আমার মনের ভিতরে আফ্রিকায় আসা ও কাজ করার একটা সুপ্ত ইচ্ছা সবসময়েই ছিলো। ২০০৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় আমার সংস্থায় বিশাল রকম রিষ্ট্রাকচারিং হয় এবং এতে ২০০৬ সালের জানুয়ারীতে আমি আমার পজিশন হারাই। আমাকে অন্য জায়গায় একটা পজিশন দেয় হলে আমি যেতে অপারগতা প্রকাশ করি। ফেব্রুয়ারী মাসটা উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াই ইনডিয়াতে। তারপর মার্চে একটা চাকরি হলো আফ্রিকায়, রিপাবলিক অব মালাউইতে, সংক্ ...আমার মনের ভিতরে আফ্রিকায় আসা ও কাজ করার একটা সুপ্ত ইচ্ছা সবসময়েই ছিলো। ২০০৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় আমার সংস্থায় বিশাল রকম রিষ্ট্রাকচারিং হয় এবং এতে ২০০৬ সালের জানুয়ারীতে আমি আমার পজিশন হারাই। আমাকে অন্য জায়গায় একটা পজিশন দেয় হলে আমি যেতে অপারগতা প্রকাশ করি। ফেব্রুয়ারী মাসটা উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াই ইনডিয়াতে। তারপর মার্চে একটা চাকরি হলো আফ্রিকায়, রিপাবলিক অব মালাউইতে, সংক্ষেপে মালাউই। গ্রেইট ব্রিটেইন ভিত্তিক একটা আন্তর্জাতিক এনজিও মালাউইতে সদ্য কাজ শুরু করেছে, সেই কান্ট্রি অফিস শুরু করা থেকেই কাজের শুরু। আমি আরো উৎসাহ বোধ করলাম এই কারণে যে আমার মামা ডা. শাহনেওয়াজ আলম খান (পরবর্তীতে ২০০৮ সালে সিয়েরা লিওনে কর্মরত থাকা অবস্থায় দুঃখজনকভাবে গাড়ি দূর্ঘটনায় মারা যান) তখন মালাউইতে আয়ারল্যান্ডভিত্তিক একটা আন্তর্জাতিক সংস্থার এ্যাসিস্ট্যান্ট কান্ট্রি ডিরেক্টর।
বাংলাদেশীদের জন্যে মালাউই আসতে গেলে কিছু নিয়ম আছে। যিনি আসবেন তার স্পন্সর প্রথমে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে একটা আবেদন করবেন। ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট আবেদন মঞ্জুর করলে তাদের লেটার হেডে একটা চিঠি ইস্যু করবেন। এই চিঠির একটা ফ্যাক্স ভার্সন জমা দিতে হবে যিনি আসবেন তার দেশের মালাউইর দূতাবাসে বা নিকটস্থ যে দেশে দূতাবাস আছে। আর যদি তা না থাকে তবে ওই ফ্যাক্স ভার্সনটা সাথে নিয়ে ভ্রমন করা যাবে, তারপর মালাউইতে পৌছে এয়ারপোর্ট থেকে অন এ্যারাইভাল ভিসা নেওয়া যাবে।
স্যাকরাইন গাও এন্ড কোম্পানী, এটা গোটা আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে প্রথমসারির একটা ল ফার্ম। এই ফার্মের মালিক সাব্বির লতিফ, গুজরাটি বংশোদ্ভূত মালাউইয়ান বিশাল মাপের একজন আইনজীবি। তিনি আমার সংস্থার পক্ষে আমার ভিসার জন্যে আবেদন করলেন এবং সেই আবেদন মঞ্জুর হয়ে গেলো। আমাকে সেই চিঠি স্ক্যান করে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।
লেক মালাউইর পাড়ে আমরা। ছবিটা তুলেছিলেন শাহ্নেওয়াজ মামা যাকে সবসময় খুবই মিস করি
২৫ মার্চ ঢাকা থেকে রওনা করলাম দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে। আমি সবসময়েই ওকটা অনিশ্চয়তায় থাকি ঢাকা এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট নিয়ে। যাহোক, এই যাত্রার অভিজ্ঞতা অন্য লেখায় আনবো। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। শুধু এটুকুই বলি যে অত্যন্ত শিল্পসন্মতভাবে আমার ওয়ালেট থেকে ১০০ ডলারের একটা বিল চলে গিয়েছিলো এক সাব ইন্সপেক্টর সাহেবের পকেটে। আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করে দেন যদি তিনি এই টাকাটা তার বাচ্চার পিছনে ব্যায় করে থাকেন।
এমিরেটসের সকালের ফ্লাইটে রওনা করলাম। পথে দুবাইতে ট্রানসিট। পরে আবার নাইরোবির ফ্লাইটে উঠলাম। সদ্য বাংলাদেশ ট্যুরে হোয়াইট ওয়াশ হওয়া কেনিয়ান ক্রিকেট টিমকেও দেখলাম। কেনিয়া টিমের কোচ, আমার খুবই প্রিয় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার রজার হারপারের সাথেও হ্যালো করলাম। আমার অন্য পাশে বসা ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন সিভিল ষ্টাফ। তিনি বেশ আগ্রহ নিয়ে আমার কাছে বর্ণনা করছিলেন যে কমার্শিয়াল প্লেনের পাইলটরা কিভাবে ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেসদের সাথে ফ্লাইট চলাকালীন সময়ে সেক্স করে। আমি বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলাম না। কিছু গল্প কিছু ঘুম, এভাবেই ৫ঘন্টার ফ্লাইট কাটিয়ে দিয়ে নাইরোবি জম্মু কেনিয়াতা এয়ারপোর্টে নামলাম। তখন সন্ধ্যা।
দুবাই এয়ারপোর্টে চেক ইন করার সময়ে আমার ট্রাভেল ব্যাগটা এয়ারক্র্যাফটের দরজা থেকে নিয়ে চেক ইন লাগেজে দিয়ে দিয়েছিলো। আমি কেনিয়া এয়ারপোর্টে ব্যাগটা কালেকশনের চেষ্ট করলে ইমিগ্রেশন থেকে বললেন যে আমার ওই ব্যাগ সরাসরি ট্রান্সফার করে দেওয়া হবে পরদিন এয়ার মালাউইর ফ্লাইটে। কিন্তু স্বস্তি পেলাম না। আমি তাকে বললাম যে আমার ব্যাগে ট্যাগ লাগানো নাইরোবি পর্যন্ত। তাকে বললাম যে আপনি আমার পাসপোর্ট আর টিকেট রেখে দেন, আমি জাষ্ট নিচে গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে আসি। কোনভাবেই তাকে রাজী করাতে না পেরে ভিতরে এসে বসে থাকলাম।
জম্মু কেনিয়াতা বেশ ব্যাস্ত এয়ারপোর্ট। মূলত এখান থেকেই আফ্রিকার অন্য সব রুটে প্লেন যায়। ইউরোপের ফ্লাইটগুলো বেশিরভাগ নাইরোবি পর্যন্ত আসে। এরপর এখান থেকে অন্য দিকে যায় কেনিয়ান এয়ারওয়েজে চড়ে। এজন্যেই এটা বিরাট একটা হাব। কেনিয়ান এয়ারওয়েজের ব্রান্ড স্লোগান হচ্ছে ‘প্রাইড অব আফ্রিকা’।
[img=auto][/img]
হিপ্পো রিভারের সামনে দাঁড়িয়ে। নদীটার অন্য নাম থাকলেও হিপ্পো রিভার নামেই বেশি পরিচিত
এয়ারপোর্ট ব্যাস্ত হলেও ফোন করার মতো দোকান হচ্ছে মাত্র ১টা। একটা গিফট শপ। কল করলে ৪ ডলার মিনিট আর কল ব্যাক ২ ডলার মিনিট। ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ফোনও এর থেকে সস্তা। কিন্তু উপায় তো আর নেই। কল করতে গিয়ে দেখি আরও কয়েকজন লোক লাইনে আছেন। আঞ্চলিক বাংলায় কথা বলছেন, পৌছানোর সংবাদ দিচ্ছেন বাড়িতে। এরপর আমার পালা, বাড়িতে বললাম যে নাইরোবি পৌছেছি। আমার কথা শেষ হতেই ওরা আমাকে বিগলিত হাসি দিয়ে সালাম দিলেন। তারপর আলাপ জমে গেলো। গন্তব্য একই। ব্লানটায়ার, ফ্লাইটও একই। ওদের একজন জোর করেই আমার কাঁধ থেকে ল্যাপটপের ব্যাগটা নিয়ে নিলেন। বললেন আপনি এত সন্মানিত মানুষ, আপনার ব্যাগ টানতে পারা আমাদের ভাগ্যের ব্যাপার। কোনও বাধা ওকে থামাতে পারলো না।
মানুষটার নাম বাহার মিয়া। বাড়ি নোয়াখালী। দলে ওরা ছয়জন, সবারই বাড়ি নোয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায়। প্রত্যেকের হাতে মাত্র একটা করে ছোট্ট ছোট্ট কালো হ্যান্ডব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে আছে শুধু একটা লুঙ্গি আর ছোট্ট একটা গামছা। এক কাপড়েই ওরা এসেছেন। তবে প্রত্যেকেই স্যু, কোট এবং টাই পরা।
আমরা ৭জন সিদ্ধান্ত নিলাম যে রাতটুকু বসে কথা বলেই কাটিয়ে দেওয়া যাবে। এরমধ্যে আমি বাহার মিয়ার কাছে ওদের ভিসা দেখতে চাইলাম। বাহার মিয়া আমাকে একটা চিঠি দেখালেন যে চিঠি আর আমার চিঠি একই দপ্তর থেকে ইস্যু করা তবে স্বাক্ষর আলাদা। আমার চিঠিতে অনেক কিছু লেখা থাকলেও ওদের চিঠিতে শুধু নাম আর পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে লেখা যে এই ব্যাক্তিকে রিলেটিভ ভিজিট করার জন্যে মালাউইতে আসার ভিসা দেওয়া হলো। এবং এই ব্যাক্তি কোনও অবস্থাতেই কাজের জন্যে আবেদন করতে পারবে না। তারপর ওদের সবকয়জনকে নিয়ে এয়ারপোর্টের মধ্যে সবথেকে দামী রেস্তোঁরায় খেতে গেলাম। ওরা যেতে চাচ্ছিলেন না কিন্তু আমি একরকম জোর করে ওদের নিয়ে গেলাম। এর মাঝে আমি জানতে চাইলাম যে ওরা মালাউই গিয়ে কি করবেন। ওরা বললেন যে প্রথমে যেমন তেমন একটা কাজ শুরু করবেন। তারপর কিছুদিন কেটে গেলে তাদের মালাউইয়ান পাসপোর্ট হয়ে যাবে। পাসপোর্ট হাতে পেলে তারা সবাই লন্ডন চলে যাবেন। মালাউইয়ানদের ইউকে যেতে ভিসা লাগে না। ওরা জনপ্রতি দালালকে দিতে হচ্ছে নগদ আড়াই লাখ করে আর প্লেনের টিকেটে গেছে আরও দেড় লাখের মতো করে। আড়াই লাখের মধ্যে দেড় লাখ আপ ফ্রন্ট পেইড আর বাকী এক লাখ মালাউইতে পৌছানের পর দিতে হবে। ওরা জানালেন যে ওদের জন্যে আপাততঃ যে ‘যেমন-তেমন’ কাজ রেডি আছে তার বেতন হবে মাসিক ৩০,০০০ টাকার মতো। সুলাইমান একজন বাংলাদেশী মালাউইয়ান। তার স্ত্রী মালাউইয়ান। সেই এই বাহার মিয়াদের নিচ্ছে মালাউইতে। তখন আমিও জানতাম না যে মালাউইতে বাংলাদেশী টাকার ১০,০০০ টাকার একটা কাজও আনস্কিলড লোকের জন্যে একরকম অসম্ভব। আর মালউইয়ানদের ইউকে যেতে ভিসা লাগেনা, এই নিয়মও আর নেই।
কিছু গল্পে কিছুটা ঘুমিয়ে রাত কেটে গেলো। আসলে নাইরোবি এয়ারপোর্টে ঘুমানোর মত পরিবেশ নেই। এয়ারপোর্টের ব্যস্ততা অনুসারে আয়তন খুবই ছোট, আর তেমন কোনও সুযোগ সুবিধাই নেই।
[img=auto][/img]
সহকর্মী ভেরোনিকার বাসায় দাওয়াত। ছবি তুলেছেন আমার স্ত্রী
সকাল ৬ টায় চেক ইন ডেস্কে গিয়ে লাইন দিলাম বোর্ডিং পাসের জন্যে। আমার পিছনে ওরা ৬জন। ডেস্ক ক্লার্ক আমার বোর্ডিং পাস দিয়ে দিলেন। আমি সরে গিয়ে পাশের চেয়ারগুলোর একটায় বসলাম। শুনতে পাচ্ছি ওদের কথোপকথন। ক্লার্ক জানতে চাচ্ছেন যে ওরা কোথায় যাবেন, কেনো যাবেন, ইত্যাদি। ওদের মুখে একই উত্তর, গোয়িং ব্যালেনটায়ার, ভিজিট রিলেটিভ। এবার ক্লার্ক একজন ষ্টাফ দিয়ে আমাকে ডেকে আনলেন। তিনি আমাকে অনুরোধ করলেন তাকে এ্যাসিস্ট করার জন্যে। আমি তার প্রশ্ন অনুযায়ী ওদের কাছে জানতে চাইলাম যে ওরা কার কাছে যাচ্ছে। ওদের সাজানো উত্তর তো আমার আগে থেকেই জানা ছিলো। সব কথার শেষে বলতে ভুললাম না ‘এ্যজ দে সেইড’। তারপর সবাইকে বোর্ডিং পাস দিয়ে দিলেন।
এরপর গেলাম বোর্ডিং গেটে। আমি সিকিউরিটি চেক সেরে ভিতরে ঢুকলাম। ঢোকার আগে আমার এমিরেটসের লাগেজ সম্পর্কে বলতেই বোর্ডিং গেট ক্লার্ক ওয়াকিটকিতে কাউকে আমার লাগেজ শিফট করার জন্য বললেন। আমি ভেতরের লাউঞ্জে গিয়ে বসলাম। এরপর প্রায় ১৫ মিনিট কেটে গেলেও দেখি বাহার মিয়ারা কেউ ভিতরে ঢুকছেন না। একটু আশ্চর্য হলাম; এতো সময় তো লাগার কথা না। ওরা তো আমার ঠিক পিছনেই ছিলেন। অন্য লোকজন ঢুকে যাচ্ছে। আমি বসে থাকলাম।
আরও প্রায় মিনিট দশেক পর একজন স্টাফ এসে আমাকে বাইরে ডেকে নিয়ে গেলেন। আমাকে খুব বিনীত ভঙ্গিতে জানানো হলো যে আমাকে ডিসএমবার্কড করা হয়েছে। আমি কারণ জানতে চাইলে আমাকে বলা হলো যে ফ্লাইট পার্সার ডিনাই করেছেন। তার ধারণা আমি এই আদম পাচারকারী চক্রের নেতা। যেহেতু সবারই রিটার্ন টিকেট আছে তাই আর পুলিশে দেওয়া হচ্ছে না। তবে পরবর্তী এমিরেটস ফ্লাইটে সবাইকে চলে যেতে হবে। আমি তাকিয়ে দেখলাম যে বাহার মিয়ারা বিরস মুখে দুরে দাড়িয়ে আছেন। আমি একজন স্টাফকে বললাম যে পার্সারকে বলেন আমার ডকুমেন্টস চেক করতে। তিনি এক সেট ডকুমেন্টস নিয়ে চলে গেলেন এবং একটু পরেই ফিরে এসে আমাকে বললেন যে সরি পার্সার আপনার ডকস্ও দেখবেন না। এমন সময়ে পার্সারের আবির্ভাব। ক্লার্ক আমাকে বললেন যে ইনি পার্সার, আপনি তার সাথে কথা বলতে পারেন। আমাকে দেখেই পার্সার বললেন যে আই সি ইউ আর দ্য গ্যাংষ্টার অব দিস বাংলাদেশীজ গ্রুপ। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমি বললাম য়্যু শুড হ্যাভ চেকড মা ডকস্ বিফোর মেকিং সাচ কমেন্ট। জবাবে তিনি বললেন যে আ ডোন্ট নীড টু চেক য়্যোর ফেইক ডকস্। বলেই তিনি চলে গেলেন।
আমি তাড়াতাড়ি আর্ট শপে গিয়ে বসকে ফোন করলাম। তিনি আমাকে বললেন ১০ মিনিট পরে আবার ফোন করতে। ইতিমধ্যে প্লেন কিন্তু ছেড়ে দিয়েছে। ১০ মিনিট পরে বসকে আবার ফোন করলাম। বস বললেন আজ তো আর কোনও ফ্লাইট নেই। এয়ার মালাউইর পরের ফ্লাইট ৩ দিন পরে। কিন্তু কেনিয়ান এয়ারওয়েজের সপ্তাহে ৩টা ফ্লাইট আছে। সুতরাং যদি কেনিয়ান এয়ারওয়েজেও যাই পরের ফ্লাইট ধরতে হলে আমাকে আরও একদিন এখানে থাকতে হবে। কেনিয়ান এয়ারওয়েজের ফ্লাইটগুলো ব্লানটায়ারে যায় না, লিলংওয়েতে যায়। লিলংওয়ে হচ্ছে মালাউইর রাজধানী। বস আমাকে ২ ঘন্টা পরে আবার ফোন করতে বললেন।
[img=auto][/img]
লেক মালাউই সংলগ্ন সান-এন্ড-স্যান্ড রিসর্টের ছোট্ট প্রাণীশালায়।
২ ঘন্টা পরে ফোন করলে বস আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তোমার সাথে ওই লোকগুলো কারা ছিলো। আমি তাকে বললাম। এর মধ্যে বস বিষয়টা ইউএন এর মাধ্যমে এয়ার মালাউইকে কারন জানতে চেয়েছেন। এরপর তারা জানায় যে একদল সন্দেহজনক বাংলাদেশী বোডিং এর চেষ্টা করছিলো এবং তারা সন্দেহ করেছে যে আমি তাদের দলনেতা। এরপর এয়ার মালাউই মৌখিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে এবং তারা কিছুক্ষণের মধ্যে কেনিয়ান এয়ারওয়েজকে এনডোর্সমেন্ট লেটার ফ্যাক্স করবে যাতে তারা আমাকে তাদের ফ্লাইটে নিয়ে আসে। বস ২টা ফোন নাম্বার দিলেন। একটা জম্মু কেনিয়াতা এয়ারপোর্টের একজন ডিউটি ম্যানেজার মুবেই উইলিয়ামসের আর অন্যটা আমাদের সংস্থার কেনিয়া-সোমালিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর মুজাফ্ফরের। ফোন করলাম মুবেইকে। তিনিও প্রথমেই জানতে চাইলেন যে ওই লোকগুলো কারা। আমি একই কথা বললাম। এরপর তিনি জানতে চাইলেন যে ওরা এখন কোথায়। আমি বললাম যে আমি জানি না। এরপর তিনি বললেন যে আমি যেনো ট্রান্সফার ডেস্কের কাছে কাছে থাকি আর এখনের শিফটের ডিউটি ম্যানেজার জেরাল্ডের সাথে কথা বলি। যেই না আমি ট্রান্সফার ডেস্কের সামনে গিয়ে জেরাল্ডএর খোঁজ করছি। বিশালকায় একজন লোক ভ্রুকুঞ্চিত করে বললেন যে আমি এখনও কেনো ফিরে যাইনি। আমি তাকে বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করলাম যে তার কি আমার কথা শোনার সময় হবে। তিনি সবই শুনলেন। তারপর কার কাছে যেনো ফোন করলেন এবং ইংরেজীতেই পুরো কাহিনী বললেন। এরপর জেরাল্ড আমাকে সরি বললেন তার প্রাথমিক এ্যাপ্রোচের জন্যে। তিনি বললেন যে আগামী ফ্লাইট যেহেতু পরশু দিন, তুমি ইচ্ছে করলে শহরে চলে যেতে পারো। জেরাল্ড তার টিমকে বললেন যে এনডোর্সমেন্ট আসা মাত্রই যেন তাকে জানানো হয়।
মুজাফ্ফরকে ফোন করলাম। উনি বললেন যে ১ ঘন্টার মধ্যে তিনি এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠাচ্ছেন আমার জন্যে। আমি যেনো অন এ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে বের হয়ে আসি। আমি তাকে ধন্যবাদ দিলাম আর বললাম যে আমি বাইরে যাচ্ছি না। ভিতরেই থাকবো। বাসায় ফোন আগেই করেছিলাম। বাসার সবাই তো খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তাদেরকে বললাম শান্ত থাকতে। এদিকে বাসা থেকে শাহনেওয়াজ মামাকে ফোন করলে উনি চিন্তা করতে বারন করলেন আর বললেন যে আমি যেহেতু ইংরেজী বলতে পারি, বিদেশে ঘোরাঘুরিরও অভ্যেস আছে, চিন্তার কোনও কারণ নেই। এর মাঝে একবার শাহনেওয়াজ মামাকে ফোন করেছিলাম। উনি তার স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন যে আমার পাছার উপর দু-চার ঘা বেত মেরেছে কি না।
মন্তব্য
তা বলতে গেলে টিভি-ফিলিমের অনেক গ্যাংস্টারই তো ফ্রেঞ্চকাট রাখে, পার্সারের আর দোষ কি...
ধন্যবাদ কৌস্তভ ভাই। কথায় বলে-
আসলে ভোগান্তি খাওয়া আমার কপালে ছিলো, এই আর কি!
রাতঃস্মরণীয়
সচলে হঠাৎ করে লেখার পরিমান বেড়ে গেছে। পড়ে শেষ করা যাচ্ছে না। দেখি পড়ে এসে পড়বো।
নতুন মন্তব্য করুন