মহসিন ঢালী; একজন সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প

কাজী মামুন এর ছবি
লিখেছেন কাজী মামুন (তারিখ: রবি, ০৮/০৮/২০১০ - ১০:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“মানুষের মস্তিষ্ক প্রচন্ড ক্ষমতার অধিকারী। একটি মানুষ বহুপ্রতিভার অধিকারী হতে পারে। একটি উদহারন দিতে চাই। মার্কিন বিজ্ঞানী অ্যাডলম্যান একুশ শতকের কম্পিউটার জগতে চূড়ান্ত চমক আনতে চলেছেন। বিজ্ঞানর সব শাখাতেই ডঃ অ্যাডেলম্যান এক বিস্ময়। জীববিজ্ঞান থেকে গণিত শাস্ত্র,কম্পিউটার, রসায়ন, সবখানেই তার গবেষণার চমক। অ্যাডলম্যানের প্রিয় বিষয় হচ্ছে ভাবনা। তিনি ভাবতে খুব ভালবাসেন। দৃশ্যজগতের বাইরে অর্ন্তমূখী অনুভূতি গুলি তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দিত। সাহিত্য ছেড়ে রসায়ন,তারপর ডাক্তারী, তার শেষে গণিতশাস্ত্রে ১৯৬৮ সনে লের্নাড ব্যাচেলর ডিগ্রি পান। তখন তার বয়স মাএ ২২। গবেষণাগারে এক্সপেরিমন্টে করেও (পর্দাথ বিদ্যায়) তাঁর মন বসলো না। তিনি ভাবতে ভালবাসেন। তাই শেষে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয় নিয়ে র্বাকলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিত্যালয়ে পি.এই.ডি করা শুরু করলেন। ১৯৯৪ সনে ১১ নভেম্বর তাঁর এককভাবে লেখা ডি.এন.এ কম্পিউটার’ বিষয়ক প্রসঙ্গটি ,যা বিখ্যাত সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও অ্যাডলম্যান আও কিছু চমক সৃষ্টি করেছেন। কোনও সংখ্যা মৌলিক কিনা তা নিশ্চিত বা Deterministic প্রমান করা সম্ভব-গত ২ হাজার বছর ধরে প্রচলিত এই তথ্যটিকে পরাজিত করে তিনি সংখ্যাতত্ত্বের Probability theory প্রমান করলেন যে,কোনও সংখ্যা মৌলিক কিনা তার প্রমান probability থেকেও পাওয়া যায়। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে uncertinity মৌলিক সংখ্যার প্রমাণ। অ্যাডলম্যান একাই কাজ করেন। নিজের ঘরে একটি মাত্র কম্পিউটার এবং একটি ব্ল্যাকর্বোড। সেখানে বসে তিনি মহাশূণ্য ব্ল্যাকহোল এবং আপেক্ষিকতাবাদ থেকে জিন এবং ডিএনএ সর্ম্পকে ভাবতে ভালবাসেন। তাঁর ভাষায় ,দিনে বার ঘন্টা কেবল বসে ভাবা কঠিন কিছু নয়। এ ব্যাপারে তাকে রুশ বিজ্ঞানী চেলিপোভ এবং মুসলিম বিজ্ঞানী ডঃ এস. সালাউদ্দিন যাবতীয় সরন্জাম দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।”

কথাগুলো বলছিলেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিহীন একজন আটপৌরে সাধারণ মানুষ, মহসিন ঢালী, Global Power System এর CEO।চাঁদপুরের এক গ্রামে থাকেন। ২৫ বছর বয়সে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন, এরপর এ কারনে তাকে মাত্র ২০০ টাকা পকেটে নিয়ে বাড়িও ছাড়তে হয়েছিল।তাঁর সাথে আমার পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়, যতটা জানছি তাঁকে, বিষ্মিত হচ্ছি! কিছুদিন আগে এক লেখায় বলছিলাম-

“লক্ষ লক্ষ ড. কাজী মামুন, ড. আজিজুল হক তৈরী করে দেশের কোনো কাজ নেই, কোনো লাভ নেই! লাভ যদি করতেই হয় তাহলে গ্রামে গ্রামে অন্ততঃ একজন করে মহসিন ঢালী তৈরী করতে হবে!”

তিনি বলছিলেন,

“আমি একজন শিক্ষাদীক্ষাহীন একজন Non-academician । Power electronics(PLC,Inverter,Industrial automation), microcontroller,Waste heat recovery feed back system,PFI plant ,HT-LT switchgear ইত্যাদী বিষয় নিয়ে কাজ করি। শুনে আশ্চর্য হতে পারেন আমি একটি মফস্বলের গ্রামে বসবাস করি। এই গ্রামে থেকেই সারা দেশে কাজ করি।”

মহসিন ঢালী সাহেব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় উৎপাদিত ইঞ্জিনিয়ার, আমাদের দার্শনিক, আমাদের সমাজকর্মীদের মতো চাকুরীর জন্য মানুষের দ্বারে দারে ঘুরেন নি! অথবা বিদেশেও পালিয়ে যান নি! তিনি নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করেছেন, 'global power system' এর 'CEO' হয়েছেন। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছেন দেশের জন্য!
অনেকেই আগ্রহ দেখালেন তাঁর গল্প শুনতে, আমরা আজ তাঁর গল্প শুনবো তাঁর ভাষাতেই।

প্রশ্ন করেছিলাম- “আপনার বর্তমান কাজ বা পেশা, কি করছেন, কিভাবে করছেন। কাজের বিস্তৃতি কেমন?”

মহসিন ঢালী বলছেন- “Product design & development করছি। বাংলাদেশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আমার design & development এর উপর চলেছে। যেমন ধরুন একটি প্রতিষ্ঠান Inverter (বাংলাদেশে IPS নামে পরিচিত) তৈরী করতে চায়। সেক্ষেত্রে আমার কাজ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের চাহিদা বা Technical Specification অনুযায়ী Circuit diagram ও PCB layout তৈরী করা। পরর্বতী পর্যায় এই Circuit diagram ও PCB layout এর উপর চাকুরীরত বা নির্বাচিত Graduate Engineer,Diploma Engineer, technician দের প্রশিক্ষন দেয়া। প্রশিক্ষনের বিষয় থাকে Production Process ,testing & tuning and trouble shooting .
মূলত: আমি Power Electronics and Electrical product নিয়ে বেশী কাজ করি। এ পর্যন্ত যে সমস্ত product গুলো আমি ডিজাইন করেছি তার মধ্যে আছ UPS, Inverter, Power factor improvement plant, 1 phase and 3Phase Voltage Stabilizer(Servo and relay type),Voltage Protector, RFI/EMI Filter, Very Low noise Isolation transformer,Power Transformer and many more Power related Product. এছাড়াও Waste heat recovery system নিয়ে উল্লেখ করার মতে কাজ করেছি। সম্প্রতি একটি Automatic Rice mill plant এর Furnace থেকে যে তাপের অপচয় ঘটতো তা শতকারা ৭৫% কমাতে পেরেছি। এই মিল মালিকটি বর্তমানে ১৫লক্ষ টাকা জ্বালানী খরচ বাঁচে। এই Projecেটি গত ১বৎসর যাবৎ পর্যবেক্ষনে আছে। ছোট-খাটো কিছু ভূল ত্রুটি ধরা পড়েছিল সেগুলোও সংশোধন হয়েছে। এই আমাদের শহরের একটি পৌর অঞ্চলে।
একটি Product ডিজাইন করে দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার একটা চুক্তি থাকে। সেই চুক্তিতে আমার Fee, time frame , Error free design,training ইত্যাদী বিষয় নিয়ে Stamp agreement হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী কাজ করি। এই সমস্ত কাজ গুলো বিশেষ করে Circuit design and dummy product তৈরী করার কাজগুলো আমি আমার গ্রামে বাড়িতে বসেই করি। আমার গ্রামের ছেলেরাও আমার কাজে সহায়তা করে।”

-“আপনার এ কাজগুলো আপনি শিখলেন কেমন করে? আপনি বলছেন আপনার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই!”
“আমি পড়াশুনা করেই এসেছি। হ্যাঁ, তবে কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। নিজের ঘরে বসে।”

-“কি করে সম্ভব?”
-“একটি বিষয়ে মনে হয় আপনি দ্বিমত পোষন করবেন না যে, পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডার সকলের জন্য উম্মোক্ত। যে কেউ চাইলে যে কোন বিষয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন অদম্য আগ্রহ ও কৌতূহল। আমি এটিও বিশ্বাস করি যে , মানুষের মস্তিষ্ক প্রচন্ড ক্ষমতার অধিকারী। একটি মানুষ বহুপ্রতিভার অধিকারী হতে পারে।”

এরপর উদহারন টানতে গিয়ে তিনি যা বললেন তা আপনারদের প্রথম প্যারাতেই জানালাম।

বিষ্ময় আমার আরো বাড়লো, এবার একটু গোড়ার দিকে যাওয়া যাক।প্রশ্ন করি মহসিন ঢালী সাহেবকেই!

-“আপনি একা একা এতদূর কি করে এলেন? আপনার পরিবার বন্ধুবান্ধব কাছ থেকে সাহায্য সহযোগীতা কেমন পেয়েছেন?”
-“শুনে অবাক হতে পারেন আমার এই ২০ বৎসরের বিবাহিত জীবনে আমার স্ত্রীকে কোনো স্বর্ণ কিনে দেইনি। তার একটা ভালো কিংবা দামী শাড়ী নেই। এটি আমার স্ত্রী/প্রেমিকার আত্ন ত্যাগ। আমি শুধু বই এর পর বই কিনেছি, যন্ত্রপাতি কিনেছি, ইলেকট্রনিক্স বোঝার জন্য ভারতে মাস/বছর কাটিয়ে দিয়েছি। বিজ্ঞান,সাহিত্য,গণিতে,পদার্থবিজ্ঞান এসবের পেছনে বহু অর্থ ব্যয় করেছি। যা আয় করেছি তার চেয়ে ব্যয় করেছি বেশী। না,এদেশের সরকার আমাকে সামান্যতম সহযোগীতা করেন নি। নিজের পয়সায় ,স্ত্রী-সন্তানদের আত্নত্যাগ আমার অনুপ্রেরনা। জানেন একটা ঘটানর কথা বলি। আমার বড় মেয়েটি Caspia Jahan এপর্যন্ত ভাল রেজাল্ট করেই আসেছে। তার বৃত্তির জমানো টাকা হয়েগিয়েছিল প্রায় ২০০০০.০০। একদিন এসে আমাবক দিয়ে দিল ,বললো “ বাবা টাকাগুলো কাজে লাগাও । তোমার কাজে লাগবে। “ বিশ্বাস করুন মেই দিনটি আমার জীবনের একটি শ্রেষ্ঠ দিন ছিল। এভাবে আমি সহযোগীতা পেয়েছি ।উৎসাহ পেয়েছি। প্রযুক্তির র্চচ্চা করতে গিয়ে বহু অভাবের মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছি কিন্তু কোনদিন আমার স্ত্রী বা আমার সন্তান আমাকে তাদের প্রেম ভালবাসা থেকে বঞ্জিত করেনি।”

-“আপনার বিয়ে সম্পর্কে একটু শুনতে চাই, এরপর কি করেই এতদূর এলেন?”
-“১৯৯০ইং সনের ৯ই জুলাই প্রায় গোপনে এবং পারিবারিক সম্মতি ব্যততীই আমি বিয়ে করি।তখন আমার বয়স ২৫। আমার স্ত্রীর বয়স ২২। তিন মাস র্পযন্ত আমার বিয়ের খবরটি কাউকে জানানো হয় নি। অবশেষে তিন মাস পর সবাই জেনে গেল। আমি বাড়ী ছাড়া হলাম। নববধূকে নিয়ে ১৯৯০ইং অক্টোবরের ২৭ তারিখ ঢাকায় চলে এলাম। পকেটে ছিল সর্ব সাকুল্যে দুইশত টাকার কিছু অধিক। লঞ্চের ভাড়া ও স্ত্রী পক্ষের আত্নীয়ের বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছার পর আমার হাতে প্রায় ৭০টাকার মতো অবশিষ্ট ছিল। আমার স্ত্রীকে তার আত্নীয়ের বাসায় কয়েকদিন থাকতে হয়েছিল। আমি ছিলাম আমার বন্ধুর মেচ্ বাড়ীতে এবং অন্যান বন্ধুদের সাথে।কখনো সূর্যসেন হল,কখনো মাতুয়ইল,ক্রিসেন্ট রোড বিভিন্ন যায়গায়। সম্পূর্ণ বেকার। তখন ঢাকা শহরে পয়সার অভাবে হেটেই চলেফেরা করতাম। বহুবেলা অর্ধাহারে অনাহারে কাটিয়েছি। দুপুর বেলা একটি বাটার বন খাওয়ার জন্য বাসে না উঠে ২টাকা সাশ্রয় করতাম। চাকুরীর জন্য বিভিন্ন যায়গায় আবেদেন করতাম। আমার প্রথম চাকুরী হয় দৈনিক(নাম উল্লেখ করলাম না) নতুন একটি পত্রিকায়। প্রায় বিনা পয়সার চাকুরী। দুপুর বেলা একটি বনরুটি এবং একটি কলার বিনিময়।চাকুরীটি ৭দিন পর্যন্ত করেছিলাম। বহু বড় বড় মহৎ কুৎসিত লোকদের পরিচয় লাভ করেছিলাম। এদের কুৎসিত চেহারা অসবস্যার রাত্রিকেও হার মানাতো। আচ্ছা, কুৎসিত-কদাকার লোকরা কি করে কাব্য-সাহিত্য রচনা করে? (এখানে মহসিন ঢালী একটু থামলেন, মনে হলো আবেগ আক্রান্ত, এরপর…)
আমার এক কলেজ সহপাঠী বন্ধু তখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্ষ্টাস করে বেরিয়ে এসে কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার দেয়। সময়টা ১৯৯০ সনের সেপ্টম্বর মাস। XT Machine 8088 এর যুগ ছিল। ঐ বন্ধুটির আবার তিনজন অংশীদার ছিল। কোন রকমে প্রতিষ্ঠানটি টিকে ছিল। বন্ধুটিকে আমার বেকারত্বের কথা খুলে বললাম। বন্ধুটি বললো ‘ চলো, আমরা দুজন মিলে Computer accessories বিক্রি করি।’ ৫.২৫”ও ৩.৫” ফ্লপি ডিসকেইট ,ডট মেট্রিক্স প্রিন্টার রিবন কার্টিজ ইত্যাদি।তখন মতিঝিলে কিছু আমাদানী কারক ছিল। তাদের কাছ থেকে এগুলো কিনে আনতাম। প্রতিদিন বেগে নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। অফিসে অফিসে ঘুরতাম। ফেরি করতাম। সারাদিন বিক্রির পর দুই বন্ধু লাভটা ভাগাভাগী করে নিতাম। আমার সেই ফেরিওয়ালা বন্ধু অবশ্য আজ IT জগতের একচন বড় মহাপুরুষ। কোটিপতি।বাংলাদেশে খুব নাম করা র্ফাম। শিক্ষা ব্যবসায় যথেষ্ঠ ক্ষ্যাতি অর্জন করেছে। আর আজ আমি ফেরিওয়ালা মহসীন ঢালী জ্ঞান রাজ্যে বিচরন ও নৈতিকতা নিয়ে আজও সুন্দরভাবে বেঁচে আছি। যাই হোক সেই বন্ধুটির সাথে আর ব্যবসা করা হলো না। ঠিক সেই সময় মিরপুর-১০ এর আওতাধীন শেওড়পাড়াতে মাসিক ৫০০ টাকা দিয়ে একটি রুম ভাড়া নিলাম। আসবাবপ্ত্র কিছুই ছিল না। আমার দুই বন্ধু ((বর্তমানে তারা একজন প্রখ্যাত ওকিল আর একজন ভূগোলের অধ্যাপক)) মিলে একটি চাটাই(হোলগা) ও একটি বালিশ উপহার দিলেন। আর এক প্রিয় বন্ধু দুটি থালা, দুটি পাতিল,একটি কড়াই ও একটি বটি দা উপহার দিলেন। আমাদের সংসার শুরু হলো। চাটাই এর উপর একটি বালিশ দিয়ে আমাদের সুখনিদ্রা হতো।”(চলবে)

আজকের মতো গল্প এখানেই শেষ হলো, মহসিন ভাই ব্যস্ত মানুষ, জানালেন কি এক কাজে ঢাকা যেতে হবে তাঁকে। এরপর সময় করে আমরা বাকী গল্পটাও শুনবো। আজ এখানেই!

কাজী মামুন


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ।এরকম মানুষ আছেন বলেই আমরা বোধহয় এখনও স্বপ্ন দেখি।
অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্বের।
__________
ত্রিমাত্রিক কবি

অতিথি লেখক এর ছবি

মহসিন ভাই কথা দিয়েছেন, আরো গল্প শোনাবেন। আমিও অপেক্ষায় আছি! ধন্যবাদ আপনাকে!

কাজী মামুন

মহসীন ঢালী [অতিথি] এর ছবি

ভাই ত্রিমাত্রিক কবি, আপনাকে ধন্যবাদ। আসলে স্বপ্ন নিয়েইতো আমরা বেঁচে আছি। স্বপ্ন দেখা শেষ হয়ে গেলেতো মরেই গেলাম।

-মহসীন ঢালী

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

শ্রদ্ধা রইল পরিশ্রমী, জ্ঞানসন্ধানী এই মানুষটির প্রতি।

অতিথি লেখক এর ছবি

যে মানুষ তাঁর নিজের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের জন্য, দেশের অর্থনীতির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর তাঁর এমন শ্রদ্ধা প্রাপ্যই বটে!

কাজী মামুন

অতিথি লেখক এর ছবি

মহসিন সাহেবদের ট্র্যাজেডি হচ্ছে যে মানুষ তাদের চিনতে বা জানতে পারে তাদের মৃত্যুর পরে। খুবই ভালো লাগলো এমন একজন নীরব সাধক মানুষের কথা জানতে পেরে। আরও লিখুন মামুন ভাই, বিস্তারিত।

আমার বন্ধু কাম সিনিয়র ভাই, ডিফারেন্ট টাচ ব্যান্ডের মেজবা একটা গান গেয়েছিলেন, "জীবনের চলার পথে পেয়েছি শুধু ধিক্কার, জানি মরনের পরে পেয়ে যাবো আমি মরণোত্তর পুরষ্কার"।

রাতঃস্মরণীয়

অতিথি লেখক এর ছবি

মহসিন ভাই কতটা পেয়েছেন জানি না! তবে এটুকু বুঝতে পারি, তাঁর মতো একজন করে মানুষ প্রতিটি গ্রামে থাকলে, বাংলাদেশের চেহারাই পালটে যাবে!
তাঁর বয়সের একজন মানুষ কতোটা প্রযুক্তিমনষ্ক কতোটা আধুনিক হতে পারেন আমি দেখি আর অবাক হই!
তবে তাঁর সাথে কথা বলে বুঝতে পারি প্রাপ্তি নিয়ে তিনি খুব একটা ভাবেন না!
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও এই শতাব্দীতে একজন মানুষ সততা নিষ্ঠা দিয়েও যে ভাগ্য উন্নয়ন করতে পারেন, এমন চমৎকার একটি উদহারন তৈরী করে চলেছেন মহসিন ঢালী!
শুভকামনা তাঁর জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!

কাজী মামুন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মহসিন ঢালীর কথা জেনে ভালো লাগলো। শ্রদ্ধা তাঁকে, ধন্যবাদ আপনাকে।

কিন্তু

মহসিন ঢালী সাহেব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় উৎপাদিত ইঞ্জিনিয়ার, আমাদের দার্শনিক, আমাদের সমাজকর্মীদের মতো চাকুরীর জন্য মানুষের দ্বারে দারে ঘুরেন নি! অথবা বিদেশেও পালিয়ে যান নি!

এর কি দরকার ছিলো?
যে বড় তাঁকে বড় করার জন্য তো অন্যদের ছোট করার দরকার নেই। যে যার যার মাপে চেয়ার পাবে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার এই এক সমস্যা, মাথায় যা থাকে সব সময় তা কলমে আসে না!
নজরুল ভাই, কিছুদিন আগে ফেসবুকে এক লেখায় এ নিয়ে বিস্তারিত বলেছি- যদি সময় থাকে একবার ঘুরে আসবেন!

কাজী মামুন

মহসীন ঢালী [অতিথি] এর ছবি

নজরুল ইসলাম ভাই, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। মনে হয় কাজী মামুন ভ‍াই আমার মতো একজন অতি সাধারন কারিগর শ্রেনীর মানুষের জন্য বেশী বলে ফেলেছেন। হয়ত পড়াশুনার প্রতি সামান্য আগ্রহ আছে বলে বিষয়ের গভীরে যাওয়ার একটা প্রবনতা আছে। ঐ বিষয়টি হয়তো মামুন ভাই খুব ভাল চোখে দেখেছেন।

আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি এদেশে ড.কাজী মামুন,ড.আজিজুল হকের মতো লোকের প্রয়োজন বেশী। আমাদের মতো লোক খুববেশী হলে তাঁদের সহকারীর সহকারী হতে পারি।

আমি কোন প্রকারেই বড় মাপের মানুষ নই। বাচাঁর প্রয়োজনে যতটুকু প্রয়োজন তত‍ুটুকু অর্জন করতেই গলদর্ঘম হতে হয়। উপরন্ত জ্ঞানসংকটতো আছেই ।
আপনাদের অনুপ্রেরনা আমাদের মতো লোকদের জন্য অনুপ্রেরনা হিসেবে কাজ করবে।

মহসীন ঢালী

http://www.speedips.com

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

মহসিন ঢালী সাহেবের জন্য রইলো অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।

অতিথি লেখক এর ছবি

মহসিন ভাই এবং তাঁর মতো অনেকেই উৎসাহী হবেন আপনাদের এইসকল মন্তব্যে! ধন্যবাদ আপনাকে!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

স্বতন্ত্র লেখা হিসেবে এই লেখাটি চমৎকার। এবং লেখার প্রসঙ্গে নজরুল ইসলামের মন্তব্যটিও প্রণিধানযোগ্য।

কিন্তু আমি যেহেতু লেখার শানে নজুল কিছুটা জানি, ( মানে ফেসবুকে আমার লেখা এবং সেই লেখার প্রতিক্রিয়ায় আপনার লেখা ইত্যাদি) আপনার লেখার সূত্রগুলোকে এক করেই বলি।

মহসিন ঢালী ব্যক্তি হিসেবে সফল, তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা।

কিন্তু মহসিন ঢালীর গল্প, আপনার মূল বক্তব্যকে আমার কাছে পরিস্কার করে নি।

মহসিন ঢালী একজন সংগ্রামী মানুষ। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, একই ধরণের সংগ্রামী মানুষ কিন্তু মহসিন ঢালীর সেই হকার বন্ধুটিও। তিনি এখন দেশের অন্যতম উদ্যোক্তা, মতিঝিল থেকে পার্টস এনে বিক্রী করার বুদ্ধি দিয়েই তিনি এগিয়ে গেছেন। সম্মান তাঁরও প্রাপ্য। মহসিন ঢালী যেরকম তাঁর কোম্পানির সিইও, সেই সাবেক হকার বন্ধুটিও তাই। এই পাল্লায় দুজনই সমান।

আপনি লিখেছেন,

মহসিন ঢালী সাহেব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় উৎপাদিত ইঞ্জিনিয়ার, আমাদের দার্শনিক, আমাদের সমাজকর্মীদের মতো চাকুরীর জন্য মানুষের দ্বারে দারে ঘুরেন নি!

তবে একটু পরেই আবার জানতে পারছি যে তিনি আক্ষরিক অর্থেই এই ঢাকা শহরে বাটার বন খেয়ে দ্বারে দ্বারেই চাকুরির জন্য ঘুরেছেন এবং পেটে ভাতে চাকুরিও করেছেন।

-
আপনি ফেসবুকের যে নোটটিকে এখানে প্রসঙ্গ হিসেবে টেনেছেন, সেই নোটের টোনের সঙ্গে এই লেখাটিকে সম্পৃক্ত করে আমার মনে হয়, মহসিন ঢালীর গল্প আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্রয়োজনীয়তা নয়, বরং প্রয়োজনীয়তাই পরিস্কার করে বলে।

মহসিন ঢালী ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে কাজ করেন, তিনি নিজ উদ্যোগে এ বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।

কিন্তু আমার তো মনে হয় তিনি যদি এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতেন, তাহলে বরং আরো কম উদ্যমে তিনি সমপরিমান দক্ষতা লাভ করতে পারতেন।

ধরুন, আমি বুয়েটের একটা ডিগ্রীর যে বইগুলো পড়ানো হয়, সেই বইগুলো কিনে এনে মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, নিজের মতো করে বুঝতে চেষ্টা করলাম, নেট এবং অন্যান্য সূত্র থেকে সাহায্য নিয়েও খুব মন দিয়ে পড়লাম; নিঃসন্দেহে আমার একটা দক্ষতা তৈরী হবে, কিন্তু সেই দক্ষতা বুয়েট থেকে পাশ করা একজন গড় মানের ইঞ্জিনিয়ারের সমান হবে না বলেই আমার ধারণা। কারন প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় জ্ঞানকে সন্নিবেশিত করা হয় এবং পদ্ধতিগত চর্চার মাধ্যমে সেগুলো শিক্ষার্থীর মাঝে বিকশিত হয়। এ কারনেই পদ্ধতিগত পড়াশোনা বেশি প্রয়োজন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরিফ ভাই, আপনার সমালোচনা মাথা পেতে নিচ্ছি, তবে আমি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটা একটু নিতে চাই।

আপনি যখন বলছেন

কিন্তু মহসিন ঢালীর গল্প, আপনার মূল বক্তব্যকে আমার কাছে পরিস্কার করে নি।

ধরে নিচ্ছি আপনি আমাদের পূর্বের আলোচনার সূত্র ধরেই বলছেন। আসলে আমি পূর্বের লেখা থেকে আলাদা করে এই লেখাটিকে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই সফল একজন সাধারণ মানুষের গল্প হিসেবেই দেখাতে চেয়েছি।

মহসিন ঢালী সাহেব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় উৎপাদিত ইঞ্জিনিয়ার, আমাদের দার্শনিক, আমাদের সমাজকর্মীদের মতো চাকুরীর জন্য মানুষের দ্বারে দারে ঘুরেন নি!

হুম এখানে আসলে একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল, আপনার মন্তব্য'র পর বুঝতে পারছি। এখানে আমি শিক্ষা লাভের পরবর্তী অবস্থার কথা বলেছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবার পরও একজনকে চাকুরীর জন্য মানুষের কাছে যেতে হয় কিন্তু মহসিন সাহেবের মতো হাতে কলমে শিক্ষায় শিক্ষিত যারা হন তারা নিজেরাই একটি প্রতিষ্ঠান খুলে কাজ শুরু করতে পারেন। পার্থক্যটা এখানেই। এর কারন ও স্পষ্ট, তা হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক শিক্ষার উপযোগী কর্মসংস্থান আমাদের দেশে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষ কি শিখে? একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এর কথাই ধরুন, বিশ্ববিদ্যালয় তাকে শেখাচ্ছে একটা অপারেটিং সিস্টেম কি করে কাজ করে, এই তত্ত্ব দিয়ে সে যেন আরো একটা নতুন অপারেটিং সিস্টেম তোইরী করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে যেহেতু সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ওভাবে ডেভেলপ করেনি, আমাদের ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুটির যথাযথ চাকুরীও নেই। আমাদের দেশে কি আছে? আমাদের দেশে আছে কম্পিউওটার এসেম্বলিং ও অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটলেশন এর কাজ যে কাজের জন্য একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক প্রয়োজন নেই, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারই যথেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ, চিন্তাবিদ তৈরী করা, দার্শনিক তৈরী করা, বিজ্ঞানী তৈরী করা। শ্রমিক তৈরী করা নয়! হোক তা প্রযুক্তি বা সেলাইকল শ্রমিক!

কিন্তু আমার তো মনে হয় তিনি যদি এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতেন, তাহলে বরং আরো কম উদ্যমে তিনি সমপরিমান দক্ষতা লাভ করতে পারতেন।

এ বিষয়ে আপনার সাথে দ্বিমত করতে পারছি না, তবে সেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নয়। আপনি আরিফ জেবতিক, সফল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, কতজন এমন সফল ব্যবসায়ী কে আপনি চেনেন যারা ব্যাবসায় প্রশাসন বা টেক্সটাইলে পড়াশোনা করে এসেছেন? তাদের হার কেমন?


কারন প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় জ্ঞানকে সন্নিবেশিত করা হয় এবং পদ্ধতিগত চর্চার মাধ্যমে সেগুলো শিক্ষার্থীর মাঝে বিকশিত হয়। এ কারনেই পদ্ধতিগত পড়াশোনা বেশি প্রয়োজন।

এখানেও আপনার সাথে আমার দ্বিমত নেই, তবে এটা আমাদের দেশের জন্য সত্য নয়, আমি আমাদের দেশের ভুড়ি ভুড়ি ইঞ্জিনিয়ার দের উদহারন দেখাতে পারবো যাদের চাইতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীনরা অনেক ভালো কাজ করছেন। ঠিক এই মূহুর্তে আমি লিখছি অভ্র দিয়ে যা ডিজাইন করেছে একজন ডাক্তার। এটা আমাদের ইঞ্জিনিয়ার দের দোষ নয়, এটা আমাদের শিক্ষার দোষ। আমাদের যা দরকার তা পড়ানো হচ্ছে না, যা দরকার নেই তাই পরানো হচ্ছে!

আপনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি, আপনার সমালোচনা আমার পরবর্তী লেখার সময় সতর্ক হতে সাহায্য করবে।

আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নয়, একথা সত্যি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে শিক্ষার এই শ্রেনী বিভাজিত প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরী হয়নি, একারনেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়মুখীতা বহাল।
আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানও নেটে তাদের গবেষনা রিপোর্ট প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বনানীর ড্রইংরুম কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। হয় এদের গবেষনা নেই অথবা এরা নেট ব্যবহার করতে পারে না!

গবেষনার অবারিত সুযোগ রেখে এদেশে বোধহয় একটা মহা-বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করা এখন খুবই জরুরী, যেখানে শুধু পোস্ট গ্রাজুয়েট পড়ানো হবে এবং গবেষনা করা হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

"প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নয়, একথা সত্যি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে শিক্ষার এই শ্রেনী বিভাজিত প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরী হয়নি, একারনেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়মুখীতা বহাল।"

এই একই সমস্যা'র কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে গেছে কেরানী তৈরীর খামার আর আমরা গ্র্যাজুয়েট রা হচ্ছি- 'না হাউল্লা, না জাউল্লা'।

আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানও নেটে তাদের গবেষনা রিপোর্ট প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বনানীর ড্রইংরুম কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। হয় এদের গবেষনা নেই অথবা এরা নেট ব্যবহার করতে পারে না!

দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই- গতকাল একজন বুয়েটিয়ান মেধাবীকেও(স্কলারশীপ নিয়ে আমাদের এখানে পড়তে আসা) দেখলাম yahoo id নিয়ে কি করতে হবে তা আবার জিজ্ঞেস করছে এক বিদেশীকে!

গবেষনার অবারিত সুযোগ রেখে এদেশে বোধহয় একটা মহা-বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করা এখন খুবই জরুরী, যেখানে শুধু পোস্ট গ্রাজুয়েট পড়ানো হবে এবং গবেষনা করা হবে।

হা হা হা! মহা-বিশ্ববিদ্যালয় করুন আর বিশ্ব-বিশ্ববিদ্যালয় করুন কোনো লাভ নেই! সেই মহা-বিশ্ববিদ্যালয়ও আবার কেরানীই তৈরী করবে যদি না আমরা শরীরের মাপ ছাড়াই কোট কাটি!

অনেক ধন্যবাদ আরিফ ভাই!

অতিথি লেখক এর ছবি

হয় এদের গবেষনা নেই অথবা এরা নেট ব্যবহার করতে পারে না!

এখন তো সব গবেষণা পত্রের প্রিন্ট এবং অনলাইন উভয় ভার্সন থাকে। প্রিন্ট হিসেবে প্রকাশের জন্য সাবমিট করা হলেও প্রিন্ট ও অনলাইন উভয় ভাবেই তা প্রকাশ করা হয়ে থাকে যাতে সবাই সহজে সেটা ডাউনলোড করতে পারে। অনালাইনের জন্য আলাদা করে সাবমিটও করতে হয় না। তাছাড়া এখন অনলাইনের আগের যুগের গবেষণা পত্রগুলোর অনেকগুলো এখন স্ক্যান করা ডকুমেন্ট হিসেবে পাওয়া যায়। কাজেই হিসেবে দাঁড়ায় যে এদের আসলে কোন গবেষণাই নেই, অন্তত প্রকাশযোগ্য গবেষণা তো নাই-ই।

এসব খোঁড়া যুক্তি শুনে কেবল হাসি পায়, যেসব শিক্ষকেরা এসব অজুহাত দেন, তারা কি আদৌ গবেষণা জগতের কোন খোঁজ রাখেন?
-শিশিরকনা-

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অজুহাতের সমর্থন করছি না, তবে এর পক্ষে একটা যুক্তি দেই। গবেষণা কিছু হলেও আছে, কিন্তু সেগুলো যেসব জার্নালে প্রকাশিত হয় তাদের অনলাইন ভার্সন নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন জার্নালেরই অনলাইন ভার্সন নেই। অথচ ব্র্যাক বা এআইইউবি'র জার্নালের অনলাইন ভার্সন আছে। মানের দিক থেকে এই জার্নালগুলো সম্ভবত একই ক্যাটাগরির। উল্লেখ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, তবে এখান থেকে একটি জার্নাল প্রকাশিত হয় যার অনলাইন ভার্সন আছে। সেখানে অবশ্য অধিকাংশ আর্টিকেলই বিদেশী।

সার্ভে যারা করেছে তারা অনলাইনে প্রকাশিত জার্নাল-আর্টিকেলের তালিকা থেকেই এই তালিকা করেছে মনে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি বুয়েটে পড়েছি, আমার বাবা পড়েন নাই। তিনি নিজে নিজে বই পত্র কিনে যন্ত্রপাতি কিনে নিজের উৎসাহে ইলেক্ট্রনিক্স শিখেছেন। আমি বুয়েটে কেবল থিওরী কপচানো শিখেছি, কিন্তু আমার বাবা তার নিজলব্ধ জ্ঞান ব্যাবহার করে বিভিন্ন প্রডাক্ট ডিজাইন করেছেন, করছেন, স্বল্প পরিসরে সেগুলো বানিজ্যিকভাবে বিক্রিও করেন। ইলেক্ট্রনিক্স আমার চে' আমার বাবা অনেক অনেক ভালো বুঝেন, থিওরীগুলোও বুয়েটের শিক্ষকদের থেকে তিনি আমাকে অনেক ভালো ভাবে বুঝিয়েছেন।

আমি সময় সুযোগ পেলে থিওরী গুলো আবার হাতে কলমে, ভুল করে ভুল শুধরে শিখতে চাই। পদ্ধতিগত শিক্ষা ক্রিয়েটিভিটি, কৌতুহলকে দমন করে রাখে। বিজ্ঞান/ ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে হয় প্রশ্ন করে, ট্রায়াল এবং এরর এর মাধ্যমে, মুখস্ত করে না। নিজে শিখলে ইচ্ছামত এক্সপেরিমেন্ট করার স্বাধীনতা পাওয়া যায়, দুই একটা কম্পোনেন্ট পুড়ায় ফেললেও সমস্যা নাই, বরং কেন পুড়ল, কি করলে সেটা হবে না আরো অনেক খুটিনাটি শেখা যায়। বুয়েটের সিলেবাসের ৪/৫ টা বাধা ধরা সেশনালে ২-৩ ঘন্টায় তার কিছুই হয় না। আপনি অনেকটা মুখস্ত শিখবেন কোন জিনিস কেন কিভাবে কাজ করে।
মহসিন ঢালীর উদ্যোগ দেখে উৎসাহিত হলাম।

-শিশিরকণা-

অতিথি লেখক এর ছবি

"পদ্ধতিগত শিক্ষা ক্রিয়েটিভিটি, কৌতুহলকে দমন করে রাখে। বিজ্ঞান/ ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে হয় প্রশ্ন করে, ট্রায়াল এবং এরর এর মাধ্যমে, মুখস্ত করে না। নিজে শিখলে ইচ্ছামত এক্সপেরিমেন্ট করার স্বাধীনতা পাওয়া যায়, দুই একটা কম্পোনেন্ট পুড়ায় ফেললেও সমস্যা নাই, বরং কেন পুড়ল, কি করলে সেটা হবে না আরো অনেক খুটিনাটি শেখা যায়। বুয়েটের সিলেবাসের ৪/৫ টা বাধা ধরা সেশনালে ২-৩ ঘন্টায় তার কিছুই হয় না। আপনি অনেকটা মুখস্ত শিখবেন কোন জিনিস কেন কিভাবে কাজ করে।
মহসিন ঢালীর উদ্যোগ দেখে উৎসাহিত হলাম। "

আপনার এ কথাগুলো অনেকেই মানতে নারাজ। তবে আমি বিশ্বাস করি, অন্ততঃ মহসিন ঢালীকে দেখার পর বিশ্বাস করি যে কোনো মানুষ চাইলে প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শিখতে পারে।

মহসিন ঢালী আমাদের সহ যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত তাঁদের সকলেই অনুপ্রেরণা হোন!

অতিথি লেখক এর ছবি

যারা কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পথে হেটেছেন, তারা অবশ্যই তার পক্ষে জোর গলায় বলবেন। যে দুই পথেই হেটেছে, সেই আসলে তুলনা করতে পারবে, কোনটা ভালো, বা দুই পথের সুবিধা অসুবিধা। আমার মতে প্রাতিষ্টানিক শিক্ষার সমস্যা হচ্ছে বাধা ধরা সিলেবাস আর সেমেস্টার বা নির্ধারিত সময়। আপনার আগ্রহ থাকলেও আপনি ঐ নির্ধারিত পথের বাইরে চলার সময় বা সুযোগ পাবেন না। আর সুবিধা হচ্ছে শিক্ষকের উপস্থিতি। অর্থাৎ একজন গুরু পাচ্ছেন, যে আপনাকে জিনিসটা বুঝতে সাহায্য করছেন। তাকে আপনি প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছেন। অন্য পথের সুবিধার কথা আগেই বলেছি। যেকোন বিষয়কে বুঝতে তার ডানে বামে, আগে পিছে যেভাবে খুশি যতক্ষণ খুশি আপনার সময় ও শ্রম ব্যয় করার স্বাধীনতা আছে। প্রয়োজনে আপনি অভিজ্ঞ কাউকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন। আপনার পরীক্ষা পাসের দরকার নাই, নম্বর নিয়ে ভাবার দরকার নাই।
দুটার তুলনা করলে বলতে হবে, আপনি একটা বনের ভিতর দিয়ে বাধানো রাস্তা ধরে একটা ১০ দিনের গাইডেড ট্যুর নিলেন। আপনার বন যতখানি চেনা হল, তার চে আরেকজন যে বনের মাঝে একা একা হাটা পথে কাদা মেখে, পাখির ডাক শুনে, বাঘের পায়ের ছাপ দেখে , বিছুটির জ্বলুনি লাগিয়ে বন পেরিয়ে এল, সে বন কে অনেক বেশি চিনতে পারবে।

মহসিন ঢালী সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন না, তাই তার বিশাল ল্যাব, এর দরকার নাই। প্রচলিত , প্রমাণিত প্রযুক্তিকে আত্মস্থ করে কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহ আর উদ্যমই যথেষ্ট। তার যেটা সাফল্য তা হলো বাংলাদেশে ইলেক্ট্রনিক্স একটা ফার্ম তিনি বানিজ্যিকভাবে চালাতে পারছেন। ইলেক্ট্রনিক্স চর্চা বাংলাদেশে যে এত অবহেলিত, যারা এটাকে পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহী, তাদের বিদেশে সুযোগ খুঁজতে হয়। তার উদ্যোগ দেখে আমি ব্যাক্তিগতভাবে খুবই উদ্বেলিত হলাম, হয়ত আমিও তাহলে দেশে ফিরে দেশে বসে ইলেক্টনিক্স নিয়ে কাজ করেও দু'মুঠ ভাত জোটাতে পারব।

অটঃ লেখক, মহসিন ঢালীর সাথে যোগাযোগের তথ্য কি দেয়া সম্ভব? আমি আমার বাবার সাথে তার যোগাযোগ করিয়ে দিতে চাই। দুজনে মোটামুটি একি পথের পথিক।

-শিশিরকণা-

অতিথি লেখক এর ছবি

শিশিরকণা,

"দুটার তুলনা করলে বলতে হবে, আপনি একটা বনের ভিতর দিয়ে বাধানো রাস্তা ধরে একটা ১০ দিনের গাইডেড ট্যুর নিলেন। আপনার বন যতখানি চেনা হল, তার চে আরেকজন যে বনের মাঝে একা একা হাটা পথে কাদা মেখে, পাখির ডাক শুনে, বাঘের পায়ের ছাপ দেখে , বিছুটির জ্বলুনি লাগিয়ে বন পেরিয়ে এল, সে বন কে অনেক বেশি চিনতে পারবে। "

উদহারণটা চমৎকার লাগলো! আমার মাথায় কেন আসলো না! মহসিন ঢালী সাহেবের সময় হয়তো একটূ বেশি লেগেছে কিন্তু "কাদা মেখে, পাখির ডাক শুনে, বাঘের পায়ের ছাপ দেখে , বিছুটির জ্বলুনি লাগিয়ে বন পেরিয়ে এল"।
এ শিক্ষার তো তুলনাই হয়না!

শিশিরকণা, আমার কাছে মহসিন ঢালী সাহেবের ঠিকানা ফোন নাম্বার বিস্তারিতই আছে, আপনি আমাকে কাইন্ডলি একটা ই-মেইল এড্রেস দিবেন? আমি মেইল করে দিচ্ছি আপনাকে!

ভালো থাকবেন।

কাজী মামুন

মহসীন ঢালী [অতিথি] এর ছবি

ভাই শিশির কণা, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ এবং অনুপ্রেরনার উৎস হয়ে থাকল।

আমার যোগাযোগের ঠিকানা:

মহসীন ঢালী
২০৮/১৮৭,আমজাদা আলী রোড
গ্রাম:পূর্ব শ্রীরামদি
পো:পুরানবাজার-৩৬০১
জেলা:চাদঁপুর

মোবাইল:০১৭১৬০২৮০২১

ঢাকার ঠিকানা:(মাসে এক সপ্তাহ্ ঢাকায় থাকা হয়)
Mohsin Dhali
Speed Power Ltd.
152/1,Green Road(1st floor), Pantha path
Dhaka-1205
web:http://www.speedips.com

হাসিব এর ছবি

ঢালী সাহেবের অর্জনকে শ্রদ্ধা।

এবার লেখা নিয়ে মন্তব্য করি।

১.

প্রথমে যে ইটালিক প্যারাগ্রাফ রয়েছে সেটা ধরে নিচ্ছি আপনি ঢালী সাহেবের বক্তব্য থেকে হুবহু তুলে ধরতে পেরেছেন। ওখানে দেখছি লেখা আছে-

এছাড়াও অ্যাডলম্যান আও কিছু চমক সৃষ্টি করেছেন। কোনও সংখ্যা মৌলিক কিনা তা নিশ্চিত বা Deterministic প্রমান করা সম্ভব-গত ২ হাজার বছর ধরে প্রচলিত এই তথ্যটিকে পরাজিত করে তিনি সংখ্যাতত্ত্বের Probability theory প্রমান করলেন যে,কোনও সংখ্যা মৌলিক কিনা তার প্রমান probability থেকেও পাওয়া যায়। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে uncertinity মৌলিক সংখ্যার প্রমাণ।

দ্বিতীয় লাইনটা পড়ে যেটা বুঝলাম সেটা হলো ২ হাজার বছর ধরে একটা ধারনা ছিলো এরকম যে কোন সংখ্যা মৌলিক কিনা সেটা "deterministic"ভাবে প্রমান করা যায় এই ধারনাকে আডেলমান ভুল প্রমান (বা ঢালি সাহেবের ভাষায় পরাজিত) করেছেন। আদতে তথ্যটি সঠিক নয়। আডেলমান, পোমেরান্স ও রুমেলি নামে তিনজন ১৯৮৩ সালে Annals of Mathematics নামে এক কুলীন জার্নালে এই বিষয়ে যে প্রবন্ধটি প্রকাশ করেন সেটা পড়ে দেখলাম তাঁরা সেখানে বলছেন, "We give two versions of algorithm, one probabilistic, the other deterministic, each of which has a running time bound of the above form". সুতরাং আডেলমান ও তাঁর কোঅথররা দুটো পদ্ধতিই দেখিয়েছেন। একটি দিয়ে আরেকটিকে পরাজিত করেননি এটা পরিস্কার।

ঢালী সাহেব এরপর বলছেন, সংখ্যাতত্ত্বের Probability Theoryর কথা। প্রবাবিলিটি থিওরী কি সংখ্যাতত্ত্বের সাবসেকশন? মনে হয় না। প্রবাবিলিটি থিওরীর সাথে মেজার থিওরি, ক্যালকুলাস থিওরীর সম্পর্ক আছে। কিন্তু নাম্বার থিওরী থেকে প্রবাবিলিটি থিওরী এসেছে এমনটা ভাবতে পারছি না। যাই হোক, ওখানে দেখলাম উনি বলছেন আডেলমান দেখিয়েছেন কোন সংখ্যা মৌলিক কিনা তার প্রমান Probability থিওরী থেকেও পাওয়া যায়। আদতে বিষয়টা এভাবে বললে সঠিক হবে না। আডেলমান et.el. এর পেপারে দুই ধরনের এ্যালগরিদমেই তিনটা স্টেপের কথা বলা হয়েছে। ১. প্রিপারেশন স্টেইজ ২. এক্সট্রাকশন স্টেইজ ৩. কনসোলিডেশন স্টেপ। এখানে দ্বিতীয় স্টেজে এসে বের করতে হয় ক্যালকুলেটেড নাম্বারটা কম্পোজিট কিনা। ওটা কম্পোজিট হলে এবং সিউডো টেস্টগুলো পাস করলে তৃতীয় স্টেজে ওটাকে ফ্যাক্টর করা হয়। সংখ্যাটা যদি প্রাইম হয় তাহলে এ্যালগরিদমটা টারমিনেট করবে একটা নির্দিষ্ট স্টেপের পর। এই [i] টার্মিনেশনের প্রবাবিলিটির এক্সপ্রেশনটা আডেলমান দেখিয়েছেন। তো দেখা গেল নাম্বারটা প্রাইম কিনা সেটা নির্ধারণে প্রবাবিলিটির কোন ভূমিকা নেই। এবং uncertainty মৌলিক সংখ্যার প্রমান বলে যা বলছেন ঢালী সাহেব সেটা আসলে ঠিক নয়। আডেলমানের কাজ ছিলো মৌলিক সংখ্যা বের করা এ্যালগরিদম নিয়ে। সংখ্যাটা মৌলিক কিনা সেটা নিয়ে নয়।

২.

আপনি বলছেন,

লক্ষ লক্ষ ড. কাজী মামুন, ড. আজিজুল হক তৈরী করে দেশের কোনো কাজ নেই, কোনো লাভ নেই! লাভ যদি করতেই হয় তাহলে গ্রামে গ্রামে অন্ততঃ একজন করে মহসিন ঢালী তৈরী করতে হবে!”

পুরোপুরি ভিন্নমত আমার। প্রথমত, লক্ষ লক্ষ কাজী মামুন, আজিজুল হক (এর কারা? বৈজ্ঞানিক ধরে নিচ্ছি।) সৃষ্টি ও প্রতিগ্রামে একজন মহসিন ঢালী সৃষ্টি মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ বিষয় নয়। দুইটাই হতে পারে এবং সেটাই মঙ্গল।

৩.

ঢালী সাহেব বলছেন,

একটি বিষয়ে মনে হয় আপনি দ্বিমত পোষন করবেন না যে, পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডার সকলের জন্য উম্মোক্ত। যে কেউ চাইলে যে কোন বিষয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন অদম্য আগ্রহ ও কৌতূহল। আমি এটিও বিশ্বাস করি যে , মানুষের মস্তিষ্ক প্রচন্ড ক্ষমতার অধিকারী। একটি মানুষ বহুপ্রতিভার অধিকারী হতে পারে।”

ভুল কথা। এবং এক ধরনের বিপদজনক রোমান্টিক চিন্তা। পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডার সবার জন্য উন্মুক্ত না। বিজ্ঞান শিক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার বিকল্প নেই। এবং সেই পড়ালেখার জন্য শুধু বই হলেই হয় না। বিশালাকারের ল্যাবোরেটরি লাগে। সেইটার জন্য ফান্ড লাগে। অন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোলাবোরেশন লাগে। এগুলো ছাড়া মানুষের প্রচন্ড ক্ষমতা দিয়ে কিছু হয় না।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসিব ভাই, শুরুতেই আপনাকে ধন্যবাদ। এমন ডিটেলস সমালোচনা নিঃসন্দেহে আমার জন্য মঙ্গলজনক। এবার আত্মপক্ষ সমর্থন-
প্রথম প্যারাটির পরপরই আমি একটি লাইন যুক্ত করেছিলাম-

"কথাগুলো বলছিলেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিহীন একজন আটপৌরে সাধারণ মানুষ, মহসিন ঢালী"

এই প্যারাটি আমি তত্ত্বের সত্যাসত্য'র জন্য দেই নি। দিয়েছিলাম তাঁর ভাবনার গভীরতার প্রকাশ হিসেবে। অ্যাডলম্যান কে আপনি চিনেন, আমি চিনি, কিন্তু আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা ক'জন চিনি! সুতরাং প্রথম প্যারা নিয়ে আমি নিজের কোনো মতামত দিব না, মহসিন ভাই হয়তো নিজেই এসে বলতে পারেন যদি তাঁর ভিন্নমত থাকে কিছু, অথবা তাঁর কাছ থেকে শুনে তাঁর কথাটাই বলবো পরে।

লক্ষ লক্ষ কাজী মামুন, আজিজুল হক (এর কারা? বৈজ্ঞানিক ধরে নিচ্ছি।) সৃষ্টি ও প্রতিগ্রামে একজন মহসিন ঢালী সৃষ্টি মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ বিষয় নয়।

কাজী মামুন, আজিজুল হক হলো আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে দেশে কাজ করার সুযোগের অভাবে বা উচ্চাকাঙ্খী হয়ে বিদেশ পলাতক মেধাবীদের প্রতিনিধি। আসলে এখন বুঝতে পারছি আগের লেখার সূত্রটা দেয়া উচিত ছিল। এডিট করার সুযোগ থাকলে জুড়ে দিতাম।

পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডার সবার জন্য উন্মুক্ত না। বিজ্ঞান শিক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার বিকল্প নেই।

এ ব্যাপারে আপনার সাথে আমিও সহমত পোষণ করছি, তবে, ঢালী সাহেব সম্ভবত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও প্রযুক্তিগত জ্ঞান লাভের সম্ভাব্যতার কথা বলছিলেন। সাফল্য'র প্রমান তো তিনি নিজেই। আমি তাঁর লাইন যেহেতু কোট করেছি এজন্য আর এডিট করিনি, তবে আমার প্রশ্নটা ছিল এমনই, যার উত্তরে তিনি বলছিলেন।

একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি আপনাদের সমালোচনা আমার জন্য অতি আবশ্যক। যেমন এখন লেখা এডিট করার সুযোগ থাকলে আমি বেশ কিছু জিনিস পরিবর্তন করে নিতাম।
তাঁর গল্প আরো বাকি থাকলো, লিখবো।

ধন্যবাদ আবারও!
ভালো থাকবেন।

হাসিব এর ছবি

  • কারো নাম জেনে সেই বিষয়ে ভুলভাল বলাটা ঠিক চিন্তাভাবনার গভীরতার প্রকাশ নয়। এগুলো মিসলিডিং এবং ভুল ইমেজ দাড়া করাতে পারে। আর শিক্ষিত হয়ে আডেলমানের নাম জানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। আমি যে ফিল্ডে কাজ করি সে জায়গার রথি মহারথিদের নাম ও তাদের কাজ সম্পর্কে জানলেই যথেষ্ট।
  • যারা দেশে সুযোগের অভাবে বিদেশে গিয়ে কাজ করছে তাদের পলাতক বলাটা আপত্তিকর। দেশের বাইরে থেকেও দেশের কাজ করা যায়।
  • প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছাড়াও প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞানের ব্যাপারে ঢালি সাহেব যে খুব সফল সেটা আমি মনে করি না। উনি কোন রকেট সায়েন্স নিয়ে কাজ করছেন না। কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক কাজকর্মের মধ্যে পার্থক্য আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাষাই আপন করে আবার সেই ভাষাই করে পর

সম্ভবতঃ সৈয়দ হক এর লাইন।

আমি যা বুঝতে পারছি আপনি যাকে ভুল বলে ভাবছেন তা অনেকটাই ভাষাগত সমস্যা। আমি বলছিলাম যে, প্রথম প্যারা নিয়ে আপনার উত্ত্বাপিত সমস্যাগুলো নিয়ে আমি কথা বলবো না, তবে মহসিন সাহেবের ব্যস্ততার ফাঁকে আমি আপাতত একটা স্ট্যান্ড নিতে চাই।

এবার আমি আপনি যে ভুলগুলো ধরেছেন- সেগুলো ভাষাগত ভাবে একটু ঠিক করি।

"এছাড়াও অ্যাডলম্যান আও কিছু চমক সৃষ্টি করেছেন। কোনও সংখ্যা মৌলিক কিনা তা নিশ্চিত বা Deterministic প্রমান করা সম্ভব-গত ২ হাজার বছর ধরে প্রচলিত এই তথ্যটিকে পরাজিত করে তিনি সংখ্যাতত্ত্বের Probability theory প্রমান করলেন যে,কোনও সংখ্যা মৌলিক কিনা তার প্রমান probability থেকেও পাওয়া যায়। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে uncertinity মৌলিক সংখ্যার প্রমাণ।"

একে আপনি যা বুঝতে পারছেন(নিজের মতো করে) তা হলো- deterministic theory কে ভুল প্রমান, আসলে তা নয়। আসলে যা তা হলো- কোনও সংখ্যা মৌলিক কিনা তা শুধুমাত্র নিশ্চিত বা Deterministic প্রমান করা সম্ভব-গত ২ হাজার বছর ধরে প্রচলিত এই তথ্যটিকে পরাজিত করে তিনি সংখ্যাতত্ত্বের Probability theory প্রমান করলেন যে,কোনও সংখ্যা মৌলিক কিনা তার প্রমান probability থেকেও পাওয়া যায়।
এখানে মহসিন সাহেব 'শুধুমাত্র' শব্দ টি লিখেন নি বলে তা আপনার কাছে ভুল মনে হয়েছে, তবে আমি বুঝতে পারছিলাম কারণ, একই লাইনে 'probability থেকে'র সাথে একটা 'ও' আছে। যা বোঝায় যে এই probability theory'ই একমাত্র নয়।

ঢালী সাহেব এরপর বলছেন, সংখ্যাতত্ত্বের Probability Theoryর কথা। প্রবাবিলিটি থিওরী কি সংখ্যাতত্ত্বের সাবসেকশন? মনে হয় না। প্রবাবিলিটি থিওরীর সাথে মেজার থিওরি, ক্যালকুলাস থিওরীর সম্পর্ক আছে। কিন্তু নাম্বার থিওরী থেকে প্রবাবিলিটি থিওরী এসেছে এমনটা ভাবতে পারছি না।

এবার আপনি ভুল বলছেন। Probability এবং Number Theory'র মধ্যে সম্পর্ক আছে। ১৯৯৭ সালে Algorithms Seminar এ Jean-Marc Deshouillers তা দেখিয়ে গেছেন। ঢালী সাহেব সে সম্পর্কের কথাই হয়তো বলছিলেন যেখানে আপনি কোনো সম্পর্ক থাকার ব্যাপারটাই আস্বীকার করছেন।

এবার আমি আপনার-

কারো নাম জেনে সেই বিষয়ে ভুলভাল বলাটা ঠিক চিন্তাভাবনার গভীরতার প্রকাশ নয়।

লাইনটার বিরোধীতা করবো। যে জানে সেই ভুলভাল বলার অধিকার রাখে, কোনো মানুষের ভাষাগত দুর্বলতা কে ঠিক ভুলভাল বলে তুচ্ছ করার অহং ও ঠিক শোভনীয় নয়।

আপনি বলছেন-

যারা দেশে সুযোগের অভাবে বিদেশে গিয়ে কাজ করছে তাদের পলাতক বলাটা আপত্তিকর। দেশের বাইরে থেকেও দেশের কাজ করা যায়।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত লেখার রেফারেন্স আমি ইতিমধ্যে আপনাকে দিয়েছি, কে কিভাবে কাজ করছে সেই আলোচনাও আছে সেখানে। এখন আপনি যদি না দেখেন, তাহলে আমার কি করার আছে বলুন!

আপনি বলছেন-

প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছাড়াও প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞানের ব্যাপারে ঢালি সাহেব যে খুব সফল সেটা আমি মনে করি না।

সাফল্য'র মাপকাঠি একেক জনের কাছে একেক রকম, তবে আমি মনে করি ঢালী সাহেব সফল কারণ, আমার মতো অসংখ্য কাজী মামুন দেশের সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পড়াশোনা করে বিদেশে এসে এখন শ্রম দিচ্ছে, দেশের জন্য প্রতিদান হলো শুন্য। "আপনি বলবেন ক্ষতি কি? বিদেশে গিয়ে রেমিটেন্স...! আমি বলবো না রেমিটেন্সই সব না, আর হিসেব করে দেখুন রেমিটেন্স এর কত টাকা সাধারন শ্রমিকরা পাঠায়, আর কত টাকা শিক্ষিত মেধাবীরা পাঠায়! মেধাবীদেরও দোষ নেই এতে, বিদেশে মেধাবীদের আর শ্রমিকদের বেতনে খুব বেশি পার্থক্য নেই, কিন্তু মেধাবীদের আবার 'স্টেটাস মেইনটেইন' করে চলতে হয়, বাড়ি গাড়ি করতে হয়! একজন সাধারন শ্রমিকের ১৫০০ ডলার এর বেতনের ৫০০ ডলার খরচেই চলে যায়! কিন্তু একজন মেধাবীর ২০০০ ডলার বেতনের প্রায় সবটাই যায় তার খরচে!"
সেই হিসেবে, আমি হাসিব মাহমুদ কে চিনি না তবে এটুকু বলতে পারি একজন কাজী মামুনের চাইতে মহসিন ঢালী অনেক বেশি সফল।

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন!

কাজী মামুন

দ্রোহী এর ছবি

মহসিন ঢালীকে শ্রদ্ধা জানাই।

লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেকক্ষণ ঘ্যান ঘ্যান করতে পারব। আপাতত সেদিকে না গিয়ে শুধু বলতে চাই মহসিন ঢালীর অনুপ্রেরণা ও লেগে থাকাটা উদাহরণযোগ্য।


কি মাঝি, ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

সময় নষ্ট করে নয়, অবসর থাকলে আপনার পক্ষ বা বিপক্ষের 'ঘ্যান ঘ্যান' আলোচনা শুনতে চাই।

মহসিন ঢালীর জন্য শুভকামনা, ভালো থাকবেন।

কাজী মামুন

মাহে আলম খান এর ছবি

দ্রোহী লিখেছেন:

লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেকক্ষণ ঘ্যান ঘ্যান করতে পারব।

ভালো বলছেন। সহমত!
ঢালী সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা। গল্পের পরবর্তী অংশ শোনার অপেক্ষা রইলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।