ভ্যাঙ্কুবার হচ্ছে কানাডার অন্যতম সুন্দর একটা শহর। এখানে একই সাথে সমুদ্র আর পাহাড় মিলেমিশে আছে। পোর্টসিটি হওয়ার কারণে খুবই লাইভ একটা শহর ভ্যাঙ্কুভার। এখানে ডাউনটাউনে প্রায় প্রতি শুক্রবারই কোন না কোন অনুষ্ঠান হয়। আর প্রতি বছরে হয় বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান যা এই শহরটাকে আরো বেশি রঙিন করে তোলে।
সেরকমি একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে “Celebration of light” যা আগে ছিল “Symphony of Fire”। এটা কিছুই না আতস বাজি ফুটানোর একটা প্রতিযোগিতা। শুনতে খুবই সাধারণ মনে হতে পারে কিন্তু এটা সামনাসামনি দেখলে বোঝা যায় এটার অসাধারণত্ব। এতে কয়েকটা দল (তাদের দেশের প্রতিনিধিত্বকারী) বিভিন্ন গানের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে রঙ-বে-রঙের আতসবাজি ফোটায়, সেটার জন্য আবার বিচারকও থাকে। তাদের রায়ের উপরে ভিত্তি করে জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়। আমি এর আগেও কানাডায় আতশবাজি ফোটানো দেখেছি ওদের “কানাডা ডে” উপলক্ষে কিন্তু এটার কাছে ওসব কিছুই না। এটা শুধুই একটা আতসবাজি ফোটানো না, তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু যেন। তাছাড়া প্রতিযোগিতা শুরু হয় রাত দশটায় কিন্তু মানুষজন তার অনেক আগে থেকেই বীচে গিয়ে হাজির হয়, সাথে থাকে বসার জন্য চাদর, মাদুর অথবা চেয়ার (পোর্টেবল চেয়ার)। খাওয়াদাওয়া, কালাপানিও (সফট ড্রিংকস, মদ নিষিদ্ধ কিন্তু অনেকে সেটাও নিয়ে যায়) নিয়ে যায় অনেকে। আর এ উপলক্ষে বীচগুলোতে মেলার মত বসে যেখানে খাবার থেকে শুরু করে হরেক রকমের খেলনা (নাইট ভিসন বাতি, লেজার লাইট, বাচ্চাদের খেলনা ইত্যাদি)।নয়টার পরে গেলেই জায়গা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পরে। আর প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকেতো ননস্টপ গান বাজানো চলতেই থাকে আতশবাজি ফোটানো শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত, খুবই উৎসবমুখর পরিবেশ। মানুষের প্রচন্ড ভীড়ের কারণে প্রতিযোগিতার জায়গার অনেক আগে থেকেই সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এটাও আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা, কানাডায়ও রাস্তা বন্ধ করা হয়। আগে ভাবতাম আমরাই বুঝি এটা করি। অবশ্য কানাডাতে অনেক সময়ই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য।
প্রথম “আলোর বেসাতি” শুরু হয় অনেককাল আগে, ১৯৯০ সালে। এরপর থেকে এটা প্রতিবছর ভ্যাঙ্কুভারে হয়ে আসছে। এটা ভ্যাঙ্কুভারের অন্যতম বড় অনুষ্ঠান। প্রতিবছর জুন-জুলাইতে এটা হয়, মাত্র চারদিনের জন্য। কিন্তু এই চারদিনেই মোটামুটি ১৪ লাখের মত মানুষ এটা উপভোগ করে।
প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন দেশের থেকে কয়েকটি দল এতে অংশগ্রহণ করে। এবার প্রতিযোগী দলগুলোর দেশ ছিল আমেরিকা, মেক্সিকো, স্পেন আর চায়না। বিশ্বকাপ প্রথমবার জেতার কারণেই কিনা স্পেনকে এবার জিতিয়ে দিয়েছে (কেননা আমার স্পেনেরটা খুব একটা ভালো লাগেনি)।
আমেরিকার দলের নাম ছিল “Rozzi Inc. dba Rozzi’s Famous Fireworks” আর তাদের থিম ছিল ‘ভাবের মধ্যে”। তাদের শো-র কয়েকটি ছবি দেখুন।
স্পেনের দলটার নাম “Pirotecnia Igual” এবং তাদের থিম ছিল “নরক আর স্বর্গ”।
মেক্সিকোর দলের নাম ছিল “Lux Pirotecnia, S.A. de C.V.” আর তাদের থিম ছিল “যাত্রা”।
[ছবিসূত্র: Celebration of light group on Flickr
আমার পক্ষে এত ভালো ছবি তোলা কখনোই সম্ভব না, কিন্তু শেয়ার করার লোভটাও সামলাতে পারলাম না ]
সবশেষে চায়নার দলের নাম ছিল “Groupe Fiatlux-Ampleman” এবং তাদের থিম ছিল “ প্রজাপতিপ্রেমীদের উপকথা”।
[উপরের ছবিদুটো আমার নিজের তোলা। (তা অবশ্য ছবি দেখলেই বুঝে যাওয়ার কথা)]
গতবছরের (২০০৯) দলগুলো ছিল কানাডা, দক্ষিন আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য আর চায়না। গতবারের জয়ী দল ছিল চায়নার। তাদের থিম ছিল " আয়নার ভিতর দিয়ে"। অন্য দলগুলোর থিম ছিল :
কানাডা: নিজের বাড়ির মত কিছুই না
দক্ষিন আফ্রিকা: রঙের পর্দা
যুক্তরাজ্য: প্যাসিফিকের রোদের ছাতা
তার আগের দুই বছর (২০০৮ এবং ২০০৭) জয়ী দল ছিল কানাডার। ২০০৮ এ তাদের থিম ছিল "Attack" আর ২০০৭ এ ছিল "Take Five to Jive"।
আমি ফায়ার ওয়ার্কসের সময় কিছু ভিডিও করেছিলাম কিন্তু সেগুলোর মান তেমন ভালো না হওয়ায় পোস্টে দিলাম না। কেউ দেখতে চাইলে এখানে গিয়ে দেখতে পারেন।
কারও যদি এরপরের বছরের জয়ীদলগুলার নাম জানতে ইচ্ছা করে নীচের উইকির রেফারেন্সে গেলেই জানতে পারবেন।
পাগল মন
মন্তব্য
এই জিনিস মন্ট্রিয়লেও হয় প্রতি বছর ... এই বছরেরটা এখনো চলতেছে, দুই সপ্তাহ আগে মন্ট্রিয়লে গেসিলাম, তখন কানাডা টিমের আধা ঘন্টাব্যপী পারফর্ম্যন্স দেখলাম ...
সমস্যা হচ্ছে তার আগে ডাউন্টাউনে ফেস্টিভ্যালের ছবি তুলতে তুলতেই ক্যামেরার ব্যাটারী ফুরায়ে গেসিলো, তাই আর বুদ্ধমূর্তির সাথে ছবি তুলতে পারি নাই
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
হুমম, আমি একারণেই ছবি আর ভিডিও দুইটাই করছি।
খুবই খারাপ কথা যে আপনি ছবি তুলতে পারেননি, সুন্দর কিছু ছবি দেখা মিস করলাম।
আর এ অনুষ্ঠান UK তেও হয় মনে হয়।
পাগল মন
ছবি ব্যাপক হইছে!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কারটা, আমারটা নাকি অন্যদেরটা?
পাগল মন
আপনার তোলা ছবিও ভালো হয়েছে।
আনন্দে অভিভূত হয়ে গেলাম যে আমার তোলা ছবিও কারও ভালো লাগতে পারে।
পাগল মন
ভাই, এইরম হঠাৎ লেখাটা শেষ কইরা দিলেন?? ভালোই তো লাগতেছিলো।
বুঝি নাইকা
পাগল মন
আপনার তোলা ছবি সম্পর্কে বলা যায় "কম খারাপ না"। হে হে হে... এবার বুইঝা লন কী কইছি।
প্রথমে দেয়া ছবিগুলো দেখে মুখ হাঁ হয়ে গেছিল! ভাবছিলাম চোখ বন্ধ করে আপনেরে গুরু মাইনা নিমু। অন্য লোকে তুলছে এইটা চেপে গেলেও পারতেন।
কি মাঝি, ডরাইলা?
ভ্যাঙ্কুভারে আমার চেনা পরিচিত এত ফুটোগ্রাফার আছে যে অন্যের তোলা এটা চাইপা যাওয়াটা ঠিক বুদ্ধিমানের কাজ হইতো না...
আর "কম খারাপ না" এটার মত ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর আমি জীবনেও পাইনি।
পাগল মন
ঠিক কথা... চেপে গেলেই পারতেন
তবে আপনার ছবিই বা মন্দ কি...
এবার ভ্যাঙ্কুভার গেলাম বটে কিন্তু ৩১ তারিখ এইটা দেখা হল না... কান্দিয়া ভাসাই...
একটা কথা কন তো... এইগুলো ঠিক কোনখান থেকে ছাড়া হয়? ছবি দেখে মনে হল বারার্ড ইনলেটের মাঝখানে কোথাও থেকে...
আপনার আসলেই কান্দা উচিত তয় কাইন্দাও এই জিনিস দেখতে পাইবেন না।
হুমম, ইনলেটের মাঝখানে একটা স্টেজ করা আছে, সেখান থেকে বাজিগুলা ছাড়া হয়।
পাগল মন
আপ্নেই মিয়া লোক্ষারাপ... এইটা যে হবে সেইটা নিয়ে একটা পোস্টাইতে পার্লেন না আগেভাগে? তাইলে দেখতে চলে যেতাম... এখন ক্ষতিপূরণ দেন...
ক্ষতিপূরণতো দিলাম এই পোস্ট দিয়া।
পাগল মন
ঢুকতে কুনু ফি লাগেনা? মাগনা!!
এত্ত ট্যাকা অরা পায় কই?
ছবি যেন কথা বলে। আমিও ভাবছিলাম আপনার তোলা ছবি
..............................
শ্যামল
পুরাই মাগনা... কানাডায় খুব বেশি কিছু ফ্রি দেয়না, কিন্তু এইটা একদম ফ্রি।
তারা প্রচুর স্পন্সর পায় আসলে।
পাগল মন
দেশ থেকে কানাডায় আসার পরে অনেক কিছুর সাথে আরো একটা জিনিস খুব মিস করতাম, সেটা হচ্ছে মানুষের ভীড়।
বাংলাদেশে থাকলে ভীড়কে গাল দেই আর সত্যিই বিদেশে ভীড়কে মিস করি।
আরো লেখা আশা করছি।
সেটাই। বাইরে থাকলেতো কতকিছুই মিস করি যেগুলো হয়তো দেশে থাকলে খেয়ালই করি না।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
পাগল মন
নতুন মন্তব্য করুন