার এগুলো আর কেন? চোরে চুরি না করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। আহা এমন যদি হত তাইলে সরকার খালি রাজনীতি কইরাই পার পাইত।
আনরিয়েলিস্টিক বোঝানোর জন্যে আপনি কতদূর যাবেন, সেটা একটা কথা। যেমন ধরুন, দিনে বারো ঘন্টা কাজ করা আনরিয়েলিস্টিক না, কিন্তু সেই কাজ ৬৬.৬৬% অতিরিক্ত করা, অর্থাৎ দিনে কুড়ি ঘন্টা করা, আনরিয়েলিস্টিক কি না, সেটা বিবেচনা করবে আপনার রিয়্যালিটি।
ধরুন একটা মেশিন অপারেট করে একজন দক্ষ শ্রমিক। তাকে সহায়তা করে একজন অদক্ষ শ্রমিক। আপনি বলছেন, দক্ষ লোকটা একাই মেশিনটা অপারেট করতে পারবে, ইত্যাদি কাগুজে যুক্তি। বেশি কষ্ট করতে হবে না, আপনি টাইপ করতে করতে আপনার মাথাটা চুলকে দেখার চেষ্টা করুন পারেন কি না। মাথা চুলকাতে অদক্ষ লোক হলেই চলে, কিন্তু সেই কাজটা দুই হাতে টাইপ করনেঅলা দক্ষ লোকটা করতে পারবে না, কারণ সে টোটালি এনগেইজড।
হ্যাঁ, ব্যবসায়ীদের ধমক আর মাঝে মাঝে পাছার কাপড় তুলে কিছু বাড়ি দিতে পারলে মন্দ হয় না। মন্দার জন্যে প্রণোদনা চেয়ে কিছুদিন আগে খুব তড়পাচ্ছিলো বিজিএমইএ, ধমক খেয়ে হুঁশ ফিরেছে।
কাগুজে যুক্তিকে এত অবহেলা করছেন! যাক তাহলে বরং এই 'কাগুজে' প্রশ্নটার উত্তর দিন। একটা পাওয়ার টিলার চালিয়ে প্রতি ঘন্টায় যে পরিমান জমিতে হাল দেয়া যায় সে পরিমান জমিতে হাল দিতে একজন কোদাল হাতের কর্মির কতগুন সময় লাগবে? সংখ্যাটা যদি ২ এর কাছাকাছি হয় তাহলে কোনটা কগুজে সেটা বোঝা যায়।সংখ্যাটা কি ২ পার হয়ে যাবে নাতো! আপনার সহযোগীকে দিয়ে একটু মাথা চুলকে দিতে বলবেন দরকার হলে! (LOL)
পাওয়ার টিলারটা যদি আপনি গিফট দ্যান, তাহলে হিসাব এক রকম। আর যদি জমির মালিকের সেটা পয়সা খরচ করে কিনতে হয়, তাহলে হিসাব অন্য রকম। সময়ের হিসাব কি খালি কোদাল হাতে করলেই চলবে রে ভাই? কোদাল দিয়ে মাথা চুলকে চিন্তা করে দেইখেন।
আবার তর্কে ফেরত যাই। ৩০০ লোক যদি ৫০০ লোকের কাজ করতে পারতো, তাহলে বাংলাদেশে বাকি ২০০ লোক জীবনেও গার্মেন্টসে কাজ পেতো না। গার্মেন্টস সেক্টরে একটা লোক কাজ করছে, এর অর্থ, তার কাজটা অন্য লোকে করার ফুরসৎ পাচ্ছে না। গার্মেন্টসে কাজের সময় লোকে টয়লেটেও যেতে পারে না, আর আপনি আসছেন ৫০০ লোকের কাজ ৩০০ লোককে দিয়ে করাতে।
যাক শ্রমঘন প্রযুক্তি আর পুজিঘন প্রযুক্তির পার্থক্যটা চোখে পড়েছে!!
একদম ঠিক। এজন্যই বাংলাদেশে তৈরি পোষাকের শিল্প বিকশিত হয়েছে। কারন উন্নত বিশ্বে ল্যাবার সাপ্লাই কার্ভ অনেক উপরে উঠে গেছে। ফলে *স্থিতিস্থাপক* প্রান্তিক উৎপাদনশীলতার দরুন ইন্টারসেকশানটা আরো বায়ে উপরে হয়। সেখানে পুজিঘন প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। আর বাংলাদেশে হয় শ্রমঘন প্রযূক্তির ব্যবহার। কাজেই আমরা কেউই আসলে ৫০০ জনের কাজ ৩০০ জনকে দিয়ে স্বল্পমেয়াদে করাতে পারবনা। তবে যেদিন বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থা আরো কার্যকর আর পুজিঘন হবে তখন পারা যাবে। এখন বাজারে হস্তক্ষেপ করলে প্রচুর ছাটাই হবে। উপরের পোস্টের মূল লেসন আমাদের নীতি নির্ধারকদের জন্য এটাই হওয়া উচিত মনে করি।
সম্ভবত মনে আছে মূল তর্কের বিষয় ছিল প্রান্তিক উৎপাদনশীলতার স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে আলোচনা সেখানে ফিরে এসেছে এটাই অনন্দের কথা।
ভাল থাকবেন।
অনেকগুলো ঠিক কথা বলে একটা বেঠিক কথা বলে বসলেন।
মাথাটা কোদাল দিয়ে আরেকটু চুলকে নিয়ে দেখুন। এই কথাই সারাজীবন ধরে গার্মেন্টস মালিকরা বলে আসছে। মজুরি বাড়ালে মুনাফা কমবে, সেই পরিমাণ মুনাফা যদি শ্রমিক ছাঁটাই করে কেউ আবার তুলে আনতে যায়, তাহলে বিজনেস ভলিউমও কমাতে হবে। তাহলে মুনাফা আবার কমবে। এমন যদি হতো, ৩০০ লোক ৫০০ লোকের কাজ করতে পারতো, তাহলে ২০০ লোককে ছাঁটাই করার সম্ভাবনা ছিলো। আপনি নিজেই স্বীকার করছেন সেটা বাংলাদেশে সম্ভব না।
বাংলাদেশে একজন শ্রমিক বার্ষিক যে পরিমাণ ভ্যালু অ্যাড করে, সেটা যদি x হয়, আর তার বার্ষিক মজুরি যদি y হয়, তাহলে মালিকের চেষ্টা থাকবে x - y কে ম্যাক্সিমাইজ করা। যদি একই ভ্যালু অ্যাডিশনের জন্যে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার বার্ষিক খরচ [ডেপ্রিসিয়েশন] z হয়, আর z > y হয়, শ্রমিকের চাকরি যাবে না। পারলে এই z এর হিসাবটা দিন দেখি, অঙ্ক করে দেখা যাক, শ্রমিক ছাঁটাই কত সোজা?
আপনি বারবার একই ভুল সিদ্ধান্তে ফিরে আসছেন দেখে মনে হচ্ছে আপনার কোনো স্বার্থ জড়িত আছে এই তর্কে। আপনি নিজে অথবা আপনার বাবা/চাচা/মামা/শ্বশুর কি গার্মেন্টস মালিক?
একটা তর্ক শেষ না হতে আরেকটা তর্ক শুরু করছেন। প্রথমে বলুন উৎপাদনশিলতার স্থিতিস্থাপকতার ব্যপারটা বুঝতে পেরেছেন কিনা? হ্যা অথবা না। ওয়ান ইস্যু এট এ টাইম।
এইটাই কি আপনার তর্কে জেতার মহৌষধ নাকি? সাব্বাস। সিদ্ধান্ত কি সেটা পরে আগে কার্যকারন আর যুক্তিতে আসেন। মাথা গরম করলে কিভাবে হবে? এমন দাপটের সাথে ব্লগ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আর দু'একবার যুক্তিতে হেরে গেলে মাথা ঠান্ডা রাখতে না পারলে কি করে হবে। কুল ডাউন...।
আপনাকে একটা বিষয় স্মরন করিয়ে দেয়া দরকার, প্রান্তিক স্থিতিস্থাপকতার অনুমিতি সঠিক ভুল হবার জন্য ৫০০ জনের কাজ ৩০০ জনে করার দরকার পরে না। আপনি যদি কোন একটা বিষয় সম্পর্কে বুঝতে চান ব্যক্তিগত আক্রমনের আগে প্রথমে যুক্তি ধরে এগিয়ে আসেন। তারপরে ফয়সালা করা যাবে কে কার আত্মীয়।
উপরে আপনি যখন সরকারকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন তখন আমি কিন্তু বলিনি আপনি সরকারের চামচা। কারন আমার ধারনা ছিল আপনি নিরপেক্ষভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি দিচ্ছেন। কিন্তু তর্কে সুবিধা না হওয়ায় এখন আপনি এই বাকা রাস্তা ধরছেন। এটা আশা করি এই ফোরামের মডারেটরদের চোখে পড়বে।
এরপর আসলে যুক্তিভিত্তিক আলোচনা করা উচিত নয়। তারপরও আপনি যদি বীজগনিত বুঝে থাকেন তাহলে বুঝবেন উপরের যে গ্রাফগুলো রয়েছে সেখানে মুনাফা চলকের আচরন দেখানো নেই। আর ব্যবসায়িরা উৎপাদন সর্বোচ্চকরনের চেষ্টা করেন এই অনুমিতি কোথায় পেলেন? মুনাফা সর্বোচ্চ করার জন্য উৎপাদন সর্বোচ্চকরনের দরকার পড়ে না। পিরিয়ড। (পুনশ্চঃ ব্যবসায়ীরা মুনাফা সর্বোচ্চকরনের চেষ্টা করেন, উৎপাদন নয়)
উৎপাদনশীলতার স্থিতিস্থাপকতা আপনি নিজে কতটুকু বোঝেন, কতটুকু বোঝাতে আপনি সক্ষম, সে ব্যাপারে গুরুতর সন্দেহ ব্যক্ত করলাম। আর আপনি আমাকে সরকারের চামচা বললেও আমার কোনো আপত্তি নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার এই ওভাররেটেড দর্জিদের টাইটে রাখছে, আমি সরকারের বিশাল চামচা হতে রাজি আছি।
আপনি ওপরে যেসব গ্রাফ দেখছেন, সেসব গ্রাফে অনুমিতিজনিত ভুলগুলো নিচে মন্তব্যে দেখুন, হাসিব একটা পর্যবেক্ষণ রেখে গেছেন।
আমি তো সর্বোচ্চ উৎপাদনের কথা বলিনি। সেটা আপনি বলে আমার মুখে গুঁজে দিচ্ছেন। আবারও পড়ুন। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন শ্রমিকের ভ্যালু অ্যাডিশন তার মজুরির চেয়ে বেশি, ততক্ষণ পর্যন্ত [উৎপাদন ব্যবস্থার কিসিম না পাল্টে, অর্থাৎ শ্রমঘন পদ্ধতির পরিবর্তে প্রযুক্তিঘন পদ্ধতি প্রবর্তন না করে] তাকে কাজে বহাল রাখাই লাভজনক।
আপনি যেহেতু বলেন বেশি আর বোঝেন কম, আসুন আমরা ধাপে ধাপে এগোই।
গার্মেন্টস খাতে সর্বোচ্চ ভ্যালু অ্যাডিশন হয় শ্রমিকের হাত ধরেই। বেশির ভাগ কাঁচামাল বাইরে থেকে আসে, কাপড় থেকে পোশাক, এটাই এখন পর্যন্ত ভ্যালু অ্যাডিশনের সবচেয়ে বড় ধাপ। ব্যতিক্রম যে নেই তা না, বিকেএমইএ একটা অংশ যোগান দেয়, সেখানে সুতা থেকে কাপড়, এই ধাপে কিছু ভ্যালু অ্যাডিশন আছে। সেখানে শ্রমিক আর প্রযুক্তি, দুটোই ভ্যালু অ্যাড করে। তবে প্রযুক্তির পেছনে দুটো ইনপুট, বিদ্যুৎ আর তাপের জন্যে গ্যাস অত্যন্ত কম মূল্যে সরবরাহ করা হয়।
আপনি বলতে চাইছেন, মালিক একটা অপটিমাম ইউনিট উৎপাদন করে তার মুনাফাকে ম্যাক্সিমাইজ করবে। এটা কাগজে ক্যালকুলাসে শুনতে খুব ভালোই লাগে, বাস্তবে তা হয় কি না, সেটাই আমার প্রশ্ন।
ধরা যাক, আপনি ৫০০ শ্রমিকের জায়গায় ৩০০ শ্রমিক রেখে মুনাফাকে ম্যাক্সিমাইজ করতে চান। একটু আগে স্বীকার করে নিয়েছেন, ৫০০ শ্রমিকের কাজ ৩০০ শ্রমিক করতে পারে না। ধরা যাক এই ৫০০ শ্রমিকের মধ্যে যে ২০০ চাকরি হারালো, তারা এতকাল দেড় হাজার টাকা বেতন পেয়ে এসেছে। বাকি ৩০০ পেয়ে এসেছে দু'হাজার। মোট নয় লক্ষ টাকা যেতো বেতনে। এখন মজুরি বাড়িয়ে তিন হাজার করায় ঐ ৩০০ শ্রমিক পাচ্ছে এই নয় লক্ষ টাকা। আমাদের কাগুজে হিসাব একদম মিলে গেলো, হুররে!
এখন এই ৩০০ শ্রমিকের কারণে যে উৎপাদন ৪০% কমে গেলো, এই কথাটা আপনি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় কার্পেটের নিচে চাপা দিয়ে দিচ্ছেন। আমার জিজ্ঞাস্য, ৪০% কম উৎপাদন করে আপনি ঠিক কীভাবে মুনাফা ম্যাক্সিমাইজ করবেন?
নিচে দেখুন, জ্বিনের বাদশা একটা হিসাব দিয়েছেন, তাতে প্রত্যেক শ্রমিক বছরে ৪ লক্ষ টাকা আয়ের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত এই ৪ লক্ষ টাকা আয়ে মূল্য সংযোজন আর সত্যিকারের লাভের অংশটুকু চিহ্নিত করতে না পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এই তর্ক নিষ্ফল। ম্যাক্সিমাইজেশন আর অপটিমাইজেশনের তর্কে সবার আগে জানতে হবে পরিমাণগুলো।
শ্রমিকরা মজুরি চাইছে মাসে পাঁচ হাজার। এটা মোট আয়ের ১৫%। যদি মালিক মুনাফা ম্যাক্সিমাইজ করতে চান, তাঁকে বিদেশের বাজারে পণ্যের দাম নিয়ে নেগোশিয়েট করতে হবে, দেশের শ্রমের বাজারে শ্রমের দাম নিয়ে নয়।
এইবার বলেন তো ভাই, আছে কোনো গার্মেন্টস মালিক বাপ/চাচা/মামা/শ্বশুর? যদি থাকে, লজ্জার কী আছে? আপনি নিজের স্বার্থ নিয়ে তর্ক করতে এলে "আক্রান্ত" বোধ করেন কেন? নাকি গার্মেন্টস মালিক পরিচয়টাও অপমানজনক হয়ে গেছে এখন??
আপনার বোঝায় বা বক্তব্যে গলদগুলো কোথায় সেটা একটা একটু করে দেখিয়ে দেয়া যায়। তবে সে কাজ পরের জন্য তোলা থাকল। আগে আমি সম্মানিত মডারেটরদের কাছে আপনার সগর্বে আবারো ব্যক্তিগত পরিচয়, আত্মীয়তা ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করাটা সচলায়তনের নীতির সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ সে বিষয়ে নির্দেশনা দেবার অনুরোধ করছি।
হাসিব এখনো তার পর্যবেক্ষনের বিপরিতে করা প্রশ্নের উত্তর গুলো দিতে পারেননি। তিনি যখন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন তখন সেই আলোচনা আগান যাবে। তিনি যতক্ষন পর্যন্ত রেফারেন্স দিতে না পারছেন ততক্ষন তাঁর মন্তব্যকে কিছুটা ডিস্কাউন্ট দিয়েই দেখছি।
জ্বীনের বাদশার হিসাবের মধ্যেও কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় বাদ পরেছিল যেগুলো তাঁর মন্তব্যে ব্যাখ্যা করেছি। আর আপনি নতুন যে প্রশ্নগুলো করলেন সেগুলোর উত্তর দেবার আগে আমি মডারেটরদের নির্দেশনার অপেক্ষা করছি। অবশ্য আপনি মডারেটর হয়ে মন্তব্য দিলে (যদি হয়ে থাকেন) ব্যপারটা হয়ত আপনার পক্ষেই যাবে সেক্ষেত্রে কারুর সময় নষ্ট না করে নিরব হয়ে যাওয়াই হয়ত শ্রেয় হবে। এখন পর্যন্ত মডারেটররা নিরব আছেন কেন সেটাও ঠিক পরিষ্কার নয়। তাঁরা যদি মনে করেন আপনি যেভাবে কথা বলেছেন তাতে কোন সমস্যা নেই তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
না ভাই, আমি আপনার গার্মেন্টস মালিকদের সাথে আত্মীয়তা নিয়ে গর্বিত বা লজ্জিত নই। কিন্তু জ্ঞানপাপীর মতো সবকিছু ঠিকঠাক বলে উপসংহারে "ভূর্জবৃক্ষের মালিকানা গার্মেন্টস ভাইয়াদিগের বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে" লিখলে দুটো পথ খোলা থাকে। এক, আপনার জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা। দুই, আপনার স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলা। প্রথমটা করলে তো আর তর্ক চলে না। দ্বিতীয়টা করলে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়।
প্রশ্নের সদুত্তর না থাকলে, বা আপনি না জানলে, আসুন সদুত্তর খুঁজি। চলুন শওকত হোসেন মাসুম ভাইকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি। উনি অর্থনীতির ছাত্র, নিশ্চয়ই আপনাকে আলোকিত করতে পারবেন, সাথে আমাকেও।
রেফারেন্স ছাড়া আপনি হাসিবের মন্তব্যটিকে ডিসকাউন্ট দিয়ে দেখছেন, আর নিজে কোনো তথ্য উপাত্ত হাজির না করেই এসে ফস করে বলে দিচ্ছেন, বাজারে হস্তক্ষেপ করলে শ্রমিক ছাঁটাই হবে। জনাব, রেফারেন্স নিজেও কিছু দিতে শিখুন আগে।
৫০% মজুরী!!!!
আসেন একটা অংক করি (ধাঁধাও ধরতে পারেন):
http://en.wikipedia.org/wiki/Economy_of_Bangladesh
এখানে দেখছি বাংলাদেশের গত অর্থবছরের রপ্তানী আয় ১৮৩৬ কোটি ডলার
এর ৮০ শতাংশ তৈরীপোশাক খাত থেকে বলে মালিকেরা সগর্বে দাবী করেন (আজকের প্রথম আলো)
মানে তৈরীপোশাক খাতে আয় ১৪৭০ কোটি ডলার, অর্থাৎ ১০০০০০ কোটি টাকা (১ ডলার = ৬৮.০২ টাকা ধরলাম)
তৈরী পোশাক খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ লাখ (আজকের প্রথম আলো)
আয়ের ৫০% মানে ৫০০০০ কোটি টাকা যদি শ্রমিকদেরকে বেতন দেয়া হয়, তাহলে গড়ে একেকজন শ্রমিকের বেতন হয় বছরে ২ লাখ টাকা
এবার আসুন গত ৩০ শে জুলাইর প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া নতুন পুরান বেতন স্কেলটায় চোখ বুলাই। সাতটা গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে শ্রমিকদেরকে দক্ষতার ভিত্তিতে, এই স্পেকট্রামের মিডিয়ান ভ্যালুটা পুরোনো স্কেলে ছিলো প্রায় ২২৭৫ টাকা, নতুন স্কেলে প্রায় ৩৮০০ টাকা।
(মিডিয়ানটাকেই গড় ধরলাম, যদিও দুষ্ট লোকে বলে এই স্পেক্ট্রামের বিওপি অংশটা নাকি সবসময়েই অনেক চওড়া থেকে যায়।)
মানে এখন ১২ মাসে এক বছর হিসেবে বেচারারা এখন পাচ্ছে ২৭৩০০ টাকা, চার মাস পর থেকে নতুন স্কেলে পাবেন ৪৫৬০০টাকা। অথচ পাবার কথা ২ লাখ টাকা!
মহোদয়েরা কোথাও এক জায়গায় গড়বড় করছেন। তাঁরা কি শ্রমিকদের বেতন ৫০% বুঝিয়েছিলেন, নাকি ৫% বুঝিয়েছিলেন? নাকি রপ্তানী আয়ের ৮% বলতে গিয়ে ৮০% বলে ফেলেছেন? নাকি শ্রমিকদের সংখ্যা যা বলা হয় বাস্তবে সেটা তার দশগুণ বেশী? নাকি শ্রমিকদের জন্য বারো মাসে এক বছরের হিসাব করাটা অন্যায়?
ঝামেলাটা কোথায়?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
এইখানে আসলে একটা হিসাব বাকি আছে। সেটা হচ্ছে কাচামালের দাম। কারন বাংলাদেশে যেটা হচ্ছে সেটা হচ্ছে কেবল টেক্সটাইলকে তৈরি পোষাকে রূপান্তর। এটা হচ্ছে মূল্য সংযোজন। এখানে পেশাগত ভাবে দু'টি প্রধান ভাগ একটা হচ্ছে শ্রমিক আর ব্যবস্থাপক। আর মুনাফাভোগীরা হচ্ছেন উপরের টায়ারে। এখন তৈরি পোষাকের যে অবস্থা তাতে তারা ব্যবসায়ী হিসাবে অনেক মুনাফা নিতে পারছেন এটা অর্থনীতির হিসাবে সম্ভব নয়। কারন বাজার সাংঘাতিক প্রতিযোগীতামূলক। অর্থাৎ আজকে যদি আপনি অনেক মুনাফা করতে থাকেন কালকে আমি আরেকটা দোকান খুলে অল্পমুনাফা আর স্বল্পদামের অফার দিয়ে বাজারে আপনাকে অল্পদাম নিতে বাধ্য করব। কাজেই উপরের হিসাবটি আসলে অতি সরলিকৃত যেখানে অনেক খরচের খাত বাদ পড়েছে।
সরলীকরণ ছাড়া উপায় কি? মন্তব্যের শেষে একগাদা প্রশ্নের উদ্রেক তো সে কারণেই! গড়বড়টা কোথায়, মন্তব্যে দেখানো সংখ্যাগুলোকে ধরে যদি বলে দিতেন কৃতার্থ হতাম।
আপনার কথামতো যদি ধরি ১৪৭০ কোটি ডলারের বিরাট একটা অংশ কাঁচামালের, তবে সেই কাঁচামালের দাম উহ্য রেখে কি মহাত্মনেরা ৫০% বলছেন?
নাকি কাঁচামাল বিদেশ থেকে এসে, সেলাই হয়ে আবার বিদেশে চলে যায় বলে
হিসেবে ধরছেননা? তাহলে কি রপ্তানী আয় ১৪৭০ কোটি ডলার বলাটা সৎ হয়?
কারণ এই হিসাবে তো ব্যাপারটা এমন যে বিদেশ থেকে পাঁচ ডলার দামের কাপড় আসে দেশে, সেটাকে সেলাই করে ৬ ডলারে বিক্রী করা হয়। তার মানে, রপ্তানী আয় কি ৬ ডলার নাকি ১ ডলার?
১ ডলার বলা উচিত না? এখানে তো এমনকি বৈদেশিক মুদ্রার বৃদ্ধিও হচ্ছে ১ ডলারই, কারণ আপনাকে পাঁচ ডলার পকেট থেকে বের করে কাপড় কিনতে হচ্ছে, সেলাই শেষে ৬ ডলার পকেটে ফিরে আসছে।
তাহলে তো ৮০% বলে করা গলাবাজিটা পুরাই শুভংকরের ফাঁকি। সেক্ষেত্রে এত ট্যাক্স মাফ কেন?
আপনার কথাকে মেনে নিলে (মানে মোট আয়ের ৫০% মজুরী দেয়া হচ্ছে) যেটা দাঁড়াচ্ছে, তা হলো তৈরী পোশাক খাতে রপ্তানী আয় ২৫ লাখ (শ্রমিক সংখ্যা) গুণ ২৭০০০ (বার্ষিক বেতন/শ্রমিক) গুণ ২ (৫০% এর দ্বিগুণ) = ১৩৫০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের বাকী রফতানী আয় ৩৬৬ কোটি ডলার(১৮৩৬ - ১৪৭০), মানে, ২৪৮৯৫ কোটি, ধরলাম, ২৫০০০ কোটি টাকা। তাহলে মোট রফতানীর (৩৮৫০০ কোটি টাকা) ৩৫ শতাংশ হয় তৈরী পোশাক খাতের আয়।
সেটাকে ৮০% বলে গলাবাজি কেন?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
তখনই ঠিক হয় যখন আমদানি ব্যয় হিসাবে কাচামালের উল্লেখ থাকে।
সাধারনত সামষ্টিক হিসাব সেভাবেই করা হয়। তবে ধারনা করি অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় উৎপাদন কারিরা কাচামাল কেনেন না। ধরা যাক জেসিপেনি হয়ত অর্ডার দিল আবার কাচামালও পাঠিয়ে দিল। তখন হিসাব একরকম। সেটাকে আপনার উল্লেখিত সংখ্যাগুলোতে কিভাবে নেয়া হয়েছে সেটা যদি উৎস্যে পরিষ্কার করা হত হয়ত একটা ধারনা করা যেত। তবে যতদূর জানি তৃতীয় বিশ্বে মূল্য সংযোজন বাবাদ আয় অনেক কমই হয়।
মুনাফাভোগীদের (নিরপেক্ষ শব্দে বললে ব্যবসায়ী) প্রতি একটা সাধারন ক্ষোভ রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজে, এটা আমাদের অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতার একটা বড় কারন। আমার মতে এই কারনেই ক্লাসিকাল অর্থনীতির একটা প্রাথমিক ধারনা সম্বলিত পোস্টে মন্ত্যব্যে ক্ষোভের ভারই বেশি দেখা যায়।
তবে চাছাছোলা সত্যি হচ্ছে বাংলাদেশে মনপলি ব্যবস্থায় তৈরি পোষাক শিল্প চলছেনা। এখানে প্রচুর বিনিয়োগ কারি রয়েছেন। সেক্ষেত্রে মোটা মুনাফা নিয়ে পকেট ভারি করা সহজ নয়। কেবল মাত্র তারা তাদের সুযোগ মূল্যটাই হয়ত তুলে আনতে পারবেন এই ক্ষেত্রে।
সেটাই, সেক্ষেত্রে মোট আমদানী ব্যয়ের ৭০-৮০% যে তাদের কাপড় কেনার পেছনেই যায় সেটাও গলা ফুলিয়ে ৮০% রফতানীর সাথে বলা উচিত...সেক্ষেত্রে আর এত বাহাদুরী কেন?
তবে আপনিও নিশ্চিত না যে হিসেবটা কিভাবে করছে, রাইট? কেউ জানলে পরিস্কার করার অনুরোধ রইলো।
বটমলাইন হলো, হিসেবটার কোন এক জায়গায় গড়বড় আছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
রাইট। তবে প্রমিত নিয়ম হচ্ছে আমদানি রপ্তানিকে আলাদাভাবে হিসাব করা। আমদানির মধ্যে যেমন কাচামাল আর ফাইনাল ডিমান্ড দুই ধরনের জিনিসই থাকে তেমনি রপ্তানিতেও থাকতে পারে। আপনি যেই প্রশ্নটির উত্তর জানতে চাচ্ছেন সেখানে দরকারি চলক হচ্ছে "মূল্য সংযোজন"। অর্থাৎ তৈরি পোষাক খাতে বাংলাদেশের ভেতরে কতটুকু মূল্য সংযোজন হচ্ছে সেই হিসাব।
মজা পাইছি এই লাইনে। প্রমিত নিয়মটা কী ভাই? ব্যালান্স অফ ট্রেড নামে একটা জিনিস আছে। শুঞ্ছেন কখনো ঐটার কথা?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মজা আরেকটু বেশি পেতেন যদি মন্তব্যটা বুঝতে পেতেন। উপরে জ্বীনের বাদশা রপ্তানির অংকটিকে নেট ধরে হিসাব করছিলেন। সেটার বিপরীতে আমার মন্তব্যটি ফেলে দেখুন। আরেকটু সহজ করে বলি। ধরা যাক বলা হলো বাংলাদেশ তৈরি পোষাক খাতে এক্স পরিমান রপ্তানি করল। এখান এক্স দিয়ে সাধারনত ব্যলেন্স বোঝান হয়না। আপনি কি বলেন?
মন্তব্য থেকে ভুল বুঝবেননা ভাই। আপনার কনসার্ন শতভাগ যৌক্তিক কিন্তু হিসাবের সাধারন পদ্ধতি আসলে রপ্তানি আর আমদানি কে আলাদা করে হিসাব করা হয়। তবে সঠিক হিসাবের জন্য কাচামাল, পরিবহন খরচ ইত্যাদি যুক্ত হতে হবে। তা না হলে হিসাবে ফাক থেকে যাবে।
বাদশা ভাই সচলে একটা পোস্ট দিন না এটা নিয়ে। আমরা হিসাবগুলো স্পষ্ট দেখতে চাই।
এই খাতকে তো প্রণোদনা দিতে দিতে দিতে দিতে দিতে দিতে দিতে দিতে খবর হয়ে গেছে সরকারের। পানির দামে ক্যাপটিভ পাওয়ারের জন্যে গ্যাস দেয়া হয়, সাত বছর ট্যাক্স হলিডে দেয়া হয়, কাঁচামাল আমদানিতে শূন্য শুল্ক, তার পরও গার্মেন্টস ভাইয়ারা একবার গলার রগ ফোলান আরেকবার গলা শুকান। সরকারকে আরো ভর্তুকি দিতে হবে, প্রণোদনা দিতে হবে, ধান ভানলে কুঁড়ো আর মাছ কুটলে মুড়ো দিতে হবে, রাতে শোয়ার আগে পিঠটা চুলকে দিতে হবে, খালি দিতে দিতে দিতে হবে। আমরা একটু জানতে চাই, এই খাত নেট কতো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
ধরা যাক দুই লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে একটা ঘোড়ার ডিম কিনে আনলাম। একটা ছেলেরে মাসে এক হাজার টাকা বেতন দিয়ে রাখলাম, সে ঘোড়ার ডিমটার উপর সাদা কালো ডোরা আঁকে। মাস শেষে সেটাকে দুই লক্ষ এক কোটি টাকায় রপ্তানি করলাম। বাড়তি এক কোটি টাকার নিরানব্বুই লক্ষ টাকা আন্ডার ইনভয়েসিং করে রেখে দিলাম বাহামার কোনো ব্যাঙ্কে। বাকি এক লক্ষ টাকার নব্বই হাজার টাকা আমার বেতন, আট হাজার টাকা অফিস ভাড়া হ্যানো ত্যানো। বাকি দুই হাজার টাকার এক হাজার টাকা ছোকরাটাকে মজুরি দিই, আর এক হাজার টাকা কোম্পানির লাভ। এখন ছোকরা যদি বেতন এক হাজার থেকে বাড়িয়ে আঠারোশো করতে বলে, ঐ এক হাজার টাকা লাভ দেখিয়ে কেঁদে গড়াগড়ি খাবো, আর সংবাদ সম্মেলন করার সময় গলার রগ ফুলিয়ে বলবো, দেশে গত অর্থবছরে দুই লক্ষ এক কোটি টাকার ঘোড়ার ডিম রপ্তানি করেছি, আমার এই ঘোড়ার ডিম শিল্পে আরো প্রণোদনা চাই।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হিমু ভাই।
মালিক অবশ্যই ৫০০ শ্রমিকের কাজ ৩০০ জন দিয়ে করাবেন না। ব্যবসায়ী হিসেবে আমি অবশ্যই দেখব আমার লাভের হার যেন ঠিক থাকে। ধরুন আগে যেখানে অর্ডার নিয়ে কাজ করে ১০০ টাকার জিনিস বিক্রী করতাম তখন আমার শ্রমিক মজুরি+ইত্যাদি খরচ বাদে আমার লাভ ছিল ধরুন ৫০ টাকা মানে লাভ ৫০%। এখন্ যখন শ্রমিক মজুরি বেড়ে গেলো তখন আমি অবশ্যই বেশি শ্রমিক রেখে বা বেশি অর্ডার নিয়ে আমার ব্যবসা পরিধি বাড়াব না। আগে যদি আমার লাভের হার ৫০% হয় তবে ব্যবসা পরিধি কমিয়ে হলেও আমি চাইব প্রফীটের হার যেন একই থাকে; কমে না যায়। লাভ ৫০% হতে ৪৯% হওয়া মানেই আমার জন্য খারাপ। আমি কেন ব্যবসা ''মজুরি বাড়ার আগের মত'' রাখব/বাড়াব যদি আমাকে ১% কমও লাভের সম্মুখীন হতে হয়; আমি লোক ছাটাই/অন্য কোনও ভাবে আমার প্রফিট মার্জিন একই রাখব।
তবে লোক ছাটাইয়ের প্রয়োজন নাও হতে পারে। বাংলাদেশে এমন অনেকেই আছেন যারা ১৫০০ টাকা মাসিক বেতন পেলেই খুশি তাদেরকেও মালিক কাজে লাগাতে পারেন। মেক্সিকো হতে আমেরিকায় পারি দেওয়া অবৈধ অভিবাসীরাও কিন্তু এভাবেই চুপেচাপে নূন্যতম মজুরির নিচে কাজ করে দিয়ে থাকেন। ফলে মালিকও খুশি - সেই মেক্সিকানরাও খুশি।
প্রসঙগে ফিরে আসি এখন ধরুন যদি বেতন বাড়ায় আমি বিদেশীদের কম অর্ডার নিয়ে প্রডাক্ট সেল করি ৫০ টাকার এবং খরচ বাদে লাভ থাকে ২৫ টাকা সেক্ষেত্রেও কিন্তু আমার লভ্যাংশের হার ঠিক থাকছে। তবে এটা ঠিক যে ব্যবসার পরিধি ছোট হয়ে আসতে পারে (এক্ষেত্রে ১০০ টাকার জিনিস হতে কমে ৫০ টাকার জিনিস বিক্রী করছি কিন্তু লাভ কিন্তু ৫০% থাকছে) এবং সামগ্রিক ভাবে আউটপুট কমে যেতে পারে। তখনই প্রশ্ন আসতে পারে govt. intervention এর।
আর একটি বিষয় ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন যে মজুরি বাড়ালে সাধারণত শ্রমিক সংখ্যা কমে যায়। বাংলাদেশে এরকম স্ট্যাটিস্টিক্স আছে নাকী জানা নেই তবে আমেরিকার ক্ষেত্রে এর পককhষে ডাটা পাওয়া যায়. এক পরিসংখ্yaযন অনুযায়ী (Charles Brown, ''Minimum wage laws: Are they over rated?'')সেখানে দেখানো হয়েছে নূন্যতম মজুরি ১০% বাড়ালে কম বয়েসী শ্রমিকদের বেকারত্বের হার ১-৩% পর্যন্ত বেড়ে যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটি হতেও পারে নাও পারে।
আর দুঃখ জনক হলেও আমার মনে হয় না বাংলাদেশ ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হয়ে কোন মজুরি কাঠামো সেট করবেন। তারা চাইবেন যতটা কম খরচ করে যত বেশি লাভ করা যায়। ্দুঃখজনক হলেও ব্যবসায়ী মাত্রই সেটা চাইবেন। প্রফিট নিয়ে তারা আপোস করতে চান না। ব্যবসায় যখন নেমেছেন কম কেন বেশি লাভ করবেন এটিই তাদের উদ্দেশ্য থাকে
আরেকটি বিষয়ের প্রতি আমি আলোকপাত করতে চাই হিমু ভাই। আমাদের অধিকংশ গার্মেন্টস শ্রমিক ই কিন্তু অল্পবয়েসী। অনেক সময় দেখা যায় ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ই গার্মেন্টস শ্রমিক। সেক্ষেত্রে মাসিক আয় কিন্তু নেহাত কম হয় না।
সামু ব্লগে একটি ব্লগে দেখলাম একজন বললেন
লালসালু বলেছেন: আপনি গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করলে এ কথা বলতেন না। আমি এই সেক্টরের সাথে ১০ বছর ধরে জড়িত। নিজে একটা বড় কম্পানীর ম্যানেজার। নূন্যতম মজুরী হল ৭ম গ্রেডের শিক্ষানবীশ কর্মচারীদের জন্য। ৭ম গ্রেডের কর্মচারীদেরকে আমরা হেল্পার ডাকি। তাদের বয়স সাধারণত ১৪ থেকে শুরু হয়। অনেকে ১৮ বছর বয়স থেকে কাজ শুরু করে। এই বয়সে কেউ বিয়ে করে ফ্যমিলীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলে সেটা কে দেখবে?
৭ম গ্রেডের নূন্যতম মজুরী যখন ১৬৫২টাকা ছিল তখন তাদের বেতন ছিল নিম্নরুপঃ
নূন্যতম মজুরীঃ ১৬৬২
হাজিরা বোনাসঃ ৩০০ (যে মাসের প্রতি কর্মদিবসে উপস্থিত থাকে, অনুপস্থিত থাকলে আবেদন করলেও টাকা দেয়া হয়)
ওভারটাইমঃ বিকাল পাঁচটার পরে প্রতি ঘন্টায় বেসিকের ডাবল। বাংলাদেশের কোন ফ্যক্টরীতে রাত দশটার আগে কাজ শেষ হয় না। সুতরাং একটা ছেলে দিনে পাঁচ ঘন্টা ওভারটাইম করে। তার ওভারটাইম গিয়ে দাঁড়ায়ঃ (১৬৬২/১৯২= ৮.৬৫/ঘন্টা)
মাসে ওভারটাইম হয়ঃ ২৫*৫*৮.৬৫= ১০৮১.৫০ টাকা
বাংলাদেশের বেশিরভাগ ফ্যক্টরীতে শুক্রবারে কাজ হয়। তখন নূন্যতম বেতন ধারীদের নূন্যতম ১০০টাকা দেয়া হয়। দুটি শুক্রবার অবশ্যই কাজ করতে হয়।
সুতরাং ১৬৬২টাকা যখন বেতন ছিল তখন একজন শিক্ষানবীশ হেল্পারের মোট বেতন ছিলঃ ১৬৬২+৩০০+১০০০+২০০= ৩১৬২ টাকা।
বাংলাদেশের কোন মানুষ সারাজীবন শিক্ষানবীশ হিসেবে থাকতে চায় না। তিন মাস পরে আমরা তাকে মেশিন দেই মানে সে অপারেটর হয়ে যায়। তখন আগের নূন্যতম মজুরী অনুযায়ী তার নূন্যতম বেতন হয় ২২০০টাকা। সে হিসেবে তার মাসিক বেতন দাঁড়ায় ৪হাজার টাকা। ১৪-১৮ বছরের লোকের জন্য ৪হাজার টাকা তেমন খারাপ কিছু নয় যদি সে অবিবাহিত থাকে।
অর্ক ভাইয়া, আপনার লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। তাত্ত্বিক বিষয়টা জানলাম। আমরা যতোই রিয়লিটি রিয়েলিটি বলে চিল্লই না কেন, সবকিছুর পিছনে তত্ত্ব। আমি শিক্ষাজীবনে কিছুটা ইকনোমিক্স পড়েছিলাম কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার নেই দেখে সব ভুলতে বসেছি। মজুরী বাড়াতে মালিকদের অনীহার পিছনের কারনটা আমি আমার মতো করে একটু ক্লিয়ার করতে পারি।
মালিকরা মজুরী বাড়াতে চান না কারন আপাততঃ মজুরী বাড়ালে বাড়তি মজুরীর পুরো চাপটা তাদের উপরেই যাবে। মজুরী বাড়লে বেকারত্ব বাড়বে এ ধারণার সাথে আমি দ্বিমত পোষন করছি। বেকারত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস। উৎপাদনক্ষমতা হ্রাসের পিছনের কারনগুলো হচ্ছে চাহিদার সংকোচন এবং বাজারের দরপতন। বর্তমান সময়ে যে পরিমান শ্রমিক-কর্মচারী গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করছেন তাদের উপযোগিতা আছে বলেই মালিকরা তাদের চাকরীতে রেখেছেন। তাদের উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ বাজার না থাকলে এবং স্বাভাবিকভাবে ক্ষয়িষ্ণু উৎপাদন সক্ষমতার জন্যে মালিকদের কোনই প্রয়োজন নেই এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে পোষার। তাই আমি মনে করি বর্তমান বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পন্যের যেরকম চাহিদা আছে গার্মেন্টস সেক্টরেও ঠিক সেই অনুপাতে জনশক্তি কর্মরত আছে।
তবে আসল কাহিনী অন্যত্র। বর্তমান বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতামূলক। ইচ্ছে হলেই প্রোডাক্টের দাম বাড়িয়ে দেওয়া যায় না। তা দিলে ব্যবসার লালবাতি অবশ্যম্ভাবী। মালিক যদি চান বেতন বাড়িয়ে দিয়ে কর্মীদলকে ধরে রাখবেন, তবে সেক্ষেত্রে বাড়তি অর্থায়ন তার প্রতিষ্ঠান থেকেই করতে হবে এবং এন্ড অব দ্য ডে এর প্রভাব পড়বে তার মোট মুনাফার উপর। তবে সরকার যদি কোনও না কোনওভাবে সাবসিডি দেন তবে সংকটের নিরসন সম্ভব। সবাই বলাবলি করছেন যে মালিকরা আসলে তা'ই চাইছেন। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়।
অর্থাৎ গার্মেন্টস মালিক যাতে আরেকটা বিএমডব্লিউ কিনতে পারেন, সে জন্যে জনগণের করের পয়সায় ভর্তুকি দেবে সরকার। ভালো।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে এই ভর্তূকিবাণিজ্যের ঘোরতর বিরোধী। দেশে থাকতে ট্যাক্স দিতাম আর বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠাই। তবে বিদেশে বসে অনলাইনে পত্র-পত্রিকা পড়ে যা বুঝলাম তাতে মালিকরা ওই ধান্ধাতেই বসে আছে। আর দুঃখজনক যে তাদের এই 'ভর্তূকি' তত্ত্ব সাধারণ মানুষকে ভালোই খাইয়েছে। প্রথম আলো পত্রিকার একটা সংবাদের নিচের মন্তব্যগুলো পড়ে মনে হলো ৩,০০০ টাকার বেতন যেন বেহেশতী মেওয়ার সমতূল্য। কেউ কেউ বলেছেন এই ৩,০০০ টাকাও দেওয়াটা ঠিক হয়নি। অনেকে বলেছেন গার্মেন্টস মালিকরা ৩,০০০ দিচ্ছে তাতে কতো ক্ষোভ, কে ওদের এর থেকে বেশি দেবে, ইত্যাদি। হায়রে মানুষ!!
ম্যাক্রোইকোনমিক্স ক্লাসের পড়াশুনার বিষয়টা দিয়ে মজুরির ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টাটা ইন্টারেস্টিং লাগল। তবে আপনার মজুরির ই্কুইলিব্রিয়াম থিওরীতে একটা বড় ত্রুটি আছে, যেটা হিমু বলে দিয়েছে (শ্রমিকের প্রান্তিক আউটপুট স্থিতিস্থাপক এই এসাম্পসন)।
ক্লাসিক্যাল ইকোনমিক্সে মজুরির ব্যাপারটা কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে জানতে ইচ্ছা হয়। অবশ্যই শ্রমিকের চাহিদা-যোগানের উপর মজুরির একটা প্রভাব আছে, তবে শ্রমিকের ব্যাপারে চাহিদা-যোগানের ব্যাপারটা আমার কাছে আলু-পটলের চাহিদা-যোগানের মত সরলরৈখিক বলে মনে হয়না। অন্যান্য ফ্যাক্টর আছে। এক্টা উদাহরণ দেয়া যায়… যেমন উচ্চ শ্রমিক টার্নওভারের একটা কস্ট আছে এবং বার বার নতুন শ্রমিক নিয়োগে প্রডাকশনের উপর প্রভাব পরতে বাধ্য।
‘ম্যাক্রো’ দৃষ্টিকোণ থেকে যেহেতু গার্মেন্টস সেক্টারে আমাদের তুলানামূলক অ্যাডভান্টেজ সুলভ শ্রম, এই ব্যাপারটা ঠিকমত সমাধান করতে না পারলে এই সেক্টারের ভাল কারখানা গুলিও ক্ষতিগ্রস্থ হবে নিশ্চিতভাবেই। দেশে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক শ্রমঘন আরও সেক্টার আছে, কিন্তু এই সেক্টারেই অসন্তোস চলছেই – ‘শুধু’ কন্সপিরেসি থিওরী দিয়ে এটা ব্যাখ্যা করা যাবে না।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে প্রথম সাত বছর কোন ট্যাক্স দিতে হয়না (ট্যাক্স হলিডে)। বস্তুতঃ সাত বছর পর ঐ নামে কোন গার্মেন্টস কারখানা আর থাকেনা। কাগজপত্র পালটে তাকে নতুন নাম দেয়া হয়। এভাবে গার্মেন্টস কারখানাগুলো বছরের পর বছর ট্যাক্স হলিডের কোরামিন দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এই কোরামিন তুলে নিলে কয়টা গার্মেন্টস কারখানা টিকবে? যদি না টিকে থাকে তাহলে আসলে অ-টেকসই এই খাতটি নিয়ে অন্য ভাবনা ভাবা দরকার।
দেশের বৃহত্তম বৈদেশিক আয়ের উৎস জনশক্তি রফতানীর ক্ষেত্রে আমাদের আদম ভাইয়েরা তাঁদের বিদেশ গমন বা আয় দেশে পাঠানো বা ওয়েজ আর্নার বন্ডে বিনিয়োগের বা দেশে এসে খরচ করার ক্ষেত্রে এমন কোন কোরামিনের সহায়তা কি পান?
ট্যাক্স ও দেবেন না, মানবিক মজুরী দেবেন না আবার সরকার জনগণের টাকায় ভর্তুকিও দেবে!!! এত খাতির করে দেশের কোন লাভটা হয়? অনেকে বলেন অনেকগুলো মানুষের কর্মসংস্থানতো হল। আমি বলি, গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেলে কারখানার মালিকেরা কি বসে বসে খাবেন নাকি নতুন ব্যবসার পথে হাঁটবেন। অবশ্যই তারা নতুন ব্যবসা করবেন। সেখানেও তখন লোক দরকার হবে। বাংলাদেশের গরীব ছেলে-মেয়েদের রক্ত পানি করে কম দামে আমেরিকায় কাপড় বেচা কতটুকু যৌক্তিক সেটাও দেখতে হবে। দুনিয়াতে ব্যবসা-শিল্পের অভাব নেই। বিকল্প শিল্প নিয়ে ভাবা দরকার এখনই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পান্ডবদা, দেশে থাকতে একটা ট্যাক্স ফাইল ছিলো। ওটাকে সচল রাখতে গিয়ে 'নিল' রিটার্ণ দাখিল করেছিলাম। কমিশনার সাহেব আমার উকিলকে হেসে হেসে বলেছিলেন যে আপনার মক্কেল তো আদম, মালদার পার্টি, তাকে বলেন যে দেশে ইনভেষ্টমেন্ট আছে এমন দেখিয়ে কিছু ট্যাক্স 'ধরে দিতে'!
এই হলো আদমদের 'প্রিভিলেজ'
কোরাপ্ট বোহেমিয়ান
ধরে নিলাম সব অনুমান ঠিক। তাহলে ব্যাপারটা দাড়াচ্ছে, এর চেয়ে বেশি বেতন দেয়া সম্ভব না, আবার এই বেতনে শ্রমিকদের ন্যূনতম পুষ্টির চাহিদা ও মিটানো সম্ভব না। তাহলে গার্মেন্টস খাতে রমরমা ব্যবসার সুফল পাচ্ছে হাতে গোণা কয়েকজন ব্যবসায়ী। তো কী দরকার এই খাত টিকিয়ে রাখার? শ্রমিকেরা অন্য কাজ করলেও এরকম আধপেটা খেয়ে বাঁচতে পারবে। বরং গার্মেন্টস শিল্প বন্ধ করে দিলে, শ্রমিক বিক্ষোভ কমে আসবে, মহাসড়কগুলো দিয়ে অনেক নির্বিঘ্নে চলা যাবে।
চীন, ভারত আমাদের চেয়ে বেশি বেতন দিয়ে আমাদের চেয়ে বাজার বেশি পাচ্ছে কেন? ওরা কি চ্যারিটি চালাচ্ছে?
অনুমানের ব্যাপারে আসা যাক। নদী ভাঙ্গা, খরা-শিলাবৃষ্টি-বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়া মানুষেরা অনেকসময় নামকাওয়াস্তে বেতনেও কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। আমাদের মত শিল্প অনগ্রসর, কাজের সুযোগবিহীন সমাজে কাজ করতে ইচ্ছুক শ্রমিকের সংখ্যা বেতনের সাথে সাথে বাড়ে কমে এটা নেহাতই একটা কাগুজে অনুমান। আর বেতন বাড়ালেই নিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাবে, এটাও সম্ভব না। এত লাভের ব্যবসা গুটিয়ে ত আর কেউ চলে যাবেনা।
যাই হোক, পূর্ণচিত্র নিয়ে বিশ্লেষণ করলে হয়তো ব্যাপারটা আরো খোলাসা হত।
সজল
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সমস্যাটা কি আরেকটু ব্যখ্যা করতে পারেন। গ্রাফটা কেমন হবে?
রেফারেন্স পাওয়া যাবে?
এর এনালিটিকাল ব্যাখ্যাটা কেমন?
ডিমান্ড কার্ভের পেছনে যেমন খুব জেনারালাইজড কিছু থিওরী আছে, যদ্দুর জানি সাপ্লাই কার্ভের পেছনে তেমন নাই। বিভিন্ন শেপে হতে পারে সাপ্লাই কার্ভ। তবে ইকোনোমিস্টরা একটা আপওয়ার্ড স্লোপ ধরে নেন। আপনি যেটা একেছেন সেটা দেখতে ব্যাকওয়ার্ড বেন্ডিং সাপ্লাইকার্ভের মতো দেখতে হয়েছে। ঠিক সাধারণ সাপ্লাই কার্ভের মতো দেখতে হয়নি।
Shariff, M. (1991), “Poverty and the Forward-falling labour supply function: a microeconomic analysis”, World Development, 19(8 ):1075-93.
খুব জটিল কিছু না। দরিদ্র পরিবারের আয় কমলে বৌ কাজ করতে বের হয়। ছেলে স্কুল বাদ দিয়ে চায়ের ফ্লাস্ক হাতে বের হয়। ইকোনমিতে এক অর্থে এমপ্লয়মেন্ট বাড়ে। অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত বা এর ওপরের দিকে থাকা মানুষ খরচ কমায়। অতিরিক্ত এমপ্লয়মেন্ট না বাড়িয়েও সে তার ডাউনসাইড বাফারটা ব্যবহার করতে পারে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আপনি হয়ত লক্ষ্য করেননি এই পোস্ট দাতা আর আমি কিন্তু ভিন্ন মন্তব্যকারি। কাজেই গ্রাফটি আমি আকিনি। তবে যতটুকু পেছনে বেকে যাবার জন্য এটাকে ব্যাকওয়ার্ড বেন্ডিং বলছিলেন সেটাকে আমি পোস্ট দাতার কম্পিউটারে কার্ভ আকার চেষ্টায় হাত বেকে যাওয়া ধরনের ব্যপার মনে হয়েছিল। তাই আপনার মন্তব্য বুঝতে পারিনি।
এটা ঠিক যে জেনারাইজড লেবার সাপ্লাই কার্ভ সম্ভব কিনা সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে আবার সেটা ইম্পিরিকাল গবেষনাগুলোকে পাশাপাশি রাখলে রিসল্ভো করা যেতে পারে। কিন্তু এটা বলা যায় এখন পর্যন্ত যত লেবার সাপ্লাই কার্ভ এস্টিমেট করা হয়েছে নানা বেতনের রেঞ্জে সেটাকে মোটামুটি আপওয়ার্ড স্লোপিং অবস্থাতেই হয়ত পাওয়া যাবে। তবে আপনি যদি বলেন সেটা সত্য নয় তানিয়ে তর্ক করবনা।
সাপ্লাই কার্ভ নিয়ে পেপারের রেফারেন্সের জন্য ধন্যবাদ। সম্ভবত ছদ্মবেকারত্ব বিবেচনা করেনি বলেই এধরনের কার্ভ পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে নিসন্দেহে কৌতুহল জাগান কাজ। সময় করে আবার পড়ব আশা রাখছি।
আপনার এন্যালিটিকাল ব্যখ্যা অনুযায়ি তাহলে যেটা দাড়াচ্ছে, ন্যুনতম মজুরির দরুন স্ত্রী সন্তানেরা বাসায় ফিরে যেতে পারবে, ফলে ছাটাই হলেও সমস্যা হবে না তাই না? সমস্যা হচ্ছে আপনি যে পেপারটির রেফারেন্স দিয়েছেন সেটা মূলত ভারতের গ্রামের শ্রমিকদের নিয়ে কয়ে করা। বাংলাদেশের শহরে উচ্চতর আয়ের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সেটা কতটা প্রযোজ্য হবে আর যদি হয়ও সেটা ন্যুনতম মজুরির ধারনাকে কতটা সমর্থন করবে তা নিয়ে সন্দেহ আরো গাড় হবে যদি আপনার রেফারেন্সের পেপারটা মনযোগ দিয়ে পরেন (পৃষ্ঠা ১০৭৭)। মানুষ যখন বাধ্য হয়ে অত্যন্ত অল্পবেতনে কাজ করে তখন অনেক লোক লেবার মার্কেটে থাকে। যখনি ন্যুনতম বেতনের প্রশ্ন আসে তখন এর চেয়ে কম বেতনে যারা কাজ করতে রাজি অবং বাধ্য হবে তারা আউট অব মার্কেট। নাকি?
আমি এই কথা বলিনি। নিজের মনের কথাটা আরেকজনের চোপায় বসিয়ে দেয়াটা ঠিক না।
ওরা আসলে আউট অফ মার্কেট হবে না। কারন পেট চালাতে হবে। শিশুশ্রম, আগের মতো বাসায় কাজ করা, অপরাধ ইত্যাদি বাড়বে। অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে চলে যাবে তারা।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ধন্যবাদ আপনার মন্ত্যব্যের জন্য।
আপনি সঠিক। ক্লাসে আমি যা বুঝেছি তাই মূলত এখানে সহজ ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। অর্থনীতি যারা জানেন না তারাও যাতে বুঝতে পারেন সে চেষ্টা করেই এটি লেখা। গ্রাফ ১'র সাপ্লাই ডীমান্ডের একরকম গ্রাফের পর হুট করে গ্রাফ ২ তে অন্যরকম গ্রাফ দেখে যাতে পাঠকের বুঝতে অসুবিধা না হয় এ জন্যেই এমন আকা। আর ফার্ম /ইন্ডাসট্রি সে ক্ষেত্রেও একই যুক্তি দিচ্ছি। পাঠকের বুঝতে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্যেই
আর আমি কদ্দুর কী বুঝেছি তা দিয়ে যদি আশিক স্যার কে মূল্যায়ন করেন তা অত্যন্ত ভুল হবে।ভুল হলে আমার হতে পারে-তার নয়। তিনি অত্যন্ত একজন ভাল শিক্ষক এবং সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ। হয়ত আমারই ভুল। অর্থনীতির কিছু বুঝে থাকলে তার কারণেই বুঝেছি। যেখানে অনেকে বিদেশ পাড়ি দিলেই বাচে কিংবা পরে বিদেশ মোহে আর দেশেই ফিরে আসে না সেখানে তিনি হার্ভার্ড হতে মাস্টার্স, পি এইচ ডি করে ভোগ বিলাসের সুযোগ ত্যাগ করে দেশে কোনও লাভজনক প্রতিষ্ঠানও নয় বরং ঢাবি তে শিক্ষকতা করছেন । আর বোর্ডে আকা ওরকম গ্রাফ দিয়েই কিন্তু কঠিন কঠিন সমস্যারও সমাধানও ্বেরিয়ে এসেছে, আসছে এবং আসবেও !
ম্যাক্রো ১০২ কোর্স মাত্র পড়ানো শুরু করলেন তিনি। সামনে আরও টপিক বুঝাবেন নিশ্চয়ই ।তখন আরও বিস্তারিত বলতে পারব। তবে স্বীকার করছি এক ক্লাসের পড়া দিয়ে এরকম বিষয় নিয়ে লেখা ছেলেমানুষি হয়েছে বইকী !!
আপনি মাত্র ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টে ক্লাস শুরু করলেন বুঝলাম। বহুদ্দিনের অভিজ্ঞতা থেকে একটা কথা বলি শোনেন। হার্ভার্ড এমআইটি থেকে পিএইচডি করলেই একজন হাতিঘোড়া কিছু হয়ে যায় না। ঢাবিতে ইকোনমিক্স সম্ভবত ফ্যাকাল্টি রিসোর্সে সবচেয়ে হাই প্রফাইলের। এইটা আসলে কিছু প্রমান করে না। যেমন ধরেন আপনাদের ফিল্ডের সবচেয়ে কুলীন জায়গা শিকাগো স্কুল থেকে পিএইচডি করে এসেছেন ড. মোজাফফর আহমেদ (উনি আইবিএতে পড়াতেন, এখন মনে হয় রিটায়ার করেছেন)। উনার সমসাময়িক বন্ধুবান্ধব অনেকেই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এখন বাংলাদেশের সমস্যা নিয়ে ফ্রিডম্যান আর মোজাফফর আহমেদের তুলনা করলে আমি মোজাফফর আহমেদকে এগিয়ে রাখবো। কারণ উনি প্রকৃত বিষয়টা জানেন হাটে মাঠে হেটে। ফ্রিডম্যান বড়জোর কিছু অংক কষতে পারবেন ব্ল্যাকবোর্ডে। আবার ধরেন শিকাগো ফিকাগো না গিয়ে কোনধরনের পিএইচডি ছাড়াও অর্থনীতিবিদ আছে বাংলাদেশে। কন্ট্রিবিউশন তার কারো থেকে কম না। মূল ব্যাপারটা হলো থিওরীকে বাস্তবের সাথে মিশিয়ে সেটাকে বুঝতে চেষ্টা করা। শুধু আমেরিকান আন্ডারগ্র্যাড টেক্সটবুক পড়ে সেটা হয় না।
অফটপিক: শিকাগো থেকে আরেকজনের দেশে ফিরে যাবার কথা। সে কি এখন দেশে?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এখন আপনার পোস্টটা নিয়ে মন্তব্য করি।
প্রথম কথা হচ্ছে চাপে ফেলে শ্রমিকদের কম বেতন দেয়া অমানবিক। শ্রমিক অতিরিক্ত থাকলেই পেটে ভাতে তাদেরকে কাজ দিতে হবে, রাষ্ট্রের উচিত নয় এই ব্যাপারটি মেনে নেয়া।
বেতন বাড়লে বেকারত্ব বাড়বে না, কারন এই সেক্টরে এখনও শ্রমিক সংকট আছে।
শ্রমিক সংকট না থাকলে হয়তো ভিন্ন কথা ছিল।
আপনার এজাম্পশন গুলো:
১। বর্তমান মজুরী ইকুইলিব্রায়ামে আছে।
২। ৫০০ শ্রমিকের বদলে তখন ৩০০ শ্রমিক রাখবে। কিন্তু কাজের আউটপুট একই থাকবে।
প্রথমতঃ বর্তমান ইকুইলিব্রিয়াম মজুরী কত সেটা কেউ নির্ণয় করে নাই। সেটা ৩০০০ ই হতে বা আরো বেশী হতে পারে। শ্রমিককে কম দিয়ে ঠকানো হচ্ছে কি হচ্ছে সেটা অ্যানালাইসিস করা দরকার।
দ্বিতীয়ত হিমু যেরকমটা ব্যাখ্যা করল - ডিমান্ড-সাপ্লাই ফ্রেইমওয়ার্ক এক্ষেত্রে খাটে না। কোন প্রডাক্টের প্রডাকশন খরচ বেড়ে গেলে প্রডাকশন কম হবে ঠিকই। কিন্তু বায়ার সেই দামে কিনতে রাজি থাকলে কী হবে? কিংবা অল্টারনেট উপায় (আধুনিক যন্ত্রপাতি) কী খরচ সাশ্রয়ী হবে?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
না আমার এজাম্পশন এর একটিও নয়। আমি মনে হয় বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।
১| বর্তমান মজুরী ইকুইলিব্রায়ামে আছে। এটি আমি বলিনি। বর্তমান যে মজুরি তা ইকুইলিব্রায়াম এ সেট হয়নি। এটি সরকার আরোপিত মজুরি। আমি বলতে চেয়েছি যে মজুরি কি হবে তা মার্কেটের উপরই ছেড়ে দিলে ভাল হয়।
আর সবাই যে ভাবে মালিক মনে হয় শ্রমিকের স্বর্বস্ব চুষে খাবার জন্য প্রস্তুত তাও নয়। অনেক সময় আন্দোলন/ সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াও মালিক নিজেই বেশি মজুরি দিয়ে থাকেন ! কিছু উদাহরণ দিচ্ছি
আমি একজন অদক্ষ শ্রমিককে দক্ষ বানালাম (বাংলাদেশের একদম নতুন শ্রমিকদের বলতে গেলে সবাই অদক্ষ ; তাদের দক্ষ বানানোরও কস্ট আছে) আর হুট করে অন্য আরেক গার্মেন্টস মালিক বেশি বেতন দিয়ে তাকে নিয়ে গেল এমনটি যাতে না হয় সেজন্য মালিক একজন দক্ষ শ্রমিককে বেধে রাখার জন্য বেশি বেতন দেওয়ার চেষ্টা করেন। সোজা কথায় শ্রমিকদের টার্নওভার কমাতেই এ উদ্যোগ। একে বলে efficiency wage
লং রানে .মালিক যদি হেলদি ওয়ার্কফোর্স চান সেক্ষেত্রেও তিনি তার শ্রমিকদের বেতন বাড়ীয়ে দিতে পারেন।
ভালো কাজের স্ব্বী্কৃতি স্বরূপ মালিক শ্রমিককে বেশি বেতন দিতে পারেন আরও প্রোডাক্টভিটির জন্য।
২|৫০০ শ্রমিকের বদলে তখন ৩০০ শ্রমিক রাখবে। কিন্তু কাজের আউটপুট একই থাকবে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস প্রেককষাপটে শ্রমিক কমিয়ে একই আউটপুট কখনো সম্ভব নয় এবং আমি তা বলছিও না। যা বলছি তা হল মালিক যদি দেখেন খরচ বেড়ে যাচ্ছে তবে তিনি কম অর্ডার নিয়ে কম কাজ করবেন কিন্তু লাভের পরিমাণ একই রাখার চেষ্টা করবেন। উপরে হিমু ভাইয়ের একটি কমেন্টে এই মাত্র আমি এ ব্যাপারে উদাহরণ দিয়েছি। একটু কষ্ট করে চোখ বোলাবেন।
আপনি বার বার ধরে নিচ্ছেন মার্কেট জিনিসপাতি ঠিক করে ফেলবে। আদতে এই পর্যন্ত ঠিকঠাক মার্কেট জিনিসপাতি ঠিক করতে পেরেছে এরকম নজির কি খুব বেশী আছে? আর এফিসিয়েন্ট মার্কেট না থাকলে এফিসিয়েন্ট মজুরি কীভাবে আসে?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
যে শ্রমিকরা ৭০০ টাকা দিয়েও তিন বছর আগে মুখবুজে কাজ করেছে, তারা এখন ৩০০০ টাকা পেয়েও রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করবে সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয় মোটেও। এখানে অর্থনীতির তত্ত্ব আলোচনা করা হলেও ব্যাপারটা অর্থনীতির বাইরের সমস্যা বলেই মনে হয়। গত কদিনের ঢাকার শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে অবশ্যই রাজনীতির গোপন মদদ আছে। আশুলিয়াকেন্দ্রিক একটা চক্র দীর্ঘদিন ধরে এই রাজনীতির খেলোয়াড়। কারা খেলাচ্ছে সেটা নিশ্চিত নয়, তবে একটা খেলা আছেই আছে এখানে।
এবার ৩০০০ টাকা নূন্যতম মজুরি বিষয়ে আসি। সারাদিনরাত তর্ক করেও কোন উপসংহারে আসা যাবে না এই টাকা একজন মানুষের জন্য কতটা যথেষ্ট। যদি নীলফামারী হয় তাহলে ৩০০০ টাকা খুব ভালো একটা আয়, যদি ঢাকা শহর হয় তাহলে ৩০০০ টাকায় কিছু হয় না। ব্যাপারটা পুরোপুরি আপেক্ষিক।
আমাদের এক বুয়া ছিল, সে রাজরানীর মতো চলাফেরা করতো। কারণ তার তিন মেয়ে গার্মেন্টসে চাকরী করে। তিনজনের আয়ে পাঁচ হাজার টাকায় দারুন চলে তার। তবু সে বুয়াগিরি করে, কারণ বসে খেতে রাজী নয় সে নিজেও। ধরুন সেই বুয়ার একটি মেয়ে যার আয় মাত্র ১৫০০ টাকা। তাহলে কি তার তৃপ্তির হাসি থাকতো?
সুতরাং কারো জন্য ৩০০০ টাকাও অনেক টাকা, আবার কারো জন্য ৩০০০০ টাকা কোন টাকাই না। সেই বিতর্কে না গিয়ে সরকারের মজুরী নির্ধারণের ব্যাপারে কয়েকটা কথা বলি।
সরকার ৩০০০ টাকা মজুরী নির্ধারণ করে মোটেও ভুল কিছু করেনি। কারণ পাশ্চাত্যের বিলিয়ন ডলারের স্টোরগুলির উচিত মাতব্বরির পাশাপাশি কিছু খরচাপাতিও বাড়ানো। ওরা আমাদের মজুরী হিসেব করার সময় চিন্তা করে, বাংলাদেশ ফকিরদের দেশ, ওদের ২০ ডলার দিলেই চলে। কিন্তু ভিয়েতনামের রেট নির্ধারণ করার সময় বলে, ওরা গ্রোইং ইকোনোমি ওদেরকে ৬০ ডলার না দিলে চলে না। আমাদের নিজেদেরই এই ফকির অর্থনীতি ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখনো বাংলাদেশ নিজেকে চরম দারিদ্র দেশের তালিকায় রেখেছে কোন উচ্চ প্রত্যাশায় আমার জানা নেই।
বৈদেশিক সাহায্যের অংশ কতটুকু আমাদের এডিপিতে? অথচ বাংলাদেশের চেয়ে নীচু অর্থনীতির দেশও বেরিয়ে এসেছে সগর্বে। উদাহরন আশেপাশের দেশেই আছে। চীন ভিয়েতনাম নিজেদের মজুরি দিগুন করেছে দুবছর আগেই। বিনিয়োগ পালায়নি, অর্ডারও পালায়নি। চীন থেকে কিছু অর্ডার বাংলাদেশে সরে এসেছে কিন্তু সেটা মজুরী বৃদ্ধির জন্য না, বরং গার্মেন্টসের প্রতি ওদের অনাগ্রহ এবং রপ্তানীর উপর সরকারের শুল্ক আরোপের ফসল।
সুতরাং বাংলাদেশের মতো শ্রমঘন দেশের বিকল্প খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে আমেরিকা ইউরোপের পক্ষে। আমরা আর ভিক্ষুক জাতি নই, আমরা কাজ করবো, কিন্তু আমাদের সঠিক মজুরি দিতে হবে, নইলে নেংটো থাকো তোমরা!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
১) বাজার অর্থনীতির মুশকিলটা হলো, চাহিদা-সরবরাহের টানাটানির ভিত্তিতে যদি কোন পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হয়, তাহলে বাজারে কোন জিনিসের সর্বরাহ যদি বেশি থাকে তাহলে অনেক ক্ষেত্রে উতপাদন মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে সেই পণ্যটি বিক্রয় করতে বাধ্য হয় বিক্রয়কারী... যেমন বাধ্য হচ্ছে আমাদের শ্রমিকরা। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুব সামান্য অর্থাত ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিজার্ভ আর্মি বড় ফলে মালিকরা শ্রমিকের শ্রম কিনছে শ্রম শক্তির উতপাদন মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে.. ফলে ক্রমশ জীর্ণ-শীর্ণ ও দুর্বল হচ্ছে শ্রম মেশিন।
আপনি আপনার তত্ত্ব আলোচনায় সরকারের চাপে ইকুলিব্রিয়ামের চেয়ে বেশি মজুরি নির্ধারণ হলে শ্রমিক বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার আশংকার কথা তুলেছেন কিন্তু বাস্তবে যেটি ঘটছে অর্থাত বড়সড় ইন্ডাষ্ট্রিয়াল রিজার্ভ আর্মির সুযোগে মালিক স্বাভাবিক ইকুলিব্রিয়াম মূল্যের(স্বাভাবিক অবস্থায় ধরে নেয়া যায়, ইকুলিয়াব্রিয়াম মূল্য উতপাদন খরচের চেয়ে অন্ত:ত কম থাকবে না) চেয়ে কম মূল্য দিচ্ছে কি-না সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোন কথা বলেন নি। আমরা (শ্রমিকরা ও তাদের সংগঠন গুলো) দেখিয়েছি, বর্তমান বাজার মূল্যে শ্রমিককে যদি বেচে থাকতে হয় অর্থাত তার শ্রম শক্তি প্রতিদিন উতপাদন করতে হয় তাহলে তার জন্য অন্তত ৭০০০ টাকার প্রয়োজন যদি ৪ সদস্যের পরিবারে ২ জন শ্রমিক হয়। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিজার্ভ আর্মির সুযোগে মালিক শ্রমিককে বাধ্য করছে উতপাদন খরচেয়ের চেয়ে অর্ধেকের ও কম মূল্যে তার শ্রম শক্তি বিক্রি করতে.....
২) এই ভয়টি মালিক পক্ষ সবসময়ই দেখায যে, মজুরী বাড়ালে নাকি তাদের ব্যাবসা গুটিযে ফেলতে হবে, ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হবে... এই ভয়টি ২০০৬ সালে যখন ৯০০ টাকা থেকে ন্যূনতম মজুরী ১৬৬২ টাকা করা হয়েছিল(শ্রমিকরা চেয়েছিল ৩০০০ টাকা) তখনও দেখিয়েছিল, এখন যখন ৫০০০ টাকার কথা হচ্ছে তখনও একই কথা বলা হচ্ছে। একই বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মজুরী দিয়ে যদি চীন, তুরস্ক, ভারত ব্যাবসা করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না...
অর্থনীতির তত্ত্ব দিচ্ছেন, বলুন তো, যখন পণ্য উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ যেমন: কাচামাল, জ্বালানী কিংবা যন্ত্রপাতির দাম বেড়ে যায়, তখন কি মালিক পক্ষ সেই পণ্যগুলোর বিক্রেতাকে বলতে পারে, আমরা এত দাম দেব না, এত দাম দিলে আমাদের লোকসান হবে, আমরা প্রতিযোগীতার বাজারে টিকে থাকতে পারব না। বাজার অর্থনীতির নিয়মেই তা পারেনা। প্রকৃতই যদি কাচামাল বা যন্ত্রাপাতির দাম বাড়ার জন্য মালিক লোকসানের মুখে পড়ার উপক্রম করে, তখন মালিক পক্ষ বাধ্য হয় বাড়তি খরচ পুষিয়ে নেয়ার জন্য হয় পণ্যের দাম বাড়াতে অথবা উৎপাদনের কৃতকৌশলের উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে কম খরচে বেশী পণ্য উৎপাদন করতে। যন্ত্রপাতি, কাচামাল বা অন্য যে কোন উপকরণ কেনার বেলায় কারখানার মালিক সুরসুর করে বাড়তি দাম প্রদান করলেও, টালবাহানা কেবল শ্রমিকের কাছ থেকে কেনা শ্রম-শক্তির দাম পরিশোধ করার বেলায়! লোকসান, ছাটাই কিংবা লে-অফের ভয় দেখিয়ে মালিক শ্রমিককে বাধ্য করে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে তার শ্রম-শক্তি বিক্রি করতে। নিয়মিত তেল-মবিল না দিলে ঝকঝকে মেশিনটিও যেমন কর্মক্ষমতা হারিয়ে ধীরে ধীরে জীর্ণ হয়ে যায়, নিয়মিত উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে শ্রম শক্তি বিক্রি করতে করতে শ্রমিকেরাও তেমনি হয়ে পড়ে জীণ, শীর্ণ। এরই মাঝে সময় সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া শ্রমিকরা যখন জেগে উঠে, যখন তীব্র শ্রেণী-ঘৃণায় সবকিছু তছনছ করে দিতে চায়, তখন মালিক পক্ষ বলতে থাকে, এই দেখ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, তৃতীয়পক্ষের লেলিয়ে দেয়া মাস্তানরা কারখানা তছনছ করছে।
৩) আপনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আমরা কী বেশি বেতন+কম শ্রমিক= বেকারত্ব বৃদ্ধি দেখতে চাই নাকী কম বেতন+বেশি শ্রমিক= বেকারত্ব হ্রাস= অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখতে চাই ?” এটা ব্যাক্তিকে ছিনতাইকারীর মুখে ফেলে জানতে চাওয়ার মতো যে তিনি তার জান দিবেন নাকি তার সমস্ত অর্থ কড়ি দেবেন!!
আমরা দুটোই চাই.. বেশি বেতন এবং বেশি কর্মসংস্থান। এবং বাজার অর্থনীতিতে তার পুরোপুরি সমাধান না হলেও একটা পর্যায় পর্যন্ত তার সমাধান সম্ভব... রাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক যদি কর্মসংস্থানের দ্বায়িত্বটা নেয়। রাষ্ট্র যদি সরাসরি সেই দ্বায়িত্বটা না নেয়, যদি কর্মসংস্থান প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে, তাহলে যতদিন কম থাকবে ততদিন বিশাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিজার্ভ আর্মির সুযোগ নিয়ে মালিকরা শ্রমিকদের চুষতে চাইবেই... বুর্জোয়া রাষ্ট্রের কাজ হলো মালিক পক্ষ যেন যা ইচ্ছে তাই না করতে পারে তার ব্যাবস্থা করা.. এ জন্যই তো সারা দুনিয়ায় ন্যূনতম মজুরীর একটা কনসেপ্ট তৈরী করা হয়েছে। বর্তমান ঘটনা ও পরিস্থিতি দেখিয়ে দেয় একটি বুর্জোয়া রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই কাজটি করতে চরম ভাবে ব্যার্থ..
ধরা যাক একজন শ্রমিকের ৩০০০ টাকা মূল বেতন দেওয়া হল।
যার ফলে তার ভোগের পরিমান বেড়ে যাবে...কিন্তু ভোগ অনুপাতে তার সঞ্ছয় বাড়বে না...একটা সময় দেখা যাবে তার ৩০০০ টাকা দিয়েও তার হচ্ছে না...
কারন মানুষের চাহিদার শেষ নেই...সব সময় একটু ভাল একটু ভাল চায়...
আল্টিমেটলি...মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে...
এই খানে আরেক টা বিষয়, যদিও আগে বলা হয়েছে... উৎপাদন খরচ যদি বেশি হয়ে যায় তা হলে পন্যের দাম বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক...তা হলে বায়ার রা একই দামে আমাদের পার্শ্ববর্তি কোন দেশে পাচ্ছে...তা হলে তারা কেন আমাদের কাছ থেকে পন্য কিনবে...? যে খানে সারা বছর রাজনৈতিক কোন্দল লেগেই থাকেই...যাই হোক...
আমার মনে হচ্ছে পাট শিল্পের মত এটার ও একই অবস্থা হবে...
আমি মনে করে আমদের দেশের সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে রাজনৈতিক এক্যমত...এটা ছাড়া আমাদের এখন পর্যন্ত আর কোন বিকল্প আছে মনে আমি মনে করি না।
এরকম কুযুক্তি তো আগে শুনি নি। দেড় হাজার টাকায় আপনি মাস চালাতে পারবেন? কতগুলো লোক আধপেটা খেয়ে থাকে, তারা এখন পেট ভরে খাবে, আর আপনি মূল্যস্ফীতির চিন্তায় পড়ে গেলেন? নিজে তিনবেলার জায়গায় দুইবেলা খেয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চিন্তা করেছিলেন কখনো? আর চাহিদার যে শেষ নাই, সেটা এই গার্মেন্টস ভাইয়াদের খাই খাই শুনেই তো টের পাওয়া যায়। চলেন মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে ওদের ট্যাক্স হলিডে বাতিলের দাবি তুলি।
বায়াররা বিভিন্ন দামে বিভিন্ন দেশ থেকে কেনে, এবং বিভিন্ন হারে কর আরোপ করে নিজের দেশে দাম নরমালাইজ করে।
খুব হতাশ লাগে আজকাল
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কুযুক্তি তো বটেই, কিন্তু একেবারে বাস্তবতা-বিবর্জিত কিন্তু না। বেতন বাড়ানো হলে অবশ্যম্ভাবীভাবেই চাল, ডাল ও তেলের দাম বাড়বেই, আমাদের অর্থনীতিতে এটা মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর সবচেয়ে বড় এলিমেন্ট।
বেতন বাড়ানো হলেও তাদের জীবনযাত্রার মান কতটুকু বাড়বে, তা নিয়ে আমি ঘোরতর সংশয় প্রকাশ করছি। তবে এটা কোনও কথা না বা যুক্তি হতে পারে না।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের যেই বেতন দেওয়া হয়, সেটা অমানবিক। এই অবস্থা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
@ হিমু ভাই...
আমি কু-যুক্তি দিই নাই...কারন এতে আমার কোন স্বার্থ নাই...
(শুধু এক পক্ষের হিসেব চিন্তা করলে হবে না)
আগে কিন্তু অনেকেই দেড় হাজার টাকায় সংসার চালত...এর আগেই হয়ত আরো কম ছিল...তা হলে কেন মজুরী বাড়ানোর প্রয়োজন হল ?
সহজ কথা দ্রব্যমূল্য...
কিন্তু প্রতি বছর বছর তো দ্রব্যমূল্য এর দাম বাড়ছে তাই বলে কি প্রতি বছর মজুরী বাড়াতে হবে...আচ্ছা বাড়ালাম...আচ্ছা বাড়ালাম...এই ভাবেই...।
এতে করে, মালিক পক্ষের লাভের পরিমান কমে যাবে...আর একজন ব্যবসায়ী সুযোগ পেলেই তার ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করে নতুন কারখানা স্থাপন করে...হোক শ্রমিক ঠকিয়ে বা দূর্নীতি করে...তাতে করে কি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না ? কিন্তু আমাদের দেশের অনেক ছোট গার্মেন্টস আছে যাদের ৩০০০ টাকা দিয়ে শ্রমিক রাখলে তাদের মুনাফা মন মত হয় না...তার ফলে কিন্তু ছোট গার্মেন্টস টা একটা যায়গায় স্থির থাকল...একজন ব্যবসাযী একটা ফাক্ট্রী দিতে এই দেশে অনেক জামেলা করতে হয় তারপরে ও নানান সমস্যা তো আছেই...বিদুৎ, গ্যাস...চাঁন্দাবাজী...ইত্যাদি...একজন ব্যবসায়ি এত কিছু বিনিযোগ করার পরেও বুঝি সে তার মুনাফা সর্বোচ্চ করতে পারবে না...তা হলে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরী হবে কি ভাবে...
আরেক টা কথা শ্রমিক দের না পোশালে তারা কেন চাকরী করতে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসবে?... গ্রামে তো অনেক অনাবাদী জমি আছে অগুলা চাষাবাদ করে খা...ছোট বেলায় পড়তাম "আমাদের দেশের ৮০% লোক কৃষির কাজে জড়িত''
আপনার যুক্তিটা হচ্ছে এমন, শৈশবে তো সবাই হামাগুড়ি দিয়ে চলতো, তাহলে এখন কেন সোজা হয়ে দাঁড়াতে চায়?
হ্যাঁ, দ্রব্যমূল্য বাড়ালে মজুরিও বাড়াতে হবে। না বাড়ালে লোকগুলি খাবে কী?
যে কর্মসংস্থান আপনাকে খাওয়ার খরচই দিতে পারে না, সেই কর্মসংস্থান হয়ে লাভ কী? আপনি দেড় হাজার টাকা মজুরিতে মাসে মাসে কামলা দিবেন? রাজি থাকলে আসেন, আপনারে একটা গার্মেন্টসের চাকরিতে ঢুকায় দেই।
একজন ব্যবসায়ী মুনাফা করতে চাইলে বাধা নাই, কিন্তু সেই মুনাফা যেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মতো করে লোকের আয়ু শুষে না হয়।
শ্রমিকরা আসে না পেরে। গ্রামের অনাবাদী জমি চাষ করে যদি পারতো, গ্রামের অনাবাদী জমিই চাষ করতো। পারে না বলেই গার্মেন্টসে কাজ করতে আসে, আদমব্যাপারীদের টাকা দিয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে যায়, জাহাজভাঙা ঘাটে গিয়ে ক্রীতদাসের মতো খাটে।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হিমু ভাই।
মালিক অবশ্যই ৫০০ শ্রমিকের কাজ ৩০০ জন দিয়ে করাবেন না। ব্যবসায়ী হিসেবে আমি অবশ্যই দেখব আমার লাভের হার যেন ঠিক থাকে। ধরুন আগে যেখানে অর্ডার নিয়ে কাজ করে ১০০ টাকার জিনিস বিক্রী করতাম তখন আমার শ্রমিক মজুরি+ইত্যাদি খরচ বাদে আমার লাভ ছিল ধরুন ৫০ টাকা মানে লাভ ৫০%। এখন্ যখন শ্রমিক মজুরি বেড়ে গেলো তখন আমি অবশ্যই বেশি শ্রমিক রেখে বা বেশি অর্ডার নিয়ে আমার ব্যবসা পরিধি বাড়াব না। আগে যদি আমার লাভের হার ৫০% হয় তবে ব্যবসা পরিধি কমিয়ে হলেও আমি চাইব প্রফীটের হার যেন একই থাকে; কমে না যায়। লাভ ৫০% হতে ৪৯% হওয়া মানেই আমার জন্য খারাপ। আমি কেন ব্যবসা ''মজুরি বাড়ার আগের মত'' রাখব/বাড়াব যদি আমাকে ১% কমও লাভের সম্মুখীন হতে হয়; আমি লোক ছাটাই/অন্য কোনও ভাবে আমার প্রফিট মার্জিন একই রাখব।
তবে লোক ছাটাইয়ের প্রয়োজন নাও হতে পারে। বাংলাদেশে এমন অনেকেই আছেন যারা ১৫০০ টাকা মাসিক বেতন পেলেই খুশি তাদেরকেও মালিক কাজে লাগাতে পারেন। মেক্সিকো হতে আমেরিকায় পারি দেওয়া অবৈধ অভিবাসীরাও কিন্তু এভাবেই চুপেচাপে নূন্যতম মজুরির নিচে কাজ করে দিয়ে থাকেন। ফলে মালিকও খুশি - সেই মেক্সিকানরাও খুশি।
প্রসঙগে ফিরে আসি এখন ধরুন যদি বেতন বাড়ায় আমি বিদেশীদের কম অর্ডার নিয়ে প্রডাক্ট সেল করি ৫০ টাকার এবং খরচ বাদে লাভ থাকে ২৫ টাকা সেক্ষেত্রেও কিন্তু আমার লভ্যাংশের হার ঠিক থাকছে। তবে এটা ঠিক যে ব্যবসার পরিধি ছোট হয়ে আসতে পারে (এক্ষেত্রে ১০০ টাকার জিনিস হতে কমে ৫০ টাকার জিনিস বিক্রী করছি কিন্তু লাভ কিন্তু ৫০% থাকছে) এবং সামগ্রিক ভাবে আউটপুট কমে যেতে পারে। তখনই প্রশ্ন আসতে পারে govt. intervention এর।
আর একটি বিষয় ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন যে মজুরি বাড়ালে সাধারণত শ্রমিক সংখ্যা কমে যায়। বাংলাদেশে এরকম স্ট্যাটিস্টিক্স আছে নাকী জানা নেই তবে আমেরিকার ক্ষেত্রে এর পককhষে ডাটা পাওয়া যায়. এক পরিসংখ্yaযন অনুযায়ী (Charles Brown, ''Minimum wage laws: Are they over rated?'')সেখানে দেখানো হয়েছে নূন্যতম মজুরি ১০% বাড়ালে কম বয়েসী শ্রমিকদের বেকারত্বের হার ১-৩% পর্যন্ত বেড়ে যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটি হতেও পারে নাও পারে।
আর দুঃখ জনক হলেও আমার মনে হয় না বাংলাদেশ ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হয়ে কোন মজুরি কাঠামো সেট করবেন। তারা চাইবেন যতটা কম খরচ করে যত বেশি লাভ করা যায়। ্দুঃখজনক হলেও ব্যবসায়ী মাত্রই সেটা চাইবেন। প্রফিট নিয়ে তারা আপোস করতে চান না। ব্যবসায় যখন নেমেছেন কম কেন বেশি লাভ করবেন এটিই তাদের উদ্দেশ্য থাকে
আরেকটি বিষয়ের প্রতি আমি আলোকপাত করতে চাই হিমু ভাই। আমাদের অধিকংশ গার্মেন্টস শ্রমিক ই কিন্তু অল্পবয়েসী। অনেক সময় দেখা যায় ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ই গার্মেন্টস শ্রমিক। সেক্ষেত্রে মাসিক আয় কিন্তু নেহাত কম হয় না।
সামু ব্লগে একটি ব্লগে দেখলাম একজন বললেন
লালসালু বলেছেন: আপনি গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করলে এ কথা বলতেন না। আমি এই সেক্টরের সাথে ১০ বছর ধরে জড়িত। নিজে একটা বড় কম্পানীর ম্যানেজার। নূন্যতম মজুরী হল ৭ম গ্রেডের শিক্ষানবীশ কর্মচারীদের জন্য। ৭ম গ্রেডের কর্মচারীদেরকে আমরা হেল্পার ডাকি। তাদের বয়স সাধারণত ১৪ থেকে শুরু হয়। অনেকে ১৮ বছর বয়স থেকে কাজ শুরু করে। এই বয়সে কেউ বিয়ে করে ফ্যমিলীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলে সেটা কে দেখবে?
৭ম গ্রেডের নূন্যতম মজুরী যখন ১৬৫২টাকা ছিল তখন তাদের বেতন ছিল নিম্নরুপঃ
নূন্যতম মজুরীঃ ১৬৬২
হাজিরা বোনাসঃ ৩০০ (যে মাসের প্রতি কর্মদিবসে উপস্থিত থাকে, অনুপস্থিত থাকলে আবেদন করলেও টাকা দেয়া হয়)
ওভারটাইমঃ বিকাল পাঁচটার পরে প্রতি ঘন্টায় বেসিকের ডাবল। বাংলাদেশের কোন ফ্যক্টরীতে রাত দশটার আগে কাজ শেষ হয় না। সুতরাং একটা ছেলে দিনে পাঁচ ঘন্টা ওভারটাইম করে। তার ওভারটাইম গিয়ে দাঁড়ায়ঃ (১৬৬২/১৯২= ৮.৬৫/ঘন্টা)
মাসে ওভারটাইম হয়ঃ ২৫*৫*৮.৬৫= ১০৮১.৫০ টাকা
বাংলাদেশের বেশিরভাগ ফ্যক্টরীতে শুক্রবারে কাজ হয়। তখন নূন্যতম বেতন ধারীদের নূন্যতম ১০০টাকা দেয়া হয়। দুটি শুক্রবার অবশ্যই কাজ করতে হয়।
সুতরাং ১৬৬২টাকা যখন বেতন ছিল তখন একজন শিক্ষানবীশ হেল্পারের মোট বেতন ছিলঃ ১৬৬২+৩০০+১০০০+২০০= ৩১৬২ টাকা।
বাংলাদেশের কোন মানুষ সারাজীবন শিক্ষানবীশ হিসেবে থাকতে চায় না। তিন মাস পরে আমরা তাকে মেশিন দেই মানে সে অপারেটর হয়ে যায়। তখন আগের নূন্যতম মজুরী অনুযায়ী তার নূন্যতম বেতন হয় ২২০০টাকা। সে হিসেবে তার মাসিক বেতন দাঁড়ায় ৪হাজার টাকা। ১৪-১৮ বছরের লোকের জন্য ৪হাজার টাকা তেমন খারাপ কিছু নয় যদি সে অবিবাহিত থাকে।
অর্ক, এবার তাহলে শ্রমিকের দিক থেকে দেখুন তো। দ্রব্যমূল্য যদি ১০% বাড়ে, শ্রমিক কোন দুঃখে আগের মজুরিতে কাজ করবে? মালিক তো ৫০% থেকে লাভ ৪৯% এ গেলেই হাউকাউ করছেন। আর শ্রমিক যে নিজের জীবনে বিনিয়োগ করছে, সেটার খরচ ১০% বেড়ে যাওয়ার অর্থ, শ্রম বিক্রি থেকে তার ১০% লাভ কমে যাওয়া। সে কেন আপোষ করবে?
আসল জায়গাটা দেখুন। মালিক যদি লাভ করতে চান, তাকে উত্তর আমেরিকা আর ইয়োরোপের বাজারে নেগোশিয়েট করার শক্তি নিয়ে নামতে হবে। দেশের শ্রম বাজারে নয়। কিছু গ্রাফ এঁকে দিয়েন মালিকদের জন্যে, যেগুলো তারা পণ্যের মূল্য পুনর্নির্ধারণে ব্যবহার করতে পারবেন।
বিদ্যুতের দাম বাড়লে গার্মেন্টস মালিকেরা কাউকাউ করে, শ্রমের দাম বাড়লে কাউকাউ করে। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো কাঁচামালের দাম বাড়লে সুড়সুড় করে ঠিকই কিনে আনে।
তাহলে তো হিমু ভাই, শুধু গার্মেন্টস শ্রমিক কেন আমাদের সবারই আন্দোলন করা উচিত মুদ্রাস্ফীতির সাথে সাথে আমাদের বেতন এডজাস্ট করার জন্য। ইনফ্লেশন ১০% হলে বেতনও সেই ভাবে বাড়ুক আর ডীফ্লেশন ১০% হলে সেইভাবেই কমুক। কারণ কর্মক্ষেত্রে আমরাও শ্রমিক। আমাদের খরচও ১০% বেড়ে যাওয়ার অর্থ, শ্রম বিক্রি থেকে আমাদের ১০% লাভ কমে যাওয়া। আমরাও বা আপোষ করতে যাব কেন ? আন্দোলন করলে আমাদের বসরাও বেতন বাড়াতে বাধ্য হবেন বলেন আশা করা যায়। আর শ্রমিকদের আয় এত কম কিন্তু সারা জীবন থাকছে না কয়েক মাস পরই বেড়ে যাচ্ছে আর তার ওভারটাইম করার সুযোগ তো থাকছেই। অবস্থা যে খুবই শোচনীয় তা কিন্তু না। আর এত সংঘর্শষের সাথে কোন না কোন উস্কানি অবশ্যই আছে
মালিক যদি লাভ করতে চান, তাকে উত্তর আমেরিকা আর ইয়োরোপের বাজারে নেগোশিয়েট করার শক্তি নিয়ে নামতে হবে। দেশের শ্রম বাজারে নয়।
আপনি আমি সবাই জানি এটা কখনও অন্তত বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্ভব নয়। মালিক অর্ডার দাতাদের রেটে রাজি না থাকলে সে কাজটা ভিয়েতনামের আরেকজন কে দিয়ে দিবে এবং এজন্যই মালিক নেগোশিয়েট যা করার তা শ্রমিকদের সাথেই করে । শ্রমিক দাস তার মালিকের আর মালিক দাস তার বিদেশি প্রভুর...এভাবেই চলছে।
আমরা তো ভদ্দরলোক, তাই আমাদের আন্দোলন করতে হয় না। আর আমাদের তো সবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সবার আগে আপনি আমিই নামতাম আন্দোলনে।
শ্রমিকের আয় কম থাকছে না, কয়েক মাস পর বেড়ে যাচ্ছে, এগুলোও তো তাত্ত্বিক কথা। আপনি কি কোনো পরিসংখ্যান উপস্থাপন করতে পারেন, কোন স্তরে কত শ্রমিক কত দিন কাজ করে? আর ওভারটাইম করে যদি বেশি কামানোর রাস্তা থাকে, আমাদের বেতন আদৌ বাড়ে কেন? সবাইকে ওভারটাইমের রাস্তা দেখিয়ে দেয়া যায়। দিনে দশ ঘন্টার জায়গায় আঠারো ঘন্টা কাজ করলেই তো সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
চীন রপ্তানিমুখী পোশাক উৎপাদন করায় তার লোকাল মার্কেট এখন আমদানি করে চালাচ্ছে, এমনটা শুনেছিলাম। সেই বাজার আবার বাংলাদেশ ধরতে চেষ্টা করছে। অর্থাৎ, চীনের লোকাল বাজারে পণ্যের আমদানিমূল্য যদি x হয়, আর বহির্বাজারে চীনে উৎপাদিত পণ্যমূল্য যদি y হয়, পরিষ্কারভাবেই y > x । আমরা x মূল্যে পণ্য বিক্রি করে ব্যবসা করতে চাই, আর y ধরতে পারি না?
ভিয়েতনামের সাথে আমাদের প্রতিযোগিতা শুধু পণ্যমূল্যেই নয়, বরং ক্রেতারা ব্যবসাটাকে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ছড়িয়ে রেখেছে। বিভিন্ন দেশের পণ্য বিভিন্ন হারে শুল্ক দিয়ে দামটা উত্তর আমেরিকা আর ইয়োরোপের বাজারে নরমালাইজ করা হয়। নেগোসিয়েশনটা হওয়া উচিত ঐ শুল্ক হার কমিয়ে শ্রমিকের শ্রমের ন্যায্য মূল্য পরিশোধ করা নিয়ে। এই নেগোসিয়েশনে আমাদের ওভাররেটেড দর্জি ভাইয়ারা কতটুকু দক্ষ, আমি জানি না।
ভিয়েতনাম পর্যন্ত যেতে হবে কেন, বাংলাদেশের ভেতরেই কি দাম নিয়ে প্রতিযোগিতা নেই? এক গার্মেন্টস ভাইয়া আরেক গার্মেন্টস ভাইয়ার চেয়ে কম দামে কোট করেন না? এত সিণ্ডিকেটের কথা শুনি, শুধু রপ্তানির মার্কেটেই সিণ্ডিকেট করা যায় না। নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে দাম কমিয়ে সেই কম দামের বোঝা শ্রমিকের ঘাড়ে চাপানোর বেলায় সবাই ওস্তাদ।
বেতন কয়েক মাস পর বেড়ে যাবে বলতে আমি পদোন্নতির কথা বুঝিয়েছি। আজ যে ৩০০০ টাকা কামাচ্ছে সে তো আর সারাজীবন তা আয় করছে না । সব কাজে যদি ওভারটাইমের সুযোগ থাকত তাহলে তো হতই। দুটো পয়সা বেশি আয়ের চেষ্টা সবারই থাকে; তাই সুযোগ পেলে খুব কম লোকেই তা ছাড়ে। সরকারী ডাক্তাররা অফিস করার পরও শরীরের ধকল সয়ে এত প্র্যাক্টিস করেন কেন? ওই দুটো পয়সা বেশি রোজগারের জন্য। আমাদের চাহিদা অপরিসীম। আপনি যদি শ্রমিক বেতন বাড়িয়ে ৫০০০ টাকাও করেন তারপরও দেখবেন মানুষ ওভারটাইম করে যাচ্ছে আরো রোজগারের জন্য।
অর্থনীতির প্রডাকশন ফাংশনের দুটো অংশের একটি ক্যাপিটাল আর একটা শ্রম। এদের একটি ছাড়াও উন্নয়ন সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীরা সফল দেখেই আজ শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে। আর শ্রমিকরা সফল দেখেই ব্যবসায়ীরা বেচে আছে। তবে এটা সত্য যে শ্রমিকদেরই বেশি কষ্ট সইতে হচ্ছে। পুজিবাদের মনে হয় তাই নিয়ম । তবে এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ জোয়ান রবিন্সনের একটা মন্তব্য স্মর্তব্য The misery of being exploited by capitalists is nothing compared to the misery of not being exploited at all.
আপনার হাতে যদি শ্রমিকদের বিভিন্ন স্তরে কাজ করার সময় নিয়ে কোনো সমীক্ষালব্ধ তথ্য থাকে, প্রকাশ করুন। আপনি যা বলছেন, সেগুলো বাস্তবতার কতটুকু কাছাকাছি, একটু দেখতে চাই। কাগজে কলমে তো এমন মসৃণ ব্যবস্থার কথা বলাই যায়, যেখানে সুড়সুড় করে সব শ্রমিকের পদোন্নতি হয়, তিন মিটার চওড়া ফায়ার এস্কেপ থাকে, শ্রমিকের বাচ্চার জন্যে কিডস কর্নার থাকে, ফুল ফোটে, ভ্রমরা ওড়ে আর পাখি গান গায়।
সরকারী ডাক্তার ওভারটাইম করেন না, করেন প্রাইভেট প্র্যাকটিস। দু'টো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস, দু'টোতে বিনিয়োগের ধরণ ভিন্ন, প্রণোদনাও ভিন্ন।
অপরিসীম চাহিদা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই, মালিকের আচরণ দেখলেই সেটা বোঝা যায়। কিন্তু ওভারটাইমের মূলো দেখিয়ে আপনি মজুরির হারকে জাস্টিফাই করতে পারেন না।
জানতে হবে বেশী। পড়তে হবে আরোও বেশী।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
দুই শ্রেনীর মজুরির ওঠানামার প্রভাব যে দুইভাবে হতে পারে সেটা আমি আপনার ফরওয়ার্ড ফলিং সাপ্লাই কার্ভ বিষয়ে বলেছি। বিষয়টা হলো গার্মেন্টস শ্রমিকেরা প্রান্তে বসবাস করে। একটু এদিক ওদিক হলে তাদের পেটের ভাতে টান পড়ে। যেটা আমরা যারা এখানে বসে কমেনট করছি তাদের ক্ষেত্রে সত্য না।
সবকিছু এক পাল্লায় মেপে ফেলাটা ঠিক না। এইটাকেই আমি অন্য একটা মন্তব্যে ধুম করে বোর্ডে সাপ্লাই ডিমান্ডের ক্রস একে ফেলা বলেছি।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ব্যবসায়ীর জন্য পার ইউনিট লাভের চেয়ে মোটলাভ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিকের মজুরি বাড়ালে সেই ফিলডে বেশি শ্রমিক পাওয়া যাবে, এতে পার ইউনিট প্রোডাক্টের লাভ কমলেও মোটলাভ বেশি হবে, ঠিক কিনা? মোট লাভ বাড়ানোর জন্য দ্রব্যমূল্য কমানো একটা ভালো স্ট্রাটেজি। এজন্যই চায়নিজ বা জাপানি প্রোডাক্টের এত রমরমা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাই দা আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনি যা বলতে চেয়েছেন তা মনে হয় আমি বুঝতে পারিনি ঠিকমত। বোঝায় ভুল থাকলে শুধরে দিবেন।
পার ইউনিট লাভ কমিয়ে কীভাবে মোট লাভ বাড়ানো সম্ভব তা আমি বুঝতে পারলাম না। পার ইউনিটে যদি আমার লাভ ১ টাকা বাড়ে তাহলে ১০০ ইউনিটে আমার লাভ বাড়বে ১০০টাকা মানে আমার মোটলাভ আরও ১০০ টাকা বাড়ল।
আর পার ইউনিটে লাভ যদি ১ টাকা কমে তাহলেও ঐ একই কথা ১০০ ইউনিটে আমার মোটলাভ আগের চাইতে ১০০ টাকা কমল।
চাইনিজ প্রডাক্টের দাম কমের সাথে মনে হয় সস্তা/ কম টেকসই কাচামাল আর সস্তা শ্রমিক (যদিও সেই সস্তা আর আগের মত নেই এবং যার কারণে তারা প্রতিনিয়ত অন্য দেশের কাছে বাজার হারাচ্ছে) এর ব্যাপারটা জড়িত।
আর জাপানিজ প্রডাক্টের দাম বেশিই বলে জানতাম ! ওদের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রডা্কশন কস্টের সাথে সাথে মনে হয় গুডউইলের ব্যাপারটাও জড়িত । একই ডিজিক্যাম একটি মেড ইন চায়না আরেকটির যদিও দাম একটু বেশি তা মেড ইন জাপান। কোনটি কিনবেন ? আমি জাপানেরটাই কিনব। দুনিয়াজুড়ে সবার জাপানিজ প্রডাক্ট নিয়ে ধারণা ওই পিএইচপি ঢেউ টীনের বিজ্ঞাপনের মত, জিনিস যেটা ভাল দাম তার একটু বেশি !
প্রোডাক্টের কোয়ালিটি-রিকোয়ারমেন্ট প্রোডাক্ট-টু-প্রোডাক্ট পরিবর্তিত হয়। যেমন, বিশেষ করে যেসব প্রোডাক্টের টেকনোলজি সময়ের সাথে দ্রুত উন্নত হচ্ছে, সেসব ক্ষেত্রে 'টেকসই' কোয়ালিটিটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। উদাহরণ, মোবাইল ফোন সেট, কম্পিউটার পার্টস, ডিজিটাল ক্যামেরা।
রপ্তানিকৃত পোশাকের ক্ষেত্রেও অধিকাংশ মানুষই সুঁতার কোয়ালিটি থেকে ডিজাইনের প্রতিই বেশি ফোকাস করে। এক্ষেত্রে দাম কমালে কাস্টোমার বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে, যেসব দেশে আমরা পোশাক রপ্তানি করি, সেখানে ১ সেন্ট কম দামে পেলে একই জিনিস কেনার জন্য ২০০ মিটার দূরের দোকানে যাওয়াদের সংখ্যাই বেশি। জিনিসপত্রে ছাড় দিলে লোকজন ৯ টায় খোলা দোকানের সামনে ভোর ৬টা থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এবার বুঝলাম বলাই দা। আমাদের ব্যবসায়ীরা বুঝলেই হয়। তবে ব্যাপারটা মনে হয় এত সোজা না। নাহলে ১০% মজুরি বাড়ালে বেকারত্ব ১-৩% বাড়ে এই পরিসংখ্যান পাওয়া যেত না।
তারপরও কিন্তু লোকে ভালো কোম্পানীর ভাল জিনিস খুজে। সবাই জানে নকিয়া ফোন অন্য চাইনিজ কমদামী মোবাইলের চাইতে ভাল।
আমি যদ্দুর জানি ডিজাইন হতে শুরু করে পোশাকের রঙ, কী জাতের কাপড় হবে কটন না অন্য কিছু তাও অর্ডারদাতারা ঠিক করে দেয়। এক্ষেত্রে মনে হয় আমাদের বেশি কিছু করার নেই।
আপনি প্রফিটের পার্সেন্টেজের কথা বলছেন, যা প্র্যাকটিকালি হবে না।
মনে করেন একজন মালিক এখন ১ কোটি টাকার ব্যবসা করেন, তার লাভ ৫০%= ৫০ লক্ষ টাকা।
এখন তিনি তার উৎপাদন কমিয়ে নিয়ে এলেন, ইত্যাদি করলেন, এখন তাঁর ব্যবসা ৮০ লক্ষ টাকার, লাভ সেই একই হারে ৫০%= পাবেন ৪০ লক্ষ টাকা।
মালিক কখনোই তা করতে যাবে না।
মালিক খেয়াল রাখবে কমপক্ষে যাতে ৫০ লক্ষ টাকা তার লাভ থাকে ( এখানে শতকরা হার বিবেচ্য নয়, টাকার পরিমান বিবেচ্য।) এখন ৫০ লক্ষ টাকা লাভ করতে হলে কিন্তু বিনিয়োগ বাড়বে, এই বিনিয়োগ শুধু শ্রমিকের বেতনের জন্য নয়, অন্যান্য সব জায়গায়।
মালিক আগে ধরেন ৫ লাইনের প্রোডাকশন থেকে ৫০ লক্ষ টাকা লাভ করতো,
তার ব্যয় ধরা যাক প্রতি প্রোডাকশন লাইনে আগে ছিল = আয় ২০ লক্ষ-খরচ ১০ লক্ষ= ১০ লক্ষ।
এখন ধরেন সব বেড়ে হয়েছে= আয় ২০ লক্ষ- খরচ ১৩ লক্ষ= ৭ লক্ষ।
মালিক তার ৫০ লক্ষ টাকা লাভের জন্য এখন ৭ লাইনে প্রোডাকশন করতে চাইবে, যাতে করে ৭লক্ষ টাকা করে ৭ লাইন থেকে ৪৯ লক্ষ টাকা আসে।
কিন্তু আরিফ ভাই ৫ লাইনে থেকে এখন ৭ লাইনে যে কাজ করবে অতিরিক্ত ২ লাইনের জন্য কাজ তো থাকতে হবে ? যদ্দুর জানি আপনি যদি দাম না কমান তাহলে অতিরিক্ত কাজ করতে পারবেন না; পাবেন ই না; অন্য কারণেও না পেতে পারেন। মন্দার প্রভাব এখনও কাটেনি; এ অবসতথায় নতুন বিনিয়োগ কতটা বাস্তবসম্মত? এমনিতেই আপনার খরচ বেড়ে গেছে এখন যদি কাজ পাওয়ার জন্য আরও দাম কমাতে হয় ? নতুন কাজের লাভ বাদ দিলাম; নতুন যে ২ ইউনিটে যন্ত্রপাতি,লোক নিয়োগ ইত্যাদি বিনিয়োগ করলেন; তার খরচও তো ওঠাতে হবে ?
নতুন বিনিয়োগ করলাম, শ্রমিক নিয়োগ দিলাম কিন্তু কাজ পেলাম না; তাহলে ব্যাপারটা আরও খারাপ হয়ে গেল না ? নতুন কাজ পাওয়ার চাইতে আগের চাইতে কম কাজ করাটা মনে হয় সহজ এবং রেশন্যাল। কারণ চাইলেই আরও কাজ পাবেন নাকী তা নিশ্চিত নয় তবে চাইলেই আগের চাইতে কম কাজ করতে পারবেন+ ক্ষতি হবে কম +লাভের হার ঠিক রাখতে পারবেন।
আমি যদি লাভের হারের হিসাব না রেখে কেবল ১০ লাখ টাকা আয় বাড়ানোর (সোজা কথায় আগের ৫০% এর চাইতেও বেশি লাভ !!) জন্য ধাম করে এত বিনিয়োগ করে সেরাম রিস্ক নিয়ে বসি তাহলে মনে হয় ব্যাপারটা ঠিক সুবিধাজনক হবে না। আর নতুন বিনিয়োগের টাকাটাও হয়ত আমাকে ডাবল ডিজিট সুদে লোনে নিতে হবে।
তাই এর চাইতে ব্যবসা কমিয়ে লাভের হার ঠিক রাখাই কী বুদ্ধিমানের কাজ নয় ?
উপরে কোথায় যেন দেখলাম আপনি প্রডাকশনের দুইটা এলিমেন্টের কথা বলেছেন। প্রডাকশনের আরো দুইটা এলিমেন্ট আছে যার একটার নাম অরগানাইজেশন বা ম্যানেজমেন্ট। মার্কেটিঙে আরেকটু দক্ষতা আনতে পারলে নতুন অর্ডার বের করা সম্ভব খুব সহজেই। এইটা করা গেলে সাপ্লাই কার্ভ ডানদিকে শিফট করানো সম্ভব। আপনি উদ্ধৃত্ত অংশে ধরেই নিচ্ছেন মার্কেটের ডিমান্ড কার্ভের ওপর দিয়েই আমাদের হাটাচলা করতে হবে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমি Y = F(K, L) নিয়ে বলেছিলাম ওটা। আমাদের ব্যবসায়ীরা ম্যানেজমেন্ট বা মার্কেটিং এ কতদূর কী করতে পারবেন তারাই মনে হয় ভাল বুঝবেন !
আপনি আসলেই ইকোনমিক্স কম জানেন। এইটাকে বলে economies of scale। এতোদিন আপনাদের ওটা পড়ানোর কথা।
আর্টিকেলটা পড়লাম। ওটা এ্যামেরিকান মার্কেটের ওপর স্টাডি। তাও খুব উন্নতমানের কিছু না। যে জার্নালে ছাপানো হয়েছে তখন ওটা পত্রিকার কলাম স্টাইলের পেপার ছাপাতো। বাংলাদেশের ওপর উপরে একটা আর্টিকেলের রেফারেন্স দিয়েছি। ওটাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু পাবেন।
মজুরির ধারনা তো পরিবার দিয়ে হয় না। ব্যক্তির দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে হয়। অতএব কার পরিবারে কে কী করলো সেটা এখানে আসছে কেন?
আর উপরে যেই ওভারটাইম ইত্যাদির হিসেব দিলেন সেটা থেকে আসলে কিছু প্রমান হয় না। মানুষ ওভারটাইম করে তার দরকার হয় বলে। এই দরকার মেটাতে সে বেশ ভালো পরিমানে সুযোগ ব্যয়ের মুখোমুখি হয়। এই বিষয়টাও বিবেচনায় আনা দরকার। কেউ আঠারো ঘন্টাও কাজ করতে পারে। তবে এই করলে সে তার পরিবারের কাছে সময় দিতে পারবেনা। নিজের বিশ্রামের সময়টুকু, বিনোদন ইত্যাদি কিছুই তার কাছে থাকবে না। এই জিনিসগুলোও তো টাকার মূল্য কনভার্ট করা যায়। তাইনা?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অবশ্যই আরও পড়তে হবে আরও জানতে হবে !! এটার কথা খেয়ালই ছিল না ...ধুত্তোর... এত চটজলদি এই লেখা আসলেই উচিত হয়নি :/
তবে economies of scale একটা লংরান কন্সেপ্ট নয় কী ?
অফটপিকঃ হ্যা উনি ফিরে এসেছেন আর সিনিয়রদের ক্লাস নিচ্ছেন ।
মাত্র জার্মান খবরে আমাদের টেক্সটাইলে শ্রমিকের বঞ্চনার কথা কিছু দেখাইছে।
কিছুক্ষন পর (22:45) ZDF পুরো ঘন্টাব্যাপী রিপোর্ট করবে। সবই তো জানি। দেখে তো লাভ নাই। চান্সে দেশের ভাবমুর্তি বেড়ে (!!) যাবে
এটা কোন লেভেলের ক্লাস সেটা দেখতে হবে।
ইন্ট্রোডাক্টরী ইকনমিকস এর ক্লাস যদি এটা হয়, তবে শিক্ষকের সরলীকৃত বক্তব্যকে তার মতামত ধরে নেয়া ঠিক হবে না।
আমি নিশ্চিত অ্যাডভান্সড লেভেলের ক্লাসে যখন গ্রাফ নির্ভর না হয়ে উচ্চতর গণিত ব্যবহার করে এই শিক্ষক পড়াবেন- তখন নানা বাস্তবভিত্তিক মডিফিকেশন অন্তর্ভুক্ত করে তিনি তার বিষয়ের উপস্থাপনা বিশাল মাত্রায় বদলে ফেলবেন।
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সেটা হতে পারে। তবে একটা নোট দিয়ে রাখি। উচ্চতর গণিত হলেই যে সেটা বাস্তবভিত্তিক মডেল হবে সেটা ঠিক না। চলতে থাকা ইকোনমিক রিসেশন এইসব উচ্চতর গাণিতিক বালছালেরই ফল।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এটা ঠিক যে গাণিতক মডেল হলেই সেটা সার্থক বাস্তবভিত্তিক মডেল হবেনা। তবে এই যুগের বহুমাত্রিক অর্থনীতির বিচার বিশ্লেষনের জন্য কাঠামো দাঁড় করাতে হলে উচ্চতর গাণিতিক মডেলই সহায়। এখন গাণিতিক মডেলকে আমরা বালছাল গজাতে দিলে তা বালছালই গজাবে; আবার সঠিক প্রয়োগে এই একই মাল আমাদের সুদৃশ্য ফ্রেঞ্চকাট গোফ-দাড়ি উপহার দিতে পারে। সুতরাং দোষ উচ্চতর গণিতরে দিয়া লাভ কি? আমেরিকায় অর্থনীতির মডেলিং শিখে তা হুবহু বাংলাদেশে প্রয়োগ করলে কিংবা ইচ্ছাকরে চোখকান বন্ধ রেখে প্রেক্ষাপট উপেক্ষা করে আমেরিকাতেই সেই মডেলিং কৌশল লাগাতে চাইলে শেষমেষ কেবল বালছালই তবারুক হিসাবে জুটবে।
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
নূন্যতম না ন্যূনতম? ন্যূন = ন+ঊন ...
সবকিছুতে অর্থনীতিই শেষ কথা নয়। উইকিতে একটা টার্ম আছে যাকে বলে সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট। এখন এটা নিয়ে সবাই আলোচনা করছে। এর তিনটে মূল ভিত্তি - অর্থনীতি, সমাজ আর পরিবেশ। এই তিনটেই সাথে নিয়ে চলতে পারলে তবে উন্নয়ন। যদি না পারে, তাহলে উন্নয়নের প্রকৃত হিসাব আনার জন্য অর্থনীতির লাভ থেকে সামাজিক আর পরিবেশের ক্ষতি বাদ দিয়ে ভাবতে হবে। ন্যূনতম মজুরীর কনসেপ্টটা আদৌ অর্থনীতির আওতায় থাকাই উচিত নয়, এটা মূলত সামাজিক বৃত্তে ঘোরাফেরা করা উচিত।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নতুন মন্তব্য করুন