“আসলে সোনার বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা কোনো বিষয়েই সোনার মেডেল বিশ্বদরবার হইতে আনিতে পারে নাই, তাই তাহারা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাইয়া দেশের গৌরব সারা পৃথিবীবাসীর কর্ণকুহরের মধ্য দিয়া মর্মে পৌঁছাইতে চাহিতেছে যে, দেখো, পৃথিবীতে এমন দেশও আছে, যেই দেশে এক দল শিক্ষার্থী আরেক দল শিক্ষার্থীকে যথাসম্ভব উচ্চ ভবনে তুলিয়া শূন্যে ছুড়িয়া মারে? তোমরা কি কেহ এই রূপ অভিনব ভাবনা ভাবিতে পারিবে?”[১]
এ কারণে আণীশূল হুক সাহেব বাঙালীকে লক্ষ টাকা খরচ করিয়া এভারেস্ট সোনার মেডেল আনিয়া দিয়াছেন, যদিও তা সোনার নাকি হাওয়ার এটা সাধারণের অজ্ঞাত রইয়া গেছে! গুরুবাক্য গুরুজনদের মুখে মানায় বটে। যারা জাতীয় ভন্ড(?) তাদের মুখে না!
“একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর হতে পারত জাতীয় জীবনের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়ের আরম্ভ। বাহাত্তর হতে পারত ‘বিচিত্র জীবনচর্চার বেগে চঞ্চল’ একটি বছর। প্রথম নির্বাচনের বছর তিয়াত্তর হওয়া উচিত ছিল ‘জাগ্রত চিত্তবৃত্তির তাড়নায় এক নতুন অধ্যায়’ রচনার বছর।”[২]
সহজিয়া কড়চার প্যাঁচাল ঝাড়ছেন আবুল মকসুদ। রাজাকার নিধন শুরু হওয়ার পরে গায়ে জ্বালা ধরে যারা মুখোশ আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছেন তাদের মধ্যে আবুল বকসুদ অন্যতম।১৬ই ডিসেম্বর কে উজ্জ্বল অধ্যায় থাক উজ্জ্বল অধ্যায়ের শুরু ধরতে তাই তাঁর কার্পণ্য! এরপর এক বছরের মধ্যেই চাইছেন ‘বিচিত্র জীবনচর্চার বেগে চঞ্চল’ একটি বছর। আমি শেখ মুজিবের পক্ষে গান গাইছি না তবে, বকসুদ সাহেব নিশ্চয়ই বিশ্ব-ইতিহাস সম্পর্কে অনেক জ্ঞান রাখেন! আছে কি কোথাও এমন উদহারণ পৃথিবী জুড়ে!
বিদ্যাসাগর-বঙ্কিম-রবী ঠাকুর বগলের নিচে নিয়ে ঘুরতে পারলেই এখন বুদ্ধিজীবি হওয়া যায়। তাই ইতিহাস রাজনীতি বিশ্লেষন ছাড়াই যখন তখন ‘জাগ্রত চিত্তবৃত্তির তাড়নায় এক নতুন অধ্যায়’ এর মতো উপমা টানা যায়।
“স্বাধীনতার আগে আইয়ুব-মোনায়েমের আমলে সামরিক-বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক সরকার আমরা দেখেছি। জনগণের জন্য তা ছিল অভিশাপ। সরকার ছিল জনগণের মাথার ওপর একটি পাথরের মতো। আমরা সেই পাথর সরাতে চেয়েছিলাম এবং আমাদের পছন্দমতো মানুষের সরকার গঠন করতে চেয়েছিলাম।”[২]
আবুল বকসুদ কোথায় কিভাবে পাথর সরাতে চেষ্টা করেছিলেন আমার জানা নেই কিন্তু তাঁর ৭০ এর নির্বাচনের প্রতি অনাস্থাও একটু পরই আমরা দেখবো।
কথায় কথায় ৬৯,৭০,৭১ নিয়ে যারা টানা হ্যাচড়া করেন তাদের মুখেই মানায়- “স্বাধীনতার পরে একটি সামন্তবাদী রাজনৈতিক ধারা আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলাম।“[২] কিন্তু এই সামন্তবাদী রাজনৈতিক ধারা কি স্বাধীনতার পরপরই এলো, মুজিব কি বাবার হাত ধরে রাজনীতি করেছিলেন নাকি আমাদের জন্য সামন্তধারা তৈরী করা হলো এই নিয়ে আলোচনা আমরা পাই না! মানুষ তার আদর্শিক স্বত্তাকে সহজে ছুড়ে ফেলে দিতে পারে না।
“সব শ্রেণীর মানুষ যখন স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, উদার গণতন্ত্রী যেমন আছেন, তেমনি কট্টর বামও আছেন—সুতরাং সব মানুষের গ্রহণযোগ্য একটি মধ্যপন্থার চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটবে। কিন্তু চরমভাবে হতাশ হলাম।”[২]
কথাগুলো শুরুতে শুনতে মিঠা লাগে কিন্তু স্বাধীনতা নিয়ে লেখকের হতাশা যে স্বাধীনতা পূর্ব থেকেই তা প্রকাশ অপেক্ষা রাখে না।
“কেউ সরকারকে তোয়াজ করতে লাগলেন, কেউ ঘরের ভেতরে বসে সরকারের বিরুদ্ধে গুজগুজ করতে থাকলেন। তরুণদের ভেতর থেকেও তীক্ষ সৎ ও নিবেদিত তেমন কেউ বের হলেন না। অবশ্য তরুণেরা বেঁচে থাকার সংগ্রামে এতটা গলদঘর্ম হতে থাকলেন যে চিন্তা করার জন্য যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরুপদ্রব অবকাশ প্রয়োজন, তা তাঁদের ছিল না। ফলে একটি নতুন রাষ্ট্র শুধু হাত-পা ও শরীরটা নিয়ে যাত্রা শুরু করল, তার মাথা ও মগজটা থাকল না।”
১৫ই আগস্ট এর মাত্র দুদিন পর এ ধরনের লেখা ১৫ আগস্টের বর্বরতার পক্ষেই অবস্থান নিয়ে মুজিব হত্যার আবশ্যম্ভবীতার কথাই বলে।এরপর “গত ৩৫ বছরে আমাদের দেশে ব্যাপক ‘উন্নয়ন’ হয়েছে।”[২] বলে সেটা আরো স্পষ্ট করা হয়! এবং এরপর সরাসরিই বলেন-“বাহাত্তরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অনন্য সুযোগটি হাতছাড়া করেছিল রাজনৈতিক সরকার। বিরোধী দলকে মাথা তুলতে দেয়নি। মূল্য তাকেই দিতে হয়েছে।”[২]
“কিছুকাল ধরে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রবল টক শোর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।”[২] সম্ভবত বকসুদ সাহেবের ডাক মিলছে না! ওহ! ক্ষোভটা আরো স্পষ্ট হয় যখন তিনি বলেন- “গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজের নেতাদের কথার মূল্য খুব বেশি। সব দেশেই বুদ্ধিমান শাসকেরা তাঁদের কথার মূল্য দেন। ক্ষমতা থেকে দূরে থেকেও তাঁরা ক্ষমতাসীনদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশের অবস্থা আলাদা।” এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের খিড়কির দরজায় প্রতি লোভ এর বহির্প্রকাশ ছাড়া আর কিছু খূঁজে পাই না!
এর আগে শুভাশীষ দাশ এর
এক লেখায় আমরা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেয়া বকসুদ সাহেব কে নিয়ে আলোচনা শুনছি, দেখেছি জামায়াত কে তাঁর ইসলাম অমৌলবাদী প্রমান করার এবং প্রগতিশীল রাজনীতির প্রসার এর কথা বলে জামায়াত রক্ষার প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি। শুভাশীষ সাহেবের লেখাটা তাঁর চোখে পড়েছে কিনা জানি না, মনে হয় পড়েছে তাই এবার “এর মধ্যে উত্থান ঘটে জামায়াত প্রভৃতি মৌলবাদী শক্তির।” বলে পিঠ পরিষ্কার এর পালা, বকসুদ সাহেব আঃছিঃ নজরুল এর চাইতে আরেকটু কৌশলে জামাতের পক্ষে সরাসরি অবস্থান না নিয়ে আমাদের স্বাধীনতার গোড়ার দিককার নানা সমস্যা আমাদের মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করছেন। যাতে, আমরা বুঝতে পারি জামাতের স্বাধীনতা বিরোধীতা কেন সঠিক ছিল। জয়তুঃ বুদ্ধিজীবিকা!
কাজী মামুন
রেফারেন্সঃ
১।http://prothom-alo.com/detail/date/2010-08-17/news/87100
২।http://prothom-alo.com/detail/date/2010-08-17/news/87099
মন্তব্য
যে লোক নিজের নাম থেকে 'সৈয়দ' এর অহমিকা খসাতে পারেনি সেই লোক তো শুরুতেই বামপন্থা থেকে খারিজ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মাঝখানে একটা জায়গায় লাইন ভেঙে যাওয়ায় এবং স্পেসিং এর কিছু সমস্যা'র কারণে প্রথম সাবমিট টা শেষ হওয়ার আগে ক্যানসেল করে দ্বিতীয়বার ঠিক করে সাবমিট করেছিলাম! এখন দেখছি প্রথমটাই এসেছে!
মার্জনা করবেন!
কাজী মামুন
মামুন সাহেব, আনিসুল হক এবং আবু্ল মকসুদ এর কলাম পড়ে কেন এত উত্তেজিত হয়ে গেলেন বুজলাম না।এদের ব্যাক্তি মতাদর্শ বাইরে রেখে বলতে চাই এই দুই কলামের কোথাও কিন্তু ওনারা ভুল কিছু লিখেন নি।আমার দেশের স্বর্ণ সন্তানরা কি এই জন্য নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন।বঙ্গবন্ধু কিংবা তাজ কি এই বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন???
ঢালাওভাবে, ভালো ও মন্দের বিচারে আমি যাইনি। লেখার কোথায় কোথায় আমার আপত্তি সেটা 'কোট' করে দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমার উপলব্ধিতে ভুল থাকলে সেটাও দেখাতে পারেন।
কাজী মামুন
আনিসুল হক কিংবা সৈয়দ আবুল মকসুদ এর লেখা কিংবা মত নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ হতেই পারে, এমনকি তাঁরা যদি আপত্তিকর কিছু লিখে থাকেন, তাহলে তাঁদের বক্তব্যকে তুলোধুনো করার জন্যও ব্লগই সর্বোত্তম জায়গা।
কিন্তু এরজন্য তাদের নাম বিকৃত করে শিরোনাম তৈরী করাটা ভালো লাগে নি।
এটি অপ্রয়োজনীয়। সচলায়তনের প্রথম পাতায় এরকম শিরোনাম দৃষ্টিকটু।
লেখা দেয়ার পর আসলে বিষয়টা আমারও মনে হচ্ছিল। এই প্রথাটা নতুন না হলেও সম্পাদনার সুযোগ থাকলে করে দিতাম।
কাজী মামুন
আলোচনাটা ভালো লেগেছে কিন্তু উপস্থাপনে আলোচ্য ব্যাক্তিদের উপর লেখকের প্রচ্ছন্ন ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে হয়েছে। সেটা না থাকলেই বরং ভালো হত।
টুইটার
ক্ষোভ যথেষ্ট আছে। আপনি ঠিকই ধরেছেন। ক্ষোভের কারণটা কিছুটা আমি নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি।
অনেক ধন্যবাদ!
কাজী মামুন
বিদ্রুপ আর আলোচনা একে অন্যের ভারে শেষ পর্যন্ত ধার হারিয়েছে।
হুম হিমু ভাই, বুঝতে পারছি, ভেবে দেখার মতো ব্যাপার আসলে! এরপর সতর্ক থাকতে হবে! সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ!
কাজী মামুন
বিদ্রুপও তো লেখালেখির একটা ধারা। একে নাকচ করার দরকার কী খু্ব জরুরী? শূল হুক আর বকসুদ--এই শব্দ দুটির মধ্যে দিয়ে উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের ছলনীতি প্রকাশিত হয়েছে। শব্দের এরকম প্রয়োগ সৃজনশীল।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
এরকম কুট-বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে লেখায় প্রচ্ছন্ন ক্ষোভের প্রকাশ না থাকাটাই অস্বাভাবিক। এসব পাবলিকদের নিয়ে যদি যুক্তি ও বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে লেখালেখি করতে হয় তাহলে তো তাদের কাতারেই নামতে হবে। এই 'যুক্তিবুদ্ধি'র প্রয়োগে লেখালেখি করেই তো তারা নিজেদের বুদ্ধিজীবির লেবাস ধরে রেখেছেন। আনিসুল হক বিষয়ে কোনো তর্কে যাবো না, তবে মকসুদ লোকটা যে সুবিধার না সেটা ১৪ বছর বয়সে তার ১টা লেখা পড়েই বুঝছিলাম।
ভাল লেখা।
এরকম কুট-বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে লেখায় প্রচ্ছন্ন ক্ষোভের প্রকাশ না থাকাটাই অস্বাভাবিক। এসব পাবলিকদের নিয়ে যদি যুক্তি ও বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে লেখালেখি করতে হয় তাহলে তো তাদের কাতারেই নামতে হবে। এই 'যুক্তিবুদ্ধি'র প্রয়োগে লেখালেখি করেই তো তারা নিজেদের বুদ্ধিজীবির লেবাস ধরে রেখেছেন। আনিসুল হক বিষয়ে কোনো তর্কে যাবো না, তবে মকসুদ লোকটা যে সুবিধার না সেটা ১৪ বছর বয়সে তার ১টা লেখা পড়েই বুঝছিলাম।
ভাল লেখা।
নতুন মন্তব্য করুন