মৃত্যু নিয়ে শিশুদের ভাবনা এবং তার উত্তর

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৬/০৮/২০১০ - ১০:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা সবাই মৃত্যু নিয়ে কথা বলা এড়িয়ে চলি কিংবা চলার চেষ্টা করি। বিশেষ করে শিশুদের সাথে। শিশুরা তাদের বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে মৃত্যুর সাথেও পরিচিত হতে থাকে। তাদের আশপাশ থেকে অনেক চেনা মানুষ হারিয়ে যায়। ওদের কচি মনে অনেক ভাবনা উঁকি মারে।আমারা যারা বড় তাদের উচিত শিশুদের কাছে মৃত্যু ব্যপারটা সহজ করে বুঝিয়ে বলা যেন এটা নিয়ে ওদের কোমল মনে কোনো জটিলতার সৃষ্টি না হয়।

শিশুমনে ঊকি দেয়া প্রশ্নগুলোঃ

* মৃত্যু কি ঘুমের মত?
ঘুম আর মৃত্যু পুরোপুরি আলাদা। আমরা যখন ঘুমাই তখন আমদের দেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে।আমরা নিঃশ্বাস নেই, আমাদের হৃৎপিন্ড চলে। আমরা স্বপ্নও দেখি।কিন্তু যখন কেঊ মারা যায় তখন এগুলোর কিছুই ঘটেনা।এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যখন শিশুকে বলা হয় মৃত্যু হল ঘুমানোর মত, তখন কিন্তু সে ঘুমাতে ভয় পাবে।

*মানুষ কেন মৃত্যুবরন করে?
যখন মানুষ অসুস্হ হয়ে মারা যায় তখন আসলে মানুসের দেহ অসুস্হতার সাথে যুদ্ধ করে হেরে যায়। শিশুমনে আসতে পারে যখন ওর বা বাবা মার অসুখ হয়, তখন কি মারা যেতে পারে..।সেক্ষেত্রে দেহের সাথে পাল্লা দিয়ে অসুখ হেরে যায়।অসুখ হলেই মানুষ মারা যায়না। দূর্ঘটনার ক্ষেত্রেও মানুষ ব্যাথা পেতে পারে কিন্তু দেহঘড়ি বন্ধ হয়না।

*তুমি-আমিও কি মারা যাব?
এই প্রশ্নের মাধ্যমে শিশুরা আসলে নিশ্চয়তা খুঁজে।মানুষ আসলে অনেক লম্বা জ়ীবন অতিবাহিত করে।তার অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ করে চলার পথে। বাবা মা মারা গেলেও নতুন কাঊকে আকড়ে ধরে সামনে এগুতে হয়।

*মৃতমানুষ কি ফিরে আসে?
চিরদিনের জন্য চলে যাওয়া ব্যপারটা শিশুদের বুঝানো বেশ কঠিন।তার দেখে মানুষ বাইরে যায় আবার ফিরে আসে? কার্টুন চরিত্রগুলো লাফালাফি করে চলে যায় আবার আসে। মৃত মানুষ ও কি তাই? তাই এ ব্যপারটা ছোটদের বারবার করে বলতে হয় যে তারা আর কখোনো ফিরে আসবে না।

*তারা কি খায়? এত ঠান্ডাও বা কেন?
শিশুরা মনে করতে পারে মৃতরা হাটে, কথা বলে, মাটির নিচে ঘুরে বেড়ায়।কবর দেখে ভাবে মাটির নিচে একটা আস্ত এপার্টমেন্ট ও আছে!! কিন্তু আসলে দেহ আর কোনো কাজ করবেনা, হাটবেনা, কথা বলবেনা, খাবেনা, নিঃশ্বাস নেবেনা।

খুব নিকট জনের মৃত্যু শিশুমনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এটার শোক কাটিয়ে উঠা তাদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়। বড়দের বিশেষ করে মা বাবার সচেতনতাই ওদের কাছে জীবনের গভীরতম খোলশ উন্মোচনে ভূমিকা রাখতে পারে।

সূত্রঃ www.hospicenet.org

ইশতিয়াক


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ক্ষমা করবেন, পোস্টটা পড়ে আমি বুঝতে পারলামনা কীভাবে শিশুদের কাছে 'মৃত্যু' ব্যাপারটা উপস্থাপন করতে হবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

মৃত্যু জিনিসটা কি শিশুরা তা বোঝে? বোঝে না। আর আমি বুঝলাম না শিশুদের সেটা বুঝিয়ে বলার দরকারটাই বা কি?

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

গৌতম এর ছবি

মৃত্যু নিয়ে শিশুদের অনেক প্রশ্নের জবাব আসলেই দিতে হয় এবং এই কাজটুকু করতে হয় শিশুদের বয়স বুঝে টেকনিক্যালি ও ট্যাক্টফুলি। এটা অনেকটাই নির্ভর করে শিশু কোন ধরনের পরিবেশে প্রশ্নটি করছে তার ওপর এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নগুলোকে ডাইভার্টও করে দিতে হয়। যেমন- বাড়িতে কেউ মারা গেছে এমন সময় শিশু এই প্রশ্ন করতে পারে। আবার টেলিভিশনের সংবাদ দেখেও শিশু এ ধরনের প্রশ্ন করতে পারে। দুটোক্ষেত্রে উত্তর কিন্তু আলাদা হবে। শিশুর বয়সটা এখানে এমনই এক ফ্যাক্টর যে, ছয় বছরের শিশুকে আপনি যে উত্তর দিতে পারেন, চার বছরের শিশুকে সেই একই উত্তর দিতে পারেন না। বড়দের ক্ষেত্রে দশ বছরের পার্থক্যে খুব একটা আসে যায় না, কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে ছয় মাসের পার্থক্য এমনকি যেদিন প্রথম বিদ্যালয়ে যায়, তার আগের দিন ও পরের দিনের পার্থক্যটা আনেক বড় হয়ে যায়।

আপনি একটা সুন্দর আলোচনা শুরু করেছেন। কিন্তু গভীরতার কারণে আলোচনাটি আসলে বিভ্রান্তিতে পৌছতে পারে। আমার মনে হয়, আপনি এ বিষয়টি নিয়ে আরেকটু খেটেখুটে যদি লিখেন, তাহলে অনেকেই এ থেকে উপকৃত হবে। বর্তমান আলোচনা কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট। যেমন- তুমি-আমিও কি মারা যাব? এর উত্তরে আপনি যা বললেন আমি বুঝতে ব্যর্থ হলাম। আর সবচেয়ে বড় কথা- মৃত্যুর কথা শুনলে শিশুরা ভয় পাবে এই ধারণাটাও অনেক ক্ষেত্রে অমূলক। খুব স্বাভাবিকভাবে যদি স্বাভাবিকসময়ে অন্য অনেক বিষয়ের মতো মৃত্যুটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে তুলে ধরতে পারেন, শিশুর মনে কিন্তু এ নিয়ে ভয় থাকবে না।

আরেকটা কথা- এই ধরনের পোস্টগুলো প্রয়োজনে পরিচিত কোনো মনোবিশেষজ্ঞ কিংবা শিশুবিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে নিলে ভালো হয়। প্রথম আলোর নকশার মতো কাগজে একজন অভিনেত্রীর দেওয়া মারাত্মক উত্তরগুলো পড়ে অনেক মানুষই বিভ্রান্ত হয়, অনেক অবৈজ্ঞানিক সমাধান সেখানে দেওয়া হয়। পেশাগত বা প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থাকার পরও একজন অভিনেত্রী কীভাবে মনোবিশেষজ্ঞের উত্তর দিনের পর দিন দিয়ে যান, সেটা বুঝতে আমি সত্যিই অপারগ।

****বিষয়টি নিয়ে লেখকের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনার বাসায় কি কোন শিশু আছে? সে কি এসব প্রশ্ন করেছে? আপনি এই উত্তরগুলো দেবার পরে সে কি বলল? আমি সেই কথোপকথন বিষদ জানতে আগ্রহী।

শিশু প্রশ্ন করবে, তাই একটি প্রশ্ন উত্তর ফর্দ নিয়ে বসে থাকবো, তাতেই কাজ চলে যাবে - এরকম ভাবলে শিশুটির মেধার অপমান হয়। কেউ কেউ এই মনভাবকে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যাবস্থার যাবতীয় সমস্যার ধারনাগত উতস হিসাবেও চিহ্নিত করে ফেলতে পারেন। শিশু অবুঝ হতে পারে, কিন্ত তাকে নির্বোধ কেন ভাববো? অভিভাবাকের কাছে সব উত্তর আছে এবং অভিভাবাকের কাছেই সঠিক উত্তর আছে, এরকম ধারনা পাকাপোক্ত করে দিলে সে শিশু কি নিজে থেকে কোন প্রশ্নে উত্তর খুজতে আগ্রহী হবে? আমার তো মনে হয় এরকম সবজান্তা অভিভাবকের ভয় শিশুমনে জন্য মৃত্যু ভয়ের চাইতেও বেশী ক্ষতসাধন করতে পারে।

একজন কাছের মানুষ চলে গেলে শিশুর মনে যদি ভয়, কষ্ট, প্রশ্ন, অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তখন অভিভাবকের উচিত তাদের সময় দেয়া। শিশুর কাছের মানুষ তো অভিভাবকেরও কাছের মানুষ। অভিভাবক তার ভয়, কষ্ট, প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা কিভাবে আয়ত্ব করে, সেটা দেখেই তো শিশু 'জীবন' শিখবে। প্রশ্নোত্তরের আড়ালে লুকোবার চেষ্টা না করে বরং নিজের ভয়, কষ্ট, অনিশ্চয়তা ও সর্বোপরি মৃত্যু কি এ নিয়ে অগাধ অজানাকে অকপটে নিজের শিশুর সামনে স্বীকার করাটাই বেশী অভিভাবকসুলভ বলে আমার মনে হয়।

যেখানে অকপটে ভয়, কষ্ট, অনিশ্চয়তা ভাগ করে নেয়া যায়, সেটাই তো পরিবার।

*** গৌতম্দা লাহান আমিউ "বিষয়টি নিয়ে লেখকের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।"

ইশতিয়াক এর ছবি

না আমার বাসায় কোনো শিশু নেই।কিন্তু আমার বয়স যখন ৪-৬ তখন থেকেই আশেপাশের কারো মৃত্যু আমাকে ভীষন ভাবে আলোড়িত করত। আমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগতো। কিন্তু কেন জানি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। তাই এ বিষয় তা মাথার মধ্যে রয়ে গেছে। লিখাটা নেট থেকে সাহায্য নিয়ে লিখা! পুরোটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত না। একেক জন একেকভাবে এটাকে নিতে পারে। আমি শুধু এইগুলোই করতে হবে তা বলিনি। এটা শুধু একটা পথ হতে পারে। একমাত্র না। গৌতম দা কিছু গুরুত্বপূর্ন পরামর্শ দিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ।পরবর্তীতে লিখলে বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করাটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আরো ধন্যবাদ। প্রথম আলো র মত কাঊকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য ছিলনা কোনো।

রিটন ভাই, কোনো শিশুর যখন নিকট জন যেমন নানা দাদা যাদের সে জন্ম থেকে দেখে এসেছে , তারা হারিয়ে গেলে তাদের মনে প্রশ্নের ঊদয় হতেই পারে। তারা জানেনা বা বুঝেনা যে এটা মৃত্যু কিন্তু ব্যপারটা তাদের ভাবায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।