আমি জ্যোতির্বিদ নই। তবে এই সংক্রান্ত ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে যদি বাস্তবের কাছাকাছি একটা কল্পনাভিত্তিক যুক্তি দাঁড় করাই তাহলে কেমন হয়? বিশ্ব ধ্বংস হওয়ার হাজারটা কারন থাকতে পারে, তার মধ্যে কেবল একটা নিয়েই আজ কথা বলব। বিজ্ঞানের একটা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট জানা হয়ে যাবে, পাশাপাশি এর একটা (অপ?) ব্যাখ্যাও। মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে একটা বিজ্ঞান রিভিউ হয়ে যাক।
পৃথিবী আমাদের সৌরজগতের ৩য় গ্রহ। ৫১০,০৭২,০০০ বর্গ কিলোমিটারের এই গ্রহে লক্ষ লক্ষ প্রানীর বাস। অন্য গ্রহে প্রানী আছে কিনা তা নিয়ে অনেক গবেষনা চলছে, চলবে। বাকি গ্রহগুলির ফটো দেখলে আর সেখানে প্রানী নেই কল্পনা করলে আসলে আমাদের পৃথিবীর নীল রংটা অনেক বেশি প্রিয় লাগে। যাই হোক, সূর্য আমাদের সৌরজগতের স্টার। এই রকম ১০০-৪০০ বিলিয়ন স্টার এবং তাদের গ্রহদের নিয়ে আমাদের ছায়াপথ (গ্যালাক্সি) মিল্কি ওয়ে। এই রকম বহু বিলিয়ন ছায়াপথ আছে।
ফটোঃ মিল্কি ওয়ে
সেইরকমই আমাদের প্রতিবেশি এক ছায়াপথ আছে যার নাম অ্যান্ড্রোমিডা। আমাদের মিল্কি ওয়ের চেয়ে অ্যান্ড্রোমিডার আবার স্টার বেশি.. ১ ট্রিলিয়নের মত। এই ছায়াপথকে আমরা রাতে খালি চোখে দেখতে পাই। এই যে রাতের আকাশে এত এত নক্ষত্ররাজি, ছায়াপথ ইত্যাদি দেখতে পাই, তার কারন হল তাদের কাছ থেকে আলো বিকশিত হয়। আলো এত দূরত্ব অতিক্রম করে আমার চোখে আসে, তখন তারা আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়।
শিশুকাল থেকেই আমরা পড়ে এসেছি আলো সেকেন্ডে ১,৮৬,২৮২ মাইল যায়। আলো এক বছর সময় ব্যয় করে যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে সেটাকে বলা হয় লাইট ইয়ার বা আলোকবর্ষ। অ্যান্ড্রোমিডা বেচারা এত দূরে যে তার কাছ থেকে আমাদের চোখে আলো আসতে মাত্র ২,৫০০,০০০ আলোকবর্ষ লেগে যায়। এর মানে হল, আমরা খালি চোখে যে অ্যান্ড্রোমিডাকে দেখি সেটা তার ২,৫০০,০০০ আলোকবর্ষ আগের অবস্থা।
মজার বিষয় হল, এই অ্যান্ড্রোমিডা আমাদের মিল্কি ওয়ের দিকে ধেয়ে আসছে, এবং এ দুটোর সংঘর্ষ হবে। ঠিক হিসাবটা হচ্ছে ১২০ কিলোমিটার/সেকেন্ড বেগে এটা ধেয়ে আসছে। মানে ঘন্টায় ৪ লাখ, ৩২ হাজার কিলোমিটার বেগে। যদিও এই গতি অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ার কথা যতই এদের দূরত্ব কমতে থাকবে। সামান্য ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে প্রিয় টুথব্রাশটাও এসে লাগলে ঘিলু ভর্তা হয়ে যাওয়া অনিবার্য। আর সেখানে এক গ্যালাক্সির আরেক গ্যালাক্সির ওপর আছড়ে পড়া ঘন্টায় ৪ লাখ, ৩২ হাজার কিলোমিটার বেগে!
ফটোঃ অ্যান্ড্রোমিডা
অবাক হচ্ছেন, এই রকম সিরিয়াস একটা ব্যাপার কি করে মজার হল? হ্যাঁ। কারন এই সংঘর্ষ আপনার জ্ঞ্যাতিগুষ্টির কেউ কোনদিন দেখতে পারবে না। মাত্র ৪.৫ বিলিয়ন বছর পর এটা ঘটবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞান এখনও বেশ অপরিনত। অনেক কিছুরই সঠিক ব্যাখ্যা এখনও করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রায়ই নানা তত্ত্ব ভুল প্রমান হয় – এতদিন যেটা ঠিক বলে সবাই মেনে ছিলেন, তার ভিন্ন ব্যাখ্যা আসে, আগের তত্ত্ব বাতিল হয়ে যায়। সব বিজ্ঞানেই কমবেশি এমন। আবার মনে করে দেখি, আমরা খালি চোখে যে অ্যান্ড্রোমিডাকে দেখি সেটা তার ২,৫০০,০০০ আলোকবর্ষ আগের অবস্থা। এতদিনে নিশ্চয়ই অ্যান্ড্রোমিডা আমাদের দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। আগামীকাল সকালে উঠে যদি অ্যান্ড্রোমিডাকে মাথার ওপরে চলে আসতে দেখি খুব বেশি অবাক হতে হবে? যদি ধরে নেই, বিজ্ঞানের কোন অপরিনত তত্ত্বের সুযোগে অ্যান্ড্রোমিডা ইতিমধ্যে আমাদের মিল্কি ওয়ের সীমার কাছে চলে গেছে?
আরও একটু অতি কল্পনা করি। পৃথিবীর কত কিছুরইতো বিজ্ঞানের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা নেই। আর মহাকাশীয় ব্যাপার স্যাপারতো প্রায় অন্ধের হাতি দেখার মতই। যদি কল্পনা করি, এমন কোন মহাকাশীয় ঘটনা ঘটলো যার এখন পর্যন্ত কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নেই, যাতে করে অ্যান্ড্রোমিডা সেকেন্ডে আলোকবর্ষের চেয়েও বহুগুনে গতি পেয়ে গেল। কিছু বুঝতে না বুঝতেই সময়ের বহু আগেই আমাদের মিল্কি ওয়ে ধ্বংস হয়ে শেষ – সেই মহাকাশীয় ঘটনা অবজার্ভ করে, ফর্মুলা বের করাতো পরের ব্যাপার! অ্যান্ড্রোমিডার যদি ৪.৫ বিলিয়ন বছর ধৈর্য্যে না কুলায় আমারা কি করে বাধা দেব?
এলিয়েন আসার জন্য হয়ত অপেক্ষা করতে হবে না, তার আগেই ধ্বংস হওয়ার অনেক বন্দবস্ত আছে। মানুষ কালে কালে আরো কত মহাকাশীয় বিপদের কথা জানতে পারবে তার শেষ নেই। সেদিন এক প্রতিবেদন পড়লাম, পুরো মিল্কি ওয়েই নাকি একটা ব্ল্যাকহোলের মধ্যে! সে গল্প আরেকদিন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আরও যে কতবার বিস্মিত হতে হবে তার কোন অনুমান করতে পারি না। এই বিশ্বের সৃষ্টিরাজিকে পর্যবেক্ষন করে তার রহস্য নিয়ে পুলকিত হতে না হতেই আমাদের দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময় হয়ে যায়। আমরা এতই ক্ষুদ্র আর দুর্বল – মাঝে মাঝে ভাবি যিনি এত বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন তিনি কত বড়!
পূর্ববর্তী এপিসোডঃ ব্যবহারিক কল্পবিজ্ঞান-১
তানজিম সাকীব
মন্তব্য
"বিশ্ব ধ্বংস" করার জন্য অ্যান্ড্রোমিডা লাগবে না, মানুষই যথেষ্ঠ। খালি আর ৫০টা বছর দেখেন।
শুধু রাশিয়ার হাতেই যেই পরিমান আণবিক, পারমাণবিক অস্ত্র আছে, সেইগুলা দিয়ে পৃথিবী কয়েকশ' বার ধ্বংস করা যায়।
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কাছে যে পরিমাণ আছে সেটা দিয়ে ধ্বংস করা যাবে না?
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
যাবে না কেন? অবশ্যই যাবে...
বোঝাতে চাচ্ছিলাম আত্মবিধ্বংসী এই প্রতিযোগিতার কথা। শুধু রাশিয়ার কথা বলে কোনও শিবিরের দিকে টানার নিয়ত ছিল না।
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
নিশ্চয়ই। আমি খালি ওই দিকেও একটা আঙুল তুললাম।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
- ভাগ্য ভালো, বাংলাদেশের দিকে কেউ আঙুল তোলে না!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জানি, আমার অতি সুদূরবর্তী জ্ঞাতিগোষ্ঠিরও কারও পক্ষে মিল্কিওয়ে আর এ্যান্ড্রোমিডার ডুয়েল দেখার দুর্ভাগ্য হবে না, তবুও কেন যেন ভয় ভয় করছে। লেখার গুনেই ভয় ভয় লাগছে।
আসলে আমাদের কড়া বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে এটা হয় না। তবে জ্ঞানের ফোঁকড় দিয়ে হতেই পারে। তাও আমি একে সায়েন্স-ফ্যান্টাসিই বলবো।
১০০% ফ্যান্টাসি
তানজিম সাকীব
লেমিটারের সৌরজগত সৃষ্টির ব্যাখ্যা কিংবা হকিং এর বিগ ব্যাং থিওরী আমরা সবাই জানি।তবুও শুরুতে একটু বলি। সৃষ্টির আদিতে সবকিছু ছিলো শুধু একটা বিশাল বিন্দু আর এই বিন্দুতে লুকায়িত ছিলো অসীম শক্তি। এক সময় এই বিন্দুতে বিস্ফোরন হয় আর তা টুকরো টুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আর তার যে কোনো এক টুকরার একটি ছোট অংশ হচ্ছে আমাদের মিল্কি ওয়ে।
অতিথি তার কল্পনার ডানায় ভর দিয়ে লিখেছেন মিল্কি ওয়ে আর অ্যান্ড্রোমিডার সংঘর্ষের কথা। আমি শুধুমাত্র তার কল্পনাকে বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়ে বলার চেষ্টা করব। যদিও এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ভাবনা।
বিগ ব্যাং এর ফলে টুকরো খন্ডগুলো ক্রমশ দূরে চলে যেতে থাকে এবং এই দূরে যাওয়া আজও চলছে যা হকিং তার সম্প্রসারনশীল মহাবিশ্ব তত্তে বলেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সম্প্রসারন কখনো থামবে কিনা আর থামলে কিভাবে।
নিউটনের গতিসূত্র থেকে আমরা জানি যে বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে স্হির বস্তু স্হির থাকবে আর গতিশীল বস্তু সুষম ত্বরণে চলতে থাকবে।খুব সোজা কথায় কেবল মাত্র বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করলেই সম্প্রসারনের গতি কমবে। এখন আসল কথায় আসি।বাইরের এই বল কি হতে পারে।আমরা জানি সব কিছুতে আছে আন্ত: আনবিক শক্তি আর এই শক্তির কারোনেই সুষম ত্বরণে চলমান কনার ত্বরণ কমতে পারে। যখন ত্বরণ কমে শূন্য হবে তখন মহাবিশ্বের সম্প্রসারন বন্ধ হবে। আর তখনই ছায়াপথ গুলো কাছাকাছি আসতে থাকবে।
ইশতিয়াক,
মিলকি ওয়ে আর অ্যান্ড্রোমিডার ব্যাপারটা কল্পনা নয়, অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির স্পেকট্রামে সত্যি ব্লু শিফট দেখা যায়, অর্থাৎ গ্যালাক্সিটি আমাদের দিকে আসছে। এটা লোকাল ব্যাপার। গ্যালাক্সি কলিশন কিন্তু বিরল নয়, হাবলের আর্কাইভে অনেক পাবেন। দু'খানা তিনখানা গ্যালাক্সি মহাকর্ষীয় টানে মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে। বস্তুত এই মুহূর্তে আমাদের মিল্কি ওয়েতে মিশে যাচ্ছে এক ছোটো ডোয়ার্ফ গ্যালাক্সি, কেন্দ্রের থেকে আমরা যেদিকে ও তার উলটোদিকে বলে বোঝা যায় নি এতকাল, ওপাশের ভিজিবল লাইট এদিকে পাওয়া মুশকিল, কারণ কেন্দ্রাঞ্চল খুবই উজ্জ্বল(ওখানে আরো নানাকিছু আছে, সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল, অ্যাক্রিশন ডিসক এইসব)। কিছুদিন আগে ইনফ্রারেড অবজার্ভেশনে এই বামন গ্যালাক্সির খোঁজ পাওয়া গেছে।
লার্জ স্কেলে দেখলে প্রায় সব গ্যালাক্সিদের রেড শিফট দেখা যায়, সবাই সবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এডুইন হাবল প্রথম এটা অবজার্ভ করেন, খুব ভালো করে ডকুমেন্ট করেন, বহু গ্যালাকসির রেড শিফট আর দূরত্ব প্লট করে দেখান যে যত বেশী দূরে তত বেশী তাড়াতাড়ি সরে যাচ্ছে, আর তখনই প্রসারণশীল মহাবিশ্ব ধারণা ভালো করে প্রচার পায়।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
লেখাতে কোনটা বাস্তবভিত্তিক কোনটা কল্পনা তা স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। অ্যান্ড্রোমিডা আর মিল্কি ওয়ের সঙ্ঘর্ষ বৈজ্ঞানিক সত্য।
তানজিম সাকীব
আমাদের গোটা মহাবিশ্বটাই ব্ল্যাক হোলের মধ্যে, এরকম একটা তত্ত্বও আছে। তারা বলেন," দেখতে চান ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজনের ভিতরে কী আছে আর কীরকম কী ঘটছে ? তাহলে চারিপাশে তাকান। "
হাইপার স্পেসে হারিয়ে যাবার একটা তত্ত্বও আছে। বন্ধুর সঙ্গে চিনাবাদাম খেতে খেতে মিঠা মিঠা মধুর গল্প করতে করতে চলছেন চলছেন, হঠাৎ দেখলেন আশেপাশে সব বদলে গেছে। বন্ধু দেখলো আপনি মিলিয়ে গেছেন। আমাদের ত্রিমাত্রিক মহাবিশ্ব থেকে আপানি উচ্চতর মাত্রায় চলে গেছেন।আবার হয়তো অনেক দূরে কোথাও ধুপ করে ল্যান্ড করলেন, সেটা হয়তো প্যারালেল কোনো মহাবিশ্ব।
আছে মাল্টিভার্স থিওরি, পাশাপাশি নানা মহাবিশ্ব, নিজের নিজের মতন পদার্থবিদ্যার নিয়ম নিয়ে চলছে। হুট করে দু'খানা ওভারল্যাপ করে গেল, ব্যস, সব গেল! নিয়ম টিয়ম ভজঘট হয়ে গিয়ে সব সুপ হয়ে গেল!
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আইডিয়াগুলোর জন্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে স্যুপ বানানোর চেষ্টা করা যাবে।
তানজিম সাকীব
যারা ভাবছেন এই দুরত্ব টুরত্ব, গতি টতি কেমনে মাপে? গাড়িতে চড়ে যাবার সময় লক্ষ্য করেছেন যে দূরে অবস্থিত দুটো গাছের অবস্থান কেমনে পরিবর্তীত হয়? তুলনামূলকভাবে বেশী দূরে যেটা সেটা কাছের গাছের চেয় বেশী দ্রুত সরে যেতে থাকে। অর্থাৎ গাছ যত দূরে সেটা তত দ্রুত সরে যায়। এখন কাছের গাছটির দুরত্ব জানা থাকলে এবং গাড়ির গতি জানা থাকলে ত্রিকোনমিতি ব্যবহার করে এর দূরবর্তী গাছটির দূরত্ব বের করা একেবারে সহজ। পৃথিবীকে যদি একটি গাড়ির সাথে তুলনা করা যায় যার গতিবেগ জানা এবং কাছের একটি তারকা বা গ্রহের (যেমন চাঁদ বা সূর্য) দূরত্ব জানা যায় তাহলে দূরবর্তী তারকার দুরত্বও বের করে ফেলা যায়।
আচ্ছা তাহলে গতি কেমনে মাপে? তারকার অনেক ধরনের গতি থাকতে পারে। যেমন তার কেন্দ্রীয় তারকার চারপাশে গতি, কিংবা কেন্দ্রীয় তারকা যদি আরেকটি কেন্দ্রীয় তারকার চারপাশে ঘোরে সেই গতি। এগুলো বছর বছর দূরত্ব মেপে একটা আন্দাজ করে নেয়া যায়। কিন্তু পুরো ইউনিভার্সের সাপেক্ষে তারকার গুলো কিংবা ছায়াপথ গুলো স্থির আছে কিনা সেটা কিভাবে জানা যায়?
জোরে গান বাজাতে বাজাতে যদি একটা গাড়ি আপনার পাশ দিয়ে চলে যায় তাহলে গানটা প্রথমে আস্তে থেকে জোরে জোরে হতে হতে আপনার কাছে এসে সর্বোচ্চ এবং আপনাকে ছাড়িয়ে গেলে আবার আস্ত আস্তে হতে হতে এক সময় মিলিয়ে যায়। এই ব্যাপারটাকে বলে ডপলার ইফেক্ট। গতির কারনে শব্দ তরঙ্গ যেমন বর্ধিত এবং সংকুচিত হয় তেমনি আলোক তরঙ্গের ক্ষেত্রের ঘটে। অর্থাৎ একটা তারকা আলো ছড়াতে ছড়াতে কাছে চলে আসলে আলোর তীব্রতা বাড়বে এবং দূরে সরে গেলে তার তীব্রতা কমে যাবে। এই আলোর স্পেকট্রাম বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে তারকাটি কাছে আসছে নাকি দূরে যাচ্ছে। বছর বছর এই বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে কত দ্রুত কাছে আসছে বা দূরে যাচ্ছে।
লুই ফিজাউ ১৮৪৮ এ ব্যাখ্যা করেন যে আলোর ডপলার এফেক্ট ব্যবহার করে আলোকিত চলমান বস্তুর গতি নির্ণয় করা যেতে পারে। উইলিয়াম হাগিনস ১৮৬৮ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দুরত্ব নির্ণয়ের কাজটি করেন।
লক্ষণীয় যে, আলোক স্পেকট্রাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে নক্ষত্রের আলোক রাজি রেডশিফটেড - অর্থাৎ আলোর বর্ণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। এরকমটা ঘটে যখন আলোকিত বস্তুটি দূরে সরে যেতে থাকে। এখান থেকে বৈজ্ঞানিকরা ধারনা করেন যে মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে।
কিন্তু তানজীম তো উল্টো কথা বলল। মহাবিশ্ব কি সংকুচিত হচ্ছে তানজীম?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
মহাবিশ্ব সংকুচিত হচ্ছে বোঝাতে চাইনি। লক্ষনীয় হল অ্যান্ড্রোমিডা রেড না, ব্লুশিফটেড। তাই এর আলোর তরংগ সংকুচিত হচ্ছে। আর অ্যান্ড্রোমিডা এত দূরে তাই এ যাবৎ খুব অল্পই তথ্য পাওয়া গেছে। ধারনা করা হয়, এটা আসলে যতটা ভাবা হয় তার চেয়েও কাছে, আর এর বেগও যতটুকু মাপা গেছে তার চেয়েও বেশি। আসলে বিগ ব্যাংগের সময় আমাদের মিল্কি ওয়ে আর অ্যান্ড্রোমিডার খুব বেশি দূরত্বের বিরহ হয়নি। তাই মহাকর্ষ একে ওপরকে কাছে টানছে।
তানজিম সাকীব
হুমম
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
বিষয়টা খুব ভাবাচ্ছে। যতদূর জানি মহাবিশ্বের এক্সপানশন একটা ক্রিটিকাল সীমা অতিক্রম করে ছুটছে। রকেটের ক্রিটিকাল গতি যদি লক্ষ্য করা হয় তাহল দেখবেন রকেটের গতিবেগ একটা ক্রিটিকাল মানের বেশী না হলে রকেট উঠতে উঠতে গিয়ে এক সময় থেমে যাবে এবং পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে। মহাবিশ্বের তারকাগুলো যদি এরকম একটা ক্রিটিকাল গতি বেগের চেয়ে বেশী বেগে প্রসারিত না হতে থাকে তাহলে তাদের প্রসারন এক সময় থেমে যাবে এবং মধ্যাকর্ষণের ফলে তারা আবার সংকুচিত হতে শুর করবে। বিভিন্ন পরীক্ষাতেও তাই দেখা গেছে।
প্রসারিত হতে থাকা মহাবিশ্বের দুটি গ্রহ/তারকার সংঘর্ষ তখনই হতে পারে যদি নিজ কেন্দ্রের সাপেক্ষে তাদের ঘুর্ণি একে অপরের পথ অতিক্রম করে। এটা একটা ছায়াপথের বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে ঘটতে পারে। ক্রমাগত প্রসারিত হতে থাকা বিশ্বে দুটো ছায়াপথের একই পথ মাড়ানোটা তখনই সম্ভব যখন তাদের কেন্দ্রে ভিন্ন। কিন্তু যতদূর জানি পুরো মহবিশ্বের কেন্দ্র একটাই। তাহলে দুটো ছায়াপথের সংর্ঘষ কি করে হবে?
বরং ২৮৮০ সালের ১৬ ই মার্চে একটা বড় মিটিওর পৃথিবীকে আঘাত হানতে পারে। উল্লেখ্য যে এইরকম একটা মিটিওরের আঘাতেই কিন্তু পৃথিবী থেকে ডায়নোসররা বিলীন হয়ে গিয়েছিল। এই আর্টিকেলটাও ইন্টারেস্টিং।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
- অ্যান্ড্রোমিডার এতো বড় সাহস? আমাদের গ্যালাক্সির দিকে হাত বাড়ায়? এইটা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র রুখতে আমাদের দলমত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে। আমাদের সরকারকে এই মর্মে শক্ত অবস্থান নিতে হবে অ্যান্ড্রোমিডা'র সরকারের বিপক্ষে। আর অ্যান্ডরোমিডা'র এইরকম অগণতান্ত্রিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ আগামি বাদ জুমা বায়তুল মুকাররাম উত্তর গেটে এক বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশ শেষে ধর্মতালের কর্মসূচি দেওয়া হবে। অ্যান্ড্রোমিডা অভিমুখে লংমার্চের আয়োজন করা হবে।
আপনারা দলে দলে সেই লংমার্চে অংশগ্রহণ করে লংমার্চকে কামিয়াব করে তুলুন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অ্যান্ড্রোমিডা অভিমুখে লংমার্চটা একটা ভাল আইডিয়া!
তানজিম সাকীব
আমিও লংমার্চে যাইতে চাই। তবে কথা হইল আমি মানুষটা একটু আইলসা প্রকৃতির। শুঞ্ছি তীর্থযাত্রায় দুর্বলদের জন্য ডুলির ব্যবস্থা থাকে, এইখানে কি সেইরকম কিসু করা যায়?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
- আপনের তীর্থে মানে লংমার্চে গিয়া কাম নাই। ঘরেই থাকেন। তবে হাতের কাছে ঝাঁটা-ঝোটা কিছু একটা রাইখেন। অ্যান্ড্রোমিডা লংমার্চ পাত্তা না দিয়ে আমাদের গ্যালাক্সি এ্যাটাক করে বসলেই অনবরত ঝাঁটা চালান শুরু করবেন ব্যাটার উপর। ফাইজলামী নাকি? জন্মের পর তো বাঙালি ললনার ঝাঁটার বাড়ি খায় নাই। আকাশগঙ্গার লগে টক্কর খাওয়ার খায়েশ মিটে যাবে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অ্যান্ড্রোমিডার কুশপুত্তলিকা দাহ আর এক দড়ি তে ফাঁসির কি হবে?
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
খিক খিক খিক
ততদিন কি সূর্য বাবাজি বেঁচে থাকবে?
থাকার কথা। সূর্য আরও ৫ বিলিয়ন বছর বাঁচবে।
তানজিম সাকীব
বলছেন, এন্ড্রোমিডা বাপের লগে বাড়ি খাবার পরেও পুঁচকে সূর্য বেঁচে থাকবে আরো আড়াই বিলিয়ন বছর? ক্যাম্নে সম্ভব!
আমার তো চিন্তায় ঘুম আসছেতে না!
সবই ঠিক আছে, তবে একটা ছোট ভুল হয়ে আছে। 'আলোকবর্ষ' দূরত্বের একক, সময়ের নয়। "চোখে আলো আসতে মাত্র ২,৫০০,০০০ আলোকবর্ষ লেগে যায়" --- এখানে "২,৫০০,০০০ বছর" হওয়া উচিত।
ঠিক ধরেছেন।
তানজিম সাকীব
আলোর গতি প্রায় ৩ লাখ কিমি/সে বা ১০৭০০ লাখ কিমি/ঘন্টা আর মিল্কিওয়ের দিকে ছুটে আসা অ্যান্ড্রোমিডার গতি মাত্র ৪ লাখ কিমি/ঘন্টা। এ অবস্থায় আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতারাতি এসে আঘাত হানার ক্ষমতা অ্যান্ড্রোমিডার বাপেরও নেই।
যদি অ্যান্ড্রোমিডার গতি আলোর গতির তুলনায় বেশি হতো, তাহলে আমরা তাকে দেখতে পাওয়ার আগেই ইন্নালিল্লাহ হয়ে যেতাম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এবং যেহেতু আলোর গতিবেগ সবসময়ই সবকিছু থেকে বেশি, তাই ইন্নানিল্লাহ হওনের আগে ভালোমতই এন্ড্রোমিডার রূপ দেখতে পারবেন
ইন্টারেস্টিং লেখা
নতুন মন্তব্য করুন