সম্প্রতি পি এইচ ডি কম্প্রিহেনসিভ পরীক্ষার প্রস্তুতির সুবাদে কিছু রিসার্চ পেপার অনেকটা বাধ্য হয়েই পড়তে হচ্ছে। এমনই একটি পেপারে চোখ বোলাতে গিয়ে হঠাৎ দেখলাম লেখা রয়েছে "... was first derived (to our knowledge) by Muniruzzaman in 1957."।
মুনিরুজ্জামান নাম শুনেই মনে হলো বাঙালি কেউ, কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি জার্নালের রেফারেন্স দেখে ধারণাটা আরেকটু গাঢ় হলো।
আরো একটু খোঁজ করে জানলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন এই মুনিরুজ্জামান, পুরো নাম এ এন এম মুনিরুজ্জামান। ভাবতেই ভালো লাগলো যে দেশের এই কৃতি গবেষকের কাজ প্রায় ৫০ বছর পরেও A1 ক্যাটাগরির জার্নাল এ সাইটেড হচ্ছে, নিঃসন্দেহে গর্ব করার মত একটি ব্যপার।
কিন্তু নামটা অন্য কোনো কারণে কেন যেন চেনা চেনা লাগছিল, কোথায় যেন দেখেছি আগে। রিসার্চ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে নয়, এটা নিশ্চিত, অন্য কোথাও। কোথায় হতে পারে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল, এই নামটি একবার নয়, প্রতি বছরই দেখি, কিন্তু বছরে কেবল এক বারের জন্যেই। ১৪ ডিসেম্বরের খবরের কাগজগুলোতে আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে তালিকা দেয়া হয়, তার এক কোণায়। অনেক হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রের মিছিলের একটি নক্ষত্র এই এ এন এম মুনিরুজ্জামান, যিনি ১৯৭১ এ ২৫ এ মার্চের কালরাত্রিতে নিজ বাসভবনে পাকিস্তানী হানাদারদের কাপুরুষ হামলায় এক ছেলে ও ভাইসহ শহীদ হয়েছিলেন।
বিষয়টি উপলব্ধি করতে আমার একটু সময় লাগলো, তারপর সহসাই আমার একটু আগের গর্বের অনুভূতি অসীম ক্রোধে রুপান্তরিত হলো। আগেও জানতাম, পাকিস্তানি বাহিনীর লক্ষ্য ছিল আমার দেশকে মেধাশূন্য করা, যাতে যুদ্ধের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, এক মেধাহীন, মেরুদণ্ডহীন জাতি হিসেবে বাঙালি কখনই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। কিন্তু আজ যেন কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, যাদের আমরা হারিয়েছি, তাঁরা কত উঁচু পর্যায়ের মনীষী ছিলেন, যাদের কাজ এখনো গবেষক মহলে সমাদৃত। শুধু এক মুনিরুজ্জামানই নন, অন্য যারা নিহত হয়েছেন, তারাও পেশাগত জীবনে অনন্যসাধারণ ছিলেন; আবার ডা: এম আর খানের মত কেউ কেউ টার্গেটে থাকার পরও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন।
সার্বিক বিচারে পাক বাহিনী ও তাদের ঘৃণ্য অনুচরবৃন্দ সফল হয়েছে বলতেই হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীদের রংবেরঙের খেলা, যা '৭১ থেকে শুরু হয়ে এখনো চলছে, আমাদের বুদ্ধির দীনতাকেই প্রতিনিয়ত চিহ্নিত করছে। সত্যিকারের বুদ্ধিজীবির জায়গায় আজ কিছু টক-শো-জীবী আর কিছু ব্যবসাজীবীরাই সুশীল সমাজের নামে বিজ্ঞ মতামত দিচ্ছে, আর আমরাও তা গিলছি বসে বসে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকেও বিদায় নিয়েছে গবেষণা, শিক্ষকদের দলবাজি, ছাত্রদের ক্যাডারবাজি আর কর্মচারীদের গলাবাজির আখড়ায় পরিনত হয়েছে বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর এই কারণেই স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমরা চলছি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
পাক-বাহিনী আর তাদের সাঙ্গোপাঙ্গোদের বিচার করা জরুরি, শুধু অতীত ক্ষতিসাধনের জন্যেই নয়, ভবিষ্যতেও যেন অনুরূপ ক্ষতির মুখোমুখি আমরা না হই, তা ঠেকাতেও।
ফাইয়াজ জামাল
মন্তব্য
ওনার প্যারেটো বিন্যাস নিয়ে কাজের কথা বলছেন?
হ্যা। দুর্ভাগ্যবশত পেপার টি অনলাইনএ পেলাম না।
আচ্ছা বর্তমান পার্সপেক্টিভে কী হবে? এই সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নয়ন কিন্তু সমগ্র মানব জাতির উন্নয়ন। এদের হত্যা মানে সমগ্র মানবজাতির পিছিয়ে পড়া। ধর্মীয় কারনে কিন্তু প্রাচীন কালে প্রচুর মনীষি হত্যা হয়েছে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কি মাঝি, ডরাইলা?
আমাদের অনেক নক্ষত্র ঝরে গেছে। তাই আন্তর্জাতিক বা সভ্যতার পরিমাপে অনেক কাজ হয়নি। মনে হয় একটা বন্ধ্যা সময় গেছে ৭০এর পর থেকে। এখন উত্থান পর্ব শুরু হয়েছে। পাটের জিনোম গবেষণা আমরা দেখলাম। সামনের বিশ বছরে যা দেখব, তা গত ৪০ বছরেও হয়নি (এটা আমার ধারণা)।"কানামাছি" সরকার যদি অন্তত ১০ বছর না আসে, অবস্থার পরিবর্তন হবেই। এখন গবেষণায় সরকার ১০ কোটি দিচ্ছে, পরে ১০০০ কোটি দিবে (স্বপ্নে পোলাও খাই)।
তবে একটা আশংকার ব্যাপার আছে, আমাদের যে অংশ বিজ্ঞানের গবেষণায় রত আছে, তাদের একটা অংশ "কানামাছি" জাতের।
রাজাকারের বিচার হলে "কানামাছি"র অন্ধ্যত্ব ঘোচার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নতুন এই মাছিরা কেবল সুবিধাবাদী; তাই সুবিধা না থাকলে কী আর করবে?
দূরের তেপান্তর
সত্যিকারের বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা যত বেশি হবে, কানামাছির সংখ্যা ততই কমে আসবে।
একবার চিন্তা করেন ভাই, শিক্ষা-সংস্কৃতি, চিকিতসা, প্রশাসন, রাজনীতি... প্রতিটা জায়গায় স্ব স্ব-ক্ষেত্রের নেত্রীস্থানীয় লোকগুলারে ১৪ই ডিসেম্বর না মারলে আমাদের দেশটা আজকে কই যাইতো!
আফসোস এখনও কিছু ছাগু ঐ শুয়োরের বাচ্চাগুলানরে সাপোর্ট করে।
তার পর ও চল্লিশ বছর ধরে এই শুওরের পাল দেশে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়ায়......থাক।
আপনার লেখার ভাষা/ধরন আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আরো লিখুন।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
আমার বক্তব্য একই।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
ধন্যবাদ। আপনাদের অনুপ্রেরণা আমাকে পরবর্তী লেখার ব্যপারে উৎসাহিত করবে।
কিছুই বলার নাই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
জাতিকে মেধাশুন্য করার যে প্রক্রিয়া ৭১এ শুরু হয়েছিলো তা কিন্তু এখনও চলছে। এখন শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক ব্যাকিং একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাকটর। আর এইসব ব্যাকিংপুষ্ট শিক্ষকরা সবসময় চেষ্টায় থাকেন কিভাবে মেধাবী ও ডেকিকেটেড শিক্ষকদের দাবিয়ে রাখা যায়, এবং তারা সফলও হন। আর এই চক্র মেধাবী ছাত্রদের ধ্বংস করে দেওয়ার ব্যাপারেও ব্যাপক সক্রিয়। সাম্প্রতিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আমার এই ভাবনাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই চক্রটি সর্বদলীয় এবং এদের মিশন সুদূরপ্রসারী।
রাতঃস্মরণীয়
সহমত।
লোকজনকে ঘাড় ধরে লেখাটা পড়াতে ইচ্ছা করছে। ফেসবুকে শেয়ার দিলাম।
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
জাতিকে মেধাশূন্য করার একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ দেই। বর্তমানে দেশের পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় যে মূল্যায়ন সিস্টেম চালু আছে, এটা চলতে থাকলে আর ১৫/২০ বছরের মধ্যেই 'চিন্তা' করার মতো লোক দেশে অবশিষ্ট থাকবে না।
শিক্ষাই উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। শিক্ষাকে ধবংস করে দিলে একটা জাতি আপনা-আপনিই শেষ হয়ে যায়। আল-বদরের বাচ্চারা একাত্তরে এই কাজটাই করেছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
একমত। গ্রেডিং পদ্ধতি যে প্রক্রিয়াতে আমাদের দেশে ইম্পলিমেন্ট করা হয়েছে, তার কুফল বুঝতে আর মাত্র কয়েক বছর লাগবে। ২০০৫ এর এস এস সি ব্যাচ থেকে শুরু করে পরবর্তী ব্যাচগুলোর ছাত্ররা হবে এর শিকার।
শুধু তাই নয়, এমন সব লোক এমন সব সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেটা চাপিয়ে দেয় দেখলে নিজের মাথা ঠিক রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের একমাত্র দেশ যেখানে ১২ বছরের স্কুলিংএ শিক্ষার্থীরা ৪টা সার্টিফিকেট পাবে - পি, জে, এস আর এইচ। বিশ্বব্যাপী এখন আর স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা নাই। আছে হলো ইউনিভার্সিটি এন্ট্রাস পরীক্ষা। যে সব দেশ সবার জন্য এ পরীক্ষা এফোর্ড করতে পারে না তারা শুধু এইচএসসি সমমান চালু রেখেছে বাকীরা এসএটি বা অনুরূপে চলে গেছে।
এদেরই কেহ কেহ এখন ভাবছে পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে প্রাইমারী স্কুলে পড়িয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন করবে। দুইদিন আগে জাফর স্যার এই নিয়ে একটা লেখা লিখেছে। যাদের পড়ার কথা তারা পড়েছে বলে শুনেছি।
আমরা আর কী করতে পারি। এসব গজমুর্খদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া ছাড়া!
বড় আফসোস হয় কেন একটি বড় সংগঠন করার চেষ্টা করি নাই বলে।
মুনির ভাই গজমূর্খদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এরা মুখোমুখি হতে ভয় পায়। খালি হাতে হাত ধরে সিনা টান করে এদের সামনে দাড়ালেই হবে। এরা পালিয়ে কুল পাবে না।
চমৎকার লাগল লেখাটা।
সচলে স্বাগতম।
_________________________________________
ৎ
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
আপনার এই হঠাৎ মনে উঠা অনুভূতিটা আমার ক্ষেত্রেও প্রায়ই ঘটে।
লেখাটা ভালো লেগেছে।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
শেয়ারে দিলাম।
________________________________
মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো...
নতুন মন্তব্য করুন