ইন্দোনেশিয়া আমার এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ দেশ। ৩০ হাজারের উপর দ্বীপ নিয়ে দেশটি গঠিত। এতো বৈচিত্রময় দেশ আসলেই কল্পনা করা যায়না, যেমন সংস্কৃতিতে, তেমনই ভাষায়, পোষাকে, আচরণে, খাদ্যে; আর সবথেকে বেশি বৈচিত্র প্রকৃতিতে। এখকানে আছে সাগর, আছে পাহাড়, আছে বন-জঙ্গল; নেই শুধু মরূ। পশ্চিমা হালফ্যাশনের পোষাক যেমন ইন্দোনেশিয়ানরা পরে তেমনই কিছু কিছু এলাকায় এখনও পর্যন্ত মানুষ নিজস ...ইন্দোনেশিয়া আমার এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ দেশ। ৩০ হাজারের উপর দ্বীপ নিয়ে দেশটি গঠিত। এতো বৈচিত্রময় দেশ আসলেই কল্পনা করা যায়না, যেমন সংস্কৃতিতে, তেমনই ভাষায়, পোষাকে, আচরণে, খাদ্যে; আর সবথেকে বেশি বৈচিত্র প্রকৃতিতে। এখকানে আছে সাগর, আছে পাহাড়, আছে বন-জঙ্গল; নেই শুধু মরূ। পশ্চিমা হালফ্যাশনের পোষাক যেমন ইন্দোনেশিয়ানরা পরে তেমনই কিছু কিছু এলাকায় এখনও পর্যন্ত মানুষ নিজস্ব লোকালয়ে মধ্যে বিবস্ত্র থাকতে অভ্যস্ত। লজ্জা নিবারণে তারা শুকনো বুনো ফল, পাতা, বাকল, ইত্যাদি দিয়ে মালা তৈরী করে পরে থাকে। আর ভোজনরসিকদের জন্যে ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে স্বর্গ। থাইল্যান্ডের খাদ্য বৈচিত্র বৈশ্বিক আর ইন্দোনেশিয়ারটা হচ্ছে একান্তই তার নিজস্ব।
সময়টা ২০০৫-এর কোনও এক মাসে তবে সেপ্টেম্বরের আগে। আমি তখন ইন্দোনেশিয়ায় থাকি, বেশ বড়সড় (স্ট্যাটাসে বড়সড়, কমপেনসেশনে নয়) একটা চাকরি করি। বাড়ির বাইরে এই আমার প্রথম থাকা। বিশাল বড় ফার্ণিশার্স ও এ্যামিনিটিজ সমৃদ্ধ বাসা, নিজের জন্য ও স্ত্রীর জন্য আলাদা গাড়ি, গৃহকর্মী, সিকিউরিটি, সব মিলিয়ে এলাহী অবস্থা। আমার বসবাস উত্তর সুমাত্রা প্রদেশের রাজধানী মেডান শহরে।
আমি প্রায়শঃই ছুটির দিনগুলোতে বেরিয়ে পড়তাম। অজস্র ঘোরার যায়গা আশেপাশে, দিনের মধ্যেই গিয়ে ফিরে আসা যায়। ইচ্ছে করলে রাতও কাটানো যায়। এমন একটি সুন্দর যায়গার নাম ‘ব্রাস্তাগি’, মেডান থেকে আড়াই ঘন্টার ড্রাইভ। ৪,৫৯৮ ফিট আলটিচিউডে অবস্থিত পাহাড় চূড়া। অসাধারণ সুন্দর একটি যায়গা, হাত দিয়ে মেঘ ছোঁয়া যায়, চোখ ঝলসে যায় পাহাড়ের গায়ে সালফারের আস্তরনে। এখানে ফাইভ ষ্টার হোটেল আছে, সুন্দর রিসর্টস আছে, আর বিশ্বমানের গলফ কোর্স আছে। বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানী আর এনজিওগুলো এখানে আসে তাদের এজিএম, রিট্রিট, ইত্যাদি করার জন্য। এখানে বিশাল একটি বাজারও আছে যেখানে অধিকাংশই স্যুভেনির আর আর্ট শপ, বেশ কিছু খাবার দোকান, কাপড়ের, এসব আছে। আর আছে ফুলের দোকান কিছু পেটস্ শপ যেখানে সুন্দর সুন্দর তুলতুলে কুকুরছানা, বেড়ালছানা, খরগোশের ছানা পাওয়া যায়। এই বাজারের এক মহিলা দোকানীর কাছ থেকে পান-শুপারী কিনেছিলাম এবং কথাপ্রসঙ্গে জেনেছিলাম ওই মহিলার দাদা বাংলাদেশী, কুমিল্লার লোক। যদিও ওই পান আর খাওয়া হয়নি, ওগুলো ছিলো ঝাল পান যা আমরা খেতে আমাদের অভ্যেস নেই।
এমনই এক ছুটির দিনে বেরিয়ে পড়লাম ব্রাস্তাগির উদ্দেশ্যে। পথে একটি পার্কে একটু দাড়িয়ে হাতির পিঠে চড়লাম। আমার স্ত্রী তো যথেষ্ঠ নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন হাতি যখন দুলতে দুলতে চলছিলো আর উচু যায়গা থেকে ঢালের দিকে নামছিলো। যদিও হাতির পিঠে ধরে থাকার জন্যে রেলিং দেয়া ছিলো। আমি এক হাতে রেলিং আর অন্য হাতে আমার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম। আমার অপর দু’জন মেয়ে সহকর্মী, ইরা লিওনোরা কারমিলা দেবী এবং আইনি মুতিয়ারা অন্য একটি হাতির পিঠে বসে তাদের আম্মু’র দুরাবস্থা দেখছিলো আর হেসে গড়িয়ে পড়ছিলো। প্রসঙ্গতঃ বলি, আমার স্ত্রী ছিলেন আমার সকল সহকর্মীর আম্মু।
এরপর ব্রাস্তাগিতে আসা। পাহাড়ের চুড়ায় কিছুক্ষণ দাড়ানো, কিছুক্ষণ হাটাহাটি। চোখ ধাঁধানো সালফরের ঝলকানি দেখা আর অবাক চোখে কিছু ট্র্যাকারের নিপুন দক্ষতায় পাহাড় বাওয়া দেখা। এরপর গেলাম বাজারে। ঘুরলাম, ভেলপুরী আর চা খেলাম, শেষে কিছু কেনার চিন্তা করলাম সঙ্গী ওই মেয়েদুটির জন্যে আর আমার গৃহকর্মীর শিশু ছেলেটির জন্যে। একটি দোকান থেকেই প্রায় সবকিছু কিনলাম। দোকানী মেয়েটি যথেষ্ঠ ভালো ইংরেজি বলে তবে দরকষাকষির সময় আমাদের সঙ্গী মেয়েদুটো ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় (বাহাসা ইন্দোনেশিয়া) কথা বলতে লাগলো। ওই ভাষায় আমার সামান্য দখলে বুঝলামে যে ওরা বলছে বিদেশি দেখে বেশি দাম হাঁকালেই হবেনা, ঠিক ঠিক মতো দাম না চাইলে আমরা অন্য দোকানে চলে যাবো। যাহোক, কেনাকাটার শেষ পর্যায়ে যখন দাম দিলাম, দোকানী মেয়েটি জানতে চাইলো আমরা কোন দেশের মানুষ। আমি তাকে বললাম যে আমরা বাংলাদেশী। মেয়েটি তখন আমাকে ও আমার স্ত্রীকে অবাক করে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমি তুমাকে বালোবাসি’। আমি ও স্ত্রী একবার পরষ্পরের দিকে তাকাই আর একবার মেয়েটির দিকে তাকাই। তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে সে এই কথার মানে কি জানে। সে বললো এই কথার মানে হচ্ছে থ্যাংক য়্যু ভেরি মাচ। তারপর বললো যে সে মালয়েশিয়ায় একটি কোম্পানীতে কিছুদিন কাজ করেছে যেখানে তার অনেক বাংলাদেশী সহকর্মী ছিলো। তাদের কাছ থেকে শিখেছে যে ‘আমি তুমাকে বালোবাসি’ কথাটি বাঙলা ভাষায় ‘থ্যাংক য়্যু ভেরি মাচ’ এর একটি অত্যন্ত বিনম্র প্রকাশ। কথাটি শেখার পর থেকে সে তার সমস্ত বাংলাদেশী সহকর্মীকে থ্যাংকস না দিয়ে এই কথাটিই বলতো। এরপর সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এনিথিং রং উইথ দিস, স্যর?’ আমি একটু দ্বিধা করছিলাম কিন্তু স্ত্রী বললেন যে সত্যি কথাটা বলে দাও। আমি তারপর ওকে বুঝালাম যে তোমার বাংলাদেশী কলিগরা আসলে খুব ভালোমানুষ এবং ‘ফুল অব সেন্স অব হিউমার’; এই কথাটির মানে হচ্ছে আ’ লভ য়্যু। ফর্সা মেয়েটি লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গেলো আর বারবার বলতে লাগলো, ‘এ্যাম রি’লি সরি স্যর; সায়া মিনতা মা’আফ আনডা (আই এ্যাপেলোজাইস)’। আমি তাকে বললাম মাফ তো আমারই চাওয়া উচিত তোমার কাছে যে আমার স্বদেশীদের জন্যে তুমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়লে। নানদ্যলেইস, টেইক ইট ইজি। এরপর ওকে বললাম যে কাউকে থ্যাংকস দিতে শুধু ধন্যবাদ কথাটি বললেই চলবে। সে কয়েকবার আউড়ে নিলো ‘দন্নবাদ’ বলে এবং কথাটি ওর নোট বুকে লিখে নিলো।
পরে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে মেডান এয়ারপোর্টে দেখা হয়ে গেলো আসগার ভাইয়ের সাথে (মীর আলি আসগার, এখন উনি বৃটিশ রেড ক্রসের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডেলিগেট)। আসগার ভাইকেও ব্রাস্তাগিতে নিয়ে গেলাম, কিছুক্ষণ ঘোরাফেরার পর সেই একই দোকানে। মেয়েটি আমাকে একবারেই চিনলো। এবার আর আমাদের সাথে কোনও ইন্দোনেশিয়ান নেই। কিন্তু আসগার ভাই দরকষাকষিতে দারূন পারঙ্গম। কিছু কিনলাম ওই মেয়ের দোকান থেকে। দাম মিটিয়ে দেবার পর আমাদের বিষ্মিত করে মেয়েটি বলে উঠলো ‘দন্নবাদ’।।।
মন্তব্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা এক জাপানী ছাত্রকে তার বাঙালি বন্ধুরা শিখিয়েছিলো হাউ আর ইউ এর বাংলা, চরম অশ্লীল একটা গালি। সেই ছেলে না বুঝে বিভিন্নজনকে গালি দিয়ে যাচ্ছিলো। ভয়ঙ্কর এক বিব্রতকর অভিজ্ঞতা!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গালি শেখানোর বিপদ অনেক।
কি মাঝি, ডরাইলা?
আসলেই খুব বৈচিত্রপূর্ণ দেশ ইন্দোনেশিয়া। প্রায় ২০ বছর আগে গিয়েছিলাম জাকার্তা আর বান্দুংয়ে। তখন খুব কম বাংলাদেশী সেখানে যেয়ে পৌঁছেয়েছে। এখন সেই সংখ্যা কত হবে?
ধর্মীয় সৌহাদ্যপূর্ণ দেশে বর্তমানে কি হচ্ছে - আপনার ধারনা জানাবেন কি?
আপনার আসল নামটা জানা হলো না - জানাবেন যদি অন্য কোন অসুবিধা না থাকে।
ভাল লাগলো লেখাটা পড়ে।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
ধন্যবাদ সাইফ শহীদ ভাই। আমি যতদিন ছিলাম ওখানে, কোনও বাসিন্দা বাংলাদেশীর দেখা পাইনি। এবং খুবই সামান্যসংখ্যক বাংলাদেশী দেখেছি যারা বিভিন্ন কাজের জন্যে ওখানে থাকেন। দুঃখজনক বিষয় যে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইন্দোনেশিয়ানদের ধারনা খুবই স্বল্প, অনেকেতো বাংলাদেশ নামটা জানে তবে ভারতের একটা অংশ হিসেবে। আবার একজন প্রবীন ব্যবসায়ী আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে শেখ মুজিবর রহমান কেমন আছেন, ইত্যাদি। যাইহোক, হাতে গোনা কিছু বাংলাদেশীর সাথে আমার দেখা হয়েছে ওখানে। তবে এম্ব্যাসী থেকে বলেছিলো যে জাকার্তায় অনেক বাংলাদেশী আছেন। প্রতিবার যখনই জাকার্তায় বাংলাদেশ এম্ব্যাসীতে যেতাম, দেখতাম দু'চারজন বাংলাদেশী সেখানে পারমিটসংক্রান্ত বিষয়ে অপেক্ষমান যারা মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে ইন্দোনেশিয়ান নারীকে বিয়ে করেছেন।
আমি ইন্দোনেশিয়া থেকে আসার পরও বন্ধুদের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে, খবর রাখি। আমি কখোনোই ওখানে কোন সাম্প্রদায়িক সমস্যা দেখিনি। আমি যে শহরে থেকেছি সেখানে মুসলিম, হিন্দু, ক্রিশ্চিয়ান, বুদ্ধিষ্ট, সবাই শান্তিতে বসবাস করে। তবে বহুকাল আগে নাকি একবার সারাদেশে একযোগে চায়নিজদের উপর হামলা করা হয়েছিলো এবং কয়েক লাখ চাইনিজকে হত্যা করা হয়েছিলো। সেইদিনটাকে চায়নিজরা (ধর্ম নির্বিশেষে) কালো দিবস পালন করে। সমস্যা যেটা দেখেছি, ইনডিয়ান কম্যুনিটি নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই, ইনডিয়ানরা সরকারী চাকরীও পাচ্ছেন। কিন্তু একটা বিশাল জনগোষ্ঠী চাইনিজ বিরোধী। চাইনিজরা এখনও সরকারী চাকরী পান না।
আমি আমার নামটা আপনাকে পরে একটা মেইলে জানিয়ে দেবো।
ভ্রমনের অভিজ্ঞতা পড়ে মজা পেলাম। আরও লিখুন।
- আমার ভাই বিয়ের পর বালি গেছিলো সস্ত্রীক। তো ওখান থেকে ফিরে এসে ভাবী ওখানকার অভিজ্ঞতা বলছিলো, "ওরা তো বেশ ভালো হিন্দি জানে। আমাদেরকে দেখলেই কুচ কুচ হোতা হ্যায় গান ধরে।" ভাইয়া পাশ থেকে বলে, "আমাদেরকে মানে কী? বলো যে তোমারে দেখে। তোমারে নিয়া শান্তিমতো ঘুরতেও পাল্লাম না এই কুচ কুচ হোতা হ্যায় এর জ্বালায়?"
বিদেশীদের একটা ভালো কথার প্রেক্ষিতে চরম একটা গালি শেখানোর চর্চা অনেক জায়গাতেই আছে দেখছি। বিদেশীদের গালি আমিও শেখাই, কিন্তু সেটা 'গালি' হিসেবেই শেখাই। 'থ্যাংক য়্যু' কিংবা 'হ্যালো' এর বাংলা হিসেবে না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুসর গোধুলি ঠিক বলেছেন। ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্দোনেশিয়ায় খুবই জনপ্রিয়। জাকার্তায় একটা ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে উঠেছে ইন্ডিয়ার সিনেমার ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় ডাবিং করার জন্যে। টিভিতেও নিয়মিত হিন্দি সিনেমা (ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় ডাবকৃত) দেখানো হয়। ইন্দোনেশিয়ার ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি খুবই ছোট এবং দুর্বল। ডেনপাসার (বালি) এলাকার মানুষ কিছু কিছু হিন্দি বলে তবে অন্যান্য এলাকার মানুষ হিন্দি সিনেমা-গান পছন্দ করলেও হিন্দি ভাষা তেমন বোঝেননা। বালিতে এটার কারণ হচ্ছে যে বালির সংস্কৃতি অনেকটা হিন্দু পৌরানিক ইতিহাস প্রভাবিত। বালিতে সংষ্কৃত ভাষার ব্যাপক চর্চা আছে।
আচেহ্ বা এরকম দু'একটা জায়গা ছাড়া সারা ইন্দোনেশিয়ায় ভারতীয়রা ঘণীভূতভাবে বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। জাকার্তা ছাড়া প্রায় প্রতিটা প্রাদেশিক রাজধানীতে ইন্ডিয়ান অধ্যুষিত এলাকা আছে যার নাম "কামপুং ক্লিং", কামপুং মানে হচ্ছে গ্রাম আর ক্লিং মানে কালো। তো মানে দাঁড়াচ্ছে কালোদের গ্রাম। ইন্দোনেশিয়ায় অভিবাসী ইন্ডিয়ানদের শতকরা ৯০ ভাগ বা তারও বেশি এসেছেন দক্ষিণ ভারত থেকে। বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশেরই (এমনকি যাদের বয়স ৩৫-৪০) জন্ম ইন্দোনেশিয়ায় তাই তারা ইংরেজী এবং ইন্দোনেশিয়ান ভাষার চর্চাটাই করে থাকে। মহিলারা অকেশনালি শাড়ি পরে থাকেন।
আর গালির কথা যদি বলি, আমি যে সেক্টরে কাজ করি, আমাদের অনেক বিদেশী সহকর্মী বাংলাদেশে আসেন। প্রথমেই আমরা তাদের ভাষা শিখতে পাঠাই। শর্ট কোর্স, কিন্তু সিলেবাসে গালি মাষ্ট।
রাতঃস্মরণীয়
বিদেশিদের গালি শেখানো খুব খারাপ। তবে অনেক সময় মজা নেয়া এড়ানো যায় না। আমি একবার এক ভিনদেশি মাইয়ারে আমার নাম বললাম 'স্বামী', তারপর তাকে ভালো ভালো করে নামের উচ্চারণ শিখিয়ে দিলাম, যাতে স্ব কে শ এর মতো উচ্চারণ করে, ছ এর মত না। বাঙালি ফ্রেন্ডদের সামনে সে আমারে ডাকতেছে 'স্বামী' বইলা, আমিও সাড়া দিচ্ছি। হা হা হা। পরে অবশ্য তারে অর্থ বুঝায় দেয়া হয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
গণ্ডারের মতো একটা হাসি দিলাম, কাতুকুতু খাওয়ার প্রায় ৯ মাস পর।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমার মনে হয় এর পেছনে কিছুটা নিরাপত্তার অভাব কাজ করে। ইন্দোনেশিয়ার বেশীর ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার চাইনিজ, কোরিয়ান ও জাপানী। এরা কর্মী হিসেবে ভাল কিন্তু স্বভাবগত কারণে (একটু হ্যাপী গো লাকি, দায়িত্ববোধের অভাব ইত্যাদি) ব্যবস্থাপনায় পাকা নয়। সেই কারনেই চীনাদের দাপটকে খর্ব করতে সুহার্তোর সময় চীনাদের প্রতি অনেক বিদ্বেষ হয়েছে - ওদের নাম পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় রুপান্তরিত করা হয়েছে। তবে সুহার্তোর পরে এখন পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক - সরকারী চাকুরির ব্যাপার জানি না - তবে গত বছর চাইনিজ নিউ ইয়ার খুব শান শওকতের সাথে পালন করা হল।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
রেজওয়ান ভাই যথার্থ বলেছেন একজায়গায় শুধু কিঞ্চিৎ ভিন্ন অভিজ্ঞতা। কোরিয়ানরা এখানে আসছে গত দুই দশক ধরে এবং জাপানীরা ১ দশকমতো। আপনি হয়তো অবগত আছেন যে ইন্দোনেশিয়ানরা পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ঘৃনা করে জাপানকে ও জাপানীদেরকে। নেদারল্যান্ড উপনিবেশ গুটিয়ে চলে যাবার পর স্বল্পকালীন শাসনকালে জাপান যে নির্মম অত্যাচার করেছে ইন্দোনেশিয়ার প্রতি তা অবর্ণনীয়। তারপরও এখন ব্যবসার যুগ। জাপানীদেরকে স্বাগত জানাতে হবে নিজেদের প্রয়োজনেই। টয়োটা কোম্পানীয় ফ্রাঞ্চাইজে ইন্দোনেশিয়া যে টয়োটা কিজাং (কিজাং ক্রিষ্টা, কিজাং ইনোভা, ইত্যাদি) সিরিজ বানায় তার মানও খুবই ভালো। আমি একটা ইন্দোনেশিয়ান কিজাং আর আমার স্ত্রী একটা জাপানী ইসুজু জীপ ব্যবহার করতাম। কিজাং ওয়াজ ফার বেটার দ্যান ইসুজু।
আমার পেশাগত কারনে আমাকে খুব বড় মাপের ব্যবসায়ীদের সাথে ডিল করতে হতো। এদের অধিকাংশই চায়নিজ। গাধার মতো খাটে, আর সৎ। ইন্দোনেশিয়ার মতো কোরাপ্ট দেশে এই চায়নিজরা যথেষ্ঠ সৎ। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি এরা যথেষ্ঠ দায়িত্বসচেতন, অন্ততঃ অধিকাংশ ইন্দোনেশিয়ান থেকে। অধিকাংশ ইন্দোনেশিয়ান সবকিছু পারসোনালাইজ করে ফেলে। ফর এক্সাম্পল, কাউকে পেশাগত কারনে একটু কঠোর কথা বললে সে আপনার সাথে কথা বন্ধ করে দেবে অথবা মুখখানা হাড়ি করে রাখবে। বখশিশ নেওয়া, আপ্যায়ন নেওয়া, এগুলো ওদের কাছে বিশেষ দোষনীয় না। আর যতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান দেখেছি, তার প্রায় সবগুলোতেই ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটিতে আছে চায়নিজ ষ্টাফ।
সুহার্তোর আমলে ওদের নিশ্চিন্হ করে দেবার পায়তারা করেছিলো। আমার চায়নিজ বন্ধুদের সবারই দাদা-দাদি, বাবা-মা, কাকা-মামা, সবারই নাম পরিবর্তন করতে হয়েছিলো ওই সময়ে। দু'টো নাম মনে আছে, আমার বন্ধু জেরীর বাবা ও মায়ের নাম পরিবর্তন করে যাখা হয়েছিলো যথাক্রমে রুস্তম ও কিলিয়ানি (কল্যাণী)। আমার মনে হয়েছে একটু মানসিক দুরত্ব ইন্দো ও চায়নিজদের মধ্যে এখনও রয়ে গেছে।
রাতঃস্মরণীয়
নতুন মন্তব্য করুন