ইসলামের স্বর্ণযুগের পতন; কারণ অনুসন্ধান

কাজী মামুন এর ছবি
লিখেছেন কাজী মামুন (তারিখ: শুক্র, ২০/০৮/২০১০ - ৪:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে তালাসের যুদ্ধে চীনাদের কাছ থেকে সির দরিয়া নদীর নিয়ন্ত্রন এর চাইতেও অনেক বড় এক প্রাপ্তি ঘটে আরবীয় দের, তা হলো চীনা কিছু বন্দী! যাদের কাছে থেকে কাগজ তৈরীর কৌশল শিখে নেয় তারা।এরপরের ইতিহাস অনেকেই জানেন, autoপুরো ইউরোপ যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত তখন মধ্যপ্রাচ্যে জ্ঞানের স্বর্ণযুগ।এরপর একটানা প্রায় ৫০০ বছরের একক আধিপত্য। কিন্তু এরপর হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্য আবার অন্ধকারের দিকে হাঁটতে শুরু করে। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খূঁজতে গিয়ে এই লেখা।

পদার্থ, রসায়ন, গনিত, চিকিৎসা, স্তাপত্য, মনোস্তত্ত্ব, জোতির্বিদ্যা সহ বিজ্ঞানের আরো নানা বিষয় সহ কলা, সাহিত্য ও দর্শনের এমন আধিপত্য কেমন করে ধ্বংশ হয়ে গেল! এই প্রশ্নের উত্তর খোজা হচ্ছে গত কয়েক শতাব্দী ধরেই। এগার শতাব্দীর ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের কারণে ইসলামিক বিশ্বে সৃষ্ট অস্থিরতা দিয়েই এর শুরু।এরপর তের শতাব্দীতে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য স্থাপন কারী মোংগলদের ঘাড়েই দোষটা চাপে সবচেয়ে বেশি, কারণ এক মোংগল ‘এম্বাসেডর’ এর হত্যাকে উপলক্ষ ধরে হালাগু খান বাগদাদ ধ্বংশ করে দেন। সেই সাথে ধ্বংশ হয়ে যায় খলিফা হারুন আল রশীদের তৈরী ‘হাউজ অব উইজডম’ বা ‘বায়েত আল হিকমা’। যা ছিল তখনকার সময়ের সবচাইতে সমৃদ্ধ এবং পৃথিবীর প্রথম আধুনিক গ্রন্থাগার। শুধুমাত্র গ্রন্থাগার বললে অবশ্য এই ‘আল হিকমা’ কে ছোট করা হয়, বরং এটা ছিল জ্ঞান চর্চার প্রাণ কেন্দ্র। যেখান থেকে আমরা পেয়েছি বীজগনিতের জনক আল খারায়জমির মতো গনিতজ্ঞ কে।হালাগু খানের ঐ ধ্বংশযজ্ঞ কে পিনচিহ্নিত করে বোঝাতেই সম্ভবত বলা হয় টাইগ্রিস নদীর পানি ছয় মাস ধরে সেইসব বইয়ের কালিতে কালো হয়ে ছিল। কিন্তু এটাই কি একমাত্র কারণ? তখনতো ‘হাউজ অব উইজডম’ এর আদলে আরো আল হিকমা গড়ে উঠেছিল, বাগদাদের বাইরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই তো বইছিল জ্ঞানচর্চার সুবাতাস! বাগদাদ ধ্বংশ হয় ১২৫৮ সালে কিন্তু এরপরও আমরা পাই ইবনে খালেদুন, ইবনে আল নাফিস এর মতো সমাজতাত্ত্বিক, দার্শনিকদের। ইবনে সিনা, আল বিরুনীরা অনেক আগেই মারা গেলেও ইবনে আল কুতুব, ইবনে আল শাতির রা তো জন্মেই ছিলেন ১৪ শতাব্দীতে! অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, দর্শনে পৃথিবী ব্যাপি আজও উচ্চারিত নাম ইবনে খালেদুনও জন্মেছিলেন বাগদাদ ধ্বংশের ৭০/৮০ বছর পরে!

আরবের এই স্বর্ণযুগ শেষ হওয়ার কারণ খুজত এগিয়ে বিভিন্ন লেখক, ঐতিহাসিক, আলোচকদের বিভিন্ন রকম মত দিতে দেখা যায়। মোংগল দের আক্রমন বা ক্রুসেডের আগে মূল কারন হিসেবে উঠে আসে প্রথম খলিফাদের পরবর্তী যুগে রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনা।

শিয়া সুন্নীদের লড়াইয়ের পাশাপাশি অনেক চিন্তাবিদ আবার সুফীজম এর প্রভাবকেও, মুসলিম দার্শনিক হাম্মাদ ইউসুফ তাঁর ‘মেটাএক্সিসটেন্স’ বইয়ে বলছেন-

"The major factor of decline of the Muslim golden age is mysticism (Sufism). when Muslims involved in the mysticism activities, their educational activities were directly affected. Mysticism played a key role in the decline of Muslims golden age."

এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায় নি।এর পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম বিবেচিত একটি কারণ উঠে আসে যার প্রভাব জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অপরিসীম-
“There was apparently an increasing lack of tolerance of intellectual debate and freedom of thought, with some seminaries systematically forbidding speculative metaphysics, while polemic debates in this field appear to have been abandoned after the 14th century.”

চিন্তা ও জ্ঞান চর্চায় উদারপন্থী আরবীয়রা হয়ে উঠে রক্ষনশীল, যেই রক্ষনশীলতা থেকে জ্ঞান চর্চার জন্য এঁকে দেয়া হয় সীমা রেখা। মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে রহিত করার পর থেকেই মূলতঃ আরবীয়দের পেছন দিকে হাঁটার শুরু, অনেকের মতে যা চলছে এখনো। রক্ষনশীলতার সাথে মুক্তবুদ্ধির লড়াইটা অবশ্য শুরু হয়েছিল আরো অনেক আগে। ‘অকেশনালিজম’ এর সবকিছুতে সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ তত্ত্বের বিরোধীতা করে যখন ঈমাম আল গাজ্জালী ‘দ্যা ইনকোহেরেন্স অব ফিলোসোফার’ বইটি লেখার পর। ঈমাম গাজ্জালীর বইটি ব্যাপক আলোড়ন তৈরী করে দর্শনের জগতে। তিনি দার্শনিকদের ঈশ্বর ও মহাবিশ্ব সম্পর্কিত চিন্তার সাথে বিশ্বাসের দ্বন্দ্বকে তুলে আনেন স্পষ্ট ভাবে। আগুনের কাছাকাছি তুলা নিলে আগুন তুলা পোড়ে নাকি ঈশ্বর তুলা পোড়েন এই নিয়ে শুরু হয় চিন্তার দ্বন্দ্ব।ঈমাম গাজ্জালীর মুক্তচিন্তার আলোচনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ইবনে রুশদ লিখেন “দ্যা ইনকোহেরেন্স অব ইনকোহেরেন্স”। তিনি ইসলামের চিন্তার জগতে এরিস্টটলীয় দর্শনের প্রবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। এ প্রসঙ্গে আরো বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায় ইরা মারভিন এর “এ হিস্টরি অব ইসলামিক সোসাইটিস” বইয়ে। মুক্তচিন্তা আর রক্ষনশীলতার এই লড়াই চলতে থাকে এরপর আরো কয়েক শত বছর।

এরপর ১৪৯২ সালে স্পেনে ইসলামের পতনের মাধ্যমে সূচীত হয় এক নতুন অধ্যায়ের। আরবের স্বর্ণযূগের হাত ধরেই অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউরোপে সূচীত হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার যা পরবর্তীতে রেঁনেসা ও শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

কাজী মামুন

আরো জানতে-
১-http://metaexistence.org/goldenage.htm
২-http://www.islamicity.com/mosque/ihame/sec7.htm
৩-http://www.experiencefestival.com/islamic_golden_age_-_mongolian_invasio...
৪-http://www.conservapedia.com/Islamic_Golden_Age
৫-http://en.wikipedia.org/wiki/Ash%27ari
৬-http://en.wikipedia.org/wiki/Mu%27tazili
৭-http://islamicexpansionanddecline.blogspot.com/
৮-http://en.wikipedia.org/wiki/Islamic_Golden_Age


মন্তব্য

অমিত এর ছবি

চিন্তা ও জ্ঞান চর্চায় উদারপন্থী আরবীয়রা হয়ে উঠে রক্ষনশীল,--

খালি আরবীয় ? পারসিয়ানদের অবদান তো কোনও অংশে কম না।

অতিথি লেখক এর ছবি

[Ekhon ami jekhane kaaj korchi Bangla soft nei tai likhchi roman horofe. sorry for that]
parsian der sathe arabian der tulona chole na, ontoto ei rokkhonshilotar bepare. ekta simple example dei- Arab e ekta meye eka ghor theke ber hote pare na kintu Iran e meyera taxi chalai. R ekhane Arab bolte shudhomatro bortoman Saudi Arabia k bujhano hoy ni! Ekta Map songjukto kora hoyeche lekhar sathe.

Onek dhonnobad apnake!

Kazi Mamun

অমিত এর ছবি

তুলনা না, আমি বলতে চেয়েছিলাম "ইসলামের স্বর্ণযুগের" যেসব জ্ঞানী ব্যক্তিদের নাম আপনি নিয়েছেন, তাদের মধ্যে আরব থেকে পারসিয়ান পন্ডিতদের সংখ্যাই বেশি

অমিত এর ছবি

আরেকবার দেখে মনে হল আপনার লেখায় আরব পন্ডিতদের নামই বেশি এসেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা ব্যাপার সম্ভবত আপনি এখানে ভুল করছে এখানে আরব বলতে সৌদি আরব নয় বরং খলিফাদের আরবকেই বুঝানো হচ্ছে, যে সময় ইরাক ইরান থেকে শুরু করে বর্তমান প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টি দেশ সেই এরাবিয়ান পেনিন্সুলা'র অন্তর্গত ছিল। ৭৫০ এর দিকেই খুব সম্ভবত খলিফা আবু আল আব্বাসই ইরান দখল করে নিয়েছিলেন। সুতরাং স্বর্ণযুগের আরব ইরানকে নিয়েই।
এরপরও যদি রক্ষনশীলতার কথা বলেন, তাহলে বরাবরই ইরান বর্তমান সৌদি আরবের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
একটা ব্যাপার জানেন কিনা- সৌদি আরবে কোনো মেয়েকে যদি রাস্তায় একা পেয়ে যান তাহলে আপনি তাকে রেইপ করে সহজেই ছাড়া পেয়ে যাবেন, স্বাস্তী হবে ঐ মেয়েটির কারণ সে কোনো পুরুষ ছাড়াই বেরিয়েছে! সেখানে ইরানের মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা থেকে শুরু করে ট্যাক্সিও চালাচ্ছে!

কাজী মামুন

অমিত এর ছবি

আমি আসলে আরব বলতে এথনিসিটি নিয়ে বলছি, দেশ না।আমার পয়েন্ট ছিল যে ইসলামের স্বর্ণ যুগ বলতে আপনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে অবদানের প্রসংগ এনেছেন, সেখানে ধর্মের প্রভাব কতখানি, কার কতটাই বা এথনিসিটি বিচারে হাজার বছরের পারসিয়ান সভ্যতার প্রভাব সেটাকে হাইলাইট করা।

হাসিব এর ছবি

একটা জিনিস বুঝতে চাই। একটা ধর্মের স্বর্নযুগ বলতে আসলে কী বোঝাতে চাই আমরা? বিষয়টা একটা অঞ্চলের স্বর্নযুগ বলা উচিত নয় কি?

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসিব ভাই, হুম এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, কেন মধ্যপ্রাচ্যের স্বর্ণযুগ না বলে ইসলামের স্বর্ণযুগ বা ইংরেজীতেও Islamic Golden Age বলা হয়!
আমার যেটা মনে হয় এখানে স্বর্ণযুগের উৎপত্তি বিকাশ এর মাধ্যম এবং এরপর পতন নিয়ে চিন্তা করতে হবে। খলিফা হারুন আল রশিদ যখন 'বায়াত আল হিকমা' শুরু করেন, তখন তাঁর লক্ষ্য ছিল সারা দুনিয়ার জ্ঞান ভান্ডার কে ইসলামের জগতে নিয়ে আসা। তিনি অনুবাদক নিযুক্ত করলেন গ্রীক বিভিন্ন দার্শনিক থেকে শুরু করে সারা দুনিয়ার পন্ডিত দের জ্ঞান ভান্ডার কে আরবীতে রুপান্তর করার জন্য। এবং বিশেষ করে দর্শনের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখবেন দর্শনের একেবারে প্রাথম্নিক প্রশ্নগুলো নিয়েও আলোচনার সময় সেটাকে ইসলাম ভিত্তিক করে নেয়া হয়েছিল।
খলিফা হারুন আল রশিদ এর রাজত্ব বিস্তার ছিল ধর্ম নির্ভর, হয়তো ক্ষমতার লোভ ছিল কিন্তু তারচে বেশি ছিল ধর্মের বিস্তার, এবং তা অবশ্যম্ভাবী ছিল ক্ষমতার জন্যও, আর একই সাথে এই জ্ঞান চর্চাও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে ধর্ম ধারা। সেখানে আঞ্চলিক কোনো সীমা রেখা ছিল না! এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না যে কোনো অঞ্ছলের জন্য বা কোনো অঞ্চল কে প্রাধান্য দিয়ে জ্ঞান চর্চা হচ্ছিল। যেমন ওরা চীনা দের কাছ থেকে কাগজ তৈরী শিখে নেয়ার পর কাগজ তৈরীর প্রকৃয়া মধ্যপ্রাচ্য বা আরব ছাড়িয়ে সারা বিশ্বেরই ছড়িয়েছে, এর আগে পর্যন্ত যা ছিল শুধুমাত্র চীনা দের গোপন এক কৌশল। এতো গেল বিকাশে, এরপর পতনের কারণগুলো যদি আপনি দেখেন, আঞ্চলিক কোনো কারণে স্বর্ণযুগের পতন হয়েছিল। চেঙ্গিস খানের দৌহিত্র হালাগু খানের ঘটনাটা বাদ দিলে আর বাদ বাকি সবই ছিল ধর্মের কারণেই। আপনি সিয়া সুন্নীর লড়াই বলেন, জ্ঞানের বিকাশের এক পর্যায়ে মুক্তচিন্তার বাধাগ্রস্থতা বলেন বা স্পেন এ পরাজয় বলেন সবই হয়েছে ধর্মকে উপলক্ষ করে।

এক লাইনে বললে মধ্যপ্রাচ্য বরাবরই বর্বর জাতি, এখানে স্বর্ণযুগ এনে দিয়েছিল ইসলাম আবার এর পতনও হয়েছে ইসলামের কারণে সেখানে অঞ্চল কেন্দিকতা ছিল না বা অঞ্চলের বিশেষ কোনো প্রভাব ছিল না।

প্রত্যাশা করবো আপনাদের কাছে আরো ভালো কোনো ব্যাখ্যা থাকলে জানাবেন।

কাজী মামুন

পৃথিবী [অতিথি] এর ছবি

এই দাবির পেছনের rationale টা খুব সম্ভবত এরকম যে "ইসলামী স্বর্ণযুগ" এর পন্ডিতরা ইসলাম ধর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যদিও এর পক্ষে কোন তথ্যসূত্র উত্থাপিত হতে দেখিনি। ইবনে সিনা, আল-কিন্দি, আর-রাজি,- ইবনে রুশদরা গ্রীক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাঁদের একটা বড় লক্ষ্য ছিল reason এর সাথে revelation এর মিলন ঘটানো।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই প্রশ্নটা উত্থাপিত হবে এমনটা আমি চিন্তা করিনি, তাই আসলে মূল লেখায় এই বিষয়টা তেমন আলোকপাত করা হয় নি, হাসিব ভাই কে দেয়া উত্তরে কিছুটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি, একটু পড়ে দেখবেন।

ধন্যবাদ!

কাজী মামুন

সোয়াদ [অতিথি] এর ছবি

হাসিব লিখেছেন:
একটা জিনিস বুঝতে চাই। একটা ধর্মের স্বর্নযুগ বলতে আসলে কী বোঝাতে চাই আমরা? বিষয়টা একটা অঞ্চলের স্বর্নযুগ বলা উচিত নয় কি?

তীব্র সহমত। স্বর্ণযুগের সাথে ধর্মের সম্পর্ক নাই, একদমই।

অতিথি লেখক এর ছবি

তীব্র সহমত। স্বর্ণযুগের সাথে ধর্মের সম্পর্ক নাই, একদমই।

আচ্ছা, তাহলে আপনি অঞ্চলের নামে নামকরন করতে আগ্রহী? সেই অঞ্চলের নাম কি হবে? এশিয়া? এশিয়ার অর্ধাংশও এর মধ্যে ছিল না! ইউরোপ? ইউরোপের অল্প কিছু অংশ গুটিকতক দেশ এর মধ্যে ছিল? আরব? আরবের সীমানা পৃথিবীতে সম্ভবত সবচেয়ে বেশিবার পরিবর্তিত হয়েছে! মধ্যপ্রাচ্য? সেই স্বর্ণযুগ শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক ছিল না! তাহলে স্পেন কেও আপনার মধ্যপ্রাচ্যের অন্তর্গত করতে হবে। তাহলে কিভাবে আকা যায় সেই আঞ্চলিক সীমারেখা!
বরং এটাই সত্য যে, সেই কালের সীমারেখায় ইসলাম যে অঞ্ছলেই প্রভাব বিস্তার করেছে সেই অঞ্চলেই এই স্বর্ণযুগ ছড়িয়েছে!

কাজী মামুন

এনকিদু এর ছবি

হাসিবের প্রশ্নটাই আমারও প্রশ্ন।

ইসলামের যুগ (স্বর্ণ অথবা বিষ্ঠা যাই হোক) বলতে আসলে কী বোঝায় ?

বিশ্বের ইতিহাসে আমরা ইউরোপের ইতিহাসকে "ইউরোপের ইতিহাস" হিসেবেই দেখি, "খ্রীষ্ট ধর্মের ইতিহাস" দেখিনা। দূরপ্রাচ্যের ইতিহাসকে "চীনা ইতিহাস" বা "জাপানি ইতিহাস" হিসেবেই দেখি, "তাও ইতিহাস", "বৌদ্ধ ইতিহাস" ইত্যাদি কেন দেখিনা ?

নিজেদের ইতিহাস আলোচনার সময়ও এই জটিলতাটা কাজ করে। প্রাচীন কাল, হিন্দু শাসনামল, বৌদ্ধ শাসনামল, মুসলিম শাসনামল - এসব দেখি কিন্তু এরপরে দেখি ইউরোপীয় শাসনামল, খ্রীষ্টান শাসনামল দেখিনা কেন ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসিব ভাই এবং সোয়াদ এর মন্তব্যে কিছুতা আলোকপাত করলাম এরপরও যদি সংশয় থাকে তাহলে জানাবেন আরেকটু বিস্তারিত, কেন সংশয়, আলোচনা করতে সুবিধা হবে।

শুভকামনা!

কাজী মামুন

স্পর্শ এর ছবি

লেখাটা ভালো লেগেছে। অনুসন্ধান আরো পর্বে বিস্তারিত আসুক।

আর স্বর্ণযুগ প্রসংগে বলা যায়। কোনো একটা ধর্মের ফিটনেস ফাংশান হতে পারে তার অনুসারী সংখ্যা আর সেই অনুসারীদের মধ্যে কতজন কতবড় ফান্ডি সে সব হিসাবে। সেভাবে দেখলে ইসলামের স্বর্ণযুগ চলছে এখন!

কোনো ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যৌক্তিক দর্শনের চর্চা শুরু হয়ে গেলে সেটা বরং ঐ ধর্মের জন্য অন্ধকার যুগ। চিন্তিত


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

কোনো ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যৌক্তিক দর্শনের চর্চা শুরু হয়ে গেলে সেটা বরং ঐ ধর্মের জন্য অন্ধকার যুগ।

সহমত
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

অতিথি লেখক এর ছবি

কোনো ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যৌক্তিক দর্শনের চর্চা শুরু হয়ে গেলে সেটা বরং ঐ ধর্মের জন্য অন্ধকার যুগ।

এখানে আমারও সহমত, ঐ যোক্তিক দর্শনের চর্চাই ইসলামের পতনের একত আবড় কারণ, যেটা মূল লেখায় কিছুটা আলোকপাত করেছি। পরবর্তীতে এটা নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে রয়েছে।

দুর্দান্ত এর ছবি

যে সময়টিকে আপনি ইসলামের স্বর্ণযুগ বলছেন, ততদিনে ইসলামের ভাষা আরবী হলেও, আরব-অন্তরীপের কেউই আর ইসলামী বিশ্বের পুরোভাগে নেই। তারও ওপর ৭ম শতাব্দীর ইসলাম নামের যে ধর্মটি আরব-অন্তরীপ থেকে পুবে সরে আসছে, সেটি বদলাচ্ছে এবং ক্রমেই সাসানিড-জরথ্রুষ্টবাদ থেকে গ্রহন করে নিচ্ছে। খলিফারা নিজেদের বলছে 'আমিরুল মু'মিনিন' মানে বিশ্বস্তদের নেতা, অবিশ্বাসী জিম্মী ও মাওয়ালীদের কাছ থেকে কর আদায় করাই এই খলিফার প্রধান আয়ের উতস। সুতরাং তারা জোরেশোরে ধর্মপ্রচার করে সব পারসিক/অমুসলিম আরবদের মুসলিম করে ফেলছে, এমনটি ভাবলে এই আমিরুল মুমিনিনদের বিলাসীজীবন আর দেশ চালানোর টাকা কোথা থেকে আসল, এ প্রশ্নের উত্তরে নিরবতা ছাড়া কিছু থাকেনা। দামেস্ক থেকে বাগদাদে রাজধানী স্থানান্তর যে হাজার বছরের পারসিক সংস্কৃতির কাছে দু-এক শতকের ইসলামী-আরবী সংস্কৃতির পরাজয় হয়েছে, সেটা ওরিয়েন্টালিস্ট বা মূলধারার ইসলামী ইতিহাস স্বীকার করতে চায়না। মহানবীর নামে তলোয়ার ধরা আব্বাসী খলিফারা নামেই রাজা, আসল ক্ষমতা চলে যায় নতুন গড়া পারসিক মাওয়ালী 'উজির' দের হাতেই, আর সেই খলিফা নিজেও কতটা মুসলিম ছিলেন, সেটা গবেষনার বিষয়। মাঝেমধ্যে দু একটা অরঙ্গজেব টাইপ বাদ দিলে খলিফারা বিশেষ ইসলামসুলভ বালক ছিল বলে প্রমান নেই। সুতরাং এসময়টি ইসলামের স্বর্ণযুগ ছিল, এ ধারনাটি বাস্তব থেকে কিছুটা দুরে অবস্থিত।

প্রশাসকের ধর্ম ইসলাম ছিল, এবং সে সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় প্রভুত উন্নতি হয়, এই দুইটি গুলিয়ে ফেলে সেসময়টিকে ইসলামের স্বর্ণযুগ বললে, ওসমানী আমলে আন্তালীয়ায় বা মোঘল আমলে ভারতের প্রশাসনিক উন্নতি ও জ্ঞানবিজ্ঞান সাহিত্য চর্চাকেও ইসলামের স্বর্ণযুগ বলা উচিত। সে ধারাহিকতায়তো পারস্য ও এখনকার সৌদি-আমিরাতের উন্নতি ইসলামের মাধমে স্বর্ণযুগ এখনো চলছে। কিন্তু সেটা বলা কি ঠিক হবে?

ব্রিটিশ আমলে উপমহাদেশের শাসকের দল খৃষ্টান ছিল, এবং সেসময়ে এখানে নানান নাগরিক সুবিধা চলে এসেছিল। তাই বলে আমরা নিশ্চই বলব না যে সে সময়টা উপমহাদেশে খৃষ্টান স্বর্ণযুগ চলছিল।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা গুরত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বলেছেন আপনি। ভালো আলোচনা তবে এখানে দৃষ্টিভঙ্গীগত একটা পার্থক্য তৈরী হবে।


যে সময়টিকে আপনি ইসলামের স্বর্ণযুগ বলছেন, ততদিনে ইসলামের ভাষা আরবী হলেও, আরব-অন্তরীপের কেউই আর ইসলামী বিশ্বের পুরোভাগে নেই।

এবং

আর সেই খলিফা নিজেও কতটা মুসলিম ছিলেন, সেটা গবেষনার বিষয়।

ঠিক দ্বিমত করছি না, তবে খুব সাম্প্রতিক ইতিহাসে, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কে আমরা নাস্তিক হিসেবেই চিনি, কিন্তু তাই বলে কি তাঁর শাষন আমলে পাকিস্থান মুসলিম দেশ ছিল না? আপনি যদি কারণ বিশ্লেষন করেন তাহলে এ নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে লিখতে হবে, ইতিহাসের দর্শন বলে এলাদা একটা বিষয়ই আছে। তবে আমি ঠিক ইতিহাসের দর্শন নিয়ে আলোচনায় যাই নি, আমি শুধুমাত্র ইতিহাস এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চেয়েছি।

তবে আপনার আলোচনা দেখে একটা বিশেষ অনুরোধ আপনার প্রতি---এই বিষয়ে ইতিহাসের দর্শন নিয়ে আপনার কাছ থেকে আলোচনা শুনতে চাই। প্রয়োজনে আলাদা পোস্টই দিতে পারেন।

আমি মুগ্ধ, এই লেখায় আমি ব্যক্তিগত মতামত কে খুব একটা প্রশয় দিতে চাই নি, দিলে হয়তো আপনার সাথে খুব একটা দ্বিমত হতো না। একদিন ঠিক আপনার এই কথাগুলো নিয়েই আমার এক বন্ধু এবং এক্স-বুয়েটিয়ান ছোট ভাই এর সাথে প্রায় একটানা চারঘন্টা কথা বলেছি। ইতিহাসে দর্শন খুব মজার একট বিষয়, লিখবেন।

আর নামকরনের ব্যাপারটা আশা করছি উপরের মন্তব্য আলোচনায় কিছুটা পরিষ্কার করতে পেরেছি।

শুভকামনা

কাজী মামুন

দিগন্ত এর ছবি

ব্রিটিশ আমলে উপমহাদেশের শাসকের দল খৃষ্টান ছিল, এবং সেসময়ে এখানে নানান নাগরিক সুবিধা চলে এসেছিল। তাই বলে আমরা নিশ্চই বলব না যে সে সময়টা উপমহাদেশে খৃষ্টান স্বর্ণযুগ চলছিল।

ঠিক এটাই ভাবছিলাম।

পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সিরাত এর ছবি

সুফিজম ইত্যাদির সাথে যোগাযোগটা পরিষ্কার করা দরকার। মানতে পারলাম না।

আমার মনে হয় এগুলি ঐতিহাসিক পর্যায়বিশেষ। মঙ্গোলদের থামানো আসলে কি মুসলিমদের পক্ষে কোনভাবে সম্ভব ছিল? ঠিক যেভাবে ইউরোপীয়দের থামানো দক্ষিণ আমেরিকানদের পক্ষে? ঐতিহাসিক দুর্ঘটনার ঘটনাপরবর্তী ব্যাখ্যাচেষ্টায় তেমন কি লাভ আছে?

যাহোক, ক্রমানুসরে বিভিন্ন কারণ নিয়ে লিখতে পারেন!

অতিথি লেখক এর ছবি

সুফিজম ইত্যাদির সাথে যোগাযোগটা পরিষ্কার করা দরকার। মানতে পারলাম না।

সুফীজম এর সাথে এর সম্পর্কটা অনেকদিন আগে পড়েছিলাম, কিছুটা রেফারেন্স এর অভাবের কারণী বলেছি যে পর্যাপ্ত তথ্য'র অভাব রয়েছে, রেফারেন্স ছাড়া শুধুমাত্র মেমোরী নির্ভর লিখতে চাচ্ছিলাম না। তবে আশার কথা হলো- একটা বই খূজে পেয়েছি, পড়া শেষ হলে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

আপনার প্রস্তাবনার জন্য ধন্যবাদ। আসলে এখন নানা প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হচ্ছ দেখে আসলে আমারও মনে হচ্ছে এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো বিস্তারিত লেখা যায়, তবে একসাথে অনেক বড় লেখা অনেকে পরতে চায় না, তাই ভাবছি, প্রতিটা কারণ ধরে ধরে আলাদা আলাদা ভাবে লিখবো---দ্বিতীয় পর্বেই চেষ্টা করবো সুফীজম এর ব্যপারটা কেন এসেছে এটা পরিষ্কার করতে। আর এখানে আমার ব্যক্তিগত মতামত নেইই বলতে গেলে, আমি শুধু বিভিন্নজনের মতামত কে কম বা বেশি গুরত্ব দিয়ে লিখেছি।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

কাজী মামুন

সোয়াদ [অতিথি] এর ছবি

দুঃখিত, আমার বোধহয় আরও ভেঙ্গে বলা উচিৎ ছিলো। আপনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর, বা একই সময়ে ভিন্ন জনগোষ্ঠীর কথা বলছেন, ঘটনাচক্রে যারা ইসলামে বিশ্বাসী ছিলো, এবং সম্পুর্ণ ভিন্ন কারণে সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করেছিলো। ইসলামে বিশ্বাস করার কারণে "স্বর্ণযুগ" আসে নাই, ইসলামের "বাণীর" মাধ্যমে ছড়ায়ও নাই, কাজেই "ইসলামের স্বর্ণযুগ" কথাটি বিভ্রান্তিকর। এই ধরণের কথা ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব দাবীকারীদের কাছ থেকে শুনতে পাওয়া যায় সচরাচর।

বিভ্রান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আগামী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

হাসান এর ছবি

মানলাম শিরোনামে ইসলামের স্বর্ণযুগ লেখা ঠিক হয়নি তাই বলে আপনি বলতে পারেন না যে ইসলামে বিশ্বাস করার কারণে "স্বর্ণযুগ" আসে নাই, ইসলামের "বাণীর" মাধ্যমে ছড়ায়ও নাই, বরং ইসলামের হাত ধরেই বর্বর আরবীয়দের জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ সকল ক্ষেত্রে স্বর্ণযুগের শুরু।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।