প্রাইমারি স্কুলের দিনগুলিতে প্রেম ২য় কিস্তি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৯/০৮/২০১০ - ৭:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় পাঠক, আপনারা জ্ঞানী মানুষ, কত আপনাদের জানাশোনা, একটা চর্বিত ছন্দ না হয় শুনলেন।
"নীম লাগে তিতা বন্ধু
মরিচ লাগে ঝাল
তোমার আমার ভালবাসা
থাকবে চিরকাল।"

আমি তাসলিমা কে চিঠি দিলাম আমার বইয়ের মলাটের ভেতর করে আর তাসলিমা র বইটা আমি নিয়ে নিলাম। তাসলিমা হাস্না কে চিঠি পৌছে দেবে একই উপায়ে, নো রিস্ক। চিঠি দেয়ার দিনটা স্কুলের রেজাল্ট দেয়ার মত উত্তেজনায় কাটল।পর দিন তাসলিমা ক্লাসে এমন হাবভাব করতে লাগল যে সবার ই সন্দেহ করার কিছু কারণ ছিল। অঙ্ক ক্লাসে গোটা দুই চোখ টিপও দিল, এর অর্থ সব ঠিক আছে নাকি কিছুই ঠিক নাই, বুঝা শক্ত।

টিফিন পিরিয়ডে তাসলিমা আমাকে ও সারওয়ারকে যখন কমনরুমের পিছনে আসতে বলল তখন আমার প্রেম করার ইচ্ছা অনেকটাই ফিকে। ক্লাসে হাস্না রোল ছিল ৩ আর আমার ৫, তাই সে আমার কাছ থেকে স্ট্যাটাস এ এগিয়ে ছিল। হাস্নার বাবা আমাদের মাদ্রাসার হুজুর, গত সপ্তাহেই আমাকে "বান্দর ছেড়া" বলে ঠাস ঠাস করে পিঠে দুইটা দিয়েছেন। গিয়ে দেখি হাস্না হেনা আসেনি কিন্তু চিঠি দিয়েছে, আমি বিরাট শান্তি পেলাম। যাই হোক অন্তত প্রেমের ডায়ালগ তো বলতে হবেনা। কিসের কি, দেখি পাশের দেয়ালের পাশ থেকে তাকে দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে তাসলিমার হি হি করে হাসি। আমাদের যেখানে ছিলাম তার পাশেই ছিল লিচু বাগান। সারওয়ারের পরামর্শে আমরা সেদিকে হাটা দিলাম কারণ মেয়েদের কমনরুমের পিছনে দাঁড়ানো বিশেষ রকম খারাপ ছেলের পরিচায়ক।

হাটতে হাটতে হাস্না আমাকে জিজ্ঞেস করল কেমন আছি। ঠিক আমাকে নয়, সারোয়ারকে, "আপনার বন্ধু কেমন আছে?"
ভাল আছি।
এরপর আর কথা খুজে পাইনা। আমাদেরকে আলাদা করে দেওয়ার পর তো আরো না। কঙ্কাবতীর মত চোখ তুলে হাস্না বলল, "তুমি আমার চিডি পড়ছ?"
না
পইড়া দেইক্য যে আমি কিন্তুক তোমার লগে লাইন করতাম না। তাসলিমা আমারে জোর কইরা ধইরা লইয়া আইছে।
আইচ্ছা।
আমি তার কথায় কান না দিয়ে রোজিনা আর জসিমের ভিউকার্ড দিলাম। বিনিময়ে পেলাম জাফর ইকবালের টা। দিয়েই দৌড়।

আমরা চলে এলাম। ভিউকার্ডে লেখা লতায় পাতায় জড়ানো "H+S"। আর চিঠিতে ছন্দ, প্রেম করতে পারবোনা, দেখা করতে পারি, ইতি তোমার H ইত্যাদি। আমাদের প্রেম চলেছিল প্রায় তিনমাস। প্রেম করি এইজন্য একধরনের অপরাধবোধে ভুগতাম মনে হয়, তাছাড়া আমাদের প্রাইমারি স্কুলের পাটও প্রায় শেষ হয়ে আসছিল, সব মিলিয়ে কেমন যেন একটা অযাচিত নিঃসঙ্গ ভাবনায় কেটে যাচ্ছিল দিন। সামনে বৃত্তি পরীক্ষা, বৃত্তি কোচিং এইসব নিয়ে হাস্নার সাথে নিয়মিত দেখা করা হতোনা, সাহসের অভাব ও ছিল এর বড় প্রভাবক।

আমাদের ক্লাস ফাইভের ইংরেজি বইয়ের শেষ পাতায় কঠিন একটা কবিতা ছিল "God we love you". নজরুল স্যার পড়াতেন ইংরেজি। হাস্না স্যারকে জিজ্ঞেস করল, Love মানে কি ছার?
ক্লাসে যেন একটা হাসির বন্যা হয়ে গেল।
- Love মানে ভালবাসা। আর এইডার আসল অর্থ তোমরা হাইস্কুলে গেলে বুঝবা।
আমরা একমত হলাম Love এর আসল মানে লাইন করা, স্যার লজ্জায় বলতে পারেন নাই।
ক্লাস শেষে হাস্না আমার দিকে তাকিয়ে। আমি তাকিয়ে পাশের হাইস্কুলের দিকে।
ফাইভ পাস করার পর আমি ভর্তি হলাম ধনাই বেপারী হাইস্কুলে, হাস্না তাদের বাড়ি থেকে কাছে মাওনা গার্লসে। তারপর দেখা নেই কথা নেই, সীমাহীন আনন্দের মধ্যে আপুর বাসায় একমাস বেড়ানোর পর বাড়িতে এসে প্রথম মনে হল আমি হাস্না কে হারিয়েছি।

প্রথম প্রেম সেখানেই শেষ। বিষণ্ণ বোধের বোধহয় সেখানেই শুরু।

................................................
শ্যামল


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

মনে পরে যায় জেমস এর সেই গান http://www.youtube.com/watch?v=qoK9EqjMJl0

ফারুক হাসান এর ছবি

দুর্দান্ত! প্রাইমারি প্রেমের কাহিনী ভালু পাইলাম। এন্ডিংটা অন্যরকম, না মিলনের না ছ্যাকামাইসিন।

এরপর হাইস্কুলেরটা আস্তেছেতো?

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ফারুক হাসান এর ছবি

ধনাই ব্যাপারী হাইস্কুল কি কো-এডুকেশন? চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

দোস্ত, ধন্যবাদ। কো-এডুকেশন। প্রেমের দেখছস কি, প্রেমের তো শুরু ধনাই ব্যাপারী হাইস্কুল থেকে। আর লেখুম না। সেন্সর এর ভয় আছে।
..................
শ্যামল

ফারুক হাসান এর ছবি

বউ ঝারি দিলেই কি তুমার অতীত বদলাইবেরে বদ? বউরে এত ডরাইলে মহাপুরুষ হৈবি ক্যাম্নে? তার চেয়ে লিখা ফ্যাল।

কৌস্তুভ এর ছবি

বাঃ, বেশ লাগল। তার পর হাস্নার সঙ্গে আর দেখা হয় নাই?

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমি ক্লাস নাইনে H এর প্রেমে পড়সিলাম। সাংঘাতিক প্রেম।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নিবিড় এর ছবি
মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

মজা পাইলাম।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি প্রায় প্রতি ক্লাসেই নিত্যনতুন বালিকার প্রেমে পড়তাম ।সমস্যা হল,অজ্ঞাত কারণে পরের বছরই বালিকারা স্কুল ছেড়ে হাফিস হয়ে যেত ...মন খারাপ

অদ্রোহ।

অতিথি লেখক এর ছবি

কৌস্তুভ লিখেছেন:
বাঃ, বেশ লাগল। তার পর হাস্নার সঙ্গে আর দেখা হয় নাই?

দেখা তো হইছে বহুতবার। কিন্তু সেই দেখা হওয়া ছিল,

"মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব,
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব, সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে৷
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা,
চেনা লোককে দেখলাম অচেনার গাম্ভীর্যে৷"

হঠাৎ দেখা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
.....................
শ্যামল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যতদূর মনে পড়ে ক্লাস ফাইভের ইংরেজী বইয়ের শেষ কবিতার শিরোনাম ছিল "God we thank you", যার প্রথম লাইনটা ছিল "God we thank you for the night"।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব লিখেছেন:
যতদূর মনে পড়ে ক্লাস ফাইভের ইংরেজী বইয়ের শেষ কবিতার শিরোনাম ছিল "God we thank you", যার প্রথম লাইনটা ছিল "God we thank you for the night"।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ভূল ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ, পান্ডবদা; স্মৃতি ঝাপসা। কিন্তুক সেইখানে "love" শব্দটা আছে এইটা ঠিক।
........................।
শ্যামল

গৌতম এর ছবি

হা হা হা! দারুণ লাগছে আপনার প্রেমকাহিনী। প্রাইমারি স্কুল শেষ করে এখন মাধ্যমিকেরগুলো শুনতে চাই। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

guest write rajkonya এর ছবি

হা হা হা। আমার একটা স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। এই সুযোগে সবার সাথে সেটা শেয়ার করি।

তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। সবাই বলত M নাকি আমাকে ভালবাসে। আর সারাক্ষণ আমাকে M এর নাম নিয়ে টিস করতো। একদিন ইংরেজী (এটাও ইংরেজী ক্লাস!)
ক্লাসে স্যার আমাদের রিপ ভ্যান উইঙ্কেলের চরিত্রের ''love for nature'' নিয়ে লিখতে দিলাম। M স্যারকে জিজ্ঞেস করল, ''স্যার love কী?'' আমি অবশ্য এসব কিছুই খেয়াল করি নি। আমি মনোযোগ দিয়ে লিখছিলাম। স্যার হঠাৎ আমার নাম সস্নেহে ডাকলেন। আমি দাঁড়ালাম। স্যার আদরের সাথে আমার পুরু নাম জানতে চাইলেন। আমি বললাম। স্যার বল্লেন,''বাহ! খুব সুন্দর নাম, খুব সুন্দর নাম।'' এরপর নামের অর্থ জানতে চাইলেন। আমি জানালাম। এবারও স্যার অনেক প্রশংসা করলেন। তারপর যা বললেন তাতে ক্লাসে হাসির বোমার বিষ্ফোরিত হল। ইয়ে, মানে... স্যার বললেন, ''এবার তুমি M কে love ব্যাপারটা বুঝিয়ে দাও।'' স্যারও হাসছেন। সারা ক্লাস হাসছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। বসে পড়লাম। লজ্জায় মনে হচ্ছে মাতিতে মিশে যাই। রাগও হচ্ছিল। আর পাশে বসা বান্ধবী হাসতে হাসতে মূর্ছা যাচ্ছে যেন। এরই মধ্যে ও আমাকে বলল, "স্যার এটা জানলেন কি করে? স্যার এটা জানলেন কি করে?''

ইয়ে, মানে...

আজ অনেক দিন পরে ঘটনাটি মনে পড়লে শুধু হাসিই পায়। দেঁতো হাসি
--------------------------------------------------------------------------
রাজকন্যা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।