ছোটবেলা থেকে ভূগোলের বই পড়ে জেনে আসছি পামির মালভূমির নাম যাকে কিনা বলা হয় পৃথিবীর ছাদ। খুব শখ ওইসব যায়গায় একটু যাওয়া, ঘুরে দেখা। যখন শখ খুবই তীব্র ছিলো তখন সংগতি ছিলো না। আর যখন কিছুটা সংগতি এসেছে তখন সময়ের নিদারুন অভাব। তাই বলে শখ কিন্তু একেবারে চলে যায়নি। হঠাৎ করেই আংশিক পুরন হলো কিছু শখ যা আগে থেকেই ছিলো। ২০০৭ সালে আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম একটা স্বল্পকালীন কনসালট্যান্টের কাজ নিয়ে। কাবুলে কয়েকটা দিন কাটিয়ে গেলাম বাদাখ্শান প্রদেশের রাজধানী ফাইজাবাদে। তারপর গেলাম এক্কেবারে আফগানিস্তানের উত্তর প্রান্তে, ইশ্কাশিম শহরে। এটা এমনই একটা যায়গা যেখানে আফগানিস্তানেরও খুব কম মানুষ গিয়েছেন।
বাদাখ্শান প্রদেশের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এই প্রদেশে কখনও তালিবান ঢুকতে পারেনি। যত মাতব্বরী-খবরদারী সব এই প্রদেশের বাইরে। রাশান ও তালিবান বিরোধী যুদ্ধে নর্দার্ণ এ্যালায়েন্স খুবই শক্ত একটা বাহিনি ও ঘাঁটি ছিলো যার নেতৃত্বে ছিলেন আফগানিস্তানের জাতীয় বীর আহ্মদ শাহ্ মাসুদ। আরব সাংবাদিকের ছদ্মবেশে আসা একদল আল-কায়েদা আত্মঘাতি ঘাতকের হাতে তিনি নিহত হন। তাকে আফগানিস্তানের অন্য দুই জাতীয় বীর গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার এবং রশিদ দোস্তামের থেকে সব সময়ই একটু উঁচুতে স্থান দেওয়া হয়ে থাকে। গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের কোন খবর কেউই জানেনা আর রশিদ দোস্তাম বৃদ্ধ ও অসুস্থ্য। কাবুলের একটা বিশাল দোতলা বাড়িতে তিনি থাকেন সেনাসদস্যদের কড়া পাহারায়, একরকম বন্দীর মতোই।
আমি যাদের হয়ে কাজ করতে গিয়েছিলাম সেই সংস্থার একটা ছোট্ট এয়ারলাইন্স আছে তবে সংস্থার কর্মীদেরও বুকিং দিয়ে, টিকেট কেটে যেতে হয়। খুব ভোরে যেতে হলো। সঙ্গী আবদুল মজীদ, ডেপুটি হেড অব এ্যাডমিনিস্ট্রেশন। পথে কুন্দুজ আর মাজার-ই-শরীফে দাঁড়ালাম। মাজার-ই-শরীফের এয়ারপোর্টটা খুবই বিপদজনক। চারিদিকে পর্বতে ঘেরা, তার মাঝে এয়ারপোর্ট। সরাসরি সোজা ওড়া যায় না। ঘুরতে ঘুরতে নামতে হয় এবং উঠতে হয়। অনভিজ্ঞ এবং নার্ভাস ফ্লায়ার্সদের জন্য একটু ভীতিকর অভিজ্ঞতা হবে। আর ফাইজাবাদের এয়ারপোর্টটার রানওয়ে টারমাক নয়। পুরো রানওয়েটাই ষ্টীলের পাত দিয়ে তৈরী। বিশাল বিশাল ষ্টীলের পাত বিছানো (অনেকটা বেইলি ব্রিজের পাতের মতোই তবে আকারে অনেক বড়) আর পাতের উপরে ষ্টীলের নেট বিছানো এবং রানওয়ের পাশে নেটগুলো ক্ল্যাম্প দিয়ে শক্ত করে আটকে রাখা। ছোট্ট সেসনা বিমানটা সেখানে নামলো। আমরা গাড়িতে করে চলে গেলাম অফিসের গেষ্ট হাউসে। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, কুন্দুজ এয়ারপোর্টে আমাদের বেশ দেরী হলো। একজন আমেরিকান সৈন্য আমাদের একই ফ্লাইটের যাত্রী একং মেনিফেষ্টে তার লাগেজ হিসেবে লেখা ছিলো একটা কার্টন। সৈন্য রাজী হচ্ছিলো না তার কার্টন খুলে ভিতরের মালামাল দেখাতে। পাইলটও নাছোড়বান্দা। কন্টেন্ট না দেখানো পর্যন্ত তিনি কার্টন লোড করবেন না।। যাহোক অনেক্ষন পরে বোধহয় সমঝোতা হলো। এম-৩০ এ্যাসল্ট রাইফেল সজ্জিত একদল আমেরিকান সৈন্য এসেছে সহকর্মীকে সী-অফ করতে। তারা দাঁড়িয়ে ধুমপান করতে লাগলো আর এই দেখে আমারও একটু ইচ্ছে হলো। প্রথমতঃ এয়ারপোর্টের এক্কেবারে ভিতরে দ্বিতীয়তঃ রোজার দিন। আমার পকেটে লাইটার থাকা সত্বেও একটু নাটক করলাম। সোজা হেঁটে চলে গেলাম সৈন্যদের জটলার কাছে। তারপর এক তরুন সৈন্যের কাছে মার্জিতভাবে তার লাইটারটা ধার চাইলাম। সৈন্য সানন্দে পকেট থেকে জিপ্পো বের করে আমার সিগারেট জ্বালিয়ে দিলো। তারপর সাধারণ কথাবার্তা, কোথায় যাচ্ছি, কি করি, কোন দেশের নাগরিক ইত্যাদি। আমি বাংলাদেশী শুনে বললো যে বেশ কিছু আমেরিকান সৈন্য আছে আফগানিস্তানে যারা অরিজিনালি বাংলাদেশী।
ফাইজাবাদে ২ দিন থাকার পরে যাত্রা ইশ্কাশিমের উদ্দেশ্যে। ভোরে রওনা হয়ে একটানা গাড়ি চালিয়ে গেলে সন্ধ্যা হয়ে যাবে পৌঁছতে। আমরা রওনা হয়ে পথে বাহ্রাক নামের একটা শহরে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ালাম । ওখানে আমাদের সংস্থার একটা অফিস আছে এবং ওদের সাথে আমার কিছু কাজও আছে। তারপর আবার যাত্রা শুরু ইশ্কাশিমের উদ্দেশ্যে। যেতে পথে আমার জীবনের অন্যতম একটি অশ্লীল দৃশ্য দেখলাম। পথে ন্যাটো বাহিনীর একটা চেকপয়েন্ট। সমস্ত গাড়ি চেক করা হচ্ছে, সন্দেহ হলে দেহতল্লাশীও করা হচ্ছে। বেশ কিছু স্বেতাঙ্গ সৈন্য, অল্প ৩-৪ জন আফগান সৈন্য আর দুটো টেকনিক্যাল ভেহিকলস্। ওরা আমাদের গাড়িকে সিগনাল দিলে আমরা দাঁড়ালাম। তারপর একজন আমাদের বিনয়ের সাথে নেমে দাঁড়াতে বললো আর এ ও বললো যে ওরা গাড়িটা চেক করবে। আমি গাড়ি থেকে নেমে যে দৃশ্য দেখলাম তাতে বিষ্মিত থেকেও অনেক বেশি। একজন নারী সৈনিক একটি গাছের আড়ালে আধা দাড়ানো আধা বসা অবস্থায় ‘পি’ করছে। আসলে তার ওই গাছের আড়ালে যাবার প্রয়োজন ছিলো না কারণ গাছটি চিকন এবং তার যা দেখানোর মতো উন্মুক্ত ছিলো তার সবই দেখা যাচ্ছিলো। প্রথমতঃ খারাপ লাগলো, ওই মহিলা কি কখনও তার নিজের দেশে এইভাবে ‘পি’ করেছেন। আবার মনে হলো অত্যধিক মানসিক চাপের ফলে হয়তো এমন আচরন করছেন সে। যাইহোক দৃশ্যটি অত্যন্ত জঘন্য, কোনও সন্দেহ নেই। এটা একজন পুরুষ হলেও জঘন্য হতো। অনেকেই জানেন, ইরাক ও আফগানিস্তানে কর্মরত সৈনিকরা অনেক সময় অত্যধিক মানসিক চাপের ফলো প্রায়শইঃ অদ্ভুত সব আচরণ করে থাকেন। আমি একটা সিগারেট ধরালাম এবং সৈনিককে একটি অফার করলে তিনি নিলেন। এরমধ্যে চেকিংএর কাজ সারা হলো, নারী সৈনিক তার প্রাকৃতিক কাজ থেকে ফিরে এলে আমরা হাই-হ্যালো করলাম, সিগারেট টানা শেষ হলো আর আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। বন্ধু আবদুল মজীদ মর্মাহত ওই দৃশ্য দেখে এবং বুঝলাম ড্রাইভারও ক্ষুব্ধ।
যেতে পথে আমাদের অনেকগুলো নদী পেরোতে হলো। কোনও নদীতে ব্রীজ আছে আবার অধিকাংশেই নেই, সরাসরি নদীর উপর থেকেই চালিয়ে যেতে হয়। ৩-৪ ফিট পানি থাকে। সে এক মজার অভিজ্ঞতা। সন্ধ্যের ঠিক আগে আগে ইশ্কাশিম পৌঁছলাম। সারাদিন পেটে পানি ছাড়া এক কাপ চা-ও পড়েনি। রমজান মাসের কারণে একটাও খাবার দোকান খোলা তো পাইনি, কোনও গ্রোসারীও পথে পড়েনি যেখান থেকে বিস্কুট কিনবো। যাহোক, ইফতারে বসে গেলাম; কিছুক্ষণ পর রাতের খাবার খেলাম বড়ই তৃপ্তির সাথে। আবদুল মজীদ গেষ্টহাউজের কুক কে আমার দিনের বেলার খাবারের জন্য কি করা যায় সেই প্ল্যান করতে বললেন। কুক বললেন যে, তিনি সেহরী রান্নার সময় বেশি করে কিছু রান্না কর ফ্রীজে তুলে রাখবেন এবং পরে তা গরম করে দেবেন। আমি তাতেই খুশি। রাতের খাবারের পর টিভি রুমে কিছুক্ষণ বসতে চেয়েছিলাম কিন্তু উঠে যেতে বাধ্য হলাম আমার কিছু তাজিক (তাজিকিস্থানের মানুষ) সহকর্মীর কারণে। আবদুল মজীদ অত্যন্ত ঠান্ডা মানুষ। তিনি শান্ত ভাষায় তাদেরকে বললেন এরকম আর দেখলে ডিসিপ্লিনারি এ্যাকশন নেওয়া হবে। আসলে ওরা কখনও কাবুল অফিসের কোন এ্যাডমিনের বসকে দেখেনি তাই মজীদকেও পাত্তা দিচ্ছিলো না। মূল ঘটনা, ওদের অধিকাংশ টিভিতে সফট পর্নগ্রাফিক ফিল্ম দেখবে, আর কেউ কেউ খবর দেখবে। তাই নিয়ে গোলমাল। মজীদ ঠান্ডা ভাষায় বলে দিলেন যে যদি আর কখনও এরকম ঘটে তাবে চাকরি ডিসমিস করা হবে উইদাউট ফারদার কনসিডারেশন। আমার মিশন ছিলো ওই সংস্থার এ্যাডমিন ও লজিষ্টিকস্ ব্যবস্থা রিফর্ম করা যার মধ্যে ক্ষুদ্র একটা অংশ ছিলো গেষ্টহাউজ ম্যানেজমেন্ট। স্বাভাবিকভাবেই, মজীদ খুব বিব্রত বোধ করলেন আমার উপস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটার জন্য। আমি মজীদকে বললাম, জাষ্ট টেইক ইট ইজ্য মা ফ্রেন্ড; ইট হ্যাপেনস্।
ওই তাজিকিস্থানের লোকগুলোর কারোরই বয়স ৫০ এর কম নয়। ওরা এখানে মাঠকর্মী ধরণের কাজ করেন আর গেষ্টহাউজের এক একটা রুমে ৮-১০ জন করে গাদাগাদি করে থাকেন। তাজিকিস্তানের জব মার্কেট ভালো না তাই বর্ডার পার হয়ে এপার এসেছেন কাজের জন্য। এরা এক্সপ্যাট পে-রোলে কাজ করে না। আফগান কর্মীদের মতো একই বেতনে কাজ করে এবং মাস শেষে মাষ্টারোলের মাধ্যমে বেতন ক্যাশ পে করে দেওয়া হয়। এদের সামাজিকতাবোধ খুবই কম; এরা উদ্ধত ও বেয়াদব ধরণের। আবার এদেরকে স্থানীয় কেউ গালি দিলেও এরা কিছু মনে করেন না। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সন্ধ্যায় এরা গেষ্টহাউজে বসেই প্রকাশ্যে ভোদকা পান করেন। আমাদের সংস্থার কৌশলগত কারনে এদের রাখতে হয় নাহলে তাজিকিস্তান অপারেশনে আফগান ও পাকিস্তানীদের পাঠানো সমস্যা হয়।
ইশ্কাশিম আমার দেখা সুন্দর যায়গাগুলোর মধ্যে একটা। পাহাড়, নদী, ঝরণা, গাছ-গাছালি, সব মিলিয়ে মনমুগ্ধকর। যদিও বাজারটা খুবই অপরিষ্কার, দুম্বা ও গাধাগুলো যেখানে সেখানে হাগু করে বেড়াচ্ছে এবং মালিকরা তা ঠিকমত পরিষ্কার করছেন না। এখানে সেখানে পড়ে আছে রাশান আমলে ধ্বংস হওয়া ট্যাংক, বুলডোজারগুলো।
এখানে কর্মরত প্রায় সব সংস্থার নিজস্ব জেনারেটর আছে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য। আর বাজারে বিশাল জেনারেটর আছে যা থেকে তারের মাধ্যমে দোকানগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া হয়। এটাই আফগানিস্থান-তাজিকিস্তানের বর্ডার। মাঝে চিকন একটা নদী। মজার বিষয় হচ্ছে নদীর দু পারের গ্রামগুলোর নাম একই। যেমন, ঠিক ইশ্কাশিমের ওপারে যে শহর, তারও নাম ইশ্কাশিম, ওয়াখান গ্রামের ঠিক ওপারের গ্রামটার নামও ওয়াখান, এরকমই সব। কারণ আগে তো সব একই গ্রাম ছিলো, একই দেশ ছিলো, ইউএসএসআর বা ইউনাইটেড সোভিয়েট সোসালিষ্ট রিপাবলিক।
আমাদের গেষ্টহাউজটা আফগানিস্তান সরকারের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া। এটা ছিলো আফগানিস্তানের সাবেক রাজা জহীর শাহ্ এর সাফারি লজ। বছরে দুইবার কিং সপরিবারে, সদলবলে এখানে আসতেন শিকারের জন্য। সেই কাবুল থেকে রোলস্ রয়েস চালিয়ে। খুবই সুন্দর এবং মজবুত কাঠের তৈরী বাংলো প্যাটার্ণের বিশাল বাড়ি। বাড়িটা বাজারের শেষ প্রান্তে যেখান থেকে চিকন রাস্তা নেমে গেছে নিচের দিকে। তারপর সেই রাস্তা আবার ছড়িয়ে গেছে বিভিন্ন দিকে, যার একটা গেছে আমাদের অফিস, আমাদের অন্য একটা গেষ্টহাউজ, আর লোয়ার পামিরের দিকে।
যেতে হবে লোয়ার ওয়াখানে। লোয়ার ওয়াখান হচ্ছে ইশ্কাশিম থেকে পামিরের চুড়ায় উঠতে যতোটা পথ তার অর্ধেক থেকে কিছু কম। লোয়ার ওয়াখান যেতে আমাদের প্রায় ৪ ঘন্টা গাড়ি চালাতে হবে। ৪৫০০ সিসি ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি। পাড়ি দিতে হবে নদী, পাহাড় আর বন্ধুর পথ। যাত্রা শুরু করলাম ভোর সাড়ে ৬ টায়। আমি আর আবদুল মজীদ; অন্য দুই সাথী দুই আজিজ। মেহবুব আজিজ, আমাদের ট্যুরিজম প্রজেক্ট ম্যানেজার আর আবদুল আজিজ এই প্রজেক্টের সাবেক ম্যানেজার; বর্তমানে বেড়াচ্ছেন আর কি যেন ব্যাক্তিগত কাজ করছেন। দুজনেই পাকিস্তানী। মেহবুব আজিজ লন্ডনে পড়াশুনা করেছেন আর আবদুল আজিজ টরন্টোতে। চোস্ত ইংরেজি বলেন দুজনেই আর দারি ভাষায়ও বেশ দখল ওদের। আফগানিস্তানের জাতীয় ভাষা দুটি। দারি বিশেষ করে মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের প্রধান ভাষা। পশতুন ভাষা বেশি বলেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। পাকিস্তান সংলগ্ন এলাকায় তো বটেই। প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই কিন্তু দারি ভাষা ভালো বলতে পারেন না। তিনি দারি থেকে ইংরেজি অনেক ভালো বলেন। তার মাতৃভাষা পশতুন।
পমির সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। পৃথিবীর সবথেকে বড় মালভূমি। বেশ কয়েকটি পর্বতমালার মিলনস্থল। পামিরের বিস্তার মূলতঃ ৫ টি দেশে; আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং চীন (অতি সামান্য তিব্বতেও পড়েছে)। পামির মূলতঃ একটা জংশনের মতো যেখানে এসে মিলেছে বেশ কিছু পর্বতমালা বা এদের বিস্তৃত শাখাগুলো। এগুলো হচ্ছে হিমালয়, তিয়ান শান, কারাকোরাম, কুনলুন এবং হিন্দুকুশ। পামিরের অধিকাংশ পড়েছে তাজিকিস্তানের গোরনো-বাদাখ্শান ও আফগানিস্তানের বাদাখ্শান প্রদেশে। এর উত্তরভাগের তিয়ান শান পর্বতমালা পড়েছে কিরগিজস্তানের আলাই ভ্যালীতে। দক্ষিণভাগটায় হিন্দুকুশের অংশ। পড়েছে ওয়াখান করিডোরে যা অধিকাংশই আফগানিস্তানের মধ্যে তবে সামান্য অংশ পাকিস্তানের মধ্যেও পড়েছে। পুব দিকের প্রায়টাই কুনলুন পর্বতমালা যা পড়েছে চীনের মধ্যে। পামিরের পর্বতশৃঙ্গগুলো কমবেশি ২৪,০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। পামির এলাকায় মানুষ বসবাস করে যদিও বছরের একটা বিরাট অংশ পামির বরফে ঢাকা থাকে। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা গোচারন। এই প্রাণীসম্পদ যে যায়গা থেকে যে বাজার কাছে সেই এলাকায় বিক্রি করা হয়। যেমন, আফগান বাদাখ্শান এলাকা থেকে পাহাড়ি ভ্যালির মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানে এই দুম্বাগুলোকে হাটিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় দূরত্বভেদে ৫ খেকে ১৫ দিন ধরে। এই এলাকায় ধনী হিসেব হয় কার কত বেশি দূম্বা আছে তা দিয়ে। এছাড়াও কিছু কয়লাও উত্তোলন হয়। আমার সংস্থা পামির এলাকায় অত্যন্ত পুরানো এবং এদের ট্যুরিজম, এডুকেশন, হেলথ এবং মাইক্রোফাইনান্স কর্মসূচী চলছে অনেক বছর ধরে।
র্ওনা হতেই চোখে পড়লো অত্যন্ত সুদৃশ্য একটা একতলা দালান। ভাবা যায়না এমন এলাকায় এতো সুন্দর দালান। মেহবুব বললেন যে ওটা ‘জেকে’। আমি ঠিক ধরতে পারলাম না। তারপর ভাঙিয়ে বললেন, ওটা ‘জামাত খানা’। ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের প্রার্থনার ঘর।
চলছি তো চলছি। রোজার মাস, সিগারেট টানতে পারছি না সংকোচে। হঠাৎ করেই মেহবুব ড্রাইভারকে দাঁড়াতে বললেন। ভাবলাম ‘পি’ করবে। আমিও নেমে দাঁড়ালাম, ঝর্ণার পানিতে মুখ-হাত ধুলাম। এরপর দেথি উভয় আজিজ মহা উৎসাহে বিড়ি টানছে। আমিও সামিল হলাম। পথিমধ্যে দেখলাম বেশ কিছু কালভার্ট তৈরী হচ্ছে। আমাদের ড্রাইভার এরকম একটা দলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন্ এবং তাদের ট্রাকের এয়ার প্রেশার মেশিন দিয়ে তার গাড়ির এয়ার ফিল্টারটা পরিষ্কার করে নিলেন। এরপরই দেখা মিললো ডাবল হাম্প ক্যামেলের। দুই কুঁজ বিশিষ্ঠ উট। পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র পামির এলাকাতেই দেখা যায়। কি সুন্দর আর মায়াবী দেখতে। লম্বা লম্বা লোমে শরীর ভরে আছে। চোখ দুটো যেন আমাদের চিত্রল হরিনের মতো, কথা বলে। ড্রাইভার গাড়িটা একটু থামালেন। ভালো করে দেখলাম। আর আফসোস করতে লাগলাম সাথে ক্যামেরা নেই বলে। মোবাইল ক্যামেরায় ওদের ধরা গেলোনা ওরা সূর্যের দিকে ছিলো বলে; ছবি সাদা হয়ে গেলো।
ডাবল হাম্প ক্যামেলের এই ছবিটার সূত্র
চলতে চলতে মেহবুব আজিজ তার জীবনের কথা বলছিলেন; বলছিলেন বাংলাদেশীদের কাছে তার অনেক ঋণ। যখন তিনি লন্ডনে কোনও এক পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আশ্রয়হীন হয়েছিলেন। একটানা ১৪ দিন মসজিদে ঘুমিয়ে আর কোনও দিন একবেলা খেয়ে আর কোনও দিন মোটেই না খেয়ে অবশেষে এক বাসার দরজার সামনে হংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে ছিলেন। একজন পাকিস্তানীও তাকে সেই সময়ে তাকিয়েও দেখেনি। পরে সেই বাসার মানুষটা তাকে তুলে নিয়ে থাকতে দিয়েছিলেন, খেতে দিয়েছিলেন; এবং দুটো বছর তাকে কোথাও আর যেতে দেননি। সেই মানুষটা, সাইফুল সাহেব, একজন বাংলাদেশী। বলতে বলতে মেহবুবের চোখ সজল হয়ে উঠেছিলো। আর অতি অশ্লীল ভাষায় পাকিস্তানীদের উদ্দেশে দুটো গালি দিয়েছিলেন। পাকিস্তানীরা গালিতে খুব পারদর্শী এবং দুই আজিজ তার ব্যাতিক্রম নন। তারা যখন নিজেদের মাধে উর্দুতে কথা বলছিলেন, তখন গালির ফোয়ারা ছুটছিলো।
আমরা কিন্তু সেই চিকন নদীর পাড় ধরেই চলেছি। ওপারে তাজিকিস্তান আর এপারে আফগানিস্তান। এসময়েই দেখলাম সেই ঐতিহাসিক ষ্টোন যেটা দিয়ে দুই দেশের সীমানা আলাদা করা হয়েছিলো। যদিও ষ্টোনটা ২০০ মিটারের মতো আফগানিস্তানের মধ্যে পড়েছে। মেহবুব বললেন আগে নদী আরও ভিতরের দিকে ছিলো। এটা সেই সময়ে নদীর পাড়ে স্থাপন করা পাথর। তারপর পেলাম একটা এয়ারষ্ট্রীপ। বেশ ছোট, সেসনা, ক্যারাভান, এগুলোর জন্য উপযুক্ত। ওইরকম পাহাড়ি এলাকায় এতখানি সমতলভূমি দেখা আসলেই বিরল।
এইরকম এলাকায় গাড়ি চালাতে হয় বালুঝড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। বালুঝড় যত দ্রুত আসবে তার থেকে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে হয়। একবার যদি ঝড়ের সামনের অংশ গাড়ির সামনের দিকে চলে যায় তবে কাজ সারা। অপেক্ষা করতে হবে পুরো ঝড়টা চলে যাওয়া পর্যন্ত কারণ সামনে কিছুই দেখা যায়না এবং গাড়িও চালানো যায় না।
বেলা ১১ টার দিকে লোয়ার পামির বা লোয়ার ওয়াখান পৌছলাম। আমাদের আসার খবর আগেই দেওয়া ছিলো। মেহবুব স্যাটেলাইট ফোনে খবর দিয়ে রেখেছিলেন আমাদের জন্যে চা রেডি করে রাখতে। চা সেরে আমাদের ষ্টাফ খুদা ইয়ারের সাথে আমার সংক্ষিপ্ত আলাপ সারলাম। দেখলাম আমাদের সংস্থার অফিসগুলো, স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কর্মীদের সাথে কিছু আলাপচারিতা হলো।
ওখানে পরিচয় হলো জুম্মা খাঁ’র সাথে। জুম্মা খাঁ স্থানীয় মানুষ তবে তার পুরো পরিবার স্থায়ীভাবে পাকিস্তানের করাচিতে থাকেন। তার বাবা মাইগ্রেট করেছিলেন পাকিস্তানে। জুম্মা খাঁ এখানে এসেছেন কিছু রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক উচ্চাশা নিয়ে। খাঁ পদবীটা তারা পাকিস্তান থেকে নিয়েছেন। তিনি করাচিতে তাদের আবাসিক হোটেলের মাধ্যমে পামিরে ট্যুরিজমের একটা ব্যবসা করছেন। ৩৫০ সিসি একটা হোন্ডা আছে তার, ওটা নিয়েই নাকি পাহাড় পর্বত চরে বেড়ান জুম্মা খাঁ আর পর্বতের গিরিপথ ধরে হোন্ডা চালিয়েই পাকিস্তান যাতায়ত করেন তিনি। উর্দু, পশতুন, দারি, ইংরেজি, রাশান ভাষায় অনর্গল কথা বলেন। বাংলা কথাও দুএকটা বলতে পারেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন শেখ মুজিবের লেড়কি কেমন আছে। আমাদের সংস্থার সাথে তার প্রকল্পের কিছু পার্টনারশিপ আছে। তার বাড়িতেই দুপুরের খাবার আয়োজন। বেশ কিছুটা পাহাড় ভেঙে তার বাড়ি। তবে ১৫০ মিটারের বেশি হবে না। তাতেই ক্লান্ত হয়ে গেলাম। দরদর করে ঘামতে লাগলাম, অনভ্যাসের ফল।
জুম্মা খাঁর বাড়ি দেখে হতাশ হলাম। একটা মাটির ঘর, মাটির দেয়াল, উপরে ছনের চাল। জরাজীর্ণ অবস্থা। মনে মনে ভাবলাম দুপুরের খাবার অবস্থা এই ঘরের মতো হলোই সারা। ঘরটা মাটি থেকে প্রায় ৮ ফিট উঁচুতে। সিঁড়ি ভেঙে উঠলাম। তারপর ভিতরে ঢুকেই চক্ষু চড়কগাছ। অত্যন্ত দামী কার্পেটে সারা ঘর মোড়া, গোড়ালি পর্যন্ত ডুবে যায়। ঘরে আছে ৫৬ ইঞ্চি এলসিডি টিভি, স্যাটেলাইট রিসিভার আর ডিভিডি প্লেয়ার। টিভির পাশে আর কার্পেটের উপর ছড়িয়ে আছে গোটা পঞ্চাশেক ডিভিডি যার মধ্যে একনজরে দেখলাম বেশ কিছু পর্ণোগ্রাফিক ডিভিডির কভার। পরে শুনেছিলাম জুম্মা খাঁ নাকি ট্যুরিষ্টদের জন্য অন ডিমান্ড মেয়ে সাপ্লইও করে থাকেন। তবে তিনি মেয়ে আনেন সীমান্তবর্তী পাকিস্তান এলাকা থেকে, এবং বেশিরভাগ সময় ঘোড়ায় বা হোন্ডায় চড়িয়ে। এবার জানলাম বাড়িটা আসলে জুম্মা খাঁর নয়, বাড়ির মালিক সম্পর্কে ওর কাজিন স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেব। জুম্মা খাঁ এখানে থাকে এবং এই চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা তার নিজস্ব। তবে ইমাম সাহেবের তার কোনও ব্যাপারে কোনও আপত্তি নেই।
এমন সময় সেখানে এসে হাজির হলেন স্থানীয় কমান্ডার। আফগানিস্তানের পল্লী এলাকায় কমান্ডাররাই হচ্ছেন সর্বেসর্বা। এরাই রাশিয়া বিরোধী যুদ্ধে এদের এলাকাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরা এতটাই ক্ষমতাশালী যে সরকারী কর্মকর্তা বা স্থানীয় প্রতিনিধি, কেউই কমান্ডারের কথার বাইরে চলেন না। এদের হাতে আছে হাজার হাজার সৈন্য আর অগুনতি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। এরা নিয়মিত পপি চোরাচালানী চক্রের কাছ থেকে যে পরিমান মাসোহারা পান তাতে দলবল নিয়ে ভালোই চলে যায়। এছাড়া সরকারী ভাতা আছে। সরকারীভাবে এই কমান্ডাররা একটা নির্দিষ্ট এলাকার সীমান্তরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। হেভী মিলিটারি জ্যাকেট পরা কমান্ডার এসেই সামনে আমার প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে জিভ দিয়ে পুরো সিগারেটটা ভিজিয়ে ফেলে তারপর ধরিয়ে টানতে লাগলেন। আজব অভ্যাস। এটা করলে নিকোটিন কয়েক লক্ষগুন সক্রিয় হয়ে যায়। এরপর ভোদকার বোতল আসলো। মদ্যপানে দেখলাম দুই আজিজ অতীব সক্রিয়। আমরা ছাড়া আরও কয়েকজন মানুষ আসলেন যার মধ্যে এই বাড়ির মালিক ইমাম সাহেব আর অন্য একটা ছেলে আছে যে কি না এই এলাকার সেলিব্রিটি। এখানে বার্ষিক যে মেলা হয়, সেই মেলায় এই ছেলেটা বুশকাশি, হর্স রাইড, মাউন্টেইন ট্রেকিং ও রাপলিং-এ চ্যাম্পিয়ন হয়। বুশকাশি বুঝতে চাইলে স্মরন করুন রাম্বো সিনেমাটার, যেটা আফগানিস্তার পটভূমিতে করা হয়েছিলো। সিলভেষ্টার স্ট্যালোন ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছাগল হাতে নিয়ে যে খেলাটা করছিলো, ওটাই বুশকাশি। এখানের হর্স রাইড খুব আজব, ঘোড়ায় কোনও জিন ও রেকাব থাকেনা। ঘোড়ার পিঠে কম্বল বিছিয়ে তারপর লাগাম ধরে চালাতে হয়। আর মেলার সময় হেলিকপ্টার আনা হয় রাপলিং টুর্ণামেন্টে জন্য। হেলিকপ্টার থেকে দড়ি বেয়ে কে কত দ্রুত নামতে পারে। গত কয়েকবছর ধরে এই ছেলেটা চ্যাম্পিয়ন। মাঝে মাঝে ট্যুরিষ্টদের কোনও দলের জন্য তাকে স্পেশাল পারফরম্যান্স দেখাতে হয়। এজন্য ওকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। অন্যসময় সে ট্যুরিষ্ট গাইডের কাজ করে। ভালো ইংরেজি বলে।
কমান্ডার সাহেব অনুরোধ করলেন যে তিনি মেহমানদের মুখ থেকে কিছু শুনতে চান। আমাকে মেহবুব বললেন যে কমান্ডার যেহেতু বলেছেন, কিছু না কিছু তো বলতেই হবে। তা না হলে কমান্ডারকে অমর্যাদা করা হবে যেটা এখানকার রীতি বহির্ভূত। আমাকে তিনি আরও বললেন যে তোমার যা খুশি বলে যাও মজীদ অনুবাদ করে দেবে। তো কিছু বলতেই হলো। ভাগ্যিস কমান্ডার মোটেও ইংরেজি বোঝেন না, তাই রক্ষে।
বোতলের পর বোতল মদ শেষ হচ্ছে কিন্তু খাবার আসার নাম নেই। অবশেষ খাবার আসলো। আমরা যেমন চালের তৈরী জর্দা খাই, ঠিক তাই। ইমাম সাহেব খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব নিলেন। এরপর গামলার পর গামলা ভর্তি পোলাউ, মুরগির রোষ্ট, মুরগির ঝোল তরকারী, দুম্বার রেজালা, শব্জী, আলু ফ্রাই, তন্দুর রুটি, ইত্যাদি। খেয়ে শেষ করা কঠিন এতো খাবার। ওদিকে মদও সমানে চলছে। খাবার মাঝখানে ইমাম সাহেবের স্ত্রী উঁকি দিলেন। তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো। মেহবুব খাবার রেখে উঠে অন্দর মহলে গেলো তার সাথে কি যেন ‘স্পেশাল কথা’ আছে এই জন্য।
খাবার শেষ করে আর বিশেষ দেরী করা গেলো না ওই বাসায়। আমরা দল বেঁধে অফিসে আসলাম, তারপর কিছু অফিসিয়াল কাজ করলাম চা খেতে খেতে। খুদা ইয়ার ইফতারের প্যাকেট দিলেন গাড়িতে সবার জন্য। যাবার সময় জুম্মা খাঁ বললেন সী য়্যু সুন। পথে অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ দেখি বেশ বড় একটা জটলা এবং বেশ কিছু লোকের হাতে একে ৪৭ রাইফেল। ওরা আমাদের গাড়ি থামানোর সিগনাল দিলেন। আমরা গাড়ি থামিয়ে দেখি আমাদেরই একজন ইঞ্জিনিয়ার, তার গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন। তাকে আমাদের গাড়িতে তুলে নিলাম। মেহবুব জানালেন ওই অস্ত্রধারী মানুষগুলো সীমান্তরক্ষী, কাজেই ভয়ের কিছু নেই। তাছাড়া উভয় আজিজকে এই এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, সবাই খুব ভালো করে চেনেন এবং সমীহ করে থাকেন। ইশকাশিমে পৌছলাম রাত ৯ টার পর। পথে আর উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটলো না। উভয় আজিজের দেখলাম খুব আগ্রহ রুনা লায়লার বিষয়ে বিশেষ করে তার ব্যাক্তিগত জীবন ও দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে। যেটুকু জানি বললাম তাতেই ওরা মহাখুশী। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকেও ওরা নামে চেনেন একজন বিখ্যাত ইসমাইলী ভাই হিসেবে, তার চারিত্রিক কিছু কাহিনীও ওরা শুনেছেন।
রাতে আর আমাদের গেষ্টহাউজে ফিরলাম না। মেহবুবের গেষ্টহাউজে থেকে গেলাম। আমরা জানতাম না যে মেহবুব আমাদের গেষ্টহাউজে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে আমরা রাতে আসছি না। অফুরন্ত কাবাব আর মদ। মেহবুবদের গেষ্টহাউজে ঢুকেই দেখি একটা ৩৫০ সিসি হোন্ডা, মনে হলো হোন্ডাটাকে দুপুরে দেখেছি। মেহবুব আমার মনের জিজ্ঞাসা বুঝতে পেরে বললেন যে এই সেই হোন্ডা। জুম্মা খাঁ এসেছেন অনেক আগেই। পাহাড়ের ভিতরের শর্টকাট ধরে অনেক আগেই পৌছেছেন এবং খেয়ে দেয়ে এখন তিনি ঘুমাচ্ছেন।
(বন্ধু আবদুল মজীদের মোবাইলে তোলা কিছু লো-রেজুলেশনের ছবি জুড়ে দিলাম)
মন্তব্য
ফটুক নাই?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
জ্বী আছে, তয় আপলোড করার মছলা জানি না। নতুন মানুষ, এখনও মেম্বার হই নাই।
রাতঃস্মরণীয়
রাতঃস্মরণীয়, সচলায়তনের নীতিমালাটি অনুগ্রহ করে মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখুন। নীড়পাতায় আপনার কোনো পোস্ট যদি থেকে থাকে, পরবর্তী পোস্ট দেয়ার আগে অপেক্ষা করুন। ধন্যবাদ।
লাল ভাই, ধন্যবাদ বিষয়টা ধরিয়ে দেবার জন্যে; নীতিমালা পড়েছিলাম কিন্তু হয়তো ততটা খেয়াল করেছিলাম না যে নীড়পাতার প্রথম পাতায় লেখা থাকলে নতুন পোষ্ট না করা। ভবিষ্যতে সাবধান থাকবো।
রাতঃস্মরণীয়
লেখার দৈর্ঘ্য কিছুটা বেশি, তাই সম্পূর্ণ অংশ পড়া হয়ে উঠলো না।
ভাল লিখেছেন। চালায় যান...
________
তাহসিন গালিব
এত আকর্ষনীয় স্থানে আপনার যাবার সুযোগ হয়েছে, ভীষন হিংসা হচ্ছে। পেশাওয়ারের দিক থেকে খাইবার পর্যন্ত শুধু যাবার সুযোগ হয়েছিল একবার বহু বহু দিন আগে। সৈয়দ মুজতবা আলীর 'দেশে বিদেশে' আর তারপর খালেদ হোসেনীর 'দি কাইট রানার' - এ ছাড়া তেমন কিছু পড়ার সুযোগ হয়নি। আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগলো এবং অনেক নতুন কিছু জানলাম।
আপনার ফটোগুলো ফ্লিকার জাতীয় কোন সাইটে আপলোড করে ফ্লিকারের ছবির কোডটা এখানে এমবেড করে দিলে আমরা দেখতে পাবো। অথবা ফ্লিকারের লিঙ্কটা আপনার কোন মন্তবের সাথে সবাইকে জানাতে পারেন। যদি ম্যাপ জাতীয় কিছু দিতে পারেন তা হলেও খুব ভাল হবে।
প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
সাইফ শহীদ
সাইফ শহীদ
ধন্যবাদ ভাই। ক্ষুদ্র জীবনে বেশ কিছু স্থানে যাওয়ার সূযোগ হয়েছে, ইচ্ছে আছে আরও ঘোরার। সময় একটা বড় সমস্যা আর খরচ তো বটেই। আমি কয়েকটা ভ্রমণকাহিনী লিখেছি, পর্যায়ক্রমে পোষ্ট করবো। আর ফ্লিকারে ঢুকে ছবিগুলেরও আপলোড করবো। সমস্য হলে আপনাকে জানাবো। ভালো থাকবেন।
রাতঃস্মরণীয়
বেশ অনেক কিছু জানা হল লেখাটি পড়ে। সত্যি ঘটনা বানানো উপন্যাস থেকেও জীবন্ত হয় এই কথাটির মর্ম উপলব্ধি করতে পারছি।
তালিবানরা সেই এলাকায় পাত্তা পায় না শুনে ভাল লাগল। তাহলে কি তারা শুধু পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্সের লাগোয়া সীমানায়ই বেশী তৎপর?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
এত লম্বা!
ভালই লাগছিল পড়তে। শেষ করতে পারলাম না। বাকীটা পরে।
লেখালেখি জারি রাখেন
ছবি দিয়েন এরপরের ভ্রমণব্লগ লেখার সময়।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
রেজওয়ান ভাই, আপনার জন্যে একটা জবাব লিখেছিলাম কিছু তথ্য দিয়ে। আপলোড দিছি আর কানেকশন গন্। এমন ছাগোলের ছাগোল আমি যে সেভ ও করিনাই। একটা স্বতন্ত্র লেখা দেবো ভাবছি তালিবানদের ইতিহাস, উথ্থান ও পতন নিয়ে।
চমৎকার জায়গা অবশ্যই। সেই করে আফগানিস্তান নিয়ে আনিস ভায়ের লেখায় পড়েছিলাম।
ভালো লেগেছে পড়তে। বিনা পয়সায় এমন জায়গায় চাকরি করতে রাজী।
এ বছরের প্রথম দিকে এক আফগান ট্যুর অপারেটরের সাথে ১৬ রাতের ইশকাশিম, কালাই পাঞ্জা, সারাদ, ওয়াখান, বোরাখ, দালিজ পাস্ ইত্যাদির পোগ্রাম করেই ফেলেছিলাম, ভিসা এবং অনুমতি সংক্রান্ত জটিলতায় যাওয়া হয়নি।
...........................
Every Picture Tells a Story
কিছু ছবি দিলাম। নিজের সাথে ক্যামেরা না থাকায় বিপদ ......... আর জীবনের প্রথম ফ্লিকার, কাজ হবে কি না তা বুঝতে পারছি না।
রাতঃস্মরণীয়
মুস্তাফিজ ভাই, আপনি জানেন না কিন্তু আমি জানি যে আপনি কি মিস করলেন। গুড লাক ইন নেক্সট এ্যাটেম্পট।
ভিসার বিষয়টা একটু জটিল। আফগানিস্তান থেকে আপনার স্পন্সরের আবেদনের ভিত্তিতে মিনিষ্টি অব সিকিউরিটি থেকে ইনডেক্স নাম্বার ঢাকাস্থ আফগানিস্তান এ্যাম্বেসিতে না পাঠালে আপনাকে ভিসার ফর্মই দেবে না। সাম্প্রতিক ডেভেলপমেন্ট অবশ্য অজানা।
রাতঃস্মরণীয়
সমস্যা ছিলো তাজিকিস্থান, ওরা ডাবল এন্ট্রি দিবে কিন্তু ইশকাশিম দিয়ে ঢুকতে দিবে না। পাস্পোর্ট সবুজ না হলে দিত। অদ্ভুত।
...........................
Every Picture Tells a Story
আসলেই অদ্ভুত। কাউরে বইলেন না ভাই, আমি কিন্তু বিনা পাসপোর্টে ইশকাশিমের তাজিকিস্তান সাইডে বেশ কিছুদুর ঘুরে এসেছি। ৩ বার ভিসার জন্যে আবেদন করার পরও ভিসা দেয়নি (যদিও সেটা অন্য নাটক, সবুজজনিত নয়), তাই শখ মিটিয়েছি বিনা পাসপোর্টে কিছুদুর ঘুরে। প্রতি রবিবার ইশকাশিম ব্রিজের উপরে বাজার বসে, শুধু নারী বিক্রেতারা পসরা সাজাতে পারেন, পুরুষ বিক্রেতা নো এন্ট্রি। উভয় দেশের ইশকাশিমের নারী বিক্রেতারা মিলেমিশে বসেন এবং উভয় সাইডের ক্রেতারা আসেন। তাই রবিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যের আগ পর্যন্ত বর্ডার একটু শিথিল থাকে। স্থানীয় কমান্ডার আর কিছু এলিট আমাকে ওপারে নিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও ফেরার পথে তাজিকিস্তানের গার্ডদের এক বোতল ভদকা দিতে হয়েছিলো তবে সেটা আমার পকেট থেকে যায়নি।
রাতঃস্মরণীয়
অসাধারন ভাই, একটানে পড়ে ফেললাম যদিও মাথায় assignment এর টেনশন
ধন্যবাদ ভাই আরিফ খান।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
অতিথি থাকার সময় এটা পোস্ট করেছিলাম। নাবালকত্বের কারণে তখনও ফ্লিকার ও ফ্লিকার থেকে ছবি আপলোডের বিষয়ে অজ্ঞ্যাত ছিলাম। সমকর্মী-বন্ধু আবদুল মজীদ তার মোবাইল ফোনে কিছু ছবি তুলে দিয়েছিলেন। তা'ই এখানে জুড়ে দিলাম। এখানে ছবিগুলোতে সমাজ বা প্রকৃতির তুলনায় আমার বদনখানি বেশি এসেছে, এজন্যে ক্ষমাপ্রার্থী।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
দুর্দান্ত। এই লেখাটা মিস হয়েছিলো। পড়ে ফেললাম।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ধন্যবাদ হাসান ভাই।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
যেতে চাই!
facebook
কিংবদন্তি তারেক অণু'দা যায় নাই এমন জায়গাও আছে, ক্যাম্নে কী!!!
তোমার বহুল আকাঙ্খিত স্নো লেপার্ড দেখতে চাইলে পশ্চিম তুর্কীস্তান যাওয়া ছাড়া গতি নাই। আর ওদিকে গেলে কাস্পিয়ানের এপাড় ওপাড় দুটো দেখাই উচিত।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই লেখাটা কী করে যেন আমার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। গতকাল একটা লেখা পোস্ট করার সময় 'তাজিকিস্তান' আর 'পামির' ট্যাগ দেবার সময় দেখি সাজেশন আসে। তার মানে 'তাজিকিস্তান' আর 'পামির' নিয়ে সচলে লেখা আছে (এবং যা আমি পড়িনি)। অতঃপর ট্যাগে ক্লিক করতে দেখি কেবল এই পোস্টটা দেখায়। নিজেই নিজেকে ধন্যবাদ দিলাম ট্যাগসংক্রান্ত গ্যাঞ্জাম করার জন্য, যার দরুণ এই লেখাটা পড়তে পেলাম।
বাস্তবে যা ঘটে তা ঠিক ঠিক লিখতে পারলে প্রায়ই সেটা ফিকশনকে ছাপিয়ে যায়। এই লেখাটা তার একটা উদাহরণ। ইতিহাস-ভূগোল-রাজনীতি-সংস্কৃতি-মানবাচরণ সবকিছু মিলিয়ে একটা কমপ্লিট প্যাকেজ।
তোমার লেখা খুব মিস্ করি। আফগানিস্তান, ইরাক, নেপাল, ফিলিপিন্স নিয়ে তোমার লেখা আশা করেছিলাম। কিন্তু তুমি সেই যে লাপাত্তা হলে ..............
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন