শুরু করি সক্রেটিস দিয়ে। সক্রেটিসের খুব বিখ্যাত উক্তি, “আমি কিছুই জানি না”। তার মানে তিনি এটা জানেন যে, তিনি কিছু জানেন না। তাহলে তিনি কিছু জানেন না, সেটা মিথ্যা।
সক্রেটিসের কথা থেকে আসি, আমাদের হালের জমানার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড এইচ. রামসফেল্ডের কথায়। অনেক ঢাক ডোল পিটিয়ে যখন ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া গেল না, এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসলেন এতো গণবিধ্বংসী অস্ত্র কোথায় গেল। রামসফেল্ডের জবাবটি ছিল এরকম,
“কিছু ব্যাপার আছে, যা আমরা জানি যে আমরা জানি। আবার কিছু ব্যাপার আছে, আমরা জানি যে আমরা জানি না। কিছু ব্যাপার আছে, আমরা জানি না যে আমরা জানি। আর কিছু ব্যাপার আছে, আমরা জানি না যে আমরা জানি না। এ ব্যাপারটা হচ্ছে সে ব্যাপারগুলোর একটি।” কে কে এর মানে বুঝতে পারলেন হাত তুলেন।
রামসফেল্ড থেকে আসি লায়ার্স প্যারাডক্সে। অনেকগুলো লায়ার্স প্যরাডক্সের মধ্যে একটি হচ্ছে - "পরের কথাটি মিথ্যা। প্রথম কথাটি সত্যি"। ধরে নিলাম, প্রথম বাক্যটি সত্যি। তাহলে দ্বিতীয় বাক্যটি মিথ্যা। দ্বিতীয় বাক্যের ভাষ্যমতে প্রথম বাক্য সত্যি; তার মানে প্রথম বাক্যটি মিথ্যা।
এবার ধরে নেই প্রথম বাক্যটি মিথ্যা, তাহলে দ্বিতীয় বাক্যটি সত্যি। কিন্তু দ্বিতীয় বাক্য যে বললো, প্রথম বাক্য সত্যি। সক্রেটিসের প্যারাডক্সটিও কিন্তু লায়ার্স প্যরাডক্স।
আসলে নিয়ম মেনে চললে মিথ্যা কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কিছু নিয়ম আছে যারা নিজেরাই মিথ্যা বলে! এরকম একটি নিয়ম হচ্ছে, "সব নিয়মের ব্যতিক্রম আছে"। যেহেতু এটি নিজেই একটি নিয়ম, তাহলে তার ব্যতিক্রমও আছে। তার মানে এরকম নিয়ম খুজে পাওয়া যাবে, যে নিয়মের কোন ব্যতিক্রম নেই। তাহলে নিয়ম নিজেই মিথ্যা কথা বলছে।
শেষ করি একটি ছোট্ট গল্প দিয়ে। এক দুষ্ট কুমির বাবার একমাত্র ছেলেটিকে চুরি করে নিয়ে গেল। কুমির বাবাকে শর্ত দিল সে তার ছেলেকে ফিরিয়ে দিবে এক শর্তে। যদি তিনি বলতে পারেন, কুমির ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিবে কি দিবে না। বাবা উত্তর দিলেন কুমির তার ছেলেকে ফিরিয়ে দিবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কুমির কি করবে? ছেলেকে ফিরিয়ে দিবে নাকি দিবে না!
পর্ব - ১:sachalayatan.com/guest_writer/33967
পর্ব - ২:http://www.sachalayatan.com/guest_writer/34079
রিয়াদ পারভেজ
মন্তব্য
খুব ভাল লেগেছে লেখাটি । মনে পড়েছে সেকশপীয়রের ম্যাকবেথের ডায়লগটি:
Fair is Foul, foul is fair.
কবিগুরু অত্যন্ত মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন অনুবাদে:
মোদের কাছে মন্দ ভাল, মন্দ যাহা তাহাই ভাল।
রামসফেল্ড যেন ম্যাকবেথের উইচ (WITCH)।
ওলি
প্যারাডক্স বিষয়টা আমার কাছে ধোঁয়াশার মতো। কিছুই বুঝিনা। এইবারও বুঝি নাই। দোষটা আপনার না ভাই, আমার। বুঝি আর নাই বুঝি আপনার লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কিছু হয় কিনা। দোয়া করবেন।
আমার অবস্থাও আপনার মত। নেট ঘেটে দুই চার কলম লিখি, আমার দৌড় এই পর্যন্ত।
রিয়াদ পারভেজ
এর মানে রামসফেল্ড একটা শূকর
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ওকে শূকর বললে শূকরের অপমান হবে
কুটুমবাড়ি
কেন ২টা বাক্যকেই মিথ্যা ধরলে ল্যাঠা চুকবে না?
রিয়াদ পারভেজ
প্রস্তর যুগের এক ব্লগবন্ধুর কথা মনে করিয়ে দিলেন- প্যারাডক্স তার টোকেন ছিলো।
লেখা ভাল্লাগছে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ধন্যবাদ
রিয়াদ পারভেজ
প্যারাডক্স ব্যাপারটা প্যারাডক্সিকাল বটে ! তবে আমি ঠিক প্যারাডক্স নিয়ে না, বরং আপানার লেখা নিয়ে কিছু বলতে চাই ৷ আপনার কি মনে হয়না লেখাটা একটু বেশিই সংক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে ? খাওয়ার বদলে শুধু চেখে দেখা মতন ? আপনি নিশ্চয়ই শুধুমাত্র কিছু তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের জন্য লিখছেন না (যদি তা হয়েও থাকে তাহলে বাংলা উইকিতে একটু অবদান রাখুন না !) ৷ এরকম বিষয়ে পড়বার সময় পাঠক স্বাভাবিক ভাবেই আর একটু বিস্তারিত চাইবে ৷ অবশ্য, এটা নিতান্তই আমার ব্যাক্তিগত মতামত ৷ আর, একটু অগ্রসর পাঠকদের জন্য লেখা শেষে তথ্যসূত্র থাকলে ভাল হয়
একটা পুরনো কথা মনে পড়ে গেল— ধরুন, এমন একটি সত্তা আছে যিনি সবকিছুই সৃষ্টি করতে পারেন ৷ আবার সবকিছুই ধংস করতে পারেন ৷ সেই প্রবল পরাক্রমশালী সৃষ্টিকর্তা কি এমন কিছু সৃষ্টি করতে পারবেন যা তিনি নিজেই ধংস করতে পারবেন না ?! ......... তবে কি এমন একটি সত্তাও নেহায়েতই একটা প্যারাডক্স ?!!
লিখতে থাকুন ... শুভকামনা রইলো
নতুন মন্তব্য করুন